যেকোনো পরীক্ষা কাটিয়ে ওঠার জন্য শক্তি লাভ করা
যেকোনো পরীক্ষা কাটিয়ে ওঠার জন্য শক্তি লাভ করা
“যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলি. ৪:১৩.
১. কেন যিহোবার লোকেরা অনেক দুর্দশার মুখোমুখি হয়ে থাকে?
যিহোবার লোকেরা প্রায়ই কোনো না কোনো দুর্দশা ভোগ করে থাকে। কিছু পরীক্ষা আসে আমাদের অসিদ্ধতার জন্য অথবা আমরা যে-বিধিব্যবস্থায় বাস করি, সেটার কোনো প্রভাবের জন্য। আবার কিছু পরীক্ষা আসে, যারা ঈশ্বরকে সেবা করে এবং যারা করে না, তাদের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতার জন্য। (আদি. ৩:১৫) মানবইতিহাসের একেবারে শুরু থেকেই ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত দাসদেরকে ধর্মীয় তাড়না প্রতিহত করতে, সঙ্গীসাথিদের ক্ষতিকর চাপ প্রতিরোধ করতে এবং অন্যান্য সমস্ত দুর্দশা সহ্য করতে সাহায্য করেছেন। তাঁর পবিত্র আত্মা আমাদেরকেও একই বিষয় করার জন্য শক্তি প্রদান করতে পারে।
ধর্মীয় তাড়না প্রতিহত করতে সাহায্য করে
২. ধর্মীয় তাড়নার উদ্দেশ্য কী আর এটা কী ধরনের হতে পারে?
২ ধর্মীয় তাড়না হচ্ছে সেই হয়রানি অথবা ক্ষতি, যা লোকেদের ওপর তাদের বিশ্বাসের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ে আসা হয়। এর উদ্দেশ্য হল, এই ধরনের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেওয়া, বিশ্বাসের বৃদ্ধি রোধ করা অথবা বিশ্বাসীদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলা। তাড়না বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, কিছু সরাসরি, আবার কিছু সূক্ষ্ম। বাইবেল শয়তানের আক্রমণকে যুবসিংহ এবং সাপ, উভয়ের সঙ্গেই তুলনা করে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৯১:১৩.
৩. সিংহতুল্য ও সর্পতুল্য তাড়নার বৈশিষ্ট্য কী?
৩ একটা হিংস্র সিংহের মতো, শয়তান প্রায়ই নিষ্ঠুরতা, কারাবন্ধন অথবা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে খোলাখুলি ও সরাসরি আক্রমণ করেছে। (গীত. ৯৪:২০) বর্ষপুস্তক (ইংরেজি)-এর রিপোর্ট, যা আধুনিক দিনের যিহোবার সাক্ষিদের কাজ সম্বন্ধে বর্ণনা করে, সেগুলোতে এই ধরনের কলাকৌশলের অসংখ্য বিবরণ রয়েছে। বিদ্রোহী জনতা, যাদের মধ্যে কেউ কেউ পাদরি অথবা রাজনৈতিক গোঁড়া ব্যক্তিদের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছে, তারা বিভিন্ন জায়গায় ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। সিংহতুল্য এই আক্রমণ খুব কম লোককেই কাবু করতে পেরেছে। একটা সাপের মতো, দিয়াবলও গুপ্ত স্থান থেকে লোকেদের আক্রমণ করে আর সে সেটা তাদের মনকে কলুষিত করার এবং তার ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে তাদেরকে প্রতারিত করার জন্য করে থাকে। এই ধরনের আক্রমণ আমাদেরকে দুর্বল করে দেওয়ার অথবা আধ্যাত্মিকভাবে কলুষিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমরা উভয় ধরনের তাড়নাকে প্রতিহত করতে পারি।
৪, ৫. তাড়নার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সর্বোত্তম উপায় কী এবং কেন? একটা উদাহরণ দিন।
৪ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিভিন্ন তাড়না সম্বন্ধে কল্পনা করাটা, তাড়নার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সর্বোত্তম উপায় নয়। বাস্তব বিষয়টা হল, যেহেতু আমরা স্পষ্টভাবে জানি না যে, আমাদের কোন ধরনের তাড়নার মুখোমুখি হতে হবে, তাই এমন বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তেমন কোনো লাভ নেই, যা কখনো না-ও ঘটতে পারে। কিন্তু, এমন একটা বিষয় রয়েছে, যা আমরা করতে পারি। সফলভাবে তাড়না সহ্য করেছে এমন অধিকাংশ ব্যক্তি, শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী ব্যক্তিদের বিশ্বস্ত জীবনধারা ও সেইসঙ্গে যিশুর শিক্ষা এবং উদাহরণ সম্বন্ধে ধ্যান করার মাধ্যমে তাড়না সহ্য করতে পেরেছে। এটা তাদেরকে যিহোবার প্রতি তাদের প্রেমকে আরও গভীর করতে সাহায্য করেছে। এর ফলে, সেই প্রেম তাদেরকে তাদের সামনে আসা যেকোনো পরীক্ষা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছে।
৫ মালাউইতে আমাদের দুজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন। তাদেরকে রাজনৈতিক দলের কার্ড কেনার জন্য জোরাজুরি করার চেষ্টায়, এক উদ্ধত জনতা তাদেরকে মারধর করে, কাপড়চোপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং ধর্ষণ করার হুমকি দেয়। সেই জনতা তাদের কাছে এই মিথ্যা কথা বলে যে, এমনকী বেথেল পরিবারের সদস্যরাও রাজনৈতিক দলের কার্ড কিনেছে। বোনেরা কী উত্তর দিয়েছিল? “আমরা কেবল যিহোবা ঈশ্বরের সেবা করি। তাই, শাখা অফিসের ভাইয়েরা যদি কার্ড কিনেও থাকে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। এমনকী আপনারা যদি আমাদের মেরেও ফেলেন, তবুও আমরা আপোশ করব না!” এইরকম সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার পর, বোনেরা মুক্তি পেয়েছিল।
৬, ৭. কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের তাড়নার মুখোমুখি হতে শক্তি প্রদান করেন?
৬ প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, থিষলনীকীয়ের খ্রিস্টানরা “বহু ক্লেশের মধ্যে” সত্যের বার্তা গ্রহণ করেছিল, তবে ‘পবিত্র আত্মার আনন্দ’ সহকারে। (১ থিষল. ১:৬) বস্তুতপক্ষে, অতীত ও বর্তমানের অনেক খ্রিস্টান, যারা তাড়নার মুখোমুখি হয়েছে এবং তা কাটিয়ে উঠেছে, তারা বলে যে, প্রচণ্ড তাড়নার মধ্যেও তারা মনের শান্তি লাভ করেছে, যা হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের একটা দিক। (গালা. ৫:২২) ফল স্বরূপ, সেই শান্তি তাদেরকে নিজেদের হৃদয় ও মানসিক শক্তিকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর দাসদেরকে পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার এবং দুর্দশা আসলে বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করার জন্য শক্তি প্রদান করতে তাঁর সক্রিয় শক্তি ব্যবহার করেন। *
৭ যে-লোকেরা আমাদের লক্ষ করে, তারা ঈশ্বরের লোকেদের এমনকী প্রচণ্ড তাড়নার মধ্যেও তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার দৃঢ়সংকল্প দেখে বিস্মিত হয়েছে। সাক্ষিদের দেখে মনে হয়েছিল যেন তারা অতিমানবীয় শক্তিতে পূর্ণ হয়েছে আর সত্যিই তাদের বেলায় এমনটা ঘটেছিল। প্রেরিত পিতর আমাদেরকে এই আশ্বাস দেন: “তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের উপরে অবস্থিতি করিতেছেন।” (১ পিতর ৪:১৪) আমরা যে ধার্মিক মানগুলোকে সমর্থন করার জন্য তাড়িত হই, সেটা ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের ঐশিক অনুমোদন রয়েছে। (মথি ৫:১০-১২; যোহন ১৫:২০) যিহোবার আশীর্বাদের এই প্রমাণ কত আনন্দই না নিয়ে আসে!
সঙ্গীসাথিদের চাপ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
৮. (ক) কী যিহোশূয় ও কালেবকে সঙ্গীসাথিদের চাপ প্রতিরোধ করতে সমর্থ করেছিল? (খ) যিহোশূয় এবং কালেবের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৮ খ্রিস্টানদের আরেকটা যে-সূক্ষ্ম বিরোধিতা সহ্য করতে হয় তা হল, সঙ্গীসাথিদের নেতিবাচক চাপ। কিন্তু, যিহোবার আত্মা যেহেতু জগতের আত্মার চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী, তাই আমরা সেই ব্যক্তিদের প্রতিরোধ করতে পারি, যারা আমাদের উপহাস করে, যারা আমাদের সম্বন্ধে মিথ্যা রটায় অথবা যারা আমাদেরকে তাদের মানগুলো মেনে চলার জন্য জোর করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, কোন বিষয়টা যিহোশূয় ও কালেবকে অন্য দশ জন গুপ্তচরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত পোষণ না করতে পরিচালিত করেছিল, যাদেরকে কনান দেশ দেখার জন্য পাঠানো হয়েছিল? পবিত্র আত্মা তাদের মধ্যে অন্য “আত্মা” বা মনোভাব গড়ে তুলেছিল।—পড়ুন, গণনাপুস্তক ১৩:৩০; ১৪:৬-১০, ২৪.
৯. কেন খ্রিস্টানদেরকে অধিকাংশ লোকেদের চেয়ে আলাদা হতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত?
৯ একইভাবে, পবিত্র আত্মা যিশুর প্রেরিতদেরকেও সেই লোকেদের চেয়ে বরং ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার জন্য শক্তি প্রদান করেছিল, যাদেরকে অনেকে সত্য ধর্মের গুরু বলে সম্মান করত। (প্রেরিত ৪:২১, ৩১; ৫:২৯, ৩২) অধিকাংশ লোক মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার জন্য বলতে গেলে, তাদের চারপাশের লোকেরা যা করছে, তা করা বেছে নেয়। কিন্তু, সত্য খ্রিস্টানদের প্রায়ই তারা যেটাকে সঠিক বলে জানে, সেটার পক্ষে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি তাদেরকে শক্তি প্রদান করে বলে, তারা আলাদা হতে ভয় পায় না। (২ তীম. ১:৭) একটা ক্ষেত্র বিবেচনা করুন, যেখানে সঙ্গীসাথিদের চাপের কাছে আমরা নতিস্বীকার করব না।
১০. কিছু খ্রিস্টান হয়তো কোন উভয়সংকটে পড়তে পারে?
১০ কিছু অল্পবয়সি যদি জানতে পারে যে, তাদের কোনো বন্ধু অশাস্ত্রীয় আচরণে রত হয়েছে, তাহলে তারা হয়তো উভয়সংকটে পড়ে যায়। তারা হয়তো মনে করে যে, তাদের বন্ধুর জন্য আধ্যাত্মিক সাহায্য লাভের চেষ্টা করা তাদের ওপর সেই বন্ধুর নির্ভরতাকে নষ্ট করে দেবে; তাই, আনুগত্য সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণার কারণে তারা সেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চায় না। একজন অন্যায়কারী হয়তো এমনকী তার বন্ধুবান্ধবকে তার পাপ লুকানোর জন্য চাপও দিতে পারে। অবশ্য, শুধুমাত্র অল্পবয়সিরাই যে এইরকম সমস্যায় পড়ে এমন নয়। কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও, কোনো বন্ধু অথবা পরিবারের কোনো সদস্যের অন্যায় কাজ সম্বন্ধে বলার জন্য মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছে যাওয়াকে কঠিন বলে মনে করতে পারে। কিন্তু, এইরকম চাপের প্রতি সত্য খ্রিস্টানদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
১১, ১২. মণ্ডলীর কোনো সদস্য যদি তার অন্যায় কাজ প্রকাশ না করার জন্য আপনাকে চাপ দেয়, তাহলে সর্বোত্তম প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে এবং কেন তা উপযুক্ত?
১১ এই পরিস্থিতিটার কথা কল্পনা করুন। ধরুন, অ্যালেক্স নামে একজন অল্পবয়সি ভাই জানতে পারে যে, মণ্ডলীতে তার বন্ধু স্টিভের পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস রয়েছে। অ্যালেক্স স্টিভকে বলে যে, স্টিভ যা করছে, সেটা নিয়ে সে খুবই উদ্বিগ্ন। কিন্তু, স্টিভ তার কথা গ্রাহ্য করেনি। অ্যালেক্স যখন তাকে বিষয়টা নিয়ে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বার বার অনুরোধ করে, তখন স্টিভ তাকে বলে যে, তারা যদি সত্যিই পরস্পরের বন্ধু হয়ে থাকে, তাহলে অ্যালেক্স প্রাচীনদের কাছে বিষয়টা বলবে না। অ্যালেক্সের কি তার বন্ধুকে হারানোর ভয় পাওয়া উচিত? সে হয়তো ভাবতে পারে যে, স্টিভ যদি সমস্তকিছু অস্বীকার করে, তাহলে প্রাচীনরা কাকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু, অ্যালেক্স যদি চুপ থাকে, তাহলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বস্তুতপক্ষে, এর ফলে স্টিভ হয়তো যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক হারাতে পারে। অ্যালেক্সের এই বিষয়টা স্মরণ করা উচিত যে, “লোক-ভয় ফাঁদজনক; কিন্তু যে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করে, সে উচ্চে স্থাপিত হইবে।” (হিতো. ২৯:২৫) অ্যালেক্স আর কী করতে পারে? সে হয়তো প্রেম দেখিয়ে স্টিভের কাছে যেতে এবং তার সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারে। এর জন্য সাহসের প্রয়োজন। এমনটা হতে পারে যে, এই বার হয়তো স্টিভ তার সমস্যা নিয়ে কথা বলা হলে তা শুনবে। অ্যালেক্সের আবারও স্টিভকে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করা উচিত এবং তাকে বলা উচিত যে, সে যদি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা না করে, তাহলে অ্যালেক্স নিজেই প্রাচীনদেরকে বিষয়টা জানাবে।—লেবীয়. ৫:১.
১২ আপনাকে যদি কখনো এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে আপনার বন্ধু হয়তো প্রথম প্রথম তাকে সাহায্য করার বিষয়ে আপনার প্রচেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন না। কিন্তু, পরে হয়তো তিনি বুঝতে পারবেন যে, আপনি তার মঙ্গলের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যিনি ভুল করেছেন, তিনি যদি সাহায্য লাভ করে থাকেন ও তা মেনে নেন, তাহলে তিনি হয়তো আপনার সাহস এবং আনুগত্যের জন্য সবসময় আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন। অন্যদিকে, তিনি যদি আপনার ওপর রাগ করেন, তাহলে আপনি কি তার মতো একজন ব্যক্তিকে আসলেই বন্ধু হিসেবে চান? আমাদের সর্বমহান বন্ধু, যিহোবাকে খুশি করা সবসময় সঠিক কাজ। আমরা যদি যিহোবাকে প্রথমে রাখি, তাহলে অন্য যে-ব্যক্তিরা তাঁকে ভালোবাসে, তারা আমাদের আনুগত্যের জন্য আমাদেরকে সম্মান করবে এবং আমাদের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে উঠবে। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমাদের কখনোই দিয়াবলকে স্থান দেওয়া উচিত নয়। আমরা যদি তা করে থাকি, তাহলে আমরা আসলে যিহোবার পবিত্র আত্মাকে দুঃখ দেব। কিন্তু, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে শুদ্ধ রাখার জন্য কাজ করার দ্বারা আমরা পবিত্র আত্মার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি।—ইফি. ৪:২৭, ৩০.
সমস্ত ধরনের দুর্দশা সহ্য করার জন্য শক্তি প্রদান করে
১৩. যিহোবার লোকেরা কোন ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হয়ে থাকে এবং কেন এই ধরনের বিষয়গুলো খুবই সাধারণ?
১৩ দুর্দশা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে—অর্থনৈতিক মন্দা, চাকরি হারানো, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং অন্যান্য বিষয়। যেহেতু আমরা “বিষম সময়ে” বাস করছি, তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে, আগে হোক বা পরে হোক, আমাদের সবাইকে কোনো না কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। (২ তীম. ৩:১) যখন তা ঘটবে, তখন আতঙ্কিত হয়ে না পড়া গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র আত্মা আমাদেরকে যেকোনো ধরনের দুর্দশা সহ্য করার শক্তি প্রদান করতে পারে।
১৪. কী ইয়োবকে তার দুর্দশাগুলো সহ্য করার শক্তি প্রদান করেছিল?
১৪ ইয়োব একটার পর একটা দুর্দশা ভোগ করেছিলেন। তিনি তার পশুপাল, সন্তান, বন্ধুবান্ধব এবং সুস্বাস্থ্য হারিয়েছিলেন এবং তার স্ত্রী যিহোবার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। (ইয়োব ১:১৩-১৯; ২:৭-৯) তবে, ইয়োব ইলীহূর মধ্যে একজন প্রকৃত সান্ত্বনাকারীকে খুঁজে পেয়েছিলেন। ইয়োবের প্রতি বলা তার বার্তা ও সেইসঙ্গে স্বয়ং যিহোবার বার্তার বিষয়বস্তু ছিল: “স্থির থাকুন, ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল বিবেচনা করুন।” (ইয়োব ৩৭:১৪) কী ইয়োবকে তার পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছিল? আর কী আমাদেরকে আমাদের পরীক্ষাগুলো সহ্য করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? যিহোবার পবিত্র আত্মা এবং শক্তির বিভিন্ন প্রকাশ সম্বন্ধে স্মরণ করা ও গভীরভাবে চিন্তা করা। (ইয়োব ৩৮:১-৪১; ৪২:১, ২) সম্ভবত আমরাও আমাদের জীবনের এমন সময়গুলোর কথা স্মরণ করতে পারি, যখন আমরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের আগ্রহের প্রমাণ দেখতে পেয়েছি। তিনি এখনও আমাদের প্রতি আগ্রহী।
১৫. কী প্রেরিত পৌলকে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করার জন্য শক্তিশালী করেছিল?
১৫ প্রেরিত পৌল তার বিশ্বাসের কারণে অনেক ধরনের চরম দুর্দশা সহ্য করেছিলেন। (২ করি. ১১:২৩-২৮) প্রচণ্ড কষ্টকর সেই পরিস্থিতিগুলোতে কীভাবে তিনি ভারসাম্য এবং স্থিরতা বজায় রেখেছিলেন? প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার ওপর নির্ভর করার দ্বারা। পরীক্ষার সময়, যা স্পষ্টতই তার শহীদ হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছিল, পৌল বলেছিলেন: “প্রভু আমার নিকটে দাঁড়াইলেন, এবং আমাকে বলবান্ করিলেন, যেন আমা দ্বারা প্রচার-কার্য্য সম্পন্ন হয় এবং পরজাতীয় সকল লোক তাহা শুনিতে পায়; আর আমি সিংহের মুখ হইতে রক্ষা পাইলাম।” (২ তীম. ৪:১৭) তাই, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে পৌল তার সহবিশ্বাসীদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, “কোনো বিষয়ে ভাবিত” হওয়ার কারণ নেই।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭, ১৩.
১৬, ১৭. যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে বর্তমান দিনে যেভাবে দুর্দশাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য শক্তি প্রদান করেন, তার একটা উদাহরণ দিন।
১৬ রোক্সানা নামে একজন অগ্রগামী বোন দেখেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের সমর্থন করেন। তিনি যখন তার কর্মকর্তার কাছে আমাদের একটা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য কয়েক দিন ছুটি চেয়েছিলেন, তখন তার কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন যে, রোক্সানা যদি সেখানে যান, তাহলে তিনি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন। যাই হোক, রোক্সানা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন যেন তার চাকরিটা থাকে। এরপর তিনি প্রশান্তি লাভ করেছিলেন। কর্মকর্তা তার কথা অনুযায়ী সম্মেলনের ঠিক পরদিনই অর্থাৎ সোমবারে রোক্সানাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। রোক্সানা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তার পরিবারকে সমর্থন করার জন্য তার সেই চাকরিটা, অল্প বেতনের হলেও, দরকার ছিল। আবারও তিনি প্রার্থনা করেছিলেন আর তিনি এই বিষয়টা চিন্তা করেছিলেন যে, ঈশ্বর সম্মেলনে তার আধ্যাত্মিক চাহিদা মিটিয়েছেন, তাই নিশ্চিতভাবেই তিনি তার দৈহিক চাহিদাও মেটাবেন। রোক্সানা যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি “সাহায্যের প্রয়োজন” লেখা একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেয়েছিলেন, যেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিনে অভিজ্ঞ অপারেটরদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল আর তিনি সেখানে একটা চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। ম্যানেজার বুঝতে পেরেছিলেন যে, রোক্সানার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই কিন্তু তার পরও তিনি তাকে একটা চাকরি দেন আর এর বেতন রোক্সানা আগে যা আয় করতেন, তার প্রায় দ্বিগুণ ছিল। রোক্সানা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সবচেয়ে বড়ো আশীর্বাদ ছিল যে, তিনি বেশ কয়েক জন সহকর্মীকে সুসমাচার জানাতে পেরেছিলেন। ম্যানেজারসহ তাদের মধ্যে পাঁচ জন সত্য গ্রহণ করেছিল এবং বাপ্তাইজিত হয়েছিল।
১৭ মাঝে মাঝে, এইরকম মনে হতে পারে যে, আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হচ্ছে না—অন্ততপক্ষে তক্ষুণি বা আমরা যেভাবে চাই, সেভাবে। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই যে, এর পিছনে উত্তম কারণ রয়েছে। যিহোবা সেটা জানেন কিন্তু আমাদের কাছেও বিষয়টা কেবল ভবিষ্যতেই স্পষ্ট হতে পারে। একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি—ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করেন না।—ইব্রীয় ৬:১০.
পরীক্ষা এবং তাড়না কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে
১৮, ১৯. (ক) কেন আমরা জানি যে, আমাদের পরীক্ষা ও প্রলোভনের মুখোমুখি হতেই হবে? (খ) কীভাবে আপনি সফলভাবে পরীক্ষার মোকাবিলা করতে পারেন?
১৮ যিহোবার লোকেরা প্রলোভন, নিরুৎসাহিতা, তাড়না এবং সঙ্গীসাথিদের চাপের মুখোমুখি হয়ে অবাক হয় না। এই জগৎ আসলে আমাদেরকে শত্রু বলে মনে করে। (যোহন ১৫:১৭-১৯) কিন্তু, পবিত্র আত্মা আমাদেরকে এমন যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে, ঈশ্বরের সেবা করতে গিয়ে যেগুলোর মুখোমুখি আমরা হতে পারি। যিহোবা আমাদের প্রতি আমরা যা সহ্য করতে পারি, সেগুলোর অতিরিক্ত পরীক্ষা বা প্রলোভন ঘটতে দেবেন না। (১ করি. ১০:১৩) তিনি কোনোভাবেই আমাদেরকে পরিত্যাগ করবেন না। (ইব্রীয় ১৩:৫) তাঁর বাক্যের প্রতি বাধ্য হওয়া আমাদেরকে সুরক্ষা ও শক্তিশালী করে। অধিকন্তু, ঈশ্বরের আত্মা সহবিশ্বাসীদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, যেন তারা আমাদেরকে অতি প্রয়োজনের সময় সাহায্য করে।
১৯ আমরা সকলে যেন ক্রমাগত প্রার্থনা ও শাস্ত্র অধ্যয়নের মাধ্যমে পবিত্র আত্মার জন্য যাচ্ঞা করি। আমরা যেন ক্রমাগত “আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা প্রকাশার্থে তাঁহার প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্” হই।—কল. ১:১১.
[পাদটীকা]
^ উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালের ১ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৬ পৃষ্ঠা এবং ১৯৯৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২১ এবং ২২ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• তাড়না প্রতিহত করার জন্য আপনি কীভাবে প্রস্তুত হতে পারেন?
• কেউ যদি আপনাকে তার অন্যায় কাজ প্রকাশ না করার জন্য চাপ দেয়, তাহলে আপনার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
• যেকোনো ধরনের দুর্দশা মোকাবিলা করার সময় আপনি কোন আস্থা রাখতে পারেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোশূয় এবং কালেবের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাবে তুমি এমন এক বন্ধুকে সাহায্য করতে পার, যে অন্যায় করেছে?