সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিয়েকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক দান হিসেবে সম্মান করুন

বিয়েকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক দান হিসেবে সম্মান করুন

বিয়েকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক দান হিসেবে সম্মান করুন

“এই কারণ মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।”—আদি. ২:২৪.

১. কেন যিহোবা আমাদের সম্মান পাওয়ার যোগ্য?

 বিয়ের উদ্যোক্তা যিহোবা ঈশ্বর নিশ্চিতভাবেই আমাদের সম্মান পাওয়ার যোগ্য। আমাদের সৃষ্টিকর্তা, সার্বভৌম প্রভু এবং স্বর্গীয় পিতা হিসেবে তাঁকে উপযুক্তভাবেই ‘সমস্ত উত্তম দান এবং সিদ্ধ বরের’ দাতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (যাকোব ১:১৭; প্রকা. ৪:১১) এটা তাঁর মহৎ প্রেমের এক বহিঃপ্রকাশ। (১ যোহন ৪:৮) তিনি আমাদের যা-কিছু শেখান, আমাদের কাছ থেকে যা-কিছু চান, আমাদেরকে যা-কিছু দেন, সেগুলোর সমস্তই কেবল আমাদের মঙ্গল ও উপকারের জন্য।—যিশা. ৪৮:১৭.

২. প্রথম বিবাহিত দম্পতিকে যিহোবা কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন?

বাইবেল বিয়েকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এইরকম এক “উত্তম” দান হিসেবে তুলে ধরে। (রূৎ. ১:৯; ২:১২) যিহোবা যখন প্রথম বিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি ওই দম্পতিকে অর্থাৎ আদম ও হবাকে কীভাবে সফল হওয়া যায়, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। (পড়ুন, মথি ১৯:৪-৬.) তারা যদি ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণ করত, তাহলে তারা স্থায়ী সুখ উপভোগ করতে পারত। কিন্তু, তারা নির্বোধের মতো ঈশ্বরের আজ্ঞাকে উপেক্ষা করেছিল আর ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করেছিল।—আদি. ৩:৬-১৩, ১৬-১৯, ২৩.

৩, ৪. (ক) কীভাবে বর্তমানে অনেকে বিয়ের ব্যবস্থাকে এবং যিহোবা ঈশ্বরকে অসম্মান করে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন উদাহরণগুলো বিবেচনা করব?

সেই প্রথম দম্পতির মতো, বর্তমানে অনেক লোক এমন বৈবাহিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে, যেগুলোতে যিহোবার নির্দেশনার প্রতি সামান্যই সম্মান দেখা যায় বা কোনো সম্মানই দেখা যায় না। কেউ কেউ বিয়ের ব্যবস্থাকেই প্রত্যাখ্যান করে আবার অন্যেরা এটাকে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য নিজেদের মতো করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করে। (রোমীয় ১:২৪-৩২; ২ তীম. ৩:১-৫) তারা এই বাস্তব বিষয়কে উপেক্ষা করে যে, বিয়ে হল ঈশ্বরের কাছ থেকে এক দান আর সেই দানকে অসম্মান করার দ্বারা তারা এর দাতা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিও অসম্মান দেখিয়ে থাকে।

কখনো কখনো, এমনকী ঈশ্বরের কিছু লোকও বিয়ের ব্যাপারে যিহোবার স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে। কিছু খ্রিস্টান দম্পতি পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নেয় অথবা কোনো শাস্ত্রীয় ভিত্তি ছাড়াই বিবাহবিচ্ছেদ করে থাকে। কীভাবে তা এড়ানো যেতে পারে? আদিপুস্তক ২:২৪ পদে প্রাপ্ত ঈশ্বরের নির্দেশনা কীভাবে বিবাহিত খ্রিস্টানদেরকে তাদের বিয়েকে শক্তিশালী করার জন্য সাহায্য করতে পারে? আর বিয়ে করার কথা চিন্তা করছে এমন ব্যক্তিরা কীভাবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে? আসুন আমরা বাইবেলের সময়কার তিনটে সফল বিয়ে লক্ষ করি, যেগুলো দেখায় যে, যিহোবার প্রতি সম্মান কীভাবে একটা স্থায়ী বিয়ের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক চাবিকাঠি।

আনুগত্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

৫, ৬. কোন পরিস্থিতি হয়তো সখরিয় ও ইলীশাবেতের জন্য পরীক্ষা নিয়ে এসেছিল আর কীভাবে তাদের আনুগত্য পুরস্কৃত হয়েছিল?

সখরিয় ও ইলীশাবেৎ সবসময় সঠিক বিষয়গুলোই করেছিলেন। দুজনেই তাদের সাথি হিসেবে যিহোবার একজন অনুগত দাসকে বেছে নিয়েছিলেন। সখরিয় বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার যাজকীয় দায়িত্ব পালন করতেন এবং তারা দুজনেই ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করার জন্য তাদের যথাসাধ্য করতেন। নিশ্চিতভাবেই তাদের খুশি থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল। তা সত্ত্বেও, আপনি যদি যিহূদিয়ায় তাদের বাড়িতে যেতেন, তাহলে আপনি অল্পসময়ের মধ্যেই বুঝতে পারতেন যে, একটা কিছুর অভাব রয়েছে। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। ইলীশাবেৎ বন্ধ্যা ছিলেন আর তাদের দুজনেরই অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল।—লূক ১:৫-৭.

প্রাচীন ইস্রায়েলে, সন্তান জন্ম দেওয়া অত্যন্ত প্রশংসাজনক ও সম্মাননীয় এক বিষয় ছিল আর পরিবারগুলো সাধারণত বেশ বড়ো থাকত। (১ শমূ. ১:২, ৬, ১০; গীত. ১২৮:৩, ৪) সেই সময়ের একজন ইস্রায়েলীয় পুরুষ হয়তো তার স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতেন, যদি সেই স্ত্রী তার জন্য কোনো সন্তান জন্ম দিতে না পারতেন। তবে, সখরিয় অনুগতভাবে ইলীশাবেতের সঙ্গে থেকেছিলেন। তিনি বা তার স্ত্রী কেউই তাদের বিয়েকে ভেঙে ফেলার সহজ উপায় খোঁজেননি। যদিও কোনো সন্তান না থাকার বিষয়টা তাদের দুঃখ দিত, কিন্তু তারা সবসময় একসঙ্গে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিল। একসময়, যিহোবা অলৌকিকভাবে তাদের বৃদ্ধ বয়সে তাদেরকে এক পুত্রসন্তান দিয়ে প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছিলেন।—লূক ১:৮-১৪.

৭. আরেকটা কোন উপায়ে ইলীশাবেৎ তার স্বামীর প্রতি অনুগত বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন?

ইলীশাবেৎ আরেকটা উপায়ে প্রশংসাজনক আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন। যখন তার ছেলে যোহনের জন্ম হয়েছিল, তখন সখরিয় কথা বলতে পারেননি কারণ তিনি ঈশ্বরের দূতকে সন্দেহ করায় তাকে বাক্‌শক্তিহীন করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সখরিয় নিশ্চয়ই কোনো না কোনো উপায়ে তার স্ত্রীর কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে, যিহোবার দূত সেই ছেলের নাম “যোহন” রাখতে বলেছেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা বাবার নামেই সেই ছেলের নাম রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু, ইলীশাবেৎ অনুগতভাবে তার প্রতি তার স্বামীর নির্দেশনাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তাহা নয়, ইহার নাম যোহন রাখা যাইবে।”—লূক ১:৫৯-৬৩.

৮, ৯. (ক) কীভাবে আনুগত্য একটা বিয়েকে শক্তিশালী করে? (খ) নির্দিষ্ট কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে একজন স্বামী ও স্ত্রী আনুগত্য দেখাতে পারেন?

সখরিয় ও ইলীশাবেতের মতো, বর্তমানেও অনেক বিবাহিত দম্পতি বিভিন্ন হতাশা এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। আনুগত্যবিহীন এক বিয়ে টিকে থাকতে পারবে না। একটা শুদ্ধ বিয়ের মধ্যে প্রেমের ভান করা, পর্নোগ্রাফি দেখা, পারদারিকতা ও অন্যান্য হুমকি, বৈবাহিক নির্ভরতার ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। আর একটা বিয়েতে যখন নির্ভরতা থাকে না, তখন প্রেম ধীরে ধীরে শেষ হতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনুগত্য হল পরিবারের চারপাশে একটা সুরক্ষামূলক বেড়ার মতো, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা হুমকিগুলোকে দূরে রাখে আর এভাবে বাড়ির ভিতরের লোকেদেরকে যথেষ্ট নিরাপত্তা প্রদান করে। তাই, একজন স্বামী ও স্ত্রী যখন একে অন্যের প্রতি অনুগত থাকে, তখন তারা একসঙ্গে নিরাপদে বসবাস করতে পারে আর একে অন্যের কাছে মনের কথা খুলে বলার দ্বারা তাদের প্রেমকে বৃদ্ধি পেতে দেয়। হ্যাঁ, আনুগত্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

যিহোবা আদমকে বলেছিলেন: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে।” (আদি. ২:২৪) এর মানে কী? বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আগে যে-বন্ধন ছিল, তাতে রদবদল করতে হবে। প্রত্যেক সাথিকে অবশ্যই প্রথমে অপর সাথির প্রতি তার সময় ও মনোযোগ প্রদান করতে হবে। বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনরা আর নতুন পরিবারকে উপেক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না; কিংবা পারিবারিক সিদ্ধান্ত ও মতানৈক্যের ব্যাপারে সেই দম্পতির বাবা-মাদের হস্তক্ষেপ করতে সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। সেই দম্পতিকে এখন একে অন্যের প্রতি আসক্ত হতে হবে। এটাই ঈশ্বরের নির্দেশনা।

১০. কী বিবাহসাথিদের আনুগত্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করবে?

১০ এমনকী ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারগুলোতেও আনুগত্য পুরস্কার নিয়ে আসে। অবিশ্বাসী সাথি রয়েছে এমন একজন বোন বলেন: “কীভাবে আমার স্বামীর বশীভূত হতে হয় ও তার প্রতি গভীর সম্মান দেখাতে হয়, সেই বিষয়ে যিহোবা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন বলে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। অনুগত থাকার ফলে আমরা ৪৭ বছর ধরে প্রেম ও সম্মান বজায় রাখতে পেরেছি।” (১ করি. ৭:১০, ১১; ১ পিতর ৩:১, ২) তাই আপনার বিবাহসাথি যাতে নিরাপদ বোধ করেন, সেইজন্য কঠোর পরিশ্রম করুন। আপনার কথা ও কাজের মাধ্যমে, আপনার সাথিকে বার বার এই আশ্বাস দেওয়ার বিভিন্ন উপায় খুঁজুন যে, এই পৃথিবীতে তিনিই আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আপনার পক্ষে যতদূর সম্ভব চেষ্টা করুন যে, আপনার ও আপনার সাথির মধ্যে কেউই বা কোনো কিছুই যেন আসতে না পারে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৫:১৫-২০.) রন ও জেনেট, যারা ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে, তারা বলেছে যে, “ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যা চান, সেগুলো যেহেতু আমরা অনুগতভাবে করি, তাই আমরা এক সুখী, পরিতৃপ্তিদায়ক বিবাহিত জীবন উপভোগ করছি।”

একতা বিয়েকে শক্তিশালী করে

১১, ১২. কীভাবে আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা পরস্পর সহযোগিতা করেছিল (ক) ঘরে (খ)  পেশার ক্ষেত্রে (গ) খ্রিস্টীয় পরিচর্যায়?

১১ প্রেরিত পৌল যখনই তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা সম্বন্ধে বলতেন, তখনই তিনি তাদের দুজনের বিষয়ে একসঙ্গে উল্লেখ করতেন। একজন স্বামী ও স্ত্রীর “একাঙ্গ” হওয়া উচিত বলতে ঈশ্বর যা বুঝিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধ এই দম্পতি হল এক উত্তম উদাহরণ। (আদি. ২:২৪) তারা সবসময় একসঙ্গে তাদের ঘরে, পেশার ক্ষেত্রে ও খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় কাজ করত। উদাহরণস্বরূপ, পৌল যখন প্রথম করিন্থে গিয়েছিলেন, তখন আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা সদয়ভাবে তাকে তাদের ঘরে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যেটাকে তিনি সম্ভবত পরে কিছু সময়ের জন্য তার পরিচর্যা কাজের মূল স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। পরে, ইফিষে তারা মণ্ডলীর সভাগুলো করার জন্য তাদের ঘর ব্যবহার করেছিল আর তারা আপল্লোর মতো নতুন ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করার জন্য একসঙ্গে কাজ করেছিল। (প্রেরিত ১৮:২, ১৮-২৬) এই উদ্যোগী দম্পতি এরপর রোমে গিয়েছিল, যেখানে তারা আবারও মণ্ডলীর সভাগুলোর জন্য তাদের ঘর উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, তারা ভাইবোনদের শক্তিশালী করতে ইফিষে ফিরে গিয়েছিল।—রোমীয় ১৬:৩-৫.

১২ একটা সময়ে আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা, পৌলের সঙ্গে একই পেশায় অর্থাৎ তাঁবু তৈরির কাজে রত ছিল। আমরা আবারও এই দম্পতিকে একসঙ্গে দেখতে পাই, যারা কোনোরকম প্রতিযোগিতা বা দ্বন্দ্ব ছাড়াই পরস্পরকে সহযোগিতা করেছিল। (প্রেরিত ১৮:৩) তবে, নিশ্চিতভাবেই যে-সময়টা তারা খ্রিস্টীয় কার্যকলাপে একসঙ্গে কাটিয়েছিল, সেটাই তাদের বিয়েকে আধ্যাত্মিকভাবে এক উচ্চ অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিল। করিন্থ, ইফিষ অথবা রোম, যেখানেই থাকুক না কেন, তারা ‘খ্রীষ্ট যীশুতে সহকারী’ হিসেবে সুপরিচিত ছিল। (রোমীয় ১৬:৩) তারা যেখানেই সেবা করুক না কেন, রাজ্যের প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা একসঙ্গে কাজ করেছিল।

১৩, ১৪. (ক) কোন পরিস্থিতিগুলো একটা বিয়ের একতার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে? (খ) কিছু বিষয় কী, যেগুলো বিবাহসাথিরা “একাঙ্গ” হিসেবে তাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য করতে পারে?

১৩ বস্তুতপক্ষে, বিভিন্ন লক্ষ্য ও কাজের মধ্যে একতা থাকা, একটা বিয়েকে শক্তিশালী করে। (উপ. ৪:৯, ১০) দুঃখের বিষয়টা হল, অনেক দম্পতি বর্তমানে একসঙ্গে খুব অল্প সময়ই কাটিয়ে থাকে। তারা আলাদা আলাদা চাকরিতে দীর্ঘসময় কাজ করে। অন্যদেরকে চাকরির কারণে অনেকটা দূরে ভ্রমণ করতে হয় কিংবা বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য একা একা বিদেশে গিয়ে কাজ করতে হয়। এমনকী ঘরেও, কিছু বিবাহিত সঙ্গী টেলিভিশন, বিভিন্ন শখ, খেলাধুলা, ভিডিও গেমস্‌ বা ইন্টারনেটের পিছনে সময় ব্যয় করার কারণে নিজেদেরকে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পায়। আপনাদের পরিবারের ক্ষেত্রেও কি এইরকমটা দেখা যায়? যদি তা দেখা যায়, তাহলে আপনারা কি আপনাদের পরিস্থিতিকে রদবদল করতে পারেন, যাতে আপনারা একসঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে পারেন? খাবার প্রস্তুত করা, থালাবাসন ধোয়া অথবা বাগান করার মতো সাধারণ কিছু কাজে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কী বলা যায়? সন্তানদের যত্ন নেওয়ার কিংবা বয়স্ক বাবা-মাকে সাহায্য করার সময়ে আপনারা কি একসঙ্গে কাজ করতে পারেন?

১৪ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিয়মিতভাবে যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজকর্মে একসঙ্গে সময় কাটান। একসঙ্গে প্রতিদিনের শাস্ত্রপদ পড়া ও পারিবারিক উপাসনায় অংশ নেওয়া আপনাদের পরিবারের চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্যগুলোকে একতাবদ্ধ রাখার চমৎকার সুযোগ প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া, একসঙ্গে পরিচর্যায় অংশ নিন। সম্ভব হলে একসঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করার চেষ্টা করুন, এমনকী আপনাদের পরিস্থিতির কারণে আপনারা যদি শুধুমাত্র এক মাস কিংবা এক বছরের জন্যও তা করতে পারেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.) একজন বোন, যিনি তার স্বামীর সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করতেন, তিনি বলেন: “অনেক উপায়ের মধ্যে পরিচর্যা হল একটা উপায়, যেটার মাধ্যমে আমরা একত্রে সময় কাটাতে ও সত্যি সত্যিই কথা বলতে পারতাম। যেহেতু আমাদের দুজনেরই অন্যদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করার বিষয়ে একই লক্ষ্য ছিল, তাই আমার মনে হতো যে, আমরা আসলে একটা টিম হিসেবে কাজ করছি। আমি নিজেকে তার খুব কাছের বলে মনে করতাম আর তা শুধু স্বামী হিসেবেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এক উত্তম বন্ধু হিসেবেও।” আপনি যখন অর্থপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য একসঙ্গে কাজ করেন, তখন আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো, অগ্রাধিকারগুলো এবং শখগুলো ধীরে ধীরে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লার মতো আপনারাও চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং কাজের ক্ষেত্রে দিন দিন “একাঙ্গ” হয়ে উঠবেন।

আধ্যাত্মিকতা যেন আপনাদের পরিচালনা দেয়

১৫. এক সফল বিয়ের চাবিকাঠি কী? ব্যাখ্যা করুন।

১৫ যিশু বিয়ের মধ্যে ঈশ্বরকে প্রথমে রাখার গুরুত্ব সম্বন্ধে জানতেন। তিনি যিহোবাকে প্রথম বিয়ে দিতে দেখেছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদম ও হবা ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলেছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কত সুখীই না ছিল আর সেইসঙ্গে তারা সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করার ফলে যে-সমস্যা এসেছিল, সেটাও তিনি সরাসরি দেখেছিলেন। তাই যিশু যখন অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তখন তিনি আদিপুস্তক ২:২৪ পদে প্রাপ্ত তাঁর পিতার নির্দেশনাকে পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এই মতামতটাও যুক্ত করেছিলেন: “ঈশ্বর যাহা যোগ করিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৬) তাই, যিহোবার প্রতি গভীর সম্মান এখনও সুখী ও সফল বিয়ের চাবিকাঠি। এই ক্ষেত্রে, যিশুর পার্থিব বাবা-মা যোষেফ ও মরিয়ম এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

১৬. কীভাবে যোষেফ ও মরিয়ম তাদের পারিবারিক জীবনে আধ্যাত্মিকতা প্রদর্শন করেছিলেন?

১৬ যোষেফ মরিয়মের প্রতি সদয় ও সম্মানজনক আচরণ করেছিলেন। তিনি যখন প্রথম জানতে পেরেছিলেন যে মরিয়ম গর্ভবতী, তখন তিনি এমনকী ঈশ্বরের স্বর্গদূত তার কাছে মরিয়মের প্রতি কী ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করার আগেই, মরিয়মের সঙ্গে করুণাপূর্ণ আচরণ করতে চেয়েছিলেন। (মথি ১:১৮-২০) এক দম্পতি হিসেবে, তারা কৈসরের আদেশ মান্য করেছিল আর মোশির ব্যবস্থাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করত। (লূক ২:১-৫, ২১, ২২) আর যদিও শুধুমাত্র পুরুষরাই যিরূশালেমের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধ্য ছিল কিন্তু যোষেফ এবং মরিয়ম একসঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতি বছর সেখানে যোগদান করত। (দ্বিতীয়. ১৬:১৬; লূক ২:৪১) এভাবে ও অন্যান্য উপায়ে এই ঈশ্বরভয়শীল দম্পতি যিহোবাকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য গভীর সম্মান প্রদর্শন করেছিল। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিহোবা তাঁর পুত্র যিশুর পার্থিব জীবনের প্রথম দিকে যত্ন নেওয়ার জন্য তাদেরকে বেছে নিয়েছিলেন।

১৭, ১৮. (ক) কোন উপায়ে এক দম্পতি তাদের পরিবারে আধ্যাত্মিকতাকে প্রথমে রাখতে পারে? (খ) কীভাবে এটা তাদেরকে উপকৃত করবে?

১৭ আধ্যাত্মিকতা কি একইভাবে আপনাদের পারিবারিক জীবনেও নির্দেশনা দেয়? উদাহরণস্বরূপ, আপনারা যখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনারা কি প্রথমে বাইবেলের নীতিগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, সেই বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করেন আর এরপর পরিপক্ব খ্রিস্টানদের কাছে পরামর্শ খোঁজেন? অথবা আপনারা কি আপনাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা কিংবা পরিবারের ও বন্ধুবান্ধবের চিন্তাভাবনা অনুসরণ করার দ্বারা সমস্যাগুলো সমাধান করতে চান? আপনারা কি বিয়ে ও পারিবারিক জীবনের ওপর বিশ্বস্ত বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা প্রকাশিত বিভিন্ন ব্যবহারিক পরামর্শ কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করেন? নাকি আপনারা নিজেদেরকে শুধুমাত্র স্থানীয় প্রথা অথবা জগতের জনপ্রিয় পরামর্শ কাজে লাগাতে দেখেন? আপনারা কি নিয়মিতভাবে একসঙ্গে প্রার্থনা ও অধ্যয়ন করেন, আধ্যাত্মিক লক্ষ্য স্থাপন করেন এবং আপনাদের পরিবারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন?

১৮ রে নামে এক ভাই তাদের ৫০ বছরের সুখী বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বলেন: “আমরা কখনো এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি, যা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি আর এর কারণ হল আমরা যিহোবাকে আমাদের ‘ত্রিগুণ সূত্রের’ অংশ হিসেবে রেখেছিলাম।” (পড়ুন, উপদেশক ৪:১২.) ড্যানি ও ট্রিনাও এই ব্যাপারে একমত। “যেহেতু আমরা ঈশ্বরকে একসঙ্গে সেবা করেছি,” তারা বলে, “তাই আমাদের বৈবাহিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছে।” তারা ৩৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে। আপনারা যদি সবসময় যিহোবাকে আপনাদের বিয়ের মধ্যে প্রথমে রাখেন, তাহলে তিনি আপনাদেরকে সফল হতে সাহায্য করবেন ও প্রচুররূপে আশীর্বাদ করবেন।—গীত. ১২৭:১.

ঈশ্বরের দানকে ক্রমাগত সম্মান করুন

১৯. কেন ঈশ্বর বিয়েকে এক দান হিসেবে জুগিয়েছেন?

১৯ বর্তমানে অনেকের জন্য একমাত্র যে-বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, তাদের ব্যক্তিগত সুখ। কিন্তু, যিহোবার একজন দাস বিষয়গুলোকে ভিন্নভাবে দেখে থাকে। তিনি জানেন যে, ঈশ্বর বিয়েকে এক দান হিসেবে জুগিয়েছেন, যেন তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়। (আদি. ১:২৬-২৮) যদি সেই দানের প্রতি আদম ও হবার সম্মান থাকত, তাহলে পুরো পৃথিবী সুখী এবং ঈশ্বরের ধার্মিক দাসদের দ্বারা পরিপূর্ণ এক পরমদেশ হয়ে উঠত।

২০, ২১. (ক) কেন আমাদের বিয়েকে পবিত্র হিসেবে দেখা উচিত? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কোন দান সম্বন্ধে অধ্যয়ন করব?

২০ সর্বোপরি, ঈশ্বরের দাসেরা বিয়েকে যিহোবার গৌরব নিয়ে আসার জন্য এক সুযোগ হিসেবে দেখে থাকে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৩১.) আমরা যেমন দেখেছি, আনুগত্য, একতা এবং আধ্যাত্মিকতা হল ঈশ্বরীয় গুণাবলি, যা বিবাহকে শক্তিশালী করবে। তাই, আমরা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিই অথবা এটাকে শক্তিশালী করি কিংবা তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি, যা-ই হোক না কেন, আমাদের বিয়েকে অবশ্যই এক ঐশিক ও পবিত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে হবে। সেই সত্যটা মনে রাখা, আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে বৈবাহিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত করবে। এভাবে আমরা শুধুমাত্র বিয়ের দানের প্রতিই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এর দাতা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিও সম্মান দেখাই।

২১ অবশ্য, বিয়ে আমাদের জন্য যিহোবার দেওয়া একমাত্র দান নয়; অথবা এটাই জীবনে সুখী হওয়ার একমাত্র উপায় নয়। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত আরেকটা মূল্যবান দান—অবিবাহিত থাকার দান—সম্বন্ধে দেখব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে বিবাহিত খ্রিস্টানদের আনুগত্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত?

• কেন ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে কাজ করা একটা বিয়েকে শক্তিশালী করবে?

• কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে বিবাহিত ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকতার দ্বারা পরিচালিত হতে পারে?

• কীভাবে আমরা বিয়ের উদ্যোক্তা যিহোবার প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

একসঙ্গে কাজ করা দম্পতিদের একতাবদ্ধ থাকতে সাহায্য করে