সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে যিশু ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করেন

যেভাবে যিশু ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করেন

যেভাবে যিশু ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করেন

“[খ্রিস্টকেই] ঈশ্বর [যিশুর] রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্ম্মিকতা দেখান।”—রোমীয় ৩:২৫.

১, ২. (ক) মানবজাতির অবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের কী শিক্ষা দেয়? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

 এদন উদ্যানে বিদ্রোহ সম্বন্ধীয় বাইবেলের বিবরণটা সকলেই জানে। আমরা সকলেই আদমের পাপের প্রভাব অনুভব করতে পারি, যা এই কথাগুলোর দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) যা সঠিক, তা করার জন্য আমরা যত কঠোর প্রচেষ্টাই করি না কেন, তবুও আমরা ভুল করি, যার জন্য আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া প্রয়োজন। এমনকী প্রেরিত পৌলও দুঃখ করে বলেছিলেন: “আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি। দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি!”—রোমীয় ৭:১৯, ২৪.

আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাব এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে: কীভাবে নাসরতের যিশুর পক্ষে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করা সম্ভবপর হয়েছিল আর কেন তিনি বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন? কীভাবে যিশুর জীবনধারা যিহোবার ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করেছিল? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, খ্রিস্টের মৃত্যু কী সম্পাদন করেছিল?

ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়

৩. কীভাবে শয়তান হবাকে প্রতারিত করেছিল?

আমাদের প্রথম পিতামাতা আদম ও হবা “সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়,” তার শাসনের অধীনে এসে মূর্খতার সঙ্গে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। (প্রকা. ১২:৯) কীভাবে এমনটা ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। শয়তান যিহোবা ঈশ্বরের শাসনপদ্ধতির ধার্মিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সে তা হবাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে করেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” হবা ঈশ্বরের এই স্পষ্ট আদেশ পুনরাবৃত্তি করেছিল যে, একটা নির্দিষ্ট গাছ স্পর্শ করা যাবে না, করলে তারা মারা যাবে। এরপর শয়তান ঈশ্বরকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল। “কোন ক্রমে মরিবে না,” দিয়াবল বলেছিল। সে হবাকে এই কথা বিশ্বাস করানোর দ্বারা প্রতারিত করছিল যে, ঈশ্বর তাদেরকে উত্তম কিছু থেকে বঞ্চিত করছিলেন এবং সেই ফল খাওয়ার দ্বারা সে ঈশ্বরের সদৃশ হয়ে যাবে অর্থাৎ নৈতিক স্বাধীনতা লাভ করবে।—আদি. ৩:১-৫.

৪. কীভাবে মানবজাতি প্রতিদ্বন্দ্বী শয়তানের শাসনের অধীনে চলে এসেছিল?

মূলত, শয়তান এই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, মানবজাতি ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন এক পথ অনুধাবন করার মাধ্যমে আরও বেশি সুখী হবে। ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধীয় ধার্মিকতাকে সমর্থন করার পরিবর্তে, আদম তার স্ত্রীর কথা শুনেছিল এবং সেও তার সঙ্গে নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিল। এভাবে আদম যিহোবার সামনে তার সিদ্ধ অবস্থান স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছিল এবং আমাদেরকে পাপ ও মৃত্যুর নিষ্ঠুর জোয়ালির অধীনে নিয়ে এসেছিল। একইসময়ে, মানবজাতি “এই যুগের দেব” প্রতিদ্বন্দ্বী শয়তানের শাসনের অধীনে চলে এসেছিল।—২ করি. ৪:৪; রোমীয় ৭:১৪.

৫. (ক) কীভাবে যিহোবার কথাগুলো সত্য হয়েছিল? (খ) আদম ও হবার বংশধরদের জন্য ঈশ্বর কোন আশা প্রদান করেছিলেন?

যিহোবা তাঁর নির্ভুল বাক্যের সত্যতা অনুযায়ী, আদম ও হবাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। (আদি. ৩:১৬-১৯) কিন্তু, এর অর্থ এই ছিল না যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। বরং এর বিপরীতটাই ঘটেছিল! আদম ও হবাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সময় যিহোবা তাদের ভাবী বংশধরদের জন্য এক উজ্জ্বল আশার আলো প্রদান করেছিলেন। তিনি এক ‘বংশ’ উৎপন্ন করার ব্যাপারে তাঁর উদ্দেশ্য ঘোষণা করার দ্বারা তা করেছিলেন, যে-বংশের পাদমূল শয়তান চূর্ণ করবে। কিন্তু, সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ পাদমূলে প্রাপ্ত আঘাত থেকে আরোগ্য লাভ করবে এবং “[শয়তানের] মস্তক চূর্ণ” করবে। (আদি. ৩:১৫) বাইবেল যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে এই কথাগুলো বলার দ্বারা এই মূল বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে জানায়: “ঈশ্বরের পুত্ত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করেন।” (১ যোহন ৩:৮) কিন্তু, কীভাবে যিশুর আচরণ ও মৃত্যু ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করেছিল?

যিশুর বাপ্তিস্মের অর্থ

৬. কীভাবে আমরা জানি যে, যিশু আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ পাননি?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে যিশু একসময়ের সিদ্ধ ব্যক্তি আদমের সমরূপ ছিলেন। (রোমীয় ৫:১৪; ১ করি. ১৫:৪৫) এর অর্থ হল, যিশুকে সিদ্ধ হিসেবে জন্ম নিতে হয়েছিল। কীভাবে তা সম্ভব হয়েছিল? গাব্রিয়েল দূত যিশুর মা মরিয়মের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; এই কারণ যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্ত্র বলা যাইবে।” (লূক ১:৩৫) স্পষ্টতই, মরিয়ম যিশুর ছেলেবেলাতেই তাঁকে তাঁর জন্ম সম্বন্ধীয় নির্দিষ্ট কিছু তথ্য জানিয়েছিলেন। তাই, একবার মরিয়ম ও যিশুর পালক পিতা যোষেফ যখন যিশুকে ঈশ্বরের মন্দিরে খুঁজে পেয়েছিলেন, তখন অল্পবয়সি যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে, ইহা কি জানিতে না?” (লূক ২:৪৯) স্পষ্টতই, ছেলেবেলা থেকেই যিশু জানতেন যে, তিনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। তাই, ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করা তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

৭. যিশুর কোন কোন মূল্যবান সম্পদ ছিল?

উপাসনার জন্য নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার দ্বারা যিশু আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সিদ্ধ মন নিয়ে তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে যা শুনেছিলেন এবং পড়েছিলেন, সেগুলো নিশ্চয়ই শিখেছিলেন এবং উপলব্ধি করেছিলেন। (লূক ৪:১৬) এ ছাড়া, তাঁর আরেকটা মূল্যবান সম্পদও ছিল আর তা হল এক সিদ্ধ মানবদেহ, যা মানবজাতির জন্য বলি দেওয়া যেত। বাপ্তাইজিত হওয়ার সময় যিশু প্রার্থনা করছিলেন এবং হয়তো গীতসংহিতা ৪০:৬-৮ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক কথাগুলো চিন্তা করেছিলেন।—লূক ৩:২১; পড়ুন ইব্রীয় ১০:৫-১০. *

৮. কেন যোহন বাপ্তাইজক যিশুকে বাপ্তাইজিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন?

যোহন বাপ্তাইজক প্রথমে যিশুকে বাপ্তাইজিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিলেন। কেন? কারণ যোহন যিহুদিদেরকে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে করা তাদের পাপের জন্য অনুতাপের প্রতীক হিসেবে জলে নিমজ্জিত করছিলেন। একজন নিকট আত্মীয় হিসেবে যোহন নিশ্চয়ই জানতেন যে, যিশু ধার্মিক ছিলেন আর তাই অনুতাপ করার কোনো প্রয়োজন নেই। যিশু যোহনকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাঁর জন্য বাপ্তাইজিত হওয়া উপযুক্ত। “এইরূপে” যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন, “সমস্ত ধার্ম্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত।”—মথি ৩:১৫.

৯. যিশুর বাপ্তিস্ম কী চিত্রিত করেছিল?

একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে যিশু এই উপসংহারে আসতে পারতেন যে, আদমের মতো তাঁরও এক সিদ্ধ জাতির পিতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু, যিশু কখনো এইরকম এক ভবিষ্যতের বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা করেননি কারণ এটা তাঁর জন্য যিহোবার ইচ্ছা ছিল না। ঈশ্বর যিশুকে প্রতিজ্ঞাত বংশ বা মশীহ হিসেবে তাঁর ভূমিকা পালন করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যিশুর সিদ্ধ মানবজীবন বলি দেওয়া। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৩:৫, ৬, ১২.) অবশ্য, যিশুর বাপ্তিস্মের অর্থ আমাদের মতো একই নয়। এর সঙ্গে যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণ জড়িত ছিল না, যেহেতু যিশু ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত ইস্রায়েল জাতির অংশ ছিলেন। এর পরিবর্তে, যিশুর বাপ্তিস্ম ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য নিজেকে তাঁর কাছে উপস্থাপন করাকে চিত্রিত করেছিল, যেমনটা শাস্ত্র-এ মশীহ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা ছিল।

১০. মশীহ হিসেবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার সঙ্গে কী জড়িত ছিল আর এই সম্বন্ধে যিশু কেমন বোধ করেছিলেন?

১০ যিশুর জন্য যিহোবার ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত ছিল, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা, শিষ্য তৈরি করা এবং তাদেরকে ভাবী শিষ্য তৈরির কাজের জন্য প্রস্তুত করা। এ ছাড়া, যিশুর নিজেকে উপস্থাপন করার সঙ্গে যিহোবা ঈশ্বরের ধার্মিক সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার জন্য তাড়না সহ্য করার ও নিষ্ঠুর মৃত্যু ভোগ করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছুক মনোভাবও জড়িত ছিল। যেহেতু যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে সত্যিই ভালোবাসতেন, তাই তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আনন্দিত ছিলেন এবং তাঁর দেহকে এক বলি হিসেবে উপস্থাপন করে গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করেছিলেন। (যোহন ১৪:৩১) এ ছাড়া, এটা জেনেও তিনি খুশি ছিলেন যে, আমাদেরকে পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে পুনরায় ক্রয় করার জন্য তাঁর সিদ্ধ জীবনের মূল্য ঈশ্বরের কাছে প্রদান করা যেতে পারে। এই গুরু দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য যিশুর নিজেকে উপস্থাপন করার বিষয়ে ঈশ্বর কি প্রীত ছিলেন বা সেটাকে অনুমোদন করেছিলেন? অবশ্যই তিনি করেছিলেন!

১১. কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যিশুকে প্রতিজ্ঞাত মশীহ বা খ্রিস্ট হিসেবে অনুমোদন করেছেন?

১১ সুসমাচারের চার জন লেখকই, যিশু যখন যর্দন নদীর জল থেকে উঠে এসেছিলেন, সেই সময়ে যিহোবা ঈশ্বরের অনুমোদনের স্পষ্ট অভিব্যক্তি সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। “আমি আত্মাকে কপোতের ন্যায় স্বর্গ হইতে নামিতে দেখিয়াছি,” যোহন বাপ্তাইজক সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, “তিনি [যিশুর] উপরে অবস্থিতি করিলেন . . . আর আমি দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিয়াছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (যোহন ১:৩২-৩৪) অধিকন্তু, সেই সময়ে যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।”—মথি ৩:১৭; মার্ক ১:১১; লূক ৩:২২.

মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত

১২. যিশু তাঁর বাপ্তিস্মের পর সাড়ে তিন বছর কী করেছিলেন?

১২ পরবর্তী সাড়ে তিন বছর, যিশু তাঁর পিতা এবং ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধীয় ধার্মিকতার বিষয়ে লোকেদের শিক্ষা দেওয়ায় পুরোপুরি নিবিষ্ট ছিলেন। প্রতিজ্ঞাত দেশের সব জায়গায় পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তবুও কোনো কিছুই তাঁকে সত্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত করতে পারেনি। (যোহন ৪:৬, ৩৪; ১৮:৩৭) যিশু অন্যদেরকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। অলৌকিকভাবে অসুস্থদের সুস্থ করে, ক্ষুধার্ত জনতাকে খাইয়ে এবং এমনকী মৃতদেরকে উত্থিত করে তিনি প্রদর্শন করেছিলেন যে, রাজ্য মানবজাতির জন্য কী সম্পাদন করবে।—মথি ১১:৪, ৫.

১৩. প্রার্থনা সম্বন্ধে যিশু কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?

১৩ তাঁর শিক্ষা ও আরোগ্যকরণের কাজের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কৃতিত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, যিশু নম্রভাবে সমস্ত গৌরব যিহোবাকে প্রদান করার দ্বারা এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (যোহন ৫:১৯; ১১:৪১-৪৪) এ ছাড়া, যিশু সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্বন্ধেও জানিয়েছিলেন, যেগুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। আমাদের প্রার্থনায় এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত যে, ঈশ্বরের নাম যিহোবা যেন ‘পবিত্র বলিয়া মান্য হয়’ এবং শয়তানের দুষ্ট শাসনের স্থলে ঈশ্বরের ধার্মিক সার্বভৌমত্ব আসে, যাতে তাঁর ‘ইচ্ছা সিদ্ধ হয়, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হয়।’ (মথি ৬:৯, ১০) এ ছাড়া, যিশু আমাদেরকে ‘প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ দ্বারা এই ধরনের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।—মথি ৬:৩৩.

১৪. যদিও যিশু সিদ্ধ ছিলেন, তবুও কেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তাঁর ভূমিকা পালন করার জন্য তাঁর দিক থেকে প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল?

১৪ যতই তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছিল, ততই যিশু তাঁর গুরু দায়িত্ব সম্বন্ধে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর পিতার উদ্দেশ্য এবং সুনাম, যিশুর এক অন্যায্য বিচার সহ্য করার ও নিষ্ঠুর মৃত্যু ভোগ করার ওপর নির্ভর করেছিল। তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে যিশু প্রার্থনা করেছিলেন: “এখন আমার প্রাণ উদ্‌বিগ্ন হইয়াছে; ইহাতে কি বলিব? পিতঃ এই সময় হইতে আমাকে রক্ষা কর? কিন্তু ইহারই নিমিত্ত আমি এই সময় পর্য্যন্ত আসিয়াছি।” এই স্বাভাবিক মানব অনুভূতি প্রকাশ করার পর, যিশু নিঃস্বার্থভাবে আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন এবং এই প্রার্থনা করেছিলেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।” যিহোবা সঙ্গেসঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।” (যোহন ১২:২৭, ২৮) হ্যাঁ, যিশু নীতিনিষ্ঠার সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা ভোগ করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন, যেটার মুখোমুখি কোনো মানুষ কখনো হয়নি। কিন্তু, তাঁর স্বর্গীয় পিতার সেই কথাগুলো শোনা নিঃসন্দেহে যিশুকে এই দৃঢ় আস্থা প্রদান করেছিল যে, তিনি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মহিমান্বিত করায় এবং এর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করায় সফল হবেন। আর সত্যিই তিনি সফল হয়েছিলেন!

যিশুর মৃত্যু যা সম্পাদন করেছিল

১৫. মৃত্যুর ঠিক আগে কেন যিশু এই কথাগুলো বলেছিলেন: “সমাপ্ত হইল”?

১৫ যাতনাদণ্ডে যিশু যখন তাঁর যন্ত্রণাদায়ক শেষ নিঃশ্বাস নিতে যাচ্ছিলেন, তখন বলেছিলেন: “সমাপ্ত হইল।” (যোহন ১৯:৩০) ঈশ্বরের সাহায্যে যিশু তাঁর বাপ্তিস্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাড়ে তিন বছর কত বড়ো বড়ো বিষয়ই না সম্পাদন করতে পেরেছিলেন! যিশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়েছিল এবং যে-রোমীয় শতপতি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টা তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্ত্র ছিলেন।” (মথি ২৭:৫৪) স্পষ্টতই, সেই শতপতি যিশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবি করার কারণে উপহাস সহ্য করতে দেখেছিলেন। এই সমস্তকিছু ভোগ করা সত্ত্বেও, যিশু তাঁর নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন এবং শয়তানকে এক জঘন্য মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে এমন সকলের বিষয়ে শয়তান এই দোষারোপ করেছিল: “প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে।” (ইয়োব ২:৪) তাঁর বিশ্বস্ততার মাধ্যমে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, আদম ও হবাও তুলনামূলকভাবে আরও সহজ পরীক্ষার মধ্যে বিশ্বস্ত থাকতে পারত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যিশুর জীবন ও মৃত্যু যিহোবার সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধীয় ধার্মিকতাকে সমর্থন এবং মহিমান্বিত করেছিল। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:১১.) যিশুর মৃত্যু কি আরও কিছু সম্পাদন করেছিল? নিশ্চিতভাবেই, করেছিল!

১৬, ১৭. (ক) কেন যিহোবার প্রাক্‌খ্রিস্টীয় সাক্ষিদের পক্ষে তাঁর সঙ্গে এক ধার্মিক অবস্থান লাভ করা সম্ভবপর হয়েছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা তাঁর পুত্রকে বিশ্বস্ততার জন্য পুরস্কৃত করেছিলেন এবং কীভাবে প্রভু যিশু খ্রিস্ট ক্রমাগত তা করে চলছেন?

১৬ যিহোবার অনেক দাস, যিশু পৃথিবীতে আসার আগে বাস করত। তারা ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান উপভোগ করেছিল এবং তাদেরকে পুনরুত্থানের প্রত্যাশা দেওয়া হয়েছিল। (যিশা. ২৫:৮; দানি. ১২:১৩) কিন্তু, কোন বৈধ ভিত্তিতে পবিত্র ঈশ্বর যিহোবা পাপী মানুষদেরকে এইরকম এক অপূর্ব উপায়ে আশীর্বাদ করতে পেরেছিলেন? বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “[যিশু খ্রিস্টকেই] ঈশ্বর [যিশুর] রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্ম্মিকতা দেখান—কেননা ঈশ্বরের সহিষ্ণুতায় পূর্ব্বকালে কৃত পাপ সকলের প্রতি উপেক্ষা করা হইয়াছিল—যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্ম্মিকতা দেখান, যেন তিনি নিজে ধার্ম্মিক থাকেন, এবং যে কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও ধার্ম্মিক গণনা করেন।”—রোমীয় ৩:২৫, ২৬. *

১৭ যিহোবা যিশুকে পুনরুত্থিত করে পৃথিবীতে আসার আগে যিশুর যে-পদমর্যাদা ছিল, সেটার চেয়ে শ্রেষ্ঠ পদমর্যাদা দান করার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছিলেন। যিশু এখন একজন গৌরবান্বিত আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে অমরত্ব উপভোগ করছেন। (ইব্রীয় ১:৩) মহাযাজক ও রাজা হিসেবে, প্রভু যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদেরকে ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে মহিমান্বিত করার জন্য ক্রমাগত সাহায্য করে যাচ্ছেন। আর আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা হলেন সেইসমস্ত ব্যক্তিদের পুরস্কারদাতা, যারা তা করে এবং তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করে অনুগতভাবে তাঁর সেবা করে!—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:৩; ইব্রীয় ১১:৬.

১৮. পরবর্তী প্রবন্ধে কোন মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে?

১৮ হেবল থেকে শুরু করে সমস্ত বিশ্বস্ত মানুষ যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছে কারণ তারা প্রতিজ্ঞাত বংশের ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করেছে এবং আস্থা রেখেছে। যিহোবা জানতেন যে, তাঁর পুত্র একজন নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী হবেন এবং তাঁর মৃত্যু ‘জগতের পাপভারের’ এক সিদ্ধ আচ্ছাদন হবে। (যোহন ১:২৯) এ ছাড়া, যিশুর মৃত্যু বর্তমানে জীবিত লোকেদেরও উপকৃত করে। (রোমীয় ৩:২৬) তাহলে, খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য আপনার জন্য কোন আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসে? সেই বিষয়টাই পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকা]

^ প্রেরিত পৌল এখানে গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদ অনুসারে গীতসংহিতা ৪০:৬-৮ পদের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছেন, যে-কথাগুলোর মধ্যে “আমার জন্য দেহ রচনা করিয়াছ” বাক্যাংশটি রয়েছে। এই বাক্যাংশটি প্রাচীন ইব্রীয় শাস্ত্র-এর প্রাপ্তিসাধ্য পাণ্ডুলিপিগুলোতে পাওয়া যায় না।

^ ৬ ও ৭ পৃষ্ঠায় দেওয়া “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বরের ধার্মিকতা কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল?

• যিশুর বাপ্তিস্ম কী চিত্রিত করেছিল?

• যিশুর মৃত্যু কী সম্পাদন করেছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন যে, যিশুর বাপ্তিস্ম কী চিত্রিত করেছিল?