অজুহাত এগুলোকে যিহোবা কীভাবে দেখেন?
অজুহাত এগুলোকে যিহোবা কীভাবে দেখেন?
“তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি,” প্রথম পুরুষ বলেছিল। “সর্প আমাকে ভুলাইয়াছিল, তাই খাইয়াছি,” উত্তরে নারী বলেছিল। ঈশ্বরের প্রতি বলা, আমাদের প্রথম পিতামাতা আদম ও হবার এই কথাগুলো অজুহাত দেখানোর বিষয়ে মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাসের শুরুকে চিহ্নিত করে।—আদি. ৩:১২, ১৩.
আদম ও হবার ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতার কারণে তাদের ওপর যিহোবার বিচার এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিল যে, তাদের অজুহাত তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। (আদি. ৩:১৬-১৯) তাহলে, আমরা কি এই উপসংহারে আসব যে, সমস্ত অজুহাতই যিহোবার কাছে অগ্রহণযোগ্য? নাকি তিনি কোনো কোনো অজুহাতকে উপযুক্ত বলে মনে করেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে আমরা কীভাবে এই পার্থক্য নির্ণয় করতে পারি? এর উত্তর পাওয়ার জন্য প্রথমে আসুন আমরা অজুহাতের সংজ্ঞা বিবেচনা করি।
অজুহাত হল একটা কারণ দেখানো, যেখানে ব্যাখ্যা করা হয় যে, একটা বিষয় কেন করা হয়েছে, কেন করা হয়নি বা কেন করা যাবে না। একটা অজুহাত হতে পারে কোনো ব্যর্থতার পিছনে এক উপযুক্ত ব্যাখ্যা এবং তা হয়তো এমন অকৃত্রিম কৈফিয়ত দাঁড় করাতে পারে, যা ক্ষমা লাভ করার ভিত্তি জুগিয়ে থাকে। কিন্তু, আদম ও হবার ক্ষেত্রে যেমনটা সত্য ছিল, তেমনই কোনো অজুহাত হয়তো ছুতো এবং প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এক মিথ্যা যুক্তি হতে পারে। যেহেতু অজুহাত প্রায়ই এইরকমই হয়ে থাকে, তাই সেগুলোকে সাধারণত সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয়।
অজুহাত দেখানোর সময়—বিশেষভাবে তা যদি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়—আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমরা ‘মিথ্যা যুক্তি দ্বারা নিজেদেরকে প্রতারিত করা’ এড়াতে পারি। (যাকোব ১:২২, NW) তাই আসুন, আমরা বাইবেলের কয়েকটা উদাহরণ এবং নীতি বিবেচনা করি, যেগুলো আমাদেরকে ‘প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা করিয়া’ চলতে সাহায্য করবে।—ইফি. ৫:১০.
ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করেন
ঈশ্বরের বাক্যে আমরা এমন সুনির্দিষ্ট আজ্ঞা পাই, যেগুলো যিহোবার লোক হিসেবে আমাদের পালন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ‘গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ বিষয়ে খ্রিস্টদত্ত এই দায়িত্ব হল এমন এক আজ্ঞা, যা এখনও খ্রিস্টের সমস্ত সত্য অনুসারীদের জন্য প্রযোজ্য। (মথি ২৮:১৯, ২০) বস্তুতপক্ষে, এই আজ্ঞা পালন করা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ধিক্ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি।”—১ করি. ৯:১৬.
তা সত্ত্বেও, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছে এমন কেউ কেউ এখনও ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে লজ্জা পায়। (মথি ২৪:১৪) আবার আগে প্রচার কাজ করত এমন কেউ কেউ তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। যারা প্রচার কাজে অংশ নেয় না, তারা মাঝে মাঝে কোন কারণগুলো দেখিয়ে থাকে? সেই ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যারা অতীতে তাঁর সুনির্দিষ্ট আজ্ঞা পালন করতে ইতস্তত করেছিল?
যে-অজুহাতগুলো ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়
“এটা অনেক কঠিন।” বিশেষভাবে যারা ভীতু প্রকৃতির, তাদের জন্য পরিচর্যায় অংশ নেওয়া অনেক কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, যোনার উদাহরণ থেকে কী শেখা যেতে পারে, তা বিবেচনা করুন। তিনি এমন একটা দায়িত্ব লাভ করেছিলেন, যেটা তার কাছে অনেক কঠিন বলে মনে হয়েছিল—যিহোবা তাকে নীনবীর আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে ঘোষণা করতে বলেছিলেন। এটা বোঝা কঠিন নয় যে, কেন যোনা সেই কাজটাকে ভীতিকর বলে মনে করেছিলেন। নীনবী ছিল অশূরের রাজধানী আর অশূরীয়রা চরম নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত ছিল। যোনা হয়তো চিন্তা করেছিলেন: ‘কীভাবে আমি এই লোকেদের কাছে যাব?’ ‘আমার প্রতি তারা কী করবে?’ তাই, দেরি যোনা ১:১-৩; ৩:৩, ৪, ১০.
না করে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে, যিহোবা যোনার অজুহাতকে মেনে নেননি। এর পরিবর্তে, যিহোবা আবারও তাকে নীনবীয়দের কাছে প্রচার করার কার্যভার দিয়েছিলেন। এই বার, যোনা সাহসের সঙ্গে তার কার্যভার পালন করেছিলেন এবং যিহোবা তার কাজে আশীর্বাদ করেছিলেন।—আপনি যদি মনে করেন যে, সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্ব আপনার জন্য অনেক কঠিন, তাহলে মনে রাখবেন যে, “ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।” (মার্ক ১০:২৭) আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনি যখন ক্রমাগত যিহোবার সাহায্য চাইবেন, তখন তিনি আপনাকে শক্তি দেবেন ও সেইসঙ্গে আপনি যখন আপনার পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস অর্জন করার প্রচেষ্টা করবেন, তখন তিনি আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।—লূক ১১:৯-১৩.
“আমি করতে চাই না।” খ্রিস্টীয় পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার যদি আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার অভাব থাকে, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? মনে রাখবেন যে, যিহোবা আপনার অন্তরে কাজ করতে এবং আপনার আকাঙ্ক্ষার ওপর প্রভাব ফেলতে পারেন। পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী।” (ফিলি. ২:১৩) তাই, আপনি যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করতে পারেন, যেন তিনি আপনাকে তাঁর ইচ্ছা পালন করতে সমর্থ করেন। রাজা দায়ূদ ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি যিহোবাকে অনুরোধ করেছিলেন: “তোমার সত্যে আমাকে চালাও।” (গীত. ২৫:৪, ৫) তাঁকে খুশি করে এমন কাজ করার জন্য যিহোবা যেন আপনাকে অনুপ্রাণিত করেন, সেটার জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করার দ্বারা আপনিও একই বিষয় করতে পারেন।
এটা ঠিক যে, যখন আমরা ক্লান্ত অথবা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন আমাদের হয়তো মাঝে মাঝে কিংডম হলের সভাতে উপস্থিত হওয়ার অথবা পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার জন্য নিজেদের জোর করতে হয়। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কি এই উপসংহারে আসা উচিত যে, আমরা আসলে যিহোবাকে ভালোবাসি না? কখনোই না। অতীতে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদেরও ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, পৌল বলেছিলেন যে, তিনি রূপকভাবে ‘নিজ দেহকে প্রহার করিয়াছিলেন,’ যাতে তিনি ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো পালন করতে পারেন। (১ করি. ৯:২৬, ২৭) তাই এমনকী আমাদের যখন পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য নিজেদেরকে জোর করতে হয়, তখনও আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন। কেন? কারণ আমরা উপযুক্ত কারণে—যিহোবার প্রতি প্রেমের বশবর্তী হয়ে—ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য নিজেদেরকে বাধ্য করি। তা করার মাধ্যমে, আমরা শয়তানের এই দাবির বিরুদ্ধে উত্তর জোগাই যে, ঈশ্বরের দাসদের ওপর পরীক্ষা নিয়ে আসা হলে তারা তাঁকে ত্যাগ করবে।—ইয়োব ২:৪.
“আমি খুবই ব্যস্ত।” নিজেকে অনেক ব্যস্ত বলে মনে করে আপনি যদি পরিচর্যায় অংশ না নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘কিন্তু প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা কর,’ যিশু বলেছিলেন। (মথি ৬:৩৩) এই নির্দেশনামূলক নীতিটি অনুসরণ করার জন্য আপনাকে হয়তো আপনার জীবনধারা সাদাসিধে করতে অথবা আমোদপ্রমোদের মধ্যে থেকে সময় বের করে নিয়ে সেটা পরিচর্যায় ব্যবহার করতে হবে। অবশ্য, আমোদপ্রমোদ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ের আলাদা আলাদা স্থান রয়েছে কিন্তু পরিচর্যাকে অবহেলা করার জন্য এগুলো কোনো উপযুক্ত অজুহাত নয়। ঈশ্বরের একজন দাস রাজ্যের বিষয়গুলোকে তার জীবনের প্রথম স্থানে রাখেন।
“আমি যথেষ্ট ভালো নই।” আপনি হয়তো এইরকমটা মনে করতে পারেন যে, সুসমাচারের একজন যাত্রা. ৪:১০-১৩) যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
পরিচারক হওয়ার জন্য আপনি যোগ্য নন। বাইবেলের সময়ে যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাস মনে করেছিল যে, যিহোবা তাদেরকে যে-দায়িত্ব প্রদান করেছেন, তা সম্পাদন করার জন্য তারা যথেষ্ট ভালো নয়। উদাহরণ হিসেবে, মোশির কথাই বিবেচনা করুন। তিনি যখন যিহোবার কাছ থেকে একটা দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তখন মোশি বলেছিলেন: “হায় প্রভু! আমি বাক্পটু নহি, ইহার পূর্ব্বেও ছিলাম না, বা এই দাসের সহিত তোমার আলাপ করিবার পরেও নহি; কারণ আমি জড়মুখ ও জড়জিহ্ব।” যদিও যিহোবা মোশিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তবুও মোশি বলেছিলেন: “হে আমার প্রভু, বিনয় করি, যাহার হাতে পাঠাইতে চাও, পাঠাও।” (যিহোবা মোশিকে দায়িত্ব পালন করা থেকে অব্যাহতি দেননি। তবে, যিহোবা হারোণকে নিযুক্ত করেছিলেন, যেন তিনি মোশিকে কাজে সাহায্য করতে পারেন। (যাত্রা. ৪:১৪-১৭) অধিকন্তু, বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা মোশির পাশে পাশে ছিলেন এবং তার ঈশ্বর প্রদত্ত কার্যভার পালন করার ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু জুগিয়েছিলেন। বর্তমানে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকেও সাহায্য করতে যিহোবা অভিজ্ঞ সহবিশ্বাসীদের অনুপ্রাণিত করবেন। সর্বোপরি, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা আমাদেরকে সেই কাজ করার জন্য যোগ্য করে তুলবেন, যা করার জন্য তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন।—২ করি. ৩:৫; ‘আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ বছরগুলো’ শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
“কেউ আমাকে কষ্ট দিয়েছে।” কেউ কেউ কষ্ট পাওয়ার কারণে পরিচর্যায় অংশ নেওয়া বা মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে থাকে, এই যুক্তি দেখিয়ে থাকে যে, তাদের আধ্যাত্মিক নিষ্ক্রিয়তার এই অজুহাত যিহোবা নিশ্চয়ই মেনে নেবেন। যদিও এটা বোধগম্য যে, কেউ আমাদের কষ্ট দিলে আমরা দুঃখ পাই, কিন্তু খ্রিস্টীয় কাজকর্মে অংশ নেওয়া প্রেরিত ১৫:৩৯) কিন্তু, তাদের মধ্যে কেউই কি এই কারণে পরিচর্যায় অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল? কখনোই না!
বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এটা কি আসলেই কোনো উপযুক্ত অজুহাত? পৌল ও তার সহবিশ্বাসী বার্ণবার মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে যখন ‘বিতণ্ডা হইয়াছিল,’ তখন তারাও হয়তো কষ্ট পেয়েছিল। (একইভাবে, আপনাকে যখন কোনো সহবিশ্বাসী কষ্ট দিয়ে থাকে, তখন মনে রাখবেন যে, আপনার শত্রু আপনার অসিদ্ধ খ্রিস্টান ভাই নয় বরং শয়তান, যে আপনাকে গ্রাস করতে চায়। তবে, শয়তান সফল হতে পারবে না, যদি আপনি ‘বিশ্বাসে অটল থাকিয়া তাহার প্রতিরোধ করেন।’ (১ পিতর ৫:৮, ৯; গালা. ৫:১৫) আপনার যদি এই ধরনের বিশ্বাস থাকে, আপনি কোনোমতেই “লজ্জিত” বা হতাশ হবেন না।—রোমীয় ৯:৩৩.
সীমাবদ্ধতা থাকলে আমাদের যা করা উচিত
অজুহাত সংক্রান্ত এই কয়েকটা উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্বসহ যিহোবার নির্দিষ্ট আদেশ পালন না করার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় কোন উপযুক্ত অজুহাত নেই। তবে, আমাদের হয়তো আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার সময় তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হওয়ার প্রকৃত কারণ থাকতে পারে। অন্যান্য শাস্ত্রীয় দায়িত্বের কারণে হয়তো প্রচার কাজের জন্য আমরা যে-সময় নির্ধারণ করে রাখতে পারি, সেটা সীমিত হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, কখনো কখনো আমরা হয়তো সত্যি সত্যি অনেক ক্লান্ত বা অসুস্থ হতে পারি, যে-কারণে যিহোবার সেবায় আমরা যতটা করতে চাই, ততটা করতে পারি না। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা আমাদের হৃদয়ের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা জানেন এবং আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করেন।—গীত. ১০৩:১৪; ২ করি. ৮:১২.
তাই, এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের বা অন্যদের কঠোরভাবে বিচার না করার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তুমি কে, যে অপরের ভৃত্যের বিচার কর? নিজ প্রভুরই নিকটে হয় সে স্থির থাকে, নয় পতিত হয়।” (রোমীয় ১৪:৪) অন্যদের সঙ্গে আমাদের পরিস্থিতি তুলনা করার পরিবর্তে, আমাদের মনে রাখা উচিত যে “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:১২; গালা. ৬:৪, ৫) যখন আমরা প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আসি এবং তাঁর কাছে আমাদের অজুহাতগুলো তুলে ধরি, তখন আমরা প্রত্যেকে তা “সৎসংবেদ” সহকারে করতে চাই।—ইব্রীয় ১৩:১৮.
যে-কারণে যিহোবাকে সেবা করা আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে
আমরা সকলেই অত্যন্ত আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করতে পারি কারণ তাঁর চাহিদাগুলো—আমাদের জীবনের পরিস্থিতি যা-ই হয়ে থাকুক না কেন—সবসময়ই যুক্তিযুক্ত এবং পূরণীয়। কেন আমরা তা বলতে পারি?
ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে।” (হিতো. ৩:২৭) এই প্রবাদে আপনি ঈশ্বরের চাহিদা সম্বন্ধে কোন বিষয়টা লক্ষ করেছেন? যিহোবা আপনাকে আপনার ভাইয়ের হাতে যে-ক্ষমতা রয়েছে, সেই অনুসারে প্রচেষ্টা করার আদেশ দেননি বরং ‘আপনার হাতের ক্ষমতা’ অনুসারে তাঁকে সেবা করার আদেশ দিয়েছেন। হ্যাঁ, আমরা প্রত্যেকে—আমাদের হাতের ক্ষমতা যত দুর্বল বা শক্তিশালী, যা-ই হোক না কেন—সর্বান্তঃকরণে যিহোবাকে সেবা করতে পারি।—লূক ১০:২৭; কল. ৩:২৩.
[১৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
‘আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ বছরগুলো’
এমনকী, আমাদের যদিও গুরুতর শারীরিক অথবা মানসিক সীমাবদ্ধতা থেকেও থাকে, তবুও আমাদের দ্রুত এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে, এই বিষয়গুলো পরিচর্যায় পূর্ণ অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দেবে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডার একজন খ্রিস্টান ভাই আরনেস্টের কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন।
আরনেস্টের তোতলামির সমস্যা ছিল এবং তিনি খুবই লাজুক ছিলেন। পিঠে গুরুতর আঘাত পাওয়ার পর, তাকে নির্মাণকর্মী হিসেবে তার চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও, তার নতুন পরিস্থিতি তাকে পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ প্রদান করেছিল। মণ্ডলীর সভাগুলোতে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে কাজ করার জন্য যে-উৎসাহ প্রদান করা হয়েছিল, সেটা তার মধ্যে তা করার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু, তিনি নিজেকে এই ধরনের পরিচর্যার জন্য যোগ্য বলে মনে করেননি।
সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করা যে তার সাধ্যের বাইরে, তা প্রমাণ করার জন্য তিনি এক মাসের জন্য সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার আবেদন করেছিলেন। তিনি খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি সফলভাবে দায়িত্বটা সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। এরপর তিনি নিজে নিজে চিন্তা করেছিলেন যে, ‘আমি জানি যে আমি কখনোই আবারও তা করতে পারব না।’ তার ধারণাকে প্রমাণ করার জন্য তিনি দ্বিতীয় মাসের জন্যও আবেদন করেন—আর আবারও তিনি সেই দায়িত্বটা সম্পন্ন করেছিলেন।
আরনেস্ট এক বছর ধরে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন কিন্তু তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে, আমি কখনোই একজন নিয়মিত অগ্রগামী হতে পারব না।” আবারও তার ধারণা প্রমাণ করার জন্য তিনি নিয়মিত অগ্রগামী সেবার জন্য আবেদন করেন। তিনি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, যখন তিনি তার নিয়মিত অগ্রগামী সেবার প্রথম বছর সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি তা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং দুই বছর ধরে নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার আনন্দ লাভ করেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার আঘাতের কারণে সৃষ্ট জটিলতার কারণে তিনি মারা যান। যাইহোক, মারা যাওয়ার আগে প্রায়ই তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে আসা লোকেদের সজল নয়নে এই কথা বলতেন, “একজন অগ্রগামী হিসেবে যিহোবাকে সেবা করার ওই বছরগুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ বছর।”
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা এমন যেকোনো বাধাকে অতিক্রম করতে পারি, যা হয়তো আমাদেরকে পরিচর্যা থেকে বিরত করতে পারে
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যখন আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাসাধ্য করার মাধ্যমে পূর্ণহৃদয়ে যিহোবার সেবা করি, তখন তিনি আনন্দিত হন