সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক মুক্ত আমন্ত্রণ!

এক মুক্ত আমন্ত্রণ!

এক মুক্ত আমন্ত্রণ!

এক মুক্ত আমন্ত্রণ—কীসের জন্য? যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসগুলোর একটাতে পরিদর্শন করার জন্য, যেগুলোকে সাধারণত বেথেল বলা হয়। বিভিন্ন দেশে এইরকম ১১৮টা কেন্দ্র রয়েছে। পরিদর্শনকারীরা প্রায়ই বেথেলে যে-কাজ হয়ে থাকে, তা দেখে তাদের আন্তরিক উপলব্ধি প্রকাশ করে।

মেক্সিকোর শাখা অফিসে অনেক কঠোর পরিশ্রমী কর্মীকে আনন্দের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করতে দেখে একজন যুবক বাইবেল ছাত্র এতটাই অভিভূত হয়েছিল যে, সে জিজ্ঞেস করেছিল: “এখানে থাকার জন্য আমাকে কী করতে হবে?” তাকে বলা হয়েছিল: “প্রথমে, তোমাকে বাপ্তাইজিত হতে হবে। এরপর একজন অগ্রগামী—পূর্ণসময়ের একজন রাজ্য ঘোষণাকারী—হিসেবে সেবা করলে ভালো।” সেই যুবক এই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছিল এবং দুই বছর পরে তাকে মেক্সিকোর বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে সে বিগত ২০ বছর ধরে সেবা করে যাচ্ছে।

বেথেল কী?

ইব্রীয় ভাষায় “বৈথেল” বা বেথেল শব্দটির অর্থ হল, “ঈশ্বরের গৃহ।” (আদি. ২৮:১৯) বিভিন্ন শাখা অফিসে সুযোগ-সুবিধাগুলো, বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি ছাপানো এবং বিতরণের জন্য ও সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের ১,০০,০০০-রও বেশি মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিক সমর্থন জোগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রায় ২০,০০০ বেথেলকর্মী—বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমির নারী-পুরুষ—নিঃস্বার্থভাবে যিহোবা ও তাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের পূর্ণসময় সেবা করে থাকে। যারা এই খ্রিস্টীয় কাজে বহু বছর ব্যয় করেছে, তারা উদ্যমী যুবক-যুবতীদের সঙ্গে একত্রে সেবা করে থাকে। সন্ধ্যা ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে, বেথেল পরিবারের সদস্যরা তাদের কাছাকাছি যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোর সভায় এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় মেলামেশা করা উপভোগ করে। এ ছাড়া, তারা তাদের অবসর সময়কে বাইবেল অধ্যয়ন, বিনোদন এবং ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকে।

বেথেল পরিবারের সদস্যরা প্রতি মাসে সামান্য হাতখরচ পেয়ে থাকে। তারা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার উপভোগ করে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক জায়গায় বাস করে। বেথেল হোমগুলোকে বিলাসবহুল করে তৈরি করা হয় না। কিন্তু, সেগুলোকে ব্যবহারিকভাবে তৈরি করা হয়। পরিদর্শনকারীরা শুধুমাত্র ছিমছাম বিল্ডিং ও জায়গা এবং সুশৃঙ্খল কাজ দেখেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বেথেলে বিরাজমান সদয় ও সহযোগিতার মনোভাব দেখেও অভিভূত হয়। সকলেই অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করে, তবে ব্যস্ততার মধ্যেও তারা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়ে থাকে। বেথেলে কোনোরকম সামাজিক বৈষম্য নেই বা কারো কার্যভারের কারণে শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতিও নেই। প্রত্যেকটা কার্যভারই গুরুত্বপূর্ণ, তা সেটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ, বাগানের কাজ বা রান্নাবান্নার কাজ, যা-ই হোক না কেন অথবা ছাপাখানা বা অফিসে, যেখানেই হোক না কেন। বেথেলকর্মীরা—বেথেলে সেবারত ব্যক্তিরা যে-নামে পরিচিত, তারা—যিহোবার সাক্ষিদের পরিচর্যাকে সমর্থন করার জন্য একটা দল হিসেবে একত্রে কাজ করে।—কল. ৩:২৩.

কয়েক জন বেথেলকর্মীর সঙ্গে পরিচিত হোন

আসুন আমরা কয়েক জনের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হই, যাদের নিয়ে এই আন্তর্জাতিক পরিবার গঠিত। কী তাদেরকে বেথেলে সেবা করতে অনুপ্রাণিত করেছে? মারিওর কথা বিবেচনা করুন। তিনি যে-সময়ে একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন, সেই সময়ে তার এক বিখ্যাত জার্মান গাড়ির কোম্পানিতে এক লাভজনক চাকরি ছিল এবং উন্নতি করার সুযোগ ছিল। তার বাপ্তিস্মের অল্প কিছুদিন পরই, তিনি তার দেশের বেথেলে এক সপ্তাহের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাকে ছাপাখানার কাজে সাহায্য করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। মারিও তার বেথেলের সহকর্মী ও তার কর্মস্থলের সহকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখতে পেয়েছিলেন। তাই, তিনি পূর্ণসময়ের বেথেল সেবার জন্য আবেদন করেছিলেন। যদিও তার অনেক আত্মীয় ও সহকর্মীর জন্য তার সিদ্ধান্ত বোঝা কঠিন ছিল, কিন্তু মারিও এখন জার্মানির বেথেলে আনন্দের সঙ্গে সেবা করছেন।

অনেকে কোনো বিশেষ শিক্ষা বা দক্ষতা ছাড়াই বেথেলে সেবা করতে শুরু করে। আবেলের ক্ষেত্রে এটা সত্য ছিল, যিনি ১৫ বছর ধরে মেক্সিকোর বেথেলে সেবা করছেন। “বেথেলে এসে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি,” তিনি বলেন। “আমি অত্যন্ত জটিল মুদ্রণযন্ত্র চালাতে শিখেছি। আমি জানি যে, এই জ্ঞান নিয়ে আমি বেথেলের বাইরে অনেক পয়সা উপার্জন করতে পারতাম কিন্তু আমি সেখানে এই বিষয়গুলো পাব না, যেগুলো এখানে উপভোগ করছি—এক প্রশান্ত ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন, যেখানে অনেক বাণিজ্যিক কর্মস্থলের মতো কোনো উদ্‌বিগ্নতা এবং প্রতিযোগিতা নেই। আমি উপলব্ধি করি যে, আমি সর্বোত্তম শিক্ষা লাভ করেছি, যে-শিক্ষা আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে ও সেইসঙ্গে মেধা বিকাশে সাহায্য করেছে। আমি এমনকী সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও এই ধরনের আধ্যাত্মিক উপকার লাভ করতে পারতাম না।”

পরিদর্শন করা গঠনমূলক হতে পারে

শুধু বেথেল পরিদর্শন করাই একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতার ওপর এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মেক্সিকোর ওমারের বেলায় এমনটা ঘটেছিল। তার মা তাকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু, ১৭ বছর বয়সে ওমার খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া এবং জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরিশেষে তিনি বিভিন্ন খারাপ কাজ ও বস্তুবাদিতাপূর্ণ জীবনধারায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরে যোগাযোগ সংক্রান্ত এক কোম্পানিতে কাজ করার সময়, কিছু যন্ত্রের ব্যবহার সম্বন্ধে শেখানোর জন্য একটা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ওমারও মেক্সিকোর বেথেলে গিয়েছিলেন। ওমার মন্তব্য করেন: “যন্ত্রের ব্যবহার দেখানোর পর, আমাদের আমন্ত্রণকর্তা সেখানকার সমস্তকিছু ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। আমি যা দেখেছিলাম ও যে-সদয় ব্যবহার লাভ করেছিলাম, তা আমাকে আমার জীবনধারা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল, যে-জীবন যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। আমি অবিলম্বে আবারও সভাগুলোতে যোগ দিতে এবং বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলাম। বেথেল পরিদর্শন করার ছয় মাস পরই আমি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। বেথেলে সেই পরিদর্শনের কারণে আমি যে-অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলাম, সেইজন্য আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই।”

জাপানের মাসাহিকোও এক সাক্ষি পরিবারে মানুষ হয়েছিলেন। কিন্তু, খ্রিস্টীয় জীবনধারাকে তিনি খুবই কড়াকড়ি বলে মনে করতে শুরু করেছিলেন। তিনি স্কুলের কর্মকাণ্ডে খুব বেশি জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং সভাগুলোতে যোগ দেওয়া ও প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাসাহিকো স্মরণ করে বলেন: “একদিন আমাদের পরিবার ও কয়েক জন খ্রিস্টান বন্ধুবান্ধব বেথেল পরিদর্শন করবে বলে ঠিক করেছিল। আমার পরিবারের জোরাজুরির কারণে আমিও তাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। বেথেল পরিদর্শন করে আমি এতটাই সতেজতা বোধ করেছিলাম, যা আগে কখনো করিনি। সেই যাত্রার সময় অন্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করে আমি যে-আনন্দ উপভোগ করেছিলাম, সেইরকম আনন্দ আমি কখনো আমার ন-সাক্ষি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে উপভোগ করিনি। আমার মধ্যে খ্রিস্টীয় জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল এবং আমি বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” মাসাহিকো এখন তার মণ্ডলীতে একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করছেন।

ফ্রান্সের একজন সাক্ষি বোন কাজের জন্য মস্কোতে গিয়েছিলেন। সেখানে যিহোবার লোকেদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং পরিশেষে একজন ন-সাক্ষি ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। এরপর ফ্রান্স থেকে একজন আধ্যাত্মিক বোন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং তারা একসঙ্গে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের বেথেল হোম পরিদর্শন করার জন্য সেখানে গিয়েছিল। তিনি লেখেন: “বেথেলে আমাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল আর এই বিষয়টা আমাকে স্পর্শ করেছিল। সেখানে এতটাই শান্তি ছিল যে, তা বলার নয়। আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম যে, সেখানে যিহোবার আত্মা রয়েছে। কীভাবে আমি যিহোবার সংগঠন থেকে সরে যাওয়ার মতো একটা ভুল করলাম? বেথেল পরিদর্শন করার পর, আমি যিহোবার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম এবং পুনরুজ্জীবিত দৃঢ়সংকল্প সহকারে আমার মেয়েদেরকে বাইবেলের বিষয়ে শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলাম।” সেই সময়ে আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল এই সাক্ষি অন্য যে আধ্যাত্মিক সহযোগিতাই লাভ করে থাকুন না কেন, সেগুলোর পাশাপাশি বেথেল পরিদর্শন করার দ্বারা তিনি অনেক শক্তিশালী হয়েছিলেন এবং এরপর যথেষ্ট উন্নতি করেছিলেন।

যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে পরিচিত নয় এমন ব্যক্তিদের ওপর বেথেল পরিদর্শন করা হয়তো যে-প্রভাব ফেলতে পারে, সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? আলবার্তু নামে একজন ব্যক্তি, যিনি রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি ১৯৮৮ সালে ব্রাজিলের বেথেল পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুশৃঙ্খলা এবং বিশেষ করে প্রকাশ্যে সম্পাদিত কাজ তাকে অনেক প্রভাবিত করেছিল। বেথেল পরিদর্শন করার কয়েক দিন আগে, আলবার্তু সেমিনারি পরিদর্শন করেছিলেন, যেখানে তার শ্যালক একজন যাজক হিসেবে সেবা করতেন। আলবার্তু পার্থক্য লক্ষ করেছিলেন। “সেমিনারিতে সবকিছু গোপনে করা হতো,” আলবার্তু বলেন। বেথেল পরিদর্শন করার কিছুদিন পরেই তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলেন এবং রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন আর এখন একটা মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন।

আসুন, বেথেল পরিদর্শন করুন!

অনেকে তাদের নিজ দেশের শাখা অফিস পরিদর্শন করার জন্য অসাধারণ প্রচেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিলের পাউলু এবং আউঝ্যানিয়া চার বছর ধরে পয়সা জমিয়েছিল, যেন তারা বাসে করে দুই দিনে ৩,০০০ কিলোমিটার পথ যাত্রা করে সেই দেশের বেথেল পরিদর্শন করতে পারে। তারা বলে: “আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছিল। এখন যিহোবার সংগঠন সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আগের চেয়ে আরও স্পষ্ট হয়েছে। আমরা যখন আমাদের বাইবেল ছাত্রদের কাছে বেথেলে যে-কাজ হয়ে থাকে, তা ব্যাখ্যা করি, তখন তারা মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনারা কি কখনো সেখানে গিয়েছেন?’ এখন আমরা বলতে পারি যে, হ্যাঁ গিয়েছি।”

আপনার নিজের দেশে বা নিকটবর্তী কোনো দেশে কি কোনো শাখা অফিস বা বেথেল হোম রয়েছে? আমরা আপনাকে সেখানে পরিদর্শন করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। নিশ্চিতভাবেই, বেথেল পরিদর্শন করার মাধ্যমে আপনি উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং প্রচুর আধ্যাত্মিক উপকার লাভ করবেন।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

মারিও

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আবেল

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

জার্মানি

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

জাপান

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ব্রাজিল