সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভ করুন

ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভ করুন

ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভ করুন

“আমি মহাসমাজের মধ্যে তোমার স্তব করিব।”—গীত. ৩৫:১৮.

১-৩. (ক) কোন বিষয়টা কিছু খ্রিস্টানকে আধ্যাত্মিকভাবে বিপদজনক এক পরিস্থিতির মধ্যে পরিচালিত করতে পারে? (খ) কোথায় ঈশ্বরের লোকেরা সুরক্ষা লাভ করতে পারে?

 ছুটি কাটানোর সময়ে, জো এবং তার স্ত্রী রংবেরঙের ও নানা আকারের মাছে পরিপূর্ণ একটা প্রবাল প্রাচীরের ওপর দিয়ে ডুবসাঁতার কাটছিল। প্রাচীরের নীচটা দেখার জন্য তারা আরেকটু গভীরে যায়। তারা যখন এমন জায়গায় গিয়ে পড়ে, যেখানে জল হঠাৎ আরও গভীর হয়ে যায়, তখন জোয়ের স্ত্রী বলেন: “আমার মনে হয় আমরা অনেক গভীরে চলে যাচ্ছি।” “ভয় পেও না,” জো উত্তর দেন। “আমি জানি আমি কী করছি।” এর পরেই জো অবাক হয়ে বলেন, ‘সব মাছ কোথায় গেল?’ আতঙ্কিত হয়ে তিনি কারণটা দেখতে পান। গভীর জলের মধ্যে থেকে একটা হাঙর সোজা তার দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি সেটার একেবারে নাগালের মধ্যেই রয়েছেন। হাঙরটা যখন মাত্র প্রায় এক মিটার দূরে ছিল, তখন সেটা দিক পরিবর্তন করে অদৃশ্য হয়ে যায়।

একজন খ্রিস্টান শয়তানের বিধিব্যবস্থার বিভিন্ন আকর্ষণ—আমোদপ্রমোদ, কাজকর্ম, ধনসম্পদ—দ্বারা এতটা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে পারেন যে, তিনি বুঝতেই পারেন না তিনি আরও গভীর জলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। “আমার অভিজ্ঞতা আমাকে আমার সঙ্গীসাথির বিষয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে,” জো বলেন, যিনি একজন খ্রিস্টান প্রাচীন। “এমন জায়গায় সাঁতার কাটুন, যেখানে নিরাপদ ও উপভোগ্য আর তা হল মণ্ডলীর মধ্যে!” গভীর জলে সাঁতার কাটবেন না, যেখানে আপনি হয়তো নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও বিপদের মধ্যে দেখতে পাবেন। আপনি যদি কখনো নিজেকে এমন জায়গায় দেখতে পান, তাহলে সঙ্গেসঙ্গে ‘নিরাপদ জলের’ দিকে ফিরে আসুন। তা না হলে, আপনি আপনার আধ্যাত্মিকতাকে ধ্বংস করে ফেলার ঝুঁকি নিচ্ছেন।

বর্তমানে, এই জগৎ খ্রিস্টানদের জন্য এক বিপদজনক জায়গা। (২ তীম. ৩:১-৫) শয়তান জানে যে, তার সময় সংক্ষিপ্ত আর সে অসতর্ক ব্যক্তিদের গ্রাস করার জন্য বের হয়েছে। (১ পিতর ৫:৮; প্রকা. ১২:১২, ১৭) কিন্তু, আমরা অরক্ষিত নই। যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য এক নিরাপদ আধ্যাত্মিক আশ্রয়—খ্রিস্টীয় মণ্ডলী—জুগিয়েছেন।

৪, ৫. অনেক লোক তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কেমন বোধ করে এবং কেন?

জগৎ কেবলমাত্র সীমিত মাত্রায় নিরাপত্তা দিতে পারে—তা সেটা শারীরিক কিংবা আবেগগত, যা-ই হোক না কেন। অনেক লোক মনে করে যে, তাদের শারীরিক নিরাপত্তা অপরাধ, দৌরাত্ম্য, জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি আর এমনকী পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। সকলেই বার্ধক্যের বিভিন্ন সমস্যা ও অসুস্থতা ভোগ করে। আর যাদের চাকরি, ঘরবাড়ি, পর্যাপ্ত টাকাপয়সা ও কিছুটা সুস্বাস্থ্য রয়েছে, তারা হয়তো চিন্তা করে যে, সেগুলো কতদিন স্থায়ী হবে।

একইভাবে, অনেকে আবেগগত দিক দিয়েও নিরাপত্তা লাভ করতে পারছে না। দুঃখের বিষয় হল, বিয়ে ও একটা পরিবারের মধ্যে শান্তি এবং পরিতৃপ্তি লাভ করার আশা করেছে এমন লক্ষ লক্ষ লোক দেখেছে যে, তাদের প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে গিয়েছে। আর আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, গির্জায় যায় এমন অনেক ব্যক্তি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং তারা যে-নির্দেশনা লাভ করে, সেটার মূল্য সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছে। এর কারণ হল, তাদের ধর্মীয় নেতাদের আপত্তিকর আচরণ ও অশাস্ত্রীয় বিভিন্ন শিক্ষা। তাই, অনেক লোক মনে করে যে, বিজ্ঞান ও সহমানবদের ভালো বিষয়গুলোর ওপর আশা রাখা ছাড়া তাদের আর কোনো বাছাই নেই। অতএব, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমাদের চারপাশের লোকেরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে কিংবা তারা তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা না করাই আরও ভালো বলে মনে করে।

৬, ৭. (ক) যারা ঈশ্বরের সেবা করে ও যারা করে না, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্যের কারণ কী? (খ) আমরা কী বিবেচনা করব?

যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ এবং যারা এর অংশ নয়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কত পার্থক্যই না রয়েছে! এমনকী যদিও যিহোবার লোক হওয়া সত্ত্বেও আমাদেরকে আমাদের প্রতিবেশীদের মতো একই বিষয় ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কিন্তু আমাদের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪; মালাখি ৩:১৮.) কেন? কারণ আমরা বাইবেল থেকে মানবজাতি যে-পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, সেটার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাই আর আমরা জীবনের বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সুসজ্জিত। ফল স্বরূপ, আমরা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন নই। যিহোবার উপাসক হওয়া আমাদেরকে ভুল ও অশাস্ত্রীয় যুক্তি, বিভিন্ন অনৈতিক অভ্যাস এবং সেগুলোর পরিণতি থেকে সুরক্ষা করে। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্যরা এভাবে সেই শান্তি লাভ করে, যা অন্যেরা অনুভব করতে পারে না।—যিশা. ৪৮:১৭, ১৮; ফিলি. ৪:৬, ৭.

কিছু উদাহরণ হয়তো আমাদেরকে সেই নিরাপত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করার জন্য সাহায্য করতে পারে, যা যিহোবার সেবা করেনি এমন ব্যক্তিদের বিপরীতে বরং সেই ব্যক্তিরা উপভোগ করেছিল, যারা তাঁর সেবা করত। এই উদাহরণগুলো হয়তো আমাদেরকে নিজেদের যুক্তি ও অভ্যাসগুলো পরীক্ষা করে দেখার ও সেইসঙ্গে আমাদের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে দেওয়া ঈশ্বরের পরামর্শ আমরা আরও পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে পারি কি না, তা বিবেচনা করে দেখার জন্য পরিচালিত করতে পারে।—যিশা. ৩০:২১.

“আমার চরণ প্রায় টলিয়াছিল”

৮. যিহোবার দাসদের সবসময় কী করতে হয়েছে?

মানব ইতিহাসের শুরু থেকে, যারা যিহোবার সেবা করা ও বাধ্য থাকা বেছে নিয়েছে, তারা এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে, যারা তা বেছে নেয়নি। বস্তুতপক্ষে, যিহোবা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর উপাসক ও শয়তানের অনুসারীদের মধ্যে শত্রুতা থাকবে। (আদি. ৩:১৫) ঈশ্বরের লোকেরা ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত নীতিগুলোর পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে চারপাশে বিদ্যমান লোকেদের থেকে আলাদা আচরণ করেছে। (যোহন ১৭:১৫, ১৬; ১ যোহন ২:১৫-১৭) এই ধরনের অবস্থান নেওয়া সবসময় সহজ হয়নি। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার দাসদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মত্যাগমূলক জীবনযাপন করা প্রজ্ঞার কাজ কি না, সেই সম্বন্ধে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে।

৯. গীতসংহিতার ৭৩ গীতের রচয়িতা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা বর্ণনা করুন।

যিহোবার দাসদের মধ্যে একজন ব্যক্তি বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন কি না, সেই সম্বন্ধে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন। সেই ব্যক্তি ছিলেন গীতসংহিতার ৭৩ গীতের রচয়িতা ও খুব সম্ভবত আসফের একজন বংশধর। গীতরচকের মনে এইরকম প্রশ্ন এসেছিল যে, দুষ্ট লোকেদের প্রায়ই কেন সফল, সুখী ও সমৃদ্ধ বলে মনে হয় আর অন্যদিকে কিনা যিহোবার সেবা করার প্রচেষ্টা করে এমন ব্যক্তিরা পরীক্ষা ও কষ্ট ভোগ করে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৩:১-১৩.

১০. গীতরচকের উত্থাপিত বিষয়গুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?

১০ আপনি কি কখনো নিজেকে গীতরচকের লিপিবদ্ধ প্রশ্নগুলোর মতো একইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন? যদি করে থাকেন, তাহলে নিজেকে অত্যন্ত অপরাধী বলে মনে করার কিংবা আপনার বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে, এমন চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে, যিহোবার দাসদের মধ্যে কয়েক জন একইরকম চিন্তা করেছিল আর তাদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তিও ছিল, যাদের যিহোবা বাইবেল লেখার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। (ইয়োব ২১:৭-১৩; গীত. ৩৭:১; যির. ১২:১; হবক্‌. ১:১-৪, ১৩) বস্তুতপক্ষে, যিহোবার সেবা করার আকাঙ্ক্ষা করে এমন সকলকে অবশ্যই এই প্রশ্নটা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে ও সেইসঙ্গে এর উত্তরটা মেনে নিতে হবে: ঈশ্বরের সেবা করা ও বাধ্য থাকা কি সর্বোত্তম কাজ? এটা সেই বিচার্য বিষয়কে প্রতিফলিত করে, যা শয়তান এদন উদ্যানে উত্থাপন করেছিল। এটা ঐশিক সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত সর্বজনীন প্রশ্নের মূল বিষয়। (আদি. ৩:৪, ৫) তাই, আমাদের সকলের গীতরচকের উত্থাপিত বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত। আমাদের কি সেই দুষ্ট লোকেদের ঈর্ষা করা উচিত, যাদের দেখে মনে হয় যে তারা বেশ ভালোই আছে? আমাদের কি যিহোবার সেবা করা থেকে ‘টলিয়া’ পড়া বা সরে যাওয়া ও তাদের অনুকরণ করা উচিত? অবশ্য, শয়তান চায় যে, আমরা ঠিক তা-ই করি।

১১, ১২. (ক) কীভাবে গীতরচক তার সন্দেহগুলো কাটিয়ে উঠেছিলেন আর তা আমাদের কী শিক্ষা দেয়? (খ) কোন বিষয়টা আপনাকে গীতরচকের মতো একই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে?

১১ কোন বিষয়টা গীতরচককে তার সন্দেহগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল? যদিও তিনি ধার্মিকতা থেকে প্রায় সরে যাওয়ার বিষয়টা স্বীকার করেছিলেন, তবে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছিল, যখন তিনি “ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে” প্রবেশ করেছিলেন—অর্থাৎ যখন তিনি ঈশ্বরের আবাস বা মন্দিরে আধ্যাত্মিকমনা লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিলেন ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। তখন গীতরচকের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি অন্যায়কারীদের পরিণতির ভাগী হতে চাননি। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, তাদের জীবনধারা ও বাছাইগুলো তাদেরকে ‘পিচ্ছিল স্থানে’ রেখেছে। গীতরচক উপলব্ধি করেছিলেন যে, অনৈতিক কাজ করার কারণে যারা যিহোবাকে পরিত্যাগ করে, তারা অনিবার্যভাবেই “নানা ত্রাসে” ধ্বংস হবে, কিন্তু যিহোবার সেবা করে এমন লোকেরা তাঁর সমর্থন লাভ করবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৩:১৬-১৯, ২৭, ২৮.) কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি এই কথার সত্যতা দেখতে পেয়েছেন। শুধুমাত্র নিজের জন্য বেঁচে থাকা ও ঐশিক নিয়মের প্রতি কোনো সম্মান না থাকা অনেকের কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে কিন্তু এই ধরনের মনোভাবের মন্দ পরিণতি নিশ্চিত।—গালা. ৬:৭-৯.

১২ গীতরচকের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আর কী শিখতে পারি? তিনি ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রজ্ঞা লাভ করেছিলেন। তিনি তখনই স্পষ্টভাবে যুক্তি করতে শুরু করেছিলেন, যখন তিনি যিহোবার উপাসনাস্থলে গিয়েছিলেন। একইভাবে, বর্তমানে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে আমরা বিজ্ঞ পরামর্শদাতাদের খুঁজে পেতে ও গঠনমূলক আধ্যাত্মিক খাদ্য উপভোগ করতে পারি। তাই, যুক্তিসংগত কারণেই যিহোবা তাঁর দাসদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে বলেন। সেখানে তারা উৎসাহিত হবে এবং বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে উদ্দীপিত হবে।—যিশা. ৩২:১, ২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

বিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গীসাথি বাছাই করুন

১৩-১৫. (ক) দীণার কোন অভিজ্ঞতা হয়েছিল আর তা কী শিক্ষা দেয়? (খ) কেন সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করা হল এক সুরক্ষা?

১৩ যাকোবের মেয়ে দীণা হল এমন এক উদাহরণ, যে জগতের সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে মেলামেশা করার কারণে গুরুতর সমস্যায় পড়েছিল। আদিপুস্তকের বিবরণ আমাদের তার সম্বন্ধে জানায় যে, সে কনানের যুবতীদের সঙ্গে মেলামেশা করত, যে-এলাকায় তার পরিবার বাস করত। কনানীয়দের যিহোবার উপাসকদের মতো একইরকম উচ্চ নৈতিক মান ছিল না। বরং, প্রত্নতত্ত্ববিদরা যা খুঁজে পেয়েছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে, কনানীয়রা ইস্রায়েল দেশকে প্রতিমাপূজা, অনৈতিকতা, বিকৃত যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উপাসনা ও দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ করার দিকে পরিচালিত করেছিল। (যাত্রা. ২৩:২৩; লেবীয়. ১৮:২-২৫; দ্বিতীয়. ১৮:৯-১২) এই লোকেদের সঙ্গে দীণার মেলামেশা করার পরিণতি স্মরণ করে দেখুন।

১৪ শিখিম নামে একজন স্থানীয় পুরুষ, যাকে “আপন পিতৃকুলে সর্ব্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত” বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি দীণাকে দেখেছিলেন ‘এবং তাহাকে হরণ করিয়া তাহার সহিত শয়ন করিয়া, তাহাকে ভ্রষ্ট করিয়াছিলেন।’ (আদি. ৩৪:১, ২, ১৯) কী দুঃখজনক এক ঘটনা! আপনি কি মনে করেন যে, দীণা কখনো তার প্রতি এমনটা ঘটবে বলে কল্পনা করেছিল? সম্ভবত সে শুধুমাত্র স্থানীয় যুবক-যুবতীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিল, যাদেরকে সে ভালো মানুষ বলেই মনে করেছিল। কিন্তু, দীণা চরমভাবে প্রতারিত হয়েছিল।

১৫ এই বিবরণ আমাদের কী শিক্ষা দেয়? আমরা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করব অথচ কোনো খারাপ পরিণতি হবে না, এমনটা আশা করতে পারি না। শাস্ত্র বলে যে, “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করি. ১৫:৩৩) অন্যদিকে, সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা হল এক সুরক্ষা, যারা আপনার মতো একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী, উচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখে ও যিহোবাকে ভালোবাসে। এই ধরনের উত্তম মেলামেশা আপনাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করবে।—হিতো. ১৩:২০.

‘তোমরা আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ’

১৬. করিন্থ মণ্ডলীর কারো কারো সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল কী বলেছিলেন?

১৬ খ্রিস্টীয় মণ্ডলী অনেক ব্যক্তিকে তাদের কলুষিত অভ্যাসগুলো থেকে শুদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। প্রেরিত পৌল যখন করিন্থ মণ্ডলীর উদ্দেশে তার প্রথম চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি সেখানকার খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য যে-পরিবর্তনগুলো করেছিল, সেগুলো সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। কেউ কেউ ব্যভিচারী, প্রতিমাপূজক, পারদারিক, সমকামী, চোর, মাতাল ও অন্যান্য অভ্যাসে রত ছিল। “কিন্তু তোমরা . . . আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ,” পৌল তাদের বলেছিলেন।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.

১৭. কীভাবে বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা অনেকের জীবনকে পরিবর্তন করেছে?

১৭ বাইবেলের ওপর বিশ্বাস নেই এমন লোকেদের নির্ভরযোগ্য পরিচালনাকারী নীতির অভাব রয়েছে। তারা নিজেরাই নিজেদের পথ স্থির করে কিংবা তারা হয়তো কেবল তাদের চারপাশের অনৈতিক বিষয়গুলোর কাছে নতিস্বীকার করে, যেমনটা প্রাচীন করিন্থীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাসী হওয়ার আগে করেছিল। (ইফি. ৪:১৪) কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য ও উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধীয় তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞানের রূপান্তর করার ক্ষমতা রয়েছে। আর এই জ্ঞান সেইসমস্ত ব্যক্তির জীবনকে আরও ভালো করে, যারা শাস্ত্রীয় নির্দেশনা কাজে লাগায়। (কল. ৩:৫-১০; ইব্রীয় ৪:১২) আজকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অনেক সদস্যকেই হয়তো আপনি এইরকমটা বলতে শোনেন যে, যিহোবার ধার্মিক নীতিগুলো শেখার ও মেনে নেওয়ার আগে, তারা নৈতিক বাধানিষেধ ছাড়াই জীবনযাপন করত। কিন্তু, তারা পরিতৃপ্ত ও সুখী ছিল না। তারা কেবল তখনই শান্তি লাভ করেছে, যখন তারা ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ও বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে শুরু করেছিল।

১৮. একজন যুবতীর কোন অভিজ্ঞতা হয়েছিল আর তা কী প্রমাণ করে?

১৮ অন্যদিকে, অতীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ‘নিরাপদ জল’ থেকে সরে যাওয়া বেছে নিয়েছিল এমন কেউ কেউ এখন তাদের সিদ্ধান্তের জন্য তীব্র অনুশোচনা করে। একজন বোন, ধরুন যার নাম তানিয়া, তিনি বলেন যে, তিনি “সত্যে বড়ো হয়েছিলেন” কিন্তু ১৬ বছর বয়সে “জগতের প্রলোভনের পিছনে ছুটতে” গিয়ে মণ্ডলী ত্যাগ করেছিলেন। তিনি যে-পরিণতি ভোগ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে ছিল অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাত। তিনি এখন বলেন: “যে-তিন বছর আমি মণ্ডলীর বাইরে ছিলাম, তা আমার অনুভূতির ওপর এমন গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে যে, তা কখনো দূর হবে না। যে-বিষয়টা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না তা হল, আমি আমার অজাত সন্তানকে হত্যা করেছি। . . . যারা এমনকী একটু সময়ের জন্য হলেও জগতের ‘স্বাদ’ গ্রহণ করতে চায়, সেইসমস্ত অল্পবয়সিকে আমি বলতে চাই: ‘তা কোরো না!’ প্রথমে এর স্বাদ হয়তো ভালো লাগতে পারে কিন্তু পরে তা খুবই তিক্ত লাগবে। জগৎ শুধুমাত্র দুঃখই দিতে পারে। আমি তা জানি কারণ আমি এর স্বাদ গ্রহণ করেছি। যিহোবার সংগঠনের মধ্যেই থাকো! এটাই জীবনের একমাত্র পথ, যা সুখ নিয়ে আসে।”

১৯, ২০. খ্রিস্টীয় মণ্ডলী কোন সুরক্ষা প্রদান করে আর কীভাবে?

১৯ আপনাকে যদি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সুরক্ষিত পরিবেশ পরিত্যাগ করতে হতো, তাহলে আপনার কী হতো, তা একটু চিন্তা করুন। অনেকে সত্য গ্রহণ করার আগে তাদের অসার জীবনযাপনের বিষয়ে স্মরণ করে সেই সম্বন্ধে এমনকী চিন্তাও করতে চায় না। (যোহন ৬:৬৮, ৬৯) আপনার খ্রিস্টান ভাইবোনদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে থাকার মাধ্যমে, আপনি শয়তানের জগতে বিরাজমান দুঃখ ও দুর্দশা থেকে ক্রমাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা লাভ করতে পারেন। তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা এবং মণ্ডলীর সভাগুলোতে নিয়মিতভাবে যোগ দেওয়া আপনাকে যিহোবার ধার্মিক মানগুলোর পিছনে যে-প্রজ্ঞা রয়েছে, সেই সম্বন্ধে ক্রমাগত মনে করিয়ে দেবে এবং আপনাকে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করবে। গীতরচকের মতো মণ্ডলীর বা ‘মহাসমাজের মধ্যে সদাপ্রভুর স্তব করিবার’ উপযুক্ত কারণ আপনার রয়েছে।—গীত. ৩৫:১৮.

২০ অবশ্য, বিভিন্ন কারণে সমস্ত খ্রিস্টানকেই এমন সময় পার করতে হয়, যখন তাদের পক্ষে তাদের খ্রিস্টীয় নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা কঠিন বলে মনে হয়। তাদেরকে হয়তো কেবল সঠিক পথটা দেখিয়ে দিতে হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সহবিশ্বাসীদের সহযোগিতা করার জন্য আপনি—আর অবশ্যই মণ্ডলীর বাকি সকলে—কী করতে পারেন? পরবর্তী প্রবন্ধে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে, কীভাবে আপনি আপনার ভাইবোনদের সান্ত্বনা বা ‘আশ্বাস দিতে এবং গাঁথিয়া তুলিতে’ পারেন।—১ থিষল. ৫:১১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

গীতসংহিতার ৭৩ গীতের রচয়িতার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখি?

• দীণার উদাহরণ আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

• খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আপনি কেন সুরক্ষা লাভ করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যেখানে নিরাপদ, সেখানে সাঁতার কাটুন; মণ্ডলীর মধ্যেই থাকুন!