সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

যিশু খ্রিস্ট যখন তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি কি তাদের যষ্টি নিতে ও পায়ে পাদুকা দিতে বলেছিলেন?

কেউ কেউ এই বিষয়ে তর্ক করে যে, সুসমাচারের তিনটে বিবরণ, যেগুলো যিশুর প্রেরিতদের প্রচারে পাঠানোর বিষয়ে তুলে ধরে, সেগুলো পরস্পরবিরোধী। কিন্তু, এই বিবরণগুলো তুলনা করার মাধ্যমে আমরা এক আগ্রহজনক উপসংহারে পৌঁছাতে পারি। প্রথমে, মার্ক ও লূকের লেখা বিষয়বস্তু তুলনা করুন। মার্কের বিবরণ বলে: “[যিশু] আজ্ঞা করিলেন, তোমরা যাত্রার জন্য এক এক যষ্টি ব্যতিরেকে আর কিছু লইও না, রুটীও না, ঝুলিও না, গেঁজিয়ায় পয়সাও না; কিন্তু পায়ে পাদুকা দেও, আর দুইটা আঙ্‌রাখা পরিও না।” (মার্ক ৬:৭-৯) লূক লিখেছিলেন: “পথের জন্য কিছুই লইও না, যষ্টিও না, ঝুলিও না, খাদ্যও না, টাকাও না; দুই দুইটা আঙ্‌রাখাও লইও না।” (লূক ৯:১-৩) এখানে আমরা আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী বিষয় লক্ষ করি। মার্কের কথা অনুযায়ী, প্রেরিতদের যষ্টি নিতে ও পায়ে পাদুকা দিতে বলা হয়েছিল কিন্তু লূকের বিবরণ বলে যে, তাদেরকে কিছুই না নিতে, এমনকী যষ্টিও না নিতে বলা হয়েছিল। মার্কের বৈসাদৃশ্যে, লূক পাদুকার বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি।

সেই সময়ে যিশু যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, তা বোঝার জন্য সুসমাচারের তিনটে বিবরণের মধ্যেই প্রাপ্ত একটি অভিব্যক্তি লক্ষ করুন। ওপরে উদ্ধৃত বিবরণে ও সেইসঙ্গে মথি ১০:৫-১০ পদে প্রেরিতদের বলা হয়েছিল, যেন তারা “দুইটী আঙ্‌রাখা” না নেয় বা না পরে। খুব সম্ভবত, প্রেরিতরা প্রত্যেকে একটা করে আঙ্‌রাখা পরেছিলেন। তাই, যাত্রার জন্য তাদের আরেকটা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। একইভাবে, তারা ইতিমধ্যেই পাদুকা পরে ছিল। তাদের যাত্রার জন্য আরেক জোড়া পাদুকা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু, যষ্টি সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহুদি বিশ্বকোষ (ইংরেজি) জানায়: “প্রাচীন ইব্রীয়দের মধ্যে একটা যষ্টিও সঙ্গে নেওয়া সাধারণ প্রথা ছিল বলে মনে হয়।” (আদি. ৩২:১০) মার্ক উল্লেখ করেছিলেন যে, যিশু যখন প্রেরিতদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তখন তাদের সঙ্গে থাকা যষ্টি ছাড়া ‘যাত্রার জন্য আর কিছু লওয়ার’ প্রয়োজন ছিল না। অতএব, সুসমাচারের লেখকরা অতিরিক্ত জিনিসপত্র নেওয়ার কারণে যাত্রায় দেরি না করার বিষয়ে যিশুর নির্দেশনার ওপর জোর দিয়েছিল।

মথি এই বিষয়টার ওপর আরও জোর দিয়েছিলেন, যিনি সেই সময়ে যিশুর আজ্ঞা শুনেছিলেন ও তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের গেঁজিয়ায় স্বর্ণ কি রৌপ্য কি পিত্তল, এবং যাত্রার জন্য থলি কি দুইটী আঙ্‌রাখা কি পাদুকা কি যষ্টি, এ সকলের আয়োজন করিও না; কেননা কার্য্যকারী নিজ আহারের যোগ্য।” (মথি ১০:৯, ১০) প্রেরিতরা যে-পাদুকা পরা ছিল এবং তাদের হাতে যে-যষ্টি ছিল, সেগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিশু তাদেরকে তাদের কাছে ইতিমধ্যেই যা ছিল, সেগুলো ফেলে দিতে বলেননি বরং তিনি বলেছিলেন যেন তারা এই জিনিসগুলোর আয়োজন বা সেগুলো সংগ্রহ না করে। কেন তিনি এই ধরনের এক আজ্ঞা দিয়েছিলেন? কারণ “কার্য্যকারী নিজ আহারের যোগ্য।” এটা ছিল যিশুর আজ্ঞার মূল বিষয়, যা তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে দেওয়া এই পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, তারা কী খাবে, কী পান করবে বা কী পরবে, সেই বিষয়ে তাদের চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।—মথি ৬:২৫-৩২.

যদিও প্রথমে সুসমাচারের বিবরণগুলোকে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে কিন্তু সেগুলো একই বিষয় তুলে ধরেছিল। প্রেরিতদের কাছে যা ছিল, সেগুলো নিয়েই যাত্রা করতে হয়েছিল আর তাদের অতিরিক্ত জিনিসপত্র সংগ্রহ করার কারণে বিক্ষিপ্ত হতে হয়নি। কেন? কারণ যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেবেন।

নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের উপদেশক ২:৮ পদে শলোমন “এক নারী, এমনকী নারীদের” বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন আর অন্যান্য অনেক অনুবাদেও একই ধরনের বিষয় রয়েছে। শলোমন কাদের সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন?

যদিও আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না, তবে একটা সম্ভাবনা হচ্ছে, তারা ছিল সেই সম্ভ্রান্ত মহিলারা, যাদের সঙ্গে তার রাজসভায় শলোমনের সাক্ষাৎ হয়েছিল।

উপদেশক ২ অধ্যায়ে শলোমন তার সম্পাদিত বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলোর মধ্যে বিশাল নির্মাণ প্রকল্পগুলোও ছিল। তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি রৌপ্য ও সুবর্ণ এবং নানা রাজার ও নানা প্রদেশের বিশেষ বিশেষ ধন সঞ্চয় করিলাম; আমি অনেক গায়ক গায়িকা ও মনুষ্য-সন্তানদের সন্তোষকারিণী কত উপপত্নী [“এক নারী, এমনকী নারীদের,” NW] পাইলাম।”—উপ. ২:৮.

অনেক সমালোচক মনে করে যে, শলোমনের উল্লেখিত ‘নারীরা’ হল সেই বিদেশি স্ত্রীরা ও উপপত্নীরা, যারা শেষ বয়সে তার সঙ্গে ছিল অর্থাৎ সেই মহিলারা, যারা তাকে মিথ্যা উপাসনার দিকে পরিচালিত করেছিল। (১ রাজা. ১১:১-৪) কিন্তু, এই ব্যাখ্যায় কিছু সমস্যা রয়েছে। শলোমন যখন সেই কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন তিনি ইতিমধ্যেই সেই ‘নারী, এমনকী নারীদের’ সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। আর সেই সময়ে, তার ওপর তখনও পর্যন্ত যিহোবার অনুমোদন ছিল কারণ ঈশ্বর তাকে বাইবেলের বিভিন্ন বই লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করছিলেন। এটা তার শেষ বয়সের পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যখন তার সঙ্গে শত শত বিদেশি স্ত্রী ও উপপত্নী ছিল এবং তিনি মিথ্যা উপাসনায় জড়িত হয়ে গিয়েছিলেন।

উপদেশক বইয়ে শলোমন বলেছিলেন যে, তিনি “মনোহর বাক্য, এবং যাহা সরলভাবে লিখিত হইয়াছে, অর্থাৎ সত্যের বাক্য, প্রাপ্ত হইবার জন্য অনুসন্ধান করিতেন।” (উপ. ১২:১০) তিনি নিশ্চিতভাবেই “ভার্য্যা,” “রাণী” ও “উপপত্নী” শব্দগুলো জানতেন কারণ তার অনুপ্রাণিত লেখাগুলোতে তিনি সেই শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন। (হিতো. ৫:১৮; ১২:৪; ১৮:২২; উপ. ৯:৯; পরম. ৬:৮, ৯) কিন্তু, উপদেশক ২:৮ পদে সেই সুপরিচিত শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়নি।

“এক নারী, এমনকী নারীদের” এই শব্দগুলোতে আমরা এক ভিন্ন ধরনের ইব্রীয় শব্দ দেখতে পাই, যা বাইবেলে শুধু এক বারই (একবচনে ও বহুবচনে) পাওয়া যায়। পণ্ডিত ব্যক্তিরা স্বীকার করে যে, এর অর্থ অনিশ্চিত। অনেক বাইবেল অনুবাদক উপদেশক ২:৮ পদে প্রাপ্ত বাক্যাংশটি সেই নারীদেরকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করে, যাদেরকে প্রথমে একবচনে ও পরে বহুবচনে অথবা সর্বোচ্চ মাত্রাসূচক অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে। “এক নারী, এমনকী নারীদের” হিসেবে অনুবাদিত বাক্যাংশটি সেই ধারণাকেই প্রকাশ করে।

শলোমন এতটাই সুপরিচিত ছিলেন যে, শিবা নামে সমৃদ্ধশালী এক রাজ্যের রানি তার সম্বন্ধে শুনেছিলেন, তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১০:১, ২) এই বিষয়টা শলোমনের উল্লেখিত “এক নারী, এমনকী নারীদের” এক সম্ভাব্য অর্থ নির্দেশ করে। তিনি হয়তো সেই বিশিষ্ট নারীদেরকে নির্দেশ করছিলেন, যাদের সঙ্গে বহু বছর ধরে রাজসভায় তার দেখা হয়েছিল, যে-বছরগুলোতে তখনও তার ওপর ঈশ্বরের অনুগ্রহ ছিল।