সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন সাথির বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা

একজন সাথির বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা

একজন সাথির বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা

মার্গারিটা ও তার স্বামী রাউল একসঙ্গে পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে অনেক বছর ধরে যিহোবাকে সেবা করেছে। * কিন্তু, তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের অল্প সময় পরেই রাউল যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেন। পরিশেষে, রাউল অনৈতিক জীবনযাপন করতে শুরু করেন এবং তাকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়। “যখন এই সমস্তকিছু ঘটেছিল,” মার্গারিটা বলেন, “তখন আমার মনে হয়েছিল যেন আমি মারা যাচ্ছি। আমি ভেঙে পড়েছিলাম আর আমি কী করব, তা বুঝতে পারছিলাম না।”

জেনের বিয়ের পর পরই তার স্বামী ভিন্ন এক উপায়ে জেনের নির্ভরতা ও ভালোবাসার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তিনি তাকে মারধর করতে শুরু করেছিলেন। “প্রথম বার যখন সে আমাকে ঘুষি মেরেছিল,” জেন বলেন, “তখন আমি হতবাক ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম এবং অপমানিত বোধ করেছিলাম। আমাকে মারধর করে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া তার এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আমি মনে করতাম যে, সবসময় ক্ষমা করা ও ভুলে যাওয়াটা ছিল আমার খ্রিস্টীয় বাধ্যবাধকতা। এ ছাড়া, আমি এও মনে করতাম যে, আমাদের সমস্যা সম্বন্ধে কাউকে—এমনকী আমাদের মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে—জানানো আনুগত্যহীনতার কাজ হবে। দুর্ব্যবহার করার ও ক্ষমা চাওয়ার এই অভ্যাস বছরের পর বছর ধরে চলেছিল। সবসময় আমি মনে করতাম যে, আমার স্বামী যাতে আমাকে ভালোবাসে, সেইজন্য আমি নিশ্চয়ই কিছু করতে পারি। শেষপর্যন্ত, সে যখন আমাকে ও আমাদের মেয়েকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল যে, আমি হেরে গিয়েছি আর বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমার আরও বেশি কিছু করা অথবা বলা উচিত ছিল।”

মার্গারিটা ও জেনের মতো, আপনিও হয়তো আবেগগত, আর্থিক এবং আধ্যাত্মিক কষ্ট ভোগ করছেন কারণ আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অথবা আপনি হয়তো এমন একজন স্বামী, যিনি আবেগগত কষ্ট ভোগ করছেন কারণ আপনার স্ত্রী অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। নিঃসন্দেহে, আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি, যেমনটা বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী ইঙ্গিত করে যে, “শেষ কালে” পারিবারিক বন্ধন হুমকির সম্মুখীন হবে, যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই স্নেহ একেবারেই থাকবে না। ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে কারো কারো দাবি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। (২ তীম. ৩:১-৫) সত্য খ্রিস্টানরা এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত নয়; তাই, আপনার সঙ্গে যদি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়ে থাকে, তাহলে কী আপনাকে সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

নিজেকে যিহোবার মতো করে দেখুন

প্রথম প্রথম, আপনার জন্য এটা বিশ্বাস করা হয়তো কঠিন বলে মনে হতে পারে যে, আপনি যাকে ভালোবাসেন, তিনি এতটা নিষ্ঠুরভাবে আপনাকে আঘাত করতে পারেন। এমনকী আপনি হয়তো তার পাপপূর্ণ আচরণের জন্য নিজেকে দোষ দিতে শুরু করতে পারেন।

কিন্তু মনে রাখবেন যে, এমনকী সিদ্ধ মানুষ যিশুর সঙ্গেও এমন একজন ব্যক্তি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, যাকে তিনি বিশ্বাস করতেন ও ভালোবাসতেন। প্রার্থনাপূর্বক অনেক চিন্তা করার পর, যিশু তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের অর্থাৎ প্রেরিতদের বেছে নিয়েছিলেন। সেই সময়ে ১২ জনই যিহোবার নির্ভরযোগ্য দাস ছিল। তাই, কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহূদা যখন ‘তাঁহাকে [শত্রুহস্তে] সমর্পণ করিয়াছিল [“বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিল,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন],’ তখন যিশু গভীরভাবে দুঃখার্ত হয়েছিলেন। (লূক ৬:১২-১৬) কিন্তু, যিহোবা যিহূদার কাজের জন্য যিশুর কাছ থেকে নিকাশ নেননি।

এটা ঠিক যে, বর্তমানে কোনো বিবাহসাথিই সিদ্ধ নন। উভয় সাথিই ভুলত্রুটি করবে। একজন অনুপ্রাণিত গীতরচক বাস্তবসম্মতভাবেই লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীত. ১৩০:৩) যিহোবাকে অনুকরণ করে, উভয় সাথিরই একে অপরের অসিদ্ধতাগুলো উপেক্ষা করা উচিত।—১ পিতর ৪:৮.

কিন্তু, “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:১২) তাই, একজন বিবাহসাথি যদি খারাপ কথাবার্তা বলার অথবা মারধর করার এক অভ্যাস গড়ে তোলেন, তাহলে দোষী সাথিকে অবশ্যই যিহোবার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। যেহেতু যিহোবা দৌরাত্ম্য এবং খারাপ কথাবার্তা বলাকে নিন্দা করেন, তাই একজন সাথির সঙ্গে এই ধরনের প্রেমহীন ও সম্মানহীন উপায়ে আচরণ করার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। (গীত. ১১:৫; ইফি. ৫:৩৩; কল. ৩:৬-৮) বস্তুতপক্ষে, কোনো খ্রিস্টান যদি বার বার ও অনুতাপহীনভাবে রাগের কাছে নতিস্বীকার করেন এবং পরিবর্তিত না হন, তাহলে তাকে অবশ্যই খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হবে। (গালা. ৫:১৯-২১; ২ যোহন ৯, ১০) এই ধরনের অখ্রিস্টীয় আচরণের বিষয়ে প্রাচীনদেরকে জানানোর কারণে একজন বিবাহসাথির নিজেকে দোষী মনে করার প্রয়োজন নেই। বস্তুতপক্ষে, এই ধরনের দুর্ব্যবহারের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবার সমবেদনা রয়েছে।

একজন বিবাহসাথি যখন ব্যভিচার করেন, তখন তিনি শুধুমাত্র নির্দোষ সাথির বিরুদ্ধেই নয় কিন্তু যিহোবার বিরুদ্ধেও পাপ করেন। (মথি ১৯:৪-৯; ইব্রীয় ১৩:৪) নির্দোষ সাথি যদি বাইবেলের নীতি অনুসারে জীবনযাপন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেন, তাহলে পারদারিক ব্যক্তির পাপপূর্ণ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নির্দোষ ব্যক্তির নিজেকে দোষী মনে করার কোনো প্রয়োজন নেই।

মনে রাখবেন যে, আপনি কেমন বোধ করেন, যিহোবা তা জানেন। তিনি নিজেকে ইস্রায়েল জাতির পতি বা স্বামীতুল্য কর্তা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এবং সেই জাতি আধ্যাত্মিক ব্যভিচারমূলক কাজ করার কারণে তিনি যে-দুঃখ পেয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে তাঁর বাক্যে অনেক হৃদয়স্পর্শী বিবরণ রয়েছে। (যিশা. ৫৪:৫, ৬; যির. ৩:১, ৬-১০) এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যদি কোনোভাবে আপনার বিবাহসাথির বিশ্বাসঘাতকতার কারণে চোখের জল ফেলেন, তাহলে সেই বিষয়ে যিহোবা ভালোভাবে অবগত আছেন। (মালাখি ২:১৩, ১৪) তিনি জানেন যে, আপনার সান্ত্বনা ও উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে।

যিহোবা যেভাবে সান্ত্বনা প্রদান করেন

যে-উপায়গুলোর মাধ্যমে যিহোবা সান্ত্বনা প্রদান করেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল খ্রিস্টীয় মণ্ডলী। জেন এই ধরনের সমর্থন লাভ করেছিলেন। “আমি যখন আবেগগতভাবে খুবই হতাশ ছিলাম, ঠিক সেই সময়ে সীমা অধ্যক্ষের পরিদর্শন ছিল,” জেন স্মরণ করে বলেন। “তিনি জানতেন যে, আমার স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ করার আবেদন করেছে বলে আমি কতটা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ১ করিন্থীয় ৭:১৫ পদের মতো শাস্ত্রপদগুলোর ওপর যুক্তি করতে আমাকে সাহায্য করার জন্য তিনি সময় করে নিয়েছিলেন। বাইবেলের বিভিন্ন পদ এবং তার সদয় মন্তব্য নিজেকে দোষী মনে করার অনুভূতি কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করেছিল ও কিছুটা মনের শান্তি প্রদান করেছিল।” *

আগে উল্লেখিত মার্গারিটাও দেখেছিলেন যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে যিহোবা ব্যবহারিক সাহায্য প্রদান করে থাকেন। “যখন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, আমার স্বামী অনুতপ্ত নয়,” মার্গারিটা বলেন, “তখন আমি আমার সন্তানদের নিয়ে অন্য এক শহরে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর, আমি দুই কামরার একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। পরের দিন, দুঃখে জর্জরিত হয়ে আমি যখন আমাদের ব্যাগগুলো খুলছিলাম, তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পাই। আমি মনে করেছিলাম যে, হয়তো বাড়িওয়ালি এসেছেন, যিনি পাশেই থাকতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, দরজায় সেই বোন এসেছিলেন, যিনি আমার মায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছিলেন এবং আমাদের পরিবারকে সত্য শিখতে সাহায্য করেছিলেন। আমার সঙ্গে দেখা হবে বলে তিনি আশা করেননি কিন্তু তার এই বাড়িতে আসার কারণ ছিল, তিনি আমার বাড়িওয়ালির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন। আমি এতটাই স্বস্তি বোধ করেছিলাম যে, আমি আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আমি আমার পরিস্থিতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলাম আর আমরা দুজনেই কেঁদেছিলাম। তিনি সঙ্গেসঙ্গে আমাদের জন্য সেই দিনের সভায় যোগদান করার ব্যবস্থা করেছিলেন। মণ্ডলী আমাদের স্বাগত জানিয়েছিল আর প্রাচীনরা আমার পরিবারের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিতে আমাকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহারিক ব্যবস্থাদি করেছিল।”

অন্যেরা যেভাবে সাহায্য করতে পারে

বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্যরা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহারিক সাহায্য প্রদান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মার্গারিটাকে তখন কাজ খুঁজতে হয়েছিল। মণ্ডলীর একটা পরিবার মার্গারিটার সন্তানদের স্কুলের পর প্রয়োজন হলে তাদের দেখাশোনা করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

মার্গারিটা বলেন, “ভাইবোনেরা যখন আমার ও আমার সন্তানদের সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়, তখন আমি তা সত্যিই উপলব্ধি করি।” এই ধরনের ব্যবহারিক সহযোগিতার দ্বারা মণ্ডলীর সদস্যরা ’পরস্পর এক জন অন্যের ভার বহন করিতে’ সাহায্য করে এবং তা করার মাধ্যমে তারা “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” পালন করে থাকে।—গালা. ৬:২.

অন্যদের পাপের কারণে যারা কষ্ট ভোগ করছে, তারা এই ধরনের ব্যবহারিক সাহায্যকে সত্যিই উপলব্ধি করে থাকে। মোনিক, যার স্বামী তাকে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং সেইসঙ্গে ক্রেডিট কার্ডে ১৫,০০০ মার্কিন ডলারের ঋণ ও মানুষ করে তুলতে হবে এমন চার সন্তানকে তার কাছে রেখে চলে গিয়েছিলেন, তিনি বলেন: “আমার আধ্যাত্মিক ভাইবোনেরা খুবই প্রেমময় ছিল। তাদের সমর্থন ছাড়া আমি বেঁচে থাকার কথা কল্পনাই করতে পারি না। আমি মনে করি যিহোবা সবচেয়ে চমৎকার ভাইদের জুগিয়ে দিয়েছিলেন, যারা আমার সন্তানদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল। এই ধরনের সাহায্য পেয়ে আমার সন্তানরা যে আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব হয়ে উঠেছে, তা দেখে আমি আনন্দিত হয়েছি। আমার যখন পরামর্শের প্রয়োজন হতো, তখন প্রাচীনরা আমাকে সাহায্য করত। যখনই আমার কারো সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হতো, তখনই তারা তা শুনত।”—মার্ক ১০:২৯, ৩০.

অবশ্য, একজন প্রেমময় বন্ধু নির্ণয় করতে পারেন যে, কখন অন্যের দুঃখজনক অভিজ্ঞতার বিষয়টা নিয়ে কথা না বলা সবচেয়ে ভালো। (উপ. ৩:৭) মার্গারিটা বলেন, “বেশিরভাগ সময়ই আমি আমার নতুন মণ্ডলীর বোনদের সঙ্গে আমার সমস্যাগুলো ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয় যেমন, প্রচার কাজ, আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন, আমাদের সন্তানদের বিষয়ে কথা বলা উপভোগ করতাম। আমি কৃতজ্ঞ যে, তারা আমার অতীতকে ভুলে যেতে এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে সাহায্য করেছিল।”

প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছাকে প্রতিরোধ করুন

কখনো কখনো, আপনার সাথির পাপের কারণে নিজেকে কোনোভাবে দোষী মনে করার পরিবর্তে আপনি হয়তো এই বিষয়টা নিয়ে ক্ষুব্ধ হতে পারেন যে, তার ভুলের কারণেই আপনি এত কষ্ট ভোগ করছেন। এই ক্ষোভ বৃদ্ধি পেলে, তা হয়তো যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার বিষয়ে আপনার সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো আপনার অবিশ্বস্ত সাথির প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার বিভিন্ন উপায় খোঁজার জন্য প্রলোভিত হতে পারেন।

আপনি যদি উপলব্ধি করেন যে, আপনার মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার এই ধরনের অনুভূতি গড়ে উঠছে, তাহলে আপনি হয়তো যিহোশূয় এবং কালেবের উদাহরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন। এই বিশ্বস্ত পুরুষরা প্রতিজ্ঞাত দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল। অন্য গুপ্তচরেরা বিশ্বাসের অভাব দেখিয়েছিল এবং লোকেদেরকে যিহোবার বাধ্য হওয়া থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। যিহোশূয় ও কালেব যখন ইস্রায়েল জাতিকে বিশ্বস্ত থাকার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল, তখন ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কেউ কেউ এমনকী তাদেরকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। (গণনা. ১৩:২৫–১৪:১০) ইস্রায়েলের কাজের ফল স্বরূপ, যিহোশূয় ও কালেব ৪০ বছর ধরে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছিল, তবে তাদের নিজেদের ভুলের জন্য নয় বরং অন্যদের ভুলের জন্য।

যিহোশূয় ও কালেব সম্ভবত হতাশ হয়ে পড়লেও তারা তাদের ভাইদের পাপের কারণে ক্ষুব্ধ হয়নি। তারা নিজেদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। প্রান্তরে ৪০ বছর কাটানোর পর, তারা লেবীয়দের সঙ্গে সেই প্রজন্মের রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হওয়ার এবং প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশের সুযোগ লাভ করার মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়েছিল।—গণনা. ১৪:২৮-৩০; যিহো. ১৪:৬-১২.

আপনার অবিশ্বস্ত সাথির কাজের ফলে আপনাকে হয়তো দীর্ঘসময়ের জন্য কষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। বিয়ে ভেঙে যেতে পারে আর সেইসঙ্গে আপনাকে হয়তো আবেগগত ও আর্থিক কষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। কিন্তু, হতাশাজনক চিন্তাভাবনার দ্বারা জর্জরিত হওয়ার পরিবর্তে মনে রাখবেন যে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে যিহোবার মানগুলোকে উপেক্ষা করে, তাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, তা তিনি ভালোভাবেই জানেন আর প্রান্তরে অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের প্রতি যা ঘটেছিল, সেই উদাহরণ তা-ই দেখায়।—ইব্রীয় ১০:৩০, ৩১; ১৩:৪.

আপনি মোকাবিলা করতে পারেন!

নেতিবাচক চিন্তাভাবনার দ্বারা নিজেকে ভারগ্রস্ত হতে দেওয়ার পরিবর্তে, আপনার মনকে যিহোবার চিন্তাভাবনার দ্বারা পূর্ণ করুন। “আমি দেখেছি যে, প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার টেপ রেকর্ডিংগুলো শোনা আমাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে,” জেন বলেন। “এ ছাড়া, সভাগুলোও শক্তির এক বিরাট উৎস ছিল। সভাগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা আমাকে সমস্যাগুলো ভুলে যেতে সাহায্য করেছে। একইভাবে প্রচার কাজও আমাকে সাহায্য করেছে। অন্যদেরকে যিহোবার ওপর বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করার দ্বারা আমি নিজের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছি। আর বাইবেল ছাত্রদের যত্ন নেওয়া আমাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করেছে।”

আগে উল্লেখিত মোনিক বলেন: “সভাগুলোতে নিয়মিতভাবে যোগদান করার এবং আমার পক্ষে যতটা সম্ভব ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার দ্বারা আমি সহ্য করতে সমর্থ হয়েছি। আমার পরিবার একে অন্যের এবং মণ্ডলীর আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আমার কঠোর পরীক্ষা নিজের দুর্বলতাগুলো বুঝতে সাহায্য করেছে। আমি পরীক্ষিত হয়েছি কিন্তু যিহোবার সাহায্যে আমি মোকাবিলা করতে সমর্থ।”

আপনিও এই ধরনের পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন। বিশ্বাসঘাতকতার কারণে কষ্ট পাওয়া সত্ত্বেও, পৌলের এই অনুপ্রাণিত পরামর্শ মেনে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করুন: “আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব।”—গালা. ৬:৯.

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ পৃথক থাকা ও বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের ১৪৩-১৪৮ ও ২৫১-২৫৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিত্যক্ত সাথিরা সেই ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা তাদেরকে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় সাহায্য করে