সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘যিহোবার নামে আশ্রয় নিন’

‘যিহোবার নামে আশ্রয় নিন’

‘যিহোবার নামে আশ্রয় নিন’

“আমি অবশ্যই . . . নম্র ও বিনীত লোকেদের অবশিষ্ট রাখব আর তারা সত্যিই যিহোবার নামে আশ্রয় নেবে।”—সফ. ৩:১২, NW.

১, ২. কোন রূপক ঝড় শীঘ্র মানবজাতিকে আঘাত করবে?

 যাত্রা করার সময়, আপনাকে কি কখনো ঝড়বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টির সময়ে একটা ব্রিজের নীচে আশ্রয় নিতে হয়েছে? একটা ব্রিজের নীচে আশ্রয় নেওয়া হয়তো ঝড়বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টির সময়ে আপনাকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে পারে কিন্তু যদি কোনো টর্নেডো বা হারিকেন আসতে থাকে, তাহলে সেটা হয়তো সামান্যই সুরক্ষা জোগাবে।

ভিন্ন ধরনের এক ঝড় আসতে যাচ্ছে—এমন ঝড়, যা মানবজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। এটা এক রূপক ‘নাশের [“ঝড়ের,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] দিন।’ “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW]” এই “মহাদিন” সমস্ত মানবজাতিকে প্রভাবিত করবে। তবে, আমরা এমন আশ্রয় খুঁজে পেতে পারি, যা আমাদের প্রয়োজন। (পড়ুন, সফনিয় ১:১৪-১৮.) কীভাবে আমরা “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ক্রোধের দিনে” তা খুঁজে পেতে পারি, যা শীঘ্রই শুরু হবে?

বাইবেলের সময়কার ঝড়

৩. ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের ওপর কোন ‘ঝড়’ এসেছিল?

পৃথিবীতে সমস্ত মিথ্যা ধর্মীয় বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের দ্বারা যিহোবার দিন শুরু হবে। কীভাবে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া যায়, সেটার উত্তর পাওয়ার জন্য আমরা ঈশ্বরের প্রাচীন লোকেদের ইতিহাস অনুসন্ধান করে দেখতে পারি। যিশাইয়, যিনি সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীতে বাস করতেন, তিনি ইস্রায়েলের ধর্মভ্রষ্ট দশ বংশের রাজ্যের ওপর আসা যিহোবার বিচারকে “ধারাসম্পাতের [“ঝড়ের,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যে-ঝড়কে লোকেরা রোধ করতে পারবে না। (পড়ুন, যিশাইয় ২৮:১, ২.) সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন অশূর সেই বংশগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ইফ্রয়িমের এলাকাগুলোকে আক্রমণ করেছিল, যা দশ বংশের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট ছিল।

৪. কীভাবে সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ওপর “যিহোবার মহাদিন” এসেছিল?

এরপর সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে, যিরূশালেম এবং যিহূদা রাজ্যের ওপর “যিহোবার মহাদিন” আসার মাধ্যমে অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলের ওপর বিচার এসেছিল। এই বিচার এসেছিল কারণ যিহূদার লোকেরাও ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। নবূখদ্‌নিৎসরের নেতৃত্বাধীনে বাবিলীয়রা যিহূদা ও এর রাজধানী যিরূশালেমকে হুমকি দিয়েছিল। যিহুদিরা সাহায্যের জন্য “অলীকতারূপ আশ্রয়” অর্থাৎ মিশরের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক মিত্রতার ওপর নির্ভর করেছিল। তা সত্ত্বেও, ধ্বংসাত্মক শিলাবৃষ্টির মতো বাবিলীয়রা সেই ‘আশ্রয়কে’ ধ্বংস করে দিয়েছিল।—যিশা. ২৮:১৪, ১৭.

৫. কীভাবে ঈশ্বরের লোকেরা সমস্ত মিথ্যা ধর্মের ধ্বংসের সময় একটা দল হিসেবে রক্ষা পাবে?

যিহোবার মহাদিন, যা যিরূশালেমে আঘাত করেছিল, তা আমাদের সময়কার ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টীয়জগতের ওপর যে-বিচার আসতে যাচ্ছে, সেটার এক ইঙ্গিত ছিল। অধিকন্তু, ‘মহতী বাবিলের’ বাকি অংশ অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বাকি অংশকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হবে। কিন্তু, ঈশ্বরের লোকেরা একটা দল হিসেবে রক্ষা পাবে কারণ তারা যিহোবাতে আশ্রয় নিচ্ছে।—প্রকা. ৭:১৪; ১৮:২, ৮; ১৯:১৯-২১.

আধ্যাত্মিক ও দৈহিক আশ্রয়

৬. কীভাবে যিহোবার লোকেরা আশ্রয় খুঁজে পেতে পারে?

কীভাবে ঈশ্বরের লোকেরা এমনকী এখনই, এই শেষকালেই আশ্রয় খুঁজে পেতে পারে? “[ঈশ্বরের] নাম” প্রার্থনাপূর্বক ‘ধ্যান করিবার’ এবং উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর সেবা করার মাধ্যমে আমরা আধ্যাত্মিক আশ্রয় খুঁজে পেতে পারি। (পড়ুন, মালাখি ৩:১৬-১৮.) কিন্তু, আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদেরকে কেবল তাঁর নাম নিয়ে ধ্যান করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমরা পড়ি: “যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।” (রোমীয় ১০:১৩) যিহোবার নামে ডাকা এবং এর ফলে তাঁর কাছ থেকে পরিত্রাণ লাভ করা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আর সৎহৃদয়ের অনেক ব্যক্তি সত্য খ্রিস্টান এবং তাঁর সেবা করে না এমন মানবজাতির মধ্যে পার্থক্যটা দেখতে পায়। এই সত্য খ্রিস্টানরা হল সেই লোকেরা, যারা সশ্রদ্ধ ভয় সহকারে ‘তাঁহার নাম ধ্যান করে’—আর তাঁর সাক্ষি হিসেবে সেবা করে।

৭, ৮. কোন উপায়ে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা দৈহিক পরিত্রাণ লাভ করেছিল আর এর সঙ্গে বর্তমানে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?

তবে, আমরা যে-পরিত্রাণ লাভ করতে পারি, তা কেবল আধ্যাত্মিক আশ্রয় খোঁজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঈশ্বরের লোকেদের জন্য দৈহিক পরিত্রাণের প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। সা.কা. ৬৬ সালে, সেস্টিয়াস গ্যালাসের নেতৃত্বাধীনে রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেম আক্রমণ করার পর যা ঘটেছিল, সেটা থেকে আমরা এর ইঙ্গিত পাই। যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, সেই ক্লেশের দিনের ‘সংখ্যা কমাইয়া’ দেওয়া হবে। (মথি ২৪:১৫, ১৬, ২১, ২২) তা-ই ঘটেছিল, যখন রোমীয় সেনাবাহিনী অপ্রত্যাশিতভাবে নগরের অবরোধ তুলে নিয়েছিল, যা কিছু ‘প্রাণীকে’ মূলত সত্য খ্রিস্টানদের “রক্ষা” পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। তারা নগর ও এর কাছাকাছি এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। কেউ কেউ যর্দন নদী পার হয়ে এর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়গুলোতে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল।

আমরা সেই সময়কার খ্রিস্টান এবং বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে এক সাদৃশ্য খুঁজে পেতে পারি। অতীতে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা আশ্রয় খুঁজেছিল আর বর্তমানেও ঈশ্বরের দাসেরা তা-ই করে থাকে। কিন্তু, এইবার এর সঙ্গে নির্দিষ্ট একটা ভূখণ্ডে আক্ষরিকভাবে পলায়ন করার বিষয়টা জড়িত থাকবে না কারণ সত্য খ্রিস্টানরা বিশ্বের সমস্ত জায়গায় রয়েছে। তা সত্ত্বেও, একটা দল হিসেবে ‘মনোনীতরা’ ও সেইসঙ্গে তাদের অনুগত সহযোগীরা, যিহোবাতে এবং তাঁর পর্বততুল্য সংগঠনে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টীয়জগতের ধ্বংসের সময় দৈহিক সুরক্ষা লাভ করবে।

৯. যিহোবার নামকে যেন ভুলে যাওয়া হয়, সেই ব্যাপারে কারা অপপ্রচেষ্টা চালিয়েছিল? একটা উদাহরণ দিন।

অন্যদিকে, আসন্ন ধ্বংসটা খ্রিস্টীয়জগতের প্রাপ্য কারণ খ্রিস্টীয়জগৎ গির্জাগামী লোকেদের আধ্যাত্মিক অজ্ঞতার জন্য দায়ী আর সেইসঙ্গে এটা ঈশ্বরের নামের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে থাকে। এর বিপরীতে, মধ্যযুগে ইউরোপে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল। সেই নাম, যেটিকে টেট্রাগ্র্যামাটোন বলে অভিহিত চারটি ইব্রীয় বর্ণ দ্বারা তুলে ধরা হতো ও সাধারণত YHWH (বা JHVH) হিসেবে প্রতিবর্ণীকরণ করা হতো, সেটিকে বিভিন্ন মুদ্রায়, ঘরবাড়ির সম্মুখভাগে, অনেক বইয়ে এবং বাইবেলে আর এমনকী কিছু ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট গির্জায়ও দেখা যেত। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ের সাধারণ প্রবণতা হল, বাইবেলের বিভিন্ন অনুবাদ থেকে এবং অন্যান্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নাম উঠিয়ে দেওয়া। এটার একটা প্রমাণ হচ্ছে, ‘ঈশ্বরের নামের’ ওপর বিশপদের কনফারেন্সের উদ্দেশে ২০০৮ সালের ২৯ জুন তারিখ দেওয়া একটা চিঠি, যেটা ঐশিক উপাসনা এবং ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানের নিয়মকানুনের জন্য মণ্ডলী কর্তৃক পাঠানো হয়েছিল। এই চিঠিতে রোমান ক্যাথলিক চার্চ পরামর্শ দিয়েছিল যে, টেট্রাগ্র্যামাটোনের যে-বিভিন্ন অনুবাদ রয়েছে, সেগুলোর স্থলে “প্রভু” শব্দটি দেওয়া উচিত। ভ্যাটিকান নির্দেশ দিয়েছিল যে, ক্যাথলিকদের ধর্মীয় উপাসনার সময়ে স্তোত্র ও প্রার্থনায় ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম ব্যবহার বা উচ্চারণ করা উচিত হবে না। এ ছাড়া, খ্রিস্টীয়জগতের ভিতরে ও বাইরে অন্যান্য ধর্মীয় নেতারাও লক্ষ লক্ষ উপাসকের কাছে সত্য ঈশ্বরের পরিচয় গুপ্ত রেখেছে।

ঈশ্বরের নামকে পবিত্রীকৃত করে এমন ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষা

১০. কীভাবে বর্তমানে ঈশ্বরের নামকে সম্মানিত করা হচ্ছে?

১০ অন্যান্য ধর্ম যা করছে সেটার একেবারে বিপরীতে, যিহোবার সাক্ষিরা ঐশিক নামকে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করে। তারা এই নামকে মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করার মাধ্যমে পবিত্রীকৃত করে। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের দেখে আনন্দিত হন, যারা তাঁর ওপর নির্ভরতা রাখে আর তিনি তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ ও সুরক্ষা করার জন্য যা হওয়া প্রয়োজন, তা-ই হন। “যাহারা তাঁহার শরণ” বা আশ্রয় “লয়, তিনি তাহাদিগকে জানেন।”—নহূম ১:৭; প্রেরিত ১৫:১৪.

১১, ১২. প্রাচীন যিহূদায় কারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিল আর আধুনিক দিনে কারা তা বজায় রাখছে?

১১ যদিও প্রাচীন যিহূদার অধিকাংশ লোক ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল কিন্তু তাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ ছিল, যারা “যিহোবার নামে আশ্রয়” নিয়েছিল। (পড়ুন, সফনিয় ৩:১২, ১৩.) হ্যাঁ, ঈশ্বর যখন যিহূদাকে পরাজিত করার ও এর লোকেদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবিলীয়দের সুযোগ দিয়ে অবিশ্বস্ত যিহূদাকে শাস্তি দিয়েছিলেন, তখন কিছু ব্যক্তি যেমন, যিরমিয়, বারূক এবং এবদ-মেলক রক্ষা পেয়েছিল। তারা এক ধর্মভ্রষ্ট জাতির “মধ্যে” বাস করত। অন্যেরা বন্দিত্বে থাকাকালীন বিশ্বস্ত থেকেছিল। সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে, কোরসের নেতৃত্বাধীনে মাদীয় ও পারসীকরা বাবিলকে পরাজিত করেছিল। অল্পসময়ের মধ্যেই কোরস একটা অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন, যার ফলে অবশিষ্ট যিহুদিরা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।

১২ যারা সত্য উপাসনার পুনর্স্থাপন দেখতে পাবে, তাদের সম্বন্ধে সফনিয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, যিহোবা তাদের রক্ষা করবেন ও তাদের বিষয়ে আনন্দ করবেন। (পড়ুন, সফনিয় ৩:১৪-১৭.) আমাদের দিনেও তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপিত হওয়ার পর, যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশিষ্টাংশকে মহতী বাবিলের আধ্যাত্মিক বন্দিত্ব থেকে উদ্ধার করেছেন। আর তিনি এখনও তাদের বিষয়ে আনন্দ করেন।

১৩. সমস্ত জাতির লোকেরা কোন স্বাধীনতা উপভোগ করছে?

১৩ এ ছাড়া, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তারা মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে এসেছে এবং মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলো থেকে আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা উপভোগ করে। (প্রকা. ১৮:৪) এভাবে সফনিয় ২:৩ পদের এই কথাগুলো আমাদের সময়ে ব্যাপক আকারে পরিপূর্ণ হচ্ছে: “হে দেশস্থ নম্র লোক, . . . তোমরা সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অন্বেষণ কর।” সমস্ত জাতির নম্র লোকেরা এখন যিহোবার নামে আশ্রয় নিচ্ছে, তা তাদের স্বর্গীয় কিংবা পার্থিব আশা যা-ই থাকুক না কেন।

ঈশ্বরের নাম কোনো রক্ষাকবচ নয়

১৪, ১৫. (ক) কেউ কেউ কোন বিষয়গুলোকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করেছে? (খ) কোন বিষয়কে কবচ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়?

১৪ কিছু ইস্রায়েলীয় মন্দিরকে এমন এক রক্ষাকবচ হিসেবে দেখত, যা তাদেরকে শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষা করবে। (যির. ৭:১-৪) এর আগে, ইস্রায়েলীয়রা নিয়ম সিন্দুককে এমন একটা কবচ হিসেবে দেখত, যা তাদেরকে যুদ্ধে সুরক্ষা করবে। (১ শমূ. ৪:৩, ১০, ১১) মহান কনস্ট্যানটিন তার সৈন্যদের ঢালের ওপর গ্রিক ভাষায় “খ্রিস্ট” নামের প্রথম দুটো বর্ণ খি এবং রোহ্‌ এঁকে দেন, এই আশায় যে, এগুলো যুদ্ধে তার সৈন্যদের সুরক্ষা করবে। আর সুইডেনের রাজা গুস্তাভ অ্যাডল্ফ ২য়, যিনি ইউরোপে এক মারাত্মক ধর্মীয় যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তিনি ৭ পৃষ্ঠার ছবিতে দেখানো কলারটা পরিধান করেছিলেন বলে মনে করা হয়। লক্ষ করুন যে, “ইহোভা” নামটি কলারের ওপর লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

১৫ ঈশ্বরের কিছু লোক, যাদেরকে মন্দদূতেরা আক্রমণ করেছিল, তারা জোরে জোরে যিহোবা নামটি বলার মাধ্যমে তাতে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। তবে, ঈশ্বরের নাম রয়েছে এমন একটা বস্তুকে এই ভেবে কোনো রক্ষাকবচ বলে মনে করা অথবা রোজকার জীবনে এক কবচ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় যে, এটার সুরক্ষা করার জাদুকরি শক্তি রয়েছে। যিহোবার নামে আশ্রয় নেওয়ার অর্থ এটা নয়।

বর্তমান দিনে আশ্রয় নেওয়া

১৬. বর্তমান দিনে কীভাবে আমরা আধ্যাত্মিক আশ্রয় লাভ করতে পারি?

১৬ বর্তমান দিনে আমরা আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার মধ্যে আশ্রয় খুঁজে পেতে পারি, যা ঈশ্বরের লোকেরা একটা দল হিসেবে উপভোগ করে থাকে। (গীত. ৯১:১) “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের মাধ্যমে আমাদেরকে জগতের সেই প্রবণতা সম্বন্ধে সতর্ক করে দেওয়া হয়, যা কিনা এই নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; যিশা. ৩২:১, ২) চিন্তা করে দেখুন যে, কত বার আমাদেরকে বস্তুবাদিতা সম্বন্ধে সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছে এবং বিবেচনা করে দেখুন যে, কীভাবে এই সাবধানবাণীগুলো আমাদেরকে আধ্যাত্মিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা করেছে। আর নিশ্চিন্ততার মনোভাব গড়ে তোলার বিপদ সম্বন্ধে কী বলা যায়, যা আমাদেরকে যিহোবার সেবায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে? ঈশ্বরের বাক্য বলে: “হীনবুদ্ধিদের নিশ্চিন্ততা তাহাদিগকে বিনষ্ট করিবে; কিন্তু যে জন আমার কথা শুনে, সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।” (হিতো. ১:৩২, ৩৩) নৈতিকভাবে বিশুদ্ধ থাকার প্রচেষ্টা করাও আমাদেরকে সবসময় আধ্যাত্মিকভাবে নিরাপদ থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

১৭, ১৮. কী বর্তমানে লক্ষ লক্ষ লোককে যিহোবার নামে আশ্রয় নিতে সাহায্য করছে?

১৭ এ ছাড়া, সমুদয় জগতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে যিশুর আজ্ঞা মেনে চলার ব্যাপারে বিশ্বস্ত দাসের কাছ থেকে যে-উৎসাহ লাভ করা যায়, সেই বিষয়টাও ভেবে দেখুন। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) সফনিয় এমন একটা পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন, যা লোকেদেরকে ঈশ্বরের নামে আশ্রয় নিতে সাহায্য করবে। আমরা পড়ি: “তৎকালে আমি জাতিগণকে [‘লোকেদের পরিবর্তন করে,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন ] বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।”—সফ. ৩:৯.

১৮ এই বিশুদ্ধ ওষ্ঠ বা ভাষা কী? এই বিশুদ্ধ ভাষা হল, যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সত্য, যেগুলো তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যের মধ্যে পাওয়া যায়। এক অর্থে আপনি সেই ভাষা ব্যবহার করছেন, যখন আপনি অন্যদেরকে ঈশ্বরের রাজ্য এবং কীভাবে এটা তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করবে, সেই সম্বন্ধে সঠিক বিষয়টা জানান, যখন আপনি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন করার ওপর জোর দেন এবং যখন আপনি বিশ্বস্ত মানুষরা যে-অনন্ত আশীর্বাদ লাভ করবে, সেই সম্বন্ধে আনন্দের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকে এই রূপক ভাষায় কথা বলছে আর তাই দিন দিন বৃদ্ধিরত লোকেরা ‘যিহোবার নামে ডাকিতেছে’ এবং ‘একযোগে তাঁহার আরাধনা করিতেছে।’ হ্যাঁ, সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ লোক এখন যিহোবাতে আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে।—গীত. ১:১, ৩.

১৯, ২০. বাইবেলের সময়ে, কীভাবে ‘অলীকতারূপ আশ্রয়ের’ ওপর নির্ভর করা ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছিল?

১৯ জগতের লোকেদের এমন সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যেগুলোকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হয়। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য মরিয়া হয়ে অনেকে অসিদ্ধ মানুষের শরণাপন্ন হয়। অথবা তারা হয়তো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সমাধান আশা করে থাকে, ঠিক যেমন প্রাচীন ইস্রায়েল কখনো কখনো সাহায্যের জন্য প্রতিবেশী জাতিগুলোর শরণাপন্ন হয়েছিল, তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছিল। তবে, আপনারা জানেন যে, এইরকমটা করা ইস্রায়েলকে সাহায্য করতে পারেনি। আর বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সরকার কিংবা রাষ্ট্রসংঘও মানবজাতির সমস্যাগুলো পুরোপুরিভাবে সমাধান করতে পারবে না। তাহলে কেন একজন ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবং মিত্রদেরকে এক আশ্রয় হিসেবে গণ্য করবে? বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলকভাবে সেগুলোকে “অলীকতারূপ আশ্রয়” বলে অভিহিত করে। আপনি উপযুক্ত কারণেই সেগুলোকে অলীক আশ্রয় হিসেবে গণ্য করতে পারেন, কারণ যারা এগুলোর ওপর নির্ভর করে, তারা সকলে একেবারে হতাশ হয়ে পড়বে।—পড়ুন, যিশাইয় ২৮:১৫, ১৭.

২০ শীঘ্র, যিহোবার দিনের রূপক শিলাবৃষ্টি পৃথিবীকে আঘাত করবে। বিভিন্ন মানবপরিকল্পনা, এমনকী পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অথবা ধনসম্পদও সুরক্ষা জোগাতে ব্যর্থ হবে। যিশাইয় ২৮:১৭ পদে উল্লেখ করা হয়েছে: “শিলাবৃষ্টি ঐ অলীকতারূপ আশ্রয় ফেলিয়া দিবে, এবং বন্যা ঐ লুকাইবার স্থান ভাসাইয়া লইয়া যাইবে।”

২১. আমরা ২০১১ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ মেনে চলার মাধ্যমে কোন উপকার উপভোগ করতে পারি?

২১ এখন ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যৎ ঘটনাগুলোর সময়ও ঈশ্বরের লোকেরা যিহোবা ঈশ্বরে প্রকৃত আশ্রয় খুঁজে পাবে। সফনিয়ের নাম, যেটার অর্থ “যিহোবা অন্তরাল হয়েছেন,” তা এই অন্তরাল বা লুকানোর স্থানের প্রকৃত উৎসের বিষয়ে উল্লেখ করে। উপযুক্তভাবেই, আমাদের জন্য ২০১১ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে এই বিজ্ঞ উপদেশ: ‘যিহোবার নামে আশ্রয় নিন।’ (সফ. ৩:১২) এমনকী এখনই আমরা তাঁর ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভর করার মাধ্যমে যিহোবার নামে আশ্রয় নিতে পারি এবং আমাদের তা নেওয়া উচিত। (গীত. ৯:১০) আসুন আমরা প্রতিদিন এই অনুপ্রাণিত আশ্বাস মনে রাখি: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম দৃঢ় দুর্গ; ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা পায়।”—হিতো. ১৮:১০.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কীভাবে এখনই আমরা যিহোবার নামে আশ্রয় নিতে পারি?

• কেন আমাদের ‘অলীকতারূপ আশ্রয়ের’ ওপর নির্ভর করা উচিত নয়?

• আমাদেরকে ভবিষ্যতের কোন আশ্রয় সম্বন্ধে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

২০১১ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হল: ‘যিহোবার নামে আশ্রয় নিন।’ —সফনিয় ৩:১২, NW.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Thüringer Landesmuseum Heidecksburg Rudolstadt, Waffensammlung “Schwarzburger Zeughaus”