সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পবিত্র আত্মা—সৃষ্টির কাজে!

পবিত্র আত্মা—সৃষ্টির কাজে!

পবিত্র আত্মা—সৃষ্টির কাজে!

“আকাশমণ্ডল নির্ম্মিত হইল সদাপ্রভুর বাক্যে, তাহার সমস্ত বাহিনী তাঁহার মুখের শ্বাসে।”—গীত. ৩৩:৬.

১, ২. (ক) কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিখিলবিশ্ব ও পৃথিবী সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে? (খ) কোন প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন?

 অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যখন ১৯০৫ সালে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন, তখন তিনি এবং আরও অনেক বিজ্ঞানী মনে করেছিলেন যে, নিখিলবিশ্বে মাত্র একটা ছায়াপথ—আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথ—রয়েছে। নিখিলবিশ্বের আকার সম্বন্ধে তাদের ধারণা কতই না সীমিত ছিল! বর্তমানে ধারণা করা হয় যে, নিখিলবিশ্বে ১০ হাজার কোটিরও বেশি ছায়াপথ রয়েছে, যেগুলোর কোনো কোনোটাতে কোটি কোটি নক্ষত্র রয়েছে। পৃথিবী ও এর কক্ষপথে ব্যবহৃত এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরিচিত ছায়াপথের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

উনিশ-শো পাঁচ সালে নিখিলবিশ্বের মতো পৃথিবী সম্বন্ধেও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সীমিত ছিল। এটা ঠিক যে, এক-শো বছর আগে যে-লোকেরা বাস করত, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে আরও বেশি জানত। কিন্তু, জীবনের সৌন্দর্য ও জটিল গঠন এবং যে-উপায়গুলোতে পৃথিবী জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে, সেই সম্বন্ধে তখনকার চেয়ে বরং এখন আরও ভালোভাবে জানা গিয়েছে। আর কোনো সন্দেহ নেই যে, সামনের বছরগুলোতে আমরা পৃথিবী এবং নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে আরও বেশি জানতে পারব। তবে, বিশেষভাবে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা উপযুক্ত যে, কীভাবে এই সমস্তকিছু অস্তিত্বে এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে কারণ সৃষ্টিকর্তা পবিত্র শাস্ত্রের মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন।

অলৌকিক সৃষ্টি

৩, ৪. কীভাবে ঈশ্বর নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন এবং কীভাবে তাঁর কর্মগুলো তাঁর গৌরব করে?

কীভাবে নিখিলবিশ্ব অস্তিত্বে এসেছিল, তা বাইবেলের শুরুর কথাগুলোতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।” (আদি. ১:১) যেহেতু পূর্বে কোনো কিছুই অস্তিত্বে ছিল না, তাই যিহোবা নিখিলবিশ্ব এবং পৃথিবী সৃষ্টি করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা—তাঁর পরাক্রমী সক্রিয় শক্তি—ব্যবহার করেছিলেন। কোনো কিছু তৈরি করার জন্য একজন মানব কারিগর তার হাত ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন কিন্তু ঈশ্বর তাঁর মহৎ কর্মগুলো সম্পাদন করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা প্রেরণ করেন।

শাস্ত্র পবিত্র আত্মাকে রূপকভাবে ঈশ্বরের “অঙ্গুলি” হিসেবে উল্লেখ করে। (লূক ১১:২০; মথি ১২:২৮) আর “তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম”—যিহোবার পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সৃষ্ট বিষয়গুলো—তাঁর জন্য প্রচুর গৌরব নিয়ে আসে। “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে,” গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন, “বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।” (গীত. ১৯:১) বস্তুতপক্ষে, ভৌত সৃষ্টি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার অসাধারণ শক্তির প্রমাণ দেয়। (রোমীয় ১:২০) কীভাবে?

ঈশ্বরের অসীম শক্তি

৫. যিহোবার পবিত্র আত্মার সৃজনীশক্তির বিষয়টা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

আমাদের অকল্পনীয় বিশাল নিখিলবিশ্ব প্রমাণ দেয় যে, যিহোবার শক্তি এবং সামর্থ্য অফুরন্ত। (পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৬.) আধুনিক বিজ্ঞান জানে যে, বস্তু শক্তিতে এবং শক্তি বস্তুতে পরিবর্তিত হতে পারে। বস্তু যে শক্তিতে পরিণত হতে পারে, তার একটা উদাহরণ হল আমাদের এই নক্ষত্র সূর্য। প্রতি সেকেন্ডে সূর্য প্রায় চল্লিশ লক্ষ টন বস্তুকে সৌরশক্তিতে এবং অন্যান্য বিকীর্ণ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। সেই শক্তির যৎসামান্যই পৃথিবীতে আসে কিন্তু এতটুকু শক্তিই পৃথিবীতে জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। স্পষ্টতই, শুধু সূর্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য কোটি কোটি নক্ষত্র সৃষ্টি করার জন্য প্রবল শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রয়োজন হয়েছিল। যিহোবার কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত শক্তি, এমনকী তার চেয়েও বেশি শক্তি ছিল।

৬, ৭. (ক) কেন আমরা বলতে পারি যে, ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মাকে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার করেছেন? (খ) কী দেখায় যে, এই নিখিলবিশ্ব আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনার ফল নয়?

ঈশ্বর যে তাঁর পবিত্র আত্মাকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার করেছেন, সেটার অনেক প্রমাণ আমাদের চারপাশে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ: ধরুন আপনার কাছে একটা বাক্স আছে, যেটাতে বিভিন্ন রঙের বল রয়েছে। আপনি বাক্সটা ধরে ঝাঁকি দিয়ে সব বল মিলিয়ে ফেলেন। এরপর সেগুলো একসঙ্গে মেঝেতে ফেলে দেন। আপনি কি এইরকমটা আশা করবেন যে, মেঝেতে ছড়িয়ে পড়া বলগুলো রং অনুযায়ী—নীল বল নীলের সঙ্গে, হলুদ বল হলুদের সঙ্গে এবং অন্যগুলো নিজ নিজ রং অনুসারে—একত্রিত হবে? অবশ্যই না! অনিয়ন্ত্রিত কাজগুলোতে সাধারণত বেশি নয় বরং সামান্যই শৃঙ্খলা বজায় থাকে। এই বাস্তব বিষয়টা এক মৌলিক ভৌত নিয়ম হিসেবে স্বীকৃত। *

তবে, আমরা যখন নিখিলবিশ্ব এবং এর মধ্যেকার বিষয়গুলো নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন আমরা কী দেখতে পাই? আমরা এক বিশাল ও অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত ছায়াপথ, নক্ষত্র এবং গ্রহ দেখতে পাই, যেগুলো একেবারে ঠিক ঠিকভাবে ঘুরছে। এটা আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনার অথবা এক অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত কাজের ফল হতে পারে না। তাহলে, আমাদের জিজ্ঞেস করতে হবে যে, আমাদের এই সুশৃঙ্খল নিখিলবিশ্ব তৈরি করার জন্য মূলত কোন শক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল? আমরা মানুষেরা কেবল বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে সেই শক্তিকে শনাক্ত করতে পারব না। কিন্তু, বাইবেল সেটাকে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা—নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমী শক্তি—হিসেবে শনাক্ত করে। গীতরচক গেয়েছিলেন: “আকাশমণ্ডল নির্ম্মিত হইল সদাপ্রভুর বাক্যে, তাহার সমস্ত বাহিনী তাঁহার মুখের শ্বাসে।” (গীত. ৩৩:৬) আর আমরা যখন রাতের আকাশের দিকে তাকাই, তখন কেবল নক্ষত্রের সেই ‘বাহিনীর’ অতি ক্ষুদ্র এক অংশ দেখতে পাই!

পবিত্র আত্মা এবং পৃথিবী

৮. যিহোবার কাজ সম্বন্ধে আমরা আসলে কতটা জানি?

প্রকৃতি সম্বন্ধে এখন আমরা যতটুকু জানি, তা যখন আরও যা জানা বাকি আছে, তার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তখন সেটাকে খুবই নগণ্য বলে মনে হয়। ঈশ্বরের সৃজনশীল কাজগুলোর বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিধি সম্বন্ধে বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব এই উপসংহারে এসেছিলেন: “দেখ, এই সকল তাঁহার মার্গের প্রান্ত; তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়।” (ইয়োব ২৬:১৪) কয়েক শতাব্দী পরে, যিহোবার সৃষ্টির একজন বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক, রাজা শলোমন বলেছিলেন: “[ঈশ্বর] সকলই যথাকালে মনোহর করিয়াছেন, আবার তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন; তথাপি ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্য্যন্ত যে সকল কার্য্য করেন, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারে না।”—উপ. ৩:১১; ৮:১৭.

৯, ১০. পৃথিবী সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বর কোন শক্তি ব্যবহার করেছিলেন আর প্রথম তিন সৃষ্টি দিবসে কী কী সৃষ্টি করা হয়েছিল?

কিন্তু, যিহোবা তাঁর কাজ সম্বন্ধে যতটুকু জানা প্রয়োজন, ততটুকু প্রকাশ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, শাস্ত্র আমাদের জানায় যে, ঈশ্বরের আত্মা কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে সক্রিয় ছিল। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১:২.) সেই সময়ে, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগে কোনো শুষ্ক ভূমি, কোনো আলো আর স্পষ্টতই শ্বাস নেওয়ার উপযোগী কোনো বায়ু ছিল না।

১০ ধারাবাহিক সৃষ্টির দিবসে ঈশ্বর কী করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বাইবেল বর্ণনা দিয়ে চলে। তবে, তা ২৪ ঘন্টার কোনো দিনকে নয়, বরং দীর্ঘ সময়কালকে বোঝায়। প্রথম সৃষ্টি দিবসে, যিহোবা পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগে আলোকে প্রকাশিত হতে দিয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়া সেই সময়ে সম্পূর্ণ হয়েছিল, যখন পরে পৃথিবী থেকে সূর্য ও চাঁদ দেখা গিয়েছিল। (আদি. ১:৩, ১৪) দ্বিতীয় দিবসে বায়ুমণ্ডল গঠিত হতে শুরু করেছিল। (আদি. ১:৬) এভাবে পৃথিবীতে জল, আলো এবং বায়ু এসেছিল কিন্তু তখনও পর্যন্ত কোনো শুষ্ক ভূমি ছিল না। তৃতীয় সৃষ্টি দিবসের শুরুতে, যিহোবা সম্ভবত প্রবল ভূতাত্ত্বিক শক্তি ব্যবহার করে শুষ্ক ভূমি সৃষ্টি করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেছিলেন। (আদি. ১:৯) তৃতীয় দিবসে এবং পরবর্তী সৃষ্টির সময়কালে অন্যান্য বিস্ময়কর সৃষ্টির কাজ সম্পাদন করা হয়েছিল।

পবিত্র আত্মা এবং জীবিত প্রাণীকুল

১১. জীবিত বস্তুগুলোর জটিল গঠন, সংগতি এবং সৌন্দর্যের মাধ্যমে কী প্রকাশিত হয়েছে?

১১ এ ছাড়া, ঈশ্বরের আত্মা অতি সুসংগঠিত উপায়ে বিন্যস্ত জীবজগৎ সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ সৃষ্টি দিবসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিস্ময়কর উদ্ভিদ এবং পশুপাখি সৃষ্টি করেছিলেন। (আদি. ১:১১, ২০-২৫) এভাবে জীবিত বস্তুগুলোর মধ্যে জটিল গঠন, সংগতি এবং সৌন্দর্যের অসংখ্য উদাহরণ দেখা যায়, যেগুলো অতি উচ্চমানসম্পন্ন নকশা সম্বন্ধে প্রকাশ করে।

১২. (ক) ডিএনএ কোন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে? (খ) ডিএনএ-র ক্রমাগত সফল ভূমিকা থেকে আমাদের কী শেখা উচিত?

১২ এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া, ডিএনএ-র (ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড-এর) কথা বিবেচনা করুন, যেটার কাজ হল এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে জীবের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবাহিত করা। পৃথিবীর সমস্ত জীবিত বস্তু—যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত অণুজীব, ঘাস, হাতি, নীল তিমি এবং মানুষ—ডিএনএ-র মাধ্যমে পুনরুৎপাদন করে থাকে। যদিও পৃথিবীর সৃষ্টিগুলো একটা থেকে আরেকটা অনেক আলাদা, তবে যে-ডিএনএ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অনেক বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা সহজে পরিবর্তনীয় নয় ও সেইসঙ্গে যুগ যুগ ধরে এটা বিভিন্ন সৃষ্টির স্বকীয়তা বজায় রাখছে। আর এই কারণেই, যিহোবা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন জীব জটিল বাস্তুসংস্থানে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে চলছে। (গীত. ১৩৯:১৬) অত্যন্ত কার্যকারী এবং সুশৃঙ্খল এই ব্যবস্থা আরও প্রমাণ দেয় যে, সৃষ্টি হচ্ছে ঈশ্বরের “অঙ্গুলি” অথবা পবিত্র আত্মার কাজ।

ঈশ্বরের সর্বমহান পার্থিব সৃষ্টি

১৩. কীভাবে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন?

১৩ অগণিত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার এবং ঈশ্বর অসংখ্য জীবিত ও জড় বস্তু সৃষ্টি করার পর, পৃথিবী আর “ঘোর ও শূন্য” ছিল না। কিন্তু, যিহোবা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর আত্মা ব্যবহার করা বন্ধ করে দেননি। তিনি সর্বমহান পার্থিব সৃষ্টি সম্পাদন করতে যাচ্ছিলেন। ষষ্ঠ সৃষ্টি দিবসের শেষের দিকে, যিহোবা মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। কীভাবে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন? তাঁর পবিত্র আত্মা এবং পৃথিবীর উপাদানগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে।—আদি. ২:৭.

১৪. কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে মানুষ পশুপাখি থেকে আলাদা?

১৪ আদিপুস্তক ১:২৭ পদ বলে: “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।” ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হওয়ার অর্থ হল যে, যিহোবা আমাদেরকে প্রেম প্রদর্শন করার, স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করার এবং এমনকী আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত উত্তম সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই কারণে, আমাদের মস্তিষ্ক পশুপাখির চেয়ে আলাদা। বিশেষত, যিহোবা মানব মস্তিষ্ক তৈরি করেছিলেন, যেন আমরা চিরকাল আনন্দের সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর কাজ সম্বন্ধে শিখতে পারি।

১৫. আদম ও হবার সামনে কোন প্রত্যাশা ছিল?

১৫ শুরুতে, ঈশ্বর আদম ও তাঁর স্ত্রী হবাকে পৃথিবী এবং এর বিস্ময়কর সমস্ত সৃষ্টি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে ও সেইসঙ্গে সেগুলো উপভোগ করতে দিয়েছিলেন। (আদি. ১:২৮) যিহোবা তাদের জন্য প্রচুর খাদ্য এবং তাদেরকে পরমদেশতুল্য এক বাড়ি দিয়েছিলেন। তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার এবং কোটি কোটি সিদ্ধ বংশধরের প্রেমময় বাবা-মা হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু, এইরকমটা হয়নি।

পবিত্র আত্মার ভূমিকা স্বীকার করা

১৬. প্রথম মানব-মানবীর বিদ্রোহ সত্ত্বেও, আমাদের কোন আশা রয়েছে?

১৬ তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বাধ্য হওয়ার পরিবর্তে তারা স্বার্থপরভাবে বিদ্রোহ করেছিল। সমস্ত অসিদ্ধ মানুষ তাদের কাছ থেকে এসেছে আর এর ফল স্বরূপ পরিণতি ভোগ করেছে। কিন্তু, আমাদের প্রথম বাবা-মায়ের ভুল কাজের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি ঈশ্বর কীভাবে দূর করবেন, সেই সম্বন্ধে বাইবেল ব্যাখ্যা করে। শাস্ত্র এও দেখায় যে, যিহোবা তাঁর আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন। পৃথিবী সেইসমস্ত সুখী ও সুস্থ লোকেদের দ্বারা পরিপূর্ণ এক পরমদেশে পরিণত হবে, যাদেরকে অনন্তজীবন প্রদান করা হবে। (আদি. ৩:১৫) সেই উৎসাহজনক প্রত্যাশার প্রতি বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যের প্রয়োজন।

১৭. আমাদের কোন ধরনের চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলতে হবে?

১৭ আমাদের পবিত্র আত্মা চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। (লূক ১১:১৩) তা করা আমাদের এই দৃঢ়প্রত্যয়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে যে, সৃষ্টি হচ্ছে ঈশ্বরের হস্তের কর্ম। বর্তমানে, নাস্তিকবাদী এবং বিবর্তনবাদী অপপ্রচার আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভুল এবং ভিত্তিহীন যুক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এই ধরনের ভুল চিন্তাভাবনার জোয়ার যেন আমাদেরকে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত না করে। সমস্ত খ্রিস্টানকে এই ধরনের আক্রমণ এবং এর সঙ্গে যুক্ত সঙ্গীসাথিদের চাপ প্রতিরোধ করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।—পড়ুন, কলসীয় ২:৮.

১৮. নিখিলবিশ্ব ও মানবজাতির উৎস সম্বন্ধে বিবেচনা করলে, একজন বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করা কেন অদূরদর্শিতার কাজ হবে?

১৮ সৃষ্টি সম্বন্ধীয় প্রমাণ অকপটভাবে পরীক্ষা করার মাধ্যমে বাইবেল ও স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস শক্তিশালী হবেই। নিখিলবিশ্ব এবং মানবজাতির উৎস সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করার পর, অনেকে ভৌত নিখিলবিশ্বের বাইরের কোনো শক্তির প্রভাবকে অস্বীকার করতে চাইবে। কিন্তু, আমরা যদি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো আলোচনা করতাম, তাহলে আমরা সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ নিরপেক্ষভাবে নির্ণয় করতে পারতাম না। অধিকন্তু, আমরা এমন সুশৃঙ্খল, উদ্দেশ্যপূর্ণ সৃষ্টির স্পষ্ট অস্তিত্বও উপেক্ষা করতাম, “যাহার সংখ্যা নাই।” (ইয়োব ৯:১০; গীত. ১০৪:২৫) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা নিশ্চিত, যে-সক্রিয় শক্তি সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল, তা হল যিহোবার বিজ্ঞ নির্দেশনাধীন পবিত্র আত্মা।

পবিত্র আত্মা এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস

১৯. কী ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তাঁর আত্মার কাজ সম্বন্ধে প্রমাণ জোগাতে পারে?

১৯ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, প্রেম ও সেইসঙ্গে গভীর শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হলে আমাদেরকে যে সৃষ্টি সম্বন্ধে সমস্তকিছু জানতেই হবে এমন নয়। কোনো মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের মতো যিহোবার প্রতি বিশ্বাসের সঙ্গেও কেবল বাস্তব বিষয়ের চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। ঠিক যেমন বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্ক পরস্পরকে আরও ভালোভাবে জানার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনই ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস তাঁর সম্বন্ধে আরও বেশি জানার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। বস্তুতপক্ষে, যখন তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন এবং যখন আমরা জীবনে তাঁর নীতিগুলো প্রয়োগ করার উত্তম ফলাফল লক্ষ করি, তখন তাঁর অস্তিত্ব আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই, যখন আমরা এই বিষয়ে প্রচুর প্রমাণ পাই যে, তিনি আমাদের পাদবিক্ষেপকে পরিচালিত করেন, আমাদেরকে সুরক্ষা করেন, তাঁকে সেবা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার প্রতি আশীর্বাদ করেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান। এই সমস্তকিছুই ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তাঁর পবিত্র আত্মার কাজ সম্বন্ধে জোরালো প্রমাণ জোগায়।

২০. (ক) কেন ঈশ্বর নিখিলবিশ্ব এবং মানুষ সৃষ্টি করেছেন? (খ) আমরা যদি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার পরিচালনা অনুসরণ করে চলি, তাহলে এর ফল কী হবে?

২০ যিহোবা যে তাঁর পবিত্র আত্মাকে ব্যবহার করেন, সেটার এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল বাইবেল, কারণ এর লেখকরা “পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন।” (২ পিতর ১:২১) মনোযোগের সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করা সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঈশ্বরের ওপর আমাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে। (প্রকা. ৪:১১) তাঁর এক আবেদনময় গুণ প্রেমের প্রকাশ হিসেবে যিহোবা একজন সৃষ্টিকর্তা হয়ে উঠেছেন। (১ যোহন ৪:৮) তাই, আসুন আমরা অন্যদেরকে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা ও বন্ধু সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি। আর আমরা যদি ক্রমাগত ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হই, তাহলে আমরা চিরকাল তাঁর সম্বন্ধে জানার বিশেষ সুযোগ লাভ করব। (গালা. ৫:১৬, ২৫) আসুন আমরা প্রত্যেকে ক্রমাগত যিহোবা ও তাঁর মহৎ কাজগুলো সম্বন্ধে জানি এবং আমাদের জীবনে তাঁর অসীম প্রেম প্রতিফলিত করি, যে-প্রেম তিনি নিখিলবিশ্ব, পৃথিবী এবং মানবজাতি সৃষ্টি করার সময় তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন।

[পাদটীকা]

^ এমন একজন সৃষ্টিকর্তা কি আছেন, যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন? (ইংরেজি) বইয়ের ২৪ এবং ২৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• নিখিলবিশ্ব এবং পৃথিবীর অস্তিত্ব আমাদেরকে ঈশ্বর যে পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেছেন, সেই সম্বন্ধে কী শেখায়?

• ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হওয়ায় আমরা কোন কোন সুযোগ লাভ করেছি?

• কেন আমাদের সৃষ্টি সম্বন্ধীয় প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখা উচিত?

• কোন কোন উপায়ে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

নিখিলবিশ্বে যে-শৃঙ্খলা দেখা যায়, তা সৃষ্টি সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

[সৌজন্যে]

নক্ষত্র: Anglo-Australian Observatory/David Malin Images

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কীভাবে এই সমস্তকিছুর মধ্যে ডিএনএ রয়েছে?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি আপনার বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার জন্য প্রস্তুত?