সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি আপনার আশীর্বাদগুলোকে আসলেই মূল্যবান বলে গণ্য করেন?

আপনি কি আপনার আশীর্বাদগুলোকে আসলেই মূল্যবান বলে গণ্য করেন?

আপনি কি আপনার আশীর্বাদগুলোকে আসলেই মূল্যবান বলে গণ্য করেন?

মিশরের দাসত্ব থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পাওয়ার পর, ইস্রায়েল সন্তানরা যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য মুক্ত হতে পেরে প্রথমে আনন্দিত হয়েছিল। (যাত্রা. ১৪:২৯–১৫:১, ২০, ২১) কিন্তু, শীঘ্র তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তারা তাদের জীবনের পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেছিল। কেন? কারণ যিহোবা তাদের জন্য যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে তারা প্রান্তরে বাস করার সময় যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। তারা মোশিকে বলেছিল: “তোমরা কেন আমাদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিলে, যেন আমরা প্রান্তরে মরিয়া যাই? রুটীও নাই, জলও নাই; আর আমাদের প্রাণ এই লঘু ভক্ষ্য [মান্না] ঘৃণা করে।”—গণনা. ২১:৫.

কয়েক-শো বছর পর, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমি তোমার দয়াতে বিশ্বাস করিয়াছি; আমার চিত্ত তোমার পরিত্রাণে উল্লাসিত হইবে। আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাহিব, কেননা তিনি আমার মঙ্গল করিয়াছেন।” (গীত. ১৩:৫, ৬) দায়ূদের প্রতি যিহোবা যে-দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন, তা তিনি ভুলে যাননি। এর বিপরীতে, তিনি নিয়মিতভাবে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য সময় করে নিতেন। (গীত. ১০৩:২) যিহোবা আমাদের প্রতিও মঙ্গল করেছেন আর সেই কারণে তিনি আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো হালকাভাবে না নেওয়া আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ। তাই, আসুন আমরা ঈশ্বরের কিছু আশীর্বাদ নিয়ে বিবেচনা করি, যেগুলো আমরা এখন উপভোগ করছি।

“যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা”

গীতরচক গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা [“যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা,” NW] তাঁহার ভয়কারীদের অধিকার।” (গীত. ২৫:১৪) অসিদ্ধ মানুষদের জন্য যিহোবার সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা কতই না বিশেষ এক সুযোগ! কিন্তু, রোজকার জীবনের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যদি এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, প্রার্থনা করার জন্য কম সময় দিই, তাহলে? তখন যিহোবার সঙ্গে আমাদের উত্তম সম্পর্কের কী হবে, তা ভেবে দেখুন। আমাদের বন্ধু হিসেবে যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করি এবং মনপ্রাণ উজাড় করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, তাঁর কাছে আমাদের ভয়, আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্‌বিগ্নতা প্রকাশ করি। (হিতো. ৩:৫, ৬; ফিলি. ৪:৬, ৭) তাই, আমাদের প্রার্থনার গুণগত মানের প্রতি কি মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়?

পল নামে একজন যুবক সাক্ষি যখন তার প্রার্থনার বিষয়ে চিন্তা করেছিল, তখন সে বুঝতে পেরেছিল যে, তার প্রার্থনার মান উন্নত করা প্রয়োজন। * সে বলেছিল, “যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় বার বার একই অভিব্যক্তি ব্যবহার করা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।” পল যখন সেই বিষয়টা নিয়ে ওয়াচটাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স (ইংরেজি) থেকে গবেষণা করেছিল, তখন সে জানতে পেরেছিল যে, বাইবেলে প্রায় ১৮০টি প্রার্থনা রয়েছে। এই প্রার্থনাগুলোতে, যিহোবার প্রাচীন দাসেরা তাদের মনের গভীরতম অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছে। পল বলেছিল: “এই ধরনের শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আমি সুনির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা করতে শিখেছি। এটা আমাকে মন খুলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে সাহায্য করেছে। এখন প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হওয়া এক আনন্দের বিষয়।”

“উপযুক্ত সময়ে খাদ্য”

যিহোবার কাছ থেকে আমরা আরেকটা যে-আশীর্বাদ লাভ করেছি, তা হল শাস্ত্র থেকে আমরা অনেক সত্য জানতে পেরেছি। আমরা যেহেতু প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য ভোজন করি, তাই আমাদের ‘চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবার’ যথেষ্ট কারণ রয়েছে। (যিশা. ৬৫:১৩, ১৪) কিন্তু, আমাদের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবকে সুযোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে সেগুলো সত্যের জন্য আমাদের উদ্যম হারিয়ে ফেলার কারণ না হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের অপপ্রচারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের চিন্তাভাবনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে এবং ‘উপযুক্ত সময়ে খাদ্যের’ মূল্যের প্রতি উপলব্ধি হারিয়ে ফেলতে পরিচালিত করতে পারে, যা যিহোবা তাঁর ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে প্রাপ্তিসাধ্য করেছেন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

আন্দ্রে, যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে যিহোবার সেবা করছেন, তিনি ধর্মভ্রষ্ট চিন্তাভাবনার দ্বারা বিপথে চালিত হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন যে, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের ওয়েব সাইট একটু সময়ের জন্য দেখা বিপদজনক হবে না। তিনি স্মরণ করে বলেন: “প্রথম প্রথম, আমি ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা যে-তথাকথিত সত্য সম্বন্ধে বলত, সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। তারা যা বলত, সেগুলো নিয়ে আমি যতই পরীক্ষা করতাম, ততই আমি চিন্তা করতাম যে, যিহোবার সংগঠনকে পরিত্যাগ করা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু পরে যখন আমি যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তিগুলো নিয়ে গবেষণা করেছিলাম, তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, সেই মিথ্যা শিক্ষকরা কতটা ধূর্ত। তারা যেগুলোকে আমাদের বিরুদ্ধে ‘জোরালো প্রমাণ’ হিসেবে দাবি করত, সেগুলো ছিল আসলে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য। তাই, আমি আবারও আমাদের প্রকাশনাদি পড়তে শুরু করার ও সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শীঘ্র আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি কোন বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছি।” আনন্দের বিষয় হল, আন্দ্রে মণ্ডলীতে ফিরে এসেছিলেন।

‘ভ্রাতৃসমাজ’

আমাদের প্রেমময়, একতাবদ্ধ ভ্রাতৃসমাজ হচ্ছে যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত এক আশীর্বাদ। (গীত. ১৩৩:১) উপযুক্ত কারণেই প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর।” (১ পিতর ২:১৭) খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়ায় আমরা এমন সাহায্যকারী আধ্যাত্মিক বাবা, মা, ভাই ও বোনদের বন্ধুত্ব উপভোগ করি, যারা একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী।—মার্ক ১০:২৯, ৩০.

তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে মাঝে মাঝে আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা সহজেই কারো অসিদ্ধ আচরণ দেখে বিরক্ত হয়ে পড়তে এবং তার প্রতি সমালোচনাপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলতে পারি। যদি তা-ই হয়, তাহলে এটা মনে রাখা কি উপকারজনক নয় যে, যিহোবা তাঁর দাসদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও তাদেরকে ভালোবাসেন? অধিকন্তু, “আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই।” (১ যোহন ১:৮) তাই, আমাদের কি ‘পরস্পর সহনশীল হইবার, এবং পরস্পর ক্ষমা করিবার’ প্রচেষ্টা করা উচিত নয়?—কল. ৩:১৩.

অ্যান নামে একজন যুবতী তিক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে খ্রিস্টীয় সাহচর্যের মূল্য সম্বন্ধে শিখতে পেরেছিল। যিশুর দৃষ্টান্তে যে-অপব্যয়ী পুত্রের কথা বলা আছে, কিছুটা তার মতো কাজ করায় সে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে সরে গিয়েছিল। পরে, সে চেতনা ফিরে পেয়েছিল এবং সত্যে ফিরে এসেছিল। (লূক ১৫:১১-২৪) অ্যান সেই অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছিল? সে বলে: “এখন যিহোবার সংগঠনে ফিরে আসায় আমি আমার সমস্ত ভাইবোনকে তাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও মূল্যবান বলে গণ্য করি। আগে আমি খুব সহজেই তাদের দোষ ধরতাম। কিন্তু, এখন আমি এই ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ যেন কোনো কিছুই আমার সেই আশীর্বাদগুলো কেড়ে নিতে না পারে, যেগুলো আমি সহবিশ্বাসীদের মধ্যে থেকে উপভোগ করছি। পৃথিবীতে এমন কিছুই নেই, যেটার বিনিময়ে আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশকে পরিত্যাগ করা যায়।”

আপনার আশীর্বাদগুলোর জন্য সবসময় কৃতজ্ঞ থাকুন

মানবজাতির সমস্ত সমস্যার সমাধান হিসেবে ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর আমাদের আশা হল অমূল্য সম্পদ। আমরা যখন প্রথম এই আশা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলাম, তখন আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম! আমরা ঠিক যিশুর নীতিগল্পে বলা বণিকের মতো অনুভব করেছিলাম, যিনি “একটী মহামূল্য মুক্তা” কেনার জন্য “সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া” দিয়েছিলেন। (মথি ১৩:৪৫, ৪৬) যিশু এটা বলেননি যে, সেই বণিক কখনো সেই মুক্তার প্রতি তার উপলব্ধি হারিয়ে ফেলেছিলেন। একইভাবে, আমরাও যেন কখনো আমাদের অপূর্ব প্রত্যাশার প্রতি উপলব্ধি হারিয়ে না ফেলি।—১ থিষল. ৫:৮; ইব্রীয় ৬:১৯.

জিনের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার সেবা করছেন। তিনি বলেন: “যে-বিষয়টা আমাকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে মনে রাখতে সাহায্য করেছে, তা হল অন্যদের কাছে এই সম্বন্ধে কথা বলা। রাজ্য সম্বন্ধে শেখার পর তারা যে-প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা যখন আমি লক্ষ করি, তখন সেটা আমার ওপর এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাজ্যের সত্য একজন বাইবেল ছাত্রের জীবনে যে-পরিবর্তন নিয়ে আসে, তা দেখে আমি এইরকমটা চিন্তা করতে পরিচালিত হই যে, ‘অন্যদের কাছে বলার মতো কত অপূর্ব সত্যই না আমার কাছে রয়েছে!’”

আমরা যে-আধ্যাত্মিক আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি, সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার উপযুক্ত কারণ আমাদের রয়েছে। যদিও আমরা হয়তো বিরোধিতা, অসুস্থতা, বার্ধক্য, হতাশা, প্রিয়জনের মৃত্যুশোক এবং আর্থিক সংকটের মতো পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হই, কিন্তু আমরা জানি যে, সেগুলো সাময়িক। ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে আমরা আধ্যাত্মিক আশীর্বাদগুলোর সঙ্গে সঙ্গে দৈহিক আশীর্বাদগুলোও লাভ করব। আমরা এখন যে-দুঃখকষ্টের মুখোমুখিই হই না কেন, নতুন বিধিব্যবস্থায় সেগুলো দূর করে দেওয়া হবে।—প্রকা. ২১:৪.

এই সময়ের মধ্যে, আসুন আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক আশীর্বাদগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হই এবং গীতরচকের মতো উপলব্ধি দেখাই, যিনি গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ আমাদের পক্ষে তোমার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল ও তোমার সঙ্কল্প সকল; তোমার তুল্য কেহ নাই; আমি সে সকল বলিতাম ও বর্ণনা করিতাম, কিন্তু সে সকল গণনা করা যায় না।”—গীত. ৪০:৫.

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরীক্ষার সময়ে আমরা আধ্যাত্মিক সাহায্য লাভ করে থাকি