সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ভাইয়েরা—আত্মার উদ্দেশে বুনুন এবং আকাঙ্ক্ষী হোন!

ভাইয়েরা—আত্মার উদ্দেশে বুনুন এবং আকাঙ্ক্ষী হোন!

ভাইয়েরা—আত্মার উদ্দেশে বুনুন এবং আকাঙ্ক্ষী হোন!

“আত্মার উদ্দেশে যে বুনে, সে . . . অনন্ত জীবনরূপ শস্য পাইবে।”—গালা. ৬:৮.

১, ২. কীভাবে মথি ৯:৩৭, ৩৮ পদের কথাগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে আর এর ফলে মণ্ডলীগুলোতে কোন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে?

 আপনারা বর্তমানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে দেখছেন! যিশু খ্রিস্টের দ্বারা কথিত কাজ পুরোদমে চলছে। “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প,” যিশু বলেছিলেন। “অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (মথি ৯:৩৭, ৩৮) যিহোবা ঈশ্বর অসাধারণ উপায়ে এই ধরনের প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন। ২০০৯ সালের পরিচর্যা বছরে বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীর সংখ্যা ২,০৩১টা বৃদ্ধি পেয়েছে আর এর ফলে সেই সংখ্যা ১,০৫,২৯৮-তে গিয়ে পৌঁছেছে। আর গড়ে প্রতিদিন ৭৫৭ জন ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নিয়েছে!

এই ধরনের বৃদ্ধির কারণে মণ্ডলীগুলোতে শিক্ষাদানের ও পালকীয় কাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য ভাইদের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। (ইফি. ৪:১১) দশকের পর দশক ধরে, যিহোবা তাঁর মেষদের চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য যোগ্য পুরুষদের গড়ে তুলেছেন এবং আমরা নিশ্চিত যে, তিনি ক্রমাগত তা করে যাবেন। মীখা ৫:৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের এই আশ্বাস দেয় যে, শেষকালে যিহোবার লোকেদের মধ্যে “সাত জন পালরক্ষক” এবং ‘আট জন নরপতি’ থাকবে, যা চিত্রিত করে যে, তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এক বিরাট সংখ্যক যোগ্য পুরুষ থাকবে।

৩. ‘আত্মার উদ্দেশে বুনিবার’ অর্থ কী, তা ব্যাখ্যা করুন।

আপনি যদি যিহোবার একজন বাপ্তাইজিত পুরুষ সাক্ষি হয়ে থাকেন, তাহলে কী আপনাকে সেবা করার বিশেষ সুযোগগুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে সাহায্য করতে পারে? এর জন্য একটা প্রধান বিষয় হল, আপনাকে ‘আত্মার উদ্দেশে বুনিতে হইবে।’ (গালা. ৬:৮) এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এমনভাবে জীবনযাপন করা, যা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে আপনার জীবনে নির্দ্বিধায় কাজ করার সুযোগ দেবে। “মাংসের উদ্দেশে” না ‘বুনিবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। আরাম-আয়েশ, অবকাশযাপন এবং আমোদপ্রমোদের কারণে ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে হ্রাস পেতে দেবেন না। সমস্ত খ্রিস্টানের ‘আত্মার উদ্দেশে বোনা’ উচিত এবং যে-পুরুষরা তা করে, তারা হয়তো পরে মণ্ডলীতে বিশেষ সুযোগগুলোর জন্য যথেষ্ট যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে। যেহেতু বর্তমানে পরিচারক দাস ও প্রাচীনদের অনেক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তাই এই প্রবন্ধ বিশেষভাবে খ্রিস্টান পুরুষদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। অতএব ভাইয়েরা, আমরা আপনাদেরকে এই প্রবন্ধ প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

এক উত্তম কাজের জন্য আকাঙ্ক্ষী হোন

৪, ৫. (ক) মণ্ডলীতে বাপ্তাইজিত পুরুষদের কোন বিশেষ সুযোগগুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে অনুরোধ করা হয়েছে? (খ) কীভাবে একজন ব্যক্তি আকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন?

একজন খ্রিস্টান পুরুষ এমনি এমনিই একজন অধ্যক্ষ হয়ে ওঠেন না। তাকে অবশ্যই এই ‘উত্তম কার্য্যের’ জন্য বাঞ্ছা করতে বা আকাঙ্ক্ষী হতে হবে। (১ তীম. ৩:১) এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, সহবিশ্বাসীদের চাহিদাগুলোর প্রতি প্রকৃতই যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে তাদের সেবা করা। (পড়ুন, যিশাইয় ৩২:১, ২.) যে-ব্যক্তি সঠিক মনোভাব সহকারে আকাঙ্ক্ষী হন, তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নন। এর পরিবর্তে, তিনি নিঃস্বার্থভাবে অন্যদের উপকার করার জন্য অনেক আকাঙ্ক্ষী।

একজন ব্যক্তি, শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ যোগ্যতাগুলো পূরণ করার জন্য প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে পরিচারক দাস এবং অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হতে চান। (১ তীম. ৩:১-১০, ১২, ১৩; তীত ১:৫-৯) আপনি যদি একজন উৎসর্গীকৃত পুরুষ হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি প্রচার কাজে পূর্ণরূপে অংশ নিই এবং অন্যদেরও এতে অংশ নিতে সাহায্য করছি? আমি কি আমার সহউপাসকদের মঙ্গলের প্রতি আন্তরিক আগ্রহ দেখানোর মাধ্যমে তাদেরকে গেঁথে তুলছি? আমার কি ঈশ্বরের বাক্যের একজন উত্তম ছাত্র হিসেবে সুনাম রয়েছে? আমি কি আমার মন্তব্যগুলোর গুণগত মানকে উন্নত করছি? আমি কি অধ্যবসায়ের সঙ্গে সেই কার্যভারগুলো পালন করি, যেগুলো প্রাচীনরা আমাকে আস্থা সহকারে প্রদান করে?’ (২ তীম. ৪:৫) এই ধরনের প্রশ্নগুলো নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।

৬. মণ্ডলীর দায়িত্বগুলোর জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার একটা প্রধান বিষয় কী?

মণ্ডলীর দায়িত্বগুলোর জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার আরেকটা উপায় হচ্ছে, ‘ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা আন্তরিক মনুষ্যের সম্বন্ধে শক্তিতে সবলীকৃত হওয়া।’ (ইফি. ৩:১৬) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন হওয়া, একটা পদে নির্বাচিত হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। এই বিশেষ সুযোগ কেবল আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমে লাভ করা যায়। কীভাবে আধ্যাত্মিক উন্নতি করা যায়? একটা উপায় হচ্ছে, আপনাকে ‘আত্মার বশে চলিতে’ এবং এর ফল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে। (গালা. ৫:১৬, ২২, ২৩) আপনি যখন বাড়তি দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য আধ্যাত্মিক গুণাবলির প্রমাণ দেন এবং উন্নতি করার জন্য প্রদত্ত পরামর্শ প্রয়োগ করেন, তখন আপনার ‘উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হইবে।’—১ তীম. ৪:১৫.

এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব প্রয়োজন

৭. অন্যদের সেবা করার সঙ্গে কী জড়িত?

অন্যদের সেবা করার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম জড়িত এবং এর জন্য এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব প্রয়োজন। যেহেতু খ্রিস্টান অধ্যক্ষরা হল আধ্যাত্মিক পালক, তাই পালের সমস্যাগুলো নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তা করে। লক্ষ করুন যে, প্রেরিত পৌলের পালকীয় কাজের দায়িত্বগুলো তাকে কতটা প্রভাবিত করেছিল। তিনি করিন্থের সহবিশ্বাসীদের বলেছিলেন: “অনেক ক্লেশ ও মনোবেদনার মধ্যে অনেক অশ্রুপাত করিতে করিতে তোমাদিগকে লিখিয়াছিলাম; তোমরা যেন দুঃখিত হও, সে জন্য নয়, কিন্তু তোমাদের প্রতি আমার যে অতিমাত্র প্রেম আছে, তাহা যেন জ্ঞাত হও।” (২ করি. ২:৪) এটা স্পষ্ট যে, পৌল তার কাজে সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করেছিলেন।

৮, ৯. কীভাবে পুরুষরা অন্যদের চাহিদাগুলোর যত্ন নিয়েছে, সেই সম্বন্ধে বাইবেলের কয়েকটা উদাহরণ দিন।

এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব সবসময়ই সেই পুরুষদের শনাক্তকারী চিহ্ন হয়ে এসেছে, যারা যিহোবার দাসদের পক্ষে পরিশ্রম করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কল্পনাই করতে পারি না যে, নোহ তার পরিবারের অন্যদের বলছেন: ‘জাহাজের কাজ শেষ হলে আমাকে বোলো, যেন আমিও তোমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারি।’ মোশি মিশরের ইস্রায়েলীয়দের এই কথা বলেননি: ‘আমি তোমাদের সঙ্গে লোহিত সাগরে সাক্ষাৎ করব। সেখানে যাওয়ার জন্য তোমাদের যথাসাধ্য কোরো।’ যিহোশূয় কখনো এই কথা বলেননি: ‘যিরীহোর প্রাচীর যখন ভেঙে পড়বে, তখন আমাকে খবর দিও।’ আর যিশাইয় অন্য কাউকে দেখিয়ে বলেননি: ‘এই সে, তাহাকে পাঠাও।’—যিশা. ৬:৮.

আমাদের জন্য সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন যিশু খ্রিস্ট, যিনি নিজেকে ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে দিয়েছিলেন। তিনি মানবজাতির মুক্তিদাতা হিসেবে কাজ করার জন্য স্বেচ্ছায় তাঁর কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন। (যোহন ৩:১৬) যিশুর আত্মত্যাগমূলক প্রেম কি আমাদেরও একইরকম মনোভাব দেখাতে অনুপ্রাণিত করে না? পালের প্রতি তার অনুভূতি সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে দীর্ঘসময়ের একজন প্রাচীন বলেছিলেন: “পিতরের প্রতি বলা যিশুর কথাগুলো—আমার মেষগণকে পালন করো—আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, সামান্য কয়েকটা প্রেমময় কথা অথবা সাধারণ এক দয়ার কাজ একজন ব্যক্তিকে কতটা উৎসাহিত করতে পারে। পালকীয় কাজটা আমি খুবই উপভোগ করি।”—যোহন ২১:১৬.

১০. কী খ্রিস্টান পুরুষদেরকে অন্যদের সেবা করার ব্যাপারে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করতে পারে?

১০ ঈশ্বরের পালের ব্যাপারে মণ্ডলীর উৎসর্গীকৃত পুরুষরা নিশ্চিতভাবেই যিশুর মতো মনোভাব প্রতিফলিত করতে চায়, যিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব” বা সতেজ করব। (মথি ১১:২৮) ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস এবং মণ্ডলীর প্রতি ভালোবাসা, খ্রিস্টান পুরুষদের এই উত্তম কাজের জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে অনুপ্রাণিত করে, এইরকম মনে করতে পরিচালিত করে না যে, এটা এক বিরাট ত্যাগস্বীকারমূলক অথবা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু, একজন ব্যক্তির যদি নির্দিষ্টভাবে এই ব্যাপারে কোনো আকাঙ্ক্ষাই না থাকে, তাহলে? একজন ভাই কি মণ্ডলীতে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারেন?

সেবা করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

১১. কীভাবে একজন ব্যক্তি অন্যদেরকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারেন?

১১ নিজেকে অযোগ্য মনে করার অনুভূতি যদি আপনাকে আকাঙ্ক্ষী হতে বাধা দিয়ে থাকে, তাহলে পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা আপনার জন্য উপযুক্ত। (লূক ১১:১৩) যিহোবার আত্মা আপনাকে এই ক্ষেত্রে আপনার যেকোনো উদ্‌বিগ্নতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। সেবা করার এই আকাঙ্ক্ষা ঈশ্বর প্রদত্ত কারণ যিহোবার আত্মাই একজন ভাইকে আকাঙ্ক্ষী হতে অনুপ্রাণিত করে এবং এরপর পবিত্র সেবা প্রদান করার শক্তি জুগিয়ে থাকে। (ফিলি. ২:১৩; ৪:১৩) তাই, সেবা করার বিশেষ সুযোগগুলো গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার ব্যাপারে যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করা আপনার জন্য উপযুক্ত।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫.

১২. কীভাবে একজন ব্যক্তি, তাকে আস্থা সহকারে যে-দায়িত্বগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পালন করার জন্য পর্যাপ্ত প্রজ্ঞা লাভ করতে পারেন?

১২ পালের চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়াকে পীড়নকর ও দুর্বহ বলে মনে হওয়ায় একজন খ্রিস্টান হয়তো আকাঙ্ক্ষী হতে চান না। অথবা তিনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, দায়িত্বগুলো পালন করার ব্যাপারে তার পর্যাপ্ত প্রজ্ঞার অভাব রয়েছে। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তিনি ঈশ্বরের বাক্য এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর আরও অধ্যবসায়ী ছাত্র হওয়ার মাধ্যমে প্রজ্ঞা লাভ করতে পারেন। তিনি হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আমি কি ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার জন্য সময় আলাদা করে রাখছি এবং জ্ঞান বা প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করছি?’ শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে।” (যাকোব ১:৫) আপনি কি এই অনুপ্রাণিত কথাগুলো বিশ্বাস করেন? শলোমনের প্রার্থনার উত্তরে ঈশ্বর তাকে “জ্ঞানশালী ও বুঝিবার চিত্ত” দান করেছিলেন, যা তাকে বিচার করার সময় ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করেছিল। (১ রাজা. ৩:৭-১৪) এটা ঠিক যে, শলোমনের ব্যাপারটা ছিল আলাদা। তা সত্ত্বেও, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ঈশ্বর যে-পুরুষদেরকে আস্থা সহকারে মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি প্রজ্ঞা দান করবেন, যাতে তারা তাঁর মেষদের সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারে।—হিতো. ২:৬.

১৩, ১৪. (ক) কীভাবে পৌল “খ্রীষ্টের প্রেম” দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, তা ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে আমাদের “খ্রীষ্টের প্রেম” দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১৩ অন্যদেরকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ক্ষেত্রে আরেকটা সহায়ক হল, যিহোবা ও তাঁর পুত্র আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। উদাহরণস্বরূপ, ২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫ পদ বিবেচনা করুন। (পড়ুন।) কীভাবে “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে”? ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের জন্য তাঁর জীবন দান করে খ্রিস্ট যে-প্রেম দেখিয়েছেন, তা এতটাই উল্লেখযোগ্য যে, এর জন্য আমাদের উপলব্ধি যতই বৃদ্ধি পায়, ততই আমাদের হৃদয় গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। খ্রিস্টের প্রেম পৌলের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। এটা তাকে স্বার্থপরভাবে কাজ করা থেকে বিরত করেছিল এবং ঈশ্বরের ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীর ভিতরের এবং বাইরের সহমানবদের সেবা করাকে তার প্রধান লক্ষ্য করে তুলতে সাহায্য করেছিল।

১৪ লোকেদের প্রতি খ্রিস্টের যে-প্রেম রয়েছে, তা নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে অনুপ্রাণিত করে। এর ফলে আমরা বুঝতে পারি যে, স্বার্থপর লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছোটার ও মূলত নিজেদেরকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে জীবনযাপন করার দ্বারা ‘মাংসের উদ্দেশে বুনে’ চলা আমাদের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। এর পরিবর্তে, আমরা ঈশ্বর আমাদেরকে যে-কাজ দিয়েছেন, সেটাকে প্রথম স্থানে রাখার জন্য আমাদের জীবনে রদবদল করি। আমরা প্রেমের দ্বারা আমাদের ভাইবোনদের “দাস” হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হই। (পড়ুন, গালাতীয় ৫:১৩.) আমরা যদি নিজেদেরকে যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাসদের পক্ষে নম্রভাবে সেবারত দাস হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মান সহকারে আচরণ করব। নিশ্চিতভাবেই, আমরা শয়তানের দ্বারা প্রবর্তিত দোষ ধরার এবং বিচার করার মনোভাব অনুকরণ করব না।—প্রকা. ১২:১০.

পরিবারগত এক প্রচেষ্টা

১৫, ১৬. পরিবারের সদস্যরা কোন ভূমিকা পালন করে, যখন একজন পুরুষ পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন হিসেবে নিয়োগ লাভ করার জন্য যোগ্য হতে চান?

১৫ একজন ভাই যদি বিবাহিত পুরুষ হয়ে থাকেন এবং তার যদি সন্তান থাকে, তাহলে তিনি একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন হওয়ার জন্য যোগ্য কি না, তা নির্ধারণ করার সময় তার পরিবারের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বস্তুতপক্ষে, তার পরিবারের আধ্যাত্মিকতা ও সুনাম তার নিয়োগের ওপর এক বিরাট প্রভাব ফেলে। এটা স্বামী এবং পিতাকে সমর্থন করার ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়, যখন তিনি একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন হিসেবে মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো পালন করতে আকাঙ্ক্ষী হন।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৩:৪, ৫, ১২.

১৬ খ্রিস্টীয় পরিবারের সদস্যরা যখন একে অপরকে সহযোগিতা করে, তখন যিহোবা অনেক আনন্দিত হন। (ইফি. ৩:১৪, ১৫) পরিবারের একজন মস্তকের মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো পালন করার এবং “উত্তমরূপে” তার ঘর শাসন করার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। তাই, একজন প্রাচীন অথবা একজন পরিচারক দাসের তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সকলে প্রতি সপ্তাহে পারিবারিক উপাসনা থেকে উপকার লাভ করতে পারে। তার নিয়মিতভাবে তাদের সঙ্গে পরিচর্যায় অংশ নেওয়া উচিত। একই কারণে, পরিবারের সদস্যদেরও পরিবারের মস্তকের প্রচেষ্টার সঙ্গে সহযোগিতা করা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি কি আবারও সেবা করবেন?

১৭, ১৮. (ক) একজন ভাই যদি এখন আর দায়িত্বে না থাকেন, তাহলে তার কী করার প্রয়োজন হতে পারে? (খ) একজন ভাই কোন দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারেন, যিনি অতীতে একজন প্রাচীন অথবা একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করতেন?

১৭ আপনি হয়তো একসময় একজন প্রাচীন অথবা একজন পরিচারক দাস ছিলেন কিন্তু এখন আর সেই দায়িত্বে নেই। আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন এবং এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তিনি এখনও আপনার জন্য চিন্তা করেন। (১ পিতর ৫:৬, ৭) আপনাকে কি কিছু রদবদল করতে বলা হয়েছিল? কোনো ত্রুটি থাকলে তা স্বীকার করতে ইচ্ছুক হোন এবং ঈশ্বরের সাহায্যে সেটার ওপর কাজ করুন। তিক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন। বিজ্ঞ হোন এবং এক ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করুন। কয়েক বছর ধরে সেবা করেছেন কিন্তু পরে সেবা করার বিশেষ সুযোগ হারিয়েছেন এমন একজন প্রাচীন বলেছিলেন: “একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার সময় আমি যেভাবে সভাতে উপস্থিত হতাম, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতাম এবং বাইবেল পাঠ করতাম, ঠিক সেই একই ধারা বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম আর আমি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। আমি ধৈর্যশীল হতে শিখেছিলাম কারণ আমি মনে করেছিলাম যে, এক বা দু-বছরের মধ্যে আমি আমার বিশেষ সুযোগ ফিরে পাব কিন্তু পুনরায় একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য প্রায় সাত বছর লেগেছিল। সেই সময়ে ক্লান্ত না হয়ে বরং ক্রমাগত আকাঙ্ক্ষী হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ আমাকে প্রচুর সাহায্য জুগিয়েছিল।”

১৮ একজন ভাই হিসেবে আপনার পরিস্থিতিও যদি সবেমাত্র বর্ণিত পরিস্থিতির মতো হয়ে থাকে, তাহলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন না। আপনার পরিচর্যা ও আপনার পরিবারের ওপর যিহোবা কীভাবে আশীর্বাদ করছেন, সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনার পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তুলুন, অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যান এবং দুর্বল ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান করুন। সর্বোপরি, যিহোবার একজন সাক্ষি হিসেবে ঈশ্বরের প্রশংসা করার ও সুসমাচার প্রচার করার যে-বিশেষ সুযোগ আপনার রয়েছে, সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন। *গীত. ১৪৫:১, ২; যিশা. ৪৩:১০-১২.

নতুনভাবে বিবেচনা করে দেখুন

১৯, ২০. (ক) সমস্ত বাপ্তাইজিত পুরুষকে কী করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে? (খ) পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

১৯ আগের চেয়ে এখন আরও বেশি অধ্যক্ষ এবং পরিচারক দাসদের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তাই, আমরা সমস্ত বাপ্তাইজিত পুরুষকে তাদের পরিস্থিতি নতুনভাবে বিবেচনা করে দেখার এবং নিজেদেরকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য অনুরোধ করছি: ‘আমি যদি একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন না হয়ে থাকি, তাহলে কেন আমি এইরকম এক দায়িত্ব পালন করছি না, সেটার কারণগুলো কি বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত?’ ঈশ্বরের আত্মা যেন আপনাদেরকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২০ মণ্ডলীর সমস্ত সদস্য তাদের সহবিশ্বাসীদের আত্মত্যাগমূলক প্রচেষ্টা থেকে উপকার লাভ করবে। আমরা যখন সদয় ও নিঃস্বার্থ কাজগুলোতে রত হই, তখন আমরা আনন্দ লাভ করি, যা অন্যদেরকে সেবা করার এবং আত্মার উদ্দেশে বোনার মাধ্যমে আসে। কিন্তু, পরের প্রবন্ধ যেমন দেখাবে যে, ঈশ্বরের আত্মাকে যেন আমরা দুঃখিত না করি। কীভাবে তা করা এড়ানো যেতে পারে?

[পাদটীকা]

^ ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০-৩২ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

মীখা ৫:৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদেরকে কোন বিষয়ে আশ্বাস দেয়?

• আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের সঙ্গে কী জড়িত, তা ব্যাখ্যা করুন।

• কীভাবে একজন ব্যক্তি অন্যদেরকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারেন?

• একজন পুরুষ যদি একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য যোগ্য হতে চান, তাহলে পরিবারের সহযোগিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আকাঙ্ক্ষী হওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন?