সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা আপনার জিহ্বাকে রক্ষা করুক

প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা আপনার জিহ্বাকে রক্ষা করুক

প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা আপনার জিহ্বাকে রক্ষা করুক

“তিনি প্রজ্ঞার সহিত মুখ খোলেন, তাঁহার জিহ্বাগ্রে দয়ার ব্যবস্থা থাকে।”—হিতো. ৩১:২৬.

১, ২. (ক) যিহোবার উপাসকদের কোন গুণ গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়? (খ) এই প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

 প্রাচীনকালের রাজা লমূয়েল তার মায়ের কাছ থেকে যে-ভারবাণী লাভ করেছিলেন, সেটিতে একজন উত্তম স্ত্রীর এক গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছিল যে, “তিনি প্রজ্ঞার সহিত মুখ খোলেন, তাঁহার জিহ্বাগ্রে দয়ার ব্যবস্থা থাকে।” (হিতো. ৩১:১, ১০, ২৬ *) একজন বিজ্ঞ নারী ও সেইসঙ্গে অন্য যে-ব্যক্তিরা যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করতে চায়, তাদের সকলের জিহ্বাগ্রে প্রেমপূর্ণ-দয়া কাম্য। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৯:২২.) সমস্ত সত্য উপাসকের কথাবার্তায় প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রতীয়মান হওয়া উচিত।

প্রেমপূর্ণ-দয়া কী? কাদের প্রতি এটা দেখাতে হবে? কী আমাদেরকে আমাদের জিহ্বাগ্রে “দয়ার ব্যবস্থা” রাখতে সাহায্য করবে? কীভাবে তা রাখা পরিবারের সদস্য ও সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে আমাদের ভাববিনিময়ে প্রভাব ফেলবে?

যখন দয়া অনুগত প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়

৩, ৪. (ক) প্রেমপূর্ণ-দয়া কী? (খ) কীভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়া সাধারণ দয়া বা সৌজন্যের চেয়ে আলাদা?

প্রেমপূর্ণ-দয়া শব্দটির সঙ্গে প্রেম ও দয়ার আচরণ জড়িত। এটির অন্তর্ভুক্ত দয়া অর্থাৎ অন্যদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ থাকা এবং উপকারজনক কাজ ও বিবেচনাপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমে সেই চিন্তা দেখানো। এই ক্ষেত্রে যেহেতু প্রেমও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রদর্শন করার জন্য অন্যদের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে তাদের মঙ্গলের প্রতি আগ্রহ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু, প্রেমপূর্ণ-দয়ার জন্য মূল ভাষায় যে-শব্দটি রয়েছে, সেটি দয়ার চেয়েও আরও বেশি কিছুকে বোঝায়, যা প্রেম থেকে উদ্ভূত হয়। প্রেমপূর্ণ-দয়া হল সেই দয়া, যা স্বেচ্ছায় এবং অনুগতভাবে এমন কারো প্রতি আসক্ত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া দেখানোর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়।

প্রেমপূর্ণ-দয়া শব্দটি অন্য আরেক অর্থেও দয়ার চেয়ে আলাদা। সাধারণ দয়া বা সৌজন্য এমনকী অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতিও দেখানো যেতে পারে। জাহাজডুবির সময়ে প্রেরিত পৌল এবং ২৭৫ জন সহযাত্রীর প্রতি মিলিতা দ্বীপের অধিবাসীরা এই ধরনের দয়া দেখিয়েছিল, যে-লোকেদের সঙ্গে তাদের আগে কখনো দেখা হয়নি। (প্রেরিত ২৭:৩৭–২৮:২) অন্যদিকে, প্রেমপূর্ণ-দয়ার সঙ্গে সেই ব্যক্তিদের মধ্যে অনুগত আসক্তি জড়িত, যাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই এক সম্পর্ক রয়েছে। * “যখন মিসর হইতে সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তখন” কেনীয়রা তাদের প্রতি তা দেখিয়েছিল।—১ শমূ. ১৫:৬.

ধ্যান এবং প্রার্থনা অপরিহার্য

৫. কী আমাদের জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখতে সাহায্য করবে?

আমাদের কথাবার্তায় প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো সহজ বিষয় নয়। জিহ্বার বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে শিষ্য যাকোব বলেছিলেন: “জিহ্বাকে দমন করিতে কোন মনুষ্যের সাধ্য নাই; উহা অশান্ত মন্দ বিষয়, মৃত্যুজনক বিষে পরিপূর্ণ।” (যাকোব ৩:৮) কী আমাদেরকে দেহের এই অঙ্গকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখতে সাহায্য করবে, যেটাকে দমন করা এত কঠিন? তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে বলা যিশুর কথাগুলো আমাদেরকে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। তিনি বলেছিলেন: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” (মথি ১২:৩৪) আমরা যদি আমাদের কথাবার্তায় প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে চাই, তাহলে আমাদের হৃদয়ে—ভিতরের ব্যক্তিত্বে—সেই গুণ গেঁথে দিতে হবে। আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে ধ্যান এবং প্রার্থনা আমাদেরকে ঠিক সেই বিষয়টা করতে সাহায্য করে।

৬. কেন যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজগুলো নিয়ে আমাদের উপলব্ধি সহকারে ধ্যান করা উচিত?

বাইবেল বলে যে, যিহোবা ঈশ্বর হলেন ‘দয়াতে মহান।’ (যাত্রা. ৩৪:৬) “তোমার দয়াতে, হে সদাপ্রভু,” গীতরচক গেয়েছিলেন, “পৃথিবী পরিপূর্ণ।” (গীত. ১১৯:৬৪) শাস্ত্রে এমন অসংখ্য বিবরণ রয়েছে, যেগুলো দেখায় যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের প্রতি কীভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছেন। ‘সদাপ্রভুর ক্রিয়া সকল’ উপলব্ধি সহকারে ধ্যান করার জন্য সময় করে নেওয়া আমাদের মধ্যে এই ঈশ্বরীয় গুণটি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা গেঁথে দিতে পারে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৭:১২.

৭, ৮. (ক) যিহোবা লোট ও তার পরিবারের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়ার কোন কাজ করেছিলেন? (খ) ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়া লাভ করে দায়ূদ কেমন অনুভব করেছিলেন?

উদাহরণস্বরূপ, চিন্তা করুন যে, যিহোবা কীভাবে অব্রাহামের ভাইপো লোট ও তার পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন, যখন তিনি সদোম নগরকে ধ্বংস করতে যাচ্ছিলেন, যেখানে তারা বাস করত। সেই সময় যতই নিকটবর্তী হচ্ছিল, লোটের কাছে যে-দূতেরা এসেছিল, তারা তার পরিবারকে নিয়ে দ্রুত সেই নগর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। “তিনি ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন,” বাইবেল বলে, “তাহাতে তাঁহার প্রতি সদাপ্রভুর স্নেহ প্রযুক্ত সেই [দূতেরা] তাঁহার ও তাঁহার স্ত্রীর ও কন্যা দুইটীর হস্ত ধরিয়া নগরের বাহিরে লইয়া রাখিলেন।” আমরা যখন এই সুরক্ষামূলক কাজ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন সেটা কি আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে না আর আমরা কি এই বিষয়টা স্বীকার করতে অনুপ্রাণিত হই না যে, এটা ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়ার এক প্রকাশ ছিল?—আদি. ১৯:১৬, ১৯.

এ ছাড়া, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের উদাহরণও বিবেচনা করুন, যিনি গেয়েছিলেন: “[সদাপ্রভু] তোমার সমস্ত অধর্ম্ম ক্ষমা করেন, তোমার সমস্ত রোগের প্রতীকার করেন।” বৎশেবার সঙ্গে কৃত তার পাপের ক্ষমা পাওয়ার বিষয়টাকে দায়ূদ নিশ্চয়ই কত উপলব্ধিই না করেছিলেন! তিনি এই কথা বলে যিহোবার উচ্চপ্রশংসা করেছিলেন: “পৃথিবীর উপরে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ।” (গীত. ১০৩:৩, ১১) এগুলো এবং অন্যান্য শাস্ত্রীয় বিবরণ নিয়ে ধ্যান করা, যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার জন্য আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে আর আমরা তাঁর প্রশংসা করতে ও তাঁকে ধন্যবাদ দিতে অনুপ্রাণিত হই। আমাদের হৃদয় যতই কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হবে, ততই আমরা সত্য ঈশ্বরের অনুকারী হয়ে উঠব।—ইফি. ৫:১.

৯. যিহোবার উপাসকদের রোজকার জীবনে প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রদর্শন করার কোন জোরালো কারণ রয়েছে?

শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিহোবা সেই লোকেদের প্রতি তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়া—তাঁর অনুগত প্রেম—দেখান, যাদের ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে এক অনুমোদিত সম্পর্ক রয়েছে। সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে এইরকম এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই? তাদের প্রতি কি যিহোবা রূঢ় বা নির্দয়? কখনোই না। “[ঈশ্বর] অকৃতজ্ঞদের ও দুষ্টদের প্রতিও কৃপাবান্‌,” লূক ৬:৩৫ পদ বলে। “তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৫) সত্য জানার ও সেই অনুযায়ী কাজ করার আগে, আমরা ঈশ্বরের দয়া বা সাধারণ দয়া লাভ করেছিলাম। কিন্তু, ঈশ্বরের উপাসক হিসেবে, আমরা তাঁর অনুগত প্রেম—তাঁর অবিচলিত প্রেমপূর্ণ-দয়া—লাভ করেছি। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৪:১০.) সেইজন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! আর আমাদের কথাবার্তায় ও সেইসঙ্গে আমাদের রোজকার জীবনের অন্যান্য দিকে প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রদর্শন করার জন্য এটা কতই না জোরালো এক কারণ!

১০. প্রেমপূর্ণ-দয়াকে আমাদের ব্যক্তিত্বের অংশ করে তোলার ক্ষেত্রে কেন প্রার্থনা এক অমূল্য সহায়ক?

১০ প্রেমপূর্ণ-দয়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক অমূল্য সহায়ক হল প্রার্থনা। এর কারণ হল প্রেম ও “মাধুর্য্য [“দয়া,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]”—প্রেমপূর্ণ-দয়ার অপরিহার্য অংশগুলো—হচ্ছে যিহোবার পবিত্র আত্মার ফলের দুটো দিক। (গালা. ৫:২২) আমরা সেই আত্মার প্রভাবাধীনে এসে আমাদের হৃদয় প্রেমপূর্ণ-দয়ায় পূর্ণ করতে পারি। যিহোবার পবিত্র আত্মা লাভ করার সবচেয়ে সরাসরি উপায় হচ্ছে, এটা চেয়ে প্রার্থনা করা। (লূক ১১:১৩) তাই, বার বার ঈশ্বরের আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা এবং এটির নির্দেশনা মেনে নেওয়া আমাদের জন্য উপযুক্ত। হ্যাঁ, ধ্যান এবং প্রার্থনা অপরিহার্য, যদি আমরা আমাদের জিহ্বাগ্রে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা রাখতে চাই।

বিবাহ সাথিদের জিহ্বাগ্রে

১১. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা চান যেন স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখায়? (খ) কীভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা একজন স্বামীকে তার জিহ্বাকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১১ প্রেরিত পৌল স্বামীদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফি. ৫:২৫) এ ছাড়া, পৌল তাদেরকে এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, যিহোবা আদম ও হবাকে কী বলেছিলেন। প্রেরিত লিখেছেন: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সেই দুই জন একাঙ্গ হইবে।” (ইফি. ৫:৩১) স্পষ্টতই, যিহোবা চান যেন স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের প্রতি অনুগতভাবে আসক্ত থাকে, সবসময় তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখায়। যে-স্বামীর জিহ্বাগ্রে অনুগত প্রেম থাকে, তিনি লোকেদের সামনে তার স্ত্রীর দোষত্রুটি প্রকাশ করেন না বা তাকে অবজ্ঞা করে কথা বলেন না। তিনি তার প্রশংসা করে আনন্দিত হন। (হিতো. ৩১:২৮) কোনো কারণে যদি সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তাহলে প্রেমপূর্ণ-দয়া স্বামীকে তার স্ত্রীর প্রতি অপমানজনক মন্তব্য করা থেকে তার জিহ্বাকে দমন করতে পরিচালিত করবে।

১২. কীভাবে একজন স্ত্রীর কথাবার্তা দেখাতে পারে যে, তার জিহ্বাগ্রে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা রয়েছে?

১২ এ ছাড়া, স্ত্রীর জিহ্বাগ্রেও প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। তার কথাবার্তা জগতের আত্মা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। “স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” করায়, স্ত্রী জনসমক্ষে তার প্রশংসা করেন এবং তার প্রতি অন্যদের ইতিমধ্যেই যে-সম্মান রয়েছে, সেটাকে আরও বৃদ্ধি করেন। (ইফি. ৫:৩৩) বাবার প্রতি সন্তানদের যে-সম্মান রয়েছে, সেটা যেন কমে না যায় সেই চেষ্টায় তিনি সন্তানদের সামনে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা বা তার মতামত সম্বন্ধে আপত্তি করা থেকে বিরত থাকেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে একান্তে বিষয়গুলো সমাধান করেন। “স্ত্রীলোকদের বিজ্ঞতা তাহাদের গৃহ গাঁথে,” বাইবেল বলে। (হিতো. ১৪:১) তার গৃহ পুরো পরিবারের জন্য এক মনোরম ও আরামদায়ক স্থান হয়ে ওঠে।

১৩. বিশেষ করে, কোথায় প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত এবং কীভাবে?

১৩ এমনকী ঘরে একান্তে থাকার সময়েও, বিবাহ সাথিদের জিহ্বাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যা দেখায় যে, পরস্পরের প্রতি তাদের সম্মান রয়েছে। “এ সকল ত্যাগ কর” পৌল লিখেছিলেন, “ক্রোধ, রাগ, হিংসা, নিন্দা ও তোমাদের মুখনির্গত কুৎসিত আলাপ।” তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা . . . করুণার চিত্ত, মধুর ভাব [“দয়া,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। . . . প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কল. ৩:৮, ১২-১৪) ছেলে-মেয়েরা যদি তাদের ঘরে প্রেম ও সদয় কথাবার্তা শুনতে অভ্যস্ত থাকে, তাহলে তারা শুধু উন্নতিই করবে না কিন্তু সেইসঙ্গে খুব সম্ভবত তাদের বাবা-মায়ের কথাবার্তার ধরনও অনুকরণ করবে।

১৪. কীভাবে পরিবারের মস্তকরা তাদের যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে পারে?

১৪ গীতরচক যিহোবা সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আহা! তোমার দয়া আমার সান্ত্বনাজনক হউক।” (গীত. ১১৯:৭৬) একটা যে-উল্লেখযোগ্য উপায়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের সান্ত্বনা জোগান, তা হল তাদেরকে পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করার দ্বারা। (গীত. ১১৯:১০৫) কীভাবে পরিবারের মস্তকরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার উদাহরণ থেকে উপকৃত হতে পারে এবং তাদের যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে পারে? প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং উৎসাহ জোগানোর মাধ্যমে তারা তা করতে পারে। পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা আধ্যাত্মিক সম্পদ আবিষ্কার করার জন্য কী এক উত্তম সুযোগই না প্রদান করে!—হিতো. ২৪:৪.

সহবিশ্বাসীদের প্রতি অনুগত প্রেম দেখান

১৫. কীভাবে প্রাচীনরা এবং আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব অন্যান্য ব্যক্তিরা মণ্ডলীর অন্যদেরকে রক্ষা করার জন্য তাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে পারে?

১৫ “হে সদাপ্রভু . . . তব দয়া ও তব সত্য সতত আমাকে রক্ষা করুক,” রাজা দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন। (গীত. ৪০:১১) কীভাবে মণ্ডলীর খ্রিস্টান প্রাচীনরা এবং আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব অন্যান্য ব্যক্তিরা এই ক্ষেত্রে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারে? শাস্ত্রীয় তথ্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করানোর জন্য আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করা নিশ্চিতভাবেই প্রেমপূর্ণ-দয়ার এক কাজ।—হিতো. ১৭:১৭.

১৬, ১৭. কোন কোন উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে, আমাদের কথাবার্তায় প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা রয়েছে?

১৬ আমাদের কী করা উচিত, যদি আমরা দেখি যে, একজন খ্রিস্টান বাইবেলের নীতির সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে এমন এক পথের দিকে ধাবিত হচ্ছেন? প্রেমপূর্ণ-দয়া কি তাকে সংশোধন করার চেষ্টায় আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে পরিচালিত করবে না? (গীত. ১৪১:৫) আমরা যদি জানতে পারি যে, কোনো সহবিশ্বাসী এক গুরুতর পাপ করেছেন, তাহলে অনুগত প্রেম আমাদেরকে সেই অন্যায়কারীকে ‘মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করিবার’ জন্য উৎসাহিত করতে অনুপ্রাণিত করে, যাতে তারা ‘প্রভুর [ঈশ্বরের] নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করিতে’ পারে। (যাকোব ৫:১৪) অন্যায়কারী যদি প্রাচীনদের কাছে না যান, তাহলে আমরা বিষয়টা না জানালে তা প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজ হবে না। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিরুৎসাহিত হতে, একাকিত্ব বোধ করতে, অযোগ্যতার অনুভূতির দ্বারা জর্জরিত হতে কিংবা হতাশাগ্রস্ত থাকতে পারে। প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা যে আমাদের জিহ্বাগ্রে আছে, তা দেখানোর একটা উত্তম উপায় হল, ‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলা।’—১ থিষল. ৫:১৪, NW.

১৭ সেই সময় আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, যখন ঈশ্বরের শত্রুরা সহবিশ্বাসীদের সম্বন্ধে গুজব ছড়ায়? আমাদের ভাইদের নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে সন্দেহ করার পরিবর্তে বরং আমাদের সেখানেই সেই কথা শেষ করে দেওয়া উচিত অথবা অভিযোগকারী যদি কিছুটা নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করা উচিত যে, তিনি এই বিষয়ে প্রকৃতই নিশ্চিত কি না যে, তার কথার ভিত্তি রয়েছে। ঈশ্বরের শত্রুরা যদি আমাদের খ্রিস্টান ভাইদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে তারা কোথায় আছে, তা জানতে চায়, তাহলে আমাদের ভাইদের প্রতি অনুগত প্রেমের কারণে আমরা তাদের সম্বন্ধে কোনো তথ্য জানাব না।—হিতো. ১৮:২৪.

প্রেমপূর্ণ-দয়াবান ব্যক্তি জীবন পাবে

১৮, ১৯. সহউপাসকদের সঙ্গে আচরণ করার সময় কেন আমাদের জিহ্বা থেকে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়?

১৮ যিহোবার সহউপাসকদের সঙ্গে আমাদের সমস্ত আচরণে অনুগত প্রেম দেখানো উচিত। এমনকী কঠিন পরিস্থিতিতেও, আমাদের জিহ্বা থেকে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়। ইস্রায়েল সন্তানদের প্রেমপূর্ণ-দয়া যখন “শিশিরের ন্যায়” হয়ে উঠেছিল, “যাহা প্রত্যূষে উড়িয়া যায়,” তখন যিহোবা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। (হোশেয় ৬:৪, ৫) অন্যদিকে, যখন নিয়মিতভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো হয়, তখন যিহোবা আনন্দিত হন। যারা এর অনুধাবন করে, তাদেরকে তিনি কীভাবে আশীর্বাদ করেন, তা বিবেচনা করুন।

১৯ হিতোপদেশ ২১:২১ পদ বলে: “যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, ধার্ম্মিকতা ও সম্মান পায়।” এইরকম একজন ব্যক্তি যে-আশীর্বাদগুলো লাভ করবেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল তিনি জীবন লাভ করবেন, তবে সেটা ক্ষণকালীন নয় বরং চিরকালীন। যিহোবা তাকে ‘প্রকৃতরূপে জীবন ধরিয়া রাখিতে’ সাহায্য করেন। (১ তীম. ৬:১২, ১৯) তাই যেকোনোভাবেই হোক, আসুন আমরা ‘প্রত্যেকে আপন আপন ভ্রাতার সহিত সদয় ব্যবহার করি।’—সখ. ৭:৯.

[পাদটীকা]

^ বাংলা স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল থেকে আমরা যে-পদগুলো উদ্ধৃতি করেছি সেই সমস্ত পদে পাওয়া “দয়া” শব্দটি, মূল ভাষাগুলোতে “প্রেমপূর্ণ-দয়া”-র অর্থ প্রদান করে।

^ প্রেমপূর্ণ-দয়া কীভাবে আনুগত্য, প্রেম এবং দয়ার চেয়ে আলাদা, সেই বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য ২০০২ সালের ১৫ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১২-১৩, ১৮-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• প্রেমপূর্ণ-দয়াকে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?

• কী আমাদেরকে আমাদের জিহ্বাগ্রে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা রাখতে সাহায্য করবে?

• কীভাবে বিবাহ সাথিরা তাদের কথাবার্তায় অনুগত প্রেম দেখাতে পারে?

• কী দেখায় যে, সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে আমাদের আচরণের সময় আমাদের জিহ্বাগ্রে প্রেমপূর্ণ-দয়ার ব্যবস্থা রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

দায়ূদ যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার উচ্চপ্রশংসা করেছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার কি নিয়মিত পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা রয়েছে?