সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনাদের সন্তান কী বলবে?

আপনাদের সন্তান কী বলবে?

আপনাদের সন্তান কী বলবে?

বাবা-মায়েরা: ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি সংখ্যার ১৬-২০ পৃষ্ঠায় আমরা আপনাদেরকে সন্তানদের সঙ্গে মহড়া পর্বের ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলাম। এই প্রবন্ধ আপনাদেরকে কিছু ধারণা প্রদান করবে, যাতে আপনারা আপনাদের অল্পবয়সি সন্তানকে স্কুলে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বতির মুখোমুখি হওয়ায় জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে সাহায্য লাভ করতে পারেন। আপনারা হয়তো আপনাদের পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় এই পর্বগুলো রাখতে চাইবেন।

যিহোবার সাক্ষি ছেলে-মেয়েরা অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। সহছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে যে, কেন তারা নির্দিষ্ট কিছু কাজে যেমন, পতাকা অভিবাদন, জন্মদিন উদ্‌যাপন ও ছুটির দিনের কার্যক্রমে অংশ নেয় না। আপনাদের ছেলে অথবা মেয়ে যদি এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়, তাহলে আপনাদের সন্তান কীভাবে উত্তর দেবে?

কোনো কোনো খ্রিস্টান ছেলে-মেয়ে কেবল এভাবে বলেছে: “আমি এটা করতে পারি না। এটা আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।” এই ছেলে-মেয়েরা দৃঢ় পদক্ষেপ নেয় বলে তাদের প্রশংসা করা উচিত। তাদের উত্তর হয়তো অন্যদেরকে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত করতে পারে। তা সত্ত্বেও, বাইবেল আমাদেরকে “যে কেহ [আমাদের] অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে” আমাদের বিশ্বাসের পক্ষে ‘উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাকিতে’ পরামর্শ দেয়। (১ পিতর ৩:১৫) প্রস্তুত থাকার মানে হল, “আমি এটা করতে পারি না” শুধুমাত্র এই কথা বলার চেয়ে আরও বেশি কিছু করা। এমনকী অন্যেরা যদি আমাদের সঙ্গে একমত না-ও হয়, তবুও কেউ কেউ হয়তো আমাদের সিদ্ধান্তের পিছনে কারণগুলো জানতে চাইতে পারে।

অনেক অল্পবয়সি সাক্ষি এই ধরনের প্রকাশনাদি যেমন, মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো (ইংরেজি) বইটি ব্যবহার করে সহছাত্রছাত্রীদের কাছে বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে জানিয়েছে। এই ঘটনাগুলো হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারে যে, কেন সাক্ষি ছেলে-মেয়েরা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় করে অথবা করে না। কিছু ছাত্রছাত্রী মনোযোগ সহকারে বাইবেলের গল্পগুলো শুনে থাকে আর এভাবে প্রচুর বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছে। অন্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য হয়তো বাইবেলের একটা গল্প পুরোটা শোনা সহজ নয়। পুরোপুরি ব্যাখ্যা না করা হলে, স্কুলের ছেলে-মেয়েদের কাছে বাইবেলের কোনো কোনো ঘটনা বোঝা অনেক কঠিন বলে মনে হতে পারে। ১১ বছর বয়সি মিন্‌হির এক বান্ধবী যখন তাকে জন্মদিনের পার্টিতে নিমন্ত্রণ করেছিল, তখন সে তার বান্ধবীকে বলেছিল: “বাইবেল আমাদেরকে জন্মদিন পালন করতে বলে না। বাইবেলের একটি চরিত্র যোহন বাপ্তাইজককে একটা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।” কিন্তু, মিন্‌হি স্মরণ করে বলে যে, বান্ধবী তার উত্তর বুঝতে পেরেছে বলে মনে হয়নি।

আবার মাঝে মাঝে, কোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে আমাদের কোনো বইয়ের একটা ছবি অথবা বিবরণ দেখানো সাহায্যকারী হয়ে থাকে। কিন্তু, স্কুলের কর্তৃপক্ষ যদি বলে যে, অন্য ছাত্রছাত্রীদেরকে ধর্মীয় প্রকাশনাদি দেওয়া যাবে না, তাহলে? আমাদের সন্তানরা কি এমনকী কোনো প্রকাশনা ছাড়াই কার্যকারীভাবে সাক্ষ্য দিতে পারবে? কীভাবে আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে তাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন?

মহড়া পর্বের ব্যবস্থা করুন

ঘরে বিভিন্ন মহড়া পর্বের ব্যবস্থা করা সাহায্যকারী, যেখানে বাবা-মায়েরা সহছাত্রছাত্রীদের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারে। সন্তানরা যখন তাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার চেষ্টা করে, তখন বাবা-মায়েরা তাদের প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করতে চাইবে এবং দেখাবে যে, কীভাবে সন্তানরা যুক্তি করার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে আর কেন তা করা উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, এমন শব্দ ব্যবহার করতে পরামর্শ দিন, যেগুলো সমবয়সি ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারে। জোশুয়া নামে নয় বছর বয়সি একটি ছেলে বলে যে, তার সহছাত্রছাত্রীরা “বিবেক” ও “আনুগত্যের” মতো শব্দগুলো বুঝতে পারেনি। তাই, তাদের সঙ্গে যুক্তি করার জন্য তাকে আরও সহজ শব্দ ব্যবহার করতে হয়েছিল।—১ করি. ১৪:৯.

স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যারা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে, যদি তাদের এক দীর্ঘ উত্তর দেওয়া হয়। তাদেরকে কথাবার্তায় জড়িত করার ও তাদের সঙ্গে যুক্তি করার মাধ্যমে অল্পবয়সি সাক্ষিরা হয়তো আগ্রহকে ধরে রাখতে পারে। হানিয়ুল নামে দশ বছর বয়সি এক মেয়ে বলে, “আমার সহছাত্রছাত্রীরা ব্যাখ্যা শুনতে নয় বরং কথাবার্তা বলতে পছন্দ করে।” কথাবার্তা বলার জন্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো আর এরপর তাদের ব্যক্তিগত মতামত মনোযোগ সহকারে শোনো।

নীচে তুলে ধরা কথাবার্তা দেখায় যে, কীভাবে খ্রিস্টান ছেলে-মেয়েরা সহছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যুক্তি করতে পারে। এই কথাবার্তা মুখস্ত করার প্রয়োজন নেই—দুজন ছেলে বা মেয়ে কখনোই একরকম নয় আর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকম উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই, একজন অল্পবয়সি সাক্ষির উচিত ধারণাটা মাথায় নেওয়া, সেটাকে তার নিজের ভাষায় সাজানো আর এরপর এমন উপায়ে প্রকাশ করা, যা সেই পরিস্থিতি ও সহছাত্রছাত্রীদের জন্য উপযুক্ত। আপনাদের যদি স্কুল পড়ুয়া সন্তান থেকে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে এই কথাবার্তা ব্যবহার করে অভিনয় করার চেষ্টা করুন।

সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে বাইবেলের নীতিগুলো যত্নপূর্বক শিক্ষা দিতে ও তাদেরকে সেই নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য প্রত্যয়ী করতে চায়।—দ্বিতীয়. ৬:৭; ২ তীম. ৩:১৪.

পরবর্তী পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায়, আপনার সন্তানদের সঙ্গে এখানে দেওয়া কথাবার্তা অনুশীলন করার চেষ্টা করুন। এটা কতটা কার্যকারী হতে পারে, তা লক্ষ করুন। মনে রাখবেন যে, উত্তর বা শব্দ মুখস্ত করাই লক্ষ্য নয়। বস্তুতপক্ষে, আপনারা হয়তো একটা পরিস্থিতিতেই বিভিন্ন রকম উত্তর দিয়ে কয়েক বার অভিনয় করতে পারেন আর দেখতে পারেন যে, আপনাদের সন্তানরা কীভাবে সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। তারা তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার সময়, তাদেরকে যুক্তিবাদিতা ও কৌশলতা গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আপনারা আপনাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেবেন যে, কীভাবে তাদের সহপাঠি, প্রতিবেশী ও সেইসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকার সামনে তাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করতে হয়।

[৪, ৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

জন্মদিন পালন

মেরি: কী খবর, জন। আমি তোমাকে আমার জন্মদিনের পার্টিতে নিমন্ত্রণ দিতে চাই।

জন: আমার কথা মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ মেরি। তবে আমি কি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারি যে, কেন তুমি জন্মদিনের পার্টি করবে?

মেরি: আমার জন্মদিন পালন করার জন্য। তুমি কি জন্মদিন পালন করো না?

জন: না, করি না।

মেরি: কেন? আমার যখন জন্ম হয়েছিল, তখন আমার পরিবার অনেক খুশি হয়েছিল।

জন: আমার পরিবারও তোমার পরিবারের মতোই। আমার জন্মের সময় তারাও অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু, আমার মনে হয় না যে, সেই কারণে আমাকে প্রতি বছর সেটা পালন করতে হবে। অনেকে তাদের জন্মদিনের পার্টিতে নিজেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে মনে করে থাকে। কিন্তু, ঈশ্বর কি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন? আর আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন বলে তাঁকে কি আমাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত নয়?

মেরি: তাহলে তুমি কি বলতে চাচ্ছ যে, আমার জন্মদিনের পার্টি করা উচিত নয়?

জন: সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখো না কেন? অনেক লোক যেখানে জন্মদিনের উপহার পেতে পছন্দ করে, সেখানে বাইবেল বলে যে, গ্রহণ করার চেয়ে দান করা আরও বেশি আনন্দের। আমাদের জন্মদিনে নিজেদের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো, অন্যদের জন্য চিন্তা করা ও তাদের প্রতি সদয় হওয়া কি আরও ভালো হবে না?

মেরি: আমি এই ব্যাপারে কখনো ভেবে দেখিনি। তাহলে তোমার বাবা-মা কি তোমাকে কোনো উপহার দেয় না?

জন: অবশ্যই দেয়। কিন্তু, সেটার জন্য আমার বাবা-মা আমার জন্মদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। তাদের যখনই ইচ্ছা হয়, তখনই আমাকে উপহার দেয়। তবে, মেরি তুমি কি জানতে চাও যে, কখন থেকে জন্মদিন পালন করার বিষয়টা শুরু হয়েছিল?

মেরি: তুমি কি আমাকে বলতে পারবে?

জন: ঠিক আছে, আগামীকাল আমি তোমাকে প্রাচীনকালে অনুষ্ঠিত একটা জন্মদিন সম্বন্ধে আগ্রহজনক গল্প বলব।

জাতীয় সংগীত

সোফি: কিম, ক্লাসের সবাই জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় তুমি তাতে অংশ নাও না কেন?

কিম: ভালো হয়েছে যে, তুমি বিষয়টা জানতে চেয়েছ। তবে, তার আগে আমি কি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারি যে, কেন তুমি জাতীয় সংগীত গাও?

সোফি: কারণ আমি আমার দেশকে নিয়ে গর্বিত।

কিম: এই দেশের নাগরিক হতে পেরে আমিও অনেক আনন্দিত কিন্তু আমি মনে করি না যে, একটা দেশ অন্য আরেকটা দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

সোফি: কিন্তু, আমি মনে করি যে, আমার দেশই সর্বশ্রেষ্ঠ।

কিম: আমি সমস্তকিছু ঈশ্বরের মতো করে দেখার চেষ্টা করি। আর বাইবেল বলে যে, ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না। তিনি সমস্ত মানুষকে ভালোবাসেন, তা তারা যে-জাতিরই হোক না কেন। তাই, যদিও আমি আমার দেশকে সম্মান করি কিন্তু আমি জাতীয় সংগীত গাই না কিংবা জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন করি না।

সোফি: তুমি কি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছ না?

কিম: না, শুধু আমিই এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি না। বাইবেলে এমন কয়েক জন অল্পবয়সির কথা বলা আছে, যারা আমার মতো একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত। তাদের বলা হয়েছিল যেন তারা একটা রাজনৈতিক প্রতীককে প্রণাম করে কিন্তু তারা সেটা করেনি, যদিও এর জন্য তাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়েছিল।

সোফি: তাই নাকি? আমি তো কখনো এই বিষয়টা শুনিনি।

কিম: তুমি যদি চাও, তাহলে টিফিনের সময় আমি তোমাকে বলব।

রাজনৈতিক মতামত

ফিলিপ: ম্যাক্স, তোমাকে যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তুমি কাকে ভোট দেবে?

ম্যাক্স: কাউকেই না।

ফিলিপ: কেন?

ম্যাক্স: আমি ইতিমধ্যেই ভোট দিয়েছি।

ফিলিপ: কিন্তু, তোমার তো এখনও ভোট দেওয়ার বয়স হয়নি।

ম্যাক্স: এই ক্ষেত্রে হয়েছে। আমি সবচেয়ে উত্তম সরকারকে বেছে নিয়েছি।

ফিলিপ: কোন সরকারকে?

ম্যাক্স: যে-সরকার যিশুর দ্বারা পরিচালিত। আমি মনে করি যে, এর জন্য তিনি একেবারে উপযুক্ত। তুমি কি জানতে চাও, কেন?

ফিলিপ: এই ব্যাপারে আমি তেমন আগ্রহী নই।

ম্যাক্স: ঠিক আছে, তুমি যদি কখনো জানতে চাও, তাহলে আমি তোমাকে জানাতে পেরে খুশি হব।

[চিত্র]

“কী খবর, জন। আমি তোমাকে আমার জন্মদিনের পার্টিতে নিমন্ত্রণ দিতে চাই”

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

“কেন তুমি জাতীয় সংগীত গাও না?”