সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমি বাইবেলের সত্যের ক্ষমতা দেখেছি

আমি বাইবেলের সত্যের ক্ষমতা দেখেছি

আমি বাইবেলের সত্যের ক্ষমতা দেখেছি

বলেছেন ভিতো ফ্রায়েজে

খুব সম্ভবত আপনারা ত্রেনতিনারা নামটা কখনোই শোনেননি। এটা হল ইতালির নেপলসের দক্ষিণে একটা ছোট্ট শহর। সেখানেই আমার বাবা-মা ও আমার দাদা আঞ্জেলোর জন্ম হয়েছিল। আঞ্জেলোর জন্মের পর, আমার বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়ে নিউ ইয়র্কের রোচেস্টারে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিল, যেখানে ১৯২৬ সালে আমার জন্ম হয়েছিল। ১৯২২ সালে প্রথম বাবার সঙ্গে বাইবেল ছাত্রদের দেখা হয়েছিল, যে-নামে যিহোবার সাক্ষিদের তখন ডাকা হতো। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আর মা বাইবেল ছাত্র হয়েছিলেন।

যদিও বাবা একজন শান্ত স্বভাবের, চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন, তবুও অবিচার দেখলে তিনি রেগে যেতেন। পাদরিরা যেভাবে লোকেদের অজ্ঞানতার মধ্যে রেখে দিয়েছিল, তা তিনি মোটেও মানতে পারতেন না আর তাই তিনি বাইবেলের সত্য জানানোর কোনো সুযোগকে কখনোই হাতছাড়া করতেন না। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর, তিনি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলেন আর ৭৪ বছর বয়সে দুর্বল স্বাস্থ্য ও তীব্র শীত তাকে সেই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করার আগে পর্যন্ত তিনি তা চালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও, তার বয়স যখন ৯০-এর কোঠায় ছিল, তখনও তিনি নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৬০ ঘন্টা প্রচার করতেন। বাবার উদাহরণ আমার ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলেছিল। যদিও বাবা রসিকতা করতেন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি একজন গম্ভীর স্বভাবের ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, “সত্যকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।”

বাবা-মা আমাদেরকে অর্থাৎ তাদের পাঁচ জন সন্তানকে ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। আমি ১৯৪৩ সালের ২৩ আগস্ট বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম এবং ১৯৪৪ সালের জুন মাসে একজন অগ্রগামী হয়েছিলাম। আমার দিদি কারমেলা তার প্রাণবন্ত অগ্রগামী সঙ্গী ফার্নের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের জেনেভাতে একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করত। আমার এই বিষয়টা বুঝতে বিন্দুমাত্র দেরি হয়নি যে, ফার্নই হচ্ছে সেই মেয়ে, যার সঙ্গে আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। তাই, ১৯৪৬ সালে আমরা বিয়ে করেছিলাম।

মিশনারি কাজ

বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে আমাদের প্রথম দুটো কার্যভার ছিল নিউ ইয়র্কের জেনেভা ও নরউইচ। ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে আমরা গিলিয়েড-এর ১২তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম। এরপর আমাদেরকে আরেক মিশনারি দম্পতি কার্ল ও জোয়েন রিজ্‌ওয়ের সঙ্গে ইতালির নেপলসে পাঠানো হয়েছিল। তখন নেপলস যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করছিল। ঘর খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল, তাই কয়েক মাস ধরে আমরা দুই রুমের একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থেকেছিলাম।

আমি আমার বাবা-মাকে নেপলসের স্থানীয় বাচনভঙ্গিতে কথা বলতে শুনে শুনে বড়ো হয়েছিলাম, তাই আমার ইতালীয় ভাষা—আমেরিকান বাচনভঙ্গি সত্ত্বেও—কাজ চালানোর মতো ছিল। ফার্ন ভাষা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল। কিন্তু, আমাকে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, ফার্ন আমার মতোই কথা বলতে শিখে গিয়েছিল আর এমনকী আমার চেয়ে আরও ভালোভাবে বলতে পারত।

প্রথমে আমরা নেপলসে একমাত্র যে-আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে পেয়েছিলাম, তারা ছিল চার সদস্যের একটা পরিবার। তারা অবৈধ সিগারেট বিক্রি করত। ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিন সেই পরিবারের তেরেজা নামে একজন সদস্যের এক অদ্ভুত ধরনের পরিবর্তন হতো। সকাল বেলা তার স্কার্টের অনেকগুলো পকেটে সিগারেট বোঝাই করার কারণে মোটা দেখাত। কিন্তু, সন্ধ্যা বেলা তাকে তালপাতার সেপাইয়ের মতো দেখাত। সত্য এই পরিবারকে পুরোপুরি রূপান্তরিত করে ফেলেছিল। পরে, সেই পরিবারের ১৬ জন সদস্য সাক্ষি হয়েছিল। এখন নেপলস শহরে প্রায় ৩,৭০০ জন সাক্ষি রয়েছে।

আমাদের কাজে বিরোধিতা

নেপলসে মাত্র নয় মাস থাকার পর, কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সেই শহর ছাড়তে বাধ্য করেছিল। আমরা প্রায় এক মাসের জন্য সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম, যাতে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ইতালিতে ফিরে আসতে পারি। ফার্ন ও আমাকে তুরিনে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে, একজন ভদ্রমহিলা আমাদের একটা রুম ভাড়া দিয়েছিলেন আর আমাদেরকে তার সঙ্গে একই বাথরুম ও রান্নাঘর ব্যবহার করতে হয়েছিল। রিজ্‌ওয়ে দম্পতি যখন তুরিনে এসে পৌঁছেছিল, তখন আমরা একসাথে একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে, সেই একই বাড়িতে পাঁচটি মিশনারি দম্পতি বসবাস করেছিল।

১৯৫৫ সালের মধ্যে, যখন কর্তৃপক্ষ আমাদের তুরিন ছাড়তে বাধ্য করেছিল, তখন ইতিমধ্যেই চারটা নতুন মণ্ডলীর ভিত্তি স্থাপিত হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় যোগ্য ভাইয়েরা তখন বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করতে পারত। কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছিল, “আমরা নিশ্চিত যে, আপনারা আমেরিকানরা একবার চলে গেলে, আপনারা যা তৈরি করেছেন, সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।” কিন্তু, এরপর যে-বৃদ্ধি হয়েছিল, তা দেখিয়েছিল যে, কোনো কাজের সফলতা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে। আজকে, তুরিনে ৪,৬০০-রেরও বেশি সাক্ষি ও ৫৬টা মণ্ডলী রয়েছে।

ফ্লোরেন্স —এক অপূর্ব শহর

আমাদের পরবর্তী কার্যভার ছিল ফ্লোরেন্সে। আমরা প্রায়ই এই শহর সম্বন্ধে শুনতাম কারণ আমার দিদি কারমেলা ও তার স্বামী মার্লিন হার্টস্‌লার মিশনারি হিসেবে সেখানেই কার্যভার পেয়েছিল। সেইসঙ্গে সেখানে বাস করার বিষয়টা ভেবে দেখুন। এই জায়গাগুলো যেমন, পিয়াৎসা ডেলা সিনিওরিয়া, পনতে ভেকিয়ো, পিয়াৎসালে মাইকেলেঞ্জলো ও পালাৎসো পিত্তি এটাকে এক অপূর্ব শহর করে তুলেছে! ফ্লোরেন্সের কিছু লোককে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দিতে দেখা আনন্দদায়ক ছিল।

আমরা একটা পরিবারের সঙ্গে অধ্যয়ন করতাম আর সেই পরিবারের বাবা-মা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। কিন্তু, সেই বাবা সিগারেট খেতেন। ১৯৭৩ সালে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা উল্লেখ করেছিল যে, ধূমপান করা হল এক অশুচি অভ্যাস আর এর পাঠকদের তা ত্যাগ করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিল। সেই পরিবারের বড়ো সন্তানরা বাবাকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিল। তিনি তা করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কিন্তু তা রাখেননি। একদিন রাতে তার স্ত্রী তাদের নয় বছর বয়সি যমজ ছেলেদের সঙ্গে ঘুমাতে যাওয়ার আগের প্রার্থনা না করেই তাদেরকে বিছানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরে, তার খারাপ লাগছিল আর তাই তিনি তাদের রুমে গিয়েছিলেন। সেই বাচ্চারা ইতিমধ্যেই নিজে নিজে প্রার্থনা করে ফেলেছিল। “তোমরা কী প্রার্থনা করেছ?” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন। “যিহোবা, দয়া করে বাবাকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করো।” সেই স্ত্রী তার স্বামীকে ডেকে বলেন, “এখানে এসে তোমার বাচ্চাদের প্রার্থনা শুনে যাও।” যখন তিনি তা শোনেন, তখন তিনি কাঁদতে শুরু করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমি আর কখনোই সিগারেট খাব না!” তিনি তার প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন আর এখন সেই পরিবারের ১৫ জনেরও বেশি সদস্য যিহোবার সাক্ষি।

আফ্রিকাতে সেবা করা

১৯৫৯ সালে আমাদেরকে আরও দুজন মিশনারি আরতুরো লিভারিস ও আমার দাদা আঞ্জেলোর সঙ্গে সোমালিয়ার মোগাডিশুতে পাঠানো হয়েছিল। আমরা যখন সেখানে পৌঁছেছিলাম, তখন সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ছিল। রাষ্ট্রসংঘের আদেশবলে, ইতালীয় সরকার সোমালিয়াকে স্বাধীন হতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল বলেই মনে হয়েছিল। আমরা যে-ইতালীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করছিলাম, তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল আর তাই সেখানে মণ্ডলী গড়ে তোলা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।

সেই সময়ে, আঞ্চলিক অধ্যক্ষ আমাকে তার সহকারী হিসেবে সেবা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাই আমরা আশেপাশের দেশগুলোতে পরিদর্শন করতে শুরু করেছিলাম। আমরা যাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতাম, তাদের মধ্যে কেউ কেউ উন্নতি করেছিল কিন্তু বিরোধিতার কারণে তাদেরকে নিজের দেশ ত্যাগ করতে হয়েছিল। অন্যেরা সেখানে থেকে গিয়েছিল, যদিও এর জন্য তাদেরকে প্রচণ্ড কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। * যিহোবার জন্য তাদের ভালোবাসা এবং বিশ্বস্ত থাকার জন্য তাদের যা সহ্য করতে হয়েছে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করলে এখনও আমাদের চোখে জল আসে।

সোমালিয়া ও এরিট্রিয়াতে গরম ও আর্দ্রতার মাত্রা প্রায়ই চরমে চলে যেত। স্থানীয় কিছু খাবার খেলে আমাদের এমনকী আরও বেশি গরম লাগত। আমরা যখন প্রথম বার একজন বাইবেল অধ্যয়ন ছাত্রীর বাড়িতে এইরকম একটা খাবার খেয়েছিলাম, তখন আমার স্ত্রী মজা করে বলেছিল যে, তার কান ট্রাফিক সিগন্যালের লাল বাতির মতো জ্বলে উঠেছে!

যখন আরতুরো ও আমার দাদা আঞ্জেলো অন্য কার্যভার পেয়েছিল, তখন আমরা একা হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদেরকে উৎসাহিত করার মতো কাউকে না পাওয়ার বিষয়টা সহজ ছিল না। তা সত্ত্বেও, এই পরিস্থিতি আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে ও তাঁর ওপর আরও পূর্ণরূপে নির্ভর করতে সাহায্য করেছিল। কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল এমন দেশগুলোতে আমরা যে-পরিদর্শন করেছিলাম, তা আসলে আমাদের জন্য উৎসাহের এক উৎস ছিল।

সোমালিয়াতে অনেক রকম সমস্যা ছিল। যেহেতু আমাদের কোনো ফ্রিজ ছিল না, তাই আমরা প্রতিদিন শুধুমাত্র যতটুকু খেতে পারি ততটুকু খাবারই কিনতাম, তা সেটা হাঙ্গর মাছের টুকরো অথবা স্থানীয় ফলমূল যেমন, আম, পেঁপে, বাতাবিলেবু, নারিকেল কিংবা কলা, যা-ই হোক না কেন। আমাদের প্রায়ই উড়ন্ত পোকামাকড় নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। মাঝে মাঝে গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করার সময়ে তারা আমাদের ঘাড়ে এসে বসত। তবে, আমাদের কাছে যেহেতু অন্ততপক্ষে একটা মোটরসাইকেল ছিল, তাই আমাদেরকে প্রখর রোদের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা হাঁটতে হতো না।

ইতালিতে ফিরে যাওয়া

সেই বন্ধুদের উদারতার জন্য ধন্যবাদ জানাই, যাদের সাহায্যে আমরা ১৯৬১ সালে তুরিনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ইতালিগামী একটা কলা বহনকারী জাহাজে উঠতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, আমাদেরকে সেখানে পুনরায় কার্যভার দেওয়া হবে। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা ইতালিতে ফিরে এসেছিলাম, যেখানে আমি একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা শুরু করেছিলাম। আমরা একটা ছোটো গাড়ি কিনেছিলাম আর পাঁচ বছর ধরে দুটো সীমার মধ্যে ভ্রমণ করার জন্য আমরা সেটাকে ব্যবহার করেছিলাম।

আফ্রিকার গরম সহ্য করার পর তখন আমাদের ঠাণ্ডার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। প্রথম বার শীতের সময়, আমরা যখন আল্পস্‌ পর্বতমালার পাদদেশে একটা মণ্ডলী পরিদর্শন করছিলাম, তখন আমরা খড় রাখার চিলেকোঠার ওপরে কোনো তাপ সঞ্চালনের ব্যবস্থাবিহীন একটা রুমে ঘুমিয়েছিলাম। সেখানে এত ঠাণ্ডা ছিল যে আমরা কোট পড়েই ঘুমাতে গিয়েছিলাম। সেই রাতে কাছাকাছি জায়গায় চারটা মুরগি ও দুটো কুকুর ঠাণ্ডায় মারা গিয়েছিল!

পরে, আমি একজন জেলা অধ্যক্ষ হিসেবেও সেবা করেছিলাম। সেই সময়ে, পুরো ইতালি ভ্রমণ করেছিলাম। আমরা ক্যালাব্রিয়া ও সিসিলির মতো কিছু জায়গায় অনেক বার পরিদর্শন করেছিলাম। আমরা অল্পবয়সিদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে ও মণ্ডলীর অধ্যক্ষ, ভ্রমণ পরিচারক এবং বেথেলকর্মী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে উৎসাহিত করেছিলাম।

আমরা সেই বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম, যারা সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করে এসেছে। আমরা তাদের গুণাবলি যেমন, যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য, উদারতা, ভাইবোনদের জন্য ভালোবাসা, মানিয়ে নেওয়ার মনোভাব ও আত্মত্যাগকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছি। আমরা, কিংডম হলে অনুষ্ঠিত বিয়েগুলোতে যোগ দিয়েছি। সেগুলো ধর্মীয় পরিচারক হিসেবে বৈধভাবে স্বীকৃত সাক্ষিদের দ্বারা পরিচালিত হতো, যে-বিষয়টা কয়েক বছর আগেও সেই দেশে অচিন্তনীয় ছিল। মণ্ডলীগুলো এখন আর ভাইবোনদের রান্নাঘরে সভা করে না কিংবা কাঠের তক্তার ওপর বসে না, যেমনটা তুরিনে করত। এর পরিবর্তে, অধিকাংশ মণ্ডলীর চমৎকার কিংডম হল রয়েছে, যা যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে। এখন আমরা আর দ্বিতীয় শ্রেণীর থিয়েটারে নয় বরং এর পরিবর্তে বড়ো বড়ো সম্মেলন হলে সম্মেলন করে থাকি। আর প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২,৪৩,০০০ জন হতে দেখে আমরা অনেক আনন্দ পেয়েছি। আমরা যখন ইতালিতে এসেছিলাম, তখন সেখানে মাত্র ৪৯০ জন প্রকাশক ছিল।

আমরা সঠিক বাছাই করেছি

আমরা কিছু কষ্ট ভোগ করেছি, যার মধ্যে ছিল দেশে ফেরার জন্য কাতরতা ও অসুস্থতা। ফার্ন যখনই সমুদ্র দেখত, তখনই দেশে ফেরার জন্য কাতর হয়ে যেত। এ ছাড়া, তার তিনটে গুরুতর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। একবার, সে যখন বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য যাচ্ছিল, তখন একজন বিরোধী ব্যক্তি লম্বা হাতলসহ কাঁটা লাগানো দণ্ড দিয়ে তাকে আঘাত করেছিল। এই ঘটনার কারণে তাকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল।

যদিও আমরা মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত বোধ করতাম কিন্তু আমরা বিলাপ ৩:২৪ পদের সঙ্গে মিল রেখে ‘সদাপ্রভুতে প্রত্যাশা’ করেছি। তিনি হলেন সান্ত্বনার ঈশ্বর। একবার, আমরা যখন নিরুৎসাহিত বোধ করছিলাম, ঠিক তখন ফার্ন ভাই নেথেন নরের কাছ থেকে একটা সুন্দর চিঠি পেয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন, যেহেতু তিনি পেনসিলভানিয়ার বেথলেহেমের কাছাকাছি এলাকায় যেখানে ফার্ন অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিল, সেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই তিনি ভালোভাবেই জানেন যে, ফার্নের মতো পেনসিলভানিয়া ডাচ (পূর্ব পেনসিলভানিয়ার যে-লোকেরা ১৮ শতাব্দীর জার্মান অভিবাসীদের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নিয়েছিল) মহিলারা শক্তিশালী ও অধ্যবসায়ী। তার কথাই ঠিক ছিল। বছরের পর বছর ধরে আমরা অনেক লোকের কাছ থেকে অনেক উপায়ে উৎসাহ পেয়েছি।

বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও, আমরা পরিচর্যার জন্য আমাদের উদ্যোগকে বজায় রাখতে চেষ্টা করেছি। উদ্যোগী মনোভাবকে সুস্বাদু ফেনিল (বুদ্‌বুদে পূর্ণ) মদ লামব্রুসকোর সঙ্গে তুলনা করে ফার্ন মজা করে বলত, “আমরা আমাদের মনোভাবের বুদ্‌বুদে ভাবকে কখনো হারিয়ে যেতে দেব না।” ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সীমার ও জেলার কাজে ভ্রমণ করার পর, আমরা ইতালীয় ছাড়াও অন্যান্য ভাষার দল ও মণ্ডলী পরিদর্শন করার এবং গড়ে তোলার এক নতুন বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি। এই দলগুলো বাংলাদেশ, চিন, এরিট্রিয়া, ইথিওপিয়া, ঘানা, ভারত, নাইজেরিয়া, ফিলিপিনস, শ্রীলংকা ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা লোকেদের কাছে প্রচার করে। যারা যিহোবার করুণা আস্বাদন করেছে, তাদের জীবনকে আমরা ঈশ্বরের বাক্যের ক্ষমতার দ্বারা যে-অপূর্ব উপায়গুলোতে রূপান্তরিত হতে দেখেছি, সেগুলো বর্ণনা করার জন্য এমনকী একটা বইও যথেষ্ট নয়।—মীখা ৭:১৮, ১৯.

আমরা প্রতিদিন প্রার্থনা করি যেন যিহোবা ক্রমাগত আমাদেরকে আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় আবেগগত ও শারীরিক শক্তি দেন। প্রভুর আনন্দই আমাদের শক্তি। বাইবেলের সত্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় তা আমাদের দৃষ্টিকে উজ্জ্বল করেছে এবং এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে যে, আমরা জীবনে সঠিক বাছাই করেছি।—ইফি. ৩:৭; কল. ১:২৯.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৯২ (ইংরেজি) বইয়ের ৯৫-১৮৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৭-২৯ পৃষ্ঠার তালিকা/চিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

নিউ ইয়র্কের রোচেস্টারে আমার বাবা-মা

১৯৪৮

গিলিয়েড-এর ১২তম ক্লাসের জন্য সাউথ ল্যানসিংয়ে

১৯৪৯

ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার আগে ফার্নের সঙ্গে

ইতালির কাপরি

১৯৫২

তুরিন ও নেপলসে অন্যান্য মিশনারির সঙ্গে

১৯৬৩

ফার্ন তার কয়েক জন বাইবেল ছাত্রীর সঙ্গে

“আমরা আমাদের মনোভাবের বুদ্‌বুদে ভাবকে কখনো হারিয়ে যেতে দেব না”