হারণ এক প্রাচীন কর্মব্যস্তময় স্থান
হারণ এক প্রাচীন কর্মব্যস্তময় স্থান
শাস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিদের, হারণ নামটা শুনলেই বিশ্বস্ত কুলপতি অব্রাহামের কথা মনে পড়ে যায়। ঊর থেকে কনান দেশে যাত্রা করার সময়, তিনি এবং তার স্ত্রী সারা ও সেইসঙ্গে তার বাবা তেরহ এবং তার ভাইপো লোট হারণে সাময়িকভাবে বসবাস করেছিলেন। সেখানে অব্রাহাম অনেক ধনসম্পদ সঞ্চয় করেছিলেন। তার বাবা মারা যাওয়ার পর, অব্রাহাম সেই দেশের উদ্দেশে যাত্রা চালিয়ে গিয়েছিলেন, যে-দেশ সম্বন্ধে সত্য ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (আদি. ১১:৩১, ৩২; ১২:৪, ৫; প্রেরিত ৭:২-৪) পরবর্তী সময়ে, অব্রাহাম তার বয়স্ক দাসকে হারণে বা নিকটবর্তী কোনো অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি ইস্হাকের জন্য স্ত্রী খুঁজে আনেন। অব্রাহামের নাতি যাকোবও সেখানে বেশ কয়েক বছর বাস করেছিলেন।—আদি. ২৪:১-৪, ১০; ২৭:৪২-৪৫; ২৮:১, ২, ১০.
অশূরীয় রাজা সন্হেরীব যখন যিহূদার রাজা হিষ্কিয়কে হুমকি দিয়েছিলেন, তখন তিনি অশূরীয় রাজাদের দ্বারা জয় করা ‘সকল জাতির’ মধ্যে হারণ নগরের বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন। এখানে উল্লেখিত “হারণ” শব্দটি শুধু সেই নগরকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এর আশেপাশের প্রদেশকেও নির্দেশ করেছিল। (২ রাজা. ১৯:১১, ১২) যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণী, হারণকে সোরের এক প্রধান ব্যাবসায়িক এলাকা বলে উল্লেখ করে, যেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে হারণের ভূমিকাকে নিশ্চিত করে।—যিহি. ২৭:১, ২, ২৩.
বর্তমানে হারণ এক ছোট্ট নগরমাত্র, যেটা পূর্ব তুরস্কের শানলিউরফার নিকটে অবস্থিত। কিন্তু এক সময়, হারণ নামক এই প্রাচীন নগরটা প্রকৃতই এক কর্মব্যস্তময় স্থান ছিল। হারণ হল সেই অল্পসংখ্যক প্রাচীন উপনিবেশের মধ্যে একটা, যেটার নাম এখনও একই রয়ে গিয়েছে, যা বাইবেলের সময়কালে ব্যবহৃত হতো। এর অশূরীয় উচ্চারণ, খারানুর অর্থ হতে পারে, “রাস্তা” বা “কর্মব্যস্তময় রাস্তা” আর তা ইঙ্গিত করে যে, হারণ বড়ো বড়ো নগরের মধ্যবর্তী স্থানে যে-বাণিজ্যিক পথগুলো রয়েছে, সেখানে অবস্থিত ছিল। হারণে খনন করে আবিষ্কৃত অভিলিখন অনুসারে, বাবিলের রাজা নেবোনাইডাসের মা, হারণের চন্দ্রদেবতা সিনের মন্দিরের মহাযাজিকা ছিলেন। কথিত আছে যে, নেবোনাইডাস এই মন্দিরটা পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এরপর, হারণ বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের সাক্ষি হয়েছে।
বর্তমানে, হারণ অতীতে যেমন ছিল, সেটার চেয়ে একেবারেই আলাদা। প্রাচীন হারণ অত্যন্ত উন্নত ও গুরুত্বপূর্ণ এক নগর ছিল আর তা বিশেষভাবে নির্দিষ্ট এক সময়কালে। কিন্তু, বর্তমানে হারণ হচ্ছে এমন এক নগর, যেখানে কেবল গম্বুজাকৃতির বাড়িঘর রয়েছে। এটার আশেপাশে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। ঈশ্বর যে-নতুন জগৎ আনতে যাচ্ছেন, সেখানে একসময় হারণে বাস করত এমন অনেকে—যাদের অন্তর্ভুক্ত অব্রাহাম, সারা ও লোট—পুনরুত্থিত হবে। খুব সম্ভবত, তারা আমাদেরকে হারণ সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু বলতে পারবে, যে-নগর এক প্রাচীন কর্মব্যস্তময় স্থান ছিল।
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
হারণের ধ্বংসাবশেষ
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
গম্বুজাকৃতির বাড়িঘর
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
বর্তমানে হারণ