সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘আহা! ঈশ্বরের প্রজ্ঞা কেমন অগাধ!’

‘আহা! ঈশ্বরের প্রজ্ঞা কেমন অগাধ!’

‘আহা! ঈশ্বরের প্রজ্ঞা কেমন অগাধ!’

“আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!”—রোমীয় ১১:৩৩.

১. বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানদের জন্য সবচেয়ে বড়ো সুযোগ কী?

 আপনি জীবনে সবচেয়ে বড়ো কোন সুযোগ লাভ করেছেন? প্রথমে, আপনি হয়তো এমন কিছু কার্যভারের বিষয়ে চিন্তা করছেন, যেগুলো আপনি লাভ করেছেন অথবা কোনো সম্মানের বিষয়ে চিন্তা করছেন, যা আপনাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানদের জন্য সবচেয়ে বড়ো সুযোগ হল, আমাদেরকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, আমরা “তাঁহার জানা লোক” হয়ে উঠেছি।—১ করি. ৮:৩; গালা. ৪:৯.

২. কেন যিহোবাকে জানা এবং তাঁর জানা লোক হয়ে ওঠা এক বিরাট সুযোগ?

কেন যিহোবাকে জানা এবং তাঁর জানা লোক হয়ে ওঠা এক বিরাট সুযোগ? এর কারণ কেবল এই নয় যে, তিনি পুরো নিখিলবিশ্বের সর্বমহান ব্যক্তি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি সেই ব্যক্তিদের রক্ষাকর্তা হিসেবেও কাজ করেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে। ভাববাদী নহূম এই কথা লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, সঙ্কটের দিনে তিনি দুর্গ; আর যাহারা তাঁহার শরণ লয়, তিনি তাহাদিগকে জানেন।” (নহূম ১:৭; গীত. ১:৬) আসলে, আমাদের অনন্তজীবন লাভের প্রত্যাশা, সত্য ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে জানার ওপর নির্ভর করে।—যোহন ১৭:৩.

৩. ঈশ্বরকে জানার সঙ্গে কী জড়িত?

ঈশ্বরকে জানার অর্থ শুধুমাত্র তাঁর নাম জানার চেয়ে আরও বেশি কিছু। আমাদেরকে একজন বন্ধুর মতো তাঁকে জানতে হবে, তাঁর পছন্দ-অপছন্দ বুঝতে হবে। আর সেই জ্ঞান অনুযায়ী জীবনযাপন করা, এটা দেখানোর ক্ষেত্রেও এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে যে, আমরা ঈশ্বরকে অন্তরঙ্গভাবে জেনেছি। (১ যোহন ২:৪) কিন্তু, আমরা যদি সত্যিই যিহোবাকে জানতে চাই, তাহলে আরও কিছু প্রয়োজন। তিনি যা করেছেন, শুধু সেগুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি কীভাবে ও কেন এভাবে কাজ করেছেন, সেটাও আমাদেরকে জানতে হবে। আমরা যত বেশি করে যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো বুঝতে পারব, ততই ‘ঈশ্বরের অগাধ প্রজ্ঞা’ দেখে বিস্মিত হতে বাধ্য হব।—রোমীয় ১১:৩৩.

এক উদ্দেশ্যপরায়ণ ঈশ্বর

৪, ৫. (ক) বাইবেলে ব্যবহৃত “সংকল্প” বা উদ্দেশ্য শব্দটি কোন বিষয়কে নির্দেশ করে? (খ) ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে একটা উদ্দেশ্য একাধিক উপায়ে সাধন করার যেতে পারে।

যিহোবা হলেন একজন উদ্দেশ্যপরায়ণ ঈশ্বর এবং বাইবেল তাঁর ‘যুগপর্য্যায়ের সংকল্প’ বা অনন্তকালীন উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানায়। (ইফি. ৩:১০, ১১) এই অভিব্যক্তির প্রকৃত অর্থ কী? বাইবেলে ব্যবহৃত “সংকল্প” বা উদ্দেশ্য শব্দটি একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অথবা অভিপ্রায়কে নির্দেশ করে, যা একাধিক উপায়ে অর্জন করা যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো কোনো সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে চান। তখন সেই গন্তব্যে পৌঁছানোটা তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। তিনি কোন পরিবহন ব্যবহার করবেন ও কোন পথে গমন করবেন, সেই ব্যাপারে তার হয়তো বিভিন্ন বাছাই থাকতে পারে। তিনি যখন তার বাছাইকৃত পথে গমন করেন, তখন তিনি হয়তো অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার, ট্রাফিক জ্যামের কিংবা বন্ধ রাস্তার সম্মুখীন হতে পারেন, যার ফলে তাকে বিকল্প পথ গ্রহণ করতে হয়। তবে, তাকে যেকোনো রদবদলই করতে হোক না কেন, তিনি ঠিকই তার লক্ষ্য অর্জন করবেন, যখন তিনি তার গন্তব্যে পৌঁছান।

৬. যিহোবা কীভাবে তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখিয়েছেন?

একইভাবে, যিহোবাও তাঁর অনন্তকালীন উদ্দেশ্যগুলো সম্পাদন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নমনীয়তা দেখিয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের স্বাধীন ইচ্ছা সম্বন্ধে বিবেচনা করে, তিনি সানন্দে তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের উপায় রদবদল করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, প্রতিজ্ঞাত বংশের বিষয়ে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য কীভাবে পরিপূর্ণ করেন। আদিতে, যিহোবা প্রথম মানব দম্পতিকে এই কথা বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদি. ১:২৮) এদনের বিদ্রোহের কারণে কি ঘোষিত এই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল? অবশ্যই না! যিহোবা সঙ্গেসঙ্গে তাঁর উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য এক বিকল্প “পথ” ব্যবহার করে সেই নতুন পরিস্থিতির প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি এক ‘বংশ’ আসার বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যিনি বিদ্রোহীদের দ্বারা সাধিত ক্ষতি দূর করে দেবেন।—আদি. ৩:১৫; ইব্রীয় ২:১৪-১৭; ১ যোহন ৩:৮.

৭. যাত্রাপুস্তক ৩:১৪ পদে যিহোবা নিজের সম্বন্ধে যে-বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার পথে আসা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ক্ষমতা, তিনি নিজের সম্বন্ধে যে-বর্ণনা দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মোশি যখন যিহোবার প্রদত্ত কার্যভারের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য বাধাগুলো সম্বন্ধে তাঁর কাছে তুলে ধরেছিলেন, তখন যিহোবা এই কথা বলার দ্বারা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন: “আমি যে হইব, সেই হইব।” তিনি আরও বলেছিলেন: “ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে এইরূপ বলিও, “আছি [বা হইব]” তোমাদের নিকটে আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।” (যাত্রা. ৩:১৪, পাদটীকা) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ করার জন্য যা হওয়া প্রয়োজন, তা-ই হতে পারেন! এই বিষয়টা প্রেরিত পৌল রোমীয় বইয়ের ১১ অধ্যায়ে সুন্দরভাবে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি এক রূপক জিতবৃক্ষ সম্বন্ধে বলেন। এই দৃষ্টান্তটা পরীক্ষা করা, ঈশ্বরের অগাধ প্রজ্ঞা সম্বন্ধে আমাদের উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করবে, তা আমাদের আশা স্বর্গে যাওয়ার কিংবা এই পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভ করার, যা-ই হোক না কেন।

ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত বংশ সম্বন্ধে যিহোবার উদ্দেশ্য

৮, ৯. (ক) কোন চারটে মৌলিক বিষয় আমাদেরকে জিতবৃক্ষের দৃষ্টান্তটা বুঝতে সাহায্য করবে? (খ) কোন প্রশ্নের উত্তর যিহোবার উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে তাঁর নমনীয়তাকে প্রকাশ করে?

জিতবৃক্ষের দৃষ্টান্তটা বোঝার আগে, আমাদের ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত বংশের বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্যের অগ্রগতি সম্বন্ধে চারটে বিষয় জানতে হবে। প্রথমত, যিহোবা অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার বংশ বা বংশধরদের মাধ্যমে “পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদি. ২২:১৭, ১৮) দ্বিতীয়ত, অব্রাহামের বংশ থেকে আসা ইস্রায়েল জাতিকে “যাজকদের এক রাজ্য” গঠন করার প্রত্যাশা প্রদান করা হয়েছিল। (যাত্রা. ১৯:৫, ৬) তৃতীয়ত, জন্মগত ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে অধিকাংশই যখন মশীহকে গ্রহণ করে নেয়নি, তখন যিহোবা “যাজকদের এক রাজ্য” গঠন করার জন্য অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (মথি ২১:৪৩; রোমীয় ৯:২৭-২৯) সবশেষে, যদিও যিশু হলেন অব্রাহামের বংশের মুখ্য অংশ, কিন্তু অন্যদেরকেও সেই বংশের অংশ হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।—গালা. ৩:১৬, ২৯.

এই চারটে মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আমরা প্রকাশিত বাক্য বই থেকে জানতে পারি যে, সর্বমোট ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি স্বর্গে যিশুর সঙ্গে রাজা ও যাজক হিসেবে শাসন করবে। (প্রকা. ১৪:১-৪) তাদেরকে ‘ইস্রায়েল-সন্তান’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। (প্রকা. ৭:৪-৮) কিন্তু এই ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির মধ্যে সকলেই কি জন্মগত ইস্রায়েলীয় বা যিহুদি? এই প্রশ্নের উত্তর যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে তাঁর নমনীয়তাকে প্রকাশ করে। তাহলে, আসুন আমরা এখন দেখি যে, রোমীয়দের উদ্দেশে প্রেরিত পৌলের চিঠি কীভাবে আমাদের উত্তরটা খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

“যাজকদের এক রাজ্য”

১০. একমাত্র ইস্রায়েল জাতিরই কোন প্রত্যাশা ছিল?

১০ আগে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, একমাত্র ইস্রায়েল জাতিরই “যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি” গঠন করার ক্ষেত্রে সদস্য হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। (পড়ুন, রোমীয় ৯:৪, ৫.) কিন্তু, যখন প্রতিজ্ঞাত বংশ এসেছিলেন, তখন কী ঘটেছিল? এই জন্মগত ইস্রায়েল জাতিই কি সেই ১,৪৪,০০০ জন আত্মিক ইস্রায়েলের সংখ্যাকে পরিপূর্ণ করেছিল, যারা অব্রাহামের বংশের গৌণ অংশ হয়ে উঠবে?

১১, ১২. (ক) যারা স্বর্গীয় রাজ্য গঠন করবে, তাদের বাছাই কখন শুরু হয়েছিল আর সেই সময়ের অধিকাংশ যিহুদির প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ‘পূর্ণতা’ বা পূর্ণ সংখ্যা সম্পূর্ণ করেছিলেন, যাদের অব্রাহামের বংশ হয়ে ওঠার কথা ছিল?

১১ রোমীয় ১১:৭-১০ পদ পড়ুন। প্রথম শতাব্দীর যিহুদিরা একটা জাতি হিসেবে যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই, অব্রাহামের বংশ গঠন করার একমাত্র সুযোগ যে তাদেরই ছিল, সেটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক, সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে যখন সেই ব্যক্তিদের বাছাই শুরু হয়েছিল, যারা “যাজকদের” স্বর্গীয় “রাজ্য” গঠন করবে, তখন সেখানে সৎহৃদয়ের কিছু যিহুদি ছিল, যারা আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল। সংখ্যায় অল্প কয়েক হাজার হওয়ায়, এই ব্যক্তিরা পুরো যিহুদি জাতির তুলনায় “অবশিষ্ট এক অংশ” ছিল।—রোমীয় ১১:৫.

১২ তাহলে, কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ‘পূর্ণতা’ বা পূর্ণ সংখ্যা সম্পূর্ণ করবেন, যাদের অব্রাহামের বংশ হয়ে ওঠার কথা ছিল? (রোমীয় ১১:১২, ২৫) প্রেরিত পৌলের দেওয়া উত্তরটা লক্ষ করুন: “ঈশ্বরের বাক্য যে বিফল হইয়া পড়িয়াছে, এমন নহে; কারণ যাহারা [জন্মগত] ইস্রায়েল হইতে উৎপন্ন, তাহারা সকলেই যে ইস্রায়েল, তাহা নয়; আর অব্রাহামের বংশ [বংশধর] বলিয়া তাহারা যে সকলেই সন্তান [অব্রাহামের বংশের অংশ], তাহাও নয়, . . . ইহার অর্থ এই, যাহারা মাংসের সন্তান, তাহারা যে ঈশ্বরের সন্তান, এমন নয়, কিন্তু প্রতিজ্ঞার সন্তানগণই বংশ বলিয়া গণিত হয়।” (রোমীয় ৯:৬-৮) তাই, যিহোবা এমনটা চাননি যে, যারা বংশের অংশ হবে, তাদেরকে অবশ্যই আক্ষরিকভাবে অব্রাহামের বংশধর হতে হবে।

এক রূপক জিতবৃক্ষ

১৩. কী চিত্রিত করা হয়েছে (ক) জিতবৃক্ষ দ্বারা, (খ) এর মূল দ্বারা, (গ) এর কাণ্ড দ্বারা এবং (ঘ) এর শাখাগুলো দ্বারা?

১৩ প্রেরিত পৌল সেই ব্যক্তিদেরকে এক রূপক জিতবৃক্ষের শাখাগুলোর সঙ্গে তুলনা করেন, যারা অব্রাহামের বংশের অংশ হয়ে ওঠে। * (রোমীয় ১১:২১) রোপিত এই জিতবৃক্ষ অব্রাহামের চুক্তির বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতাকে চিত্রিত করে। এই বৃক্ষের মূল হল পবিত্র আর এটা যিহোবাকে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করে, যিনি আত্মিক ইস্রায়েলকে অস্তিত্বে নিয়ে আসেন। (যিশা. ১০:২০; রোমীয় ১১:১৬) এই বৃক্ষের কাণ্ড যিশুকে অব্রাহামের বংশের মুখ্য অংশ হিসেবে চিত্রিত করে। আর শাখাগুলো সমষ্টিগতভাবে সেই ব্যক্তিদের ‘পূর্ণতাকে’ বা পূর্ণ সংখ্যাকে চিত্রিত করে, যারা অব্রাহামের বংশের গৌণ অংশের অন্তর্ভুক্ত।

১৪, ১৫. কাদেরকে রোপিত জিতবৃক্ষ থেকে “ভাঙ্গিয়া ফেলা” হয়েছিল আর কাদেরকে এই বৃক্ষে কলমরূপে লাগানো হয়েছিল?

১৪ জিতবৃক্ষের দৃষ্টান্তে, যে-জন্মগত যিহুদিরা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদেরকে জিতবৃক্ষের সেই শাখার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যেগুলোকে “ভাঙ্গিয়া ফেলা” হয়েছে। (রোমীয় ১১:১৭) এভাবে তারা অব্রাহামের বংশের অংশ হওয়ার সুযোগ হারিয়েছিল। কিন্তু, তাদের স্থলে কারা এসেছিল? জন্মগত যিহুদি, যারা অব্রাহামের বংশধর বলে নিজেদের নিয়ে গর্বিত ছিল, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এর উত্তরটা অচিন্তনীয় ছিল। কিন্তু, যোহন বাপ্তাইজক তাদেরকে আগে থেকেই এই বলে সাবধান করেছিলেন যে, যিহোবা যদি তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে তিনি পাথর থেকেও অব্রাহামের জন্য সন্তান উৎপন্ন করতে পারেন।—লূক ৩:৮.

১৫ তাহলে, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য কী করেছিলেন? পৌল ব্যাখ্যা করেন যে, বন্য জিতবৃক্ষের কিছু শাখা নিয়ে রোপিত জিতবৃক্ষের যে-শাখাগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল, সেগুলোর স্থলে কলমরূপে লাগানো হয়েছিল। (পড়ুন, রোমীয় ১১:১৭, ১৮.) এভাবে, বিভিন্ন জাতি থেকে আসা আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে যেমন, রোমের মণ্ডলীর কয়েক জনকে, রূপকভাবে এই রূপক জিতবৃক্ষে কলমরূপে লাগানো হয়েছিল। ফলে তারা অব্রাহামের বংশের অংশ হয়ে উঠেছিল। প্রথমে, তারা বন্য জিতবৃক্ষের শাখার মতো ছিল, যাদের এই বিশেষ চুক্তির এক অংশ হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু, যিহোবা তাদেরকে আত্মিক যিহুদি হওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন।—রোমীয় ২:২৮, ২৯.

১৬. নতুন আত্মিক জাতির গঠন সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর কীভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন?

১৬ প্রেরিত পিতর এই পরিস্থিতিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন: “অতএব তোমরা [আত্মিক ইস্রায়েলীয়রা, যাদের মধ্যে পরজাতীয় খ্রিস্টানরাও রয়েছে] যাহারা বিশ্বাস করিতেছ, ঐ [যিশু খ্রিস্টের] মহামূল্যতা তোমাদেরই জন্য; কিন্তু যাহারা বিশ্বাস করে না, তাহাদের জন্য ‘যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল;’ আবার তাহা হইয়া উঠিল, ‘ব্যাঘাতজনক প্রস্তর ও বিঘ্নজনক পাষাণ।’ . . . কিন্তু তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন। পূর্ব্বে তোমরা প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ; দয়াপ্রাপ্ত ছিলে না কিন্তু এখন দয়া পাইয়াছ।”—১ পিতর ২:৭-১০.

১৭. যিহোবা যা করেছিলেন, সেটা কীভাবে ‘স্বভাবের বিপরীত’ ছিল?

১৭ যিহোবা এমন কিছু করেছিলেন, যেটাকে অনেকে একেবারে অপ্রত্যাশিত বলে মনে করেছিল। যা ঘটেছিল, সেই বিষয়টাকে পৌল ‘স্বভাবের বিপরীত’ বলে বর্ণনা করেন। (রোমীয় ১১:২৪) কেন তা বলা যায়? আসলে, একটা বন্য শাখাকে কোনো রোপিত বৃক্ষে কলমরূপে লাগানো হলে, সেটাকে অসাধারণ, এমনকী অস্বাভাবিক বলেই মনে হবে; অথচ প্রথম শতাব্দীর কিছু কৃষক তা-ই করেছিল। * একইভাবে, যিহোবাও অসাধারণ কিছু করেছিলেন। যিহুদি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, পরজাতীয়রা গ্রহণযোগ্য ফল উৎপন্ন করার ক্ষেত্রে অযোগ্য ছিল। কিন্তু, যিহোবা এই ব্যক্তিদেরই এমন ‘এক জাতির’ অংশ করেছিলেন, যা রাজ্যের ফল উৎপন্ন করেছিল। (মথি ২১:৪৩) সা.কা. ৩৬ সালে, কর্ণীলিয়কে—প্রথম ধর্মান্তরিত অছিন্নত্বক পরজাতীয় ব্যক্তিকে—অভিষিক্ত করার সময় থেকে শুরু করে অছিন্নত্বক ন-যিহুদিদের জন্য এই রূপক জিতবৃক্ষে কলমরূপে যুক্ত হওয়ার সুযোগ খুলে গিয়েছিল।—প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮. *

১৮. জন্মগত যিহুদিরা সা.কা. ৩৬ সালের পরও কোন সুযোগ পেয়েছিল?

১৮ এর মানে কি এই যে, সা.কা. ৩৬ সালের পর জন্মগত যিহুদিদের অব্রাহামের বংশের অংশ হওয়ার আর কোনো সুযোগ ছিল না? ঠিক তা নয়। পৌল ব্যাখ্যা করেন: “আবার উহারা [জন্মগত যিহুদি] যদি আপনাদের অবিশ্বাসে না থাকে, তবে উহাদিগকেও লাগান যাইবে, কারণ ঈশ্বর উহাদিগকে আবার লাগাইতে সমর্থ আছেন। বস্তুতঃ যেটী স্বভাবতঃ বন্য জিতবৃক্ষ, তোমাকে তাহা হইতে কাটিয়া লইয়া যখন স্বভাবের বিপরীতে উত্তম জিতবৃক্ষে লাগান গিয়াছে, তখন প্রকৃত শাখা যে উহারা, উহাদিগকে নিজ জিতবৃক্ষে লাগান যাইবে, ইহা কত অধিক নিশ্চয়।”—রোমীয় ১১:২৩, ২৪.

“সমস্ত ইস্রায়েল পরিত্রাণ পাইবে”

১৯, ২০. যিহোবা কী সম্পাদন করেন, যেমনটা রূপক জিতবৃক্ষের দৃষ্টান্তের দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে?

১৯ হ্যাঁ, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য এক চমৎকার উপায়ে পরিপূর্ণ হচ্ছে। (গালা. ৬:১৬) পৌলের কথা অনুযায়ী, “সমস্ত ইস্রায়েল পরিত্রাণ পাইবে।” (রোমীয় ১১:২৬) যিহোবার নিরূপিত সময়ে, “সমস্ত ইস্রায়েল”—অর্থাৎ আত্মিক ইস্রায়েলীয়দের পূর্ণ সংখ্যা—স্বর্গে রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করবে। কোনো কিছুই যিহোবার উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করতে পারে না!

২০ ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী, অব্রাহামের ‘বংশ’—যিশু খ্রিস্ট ও সেইসঙ্গে ১,৪৪,০০ জন ব্যক্তি—“পরজাতীয়দের” জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। (রোমীয় ১১:১২; আদি. ২২:১৮) এভাবে, ঈশ্বরের সমস্ত লোক এই ব্যবস্থা থেকে উপকার লাভ করে। সত্যিই, আমরা যখন যিহোবার অনন্তকালীন উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা ‘ঈশ্বরের অগাধ ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান’ দেখে বিস্মিত না হয়ে পারি না।—রোমীয় ১১:৩৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ পৌল এই জিতবৃক্ষকে ইস্রায়েল জাতিকে চিত্রিত করা জন্য ব্যবহার করেননি। যদিও জন্মগত ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে রাজা ও যাজক ছিল কিন্তু সেই জাতি যাজকদের এক রাজ্য হয়ে ওঠেনি। মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী ইস্রায়েলের রাজারা যাজক হতে পারত না। তাই, এই জিতবৃক্ষ সেই জাতিকে চিত্রিত করেনি। পৌল এই বিষয়টা তুলে ধরার জন্য এই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন যে, “যাজকদের এক রাজ্য” গঠন করার জন্য আত্মিক ইস্রায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। পৌলের দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে আগের যে-ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা ১৯৮৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১৪-১৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যাবে।।

^ “বন্য জিতবৃক্ষের কিছু শাখাকে কলমরূপে লাগানো—কেন?” শিরোনামের বাক্স দেখুন।

^ এটা সেই সাড়ে তিন বছরের সুযোগের শেষে হয়েছিল, যে-সময়টা জন্মগত যিহুদিদেরকে নতুন আত্মিক জাতির অংশ হওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছিল। সত্তর সপ্তাহের বছর সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীটা এই ঘটনা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল।—দানি. ৯:২৭.

আপনার কি মনে আছে?

• যিহোবা যেভাবে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করেন, তা থেকে আমরা কী শিখি?

রোমীয় ১১ অধ্যায়ে এই বিষয়গুলো দ্বারা কী চিত্রিত হয়েছে যেমন,

জিতবৃক্ষ দ্বারা?

এর মূল দ্বারা?

এর কাণ্ড দ্বারা?

এর শাখাগুলো দ্বারা?

• কেন কলমরূপে লাগানোর বিষয়টা ‘স্বভাবের বিপরীত’ ছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

বন্য জিতবৃক্ষের কিছু শাখাকে কলমরূপে লাগানো—কেন?

▪ লুশিয়াস জুনিয়াস মাডেরেটাস কালাইমেলা ছিলেন সা.কা. প্রথম শতাব্দীর একজন রোমীয় সৈন্য ও কৃষক। তিনি গ্রাম্য জীবন ও কৃষিকাজের ওপর তার লেখা ১২টি বইয়ের কারণে সুপরিচিত।

তার পঞ্চম বইয়ে তিনি একটা প্রাচীন প্রবাদ উদ্ধৃত করেছিলেন: “যিনি জলপাই [বা জিত] গাছের চাষ করেন, তিনি এটার ফল চান; যিনি এতে সার দেন, তিনি এর ফলের জন্য মিনতি করেন; যিনি এটার ডালপালা ছেঁটে দেন, তিনি এটাকে ফল দেওয়ার জন্য জোর করেন।”

দেখতে তরতাজা অথচ ফল দেয় না এমন গাছগুলোর বর্ণনা দেওয়ার পর, তিনি এই সুপারিশ করেন: “একটা তুরপুন দিয়ে সেগুলোর গায়ে ফুটো করে সেই ছিদ্রে বন্য জলপাই গাছের শাখা শক্তভাবে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা ভালো উপায়; ফল স্বরূপ, ফলবতী গাছের শাখার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় গাছটা আরও ফলবন্ত হয়ে ওঠে।”

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি রূপক জিতবৃক্ষের দৃষ্টান্তটা বুঝতে পারেন?