সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার সন্তানদের হৃদয়ে পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দিন

আপনার সন্তানদের হৃদয়ে পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দিন

আপনার সন্তানদের হৃদয়ে পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দিন

আপনার সন্তানদের ভবিষ্যৎকে উন্নত করার জন্য আপনি অতি গুরুত্বপূর্ণ যে-পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে তাদেরকে পাঠ ও অধ্যয়ন সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা। আর এই কাজগুলো কত আনন্দই না নিয়ে আসতে পারে! কারো কারো জন্য ছোটোবেলার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলো হল, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাবা-মায়ের পাঠ করা। পাঠ করা যেমন আনন্দদায়ক হতে পারে, তেমনই এর ফলাফলও আনন্দায়ক হতে পারে। এটা বিশেষভাবে ঈশ্বরের দাসদের বেলায় সত্য, যেহেতু বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। একজন খ্রিস্টান বাবা বলেছিলেন: “যে-বিষয়গুলোকে আমরা অত্যন্ত মূল্যবান বলে গণ্য করি, সেগুলো হচ্ছে পাঠ ও অধ্যয়ন করা।”

অধ্যয়নের উত্তম অভ্যাস আপনার সন্তানদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। (গীত. ১:১-৩, ৬) যদিও কীভাবে পাঠ করতে হয়, তা শেখা পরিত্রাণের জন্য এক চাহিদা নয় কিন্তু বাইবেল দেখায় যে, পাঠ করা আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রকাশিত বাক্য ১:৩ পদ বলে: “ধন্য, যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল পাঠ করে, ও যাহারা শ্রবণ করে।” অধিকন্তু, মনোযোগ দেওয়ার মূল্য যে অধ্যয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তা তীমথিয়কে দেওয়া প্রেরিত পৌলের এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে: “এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর।” কেন? “যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।”—১ তীম. ৪:১৫.

অবশ্য, কেবল পাঠ ও অধ্যয়ন করতে জানাই এই নিশ্চয়তা দেয় না যে, এই ক্ষমতাগুলো একজন ব্যক্তির জন্য উপকার নিয়ে আসবে। এই দক্ষতাগুলো রয়েছে এমন অনেকে সেগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবহেলা করে; এর পরিবর্তে, তারা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো করে থাকে। তাই, কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারজনক জ্ঞানের জন্য এক তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলতে পারে?

আপনার ভালোবাসা এবং আপনার উদাহরণ

সন্তানরা অধ্যয়ন পর্বগুলো উপভোগ করতে শেখে, যখন সেগুলো প্রেমের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। ওয়েন এবং ক্লদিয়া নামে এক খ্রিস্টান দম্পতি তাদের দুই সন্তানের কথা স্মরণ করে বলে: “তারা অধ্যয়নের সময়ের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করত কারণ সেটা এক বিশেষ সময় ছিল—তারা সুরক্ষিত ও স্বচ্ছন্দ বোধ করত। অধ্যয়নের বিষয়টা আসলেই তাদের এক প্রেমময় পরিবেশের কথা মনে পড়ত।” এমনকী, সন্তানরা যখন কিশোর বয়সের দিকে এগোতে থাকে, যে-বয়সে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে পারে, তখনও পারিবারিক অধ্যয়নের কার্যক্রমের সময় এক প্রেমময় পরিবেশ বজায় রাখা, অধ্যয়ন সম্বন্ধে তারা কেমন বোধ করে, সেই বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। ওয়েন এবং ক্লদিয়ার সন্তানরা এখন অগ্রগামী হিসেবে কাজ করছে আর এখনও তারা পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা থেকে উপকার লাভ করছে, যা তাদের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল।

ভালোবাসার একটা জোরালো সহায়ক হল, উদাহরণ। যে-সন্তানরা প্রায়ই তাদের বাবা-মাকে পাঠ ও অধ্যয়ন করতে দেখে, তারা খুব সম্ভবত এই কাজগুলোকে নিজেদের জীবনের এক স্বাভাবিক অংশ হিসেবে দেখে থাকে। কিন্তু, একজন বাবা অথবা মা হিসেবে আপনার জন্য যদি পাঠ করা কঠিন হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে আপনি এইরকম এক উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন? এরজন্য আপনাকে হয়তো আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে অথবা পাঠ সম্বন্ধে আপনার মনোভাবকে সমন্বয় করতে হতে পারে। (রোমীয় ২:২১) পাঠ করা যদি আপনার রোজকার তালিকার এক উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে থাকে, তাহলে তা আপনার সন্তানদেরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। আপনার অধ্যবসায়—বিশেষ করে বাইবেল পাঠ, সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি এবং পারিবারিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে—এই কার্যক্রমগুলোর মূল্য সম্বন্ধে এক স্পষ্ট বার্তা প্রদান করবে।

তাই, আপনার ভালোবাসা এবং উদাহরণ, সন্তানদের মধ্যে পাঠের প্রতি আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু, তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আপনি কোন ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন?

এমন এক ভালোবাসা, যা পাঠের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ওঠে

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কী, যেগুলো আপনার সন্তানদের হৃদয়ে পাঠের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন? একেবারে ছোটোবেলা থেকেই তাদের হাতে বই দিন। একজন খ্রিস্টান প্রাচীন, যার বাবা-মা তার হৃদয়ে পাঠের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দিয়েছিল, তিনি সুপারিশ করেন: “আপনার সন্তানদের হাতে বই দিন, যেন সেগুলো ব্যবহার করায় তারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তারা যদি তা করে, তাহলে বই তাদের সঙ্গী ও জীবনের এক অংশ হয়ে উঠবে।” এভাবে বাইবেলভিত্তিক বই—যেমন আমার বাইবেলের গল্পের বই-এর মতো প্রকাশনা—এমনকী পাঠ করতে পারার আগেই অনেক ছোটো ছেলে-মেয়ের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হয়ে ওঠে। আপনি যখন আপনার সন্তানদেরকে সঙ্গে নিয়ে এইরকম প্রকাশনা পড়েন, তখন আপনি কেবল তাদেরকে ভাষার সঙ্গেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “আত্মিক বিষয়” এবং ‘আত্মিক কথার’ বা শব্দের সঙ্গেও পরিচিত করাচ্ছেন।—১ করি. ২:১৩, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন।

নিয়মিতভাবে জোরে জোরে পাঠ করুন। প্রতিদিন আপনার সন্তানের সঙ্গে পাঠ করার এক তালিকা তৈরি করুন। তা করা তাদেরকে সঠিক উচ্চারণ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয় এবং পাঠ করার অভ্যাসকে বৃদ্ধি করে। আপনি যেভাবে পাঠ করেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যমী হোন, তাহলে তারাও উদ্যমী হবে। বস্তুতপক্ষে, আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে, আপনার সন্তানরা একই গল্প বার বার পাঠ করতে বলবে। তাদের কথা শুনুন! একসময়, তারা নতুন নতুন বিষয় সম্বন্ধে জানতে চাইবে। কিন্তু, সতর্ক থাকবেন যেন আপনার সন্তানদেরকে আপনার সঙ্গে পাঠ করার জন্য জোর না করেন। এক্ষেত্রে যিশু তাঁর শ্রোতাদের কেবল “শুনিবার ক্ষমতা অনুসারে” শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (মার্ক ৪:৩৩) আপনি যদি আপনার সন্তানদের জোর না করেন, তাহলে তারা প্রতিটা অধ্যয়ন পর্বের জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে থাকবে আর আপনি তাদের হৃদয়ে পাঠ করার প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দেওয়ার বিষয়ে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর দিকে আরও এগিয়ে যেতে পারবেন।

অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন এবং যা পাঠ করেন, তা নিয়ে আলোচনা করুন। আনন্দের বিষয় হল যে, আপনার সন্তানরা শীঘ্র অনেক শব্দের অর্থ শনাক্ত করতে, উচ্চারণ করতে এবং বুঝতে সমর্থ হবে। আপনি যা পাঠ করেন, তা আলোচনা করা তাদের উন্নতিতে সহায়তা করবে। কথাবার্তা বলা সন্তানদেরকে “সেই শব্দগুলো শিখতে” সাহায্য করে, “যেগুলো পরে পাঠ করার সময় তাদের শনাক্ত করতে ও বুঝতে হবে,” কীভাবে সন্তানদের উত্তম পাঠক হতে সাহায্য করা যায়, সেই সম্বন্ধে একটি বই ব্যাখ্যা করে। “যে-ছোটো ছেলে-মেয়েদের বিকাশমান মন শিক্ষিত হওয়ার প্রচেষ্টা করছে,” একই উৎস বলে চলে, তাদের সঙ্গে “কথা বলা অপরিহার্য—অধিক অর্থপূর্ণ . . . অধিক উত্তম।”

আপনার সন্তানদেরকে আপনার সামনে পড়তে বলুন এবং প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে উৎসাহিত করুন। আপনি নিজেই হয়তো প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে ও সেইসঙ্গে সম্ভাব্য উত্তরগুলো বলতে পারেন। এভাবে সন্তানরা জানতে পারে যে, বই হচ্ছে তথ্যের এক উৎস এবং তারা যে-শব্দগুলো পড়ছে, সেগুলোর অর্থ রয়েছে। এই পদ্ধতিটা বিশেষভাবে সেই সময়ে সাহায্যকারী, যখন আপনি যা পড়েন, তা সবচেয়ে অর্থপূর্ণ পাঠ্যাংশ, ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে হয়।—ইব্রীয় ৪:১২.

কিন্তু, কখনো ভুলে যাবেন না যে, পাঠ করার দক্ষতা অর্জন করা বেশ কঠিন। এই ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য সময় ও অভ্যাসের প্রয়োজন। * তাই, উদারভাবে প্রশংসা করার দ্বারা ছোটো ছেলে-মেয়েদের পাঠের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করার জন্য উৎসাহিত করুন। আপনার সন্তানদের প্রশংসা করা তাদেরকে পাঠের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করবে।

উপকারজনক এবং আনন্দদায়ক

কীভাবে অধ্যয়ন করতে হয়, সেই বিষয়ে আপনার সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া পাঠ করার উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করে। অধ্যয়নের সঙ্গে বিভিন্ন তথ্য শেখা এবং সেগুলো একটা অন্যটার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, তা বুঝতে পারা জড়িত। এর জন্য সংগঠিত করা, স্মরণে রাখা ও তথ্যকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। কোনো সন্তান যখন কীভাবে অধ্যয়ন করতে হয়, তা শেখে এবং অধ্যয়নের ব্যবহারিক মূল্য সম্বন্ধে বুঝতে পারে, তখন এটা উপকারজনক ও সেইসঙ্গে আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।—উপ. ১০:১০.

অধ্যয়ন করার অপরিহার্যতা সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা, দৈনিক শাস্ত্রপদ আলোচনা এবং এইরকম বিভিন্ন কাজ আপনার সন্তানদেরকে অধ্যয়নের দক্ষতা সম্বন্ধে শেখানোর চমৎকার সুযোগ প্রদান করে। চুপ করে বসা এবং কোনো একটা বিষয়ের ওপর স্বল্প সময়ের জন্য মনকে নিবিষ্ট করা তাদেরকে মনোযোগী হতে শিক্ষা দেবে, যা শেখার জন্য অপরিহার্য। অধিকন্তু, আপনি এই বিষয়ে বলার জন্য আপনার ছেলেকে উৎসাহিত করতে পারেন যে, সবেমাত্র সে যা শিখেছে তা কীভাবে ইতিমধ্যেই সে যা জানে, সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এটা তাকে তুলনা করতে শিক্ষা দেয়। এ ছাড়া, আপনার মেয়েকে সে যা পড়েছে, তা নিজের ভাষায় সারাংশ করতে বলা সম্বন্ধে কী বলা যায়? তা করা তাকে অর্থ বুঝতে ও স্মরণে রাখতে সাহায্য করবে। কোনো একটা প্রবন্ধ পড়ার পর, পুনরালোচনা করা অর্থাৎ মূল বিষয়গুলো পুনরায় বলা হচ্ছে স্মরণে রাখার ক্ষেত্রে আরেকটা সহায়ক, যে-সম্বন্ধে আপনি তাদের শিক্ষা দিতে পারেন। এমনকী ছোটো ছেলে-মেয়েদেরকেও অধ্যয়ন পর্বগুলোর বা মণ্ডলীর সভাগুলোর সময়, সংক্ষিপ্ত নোট নেওয়ার জন্য শেখানো যেতে পারে। মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে এটা তাদের জন্য কতই না উপকারজনক হবে! এই সাধারণ পদ্ধতিগুলো আপনার এবং আপনার সন্তানদের, উভয়ের জন্যই শেখার প্রক্রিয়াকে প্রাণবন্ত এবং অর্থপূর্ণ রাখে।

অধ্যয়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। বায়ু চলাচল এবং পর্যাপ্ত আলোর উত্তম ব্যবস্থা ও সেইসঙ্গে শান্ত এবং আরামদায়ক পরিবেশ মনোযোগ দেওয়াকে সহজ করে তোলে। অবশ্য, অধ্যয়নের প্রতি বাবা-মাদের দৃষ্টিভঙ্গিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। “পাঠ ও অধ্যয়নের জন্য সময় করে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং সংগতিপূর্ণ হওয়া আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” একজন মা বলেন। “এটা আপনার সন্তানদের সুসংগঠিত হতে সাহায্য করে। তারা শেখে যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন বিষয়গুলো সম্পাদন করতে হবে।” অনেক বাবা-মা অধ্যয়নের সময়গুলোতে অন্য কোনো কাজ করাকে অনুমোদন করে না। একজন লেখকের মতানুসারে, এই পদ্ধতি সন্তানদেরকে অধ্যয়নের উত্তম অভ্যাস সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এক জোরালো প্রভাব হয়ে থাকে।

অধ্যয়নের মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরুন। পরিশেষে, আপনার সন্তানদের অধ্যয়নের ব্যবহারিক উপকার সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করুন। তারা যে-তথ্যগুলো শেখে, সেগুলো কাজে লাগানো অধ্যয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্যের ওপর জোর দেয়। একজন যুবক ভাই স্বীকার করে: “আমি যা অধ্যয়ন করছি, সেটার যদি কোনো ব্যবহারিক মূল্য আমি বুঝতে না পারি, তাহলে সেই অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য বেশ কঠিন বলে মনে হয়। কিন্তু, যদি আমি এটা ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে তা এমন এক বিষয় হয়ে ওঠে, যা আমি বুঝতে চাই।” অল্পবয়সিরা যখন অধ্যয়নকে এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক উপায় হিসেবে দেখে, তখন তারা এতে পুরোপুরি নিবিষ্ট হবে। তারা অধ্যয়নের প্রতি সেই একইরকম ভালোবাসা গড়ে তুলতে শুরু করবে, যেরকম পাঠ করার প্রতি তাদের ছিল।

সর্বোত্তম পুরস্কার

আপনার সন্তানদের হৃদয়ে পাঠের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দেওয়ার সমস্ত উপকারজনক ফলাফল বলে শেষ করা যাবে না। স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, আমরা যে-জগতে বাস করি, সেই সম্বন্ধে বোধগম্যতা লাভ করার ক্ষেত্রে সাফল্য এবং বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে ভালোবাসার আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলা হচ্ছে মাত্র কয়েকটা উপকার আর পাঠ করা ও অধ্যয়ন যে-প্রচুর পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে, সেই কথা না হয় বাদই দিলাম।

সর্বোপরি, অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা আপনার সন্তানদের আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা হল, শাস্ত্রীয় সত্যের “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা” লাভ করার ক্ষেত্রে তাদের মন এবং হৃদয়কে খুলে দেওয়ার মূল চাবিকাঠি। (ইফি. ৩:১৮) অবশ্য, খ্রিস্টান বাবা-মাদের তাদের সন্তানদেরকে আরও অনেক কিছু শেখাতে হয়। বাবা-মায়েরা যখন তাদের সন্তানদের জন্য সময় ও তাদের প্রতি মনোযোগ দেয় এবং তাদের জীবনকে উত্তমভাবে শুরু করতে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করে, তখন তারা আশা করে যে, তাদের সন্তানরা অবশেষে যিহোবার উপাসক হওয়া বেছে নেবে। আপনার সন্তানদেরকে অধ্যয়নের উত্তম অভ্যাস সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া, তাদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে ও তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই, আপনার সন্তানদের মধ্যে পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার সময় নিশ্চিতভাবেই প্রার্থনাপূর্বক যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার প্রচেষ্টা করুন।—হিতো. ২২:৬.

[পাদটীকা]

^ পাঠ এবং অধ্যয়ন করা সেই সন্তানদের জন্য বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে, যাদের শেখার ব্যাপারে অক্ষমতা রয়েছে। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য বাবা-মায়েরা কী করতে পারে, তা জানার জন্য ১৯৯৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-১০ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

পাঠ করা . . .

• হাতে বই দিন

• জোরে জোরে পাঠ করুন

• অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন

• যা পাঠ করেন, তা নিয়ে আলোচনা করুন

• আপনার সন্তানদেরকে আপনার সামনে পড়তে বলুন

• আপনার সন্তানদেরকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে উৎসাহিত করুন

অধ্যয়ন করা . . .

• বাবা-মা হিসেবে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করুন

• আপনার সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিন . . .

○ মনোযোগী হতে

○ তুলনা করতে

○ সারাংশ করতে

○ পুনরালোচনা করতে

○ নোট নিতে

• অধ্যয়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন

• অধ্যয়নের মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরুন