আপনি কি সহবিশ্বাসীদেরকে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করেন?
আপনি কি সহবিশ্বাসীদেরকে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করেন?
“ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—রোমীয় ১২:১০.
১, ২. (ক) পৌল রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
প্রেরিত পৌল রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের মণ্ডলীর মধ্যে প্রেম দেখানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, আমাদের প্রেম “নিষ্কপট” হওয়া উচিত। এ ছাড়া, তিনি ‘ভ্রাতৃপ্রেম’ সম্বন্ধে উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, সেই প্রেম ‘স্নেহশীল হয়ে’ দেখানো উচিত।—রোমীয় ১২:৯, ১০ক.
২ অবশ্য, ভ্রাতৃপ্রেমের সঙ্গে শুধুমাত্র অন্যদের প্রতি উষ্ণ অনুভূতি থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। এই ধরনের অনুভূতি কাজের মাধ্যমে প্রদর্শিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ কেউই আমাদের প্রেম ও স্নেহ সম্বন্ধে জানতে পারবে না, যদি না আমরা কোনো না কোনোভাবে তাদেরকে তা প্রদর্শন করি। তাই, পৌল এই পরামর্শ দেন: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০খ) সমাদর করার সঙ্গে কী জড়িত? সহবিশ্বাসীদেরকে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
সম্মান ও সমাদর
৩. মূল ভাষার বাইবেলে “সমাদর” শব্দটি কী অর্থ প্রকাশ করে?
৩ “সমাদর” হিসেবে অনুবাদিত মূল ইব্রীয় শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল, “ভারী।” সমাদর করা হয় এমন একজন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ বা বিশেষ কেউ বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া, সেই একই ইব্রীয় শব্দকে শাস্ত্রে প্রায়ই “প্রতাপ” বা গৌরব হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, যা সমাদর করা হয়েছে এমন ব্যক্তির প্রতি দেখানো উচ্চসম্মানকে নির্দেশ করে। (আদি. ৪৫:১৩) বাইবেলে সমাদর হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটি উচ্চমূল্য, মূল্যবান, অমূল্য অর্থ প্রকাশ করে। (১ পিতর ৩:৭) হ্যাঁ, আমরা যাদের সমাদর করি, তারা আমাদের কাছে মূল্যবান, অমূল্য।
৪, ৫. কীভাবে সমাদর করা ও সম্মান থাকা সম্পর্কযুক্ত? ব্যাখ্যা করুন।
৪ অন্যদের সমাদর করার সঙ্গে কী জড়িত? এটা সম্মান দেখানোর সঙ্গে শুরু হয়। বস্তুতপক্ষে, “সমাদর” ও “সম্মান” শব্দগুলো প্রায়ই একসঙ্গে ব্যবহৃত হয় কারণ এগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাদর হল সম্মানের বাহ্যিক প্রকাশ। অন্য কথায়, সম্মান মূলত আমাদের ভাইবোনদের আমরা যেভাবে দেখি, সেটাকে নির্দেশ করে আর সমাদর আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে আমরা যেভাবে আচরণ করি, সেটাকে নির্দেশ করে।
৫ কীভাবে একজন খ্রিস্টান সহবিশ্বাসীদেরকে অকৃত্রিম সমাদর করতে পারেন, যদি না তাদের প্রতি তার আন্তরিক সম্মান থাকে? (৩ যোহন ৯, ১০) ঠিক যেমন একটা চারাগাছ তখনই বৃদ্ধি পায় ও বেঁচে থাকে, যখন সেটা ভালো মাটিতে শিকড় বিস্তার করতে পারে, তেমনই সমাদর অকৃত্রিম ও স্থায়ী হতে পারে, যখন সেটা আন্তরিক সম্মান থেকে উদ্ভূত হয়। কপটতাপূর্ণ সমাদর যেহেতু অকৃত্রিম সম্মান থেকে উদ্ভূত হয় না, তাই আজ হোক বা কাল হোক সেটা হ্রাস পাবে। অতএব, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল সমাদর করার বিষয়ে তার পরামর্শ দেওয়ার আগে এই স্পষ্ট বিবৃতি তুলে ধরেন: “প্রেম নিষ্কপট হউক।”—রোমীয় ১২:৯; পড়ুন, ১ পিতর ১:২২.
যারা “ঈশ্বরের সাদৃশ্যে” সৃষ্ট, তাদের সমাদর করুন
৬, ৭. কেন আমাদের অন্যদের প্রতি সম্মান থাকা উচিত?
৬ যেহেতু আন্তরিক সম্মান হচ্ছে সমাদর করার এক চাবিকাঠি, তাই আমাদের ভাইবোনদের সম্মান করার বিষয়ে শাস্ত্রীয় কারণগুলোকে আমাদের কখনো উপেক্ষা করা উচিত নয়। তাহলে, আসুন আমরা সেই কারণগুলোর মধ্যে দুটো বিবেচনা করি।
৭ পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর বৈসাদৃশ্যে, মানুষকে “ঈশ্বরের সাদৃশ্যে” সৃষ্টি করা হয়েছিল। (যাকোব ৩:৯) তাই, আমাদের ঈশ্বরীয় গুণাবলি যেমন, প্রেম, প্রজ্ঞা ও ন্যায়বিচার রয়েছে। লক্ষ করুন যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমরা আর কী পেয়েছি। গীতরচক বলেন: “হে সদাপ্রভু, . . . তুমি আকাশমণ্ডলের ঊদ্ধের্বও তোমার প্রভা সংস্থাপন করিয়াছ। . . . তুমি ঈশ্বর অপেক্ষা [মনুষ্যকে] অল্পই ন্যূন করিয়াছ, গৌরব ও প্রতাপের মুকুটে বিভূষিত করিয়াছ।” (গীত. ৮:১, ৪, ৫; ১০৪:১) * ঈশ্বর সাধারণ লোকেদের কিছুটা প্রভা বা মর্যাদা, গৌরব এবং প্রতাপ বা সমাদর দিয়ে মুকুটে বিভূষিত বা সজ্জিত করেছেন। ফলে, আমরা যখন অন্য ব্যক্তিকে মর্যাদা প্রদান করি, তখন আমরা মূলত মানবমর্যাদার উৎস যিহোবাকে স্বীকার করি। তাই, আমাদের যদি সাধারণ লোকেদের সম্মান দেখানোর যুক্তিযুক্ত কারণ থাকে, তাহলে সহবিশ্বাসীদের প্রতি আমাদের আরও কত বেশিই না সম্মান দেখানো উচিত!—যোহন ৩:১৬; গালা. ৬:১০.
এক পরিবারের সদস্য
৮, ৯. সহবিশ্বাসীদের প্রতি সম্মান দেখানোর পিছনে কোন কারণ রয়েছে বলে পৌল উল্লেখ করেন?
৮ আরেকটা যে-কারণে আমরা একে অন্যকে সম্মান করি, তা পৌল উল্লেখ করেছিলেন। সমাদর করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার ঠিক আগে তিনি বলেন: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও।” “স্নেহশীল” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক অভিব্যক্তিটি সেই দৃঢ় বন্ধনকে নির্দেশ করে, যা একটা প্রেমময় ও পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ পরিবারকে একতাবদ্ধ করে। তাই, এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে পৌল এই বিষয়ে জোর দেন যে, মণ্ডলীর মধ্যে সম্পর্ক একটা একতাবদ্ধ পরিবারের মতোই উষ্ণ ও দৃঢ় হওয়া উচিত। (রোমীয় ১২:৫) অধিকন্তু, মনে রাখবেন যে, পৌল সেই কথাগুলো অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, যাদের সকলকে একই পিতা যিহোবার সন্তান হিসেবে দত্তক নেওয়া হয়েছে। তাই, তাৎপর্যপূর্ণ অর্থে তারা এক ঘনিষ্ঠ পরিবার ছিল। অতএব, পৌলের দিনের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের একে অন্যকে সম্মান করার পিছনে সত্যিই এক জোরালো কারণ ছিল। বর্তমানের অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য।
৯ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা “আরও মেষ”? (যোহন ১০:১৬) যদিও তাদেরকে এখনও ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে দত্তক নেওয়া হয়নি, তবুও তারা উপযুক্তভাবেই একে অন্যকে ভাই ও বোন বলে সম্বোধন করতে পারে কারণ তারা বিশ্বব্যাপী এক একতাবদ্ধ খ্রিস্টীয় পরিবার গঠন করেছে। (১ পিতর ২:১৭; ৫:৯) তাই, আরও মেষের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা যদি পূর্ণরূপে এটা উপলব্ধি করে যে, কেন তারা একে অন্যকে “ভাই” বা “বোন” বলে ডাকে, তাহলে তাদেরও সহবিশ্বাসীদের প্রতি আন্তরিক সম্মান দেখানোর জোরালো এক কারণ রয়েছে।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮.
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
১০, ১১. কেন সম্মান থাকা ও সমাদর করা এত গুরুত্বপূর্ণ?
১০ কেন সম্মান থাকা ও সমাদর করা এত গুরুত্বপূর্ণ? কারণটা হল: আমাদের ভাই ও বোনদের সমাদর করার মাধ্যমে আমরা সমগ্র মণ্ডলীর মঙ্গল এবং একতার ক্ষেত্রে প্রচুর অবদান রাখি।
১১ অবশ্য, আমরা উপলব্ধি করি যে, সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের যে-শক্তি রয়েছে, সেটার সবচেয়ে জোরালো উৎস হল, যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাঁর আত্মার সমর্থন লাভ করা। (গীত. ৩৬:৭; যোহন ১৪:২৬) একই সময়ে, সহবিশ্বাসীরা যখন আমাদের প্রতি তাদের উপলব্ধি প্রকাশ করে, তখন আমরা উৎসাহিত হই। (হিতো. ২৫:১১) আমরা উপলব্ধি ও সম্মানের আন্তরিক অভিব্যক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। এটা আমাদেরকে জীবনের পথে আনন্দের সঙ্গে ও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে ক্রমাগত চলার জন্য আরও শক্তি জোগায়। সম্ভবত আপনিও একইরকম অনুভূতি লাভ করেছেন।
১২. কীভাবে আমাদের মধ্যে প্রত্যেকে মণ্ডলীতে এক উষ্ণ ও প্রেমপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে?
১২ এখন, যিহোবা যেহেতু সম্মান লাভ করার ব্যাপারে আমাদের সহজাত চাহিদা সম্বন্ধে জানেন, তাই তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তিনি আমাদের উপযুক্তভাবেই “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান” করার জোরালো পরামর্শ দেন। (রোমীয় ১২:১০; পড়ুন, মথি ৭:১২.) যেসমস্ত খ্রিস্টানরা এই চিরন্তন পরামর্শে মনোযোগ দেয়, তারা খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে এক উষ্ণ ও প্রেমপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। তাই, আমাদের একটু থেমে নিজেদের এই প্রশ্ন করা উচিত, ‘কবে শেষ বারের মতো আমি আমার কথা ও কাজের মাধ্যমে মণ্ডলীতে কোনো ভাই কিংবা বোনের প্রতি আমার আন্তরিক সম্মান দেখিয়েছি?’—রোমীয় ১৩:৮.
সকলের জন্য সুনির্দিষ্ট এক কার্যভার
১৩. (ক) কাদের প্রথমে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? (খ) রোমীয় ১:৭ পদে প্রাপ্ত পৌলের কথাগুলো কী ইঙ্গিত করে?
১৩ কাদের প্রথমে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? ইব্রীয়দের উদ্দেশে তার চিঠিতে পৌল খ্রিস্টান প্রাচীনদের ‘নেতা’ বলে বর্ণনা করেন। (ইব্রীয় ১৩:১৭) এটা ঠিক যে, প্রাচীনরা অসংখ্য কাজে নেতৃত্ব নিয়ে থাকে। তবুও, পালের পালক হিসেবে তাদেরকে নিশ্চিতভাবেই সহবিশ্বাসীদেরকে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার পদক্ষেপ নিতে হবে, যাদের মধ্যে সহপ্রাচীনরাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীনরা যখন মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে বিবেচনা করার জন্য মিলিত হয়, তখন তারা সহপ্রাচীনদের মধ্যে যেকারো মন্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার মাধ্যমে একে অন্যকে সমাদর করতে পারে। এ ছাড়া, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তারা সকল প্রাচীনের দৃষ্টিভঙ্গি ও মন্তব্য বিবেচনা করার মাধ্যমে সমাদর করতে পারে। (প্রেরিত ১৫:৬-১৫) তবে, আমাদের মনে রাখা উচিত যে, রোমীয়দের উদ্দেশে পৌলের চিঠি কেবল প্রাচীনদের প্রতিই নয় কিন্তু সমগ্র মণ্ডলীর প্রতি ছিল। (রোমীয় ১:৭) তাই, ব্যাপক অর্থে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার বিষয়ে এই পরামর্শ বর্তমানে আমাদের সকলের প্রতি প্রযোজ্য।
১৪. (ক) সমাদর করার ও সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করুন। (খ) আমরা হয়তো নিজেদেরকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?
১৪ এ ছাড়া, পৌলের পরামর্শের এই দিকটাও লক্ষ করুন। তিনি রোমে তার সহবিশ্বাসীদেরকে কেবল সমাদর করার বিষয়েই নয় কিন্তু সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। কেন তা আলাদা? এই উদাহরণটা একটু চিন্তা করুন। একজন শিক্ষক কি পড়তে জানে এমন ছাত্রছাত্রীদেরকে কীভাবে পড়তে হয়, তা শিখতে বলবেন? না। কারণ তারা ইতিমধ্যেই পড়তে জানে। এর পরিবর্তে, ছাত্রছাত্রীরা যেন আরও ভালোভাবে পড়তে পারে সেইজন্য শিক্ষক সাহায্য করতে চাইবেন। একইভাবে, পরস্পরের প্রতি প্রেম থাকা, যা আমাদেরকে সমাদর করতে অনুপ্রাণিত করে, তা ইতিমধ্যেই সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্তিকরণ চিহ্ন। (যোহন ১৩:৩৫) কিন্তু, ঠিক যেমন পড়তে জানে এমন ছাত্রছাত্রীরা তাদের পড়ার দক্ষতাকে আরও ভালো করার মাধ্যমে অধিক উন্নতি করতে পারে, তেমনই আমরাও সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে অধিক উন্নতি করতে পারি। (১ থিষল. ৪:৯, ১০) সেই সুনির্দিষ্ট কার্যভার আমাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে। আমরা হয়তো নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি তা করছি—মণ্ডলীতে অন্যদের সমাদর করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিচ্ছি?
“দীনহীনকে” সমাদর করুন
১৫, ১৬. (ক) সমাদর করার সময় আমাদের কাদেরকে উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং কেন? (খ) সমস্ত ভাইবোনের প্রতি আমাদের যে আন্তরিক সম্মান রয়েছে, তা কোন বিষয়টা প্রকাশ করতে পারে?
১৫ মণ্ডলীতে সমাদর করার সময় আমাদের কাদেরকে উপেক্ষা করা উচিত নয়? ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” (হিতো. ১৯:১৭) আমরা যখন সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার আপ্রাণ চেষ্টা করি, তখন কীভাবে এই কথাগুলোতে প্রাপ্ত নীতির দ্বারা আমাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত?
১৬ আপনি এই বিষয়ে একমত হবেন যে, অধিকাংশ লোক তাদের চেয়ে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সমাদর করতে সক্ষম হয় কিন্তু সেই একই লোকেরা হয়তো তাদের চেয়ে নগণ্য বলে মনে করে এমন ব্যক্তিদের প্রতি খুব কমই সম্মান দেখায় বা কোনো সম্মানই দেখায় না। কিন্তু, যিহোবা সেইরকম নন। তিনি বলেন: “যাহারা আমাকে গৌরবান্বিত করে, তাহাদিগকে আমি গৌরবান্বিত করিব।” (১ শমূ. ২:৩০; গীত. ১১৩:৫-৭) যিহোবা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে গৌরবান্বিত বা সমাদর করেন, যারা তাঁকে সেবা ও সমাদর করে। তিনি “দীনহীনকে” উপেক্ষা করেন না। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ২:৮; ২ বংশা. ১৬:৯) আমরা অবশ্যই যিহোবাকে অনুকরণ করতে চাই। তাই, অকৃত্রিম সমাদর করার ক্ষেত্রে আমরা কতটা উন্নতি করেছি, তা যদি আমরা পরিমাপ করতে চাই, তাহলে নিজেদের এই প্রশ্ন করা উচিত, ‘মণ্ডলীতে যাদের কোনো বিশেষ অবস্থান বা দায়িত্ব নেই, তাদের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করি?’ (যোহন ১৩:১৪, ১৫) এই প্রশ্নের উত্তরটা অন্যদের প্রতি আমাদের কতটা আন্তরিক সম্মান রয়েছে, সেই সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৩, ৪.
নিজেদের সময় দান করার মাধ্যমে সমাদর করা
১৭. প্রধান উপায়টা কী, যেটার মাধ্যমে আমরা সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করতে পারি আর কেন তা বলা যায়?
১৭ প্রধান উপায়টা কী, যেটার মাধ্যমে আমরা মণ্ডলীর সকলকে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করতে পারি? নিজেদের সময় দান করার মাধ্যমে। কেন তা বলা যায়? খ্রিস্টান হিসেবে আমরা ব্যস্ত জীবনযাপন করি এবং মণ্ডলীর অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করার জন্য আমাদের অনেকটা সময় প্রয়োজন। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমরা সময়কে অমূল্য বলে মনে করি। আমরা এটাও উপলব্ধি করি যে, আমাদের এমনটা দাবি করা উচিত নয়, আমাদের ভাইবোনেরা তাদের সময় থেকে আমাদেরকে অত্যধিক সময় দেবে। একইভাবে, মণ্ডলীর অন্যরাও যখন বোঝে যে, আমাদের সময় চাওয়ার ব্যাপারে তাদেরও অতিরিক্ত দাবি করা উচিত নয়, তখন আমরা কৃতজ্ঞ হই।
১৮. আঠারো পৃষ্ঠার ছবিতে যেমন দেখানো হয়েছে, কীভাবে আমরা সহবিশ্বাসীদেরকে কিছুটা সময় দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছুক মনোভাব দেখাতে পারি?
১৮ তবে, আমরা (বিশেষ করে মণ্ডলীতে আমাদের মধ্যে যারা পালক হিসেবে সেবা করে) এই বিষয়টাও স্বীকার করি যে, সহবিশ্বাসীদেরকে কিছু সময় দেওয়ার জন্য আমাদের কাজকর্ম বন্ধ রাখার ইচ্ছুক মনোভাব প্রকাশ করে যে, তাদের প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে। কীভাবে? আমাদের ভাইবোনদেরকে কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য আমাদের কাজকর্ম বন্ধ রাখার মাধ্যমে আমরা মূলত তাদের এই কথা বলি, ‘আপনি আমার কাছে এতটাই মূল্যবান যে, আমি যা করছি সেটা চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে আপনার সঙ্গে সময় কাটানো আমার কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ (মার্ক ৬:৩০-৩৪) এর বিপরীতটাও সত্য। আমরা যদি আমাদের ভাই বা বোনকে কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য নিজেদের কাজকর্ম বন্ধ করতে অনিচ্ছুক হই, তাহলে আমরা হয়তো তাকে এইরকম মনে করার দিকে পরিচালিত করতে পারি যে, আমাদের কাছে তার সামান্যই মূল্য রয়েছে। অবশ্য, এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে এমন সময় থাকে, যখন জরুরি কোনো বিষয় বন্ধ রাখা যায় না। তারপরও, অন্যদেরকে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আমাদের ইচ্ছুক—অথবা অনিচ্ছুক—মনোভাব, আমাদের ভাইবোনদের জন্য আমাদের হৃদয়ে কতটা গভীর সম্মান রয়েছে, সেই সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে।—১ করি. ১০:২৪.
শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন
১৯. আমাদের সময় দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায়ে আমরা সহবিশ্বাসীদের সমাদর করতে পারি?
১৯ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সহবিশ্বাসীদের সমাদর করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, তাদেরকে আমাদের সময় দেওয়ার মুহূর্তে তাদের প্রতি আমাদের মনোযোগও দেওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রেও যিহোবা উদাহরণ স্থাপন করেন। গীতরচক দায়ূদ বলেন: “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।” (গীত. ৩৪:১৫) আমরাও ভাইবোনদের প্রতি, বিশেষভাবে যারা আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসে, তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ও কর্ণ—আমাদের পূর্ণ মনোযোগ—দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করি। তা করার মাধ্যমে আমরা তাদের সমাদর করি।
২০. সমাদর করার ব্যাপারে কোন অনুস্মারকগুলো আমরা মনে রাখতে চাই?
২০ আমরা যেমন আলোচনা করেছি, আমরা স্পষ্টভাবে এটা মনে রাখতে চাই যে, কেন সহবিশ্বাসীদের জন্য আমাদের আন্তরিক সম্মান থাকা উচিত। অধিকন্তু, আমরা দীনহীনসহ সকলকে সমাদর করার ব্যাপারে প্রথমে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগগুলো খুঁজব। এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার মাধ্যমে আমরা ভ্রাতৃপ্রেমের বন্ধনকে ও মণ্ডলীর একতাকে শক্তিশালী করব। তাই, আসুন আমরা সকলে একে অন্যকে কেবল সমাদরই নয়, সেইসঙ্গে বিশেষভাবে সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে চলি। আপনি কি ঠিক তা-ই করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
[পাদটীকা]
^ এ ছাড়া, অষ্টম গীতে দায়ূদের অভিব্যক্তিগুলো ভবিষ্যদ্বাণীমূলক, যা সিদ্ধ ব্যক্তি যিশু খ্রিস্টকে নির্দেশ করে।—ইব্রীয় ২:৬-৯.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কীভাবে সমাদর ও সম্মান সম্পর্কযুক্ত?
• আমাদের সহবিশ্বাসীদের সমাদর করার পিছনে কোন কারণগুলো রয়েছে?
• কেন একে অন্যকে সমাদর করা গুরুত্বপূর্ণ?
• কোন উপায়গুলোতে আমরা সহবিশ্বাসীদের সমাদর করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাবে আমরা সহবিশ্বাসীদের সমাদর করতে পারি?