সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার উদ্দেশে গান গাও!

যিহোবার উদ্দেশে গান গাও!

যিহোবার উদ্দেশে গান গাও!

“আমি যত কাল বাঁচিয়া থাকি, আমার ঈশ্বরের প্রশংসা গান করিব।”—গীত. ১৪৬:২.

১. কী অল্পবয়সি দায়ূদকে কিছু গান রচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

 অল্পবয়সে দায়ূদ তার বাবার মেষপালের দেখাশোনা করার জন্য যিরূশালেমের কাছাকাছি মাঠগুলোতে অনেক সময় কাটিয়েছিলেন। মেষপাল পাহারা দেওয়ার সময় দায়ূদ যিহোবার অসাধারণ সৃজনশীল কাজগুলো দেখতে পারতেন আর এর মধ্যে ছিল: তারা-ভরা আকাশ, “বন্য পশুগণ” ও “শূন্যের পক্ষিগণ।” তিনি যা দেখতেন, সেগুলোর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন—এতটাই যে, তিনি সেই চমৎকার বিষয়গুলোর নির্মাতার উদ্দেশে হৃদয়স্পর্শী বিভিন্ন প্রশংসাগান রচনা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। দায়ূদের রচিত অনেক গান গীতসংহিতা বইয়ে পাওয়া যায়। *—পড়ুন, গীতসংহিতা ৮:৩, ৪, ৭-৯.

২. (ক) সংগীত একজন ব্যক্তির ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে? একটা উদাহরণ দিন। (খ) গীতসংহিতা ৩৪:৭, ৮ ও গীতসংহিতা ১৩৯:২-৮ পদ পড়ে যিহোবার সঙ্গে দায়ূদের সম্পর্ক সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?

খুব সম্ভবত দায়ূদ তার জীবনের সেই সময়কালেই একজন সংগীতজ্ঞ হিসেবে আরও দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন যে, তাকে রাজা শৌলের জন্য বীণা বাজাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। (হিতো. ২২:২৯) দায়ূদের সংগীতের এমন প্রভাব ছিল, যা উদ্‌বিগ্ন রাজার মনকে শান্ত করতে পারত, ঠিক যেমনটা বর্তমানেও ভালো সংগীতগুলো প্রায়ই লোকেদের মনকে শান্ত করতে পারে। যখনই দায়ূদ তার বাদ্যযন্ত্র হাতে নিতেন, “তাহাতে শৌল স্বস্থ হইতেন, উপশম পাইতেন।” (১ শমূ. ১৬:২৩) এই ঈশ্বরভয়শীল বাদক ও গীতিকার যে-গানগুলো রচনা করেছিলেন, সেগুলো এখনও পর্যন্ত মূল্যবান বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়টা একটু চিন্তা করে দেখুন! বর্তমানে, দায়ূদের জন্মের ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময় পর, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বসবাসরত এবং ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকা লক্ষ লক্ষ লোক, সান্ত্বনা ও আশা লাভ করার জন্য দায়ূদের গানগুলো নিয়মিতভাবে পড়ে থাকে।—২ বংশা. ৭:৬; পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:৭, ৮; ১৩৯:২-৮; আমোষ ৬:৫.

সত্য উপাসনায় সংগীতের সম্মাননীয় স্থান

৩, ৪. দায়ূদের দিনে সত্য উপাসনায় সংগীতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কী ব্যবস্থা করা হয়েছিল?

দায়ূদের মেধা ছিল আর তিনি সেই মেধাকে যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে—যিহোবাকে গৌরবান্বিত করার জন্য—ব্যবহার করেছিলেন। ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার পর দায়ূদ আবাসের সেবার মধ্যে চমৎকার সংগীত অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। মন্দিরের সেবায় রত লেবীয়দের মধ্যে দশ ভাগের এক ভাগেরও বেশি লেবীয়কে—তাদের মধ্যে প্রায় ৪,০০০ জনকে—“প্রশংসার্থে” নিযুক্ত করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীতগানে শিক্ষিত ও সঙ্গীতপারদর্শী লোকের’ সংখ্যা ২৮৮ জন।—১ বংশা. ২৩:৩, ৫; ২৫:৭.

লেবীয়রা যে-গান গাইত, সেগুলোর মধ্যে অনেক গানই দায়ূদ নিজে রচনা করেছিলেন। দায়ূদের গানগুলো গাওয়া হতো এমন উপলক্ষ্যগুলোতে উপস্থিত থাকার বিশেষ সুযোগ লাভকারী ইস্রায়েলীয়রা নিশ্চয়ই তারা যা শুনত, সেগুলোর দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হতো। পরে, যখন যিরূশালেমে নিয়ম-সিন্দুক নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন “দায়ূদ লেবীয়দের অধ্যক্ষদিগকে কহিলেন, তোমরা উচ্চৈঃস্বরে আনন্দধ্বনি করণার্থে আপনাদের গায়ক ভ্রাতৃগণকে বাদ্যযন্ত্র সহকারে, নেবল, বীণা ও করতাল সহকারে নিযুক্ত কর।”—১ বংশা ১৫:১৬.

৫, ৬. (ক) কেন দায়ূদের রাজত্বের সময়ে সংগীতের প্রতি এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল? (খ) কীভাবে আমরা জানি যে, প্রাচীন ইস্রায়েলের উপাসনায় সংগীতকে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হতো?

কেন দায়ূদের দিনে সংগীতের প্রতি এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল? এর কারণ কি শুধুমাত্র এই ছিল যে, রাজা নিজে একজন সংগীতজ্ঞ ছিলেন? না, আরেকটা কারণ ছিল, যা কয়েক শতাব্দী পর ধার্মিক রাজা হিষ্কিয় যখন পুনরায় মন্দিরে সেবা চালু করেছিলেন, তখন প্রকাশিত হয়েছিল। ২ বংশাবলি ২৯:২৫ পদে আমরা পড়ি: “তিনি দায়ূদের, রাজার দর্শক গাদের ও নাথন ভাববাদীর আজ্ঞানুসারে করতাল, নেবল ও বীণাধারী লেবীয়দিগকে সদাপ্রভুর গৃহে স্থাপন করিলেন, যেহেতু সদাপ্রভু আপন ভাববাদীদের দ্বারা এই আজ্ঞা করিয়াছিলেন।”

হ্যাঁ, তাঁর ভাববাদীদের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর উপাসকদেরকে গান সহকারে তাঁর প্রশংসা করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যাজকীয় গোষ্ঠীর গায়কদের এমনকী সেই কাজগুলো করতে হতো না, যেগুলো অন্যান্য লেবীয়রা করতে বাধ্য ছিল আর এর ফলে তারা গান রচনা করার এবং খুব সম্ভবত মহড়া দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেত।—১ বংশা. ৯:৩৩.

৭, ৮. রাজ্যের গান গাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতার চেয়ে কোন বিষয়টা আসলে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

আপনি হয়তো বলতে পারেন, “যদি গান গাওয়ার বিষয়টা আসে, তাহলে আমি কখনোই আবাসের দক্ষ গায়কদের মতো হতে পারব না!” কিন্তু, সমস্ত লেবীয় গায়করাই দক্ষ ছিল না। ১ বংশাবলি ২৫:৮ পদ অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ‘শিষ্যরাও’ ছিল। এটাও উল্লেখযোগ্য যে, ইস্রায়েলের অন্যান্য বংশের মধ্যেও হয়তো কেউ কেউ দক্ষ বাদক ও গায়ক ছিল কিন্তু যিহোবা লেবীয়দেরকেই সংগীতের বিষয়টা দেখাশোনা করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, “গুরু” অথবা “শিষ্য” যা-ই হোক না কেন, বিশ্বস্ত লেবীয়রা সকলেই এই কার্যভার পরিপূর্ণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল।

দায়ূদ সংগীত ভালোবাসতেন আর তিনি এতে দক্ষও ছিলেন। কিন্তু, শুধুমাত্র মেধাই কি ঈশ্বরের কাছে মূল্যবান? গীতসংহিতা ৩৩:৩ পদে দায়ূদ লিখেছিলেন: “জয়ধ্বনিসহ মনোহর [“পাকা হাতে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] বাদ্য কর।” অর্থটা স্পষ্ট: যে-বিষয়টা মূল্যবান তা হল, যিহোবার প্রশংসায় ‘পাকা হাত’ হওয়া বা আমাদের যথাসাধ্য করা।

দায়ূদের সময়ের পর সংগীতের ভূমিকা

৯. আপনি যদি শলোমনের রাজত্বকালে মন্দির উদ্‌বোধনের সময় সেখানে যোগ দিতেন, তাহলে আপনি যা দেখতে ও শুনতে পেতেন, তা বর্ণনা করুন।

শলোমনের রাজত্বকালে বিশুদ্ধ উপাসনায় সংগীতের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মন্দির উদ্‌বোধনের সময়, অনেক বড়ো একটা বাদকদল ছিল, যাদের পিতলের তৈরি ১২০টা তূরী ছিল। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১২.) বাইবেল আমাদের বলে যে, “তূরীবাদকেরা [যারা সকলে যাজক ছিল] ও গায়কেরা সকলে একরবে সদাপ্রভুর প্রশংসা ও স্তব করিবার জন্য এক ব্যক্তির ন্যায় উপস্থিত ছিল” কারণ “তিনি মঙ্গলময়, হাঁ, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।” সেই জয়ধ্বনি ঊর্ধ্বে ওঠা মাত্রই ‘গৃহ মেঘে পরিপূর্ণ হইয়াছিল,’ যা যিহোবার অনুমোদনকে ইঙ্গিত করেছিল। সেইসমস্ত তূরীর শব্দ ও একইসঙ্গে হাজার হাজার গায়ককে গান গাইতে শোনা নিশ্চয়ই কতই না রোমাঞ্চকর, কতই না চমৎকার ছিল!—২ বংশা. ৫:১৩.

১০, ১১. কী দেখায় যে, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা উপাসনায় সংগীত ব্যবহার করত?

১০ এ ছাড়া, প্রাথমিক খ্রিস্টানরাও উপাসনায় সংগীত ব্যবহার করত। অবশ্য, প্রথম শতাব্দীর উপাসকরা আবাস বা মন্দিরে নয় বরং ব্যক্তিগত গৃহগুলোতে মিলিত হতো। তাড়না ও অন্যান্য কারণে, তারা যে-পরিস্থিতির মধ্যে মিলিত হতো, তা প্রায়ই অনুকূল থাকত না। তা সত্ত্বেও, সেই খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের প্রশংসাগান করত।

১১ প্রেরিত পৌল কলসীতে তার খ্রিস্টান ভাইদের উদ্দেশে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা সমস্ত বিজ্ঞতায় গীত, স্ত্রোত্র ও আত্মিক সঙ্কীর্ত্তন দ্বারা পরস্পর . . . চেতনা দান কর।” (কল. ৩:১৬) পৌল ও সীলকে কারাগারে নিক্ষেপ করার পর, তারা “ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিতেছিলেন,” যদিও তাদের অনুসরণ করার জন্য কোনো গানবই ছিল না। (প্রেরিত ১৬:২৫) আপনাকে যদি কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে আপনি আমাদের রাজ্যের গানগুলোর মধ্যে কয়টা গান মনে করে গাইতে পারবেন?

১২. কীভাবে আমরা আমাদের রাজ্যের গানগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?

১২ যেহেতু আমাদের উপাসনায় সংগীতের এক সম্মাননীয় স্থান রয়েছে, তাই আমাদের নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি সংগীতের প্রতি সঠিক উপলব্ধি দেখাই? আমি কি সভা এবং সম্মেলনগুলোতে যথাসময়ে পৌঁছানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি, যাতে আমি ভাইবোনদের সঙ্গে শুরুর গানে অংশ নিতে পারি আর এরপর আমি কি হৃদয় থেকে গান গাই? আমি কি আমার সন্তানদের, গানকে শুধুমাত্র ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় ও পরিচর্যা সভার মধ্যে কিংবা জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা ও প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের মধ্যে কোনো ধরনের বিরতি হিসেবে না দেখতে উৎসাহিত করি, যে-সময়টাকে তারা হয়তো একটু ঘোরাফেরা করার জন্য অযথাই বসার জায়গা থেকে ওঠার এক সুযোগ বলে মনে করতে পারে?’ গান গাওয়া আমাদের উপাসনার অংশ। হ্যাঁ, আমরা “গুরু” অথবা “শিষ্য” যা-ই হই না কেন, আমরা সকলে যিহোবার প্রশংসায় একত্রে গান গাইতে পারি আর আমাদের তা করা উচিত।—তুলনা করুন, ২ করিন্থীয় ৮:১২.

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার পরিবর্তন

১৩, ১৪. মণ্ডলীর সভাগুলোর সময়ে পূর্ণহৃদয়ে গান গাওয়ার কোন মূল্য রয়েছে? উদাহরণ দিন।

১৩ এক-শো বছরেরও বেশি সময় আগে, জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার একটা কারণ ব্যাখ্যা করেছিল যে, কেন আমাদের রাজ্যের গানগুলো এতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি বলেছিল: “সত্য সম্বন্ধে গান গাওয়া হচ্ছে ঈশ্বরের লোকেদের মনে ও হৃদয়ে সত্যকে পৌঁছে দেওয়ার এক উত্তম উপায়।” যেহেতু আমাদের অনেক গানের কথাই শাস্ত্রের বিভিন্ন বাক্যাংশের ওপর ভিত্তি করে, তাই অন্ততপক্ষে কয়েকটা গানের কথা শেখা সত্যকে আমাদের হৃদয়ের গভীরে গেঁথে দেওয়ার এক চমৎকার উপায় হতে পারে। আমাদের সভাতে প্রথম বারের মতো এসেছে এমন ব্যক্তিরা প্রায়ই মণ্ডলীতে হৃদয় থেকে গাওয়া গানগুলোর দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

১৪ আঠারো-শো উনসত্তর সালের কোনো এক সন্ধ্যায় সি.টি. রাসেল কাজ থেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছিলেন, সেই সময় তিনি ভূগর্ভস্থ একটা হল থেকে গানের শব্দ ভেসে আসতে শোনেন। তার জীবনের সেই সময়ে তিনি হতাশ হয়ে ভেবেছিলেন যে, তিনি কখনোই ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য খুঁজে পাবেন না। তাই তিনি নিজেকে ব্যাবসায়িক কাজে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই যুক্তি দেখিয়ে যে, যদি কিছুটা অর্থ উপার্জন করতে পারেন, তাহলে তিনি লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করতে না পারলেও, অনন্তপক্ষে তাদের দৈহিক চাহিদা মেটাতে পারবেন। ভাই রাসেল সেই ধুলোবালিপূর্ণ, নোংরা হলে ঢুকেছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে, সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে। তিনি সেখানে বসে তা শুনেছিলেন। পরে তিনি লিখেছিলেন যে, তিনি সেই রাতে যা শুনেছিলেন, তা “ঈশ্বরের সাহায্যে, বাইবেলের ঐশিক অনুপ্রেরণার প্রতি [তার] দুর্বল বিশ্বাসকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য যথেষ্ট ছিল।” লক্ষ করুন যে, গানই প্রথমে ভাই রাসেলকে সেই সভার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।

১৫. কেন একটি নতুন গানবইয়ের প্রয়োজন হয়েছে?

১৫ সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, শাস্ত্র সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতায় বিভিন্ন সংশোধন করা হয়েছে। হিতোপদেশ ৪:১৮ পদ বলে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” ক্রমবর্ধিত দীপ্তি নিশ্চিতভাবেই আমরা যে-উপায়ে ‘সত্যের গান গাই,’ তাতে বিভিন্ন রদবদল করার জন্য পরিচালিত করেছে। বিগত ২৫ বছর ধরে অনেক দেশে যিহোবার সাক্ষিরা যিহোবার উদ্দেশে প্রশংসা গীত গাও (ইংরেজি) গানবইটি ব্যবহার করে এসেছে। * সেই বইটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সময় থেকে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর দীপ্তি আরও দেদীপ্যমান হয়েছে এবং সেই গানবইয়ে ব্যবহৃত বেশ কিছু অভিব্যক্তি পুরোনো হয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এখন আর “নতুন ব্যবস্থা” সম্বন্ধে কথা বলি না বরং “নতুন জগৎ” সম্বন্ধে বলি। আর এখন আমরা বলি যে, যিহোবার নাম “পবিত্রীকৃত” হবে, এটা বলি না যে, এই নামের সত্যতা “প্রতিপাদিত” হবে। তাই স্পষ্টতই, মতবাদ সংক্রান্ত দিক থেকে আমাদের গানবইকে নতুন করার প্রয়োজন হয়েছে।

১৬. কীভাবে আমাদের নতুন গান ব্রোশারটি ইফিষীয় ৫:১৯ পদে প্রাপ্ত পৌলের পরামর্শ অনুসরণ করতে সাহায্য করবে?

১৬ তাই, এই কারণসহ অন্যান্য কারণে পরিচালকগোষ্ঠী একটি নতুন গানবই প্রকাশ করার জন্য অনুমোদন করেছে, যেটির শিরোনাম হল যিহোবার উদ্দেশে গান গাও (ইংরেজি)। তবে, বাংলায় একই নামের নতুন বাংলা গান ব্রোশার রয়েছে, যেখানে গানের সংখ্যা ৫৫টি। আমাদের পক্ষে এই নতুন গানগুলোর মধ্যে অন্ততপক্ষে কয়েকটি গানের কথা মুখস্ত করা হয়তো সম্ভবপর হবে। এটা ইফিষীয় ৫:১৯ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের পরামর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।—পড়ুন।

আপনি আপনার উপলব্ধি দেখাতে পারেন

১৭. যখন মণ্ডলীতে গান গাওয়ার বিষয়টা আসে, তখন কোন চিন্তাভাবনা আমাদেরকে বিব্রত হওয়ার ভয়কে কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৭ আমাদের কি বিব্রত হওয়ার ভয়কে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে গান গাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেওয়া উচিত? এভাবে চিন্তা করুন: যখন কথা বলার বিষয়টা আসে, তখন এটা কি সত্য নয় যে “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই”? (যাকোব ৩:২) তা সত্ত্বেও, ভালোভাবে কথা বলতে না পারার বিষয়টাকে আমরা ঘরে ঘরে যিহোবার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাধা হতে দিই না। তাহলে, কেন ভালোভাবে গান গাইতে না পারা আমাদেরকে গান গাওয়ার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাধা দেবে? যিহোবা, যিনি ‘মনুষ্যের মুখ নির্ম্মাণ করিয়াছেন’ তিনি আনন্দিত হন, যখন আমরা তাঁর প্রশংসাগান গাওয়ার জন্য আমাদের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করি।—যাত্রা. ৪:১১.

১৮. গানের কথা শেখার জন্য কিছু পরামর্শ দিন।

১৮ যিহোবার উদ্দেশে গান গাও—পিয়ানোর সাথে নামক সিডি অনেক ভাইবোনকে নতুন গানগুলো শিখতে সাহায্য করেছে। যন্ত্রসংগীত শোনা খুবই উপভোগ্য বিষয়। আপনি যদি ঘরে প্রায়ই সেগুলো শোনেন এবং আপনার গানবই থেকে অনুসরণ করেন, তাহলে সেটা আপনাকে গানের কথা শিখতে সাহায্য করবে এবং আপনি কিংডম হলে আস্থা সহকারে সেগুলো গাইতে পারবেন।

১৯. আমাদের রাজ্যের গানগুলোর যন্ত্রসংগীত পুনর্সংস্করণ করার প্রস্তুতির সঙ্গে কোন পদক্ষেপগুলো জড়িত?

১৯ আমাদের বিশেষ সম্মেলন, সীমা সম্মেলন ও জেলা সম্মেলনগুলোতে আমরা যে-যন্ত্রসংগীত উপভোগ করি, সেগুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু, এর প্রস্তুতির সঙ্গে অনেক কাজ জড়িত। যন্ত্রসংগীত বাছাই করার পর, সেই যন্ত্রসংগীতকে বাদ্যযন্ত্রের উপযোগী করার জন্য সতর্কতার সঙ্গে স্বরলিপি লিখতে হয়, যাতে ওয়াচটাওয়ার বাদকদলের ৬৪ জন সদস্য তা বাজাতে পারে। এরপর, বাদকরা সেই বিষয়বস্তু পুনরালোচনা করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে, যেগুলো তারা নিউ ইয়র্কের প্যাটারসনে আমাদের স্টুডিওতে মহড়া দেবে ও সবশেষে রেকর্ড করবে। এই ভাইবোনদের মধ্যে দশ জন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকে। তারা সকলে এটাকে আমাদের ঈশতান্ত্রিক আয়োজনগুলোর জন্য চমৎকার যন্ত্রসংগীত জোগানোর এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে গণ্য করে। আমরা তাদের প্রেমপূর্ণ প্রচেষ্টার প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি। আমাদের সম্মেলনের সভাপতি যখন আমাদেরকে আসন গ্রহণ করার ও অত্যন্ত প্রেমের সঙ্গে যে-যন্ত্রসংগীত প্রস্তুত করা হয়েছে তা শান্তভাবে শোনার জন্য আমন্ত্রণ জানান, তখন আমরা যেন অবিলম্বে তা করি।

২০. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২০ যিহোবা আমাদের প্রশংসাগানগুলোর প্রতি মনোযোগ দেন। সেগুলো তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখনই উপাসনার জন্য মিলিত হই, তখনই পূর্ণহৃদয়ে গান গাওয়ার মাধ্যমে তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারি। হ্যাঁ, আমরা গুরু অথবা শিষ্য যা-ই হই না কেন, আসুন আমরা “সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান” গাই!—গীত. ১০৪:৩৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ আগ্রহের বিষয় হল, দায়ূদের মৃত্যুর এক হাজার বছর পর একদল স্বর্গদূত সেই মেষপালকদের কাছে মশীহের জন্মের বার্তা ঘোষণা করেছিল, যারা বৈৎলেহমের কাছাকাছি মাঠগুলোতে তাদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল।—লূক ২:৪, ৮, ১৩, ১৪.

^ ২২৫টি গানসহ সম্পূর্ণ বইটি ১০০-রও বেশি ভাষায় প্রাপ্তিসাধ্য ছিল।

আপনি কী মনে করেন?

• বাইবেলের সময়ের কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, আমাদের উপাসনায় সংগীতের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে?

• আপনি মথি ২২:৩৭ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর আজ্ঞার বাধ্য হওয়ার এবং পূর্ণহৃদয়ে রাজ্যের গানগুলোতে অংশ নেওয়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক লক্ষ করেন?

• কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের রাজ্যের গানগুলোর প্রতি সঠিক উপলব্ধি দেখাতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি আপনার সন্তানদেরকে গানের সময়ে অযথাই তাদের বসার জায়গা ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন?

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি ঘরে আমাদের নতুন গানগুলোর কথা শিখছেন?