সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে?

আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে?

আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে?

“একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।”—গীত. ৮৩:১৮.

১, ২. আমাদের ব্যক্তিগত পরিত্রাণের ক্ষেত্রে, কেন শুধুমাত্র যিহোবার নাম জানাই যথেষ্ট নয়?

 সম্ভবত, আপনি সেই সময়েই প্রথম বার যিহোবার নাম দেখেছিলেন, যখন যাত্রাপুস্তক ৬:২ পদ থেকে সেটি আপনাকে দেখানো হয়েছিল। আপনি হয়তো এই কথাগুলো পড়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন: “ঈশ্বর মোশির সহিত আলাপ করিয়া আরও কহিলেন, আমি যিহোবা [সদাপ্রভু]।” কোনো সন্দেহ নেই যে, সেই সময় থেকে আপনি আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবাকে জানার ব্যাপারে অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য এই একই শাস্ত্রপদ ব্যবহার করেছেন।—রোমীয় ১০:১২, ১৩.

যদিও লোকেদের জন্য যিহোবার নাম জানা গুরুত্বপূর্ণ, তবে শুধুমাত্র এটা জানাই যথেষ্ট নয়। লক্ষ করুন যে, কীভাবে গীতরচক আমাদের পরিত্রাণের জন্য অপরিহার্য এক সত্য তুলে ধরেছিলেন, যখন তিনি যিহোবা সম্বন্ধে উল্লেখ করে এই কথা বলেছিলেন: “একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” (গীত. ৮৩:১৮) হ্যাঁ, পুরো নিখিলবিশ্বে যিহোবাই হচ্ছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তাঁর সৃষ্ট সমস্ত প্রাণীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ বশ্যতা আশা করার অধিকার তাঁর রয়েছে। (প্রকা. ৪:১১) তাই, উপযুক্ত কারণেই নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে?’ এই প্রশ্নের উত্তরটা সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ!

এদন উদ্যানের বিচার্য বিষয়

৩, ৪. কীভাবে শয়তান হবাকে প্রতারিত করতে সমর্থ হয়েছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?

এই প্রশ্নের গুরুত্ব সেই ঘটনাগুলো থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যেতে পারে, যেগুলো অতীতে এদন উদ্যানে ঘটেছিল। সেখানে এক বিদ্রোহী স্বর্গদূত, যে পরে শয়তান দিয়াবল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, সে প্রথম মানবী হবাকে একটা নির্দিষ্ট গাছের ফল না খাওয়ার ব্যাপারে যিহোবার আজ্ঞার চেয়ে বরং হবার নিজের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে প্রথমে রাখার জন্য প্রলোভিত করেছিল। (আদি. ২:১৭; ২ করি. ১১:৩) সে ওই প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেছিল আর এভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মানের অভাব দেখিয়েছিল। হবা যিহোবাকে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে স্বীকার করেনি। কিন্তু, কীভাবে শয়তান হবাকে প্রতারিত করতে সমর্থ হয়েছিল?

হবার সঙ্গে তার কথাবার্তা বলার সময় শয়তান বেশ কিছু সূক্ষ্ম কৌশল ব্যবহার করেছিল। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১-৫.) প্রথমত, শয়তান যিহোবার ব্যক্তিগত নাম ব্যবহার করেনি। সে শুধু “ঈশ্বর” বলে উল্লেখ করেছিল। এর বৈসাদৃশ্যে, মূল ইব্রীয় ভাষায় আদিপুস্তক বইয়ের লেখক সেই অধ্যায়ের প্রথম পদেই যিহোবার ব্যক্তিগত নাম ব্যবহার করেছেন। দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের “আজ্ঞা,” এই কথা বলার পরিবর্তে শয়তান শুধু ঈশ্বর কী “বলিয়াছেন,” তা জিজ্ঞেস করেছিল। (আদি. ২:১৬) এই সূক্ষ্ম উপায় ব্যবহার করে শয়তান হয়তো সেই আজ্ঞার গুরুত্বকে হ্রাস করার চেষ্টা করেছে। তৃতীয়ত, যদিও সে শুধুমাত্র হবার সঙ্গে কথা বলেছিল কিন্তু সে “তুমি” শব্দটি ব্যবহার না করে “তোমরা” শব্দটি ব্যবহার করেছিল। এইরকমটা বলার মাধ্যমে, সে হয়তো হবার অহংকারকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল এবং প্রচেষ্টা করেছিল যেন হবা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে—এমন যেন হবাই নিজের এবং তার স্বামীর মুখপাত্র। এর ফল কী হয়েছিল? আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে, হবা এই কথা বলার দ্বারা তাদের দুজনের হয়েই কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল: “আমরা উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি।”

৫. (ক) শয়তান হবাকে কোন বিষয়টার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পরিচালিত করেছিল? (খ) নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার মাধ্যমে হবা কী প্রকাশ করেছিল?

এ ছাড়া, শয়তান সত্য বিষয়গুলোকে বিকৃত করেছিল। সে এইরকম ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, আদম ও হবাকে “এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না,” এই আজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে ঈশ্বর অন্যায্য কাজ করেছেন। এরপর, শয়তান হবাকে নিজের সম্বন্ধে এবং কীভাবে সে “ঈশ্বরের সদৃশ” হওয়ার মাধ্যমে নিজের জীবনের তথাকথিত উন্নতি সাধন করতে পারে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল। অবশেষে, শয়তান হবাকে যে-ব্যক্তি তাকে সমস্তকিছু দিয়েছেন, সেই ব্যক্তির সঙ্গে হবার সম্পর্কের পরিবর্তে বরং বৃক্ষ ও এর ফলের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পরিচালিত করেছিল। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:৬.) দুঃখের বিষয় হল, সেই ফল খাওয়ার মাধ্যমে হবা প্রকাশ করেছিল যে, যিহোবা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন না।

ইয়োবের দিনের বিচার্য বিষয়

৬. শয়তান কীভাবে ইয়োবের নীতিনিষ্ঠার নথি সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল আর এর দ্বারা ইয়োবকে কোন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল?

শত শত বছর পর, বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব এটা দেখানোর সুযোগ লাভ করেছিলেন যে, কে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যিহোবা যখন শয়তানের সামনে ইয়োবের নীতিনিষ্ঠার নথি তুলে ধরেছিলেন, তখন শয়তান এই প্রত্যুত্তর করেছিল: “ইয়োব কি বিনা লাভে ঈশ্বরকে ভয় করে?” (পড়ুন, ইয়োব ১:৭-১০.) শয়তান এই বিষয়টা অস্বীকার করেনি যে, ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য ছিলেন। এর পরিবর্তে, সে ইয়োবের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সে ধূর্ততার সঙ্গে অভিযোগ করে বলেছিল যে, ইয়োব প্রেমের বশবর্তী হয়ে নয় বরং স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার কারণে যিহোবাকে সেবা করেন। শুধুমাত্র ইয়োবই সেই অভিযোগের উত্তর দিতে পারতেন এবং তাকে সেটা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

৭, ৮. ইয়োবকে কোন পরীক্ষাগুলোর মোকাবিলা করতে হয়েছিল আর বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে তিনি কোন বিষয়টা দেখিয়েছিলেন?

যিহোবা শয়তানকে ইয়োবের ওপর একটার পর একটা বিপর্যয় আনার জন্য সুযোগ দিয়েছিলেন। (ইয়োব ১:১২-১৯) সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রতি ইয়োব কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? আমাদের বলা হয়েছে যে, তিনি “পাপ করিলেন না, এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনার দোষারোপ করিলেন না।” (ইয়োব ১:২২) কিন্তু, শয়তান তার পরও চুপ করে বসে থাকেনি। শয়তান আরও বলেছিল: “চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম, আর প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে।” * (ইয়োব ২:৪) শয়তান দাবি করেছিল যে, ইয়োব যদি ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট ভোগ করেন, তাহলে তিনি এই সিদ্ধান্তে আসবেন যে, যিহোবা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন।

একটা জঘন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ইয়োবের চেহারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আর এরপর তার স্ত্রী তাকে চাপ দিয়েছিলেন, যেন তিনি ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রাণত্যাগ করেন। পরে, তিন জন মিথ্যা সান্ত্বনাকারী তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেছিল। (ইয়োব ২:১১-১৩; ৮:২-৬; ২২:২, ৩) কিন্তু, এইসমস্ত কষ্টের মধ্যেও ইয়োব তার “সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW]” ত্যাগ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (পড়ুন, ইয়োব ২:৯, ১০.) বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এ ছাড়া, ইয়োব এটাও দেখিয়েছিলেন যে, একজন অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে কিছুটা হলেও দিয়াবলের মিথ্যা অভিযোগগুলোর উত্তর দেওয়া সম্ভব।—তুলনা করুন, হিতোপদেশ ২৭:১১.

যিশুর যথার্থ উত্তর

৯. (ক) কীভাবে শয়তান যিশুকে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল? (খ) এই প্রলোভনের প্রতি যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

যিশুর বাপ্তিস্মের অল্প সময় পরেই, শয়তান যিশুকে তাঁর জীবনে যিহোবাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে রাখার পরিবর্তে বরং স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোর অনুধাবন করার জন্য প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল। দিয়াবল যিশুর সামনে তিনটে প্রলোভন নিয়ে এসেছিল। প্রথমত, সে পাথরকে রুটিতে পরিণত করার জন্য যিশুকে প্রলোভিত করার মাধ্যমে তাঁর মাংসিক আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। (মথি ৪:২, ৩) যিশু সবেমাত্র ৪০ দিন উপবাস করেছেন আর অনেক ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাই, দিয়াবল যিশুকে তাঁর ক্ষুধা মেটানোর জন্য তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার অপব্যবহার করার চাপ দিয়েছিল। যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? হবার বৈসাদৃশ্যে, যিশু যিহোবার বাক্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন এবং সঙ্গেসঙ্গে সেই প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।—পড়ুন, মথি ৪:৪.

১০. কেন শয়তান যিশুকে ধর্মধামের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিতে বলার সাহস দেখিয়েছিল?

১০ এ ছাড়া, শয়তান যিশুকে স্বার্থপর আচরণ করার জন্যও প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল। সে যিশুকে ধর্মধামের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিতে বলার সাহস দেখিয়েছিল। (মথি ৪:৫, ৬) শয়তান কী সম্পাদন করতে চাইছিল? শয়তান দাবি করেছিল যে, যিশু যদি ঝাঁপ দিয়ে আঘাত না পান, তাহলে এটা প্রমাণ দেবে যে তিনি “ঈশ্বরের পুত্ত্র।” স্পষ্টতই, দিয়াবল চেয়েছিল যেন যিশু নিজের সুনামের ব্যাপারে অতিরিক্ত চিন্তিত হন, এমনকী নিজেকে জাহির করার পর্যায় পর্যন্ত চলে যান। শয়তান জানত যে, একজন ব্যক্তি হয়তো অহংকার এবং সেইসঙ্গে অন্যদের সামনে অপমানিত না হতে চাওয়ার কারণে এক বিপদজনক দুঃসাহস দেখানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যদিও শয়তান একটি শাস্ত্রপদকে ভুলভাবে প্রয়োগ করেছিল কিন্তু যিশু দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার বাক্য সম্বন্ধে তাঁর সম্পূর্ণ বোধগম্যতা রয়েছে। (পড়ুন, মথি ৪:৭.) সেই দুঃসাহস দেখানো প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে যিশু আবারও এটা প্রমাণ করেছিলেন যে, যিহোবাই ছিলেন তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

১১. কেন যিশু জগতের সমস্ত রাজ্য দেওয়ার ব্যাপারে দিয়াবলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?

১১ তার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে শয়তান যিশুকে জগতের সমস্ত রাজ্য দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। (মথি ৪:৮, ৯) যিশু সঙ্গেসঙ্গেই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেটা গ্রহণ করা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে—পরাৎপর হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারকে—প্রত্যাখ্যান করার সমরূপ হবে। (পড়ুন, মথি ৪:১০.) প্রতিটা ক্ষেত্রেই, যিশু আসলে ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে সেইসমস্ত শাস্ত্রপদ উদ্ধৃতি করে শয়তানকে উত্তর দিয়েছিলেন, যেগুলোতে যিহোবার ব্যক্তিগত নাম রয়েছে।

১২. তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ দিকে যিশু কোন কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন আর তিনি সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ দিকে যিশুকে অত্যন্ত কঠিন একটা সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাঁর পরিচর্যার সময়ে, তিনি বলি হিসেবে নিজের জীবন দান করার জন্য ইচ্ছুক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। (মথি ২০:১৭-১৯, ২৮; লূক ১২:৫০; যোহন ১৬:২৮) কিন্তু, যিশু এটাও জানতেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হবে, যিহুদি আইন ব্যবস্থা অনুযায়ী তাঁকে অপরাধী হিসেবে প্রতিপন্ন করা হবে এবং একজন ঈশ্বরনিন্দুক হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। এই ধরনের মৃত্যু তাঁকে প্রচণ্ড কষ্ট দিয়েছিল। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমার পিতঃ, যদি হইতে পারে, তবে এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাউক।” কিন্তু, তিনি আরও বলেছিলেন: “তথাপি আমার ইচ্ছামত না হউক, তোমার ইচ্ছামত হউক।” (মথি ২৬:৩৯) হ্যাঁ, মৃত্যু পর্যন্ত যিশুর বিশ্বস্ততা নিঃসন্দেহে প্রমাণ দিয়েছিল যে, তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে ছিলেন!

সেই প্রশ্ন সম্বন্ধে আমাদের উত্তর

১৩. হবা, ইয়োব ও যিশু খ্রিস্টের উদাহরণ থেকে এই পর্যন্ত আমরা কোন শিক্ষা লাভ করেছি?

১৩ এই পর্যন্ত আমরা কী শিখেছি? হবার ঘটনা থেকে আমরা শিখেছি যে, যারা স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা ও আত্মগৌরবের অনুভূতির কাছে নতিস্বীকার করে, তারা এটা প্রকাশ করে যে, যিহোবা তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন। অন্যদিকে, ইয়োবের নীতিনিষ্ঠার নথি থেকে আমরা শিখি যে, এমনকী অসিদ্ধ মানুষরাও বিশ্বস্তভাবে বিভিন্ন দুর্দশা—এমনকী এই ধরনের সমস্যাগুলোর কারণ পুরোপুরিভাবে বুঝতে না পারলেও—সহ্য করার মাধ্যমে দেখাতে পারে যে, তারা যিহোবাকে প্রথমে রাখে। (যাকোব ৫:১১) সবশেষে, যিশুর উদাহরণ আমাদেরকে লজ্জা সহ্য করার জন্য ইচ্ছুক হওয়ার এবং নিজেদের সুনাম রক্ষা করার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব না দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা দেয়। (ইব্রীয় ১২:২) কিন্তু, কীভাবে আমরা এই শিক্ষাগুলো কাজে লাগাতে পারি?

১৪, ১৫. কীভাবে যিশুর প্রতিক্রিয়া হবার প্রতিক্রিয়া থেকে আলাদা এবং কীভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি? (১৮ পৃষ্ঠার ছবির ওপর মন্তব্য করুন।)

১৪ যিহোবাকে ভুলে যেতে পারেন এমন প্রলোভনগুলোকে কখনো সুযোগ দেবেন না। হবার সামনে যে-প্রলোভন ছিল, সেটার প্রতি সে তার মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ দিয়েছিল। সে দেখেছিল যে, সেই ফল “সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয়।” (আদি. ৩:৬) এই প্রতিক্রিয়া তিনটে প্রলোভনের প্রতি যিশুর প্রতিক্রিয়া থেকে কতই না আলাদা! প্রতি বার, তিনি তাঁর সামনে যে-প্রলোভন এসেছিল, সেটার চেয়ে আরও বেশি কিছু লক্ষ করেছিলেন এবং তাঁর কাজের পরিণতি নিয়ে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বাক্যের ওপর নির্ভর করেছিলেন এবং সেইসঙ্গে যিহোবার নাম ব্যবহার করেছিলেন।

১৫ আমরা যখন এমন বিষয়গুলো করার জন্য প্রলোভিত হই, যেগুলো ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে, তখন আমরা কোন বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারি? আমরা প্রলোভনের ওপর যত বেশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব, আমাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা তত বেশি দৃঢ় হবে। (যাকোব ১:১৪, ১৫) সেই আকাঙ্ক্ষাকে উপড়ে ফেলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, এমনকী যদিও হয়তো সেই পদক্ষেপকে মূলত আমাদের শরীরের কোনো অংশ কেটে ফেলার মতো চরম বলে মনে হয়। (মথি ৫:২৯, ৩০) যিশুর মতো, আমাদেরও নিজেদের পদক্ষেপের পরিণতি অর্থাৎ কীভাবে সেগুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে, সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই তাঁর বাক্য বাইবেল যা বলে, সেগুলো স্মরণ করতে হবে। একমাত্র এই উপায়েই আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে, যিহোবা আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

১৬-১৮. (ক) কী আমাদের হৃদয়কে ভারগ্রস্ত করে ফেলতে পারে? (খ) কী আমাদেরকে দুর্দশামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৬ ব্যক্তিগত দুর্দশাগুলোকে যিহোবার প্রতি তিক্তবিরক্ত হওয়ার সুযোগ দেবেন না। (হিতো. ১৯:৩) আমরা যতই এই দুষ্ট জগতের ধ্বংসের নিকটবর্তী হচ্ছি, ততই যিহোবার লোকেরা আরও বেশি বিপর্যয় ও দুঃখকষ্টের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এই সময়ে অলৌকিক সুরক্ষা আশা করি না। তা সত্ত্বেও, যখন আমরা প্রিয়জনকে হারাই অথবা ব্যক্তিগত সমস্যা ভোগ করি, তখন ইয়োবের মতো আমরাও হয়তো নিজেদের ভারগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পারি।

১৭ ইয়োব বুঝতে পারেননি যে, কেন যিহোবা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ঘটতে দিয়েছিলেন আর মাঝে মাঝে আমরাও হয়তো বুঝতে পারি না যে, কেন মন্দ বিষয়গুলো ঘটে থাকে। আমরা হয়তো এমন বিশ্বস্ত ভাইবোনদের কথা শুনেছি, যারা ভূমিকম্পের যেমন, হাইতিতে ঘটা ভূমিকম্পের অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মারা গিয়েছে। অথবা আমরা হয়তো এমন একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি সম্বন্ধে জানি, যিনি দৌরাত্ম্যের শিকার হয়েছেন বা কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। কিংবা এমনকী আমরা নিজেরাও হয়তো বিভিন্ন দুর্দশামূলক পরিস্থিতির শিকার হয়েছি অথবা অবিচার ভোগ করেছি। আমাদের নিদারুণ যন্ত্রণার কারণে আমরা হয়তো এই বলে আর্তনাদ করে থাকি: ‘যিহোবা, কেন এটা আমার প্রতিই ঘটল? আমি কী অন্যায় করেছি?’ (হবক্‌. ১:২, ৩) কী আমাদেরকে এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে?

১৮ আমাদের এইরকমটা মনে না করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই ধরনের ঘটনাগুলো যিহোবার অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়। যিশু এই সত্যটাই তুলে ধরেছিলেন, যখন তিনি তাঁর সময়ের দুটো দুঃখজনক ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। (পড়ুন, লূক ১৩:১-৫.) অনেক বিপর্যয় ‘কাল ও দৈবের’ কারণে ঘটে থাকে। (উপ. ৯:১১) কিন্তু, আমাদের দুর্দশার কারণ যা-ই হোক না কেন, আমরা সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি, যদি আমরা ‘সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি। তিনি আমাদের বিশ্বস্তভাবে চলার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দেবেন।—২ করি. ১:৩-৬.

১৯, ২০. কী যিশুকে অবমাননাকর পরিস্থিতিগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছিল আর কোন বিষয়টা আমাদেরকেও একই বিষয় করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৯ অহংকার ও লজ্জার ভয়কে কখনোই আপনার প্রধান মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠার সুযোগ দেবেন না। যিশুর নম্রতা তাঁকে ‘আপনাকে শূন্য করিতে, দাসের রূপ ধারণ করিতে’ সমর্থ করেছিল। (ফিলি. ২:৫-৮) যিহোবার ওপর তাঁর নির্ভরতার কারণে তিনি বিভিন্ন অবমাননাকর পরিস্থিতি সহ্য করতে সমর্থ হয়েছিলেন। (১ পিতর ২:২৩, ২৪) তা করার মাধ্যমে, যিশু যিহোবার ইচ্ছাকে প্রথম স্থানে রেখেছিলেন এবং এর ফলে অতিশয় উচ্চ পদান্বিত হয়েছিলেন। (ফিলি. ২:৯) যিশু তাঁর শিষ্যদেরকেও একই জীবনধারা অনুধাবন করার সুপারিশ করেছিলেন।—মথি ২৩:১১, ১২; লূক ৯:২৬.

২০ কখনো কখনো, আমাদের বিশ্বাসের কিছু পরীক্ষা বিব্রতকর হতে পারে। তা সত্ত্বেও, আমাদের প্রেরিত পৌলের মতো আস্থা রাখা উচিত, যিনি বলেছিলেন: “এই কারণ এত দুঃখভোগও করিতেছি, তথাপি লজ্জিত হই না, কেননা যাঁহাকে বিশ্বাস করিয়াছি, তাঁহাকে জানি, এবং দৃঢ়রূপে প্রত্যয় করিতেছি যে, আমি তাঁহার কাছে যাহা গচ্ছিত রাখিয়াছি, তিনি সেই দিনের জন্য তাহা রক্ষা করিতে সমর্থ।”—২ তীম. ১:১২.

২১. জগতে বিদ্যমান স্বার্থপর মনোভাব সত্ত্বেও আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?

২১ বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করে যে, আমাদের সময়ে লোকেরা “আত্মপ্রিয়” হবে। (২ তীম. ৩:২) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই আমাদের চারপাশে আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবাপন্ন অনেক লোক রয়েছে। আমরা যেন কখনোই এইধরনের স্বার্থপর মনোভাবের দ্বারা কলুষিত না হই! এর পরিবর্তে, আমরা প্রলোভনের মুখোমুখি হই, দুঃখজনক ঘটনাগুলোর দ্বারা জর্জরিত হই অথবা আমাদেরকে লজ্জায় ফেলার প্রচেষ্টা করে এমন পরিস্থিতি ভোগ করি, যা-ই হোক না কেন, আসুন আমরা প্রত্যেকে এই বিষয়টা প্রমাণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যে, যিহোবা সত্যিই আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি!

[পাদটীকা], [পাদটীকাগুলো]

^ কিছু বাইবেল পণ্ডিত মনে করে, “চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম” অভিব্যক্তিটি হয়তো এই ইঙ্গিত করে যে, ইয়োব যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের চর্ম অর্থাৎ জীবনকে রক্ষার করতে পারতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তা রক্ষা করার জন্য স্বার্থপরের মতো তার সন্তানদের ও পশুপালের চর্ম অর্থাৎ জীবন হারানোর বিষয়টা অনুমোদন করতে ইচ্ছুক ছিলেন। অন্যেরা মনে করে যে, এই অভিব্যক্তি এই বিষয়ের ওপর জোর দেয় যে, যদি জীবন রক্ষা করার জন্য চর্মের প্রয়োজন হয়, তাহলে একজন ব্যক্তি কিছুটা চর্ম হারাতে ইচ্ছুক হবেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো তার মাথার ওপর আসা আঘাতকে প্রতিরোধ করার জন্য হাত ওপরে তুলে ধরতে পারেন আর এভাবে নিজের চর্ম রক্ষা করার জন্য কিছুটা চর্ম হারাতে পারেন। এই বাক্যাংশের অর্থ যা-ই হোক না কেন, এটা সুস্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, ইয়োব যতক্ষণ পর্যন্ত তার জীবনকে রক্ষা করতে পারতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তা রক্ষা করার জন্য আনন্দের সঙ্গে সমস্তকিছু দিয়ে দেবেন।

আমরা কী শিখতে পারি . . .

• শয়তান যেভাবে হবাকে প্রতারিত করেছিল, তা থেকে?

• ব্যক্তিগত দুঃখজনক ঘটনাগুলোর প্রতি ইয়োবের প্রতিক্রিয়া থেকে?

• যিশুর মনোযোগের প্রধান বিষয় থেকে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

হবা যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু শয়তানের প্রলোভনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং যিহোবার ইচ্ছার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন

[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

হাইতিতে ভূমিকম্পের পর তাঁবুতে সাক্ষ্যদান

দুদর্শার সময়ে আমরা ‘সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারি