সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার দিন যা প্রকাশ করবে

যিহোবার দিন যা প্রকাশ করবে

যিহোবার দিন যা প্রকাশ করবে

“প্রভুর দিন চোরের ন্যায় আসিবে; . . . এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে [“প্রকাশিত হইয়া পড়িবে,” পাদটীকা]।”—২ পিতর ৩:১০.

১, ২. (ক) কীভাবে বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

 বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা এই মৌলিক মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, মানুষ যিহোবার কাছ থেকে স্বাধীন হয়েও সফলভাবে এই পৃথিবী শাসন করতে পারবে। (গীত. ২:২, ৩) মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত কোনো কিছু কি চিরকাল থাকতে পারে? কখনোই না! তা সত্ত্বেও, আমরা এইরকমটা মনে করে অপেক্ষা করব না যে, শয়তানের জগৎ নিজে নিজে ধ্বংস হয়ে যাবে। বরং, এই জগৎ ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে ও উপায়ে, তাঁর দ্বারা ধ্বংস হবে। এই দুষ্ট জগতের বিরুদ্ধে যিহোবার পদক্ষেপ তাঁর ন্যায়বিচার ও তাঁর প্রেম উভয়ই নিখুঁতভাবে প্রকাশ করবে।—গীত. ৯২:৭; হিতো. ২:২১, ২২.

‘প্রভু’ যিহোবার “দিন” প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, “চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল প্রকাশিত হইয়া পড়িবে।” (২ পিতর ৩:১০) এখানে উল্লেখিত “আকাশমণ্ডল” ও “পৃথিবী” কী? “মূলবস্তু সকল” কী, যেগুলো বিলীন হয়ে যাবে? আর পিতর এই কথা বলার দ্বারা কী বুঝিয়েছিলেন যে, “পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল প্রকাশিত হইয়া পড়িবে”? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আমাদেরকে সেই ভয়ংকর ঘটনাগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করবে, যেগুলো নিকট ভবিষ্যতে ঘটবে।

যে-আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী উড়ে যাবে

৩. দ্বিতীয় পিতর ৩:১০ পদে উল্লেখিত “আকাশমণ্ডল” কী আর কীভাবে তা উড়ে যাবে?

বাইবেলে যখন রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন “আকাশমণ্ডল” শব্দটি প্রায়ই শাসনরত কর্তৃপক্ষগুলোকে বোঝায়, যেগুলো তাদের প্রজাদের চেয়ে উচ্চীকৃত। (যিশা. ১৪:১৩, ১৪; প্রকা. ২১:১, ২) “আকাশমণ্ডল [যা] উড়িয়া যাইবে,” তা ভক্তিহীন সমাজের ওপর মানব শাসনকে চিত্রিত করে। জোরে “হূহূ শব্দ” করে—অথবা আরেকটি অনুবাদ অনুযায়ী, “বিরাট শব্দ করে”—তাদের উড়ে যাওয়া হয়তো এই আকাশমণ্ডলের দ্রুত ধ্বংসকে ইঙ্গিত করে।

৪. “পৃথিবী” কী এবং কীভাবে তা ধ্বংস হয়ে যাবে?

“পৃথিবী” ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতিকে চিত্রিত করে। এইরকম এক জগৎ নোহের দিনেও ছিল, যা ঐশিক আদেশ অনুযায়ী, জলপ্লাবন দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। “সেই বাক্যের গুণে এই বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী অগ্নির নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে, ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন পর্য্যন্ত রক্ষিত হইতেছে।” (২ পিতর ৩:৭) যদিও জলপ্লাবন সমস্ত দুষ্ট লোকেদের একবারেই ধ্বংস করে দিয়েছিল কিন্তু “মহাক্লেশের” সময় আসন্ন ধ্বংস ধাপে ধাপে ঘটবে। (প্রকা. ৭:১৪) সেই ক্লেশের প্রথম পর্যায়ে, ঈশ্বর ‘মহতী বাবিলকে’ ধ্বংস করার জন্য এই জগতের রাজনৈতিক শাসকদের প্রবৃত্তি দেবেন আর এভাবে সেই ধর্মীয় বেশ্যার প্রতি তাঁর প্রচণ্ড ঘৃণা প্রকাশ করবেন। (প্রকা. ১৭:৫, ১৬; ১৮:৮) এরপর, আরমাগিদোন যুদ্ধের সময় অর্থাৎ মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে, যিহোবা স্বয়ং শয়তানের বাকি জগৎকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবেন।—প্রকা. ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১৯-২১.

“মূলবস্তু সকল . . . বিলীন হইবে”

৫. রূপক মূলবস্তু সকলের অন্তর্ভুক্ত কী?

“মূলবস্তু সকল” কী, যেগুলো “বিলীন হইবে”? পিতরের দ্বারা উল্লেখিত “মূলবস্তু সকল” সেই মৌলিক বিষয়গুলোকে বোঝায়, যেগুলো এই জগৎকে এর ভক্তিহীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মনোভাব, পথ ও লক্ষ্য প্রদান করেছে। ‘মূলবস্তু সকলের’ অন্তর্ভুক্ত ‘জগতের আত্মা’ বা মনোভাব, যা “অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে।” (১ করি. ২:১২; পড়ুন, ইফিষীয় ২:১-৩.) সেই মনোভাব অথবা ‘আকাশ’ শয়তানের জগতে পরিব্যাপ্ত। এটা লোকেদেরকে এমন উপায়ে চিন্তা করতে, পরিকল্পনা করতে, কথাবার্তা বলতে এবং কাজ করতে প্ররোচিত করে, যা “আকাশের” গর্বিত ও উদ্ধত ‘কর্ত্তৃত্বাধিপতি’ শয়তানের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে।

৬. জগতের আত্মা কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করে?

তাই, জেনেই হোক বা না জেনেই হোক, যারা জগতের আত্মা দ্বারা সংক্রামিত, তারা তাদের মন ও হৃদয়কে শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেয়, যার ফলে তারা তার চিন্তাধারা ও মনোভাবকে প্রতিফলিত করে। ফল স্বরূপ, ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করে থাকে। তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গর্ব ও স্বার্থপরতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়া দেখায়, কর্তৃপক্ষের প্রতি বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ করে এবং ‘মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষের’ কাছে নতিস্বীকার করে।—পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭. *

৭. কেন ‘আমাদের হৃদয় রক্ষা করিতে’ হবে?

তাই, বন্ধুবান্ধব, পাঠ্য বিষয়বস্তু, আমোদপ্রমোদ এবং ইন্টারনেটে আমরা যে-ওয়েব সাইটগুলো দেখি, সেগুলো বাছাই করার সময় ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা অনুশীলন করার মাধ্যমে ‘আমাদের হৃদয় রক্ষা করা’ কতই না গুরুত্বপূর্ণ! (হিতো. ৪:২৩) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।” (কল. ২:৮) যিহোবার দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, এই আদেশ ততই জরুরি হয়ে উঠছে, কারণ এর প্রচণ্ড তাপ শয়তানের জগতের “মূলবস্তু সকল” গলিয়ে ফেলবে, প্রমাণ দেবে যে, সেগুলো ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধের সামনে টিকে থাকতে পারে না। এটা মালাখি ৪:১ পদের কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়: “সেই দিন আসিতেছে, তাহা হাপরের ন্যায় জ্বলিবে, এবং দর্পী ও দুষ্টাচারীরা সকলে খড়ের ন্যায় হইবে; আর সেই যে দিন আসিতেছে, তাহা তাহাদিগকে পোড়াইয়া দিবে।”

“পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল প্রকাশিত হইয়া পড়িবে”

৮. কীভাবে পৃথিবী ও এর কার্য সকল “প্রকাশিত” হয়?

এই কথাগুলোর দ্বারা পিতর কী বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন যে, “পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল প্রকাশিত হইয়া পড়িবে”? পিতর বুঝিয়েছিলেন যে, মহাক্লেশের সময় যিহোবা শয়তানের জগৎকে অনাবৃত করবেন, এই বিষয়টাকে প্রকাশ করে দেবেন যে, এটা তাঁর ও তাঁর রাজ্যের বিরুদ্ধে আর তাই ধ্বংসের যোগ্য। সেই সময় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করতে গিয়ে যিশাইয় ২৬:২১ পদ বলে: “সদাপ্রভু আপন স্থান হইতে নির্গমন করিতেছেন, পৃথিবী-নিবাসীদের অপরাধের প্রতিফল দিবার নিমিত্ত; পৃথিবী আপনার [উপরে পাতিত] রক্ত প্রকাশ করিবে, আপনার নিহতদিগকে আর আচ্ছাদিত রাখিবে না।”

৯. (ক) আমাদের কী প্রত্যাখ্যান করা উচিত এবং কেন? (খ) আমাদের কী গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত এবং কেন?

যিহোবার দিনে, যারা জগৎ ও এর মন্দ মনোভাবের ধাঁচে গড়ে উঠেছে, তারা তাদের আসল রূপ প্রদর্শন করবে, এমনকী একে অন্যকে হত্যা করবে। বস্তুতপক্ষে, এইরকমটা হতে পারে যে, বর্তমানে জনপ্রিয় এমন অসংখ্য দৌরাত্ম্যপূর্ণ আমোদপ্রমোদ দেখতে দেখতে অনেকের মন সেই সময়ে এমন হয়ে উঠবে, যখন প্রত্যেক মানুষের হস্ত “আপন আপন প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে উত্তোলিত হইবে।” (সখ. ১৪:১৩) তাই, আমাদের জন্য এমন যেকোনো কিছু—চলচ্চিত্র, বইপত্রিকা, ভিডিও গেমস্‌ এবং এইরকম অন্যান্য বিষয়—প্রত্যাখ্যান করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো হয়তো আমাদের মধ্যে সেইসমস্ত বৈশিষ্ট্য উৎপন্ন করে, যেগুলোকে ঈশ্বর প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, যেমন গর্ব ও দৌরাত্ম্যপ্রিয় মনোভাব! (২ শমূ. ২২:২৮; গীত. ১১:৫) এর পরিবর্তে, আসুন আমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি, কারণ এই ধরনের গুণাবলি যিহোবার দিনের রূপক তাপের মধ্যেও টিকে থাকতে সমর্থ হবে।—গালা. ৫:২২, ২৩.

এক ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’

১০, ১১. ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ ও ‘নূতন পৃথিবী’ কী?

১০ দ্বিতীয় পিতর ৩:১৩ পদ পড়ুন। ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ হল ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য, যা ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যখন “জাতিগণের সময়” শেষ হয়েছিল। (লূক ২১:২৪) এই রাজকীয় সরকার খ্রিস্ট যিশু ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহশাসকদের নিয়ে গঠিত, যাদের মধ্যে অধিকাংশই তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করেছে। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে, এই মনোনীত ব্যক্তিদেরকে এভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, “‘পবিত্র নগরী, নূতন যিরূশালেম,’ স্বর্গ হইতে ঈশ্বরের নিকট হইতে, নামিয়া আসিতেছে; সে আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার ন্যায় প্রস্তুত হইয়াছিল।” (প্রকা. ২১:১, ২, ২২-২৪) ঠিক যেমন পার্থিব যিরূশালেম প্রাচীন ইস্রায়েলের সরকারের কেন্দ্রস্থল ছিল, তেমনই নতুন যিরূশালেম ও তার বর নতুন বিধিব্যবস্থার সরকার গঠন করে। এই স্বর্গীয় নগর পৃথিবীর ওপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ‘স্বর্গ হইতে নামিয়া’ আসবে।

১১ ‘নূতন পৃথিবী’ নতুন পার্থিব মানবসমাজকে চিত্রিত করে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি স্বেচ্ছায় বশ্যতা প্রদর্শন করবে। আধ্যাত্মিক পরমদেশ, যা এমনকী ঈশ্বরের লোকেরা এখনই উপভোগ করছে, তা অবশেষে উপযুক্তভাবেই অপূর্ব ‘ভাবী জগতে’ বা পৃথিবীতে স্থাপিত হবে। (ইব্রীয় ২:৫) কীভাবে আমরা নতুন বিধিব্যবস্থার এক অংশ হতে পারি?

যিহোবার মহাদিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন

১২. কেন যিহোবার দিন জগতের কাছে এক আকস্মিক আঘাতের মতো উপস্থিত হবে?

১২ পৌল ও পিতর উভয়েই ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছে যে, যিহোবার দিন “চোরের ন্যায়”—গোপনে, অপ্রত্যাশিতভাবে—আসবে। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১, ২.) এমনকী সত্য খ্রিস্টানরা, যারা সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছে, তারাও সেই দিন এতটা আকস্মিকভাবে আসবে দেখে অবাক হয়ে যাবে। (মথি ২৪:৪৪) কিন্তু, এই জগৎ আরও বেশি অবাক হবে। পৌল লিখেছিলেন: “লোকে [যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা] যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ব্ভবতীর প্রসববেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়; আর তাহারা কোন ক্রমে এড়াইতে পারিবে না।”—১ থিষল. ৫:৩.

১৩. “শান্তি ও অভয়” বলে যে-ঘোষণা করা হয়, সেটার দ্বারা কীভাবে আমরা প্রতারিত হওয়া এড়াতে পারি?

১৩ “শান্তি ও অভয়” বলে ঘোষণা করা, মন্দদূতদের দ্বারা উদ্ভূত কেবল আরেকটা মিথ্যা; কিন্তু, এটা যিহোবার দাসদের বোকা বানাতে পারবে না। “তোমরা অন্ধকারে নও যে,” পৌল লিখেছিলেন, “সেই দিন চোরের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িবে। তোমরা ত সকলে দীপ্তির সন্তান ও দিবসের সন্তান।” (১ থিষল. ৫:৪, ৫) তাই, আসুন আমরা শয়তানের জগতের অন্ধকার থেকে বহু দূরে, দীপ্তিতে থাকি। পিতর লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, . . . এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে [খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যেকার ভাক্ত গুরুদের সঙ্গে] ধর্ম্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিত হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও।”—২ পিতর ৩:১৭.

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে যিহোবা আমাদের মর্যাদা দেন? (খ) কোন অনুপ্রাণিত কথাগুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?

১৪ লক্ষ করুন যে, যিহোবা কেবল আমাদেরকে ‘সাবধান থাকিতে’ এবং এরপর চুপচাপ বসে থাকতে বলেননি। বরং, তিনি সদয়ভাবে আমাদেরকে ভবিষ্যতে কী হবে, সেই সম্বন্ধে ‘অগ্রে জানিতে’ দেওয়ার অর্থাৎ মৌলিক ব্যাখ্যা জানানোর মাধ্যমে মর্যাদা প্রদান করেছেন।

১৫ কিন্তু, দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, কেউ কেউ জেগে থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধীয় অনুস্মারকগুলোকে হালকাভাবে নিয়েছে বা এমনকী সেগুলোর নিন্দা করেছে। ‘দশকের পর দশক ধরে আমরা একই অনুস্মারক শুনে আসছি,’ তারা হয়তো বলতে পারে। কিন্তু, সেই ব্যক্তিদের এই বিষয়টা মনে রাখা উচিত যে, এই ধরনের মন্তব্য করার মাধ্যমে তারা আসলে কেবলমাত্র বিশ্বস্ত দাস শ্রেণীরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবা এবং তাঁর পুত্রের বিষয়েও সন্দেহ করছে। “অপেক্ষা কর,” যিহোবা বলেছিলেন। (হবক্‌. ২:৩) একইভাবে যিশু বলেছিলেন: “জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।” (মথি ২৪:৪২) অধিকন্তু, পিতর লিখেছিলেন: “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।” (২ পিতর ৩:১১, ১২) বিশ্বস্ত দাস শ্রেণী ও এর পরিচালকগোষ্ঠী সেই গুরুগম্ভীর কথাগুলোকে কখনোই হালকাভাবে নেবে না!

১৬. আমাদের কোন ধরনের মনোভাব এড়িয়ে চলা উচিত এবং কেন?

১৬ বস্তুতপক্ষে, ‘দুষ্ট দাসই’ এই উপসংহারে আসে যে, প্রভুর আসতে বিলম্ব হবে। (মথি ২৪:৪৮) সেই দুষ্ট দাস হল, ২ পিতর ৩:৩, ৪ পদে বর্ণিত দলের অংশ। “শেষকালে,” পিতর লিখেছিলেন, “উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে,” যারা “আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে,” সেই ব্যক্তিদের বিদ্রূপ করবে, যারা বাধ্যতার সঙ্গে যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষা করে। হ্যাঁ, এই ধরনের উপহাসকেরা রাজ্যের বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে বরং নিজেদের ওপর এবং স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার ওপর মনকে নিবিষ্ট করে। আসুন, আমরা যেন কখনো এই ধরনের এক অবাধ্য ও বিপদজনক মনোভাব গড়ে না তুলি! এর পরিবর্তে, আমরা যেন রাজ্যের প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত থেকে ও সেইসঙ্গে যে-ঘটনাগুলোর সময় যিহোবা ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত, সেগুলো নিয়ে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন না হয়ে ‘প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান করি।’—২ পিতর ৩:১৫; পড়ুন, প্রেরিত ১:৬, ৭.

পরিত্রাণের ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন

১৭. যিরূশালেম থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যিশুর উপদেশের প্রতি বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং কেন?

১৭ সাধারণ কাল ৬৬ সালে রোমীয় সৈন্যবাহিনী যিহূদিয়া আক্রমণ করার পর, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা প্রথম সুযোগেই যিরূশালেম নগর থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যিশুর উপদেশ অনুযায়ী কাজ করেছিল। (লূক ২১:২০-২৩) কেন তারা অবিলম্বে ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিল? কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা যিশুর সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিয়েছিল। নিশ্চিতভাবেই, তারা জানত যে তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে কষ্ট করা জড়িত থাকবে, যেমনটা খ্রিস্ট পূর্বেই সাবধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, একইসময়ে তারা এও জানত যে, যিহোবা কখনো তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করবেন না।—গীত. ৫৫:২২.

১৮. লূক ২১:২৫-২৮ পদে প্রাপ্ত যিশুর কথাগুলো আসন্ন মহাক্লেশ সম্বন্ধে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

১৮ আমাদেরও যিহোবার ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করতে হবে, কারণ বর্তমান বিধিব্যবস্থার ওপর যখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো ক্লেশ আসবে, তখন একা তিনিই আমাদের পরিত্রাণ হবেন। মহাক্লেশ শুরু হওয়ার কিছু সময় পর, তবে বাকি জগতের ওপর যিহোবা তাঁর বিচার নিয়ে আসার আগে, “ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়” লোকেদের “প্রাণ উড়িয়া যাইবে।” তবে, যদিও ঈশ্বরের শত্রুরা ভয়ে কাঁপবে কিন্তু যিহোবার অনুগত দাসেরা ভয় পাবে না। এর বিপরীতে, তারা আনন্দ করবে কারণ তারা জানে যে, তাদের মুক্তি সন্নিকট।—পড়ুন, লূক ২১:২৫-২৮.

১৯. পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

১৯ হ্যাঁ, সেই ব্যক্তিদের জন্য কত রোমাঞ্চকর ভবিষ্যৎই না অপেক্ষা করে আছে, যারা এই জগৎ ও এর “মূলবস্তু সকল” থেকে পৃথক থাকে! কিন্তু, পরবর্তী প্রবন্ধে যেমন ব্যাখ্যা করা হবে যে, আমরা যদি জীবন লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদের কেবল মন্দ বিষয় এড়িয়ে চলার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের এমন গুণাবলি গড়ে তুলতে হবে, যেগুলো যিহোবাকে খুশি করে এবং এমন কাজকর্ম করতে হবে, যেগুলো তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য।—২ পিতর ৩:১১.

[পাদটীকা]

^ জগতের আত্মা দ্বারা প্ররোচিত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” নামক বইয়ের ৫৯-৬২ পৃষ্ঠার ৭-১০ অনুচ্ছেদ দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দ্বারা কী চিত্রিত হয় . . .

বর্তমান ‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী’?

“মূলবস্তু সকল”?

‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’?

• কেন আমরা ঈশ্বরের ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে আপনি ‘আপনার হৃদয় রক্ষা করিতে’ এবং জগৎ থেকে পৃথক থাকতে পারেন?

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা ‘আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান করি’?