সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

কেন পাপিষ্ঠা হিসেবে পরিচিত একজন স্ত্রীলোককে যিশু বলতে পেরেছিলেন যে, তার পাপ সকল ক্ষমা করা হয়েছে?—লূক ৭:৩৭, ৪৮.

যিশু যখন শিমোন নামে একজন ফরীশীর বাড়িতে ভোজনে বসেছিলেন, তখন একজন স্ত্রীলোক ‘যীশুর পশ্চাৎ দিকে তাঁহার চরণের নিকটে দাঁড়াইয়া ছিলেন।’ তিনি তার চোখের জলে যিশুর চরণ ভিজিয়েছিলেন এবং তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর চরণ মুছে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি তাঁর চরণ চুম্বন করেছিলেন এবং সুগন্ধি তৈল মাখিয়ে দিয়েছিলেন। এই স্ত্রীলোক ‘সেই নগরে এক পাপিষ্ঠা ছিলেন,’ সুসমাচারের বিবরণ বলে। অবশ্য, প্রত্যেক অসিদ্ধ মানুষই পাপী কিন্তু শাস্ত্র এই শব্দটিকে সাধারণত এমন একজন ব্যক্তির বিষয় বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করে থাকে, যার পাপ অত্যন্ত জঘন্য বা যিনি পাপ করে চলার জন্য কুখ্যাত। সম্ভবত, সেই স্ত্রীলোক একজন বেশ্যা ছিলেন। এইরকম একজন ব্যক্তিকেই যিশু বলেছিলেন: “তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে।” (লূক ৭:৩৬-৩৮, ৪৮) এই কথা বলার দ্বারা যিশু কী বুঝিয়েছিলেন? যেহেতু তখনও মুক্তির মূল্য প্রদান করা হয়নি, তাহলে কীভাবে এই পাপের ক্ষমা করা সম্ভবপর হয়েছিল?

সেই স্ত্রীলোক যিশুর চরণ ধুয়ে দেওয়ার ও অভিষেক করার পর কিন্তু যিশু তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার আগে, তাঁর নিমন্ত্রণকর্তা শিমোনকে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। পাপকে পরিশোধের অযোগ্য অনেক বড়ো এক ঋণের সঙ্গে তুলনা করে যিশু শিমোনকে বলেছিলেন: “এক মহাজনের দুই জন ঋণী ছিল; এক জন ধারিত পাঁচ শত সিকি, আর এক জন পঞ্চাশ। তাহাদের পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না থাকাতে তিনি উভয়কেই ক্ষমা করিলেন। ভাল, তাহাদের মধ্যে কে তাঁহাকে অধিক প্রেম করিবে?” উত্তরে শিমোন বলেছিলেন: “আমার বোধ হয়, যাহার অধিক ঋণ ক্ষমা করিলেন, সেই।” তা শুনে যিশু বলেছিলেন: “যথার্থ বিচার করিলে।” (লূক ৭:৪১-৪৩) আমাদের সকলেরই ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা দেখানোর এক বাধ্যবাধকতা রয়েছে আর যখন আমরা তাঁর অবাধ্য হই এবং পাপ করি, তখন আমরা তাঁকে তাঁর প্রাপ্য বিষয় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হই। আর এভাবে আমাদের ঋণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, যিহোবা হলেন এমন একজন মহাজন বা ঋণদাতার মতো, যিনি আমাদের ঋণ ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছুক। তাই যিশু তাঁর অনুসারীদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে ও এই অনুরোধ করতে উৎসাহিত করেছিলেন: “আমাদের অপরাধ [“ঋণ,” পাদটীকা] সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে [“ঋণীদিগকে,” পাদটীকা] ক্ষমা করিয়াছি।” (মথি ৬:১২) লূক ১১:৪ পদে এই ঋণগুলোকে পাপ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

কোন শর্তগুলোর ভিত্তিতে ঈশ্বর অতীতে পাপগুলো ক্ষমা করেছিলেন? তাঁর নিখুঁত ন্যায়বিচার অনুসারে, পাপের জন্য মৃত্যুদণ্ড আবশ্যক। তাই আদম তার জীবন দিয়ে তার পাপের মূল্য পরিশোধ করেছিল। কিন্তু, ইস্রায়েল জাতিকে দেওয়া ব্যবস্থার অধীনে, একজন অন্যায়কারী যিহোবার উদ্দেশে পশুবলি উৎসর্গ করার মাধ্যমে তার পাপ থেকে মুক্ত হতে পারতেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলই রক্তে শুচীকৃত হয়, এবং রক্তসেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না।” (ইব্রীয় ৯:২২) ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করার অন্য আর কোনো উপায় সম্বন্ধে যিহুদিরা জানত না। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিশুর দিনের প্রত্যক্ষদর্শীরা যিশু সেই স্ত্রীলোককে যা বলেছিলেন, সেই ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল। যারা যিশুর সঙ্গে ভোজনে বসেছিল তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছিল: “এ কে যে পাপক্ষমাও করে?” (লূক ৭:৪৯) তাহলে কীসের ভিত্তিতে অত্যন্ত পাপিষ্ঠা এই স্ত্রীলোকের অপরাধগুলোকে ক্ষমা করা যেতে পারে?

প্রথম মানব দম্পতি বিদ্রোহ করার পর, সর্বপ্রথম যে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, সেটাতে এক ‘বংশ’ উৎপন্ন করার ব্যাপারে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, যাঁর পাদমূল শয়তান ও তার ‘বংশ’ চূর্ণ করবে। (আদি. ৩:১৫) আর এই চূর্ণ করা তখন সম্পাদিত হয়েছিল, যখন ঈশ্বরের শত্রুরা যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। (গালা. ৩:১৩, ১৬) খ্রিস্টের পাতিত রক্ত সেই মুক্তির মূল্য হিসেবে কাজ করে, যা মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করে। যেহেতু কোনো কিছুই যিহোবাকে তিনি যা উদ্দেশ্য করেছেন, তা সম্পাদন করা থেকে বিরত করতে পারে না, তাই আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলো বলার সঙ্গেসঙ্গে ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে যেন মুক্তির মূল্য প্রদান করা হয়ে গিয়েছিল। তাই, সেই সময় থেকে যারা তাঁর এই প্রতিজ্ঞার ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করত, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারতেন।

প্রাক্‌খ্রিস্টীয় সময়ে, যিহোবা বেশ কিছু সংখ্যক লোককে ধার্মিক হিসেবে গণিত করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিল হনোক, নোহ, অব্রাহাম, রাহব এবং ইয়োব। বিশ্বাস সহকারে তারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করে ছিল। “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন,” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, “এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল।” রাহব সম্বন্ধে যাকোব বলেছিলেন: “আবার রাহব বেশ্যাও কি সেই প্রকারে কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা হইল না?”—যাকোব ২:২১-২৫.

প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদও বেশ কয়েক বার গুরুতর পাপ করেছিলেন কিন্তু সত্য ঈশ্বরের ওপর তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং তিনি প্রতি বার প্রকৃত অনুতাপ প্রদর্শন করেছিলেন। অধিকন্তু, শাস্ত্র বলে: “[যিশুকেই] ঈশ্বর তাঁহার রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্ম্মিকতা দেখান—কেননা ঈশ্বরের সহিষ্ণুতায় পূর্ব্বকালে কৃত পাপ সকলের প্রতি উপেক্ষা করা হইয়াছিল—যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্ম্মিকতা দেখান, যেন তিনি নিজে ধার্ম্মিক থাকেন, এবং যে কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও ধার্ম্মিক গণনা করেন।” (রোমীয় ৩:২৫, ২৬) যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান, যা ভবিষ্যতে প্রদান করা হবে, সেটার ভিত্তিতে যিহোবা তাঁর নিজস্ব ন্যায়বিচারের চাহিদাগুলোর ব্যাপারে কোনোরকম আপোশ না করেই দায়ূদের অপরাধগুলো ক্ষমা করে দিতে পেরেছিলেন।

স্পষ্টতই, সেই স্ত্রীলোক যিনি যিশুর চরণ অভিষেক করেছিলেন, তার পরিস্থিতিও একই ছিল। তিনি অনৈতিকভাবে জীবনযাপন করতেন কিন্তু তিনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন। তিনি তার পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়োজন বুঝতে পেরেছিলেন এবং তার কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সত্যিই সেই ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞ, যাঁর মাধ্যমে যিহোবা সেই মুক্তিপণ জুগিয়েছিলেন। যদিও সেই বলিদান তখনও প্রদান করা হয়নি, কিন্তু তা এতটাই নিশ্চিত ছিল যে, এটার মূল্য ইতিমধ্যেই তার মতো ব্যক্তিদের প্রতি প্রদান করা যেতে পারত। সেই কারণে যিশু তাকে বলেছিলেন: “তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে।”

এই বিবরণ যেমন স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিশু পাপীদের পরিহার করেননি। তিনি তাদের প্রতি মঙ্গল করেছিলেন। অধিকন্তু, যিহোবা অনুতপ্ত পাপীদেরকে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছুক। আমাদের মতো অসিদ্ধ মানুষদের জন্য কী এক চমৎকার ও হৃদয়গ্রাহী আশ্বাস!

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

এটা তাদের পক্ষে ধার্মিকতা বলে গণিত হয়েছিল