সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সম্পূর্ণ গুরুত্বের সঙ্গে যিহোবার সেবা করা

সম্পূর্ণ গুরুত্বের সঙ্গে যিহোবার সেবা করা

সম্পূর্ণ গুরুত্বের সঙ্গে যিহোবার সেবা করা

“যাহা যাহা আদরণীয় [“যে-বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে হয়,” NW] . . . সেই সকল আলোচনা কর।”—ফিলি. ৪:৮.

১, ২. কোন বিষয়টা এই জগতের অনেককে জীবন সম্বন্ধে এক গুরুত্বহীন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে পরিচালিত করেছে আর এর ফলে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

 আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যে-জগৎ মানবইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন ও বিপর্যয়মূলক সময় ভোগ করছে। যে-লোকেদের যিহোবার সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক নেই, তাদের জন্য ‘বিষম সময়ের’ সঙ্গে মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব হতে পারে। (২ তীম. ৩:১-৫) তারা কেবলমাত্র নিজেদের শক্তিতে প্রতিটা দিন পার করে—তবে শুধু সীমিত সফলতা লাভ করে থাকে। জীবনকে অতিরিক্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া এড়িয়ে চলার প্রচেষ্টায় অনেকে বিনোদন জগতের আমোদপ্রমোদের অবিরাম স্রোতে মনোনিবেশ করে।

জীবনের বিভিন্ন চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য লোকেরা প্রায়ই ভোগবিলাসের আকাঙ্ক্ষাকে প্রথম স্থানে রাখে। সতর্ক না হলে, খ্রিস্টানরাও খুব সহজেই এই ধরনের জীবনযাপনের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। কীভাবে আমরা তা এড়িয়ে চলতে পারি? এর জন্য কি আমাদের সবসময় গাম্ভীর্য বজায় রাখতে হবে? কীভাবে আমরা ভোগবিলাস ও দায়িত্বগুলোর মধ্যে এক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা করতে পারি? জীবনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার সময় আমরা যাতে নিজেদেরকে অতিরিক্ত গম্ভীর করে না ফেলি, সেইজন্য কোন শাস্ত্রীয় নীতিগুলো আমাদের নির্দেশনা দিতে পারে?

বিলাসপ্রিয় এক জগতে গাম্ভীর্য বজায় রাখা

৩, ৪. কীভাবে শাস্ত্র আমাদের গাম্ভীর্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে?

এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, এই জগৎ “বিলাসপ্রিয়” মনোভাবের ওপর অহেতুক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। (২ তীম. ৩:৪) এই জগৎ যে আমোদপ্রমোদ করার ওপর জোর দেয়, তা আমাদের আধ্যাত্মিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। (হিতো. ২১:১৭) তাই, উপযুক্ত কারণেই তীমথিয় ও তীতের উদ্দেশে লেখা প্রেরিত পৌলের চিঠিগুলোতে ধীর হওয়ার বা গাম্ভীর্য বজায় রাখার পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই পরামর্শ কাজে লাগানো আমাদেরকে জীবন সম্বন্ধে জগতের গুরুত্বহীন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত না হতে সাহায্য করবে।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:১, ২; তীত ২:২-৮.

শত শত বছর আগে, শলোমন জীবন সম্বন্ধে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করার জন্য মাঝে মাঝে আমোদপ্রমোদ পরিহার করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে লিখেছিলেন। (উপ. ৩:৪; ৭:২-৪) সত্যিই, আমাদের জীবন সংক্ষিপ্ত বলে পরিত্রাণ লাভ করার জন্য আমাদের “প্রাণপণ” করতে হবে। (লূক ১৩:২৪) তা করার জন্য, আমাদের এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা বা বিবেচনা করে চলতে হবে, “যে-বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বের” বা গাম্ভীর্যের “সঙ্গে চিন্তা করতে হয়।” (ফিলি. ৪:৮, ৯) এর মানে হচ্ছে, খ্রিস্টীয় জীবনের প্রতিটা দিকে সতর্ক মনোযোগ দেওয়া।

৫. জীবনের কোন একটা ক্ষেত্রকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত?

উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা ও যিশুকে অনুকরণ করে খ্রিস্টানরা তাদের কঠোর পরিশ্রম করার দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। (যোহন ৫:১৭) ফল স্বরূপ, তারা প্রায়ই তাদের উত্তম কাজের ও নির্ভরযোগ্যতার কারণে প্রশংসিত হয়। বিশেষভাবে, পরিবারের মস্তকরা তাদের পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করার ব্যাপারে চিন্তা করে থাকে। কারণ, নিজের পরিবারের বস্তুগত বিষয়গুলো না জোগানো একজন ব্যক্তির জন্য যিহোবাকে “অস্বীকার” করার শামিল!—১ তীম. ৫:৮.

আমাদের উপাসনার প্রতি এক গাম্ভীর্যপূর্ণ ও একইসঙ্গে আনন্দপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা

৬. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবার উপাসনা করাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত?

যিহোবা সত্য উপাসনাকে কখনোই হালকাভাবে নেননি। উদাহরণস্বরূপ, মোশির ব্যবস্থার অধীনে থাকাকালীন, ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবাকে উপাসনা করা থেকে ভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তখন চরম পরিণতি ভোগ করেছিল। (যিহো. ২৩:১২, ১৩) সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে, বিভিন্ন কলুষিত শিক্ষা ও মনোভাব থেকে সত্য উপাসনাকে মুক্ত রাখার জন্য খ্রিস্টের অনুসারীদের প্রাণপণ লড়াই করতে হয়েছিল। (২ যোহন ৭-১১; প্রকা. ২:১৪-১৬) বর্তমানে, সত্য খ্রিস্টানরা তাদের উপাসনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে।—১ তীম. ৬:২০.

৭. কীভাবে পৌল তার পরিচর্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যা হল আনন্দের উৎস। কিন্তু, পরিচর্যায় আনন্দ বজায় রাখার জন্য আমাদের এটা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে ও সেই সম্বন্ধে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। পৌল যাদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি তিনি কীভাবে চিন্তা দেখিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “সর্ব্বদা কতকগুলি লোককে পরিত্রাণ করিবার জন্য আমি সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হইলাম। আমি সকলই সুসমাচারের জন্য করি, যেন তাহার সহভাগী হই।” (১ করি. ৯:২২, ২৩) পৌল লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করে আনন্দ লাভ করেছিলেন এবং তিনি এই বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করেছিলেন যে, কীভাবে তিনি তার শ্রোতাদের সুনির্দিষ্ট চাহিদাগুলো মেটাতে পারেন। এভাবে, তিনি তাদেরকে যিহোবার উপাসনা করার জন্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিতে পেরেছিলেন।

৮. (ক) পরিচর্যায় আমরা যে-লোকেদের শিক্ষা দিই, তাদের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত? (খ) একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা কীভাবে এক আনন্দপূর্ণ পরিচর্যায় অবদান রাখতে পারে?

পৌলের কাছে তার পরিচর্যা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? তিনি যিহোবার ও যারা সত্যের বার্তা শুনবে, তাদের “দাসত্ব” করতে ইচ্ছুক ছিলেন। (রোমীয় ১২:১২; ১ করি. ৯:১৯) আমরা যখন লোকেদেরকে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করি—তা সেটা গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের, খ্রিস্টীয় সভার অথবা পারিবারিক উপাসনার সময়, যখনই হোক না কেন—তখন আমরা কি সেই ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব উপলব্ধি করি, যাদেরকে আমরা শিক্ষা দিচ্ছি? আমাদের হয়তো মনে হতে পারে যে, নিয়মিতভাবে একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার দায়িত্ব নেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত ভারী এক বোঝা। এটা ঠিক যে, এর জন্য সাধারণত আমাদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় থেকে সময় বের করে নিয়ে সেই সময়টা অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিয়োজিত করা প্রয়োজন। কিন্তু, এটা কি যিশুর বলা এই কথাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়”? (প্রেরিত ২০:৩৫) পরিত্রাণের উপায় সম্বন্ধে অন্যদের ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা দেওয়ার কাজ আমাদের জন্য সুখ নিয়ে আসবে, যে-কাজকে অন্য আর কোনো কাজের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।

৯, ১০. (ক) গাম্ভীর্য বজায় রাখার অর্থ কী এই যে, আমরা লোকেদের সঙ্গে অবসর ও উপভোগ্য সময় কাটাতে পারব না? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কী একজন প্রাচীনকে উৎসাহদানকারী ও বন্ধুত্বপরায়ণ ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করবে?

গাম্ভীর্য বজায় রাখার অর্থ এই নয় যে, আমরা লোকেদের সঙ্গে অবসর ও উপভোগ্য সময় কাটাতে পারব না। যিশু কেবল অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর ও এক অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যও সময় করে নেওয়ার ব্যাপারে এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। (লূক ৫:২৭-২৯; যোহন ১২:১, ২) গাম্ভীর্য বজায় রাখার অর্থ এও নয় যে, আমাদের সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকতে হবে। যিশু যদি অতিরিক্ত গম্ভীর স্বভাবের হতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই লোকেরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতো না। এমনকী ছোটো ছেলে-মেয়েরাও তাঁর সঙ্গে স্বচ্ছন্দবোধ করত। (মার্ক ১০:১৩-১৬) কীভাবে আমরা যিশুর ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ অনুকরণ করতে পারি?

১০ একজন প্রাচীনের কথা উল্লেখ করে একজন ভাই বলেছিলেন, “তিনি নিজের কাছ থেকে অনেকটা আশা করেন ঠিকই কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে কখনোই সিদ্ধতা আশা করেন না।” আপনার সম্বন্ধেও কি এমনটা বলা যায়? অন্যদের কাছ থেকে কিছুটা যুক্তিযুক্ত প্রত্যাশা করা উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, বাবা-মায়েরা যখন যুক্তিযুক্ত লক্ষ্য স্থাপন করে ও সন্তানদের সেগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করে, তখন সন্তানরা উত্তমভাবে সাড়া দিয়ে থাকে। একইভাবে, প্রাচীনরা হয়তো মণ্ডলীর ব্যক্তি বিশেষদের আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে পারে এবং কীভাবে বৃদ্ধি লাভ করা যায়, সেই বিষয়ে তাদেরকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে পারে। অধিকন্তু, একজন প্রাচীন যখন নিজের সম্বন্ধে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখেন, তখন তিনি উৎসাহদানকারী ও বন্ধুত্বপরায়ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। (রোমীয় ১২:৩) একজন বোন বলেছিলেন: “একজন প্রাচীন সমস্তকিছুকে মজা হিসেবে নেবেন, তা আমি কখনো চাইব না। কিন্তু, তিনি যদি আবার সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকেন, তাহলে তার কাছে যাওয়াও কঠিন।” আরেকজন বোন বলেছিলেন যে, তার কাছে মনে হয় কোনো কোনো প্রাচীনকে “দেখে অনেক ভয় লাগতে পারে কারণ তারা অত্যন্ত গম্ভীর স্বভাবের।” “পরম ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বর’ যিহোবার উপাসনার প্রতি সমস্ত বিশ্বাসীর যে-আনন্দপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত, সেটাকে প্রাচীনরা কখনোই নষ্ট করে দিতে চাইবে না।—১ তীম. ১:১১.

মণ্ডলীতে দায়িত্ব গ্রহণ করা

১১. মণ্ডলীতে ‘আকাঙ্ক্ষী হইবার’ অর্থ কী?

১১ পৌল যখন মণ্ডলীর পুরুষদের আরও বড়ো দায়িত্বের জন্য যোগ্য হওয়ার প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করেছিলেন, তখন কাউকে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ করতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য তার ছিল না। এর পরিবর্তে, তিনি লিখেছিলেন: “যদি কেহ অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হন, তবে তিনি উত্তম কার্য্য বাঞ্ছা করেন।” (১ তীম. ৩:১, ৪) ‘আকাঙ্ক্ষী হইবার’ জন্য খ্রিস্টান পুরুষদের কঠোর পরিশ্রম করার এক প্রচণ্ড আগ্রহ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের ভাইদের সেবা করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক গুণাবলি অর্জন করতে পারে। একজন ভাই যদি অন্ততপক্ষে এক বছর ধরে বাপ্তাইজিত হয়ে থাকেন এবং ১ তীমথিয় ৩:৮-১৩ পদে পরিচারক দাসদের জন্য উল্লেখিত শাস্ত্রীয় যোগ্যতাগুলো যুক্তিযুক্ত মাত্রায় অর্জন করে থাকেন, তাহলে তাকে নিযুক্ত করার ব্যাপারে সুপারিশ করা যেতে পারে। লক্ষ করুন যে, বিশেষভাবে ৮ পদ বলে: “সেইরূপ পরিচারকদেরও আবশ্যক, যেন তাঁহারা ধীর হন” বা গাম্ভীর্য বজায় রাখেন।

১২, ১৩. অল্পবয়সি ভাইয়েরা যে-উপায়গুলোতে তাদের দায়িত্বের জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে পারে, সেগুলো বর্ণনা করুন।

১২ তুমি কি এমন একজন কিশোর বয়সি বাপ্তাইজিত ভাই, যে গাম্ভীর্য বজায় রাখে? আকাঙ্ক্ষী হওয়ার বেশ কয়েকটা উপায় রয়েছে। এর মধ্যে একটা হল, আরেকটু বেশি করে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়া। তুমি কি এমন একজন ভাই, যে পরিচর্যায় সব বয়সের ভাইবোনদের সঙ্গে কাজ করা উপভোগ করে থাকে? তুমি কি এমন কাউকে খোঁজার চেষ্টা করছ, যাকে তুমি বাইবেল অধ্যয়ন করাতে পার? তুমি যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে প্রদত্ত পরামর্শ অনুসারে একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করো, তখন তোমার শিক্ষাদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। অধিকন্তু, তুমি সেই ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি দেখাতে শিখবে, যিনি যিহোবার পথ সম্বন্ধে শিখছেন। তোমার ছাত্র যখন পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শুরু করবেন, তখন তুমি তাকে ধৈর্য ও বিচক্ষণতা সহকারে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে শিখবে।

১৩ অল্পবয়সি ভাইয়েরা, তোমরা মণ্ডলীতে বয়স্ক ভাইবোনদের জন্য নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে পার, তাদেরকে সম্ভাব্য যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিতে পার। এ ছাড়া, তোমরা কিংডম হলের প্রতিও খেয়াল রাখতে পার, সেটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পার। তোমরা যখন তোমাদের সাধ্যমতো যেকোনো উপায়ে সাহায্য করো, তখন তোমাদের ইচ্ছুক মনোভাব এই প্রমাণ দেয় যে, তোমরা পরিচর্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছ। তীমথিয়ের মতো, তোমরাও মণ্ডলীর প্রয়োজনগুলোর প্রতি প্রকৃত চিন্তা দেখানোর বিষয়টা শিখতে পার।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১৯-২২.

১৪. কীভাবে অল্পবয়সি ভাইদেরকে মণ্ডলীতে সেবা করার জন্য “পরীক্ষা করা” যেতে পারে?

১৪ প্রাচীন ভাইয়েরা, সেই অল্পবয়সি ভাইদের কাজে নিয়োজিত করার বিষয়টা খেয়াল রাখুন, যারা ‘যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন করিতে’ আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং অন্যান্য উত্তম গুণের সঙ্গে সঙ্গে “ধার্ম্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তির” অনুধাবন করছে। (২ তীম. ২:২২) মণ্ডলীতে তাদেরকে বিভিন্ন কাজ করার জন্য নিযুক্ত করার মাধ্যমে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে “পরীক্ষা করা” যেতে পারে, যেন তাদের ‘উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হইতে’ পারে।—১ তীম. ৩:১০; ৪:১৫.

মণ্ডলীতে ও পরিবারে গাম্ভীর্য প্রদর্শন করা

১৫. প্রথম তীমথিয় ৫:১, ২ পদ অনুযায়ী কীভাবে আমরা অন্যদের সম্বন্ধে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে গাম্ভীর্য বজায় রাখতে পারি?

১৫ গাম্ভীর্য বজায় রাখার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, ভাইবোনদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা। তীমথিয়ের উদ্দেশে দেওয়া তার পরামর্শে পৌল অন্যদেরকে সম্মানের চোখে দেখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:১, ২.) এই বিষয়টা বিশেষভাবে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণ করার সময় গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের প্রতি, বিশেষভাবে নিজ বিবাহসাথির প্রতি মর্যাদা দেখানোর ক্ষেত্রে ইয়োবের উদাহরণ অনুকরণযোগ্য। তিনি অন্য নারীর প্রতি কামবাসনা সহকারে না তাকানোর ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন। (ইয়োব ৩১:১) আমাদের ভাই ও বোনদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, তাদের সঙ্গে প্রেমের ভান অথবা এমন যেকোনো কিছু করতে বাধা দেবে, যে-বিষয়টা একজন ভাই কিংবা বোনের পক্ষে আমাদের আশেপাশে থাকাকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। বিশেষভাবে সেই সময়ে অন্যদের মর্যাদা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ, যখন দুজন ব্যক্তি বিয়ের কথা মাথায় রেখে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে। গাম্ভীর্য বজায় রাখেন এমন একজন খ্রিস্টান কখনোই বিপরীত লিঙ্গের একজন ব্যক্তির আবেগ নিয়ে খেলা করবেন না।—হিতো. ১২:২২.

১৬. একজন স্বামী ও বাবার ভূমিকা সম্বন্ধে জগতের কারো কারো দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাইবেলে বর্ণিত তার ভূমিকার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরুন।

১৬ এ ছাড়া, আমাদের পরিবারে ঈশ্বরদত্ত বিভিন্ন ভূমিকার প্রতি এক গাম্ভীর্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য সতর্ক হতে হবে। শয়তানের জগৎ স্বামীর ও বাবার ভূমিকাকে হেয় করে থাকে। বিনোদনজগৎ পরিবারের মস্তককে নিছক উপহাস ও অসম্মানের এক পাত্রে পরিণত করে আনন্দ পেয়ে থাকে। কিন্তু, শাস্ত্র স্বামীকে “স্ত্রীর মস্তক” হিসেবে নিযুক্ত করে স্বামীর ওপর এক বিরাট দায়িত্ব অর্পণ করে।—ইফি. ৫:২৩; ১ করি. ১১:৩.

১৭. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে পারিবারিক উপাসনায় আমাদের অংশগ্রহণ দেখাতে পারে যে, আমরা আমাদের দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।

১৭ একজন স্বামী হয়তো তার পরিবারের বস্তুগত বিষয়গুলো জুগিয়ে থাকেন। কিন্তু, তিনি যদি আধ্যাত্মিক নির্দেশনা না জোগান, তাহলে তিনি বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার অভাব প্রদর্শন করেন। (দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭) তাই, ১ তীমথিয় ৩:৪ পদ বলে যে, আপনি যদি পরিবারের একজন মস্তক ও মণ্ডলীতে আরও সুযোগের জন্য আকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে এমন একজন ব্যক্তি হতে হবে, যিনি “আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে করেন, এবং সম্পূর্ণ ধীরতা সহকারে” বা গাম্ভীর্য বজায় রেখে “সন্তানগণকে বশে রাখেন।” এই ক্ষেত্রে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি আমার পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক উপাসনা করার জন্য নিয়মিতভাবে সময় আলাদা করে রাখি?’ স্বামী যেন আধ্যাত্মিকভাবে নেতৃত্ব নেয়, সেই ব্যাপারে কিছু খ্রিস্টান স্ত্রীকে তাদের স্বামীদের কাছে প্রায় অনুনয়বিনয় করতে হয়। প্রত্যেক স্বামীর এই দায়িত্ব সম্বন্ধে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গুরুত্বের সঙ্গে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অবশ্য, একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর উচিত যেন তিনি পারিবারিক উপাসনার ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন এবং এটাকে সফল করার জন্য তার স্বামীর সঙ্গে সহযোগিতা করেন।

১৮. কীভাবে সন্তানরা কোনো কিছুকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার বিষয়টা শিখতে পারে?

১৮ এ ছাড়া, সন্তানদেরও জীবনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। (উপ. ১২:১) অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েদের কঠোর পরিশ্রম এবং তাদের বয়স ও ক্ষমতা অনুযায়ী ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে শেখার মধ্যে ক্ষতির কিছু নেই। (বিলাপ ৩:২৭) রাজা দায়ূদ যখন বালক ছিলেন, তখনই একজন চমৎকার মেষপালক হতে শিখেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি একজন সুরকার ও গীতিকার হতে শিখেছিলেন, যে-দক্ষতাগুলোর কারণে তিনি ইস্রায়েলের শাসকের সামনে সেবা করতে পেরেছিলেন। (১ শমূ. ১৬:১১, ১২, ১৮-২১) কোনো সন্দেহ নেই, একজন বালক হিসেবে দায়ূদ জানতেন যে কীভাবে আনন্দফূর্তি করতে হয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এমন মূল্যবান দক্ষতাগুলোও অর্জন করেছিলেন, যেগুলোকে তিনি পরবর্তী সময়ে যিহোবার প্রশংসা করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। একজন মেষপালক হিসেবে তার দক্ষতা তাকে ধৈর্য সহকারে ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করার ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। অল্পবয়সিরা, তোমরা এমন কতগুলো কার্যকারী দক্ষতা গড়ে তুলছ, যেগুলো তোমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার সেবা করতে এবং ভবিষ্যৎ দায়িত্বগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে?

এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা

১৯, ২০. আপনি নিজের সম্বন্ধে ও আপনার উপাসনা সম্বন্ধে কোন ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৯ আমরা সকলে নিজেদের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার প্রচেষ্টা করতে পারি আর এর অর্থ হল, নিজেদেরকে অতিরিক্ত গম্ভীর করে না ফেলা। আমরা কেউই “অতি ধার্ম্মিক” হতে চাইব না। (উপ. ৭:১৬) কিছুটা মজা করা উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলোর অবসান ঘটাতে পারে, তা সেটা ঘরে, কর্মস্থলে ও আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে আচরণ করার সময়, যেখানেই হোক না কেন। পরিবারের সদস্যরা অতিরিক্ত সমালোচক হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে চাইবে, যাতে তারা শান্তির নিরাপদ আশ্রয়স্থলকে—একটা ঘর সাধারণত যেমনটা হওয়া উচিত, সেটাকে—নষ্ট না করে। মণ্ডলীর মধ্যে আমরা সকলে, কথাবার্তা এবং আমাদের শিক্ষার ধরনকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক রেখেও একে অন্যের সঙ্গে কিছুটা মজা করা এবং সেইসঙ্গে পরস্পরের সাহচর্য উপভোগ করা শিখতে পারি।—২ করি. ১৩:১০; ইফি. ৪:২৯.

২০ আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যে-জগৎ যিহোবা ও তাঁর আইনগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। অন্যদিকে, যিহোবার লোকেরা তাদের ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও আনুগত্য দেখানোর ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী। এই ধরনের এক বৃহৎ জনসমাজের অংশ হওয়া কতই না আনন্দের, যে-সমাজ “সম্পূর্ণ ধীরতা সহকারে” বা গাম্ভীর্য বজায় রেখে যিহোবার উপাসনা করে! আমরা সকলে যেন আমাদের জীবন ও উপাসনা সম্বন্ধে এক গাম্ভীর্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমাদের জীবন সম্বন্ধে জগতের গুরুত্বহীন দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিরোধ করা উচিত?

• কীভাবে আমরা পরিচর্যায় গাম্ভীর্যপূর্ণ ও একইসঙ্গে আনন্দপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখতে পারি?

• দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে দেখায় যে, আমরা গাম্ভীর্য বজায় রাখি কি না?

• কেন আমাদের ভাইবোন ও পরিবারের সদস্যদের মর্যাদা প্রদান করা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা ব্যাখ্যা করুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

একজন স্বামীকে তার পরিবারের জন্য বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো জোগাতে হবে