সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন সময়ানুবর্তী হবেন?

কেন সময়ানুবর্তী হবেন?

কেন সময়ানুবর্তী হবেন?

সময়ানুবর্তী হওয়া বা সময়মতো উপস্থিত থাকা সবসময় সহজ নয়। এই ক্ষেত্রে যে-বাধাগুলো আমাদের অতিক্রম করতে হয় তা হল দীর্ঘ ভ্রমণপথ, প্রচণ্ড যানজট এবং ব্যস্ত তালিকা। তা সত্ত্বেও, সময়মতো উপস্থিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, কর্মস্থলে একজন সময়ানুবর্তী ব্যক্তিকে সাধারণত নির্ভরযোগ্য ও পরিশ্রমী হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি যিনি দেরিতে উপস্থিত হন, তিনি অন্যদের কাজ এবং সেইসঙ্গে কোনো পণ্যের ও সেবার গুণগত মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারেন। দেরি করার কারণে একজন ছাত্রের নির্দিষ্ট কিছু ক্লাস বাদ পড়ে যেতে পারে এবং তা তার লেখাপড়ার উন্নতিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। দাঁত বা অন্য কোনো সমস্যার জন্য ডাক্তারের কাছে সময়মতো উপস্থিত হতে না পারলে, তা চিকিৎসার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

কিন্তু, কিছু কিছু জায়গায় সময়ানুবর্তিতাকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয় না। এইরকম এক পরিবেশে, দেরি করা সহজেই আমাদের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সময়মতো উপস্থিত হওয়ার এক আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সময়ানুবর্তিতার গুরুত্বকে উপলব্ধি করা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সময়ানুবর্তী হতে সাহায্য করবে। সময়ানুবর্তী হওয়ার কিছু কারণ কী? কীভাবে আমরা সময়ানুবর্তী হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কাটিয়ে উঠতে পারি? আর সময়মতো উপস্থিত থাকার ফলে আমরা কোন উপকারগুলো লাভ করার আশা করতে পারি?

যিহোবা—একজন সময়ানুবর্তী ঈশ্বর

আমাদের সময়ানুবর্তী হতে চাওয়ার পিছনে সর্বপ্রধান কারণ হচ্ছে, আমরা সেই ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে চাই, যাঁকে আমরা উপাসনা করি। (ইফি. ৫:১) যিহোবা সময়ানুবর্তিতার ক্ষেত্রে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি কখনোই দেরি করেন না। তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর তালিকা মেনে চলেন। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা যখন দুষ্ট জগৎকে এক জলপ্লাবন দ্বারা ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন তিনি নোহকে বলেছিলেন: “তুমি গোফর কাষ্ঠ দ্বারা এক জাহাজ নির্ম্মাণ কর।” শেষ যতই নিকটবর্তী হচ্ছিল, যিহোবা নোহকে জাহাজে প্রবেশ করতে বলেছিলেন এবং তাকে জানিয়েছিলেন: “সাত দিনের পর আমি পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র বৃষ্টি বর্ষাইয়া আমার নির্ম্মিত যাবতীয় প্রাণীকে ভূমণ্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব।” এরপর, একেবারে সময়মতো “সেই সাত দিন গত হইলে পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল।” (আদি. ৬:১৪; ৭:৪, ১০) কল্পনা করুন যে, নোহ ও তার পরিবার যদি সময়মতো জাহাজে প্রবেশ না করত, তাহলে কী হতো। তারা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করত, তাঁর মতো তাদেরও সময়ানুবর্তী হতে হয়েছিল।

জলপ্লাবনের প্রায় ৪৫০ বছর পর, যিহোবা কুলপতি অব্রাহামকে বলেছিলেন যে, তার এক পুত্র সন্তান হবে, যার মাধ্যমে সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ আসবে। (আদি ১৭:১৫-১৭) ঈশ্বর বলেছিলেন যে, ইস্‌হাক “আগামী বৎসরের এই ঋতুতে” জন্মগ্রহণ করবেন। সেটা কি ঘটেছিল? শাস্ত্র আমাদের জানায়: “সারা গর্ব্ভবতী হইয়া ঈশ্বরের উক্ত নিরূপিত সময়ে অব্রাহামের বৃদ্ধকালে তাঁহার নিমিত্ত পুত্ত্র প্রসব করিলেন।”—আদি. ১৭:২১; ২১:২.

বাইবেলে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরের সময়ানুবর্তিতাকে প্রদর্শন করে। (যির. ২৫:১১-১৩; দানি. ৪:২০-২৫; ৯:২৫) বাইবেল আমাদেরকে যিহোবার ভাবী বিচার দিনের জন্য অপেক্ষা করতে বলে। এমনকী তা মানব দৃষ্টিকোণ থেকে “বিলম্ব” হচ্ছে বলে মনে হলেও, আমাদের এই আশ্বাস রয়েছে যে, “তাহা . . . যথাকালে বিলম্ব করিবে না।”—হবক্‌. ২:৩.

উপাসনার ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা গুরুত্বপূর্ণ

সমস্ত ইস্রায়েলীয় পুরুষের ‘সদাপ্রভুর পর্ব্বের’ জন্য সময়মতো নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত থাকতে হতো। (লেবীয়. ২৩:২, ৪) এ ছাড়া, কখন নির্দিষ্ট বলিগুলো উৎসর্গ করতে হবে, সেই সময়ও ঈশ্বর নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। (যাত্রা. ২৯:৩৮, ৩৯; লেবীয়. ২৩:৩৭, ৩৮) এই বিষয়টা কি ইঙ্গিত করে না যে, ঈশ্বর চান তাঁর দাসেরা যেন তাদের উপাসনার ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তী হয়?

প্রথম শতাব্দীতে, প্রেরিত পৌল যখন করিন্থীয়দের নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, কীভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলো পরিচালনা করা উচিত, তখন তিনি তাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা হউক।” (১ করি. ১৪:৪০) তাই, উপাসনার জন্য খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলো নির্ধারিত সময়ে শুরু হতো। সময়ানুবর্তিতার ক্ষেত্রে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়নি। (মালাখি ৩:৬) তাই, এই খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলোতে সময়মতো উপস্থিত হওয়ার জন্য আমরা কোন পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারি?

সময়ানুবর্তী হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মোকাবিলা করা

কেউ কেউ দেখেছে যে, আগে থেকে চিন্তা বা পরিকল্পনা করা অনেক সাহায্যকারী হতে পারে। (হিতো. ২১:৫) উদাহরণস্বরূপ, কোনো নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত হওয়ার জন্য যদি আমাদের যাত্রা করতে হয়, তাহলে সেখানে পৌঁছানোর জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন শুধুমাত্র ততটুকু সময় হাতে নিয়ে যাত্রা করা কি বিজ্ঞতার কাজ হবে? বাড়তি কিছু সময় হাতে রাখা কি বিচক্ষণতার কাজ হবে না, যাতে এমনকী পথে কোনো “দৈব” ঘটলেও আমরা দেরি না করে ফেলি? (উপ. ৯:১১) “যে-বিষয়টা একজন ব্যক্তিকে সময়মতো পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে, তা হল এই ব্যাপারে এক সঠিক ধারণা থাকা যে, সেখানে যেতে আসলে কতখানি সময় লাগে,” হোসা নামে একজন সময়ানুবর্তী যুবক বলে। *

কারো কারো জন্য, তাদের কাজের জায়গা থেকে যথেষ্ট আগে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হতে পারে, যাতে তারা উপযুক্ত সময়ে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত থাকতে পারে। ইথিওপিয়ার একজন সাক্ষি তা-ই করেছিলেন, যখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার কাজের তালিকায় পরিবর্তনের কারণে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হতে তার ৪৫ মিনিট দেরি হয়ে যাবে। তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন যেন একজন সহকর্মী সভার রাতগুলোতে একটু আগে কাজে এসে তাকে ছেড়ে দিতে পারেন। এর বিনিময়ে, সেই সাক্ষি তার সহকর্মীর জন্য অতিরিক্ত সাত ঘন্টা কাজ করে দিতে রাজি হয়েছিলেন।

আমাদের যদি ছোটো ছেলে-মেয়ে থাকে, তাহলে সময়মতো সভাতে উপস্থিত থাকা এক বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। ছেলে-মেয়েদের তৈরি করার দায়িত্ব সাধারণত মায়ের ওপর পড়ে কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরাও সাহায্য করতে পারে এবং করা উচিত। এসপেরানজা নামে মেক্সিকোর একজন মাকে একাই আট সন্তানের যত্ন নিতে হয়েছে। এখন তাদের বয়স ৫ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। এসপেরানজা ব্যাখ্যা করেন যে, কীভাবে তার পরিবার সময়ানুবর্তী হতে পেরেছে: “আমার বড়ো মেয়েরা তাদের ছোটো ভাইবোনদের তৈরি হতে সাহায্য করে। এর ফলে, আমি আমার ঘরের কাজকর্ম শেষ করে তৈরি হতে পারি, যাতে সভার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারি।” ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য এই পরিবারের একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে আর সকলেই এতে সহযোগিতা করে থাকে।

আপনার উপাসনায় সময়ানুবর্তী হওয়া থেকে উপকার লাভ করা

সময়মতো খ্রিস্টীয় সভায় পৌঁছানোর মাধ্যমে আমরা যে-আশীর্বাদগুলো লাভ করি, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা সময়ানুবর্তী হওয়ার জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে এবং এর জন্য যথাসাধ্য করার বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে। সান্ড্রা নামে একজন যুবতী, যে উপযুক্ত সময়ে সভাতে পৌঁছানোর উত্তম অভ্যাস গড়ে তুলেছে, সে বলে: “আগে পৌঁছানোর যে-বিষয়টা আমার ভালো লাগে, তা হল এর ফলে আমি ভাইবোনদের সম্ভাষণ জানানোর, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার ও তাদেরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পাই।” আমরা যখন কিংডম হলে আগে গিয়ে পৌঁছাই, তখন আমরা উপস্থিত অন্য ব্যক্তিদের ধৈর্য ও বিশ্বস্ত সেবার বিষয়ে শুনে উপকৃত হতে পারি। এ ছাড়া, আমাদের উপস্থিতি এবং গঠনমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে আমরাও আমাদের ভাইবোনদের ওপর উত্তম প্রভাব ফেলতে পারি, ‘প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে তাহাদের উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি।’—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

প্রত্যেক খ্রিস্টীয় সভার শুরুতে যে-গান ও প্রার্থনা হয়, সেগুলো আমাদের উপাসনার এক অপরিহার্য অংশ। (গীত. ১৪৯:১) আমরা যে-গানগুলো গাই, সেগুলো যিহোবার প্রশংসা করে, আমাদেরকে সেই গুণগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যেগুলো আমাদের গড়ে তোলা উচিত এবং পরিচর্যায় আনন্দের সঙ্গে অংশ নিতে আমাদের উৎসাহিত করে। আর শুরুর প্রার্থনা সম্বন্ধে কী বলা যায়? প্রাচীনকালে, যিহোবা মন্দিরকে তাঁর ‘প্রার্থনা-গৃহ’ বলেছিলেন। (যিশা. ৫৬:৭) আজকে, আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রার্থনা করার জন্য আমাদের সভাগুলোতে মিলিত হই। শুরুর প্রার্থনায় কেবল যিহোবার নির্দেশনা ও পবিত্র আত্মার জন্যই অনুরোধ করা হয় না কিন্তু আমাদের মন ও হৃদয়কে সেই তথ্য গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত করে, যা বিবেচনা করা হবে। আমাদের সভায় শুরুর গান ও প্রার্থনায় সময়মতো উপস্থিত হওয়ার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত।

সভাতে আগে উপস্থিত হওয়ার কারণ সম্বন্ধে বলার সময় ২৩ বছর বয়সি হেলেন বলে: “আমি মনে করি যে, এটা হচ্ছে যিহোবার প্রতি আমার ভালোবাসা দেখানোর এক উপায়, যেহেতু তিনি সেখানে উপস্থাপিত সমস্ত তথ্য জুগিয়ে থাকেন, যার অন্তর্ভুক্ত গান ও শুরুর প্রার্থনা।” আমাদেরও কি বিষয়টাকে একই দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়? হ্যাঁ, সেই দৃষ্টিতেই দেখা উচিত। তাই, আসুন আমরা আমাদের সমস্ত কাজে সময়ানুবর্তী হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি, বিশেষ করে সেই ক্ষেত্রগুলোতে, যেগুলো আমাদের সত্য ঈশ্বরের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

[পাদটীকা]

^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যথেষ্ট আগেই প্রস্তুত হোন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

“দৈব” ঘটনাগুলোর জন্য সময় রাখুন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সভাগুলোতে আগে উপস্থিত হওয়ার উপকারগুলো লাভ করুন