সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাথমিক খ্রিস্ট ধর্ম এবং রোমের বিভিন্ন দেবদেবী

প্রাথমিক খ্রিস্ট ধর্ম এবং রোমের বিভিন্ন দেবদেবী

প্রাথমিক খ্রিস্ট ধর্ম এবং রোমের বিভিন্ন দেবদেবী

রোমীয় সম্রাট ট্র্যাজেনের উদ্দেশে একটা চিঠিতে, বিথুনিয়ার গভর্নর প্লিনি দ্যা ইয়ংগার উল্লেখ করেছিলেন: “আমার সামনে খ্রিস্টান হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে আমি এই সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তারা খ্রিস্টান কি না আর তারা যখন তা স্বীকার করত, তখন তাদেরকে আমি শাস্তির ভয় দেখিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার জিজ্ঞেস করতাম। তারা যদি বার বার একই কথা বলত, তাহলে আমি তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিতাম।” আর যারা খ্রিস্টকে নিন্দা করার এবং রাজদরবারে প্লিনির নিয়ে আসা সম্রাটের ও সেই দেবদেবীদের মূর্তি উপাসনা করার দ্বারা খ্রিস্ট ধর্মকে অস্বীকার করত, তাদের সম্বন্ধে তিনি লিখেছিলেন: “তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া আমি সঠিক বলে মনে করতাম।”

প্রাথমিক খ্রিস্টানদেরকে, সম্রাটের ও বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তির উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তাড়না করা হয়েছিল। অন্যান্য ধর্ম সম্বন্ধে কী বলা যায়, যেগুলো রোমীয় সাম্রাজ্যজুড়ে ছিল? কোন কোন দেবদেবীর উপাসনা করা হতো আর রোমীয়রা তাদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখত? কেন খ্রিস্টানদেরকে রোমের দেবদেবীদের উদ্দেশে বলিদান করতে অস্বীকার করার কারণে তাড়না করা হতো? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদেরকে, বর্তমান দিনে যিহোবার প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে জড়িত একইরকম বিচার্য বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।

সাম্রাজ্যে প্রচলিত ধর্মগুলো

প্রাচীন রোমীয় সাম্রাজ্যের লোকেদের মধ্যে যেমন বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি ছিল, তেমনই তারা বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা করত। যদিও রোমীয়দের কাছে যিহুদি ধর্মকে হয়তো অদ্ভুত বলে মনে হতো, কিন্তু তারা এটাকে রিলিজিও লিকিটা অর্থাৎ এক স্বীকৃত ধর্ম বলে বিবেচনা করত আর তাই এটাকে টিকিয়ে রেখেছিল। যিরূশালেমের মন্দিরে দিনে দু-বার, কৈসর এবং রোমীয় জাতির পক্ষ থেকে দুটো মেষশাবক ও একটা ষাঁড় বলি দেওয়া হতো। এই বলিগুলো একজন নাকি একাধিক দেবতাকে সন্তুষ্ট করত, তা রোমীয়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তাদের কাছে যে-বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হল, এই কাজ রোমের প্রতি যিহুদিদের আনুগত্যের যথেষ্ট প্রমাণ জুগিয়েছিল।

বিভিন্ন ধরনের পৌত্তলিক উপাসনা, স্থানীয় ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে প্রচলিত ছিল। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল আর ভবিষ্যৎকথন সাধারণ বিষয় ছিল। প্রাচ্যের তথাকথিত রহস্যজনক ধর্মগুলো ভক্তদেরকে অমরত্ব প্রদানের, সরাসরি দর্শন দানের এবং রহস্যময় আচারঅনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেবদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছিল। এই ধর্মগুলো সাম্রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। সা.কা. প্রাথমিক শতাব্দীগুলোতে মিশরীয় দেবতা সেরাপিস ও দেবী আইসিস, অরামীয় মৎস্যদেবী আটারগাটিস এবং পারসিক সূর্য দেবতা মিথ্‌রার উপাসনাকারী ধর্মীয় দলগুলো জনপ্রিয় ছিল।

বাইবেলের প্রেরিত বইটি প্রাথমিক খ্রিস্ট ধর্ম ছাড়াও চারিদিকে বিদ্যমান পৌত্তলিক পরিবেশ সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কুপ্রের (সাইপ্রাসের) রোমীয় দেশাধ্যক্ষের সঙ্গে একজন যিহুদি মায়াবীর যোগাযোগ ছিল। (প্রেরিত ১৩:৬, ৭) লুস্ত্রার স্থানীয় লোকেরা পৌল এবং বার্ণবাকে ভুলবশত গ্রিক দেবতা মর্কুরিয় (হার্মিস) ও দ্যুপিতর (জিউস) বলে মনে করেছিল। (প্রেরিত ১৪:১১-১৩) ফিলিপীতে থাকাকালীন পৌল এক দাসীর মুখোমুখি হয়েছিলেন, যে দৈবজ্ঞ আত্মাবিষ্টা ছিল বা ভবিষ্যৎ বলত। (প্রেরিত ১৬:১৬-১৮) আথীনীতে (এথেন্সে) প্রেরিত উল্লেখ করেছিলেন যে, এর অধিবাসীরা “বড়ই দেবতাভক্ত।” এ ছাড়া, সেই নগরে তিনি একটা বেদিও দেখেছিলেন, যেটার ওপরে লেখা ছিল, “অপরিচিত দেবের উদ্দেশে।” (প্রেরিত ১৭:২২, ২৩) ইফিষের অধিবাসীরা দীয়ানা (আর্টিমিস) দেবীর উপাসনা করত। (প্রেরিত ১৯:১, ২৩, ২৪, ৩৪) মিলিতা দ্বীপে লোকেরা বলেছিল যে, পৌল ছিলেন একজন দেবতা কারণ সাপের কামড়ে তার কিছুই হয়নি। (প্রেরিত ২৮:৩-৬) এই ধরনের পরিবেশে, খ্রিস্টানদের সেই প্রভাবগুলোর ব্যাপারে সাবধান থাকার প্রয়োজন ছিল, যেগুলো তাদের বিশুদ্ধ উপাসনাকে কলুষিত করতে পারত।

রোমীয় ধর্ম

তাদের সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, রোমীয়রা এই নতুন দেবদেবীদের গ্রহণ করে নিয়েছিল কারণ তারা মনে করেছিল যে, তারা তাদের জানা সেই একই দেবদেবী, কেবলমাত্র ভিন্ন রূপে। বিদেশি ধর্মীয় দলগুলোকে নির্মূল করার পরিবর্তে, রোমীয় বিজয়ীরা সেগুলো গ্রহণ করে নিয়েছিল। এভাবে রোমের ধর্ম এর বিভিন্ন সংস্কৃতির জনসংখ্যার মতোই বিবিধ হয়ে উঠেছিল। রোমীয় ধর্মে একাগ্র উপাসনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না। লোকেরা একই সময়ে বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা করতে পারত।

রোমের আদি দেবদেবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল জুপিটার, যাকে অপ্টিমাস ম্যাক্সিমাস বলা হতো, যে-অভিব্যক্তিটির অর্থ হচ্ছে সর্বোত্তম ও সর্বমহান। তিনি নিজেকে বায়ু, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ ও বজ্রপাতের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতেন বলে মনে করা হতো। জুপিটারের বোন ও স্ত্রী জুনো, যিনি চাঁদের দেবী ছিলেন তিনি নারীদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে নজর রাখতেন বলে কথিত ছিল। জুপিটারের মেয়ে মিনার্ভা ছিলেন বিভিন্ন হস্তশিল্প, বৃত্তি, কলা ও যুদ্ধের দেবী।

রোমীয়রা অসংখ্য দেবদেবীতে বিশ্বাস করত বলে মনে করা হয়। ল্যারেস এবং পিনাটেস ছিল পারিবারিক দেবতা। ভেস্তা ছিলেন চুল্লির দেবী। দুই মুখবিশিষ্ট জেনাস ছিলেন সমস্ত কিছুর শুরুর দেবতা। প্রতিটা পেশার নিজ নিজ রক্ষক দেবতা বা দেবী ছিল। রোমীয়রা এমনকী বিশ্বাস করত যে, বিভিন্ন ধারণা, মতবাদ ও গুণাবলির জন্যও দেবদেবী রয়েছে। প্যাক্স শান্তি, স্যালুস স্বাস্থ্য, পুডিকিটিয়া বিনয় ও সতীত্ব, ফিডেস বিশ্বস্ততা, ভারটুস সাহস এবং ভলুপ্টাস আনন্দকে রক্ষা করত। রোমীয়দের প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটা কাজ দেবতাদের ইচ্ছাতেই সম্পাদিত হয় বলে মনে করা হতো। তাই, কোনো কাজে এক অনুকূল ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য রীতিগত প্রার্থনা, বলিদান এবং উৎসবের মাধ্যমে উপযুক্ত দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে হতো।

দেবদেবীদের ইচ্ছা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার একটা উপায় ছিল, শুভ-অশুভ লক্ষণ খোঁজা। এই অভ্যাসগুলোর মধ্যে সর্বপ্রধান ছিল, বলিকৃত পশুর অন্ত্র পরীক্ষা করা। এইরকম মনে করা হতো, এই অঙ্গগুলোর অবস্থা ও বাহ্যিক রূপ ইঙ্গিত করে যে, দেবদেবীরা তাদের কাজকে অনুমোদন করেছিল নাকি প্রত্যাখ্যান করেছিল।

সাধারণ কাল পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে, রোমীয়রা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, তাদের প্রধান দেবদেবীরা ও গ্রিকদের নির্দিষ্ট কিছু দেবদেবী একই ছিল—জুপিটারই ছিলেন জিউস, জুনোই ছিলেন হেরা ও এইরকম আরও অন্যান্য দেবদেবী। এ ছাড়া, রোমীয়রা সেই পৌরাণিক কাহিনিগুলোকেও গ্রহণ করে নিয়েছিল, যেগুলোর সঙ্গে গ্রিক দেবদেবীদের মিল ছিল। এই কাহিনিগুলো কোনোভাবেই দেবদেবীদের সন্তুষ্ট করত না, যাদের মানুষের মতো একইরকম দোষত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, জিউসকে একজন ধর্ষণকারী ও শিশুকামী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার মরণশীল ব্যক্তি ও তথাকথিত অমর ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ছিল। দেবদেবীদের নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড—প্রাচীন থিয়েটারগুলোতে উচ্চপ্রশংসিত বিষয়গুলো—তাদের উপাসকদের এইরকম মনে করতে পরিচালিত করত যে, তারাও এই নোংরা অভ্যাসগুলোতে রত হতে পারে।

সম্ভবত অল্পসংখ্যক শিক্ষিত লোক এই কাহিনিগুলোকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে নিয়েছিল। কেউ কেউ সেগুলোকে রূপক বলে ব্যাখ্যা করেছিল। এই বিষয়টা হয়তো দেখায় যে, কেন পন্তীয় পীলাত এই বিখ্যাত প্রশ্নটা করেছিলেন যে, “সত্য কি?” (যোহন ১৮:৩৮) এটা “শিক্ষিত লোকেদের এই সাধারণ চিন্তাধারাকে” প্রকাশ করেছে যে, “কোনো কিছু সম্বন্ধে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব।”

সম্রাট উপাসনা

অগাস্টাসের শাসনকালে (সা.কা.পূ. ২৭ থেকে সা.কা. ১৪ সাল পর্যন্ত) সম্রাট উপাসনা শুরু হয়। বিশেষ করে প্রাচ্যের গ্রিকভাষী প্রদেশগুলোতে, অনেকেই অগাস্টাসের প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা বোধ করেছিল, যিনি দীর্ঘদিনব্যাপী যুদ্ধের পর শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লোকেরা এমন একজন কর্তৃপক্ষের অধীনে স্থায়ী সুরক্ষা পেতে চেয়েছিল, যাকে তারা দেখতে পারত। তারা এমন একটা প্রতিষ্ঠান চেয়েছিল, যেটা ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর করতে, দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে এবং সেটার “পরিত্রাতার” অধীনে বিশ্বকে একতাবদ্ধ করতে পারবে। ফল স্বরূপ, সম্রাটকে একজন দেবতা হিসেবে দেখা হতো।

যদিও অগাস্টাস জীবিত থাকাকালীন তাকে একজন দেবতা বলে ডাকতে অনুমতি দেননি কিন্তু তিনি দাবি করেছিলেন যে, রোমের মূর্ত প্রতীক হিসেবে এক দেবীকে—রোমা দিয়াকে—যেন উপাসনা করা হয়। অগাস্টাসের মৃত্যুর পর তাকে একজন দেবতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এভাবে এই প্রদেশগুলোতে রোম ও সেইসঙ্গে এর শাসকদের প্রতি উপাসনা প্রদান করা ও দেশপ্রেম দেখানো হয়েছিল। এই নতুন সম্রাট উপাসনা, যা শীঘ্র সমস্ত প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রকাশের এক উপায় হয়ে উঠেছিল।

ডমিশিয়ান, যিনি সা.কা. ৮১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত সম্রাট ছিলেন, তিনিই ছিলেন প্রথম রোমীয় শাসক, যিনি দেবতা হিসেবে উপাসনা পেতে চেয়েছিলেন। তার সময়েই, রোমীয়রা যিহুদিদের থেকে খ্রিস্টানদের আলাদা করেছিল এবং তাদেরকে একটা নতুন ধর্মীয় দল হিসেবে মনে করে তাদের বিরোধিতা করেছিল। সম্ভবত ডমিশিয়ানের শাসনকালেই, প্রেরিত যোহনকে “যীশুর সাক্ষ্য” প্রযুক্ত পাট্‌ম দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়েছিল।—প্রকা. ১:৯.

প্রকাশিত বাক্য বইটি যোহনের নির্বাসনে থাকাকালীন লেখা হয়েছিল। এই বইয়ে তিনি আন্তিপার বিষয়ে উল্লেখ করেন, যিনি সম্রাট উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র পর্গামে নিহত হয়েছিলেন। (প্রকা. ২:১২, ১৩) সেই সময়েই হয়তো সম্রাট-শাসিত সরকার এইরকম বিষয় চালু করেছিল, যেন খ্রিস্টানরা রাষ্ট্রীয় ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান পালন করে। এটা হোক বা না হোক, এই আলোচনার শুরুতে উল্লেখিত ট্র্যাজেনের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে যেমন ইঙ্গিত করা হয়েছিল, সা.কা. ১১২ সালের মধ্যে প্লিনি দাবি করেছিলেন, যেন বিথুনিয়ার খ্রিস্টানরা এই ধরনের আচারঅনুষ্ঠান পালন করে।

তার কাছে আনা বিষয়গুলোকে প্লিনি যেভাবে মীমাংসা করেছিলেন, সেইজন্য ট্র্যাজেন প্লিনির প্রশংসা করেছিলেন এবং তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, যে-খ্রিস্টানরা রোমীয় দেবদেবীদের উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করবে, তাদের যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। “কিন্তু,” ট্র্যাজেন লিখেছিলেন, “একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে খ্রিস্টান বলে অস্বীকার করেন এবং আমাদের দেবদেবীর কাছে মিনতি করার দ্বারা প্রমাণ দেন যে, তিনি একজন খ্রিস্টান নন, তখন তার অনুতাপের জন্য যেন তাকে (পূর্বের যেকোনো সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও) ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”

রোমীয়রা এমন কোনো ধর্মের কথা কল্পনাই করতে পারত না, যে-ধর্ম এর অনুসারীদের কাছ থেকে একাগ্র ভক্তি চায়। রোমের দেবদেবীরা এইরকম একাগ্র ভক্তি দাবি করেনি, তাহলে খ্রিস্টানদের ঈশ্বর কেন তা দাবি করবেন? এইরকম মনে করা হতো যে, রাষ্ট্রীয় দেবদেবীর উপাসনা করা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত করত। তাই, তাদেরকে উপাসনা করতে অস্বীকার করা দেশদ্রোহিতা বলে বিবেচনা করা হতো। প্লিনি যেমন বুঝতে পেরেছিলেন, অধিকাংশ খ্রিস্টানকে দিয়ে জোরপূর্বক কিছু করানোর কোনো উপায়ই ছিল না। তাদের কাছে, এইরকম কাজ করার অর্থ ছিল যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ততা আর তাই অসংখ্য প্রাথমিক খ্রিস্টান প্রতিমাপূজারূপ সম্রাট উপাসনার পরিবর্তে বরং মৃত্যুবরণ করাকে বেছে নিয়েছিল।

বর্তমানে, কেন এটা আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত? কিছু কিছু দেশে, আশা করা হয় যে, নাগরিকরা যেন জাতীয় প্রতীকগুলোকে শ্রদ্ধা করে। খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা নিশ্চিতভাবে জাগতিক সরকারের কর্তৃত্বকে সম্মান করি। (রোমীয় ১৩:১) কিন্তু, জাতীয় পতাকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনুষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আমরা যিহোবা ঈশ্বর যে ‘স্বগৌরব [“একাগ্র ভক্তি,” NW]’ চান, সেটার দ্বারা ও সেইসঙ্গে তাঁর বাক্যের এই পরামর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হই যে, “প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন কর” এবং “প্রতিমাগণ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (১ করি. ১০:১৪; ১ যোহন ৫:২১; নহূম ১:২) যিশু বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।” (লূক ৪:৮) তাই, আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, তাঁর প্রতি যেন ক্রমাগত আনুগত্য বজায় রাখি।

[৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

সত্য খ্রিস্টানরা যিহোবার প্রতি তাদের একাগ্র ভক্তি প্রদান করে থাকে

[৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রাথমিক খ্রিস্টানরা সম্রাট অথবা বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি উপাসনা করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল

সম্রাট ডমিশিয়ান

দ্যুপিতর (জিউস)

[সৌজন্যে]

Emperor Domitian: Todd Bolen/Bible Places.com; Zeus: Photograph by Todd Bolen/Bible Places.com, taken at Archaeological Museum of Istanbul

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইফিষের খ্রিস্টানরা জনপ্রিয় দেবী দীয়ানার উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল।—প্রেরিত ১৯:২৩-৪১