সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সর্বান্তঃকরণে ধার্মিকতাকে ভালোবাসুন

সর্বান্তঃকরণে ধার্মিকতাকে ভালোবাসুন

সর্বান্তঃকরণে ধার্মিকতাকে ভালোবাসুন

“তুমি ধার্ম্মিকতাকে প্রেম করিয়া আসিতেছ।”—গীত. ৪৫:৭.

১. কী আমাদেরকে “ধর্ম্মপথে” চলতে সাহায্য করবে?

 যিহোবা তাঁর বাক্য এবং তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর লোকেদের “ধর্ম্মপথে” গমন করান। (গীত. ২৩:৩) কিন্তু, যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমাদের সেই পথ থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যা সঠিক, তা পুনরায় করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা প্রয়োজন। কী আমাদেরকে সফল হতে সাহায্য করবে? যিশুর মতো, আমাদেরও ধর্মময় বা যা সঠিক, তা করার বিষয়টাকে ভালোবাসতে হবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৫:৭.

২. ‘ধর্ম্মপথ’ বলতে কী বোঝায়?

‘ধর্ম্মপথ’ বলতে কী বোঝায়? এই রূপক ‘পথ’ হচ্ছে যিহোবার ধার্মিক মানগুলোর ওপর ভিত্তি করে জীবনযাপন করার এক পথ। ইব্রীয় এবং গ্রিক ভাষায়, ‘ধর্ম্ম’ শব্দটি সেই বিষয়কে নির্দেশ করে, যা “ন্যায়নিষ্ঠ” আর এই শব্দটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নৈতিক নীতিগুলো পালন করাকে নির্দেশ করে। যেহেতু যিহোবা “ধর্ম্মনিবাস,” তাই তাঁর উপাসকরা, নৈতিক দিক দিয়ে ন্যায়নিষ্ঠ এক পথ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নির্ভর করে আনন্দিত, যে-পথে তাদের চলা উচিত।—যির. ৫০:৭.

৩. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতা সম্বন্ধে আরও বেশি শিখতে পারি?

একমাত্র সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা তাঁকে পূর্ণরূপে আনন্দিত করতে পারব। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) এর জন্য প্রথমে আমাদের তাঁর বাক্য বাইবেল থেকে যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে যা-কিছু শেখা সম্ভব, তা শিখতে হবে। প্রতিদিন তাঁর সম্বন্ধে আমরা যত বেশি শিখব এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হব, তত বেশি আমরা তাঁর ধার্মিকতাকে ভালোবাসব। (যাকোব ৪:৮) এ ছাড়া, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় আমাদের ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের নির্দেশনা মেনে নিতে হবে।

ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করুন

৪. ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার সঙ্গে কী জড়িত?

মথি ৬:৩৩ পদ পড়ুন। ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার সঙ্গে শুধুমাত্র রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য সময় ব্যয় করার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। আমাদের পবিত্র সেবা যেন যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেইজন্য আমাদের রোজকার আচরণকে তাঁর উচ্চ মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। যারা যিহোবার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করে চলে, তাদের সকলকে কী করতে হবে? তাদেরকে অবশ্যই ‘নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিতে’ হবে, “যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট।”—ইফি. ৪:২৪.

৫. কী আমাদেরকে নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে?

আমরা যখন ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার প্রচেষ্টা করি, তখন মাঝে মাঝে আমরা হয়তো আমাদের ভুলত্রুটির জন্য নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। কী আমাদেরকে প্রচণ্ড নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে ওঠার এবং ধার্মিকতাকে ভালোবাসতে ও তার অনুশীলন করতে শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? (হিতো. ২৪:১০) আমাদের অবশ্যই নিয়মিতভাবে “সত্য হৃদয় সহকারে বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তায়” প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিহোবার নিকটে উপস্থিত হতে হবে। (ইব্রীয় ১০:১৯-২২) আমরা অভিষিক্ত খ্রিস্টান অথবা পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তি, যা-ই হই না কেন, আমাদের যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে এবং আমাদের মহান মহাযাজক হিসেবে তাঁর সেবায় বিশ্বাস করতে হবে। (রোমীয় ৫:৮; ৪:১৪-১৬) যিশুর পাতিত রক্তের কার্যকারিতা এই পত্রিকার একেবারে প্রথম সংখ্যাতেই তুলে ধরা হয়েছিল। (১ যোহন ১:৬, ৭) “এটা সত্য যে, আমরা [যখন] আলোতে কোনো সিন্দূরবর্ণ বা টক্‌টকে লাল বস্তুকে লাল কাচের মধ্য দিয়ে দেখি, তখন সেটা সাদা দেখায়; তাই, যদিও আমাদের পাপগুলো সিন্দূরবর্ণ বা টক্‌টকে লাল কিন্তু আমরা যখন এমন একটা অবস্থানে যাই, যেখানে ঈশ্বর সেগুলোকে খ্রিস্টের রক্তের মধ্য দিয়ে দেখবেন, তখন সেগুলোকে সাদা বলে গণ্য করা হবে।” (জুলাই ১৮৭৯, ইংরেজি, পৃষ্ঠা ৬) যিহোবা তাঁর প্রেমময় পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে আমাদের জন্য কত অপূর্ব ব্যবস্থাই না করেছেন!—যিশা. ১:১৮.

আপনার আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরীক্ষা করুন

৬. আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরীক্ষা করে দেখা কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

সর্বদা, আমাদের “ধার্ম্মিকতার বুকপাটা” পরিধান করে থাকতে হবে কারণ এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার এক অপরিহার্য সরঞ্জাম। (ইফি. ৬:১১, ১৪) আমরা সম্প্রতি নিজেদের উৎসর্গ করে থাকি কিংবা ইতিমধ্যেই কয়েক দশক ধরে তাঁর সেবা করে থাকি, যা-ই হোক না কেন, প্রতিদিন আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরীক্ষা করে দেখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ দিয়াবল ও তার মন্দদূতদের পৃথিবীর সীমার মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। (প্রকা. ১২:৭-১২) শয়তান রাগান্বিত এবং সে জানে যে, তার সময় সংক্ষিপ্ত। তাই, সে ঈশ্বরের লোকেদের ওপর তার আক্রমণকে আরও জোরদার করেছে। আমরা কি “ধার্ম্মিকতার বুকপাটা” পরিধান করার গুরুত্বকে মূল্যবান বলে গণ্য করি?

৭. ‘ধার্ম্মিকতার বুকপাটার’ প্রয়োজনীয়তাকে আমরা যদি মূল্যবান বলে গণ্য করি, তাহলে আমরা কীভাবে আচরণ করব?

একটা বুকপাটা আক্ষরিক হৃদয়কে রক্ষা করে। আমাদের অসিদ্ধতার কারণে আমাদের রূপক হৃদয় সাধারণত বঞ্চক এবং অপ্রতিকার্য বা বেপরোয়া হয়ে থাকে। (যির. ১৭:৯) যেহেতু আমাদের হৃদয় সাধারণত যা ভুল সেটা করতে চায়, তাই এই হৃদয়কে প্রশিক্ষিত এবং শাসন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। (আদি. ৮:২১) ‘ধার্ম্মিকতার বুকপাটার’ প্রয়োজনীয়তাকে আমরা যদি মূল্যবান বলে গণ্য করি, তাহলে আমরা ঈশ্বর ঘৃণা করেন এমন আমোদপ্রমোদ বাছাই করার মাধ্যমে এমনকী ক্ষণিকের জন্য হলেও সেটা খুলে রাখব না; অথবা আমরা অন্যায় কাজে রত হওয়ার স্বপ্ন দেখেও আনন্দিত হতে চাইব না। আমরা টেলিভিশন দেখে অনেকটা মূল্যবান সময় নষ্ট করব না। এর পরিবর্তে, আমরা যিহোবাকে খুশি করে এমন বিষয়গুলো করার জন্য যথাসাধ্য করে চলব। এমনকী আমরা যদি ক্ষণিকের জন্যও অধার্মিক মাংসিক চিন্তাভাবনার কাছে নতিস্বীকার করে হোঁচট খাই, তবুও যিহোবার সাহায্যে আমরা আবারও উঠে দাঁড়াতে পারব।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২৪:১৪.

৮. কেন আমাদের ‘বিশ্বাসের ঢাল’ প্রয়োজন?

আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার আরেকটা সরঞ্জাম হল ‘বিশ্বাসের ঢাল।’ এটা আমাদেরকে “পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে” সাহায্য করবে। (ইফি. ৬:১৬) ফল স্বরূপ, যিহোবার প্রতি বিশ্বাস ও সর্বান্তঃকরণে প্রেম আমাদেরকে ধার্মিকতা অনুশীলন করতে এবং অনন্তজীবনের পথে চলতে সাহায্য করবে। আমরা যিহোবাকে যত বেশি ভালোবাসতে শিখব, তত বেশি তাঁর ধার্মিকতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করব। কিন্তু, আমাদের বিবেক সম্বন্ধে কী বলা যায়? কীভাবে এটা আমাদেরকে ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

এক উত্তম বিবেক বজায় রাখুন

৯. কীভাবে আমরা এক উত্তম বিবেক বজায় রাখার মাধ্যমে উপকার লাভ করি?

বাপ্তিস্মের সময় আমরা “সৎসংবেদের” বা উত্তম বিবেকের জন্য যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলাম। (১ পিতর ৩:২১) যেহেতু আমরা মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলি, তাই যিশুর রক্ত আমাদের পাপগুলোকে আচ্ছাদন করে আর এভাবে আমরা ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ অবস্থান উপভোগ করি। কিন্তু, ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ অবস্থান বজায় রাখার জন্য আমাদের এক উত্তম বিবেক বজায় রাখতে হবে। আমাদের বিবেক যদি মাঝে মাঝে আমাদেরকে দংশন করে ও সাবধানবাণী দেয়, তাহলে আমাদের এই বিষয়ে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, এটা সঠিকভাবে কাজ করছে। এই ধরনের দংশন ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবার ধার্মিক পথ সম্বন্ধে আমাদের বিবেক অসংবেদনশীল হয়ে পড়েনি। (১ তীম. ৪:২) কিন্তু, বিবেক সেই ব্যক্তিদের জন্য আরও একটা ভূমিকা পালন করতে পারে, যারা ধার্মিকতাকে ভালোবাসে।

১০, ১১. (ক) এমন একটা অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলুন, যা দেখায় যে, বাইবেলের দ্বারা প্রশিক্ষিত বিবেকের প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। (খ) কেন ধার্মিকতার প্রতি ভালোবাসা আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসতে পারে?

১০ আমরা যখন কোনো অন্যায় করি, তখন আমাদের বিবেক আমাদেরকে দোষী করতে বা কষ্ট দিতে পারে। একজন তরুণ, ‘ধর্ম্মপথ’ থেকে সরে গিয়েছিল। পর্নোগ্রাফি দেখা তার নেশা হয়ে গিয়েছিল এবং সে মারিজুয়ানা সেবন করতে শুরু করেছিল। যেহেতু সভাতে গেলে তার নিজেকে দোষী বলে মনে হতো এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিলে নিজেকে কপট বলে মনে হতো, তাই সে এইসমস্ত খ্রিস্টীয় কাজে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। “কিন্তু,” সে বলেছিল, “আমি বুঝতেই পারিনি যে, আমার বিবেক আমাকে আমার কাজের জন্য দংশন করবে।” সে আরও বলেছিল, “আমি চার বছর ধরে মূর্খের মতো জীবনযাপন করেছিলাম।” এরপর, সে পুনরায় সত্যে ফিরে আসার বিষয়ে চিন্তা করেছিল। যদিও সে মনে করেছিল যে, যিহোবা তার প্রার্থনা শুনবেন না, তবুও সে প্রার্থনা করে ক্ষমা চেয়েছিল। প্রার্থনা করার পর, দশ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে তার মা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং তাকে সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। সে কিংডম হলে গিয়েছিল এবং তার সঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য একজন প্রাচীনকে অনুরোধ করেছিল। পরে, সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল এবং যিহোবা তার জীবন রক্ষা করেছেন বলে সে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

১১ আমরা কি প্রচুর আনন্দ লাভ করি না, যে-আনন্দ যা সঠিক, তা করার মাধ্যমে আসতে পারে? আমরা যখন ধার্মিকতাকে ভালোবাসতে এবং আরও পূর্ণরূপে এর অনুশীলন করতে শিখব, তখন আমরা সেই বিষয়গুলো করায় আরও বেশি আনন্দ খুঁজে পাব, যেগুলো আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করে। এ ছাড়া, একটু চিন্তা করে দেখুন! সেই দিন আসতে যাচ্ছে, যখন সমস্ত মানুষ তাদের বিবেকের কাছ থেকে শুধু আনন্দের অনুভূতিই উপভোগ করবে; তারা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করবে। তাই, আসুন আমরা আমাদের হৃদয়ের গভীরে ধার্মিকতার জন্য প্রেম গেঁথে দিই এবং যিহোবাকে আনন্দিত করি।—হিতো. ২৩:১৫, ১৬.

১২, ১৩. কীভাবে আমরা আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারি?

১২ আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করার জন্য আমরা কী করতে পারি? আমরা যখন শাস্ত্র এবং আমাদের বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পড়ি, তখন এই বিষয়টা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, “ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে।” (হিতো. ১৫:২৮) আমরা যখন চাকরি সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হই, তখন এটা কতটা উপকারী বলে প্রমাণিত হয়, তা বিবেচনা করুন। কোনো একটা কাজ যদি স্পষ্টতই শাস্ত্রীয় চাহিদার সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে, তাহলে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা জোগানো নির্দেশনার প্রতি দ্রুত সাড়া দিই। কিন্তু, যখন চাকরি সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায় না, তখন আমাদের বাইবেলের নীতিগুলোতে মনোযোগ দেওয়া এবং সেগুলো প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করা উচিত। * এই বিষয়টা সেই নীতিগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যখন অন্যদের বিবেককে আঘাত দেওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। (১ করি. ১০:৩১-৩৩) বিশেষভাবে আমাদের সেই নীতিগুলো বিবেচনা করা উচিত, যেগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্ত। যিহোবা যদি আমাদের কাছে বাস্তব হন, তাহলে আমরা প্রথমে নিজেদেরকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করব যে, ‘আমার এই কাজটা কি যিহোবাকে মনঃপীড়া দেবে, তাঁকে অসন্তুষ্ট করবে?’—গীত. ৭৮:৪০, ৪১.

১৩ আমরা যখন প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন অথবা মণ্ডলীর বাইবেল অধ্যয়ন-এর জন্য প্রস্তুতি নিই, তখন উপস্থাপিত তথ্য নিয়ে ধ্যান করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা আমাদের মনে রাখা উচিত। আমরা কি সবসময় তাড়াহুড়ো করে অধ্যয়ন প্রশ্নের উত্তরে দাগ দিয়ে পরের অনুচ্ছেদে চলে যাই? এইরকম অধ্যয়ন হয়তো ধার্মিকতার প্রতি আমাদের প্রেমকে গভীর করবে না অথবা আমাদের বিবেককে সংবেদনশীল করে তুলবে না। আমরা যদি ধার্মিকতাকে ভালোবাসতে চাই, তাহলে আমাদের অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে এবং ঈশ্বরের লিখিত বাক্যে আমরা যা পড়ি, সেটা নিয়ে ধ্যান করতে হবে। আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে ধার্মিকতাকে ভালোবাসার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত

১৪. আমরা আমাদের পবিত্র সেবাকে কীভাবে দেখব বলে যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্ট চান?

১৪ যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্ট চান, যেন আমরা আমাদের পবিত্র সেবা প্রদান করার সময় ধন্য বা সুখী হই। কোন বিষয়টা আমাদের সুখী হতে সাহায্য করবে? ধার্মিকতার প্রতি ভালোবাসা! পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, কারণ তাহারা পরিতৃপ্ত হইবে।” (মথি ৫:৬) যাদের ধার্মিকতাকে ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তাদের জন্য এই কথাগুলোর কোন তাৎপর্য রয়েছে?

১৫, ১৬. কোন কোন উপায়ে আধ্যাত্মিক ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা পরিতৃপ্ত হবে?

১৫ আমরা যে-জগতে বাস করি, তা পাপাত্মার দ্বারা শাসিত। (১ যোহন ৫:১৯) আমরা যদি যেকোনো দেশে কোনো সংবাদপত্র নিয়ে পড়ি, তাহলে সেখানে আমরা নজিরহীন মাত্রায় নিষ্ঠুরতা ও দৌরাত্ম্যের সংবাদ পাব। মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিকতার বিষয়টা ধার্মিক ব্যক্তিরা চিন্তাই করতে পারে না। (উপ. ৮:৯) যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তাদের ক্ষেত্রে আমরা জানি যে, একমাত্র তিনিই সেই ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটাতে পারেন, যারা ধার্মিকতা সম্বন্ধে শেখার আকাঙ্ক্ষা করে। ভক্তিহীন লোকেদেরকে শীঘ্র দূর করা হবে এবং যারা ধার্মিকতাকে ভালোবাসে, তারা আর ধর্মহীন বা আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের এবং তাদের মন্দ কাজগুলোর দ্বারা কষ্ট ভোগ করবে না। (২ পিতর ২:৭, ৮) এটা কত স্বস্তিই না নিয়ে আসবে!

১৬ যিহোবার দাস এবং যিশু খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে আমরা বুঝতে পারি যে, যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, তারা “পরিতৃপ্ত হইবে।” ঈশ্বর যে-নতুন আকাশমণ্ডল এবং নতুন পৃথিবীর ব্যবস্থা করেছেন, “যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে,” সেটার মাধ্যমে তারা পূর্ণরূপে পরিতৃপ্তি লাভ করবে। (২ পিতর ৩:১৩) তাই, আসুন আমরা যেন নিরুৎসাহিত হয়ে না পড়ি অথবা শয়তানের এই জগতে পীড়ন এবং ধার্মিকতার খণ্ডন বা অভাব দেখলে সেই ব্যাপারে অবাক না হই। (উপ. ৫:৮) পরাৎপর যিহোবা জানেন যে, কোন বিষয়গুলো ঘটছে আর তাই শীঘ্র তিনি সেই ব্যক্তিদের উদ্ধার করবেন, যারা ধার্মিকতাকে ভালোবাসে।

ধার্মিকতাকে ভালোবেসে উপকার লাভ করুন

১৭. কিছু উপকার কী, যেগুলো ধার্মিকতাকে ভালোবাসার ফলে আসে?

১৭ গীতসংহিতা ১৪৬:৮ পদ, ধার্মিক পথে চলার এক উল্লেখযোগ্য উপকার সম্বন্ধে তুলে ধরে। গীতরচক গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু ধার্ম্মিকদিগকে প্রেম করেন।” একটু কল্পনা করুন! আমরা ধার্মিকতাকে ভালোবাসি বলে নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু আমাদের ভালোবাসেন! যিহোবার প্রেমের কারণে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, আমরা যদি আমাদের জীবনে রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখি, তাহলে তিনি আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:২৫; হিতোপদেশ ১০:৩.) পরিশেষে, এই সম্পূর্ণ গ্রহ সেই ব্যক্তিদের দ্বারা পূর্ণ হবে, যারা ধার্মিকতাকে ভালোবাসে। (হিতো. ১৩:২২) ঈশ্বরের অধিকাংশ লোক ধার্মিকতা অনুশীলনের জন্য যে-পুরস্কার লাভ করবে, তা হল তারা এক অপূর্ব পার্থিব পরমদেশে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে এবং অনন্তজীবন লাভ করবে। এমনকী এখনই, যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে ভালোবাসে, তারা মনের শান্তি লাভ করে, যা তাদের পরিবার ও মণ্ডলীতে একতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে।—ফিলি. ৪:৬, ৭.

১৮. যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা কোন কোন ইতিবাচক বিষয় করতে পারি?

১৮ যিহোবার মহাদিনের অপেক্ষা করার সময় আমাদেরকে প্রথমে তাঁর ধার্মিকতার অনুশীলন করে যেতে হবে। (সফ. ২:২, ৩) তাই, আসুন আমরা যিহোবা ঈশ্বরের ন্যায়নিষ্ঠ পথের প্রতি এক অকৃত্রিম প্রেম প্রকাশ করি। এর অন্তর্ভুক্ত হল আমাদেরকে এমন স্থানে “ধার্ম্মিকতার বুকপাটা” দৃঢ়ভাবে পরতে হবে, যেন তা আমাদের রূপক হৃদয়কে রক্ষা করে। এ ছাড়া, আমাদের এক উত্তম বিবেকও বজায় রাখতে হবে, এমন এক বিবেক, যা আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে এবং আমাদের ঈশ্বরের হৃদয়কে আনন্দিত করবে।—হিতো. ২৭:১১.

১৯. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত আর পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

১৯ “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশা. ১৬:৯) এই কথাগুলো আমাদের জন্য কতই না সান্ত্বনাদায়ক, যখন আমরা এই সমস্যাপূর্ণ জগতে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা অস্থিরতা, দৌরাত্ম্য এবং দুষ্টতার মুখোমুখি হয়েও যা সঠিক, তা করে চলি! এটা ঠিক যে, আমাদের ধার্মিক পথ দেখে হয়তো ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতির মধ্যে অধিকাংশই আশ্চর্য হয়ে যায়। কিন্তু, যিহোবার ধার্মিকতার প্রতি আসক্ত থাকার মাধ্যমে আমরা প্রচুর উপকার লাভ করি। (যিশা. ৪৮:১৭; ১ পিতর ৪:৪) তাই, আসুন আমরা সর্বান্তঃকরণে ধার্মিকতাকে ভালোবাসার এবং ক্রমাগতভাবে ভালোবেসে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যা কিনা আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে। কিন্তু, পূর্ণহৃদয়ে ধার্মিকতাকে ভালোবেসে চলার সঙ্গে দুষ্টতাকে ঘৃণা করাও জড়িত। পরের প্রবন্ধ আমাদের দেখাবে যে, এর অর্থ কী।

[পাদটীকা]

^ চাকরি সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে বাইবেলের নীতিগুলো আলোচনার জন্য ১৯৯৯ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৮-৩০ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ধার্মিকতাকে ভালোবাসার জন্য কেন মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধি দেখানো প্রয়োজন?

• কেন আমাদের জন্য “ধার্ম্মিকতার বুকপাটা” পরিধান করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

• কীভাবে আমরা আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

এক প্রশিক্ষিত বিবেক আমাদেরকে চাকরি সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে সাহায্য করে