সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আপনার জন্য যেগুলো করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করুন

যিহোবা আপনার জন্য যেগুলো করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করুন

যিহোবা আপনার জন্য যেগুলো করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করুন

যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার অল্প কিছু সময় পরেই, তাঁর দুজন শিষ্য যিরূশালেম থেকে ইম্মায়ূর দিকে যাচ্ছিল। “তাঁহারা কথোপকথন ও পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করিতেছেন, এমন সময়ে” লূকের সুসমাচারের বিবরণ বলে, “যীশু আপনি নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে গমন করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাঁহাদের চক্ষু রুদ্ধ হইয়াছিল, তাই তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না।” এরপর, যিশু তাদের বলেন: “তোমরা চলিতে চলিতে পরস্পর যে সকল কথা বলাবলি করিতেছ, সে সকল কি? তাঁহারা বিষণ্ণভাবে দাঁড়াইয়া রহিলেন।” কেন তারা বিষণ্ণ বা দুঃখিত ছিল? শিষ্যরা এইরকমটা মনে করেছিল যে, যিশু সেই সময়ের মধ্যে পরজাতীয়দের শাসন থেকে ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন কিন্তু সেই মুক্তি আসেনি। এর পরিবর্তে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর এই কারণেই তারা দুঃখিত ছিল।—লূক ২৪:১৫-২১; প্রেরিত ১:৬.

যিশু শিষ্যদের সঙ্গে যুক্তি করতে আরম্ভ করেন। “তিনি মোশি হইতে ও সমুদয় ভাববাদী হইতে আরম্ভ করিয়া সমুদয় শাস্ত্রে তাঁহার নিজের বিষয়ে যে সকল কথা আছে, তাহা তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিলেন।” বস্তুতপক্ষে, যিশুর পরিচর্যার সময় তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো অনেক ঘটনা ঘটেছিল! শিষ্যরা যখন যিশুর ব্যাখ্যা শুনেছিল, তখন তাদের দুঃখ আনন্দে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। পরে সেই সন্ধ্যায় তারা বলেছিল: “পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সহিত কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে আমাদের চিত্ত কি উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল না?” (লূক ২৪:২৭, ৩২) যিশুর শিষ্যদের প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

অপূর্ণ প্রত্যাশাগুলো কীভাবে আমাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে?

ইম্মায়ূর পথে সেই দুজন শিষ্য দুঃখিত ছিল কারণ তারা যে-ঘটনাগুলো ঘটবে বলে আশা করেছিল, সেগুলো ঘটেনি। তারা হিতোপদেশ ১৩:১২ পদের বর্ণনার মতো একইরকম অনুভব করেছিল: “আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক।” একইভাবে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ, যারা যিহোবাকে দশকের পর দশক ধরে বিশ্বস্তভাবে সেবা করছে, তারা চিন্তা করেছে যে, ইতিমধ্যেই “মহাক্লেশ” শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। (মথি ২৪:২১; প্রকা. ৭:১৪) এটা ঠিক যে, কিছু সময়ের জন্য হলেও এই ধরনের অপূর্ণ প্রত্যাশার কারণে দুঃখ লাগতে পারে।

কিন্তু মনে রাখবেন যে, যিশু সেই দুজন শিষ্যকে যে-ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো ইতিমধ্যেই—এমনকী তাদের জীবনকালেই—পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সেগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করার পর, তারা তাদের আনন্দ ফিরে পেয়েছিল। একইভাবে আমরাও নিজেদের মনের আনন্দ বজায় রাখতে ও হতাশার অনুভূতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি। মাইকেল নামে একজন অভিজ্ঞ খ্রিস্টান প্রাচীন এভাবে বলেছিলেন: “সেই বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন না, যেগুলো যিহোবা এখনও করেননি। এর বিপরীতে, ইতিমধ্যেই তিনি যেগুলো করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করুন।” সত্যিই এক উত্তম উপদেশ!

যিহোবা যেগুলো করেছেন

এমন কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়ের কথা চিন্তা করুন, যেগুলো যিহোবা ইতিমধ্যেই সম্পাদন করেছেন। যিশু বলেছিলেন: “যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে।” (যোহন ১৪:১২) বর্তমানে, ঈশ্বরের দাসেরা সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খ্রিস্টীয় কাজ সম্পাদন করছে। সত্তর লক্ষেরও বেশি লোক মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করে আছে। একটু ভেবে দেখুন, এর আগে আর কখনোই যিহোবার এত বিশ্বস্ত দাস পৃথিবীব্যাপী এত দেশে সক্রিয় ছিল না! “এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে,” যিশুর বলা এই ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক কথাগুলোকে যিহোবা পরিপূর্ণ করেছেন।

যিহোবা আমাদের জন্য আর কী করেছেন? রূপকভাবে বললে, তিনি সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদেরকে দুষ্ট জগৎ থেকে বের হয়ে তাঁর তৈরি আধ্যাত্মিক পরমদেশে প্রবেশ করতে সমর্থ করেছেন। (২ করি. ১২:১-৪) সেই পরমদেশের কিছু বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় করে নিন, যেগুলো আমাদের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্যক্তিগত অথবা কিংডম হলের লাইব্রেরির দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন। ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স-এর পাতায় পাতায় অথবা ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি অনুসন্ধান করুন। রেকর্ডকৃত বাইবেলের নাটক শুনুন। সাম্প্রতিক সম্মেলনে যা দেখেছেন ও শুনেছেন, সেগুলো মনে করে দেখুন। অধিকন্তু, আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে আমরা যে-গঠনমূলক মেলামেশা উপভোগ করি, সেই বিষয়টা চিন্তা করুন। যিহোবা প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য এবং প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজ—সত্যিই এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ—জোগানোর দ্বারা কত উদারতাই না দেখিয়েছেন!

গীতরচক দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ আমাদের পক্ষে তোমার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল ও তোমার সঙ্কল্প সকল।” (গীত. ৪০:৫) হ্যাঁ, ইতিমধ্যেই যিহোবা আমাদের জন্য যে-অপূর্ব বিষয়গুলো করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার এবং আমাদের প্রতি তিনি যে-প্রেমময় চিন্তা দেখিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবাকে সর্বান্তঃকরণে সেবার করার সময় বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য বজায় রাখার জন্য নবশক্তি লাভ করব।—মথি ২৪:১৩.

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করতে সাহায্য করেছিলেন, যেগুলো যিহোবা ইতিমধ্যেই তাদের জন্য করেছেন

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সাম্প্রতিক সম্মেলনে যা দেখেছেন ও শুনেছেন, সেগুলো মনে করে দেখুন