খ্রিস্টীয় পরিবার —‘জাগিয়া থাকুন’
খ্রিস্টীয় পরিবার —‘জাগিয়া থাকুন’
“আইস, আমরা . . . জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।”—১ থিষল. ৫:৬.
১, ২. একটা পরিবার যদি আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার ক্ষেত্রে সফল হতে চায়, তাহলে কী করতে হবে?
“সদাপ্রভুর . . . মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের” কথা উল্লেখ করে প্রেরিত পৌল থিষলনীকীর খ্রিস্টানদেরকে লিখেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, তোমরা অন্ধকারে নও যে, সেই দিন চোরের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িবে। তোমরা ত সকলে দীপ্তির সন্তান ও দিবসের সন্তান; আমরা রাত্রিরও নই, অন্ধকারেরও নই।” পৌল আরও বলেছিলেন: “অতএব আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।”—যোয়েল ২:৩১; ১ থিষল. ৫:৪-৬.
২ থিষলনীকীয়দের প্রতি পৌলের পরামর্শ সেই খ্রিস্টানদের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত, যারা ‘শেষকালে’ বাস করছে। (দানি. ১২:৪) শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই সে যত বেশি সম্ভব সত্য উপাসকদের যিহোবার সেবা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নাছোড়বান্দা হয়ে উঠেছে। তাই, আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক থাকার বিষয়ে পৌলের উপদেশে মনোযোগ দেওয়া আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ। কোনো খ্রিস্টান পরিবার যদি জেগে থাকার ক্ষেত্রে সফল হতে চায়, তাহলে প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিজ নিজ শাস্ত্রীয় দায়িত্ব পালন করা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে, স্বামী, স্ত্রী এবং অল্পবয়সিরা তাদের পরিবারকে ‘জাগিয়া থাকিবার’ জন্য সাহায্য করার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করতে পারে?
স্বামীরা—‘উত্তম মেষপালককে’ অনুকরণ করুন
৩. প্রথম তীমথিয় ৫:৮ পদ অনুসারে, পরিবারের মস্তক হিসেবে একজন পুরুষের দায়িত্বের সঙ্গে কী জড়িত?
৩ “স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ,” বাইবেল বলে। (১ করি. ১১:৩) একটা পরিবারের মস্তক হিসেবে একজন পুরুষের দায়িত্বের সঙ্গে কী জড়িত? মস্তকপদের একটা দিক সম্বন্ধে তুলে ধরে শাস্ত্র বলে: “কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীম. ৫:৮) হ্যাঁ, একজন পুরুষের তার পরিবারের জন্য বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানো উচিত। কিন্তু, তিনি যদি পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে চান, তাহলে তাকে কেবলমাত্র পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। পরিবারের সকলকে ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সাহায্য করার মাধ্যমে, তাকে তার পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। (হিতো. ২৪:৩, ৪) কীভাবে তিনি সাহায্য করতে পারেন?
৪. কী একজন ব্যক্তিকে তার পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সফল হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৪ যেহেতু একজন “স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক,” তাই একজন বিবাহিত ব্যক্তির মস্তকপদের সেই ধরন পরীক্ষা করে দেখা ও সেইসঙ্গে তা অনুকরণ করা উচিত, যা যিশু মণ্ডলীর প্রতি ব্যবহার করেছিলেন। (ইফি. ৫:২৩) তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে যিশু যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন। (পড়ুন, যোহন ১০:১৪, ১৫.) পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তুলতে চান এমন একজন পুরুষের জন্য সফল হওয়ার চাবিকাঠি কী? এই চাবিকাঠি হল: “উত্তম মেষপালক” হিসেবে যিশু যা বলেছিলেন এবং করেছিলেন, তা নিয়ে অধ্যয়ন করুন ও সেইসঙ্গে ‘তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করুন।’—১ পিতর ২:২১.
৫. মণ্ডলী সম্বন্ধে উত্তম মেষপালক কী জানেন?
৫ রূপকভাবে বললে, একজন মেষপালক ও তার মেষদের মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, সেটার ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরকে জানা এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরতা। একজন মেষপালক তার মেষদের সম্বন্ধে সমস্তকিছু জানেন আর মেষপালও তাদের মেষপালককে জানে ও তার ওপর নির্ভর করে। তারা তার রব চেনে ও সেইসঙ্গে এর বাধ্য হয়। “আমি আমার নিজের সকলকে [মেষদেরকে] জানি, এবং আমার নিজের সকলে [মেষপাল] আমাকে জানে,” যিশু বলেছিলেন। মণ্ডলী সম্বন্ধে তাঁর যে কেবল ভাসা ভাসা জ্ঞান রয়েছে এমন নয়। এখানে যে-গ্রিক শব্দটিকে ‘জানা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা “ব্যক্তিগতভাবে ও গভীরভাবে জানাকে” নির্দেশ করে। হ্যাঁ, উত্তম মেষপালক তার মেষদেরকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের চাহিদা, দুর্বলতা ও ক্ষমতা সম্বন্ধে জানেন। তার মেষপাল সম্বন্ধে কোনো কিছুই আমাদের আদর্শ যিশু খ্রিস্টের দৃষ্টি এড়ায় না। আর মেষপালও মেষপালককে পুরোপুরিভাবে জানে এবং তার পরিচালনার ওপর নির্ভর করে।
৬. কীভাবে একজন স্বামী উত্তম মেষপালককে অনুকরণ করতে পারেন?
৬ খ্রিস্টকে অনুকরণ করে তার মস্তকপদকে ব্যবহার করার জন্য একজন স্বামীর অবশ্যই নিজেকে একজন মেষপালক হিসেবে আর সেইসঙ্গে যারা তার যত্নাধীনে রয়েছে, তাদেরকে মেষ হিসেবে চিন্তা করার বিষয়টা শিখতে হবে। নিজের পরিবারকে তার গভীরভাবে জানার প্রচেষ্টা করা উচিত। একজন স্বামী কি আসলেই এইরকমভাবে জানতে পারেন? হ্যাঁ পারেন, যদি তিনি তার পরিবারের সমস্ত সদস্যের সঙ্গে উত্তম ভাববিনিময় করেন, তাদের চিন্তার বিষয়গুলো শোনেন এবং পরিবারের কাজকর্মে নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া, পারিবারিক উপাসনা, সভায় উপস্থিতি, ক্ষেত্রের পরিচর্যা, বিনোদন ও আমোদপ্রমোদের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তার পরিবারের সদস্যদের পরিস্থিতির বিষয়টা মনে রাখা উচিত। একজন খ্রিস্টান স্বামী যখন কেবল ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যাদের দায়িত্ব আস্থা সহকারে তার ওপর দেওয়া হয়েছে, তাদের সম্বন্ধে জানার ওপর ভিত্তি করে নেতৃত্ব দেন, তখন খুব সম্ভবত তার পরিবারের সদস্যদের তার মস্তকপদের ওপর আস্থা থাকবে এবং সেইসঙ্গে তিনিও সত্য উপাসনায় তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে দেখে পরিতৃপ্তি লাভ করবেন।
৭, ৮. কীভাবে একজন স্বামী তার যত্নাধীন সদস্যদের প্রতি স্নেহ দেখানোর ক্ষেত্রে উত্তম মেষপালককে অনুকরণ করতে পারেন?
৭ এ ছাড়া, একজন উত্তম মেষপালকের তার মেষদের প্রতি স্নেহ রয়েছে। আমরা যখন যিশুর জীবনী ও পরিচর্যা সম্বন্ধে সুসমাচারের বিবরণগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন শিষ্যদের প্রতি যিশুর স্নেহ দেখে আমাদের হৃদয় উপলব্ধিতে ভরে উঠে। তিনি এমনকী ‘মেষদিগের জন্য আপন প্রাণ সমর্পণ করিয়াছেন।’ স্বামীদেরও তাদের যত্নাধীন ব্যক্তিদের প্রতি স্নেহ দেখানোর ক্ষেত্রে যিশুকে অনুকরণ করা উচিত। ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে চান এমন একজন স্বামী নিষ্ঠুরভাবে তার স্ত্রীর ওপর কর্তৃত্ব খাটানোর পরিবর্তে, তার স্ত্রীকে ক্রমাগত “সেইরূপ” প্রেম করেন, যেমনটা “খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন।” (ইফি. ৫:২৫) তার কথাবার্তা সদয় ও বিবেচনাপূর্ণ হওয়া উচিত কারণ স্ত্রী সমাদর পাওয়ার যোগ্য।—১ পিতর ৩:৭.
৮ অল্পবয়সিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়, পরিবারের মস্তককে দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরীয় নীতিগুলো তুলে ধরা উচিত। তবে, তার সন্তানদের প্রতি স্নেহ দেখাতে যেন তিনি কখনোই ব্যর্থ না হন। প্রয়োজনীয় শাসন প্রেমের সঙ্গে করা উচিত। তাদের কাছ থেকে কী আশা করা হয়, তা বোঝার জন্য কিছু অল্পবয়সির হয়তো অন্যদের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। এই ক্ষেত্রে, তাদের প্রতি একজন বাবার আরও বেশি ধৈর্য দেখানো উচিত। পুরুষরা যখন ক্রমাগতভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করে চলে, তখন তারা ঘরের পরিবেশকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ করে তোলে। তাদের পরিবার সেই ধরনের আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা লাভ করে থাকে, যে-সম্বন্ধে গীতরচক গেয়েছিলেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২৩:১-৬.
৯. কুলপতি নোহের মতো, খ্রিস্টান স্বামীদের কোন দায়িত্ব রয়েছে আর কী তাদেরকে এই দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করবে?
৯ কুলপতি নোহ তার সময়কার জগতের শেষকালে বাস করছিলেন। কিন্তু, যিহোবা “যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন, তখন আর সাত জনের সহিত” নোহকে “রক্ষা করিলেন।” (২ পিতর ২:৫) নোহের দায়িত্ব ছিল যেন তিনি নিজ পরিবারকে জলপ্লাবন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেন। এই শেষকালে খ্রিস্টান পরিবারের মস্তকরা একই অবস্থানে রয়েছে। (মথি ২৪:৩৭) তাই, ‘উত্তম মেষপালকের’ উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করা এবং তাঁকে অনুকরণ করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
স্ত্রীরা—‘আপন আপন গৃহ গাঁথুন’
১০. একজন স্ত্রীর জন্য স্বামীর বশীভূত হওয়া কী অর্থ রাখে?
১০ “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (ইফি. ৫:২২) এই উক্তি কোনোভাবেই এক মর্যাদাহানিকর অবস্থানকে ইঙ্গিত করে না। প্রথম নারী হবাকে সৃষ্টি করার আগে, সত্য ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: “মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ [“পরিপূরক,” NW] সহকারিণী নির্ম্মাণ করি।” (আদি. ২:১৮) সত্যিই, “সহকারিণী” এবং “পরিপূরক”—অর্থাৎ পারিবারিক দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য যত্ন নেওয়ার সময় তার স্বামীর সমর্থনকারী—হিসেবে ভূমিকা হল, এক সম্মানজনক ভূমিকা।
১১. কীভাবে একজন উদাহরণযোগ্য স্ত্রী ‘আপন গৃহ গাঁথেন’?
১১ একজন উদাহরণযোগ্য স্ত্রী তার পরিবারের মঙ্গলের জন্য কাজ করেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৪:১.) মস্তকব্যবস্থার প্রতি অসম্মান দেখান এমন একজন মূর্খ স্ত্রীর বিপরীতে, একজন বিজ্ঞ স্ত্রীর এই ব্যবস্থার প্রতি গভীর সম্মান রয়েছে। অবাধ্য ও স্বাধীনচেতা মনোভাব, যা কিনা জগতের বৈশিষ্ট্য, সেগুলো প্রকাশ করার পরিবর্তে তিনি তার সাথির বশীভূত থাকেন। (ইফি. ২:২) একজন মূর্খ স্ত্রী তার স্বামী সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য করতে দ্বিধা করেন না আর অন্যদিকে একজন বিজ্ঞ স্ত্রী সেই সম্মানকে বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করেন, যা ইতিমধ্যেই তার সন্তান এবং অন্যদের তার স্বামীর প্রতি রয়েছে। এইরকম একজন স্ত্রী সতর্ক থাকেন যেন তিনি ক্রমাগত তার স্বামীর খুঁত ধরে এবং তার সঙ্গে তর্কবিতর্ক করে তার স্বামীর মস্তকপদকে খর্ব না করেন। এ ছাড়া, মিতব্যয়ী হওয়ার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে। একজন মূর্খ স্ত্রী সম্ভবত তার পরিবারের কষ্টার্জিত সম্পদগুলোর অপচয় করে থাকেন। কিন্তু, একজন সমর্থনকারী স্ত্রী এইরকম নন। তিনি তার স্বামীকে টাকাপয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি সাধারণত বিচক্ষণতা ও মিতব্যয়িতার সঙ্গে কাজ করেন। তিনি তার স্বামীকে অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য চাপ দেন না।
১২. একজন স্ত্রী তার পরিবারকে ‘জাগিয়া থাকিতে’ সাহায্য করার জন্য কী করতে পারেন?
১২ একজন উদাহরণযোগ্য স্ত্রী, সন্তানদেরকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদান করার ব্যাপারে তার স্বামীকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে পরিবারকে ‘জাগিয়া থাকিতে’ সাহায্য করেন। (হিতো. ১:৮) তিনি পারিবারিক উপাসনা কার্যক্রমকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে থাকেন। অধিকন্তু, স্বামী যখন তাদের সন্তানদেরকে পরামর্শ ও শাসন প্রদান করেন, তখন তিনি স্বামীকে সমর্থন করেন। সেই অসহযোগী স্ত্রীর চেয়ে তিনি কতই না আলাদা, যার সন্তানরা শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রেই কষ্ট ভোগ করে থাকে!
১৩. কেন একজন স্ত্রীর জন্য তার স্বামীকে ঈশতান্ত্রিক কাজকর্মে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার ব্যাপারে সাহায্য করা গুরুত্বপূর্ণ?
১৩ একজন সমর্থনকারী স্ত্রী তার স্বামীকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখে কেমন বোধ করেন? নিশ্চিতভাবেই, তিনি আনন্দিত হন! তার স্বামী একজন পরিচারক দাস, একজন প্রাচীন অথবা হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি কিংবা স্থানীয় নির্মাণ কমিটির সদস্যদের একজন, যা-ই হোন না কেন, স্ত্রী তার স্বামীর বিশেষ সুযোগ দেখে আনন্দিত হন। কথায় ও কাজে স্বামীকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার জন্য নিশ্চিতভাবেই স্ত্রীকে বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করতে হবে। কিন্তু, তিনি জানেন যে, তার স্বামী ঈশতান্ত্রিক কাজগুলোতে যুক্ত হলে, তা পুরো পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে সাহায্য করে।
১৪. (ক) একজন সমর্থনকারী স্ত্রীর পক্ষে কোন বিষয়টা প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ হতে পারে আর কীভাবে তিনি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করতে পারেন? (খ) কীভাবে একজন স্ত্রী তার পুরো পরিবারের মঙ্গলের জন্য অবদান রাখতে পারেন?
১৪ একজন স্ত্রীর পক্ষে সেই সময় সমর্থনকারীর ভূমিকায় উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ হতে পারে, যখন তিনি তার স্বামীর কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু তখনও তিনি ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা’ প্রদর্শন করেন এবং স্বামীর সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করার জন্য তাকে সহযোগিতা করেন। (১ পিতর ৩:৪) একজন উত্তম স্ত্রী প্রাচীনকালের ঈশ্বরভয়শীল নারীদের যেমন, সারা, রূৎ, অবীগল এবং যিশুর মা মরিয়মের মতো উত্তম উদাহরণগুলো অনুসরণ করেন। (১ পিতর ৩:৫, ৬) এ ছাড়া, তিনি বর্তমানকালীন সেই বয়স্ক স্ত্রীদেরকেও অনুকরণ করেন, যারা “আচার ব্যবহারে ভয়শীলা [“শ্রদ্ধাশীল,” NW]।” (তীত ২:৩, ৪) তার স্বামীর প্রতি প্রেম ও সম্মান দেখানোর মাধ্যমে একজন উদাহরণযোগ্য স্ত্রী তাদের বৈবাহিক সাফল্যের ক্ষেত্রে ও সেইসঙ্গে পুরো পরিবারের মঙ্গলের জন্য যথেষ্ট অবদান রাখেন। তার ঘর হল, সান্ত্বনা ও নিরাপত্তার এক স্থান। একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তির কাছে একজন সমর্থনকারী স্ত্রী অতি মূল্যবান!—হিতো. ১৮:২২.
অল্পবয়সিরা—‘অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করো’
১৫. পরিবার যেন আধ্যাত্মিকভাবে ‘জাগিয়া থাকিতে’ পারে, সেইজন্য কীভাবে অল্পবয়সিরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে?
১৫ অল্পবয়সিরা, তোমাদের পরিবার যেন আধ্যাত্মিকভাবে ‘জাগিয়া থাকিতে’ পারে, সেইজন্য কীভাবে তোমরা তোমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারো? সেই পুরস্কার সম্বন্ধে বিবেচনা করো, যা যিহোবা তোমাদের সামনে রেখেছেন। হতে পারে যে, তোমাদের বাবা-মা তোমাদেরকে ছেলেবেলা থেকেই সেই ছবিগুলো দেখিয়েছে, যেগুলোতে পরমদেশে জীবন সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। তোমরা আরেকটু বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তারা সম্ভবত নতুন জগতে অনন্তজীবন কেমন হবে, তা তোমাদেরকে মনশ্চক্ষে দেখতে সাহায্য করার জন্য বাইবেল ও খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদি ব্যবহার করেছে। যিহোবার সেবার প্রতি ক্রমাগত দৃষ্টি রাখা এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করার পরিকল্পনা করা তোমাদেরকে ‘জাগিয়া থাকিতে’ সাহায্য করবে।
১৬, ১৭. অল্পবয়সিরা জীবনের ধাবনক্ষেত্রে সফলভাবে দৌড়ানোর জন্য কী করতে পারে?
১৬ প্রথম করিন্থীয় ৯:২৪ পদে প্রাপ্ত প্রেরিত পৌলের কথাগুলোতে মনোযোগ দাও। (পড়ুন।) জয়ী হওয়ার পূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনের ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াও। এমন একটা পথ বেছে নাও, যা অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভ করতে সাহায্য করবে। অনেকে বস্তুগত বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার কারণে পুরস্কার থেকে তাদের ক্রমাগত দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়েছে। সেটা কতই না মূর্খতাপূর্ণ কাজ! ধনসম্পদ অর্জন করাকে ঘিরে এক জীবনের পরিকল্পনা করা প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে না। টাকাপয়সা দিয়ে যা কেনা যায়, তা ক্ষণস্থায়ী। তাই, তোমরা “অদৃশ্য বস্তু” লক্ষ্য করো। কেন? কারণ “যাহা যাহা অদৃশ্য, তাহা অনন্তকালস্থায়ী।”—২ করি. ৪:১৮.
১৭ “যাহা যাহা অদৃশ্য,” সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রাজ্যের আশীর্বাদগুলো। এমনভাবে জীবনযাপন করার পরিকল্পনা করো, যেন সেগুলো অর্জন করতে পারো। যিহোবার সেবায় তোমাদের জীবনকে ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায়। সত্য ঈশ্বরকে সেবা করা, স্বল্পমেয়াদী ও সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। * বাস্তবসম্মত আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো স্থাপন করা তোমাদেরকে অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভের আশা নিয়ে ঈশ্বরের সেবার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে।—১ যোহন ২:১৭.
১৮, ১৯. একজন অল্পবয়সি সত্যকে নিজের করে নিয়েছে কি না, তা সে কীভাবে নির্ধারণ করতে পারে?
১৮ অল্পবয়সিরা, জীবনের পথে প্রথম পদক্ষেপ হল, সত্যকে নিজের করে নেওয়া। তোমরা কি সেই পদক্ষেপ নিয়েছ? নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করো: ‘আমি কি একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি, নাকি আমার আধ্যাত্মিক কাজগুলোতে অংশ নেওয়া আমার বাবা-মায়ের ওপর নির্ভর করে? আমি কি সেই গুণাবলি অর্জন করার প্রচেষ্টা করি, যেগুলো আমাকে ঈশ্বরের কাছে প্রীতিজনক করে তোলে? আমি কি সত্য উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজগুলোতে যেমন, নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করার, অধ্যয়ন করার, সভায় উপস্থিত হওয়ার এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার এক নিয়মিত তালিকা বজায় রাখার চেষ্টা করি? আমি কি ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হচ্ছি?’—যাকোব ৪:৮.
১৯ মোশির উদাহরণ বিবেচনা করো। পরজাতীয় সংস্কৃতির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও, তিনি ফরৌণের কন্যার পুত্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার চেয়ে বরং যিহোবার একজন উপাসক হিসেবে পরিচিত হওয়া বেছে নিয়েছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:২৪-২৭.) অল্পবয়সি খ্রিস্টানরা, তোমাদেরও বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। তা করার মাধ্যমে এখনই তোমরা প্রকৃত সুখ, সর্বোৎকৃষ্ট জীবন ও সেইসঙ্গে ‘প্রকৃতরূপে জীবন ধরিয়া রাখিবার’ আশা লাভ করতে পারবে।—১ তীম. ৬:১৯.
২০. জীবনের ধাবনক্ষেত্রে কে পুরস্কার পাবে?
২০ প্রাচীনকালের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কেবল একজন দৌড়বিদ খেলায় জয়ী হতেন। কিন্তু, জীবনের ধাবনক্ষেত্রের বেলায় এমনটা নয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই “যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীম. ২:৩, ৪.) অনেকে আপনার আগে সফলভাবে দৌড়েছে আবার অনেকে আপনার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াচ্ছে। (ইব্রীয় ১২:১, ২) যারা হাল ছেড়ে না দেয়, তারা সকলেই পুরস্কার পাবে। তাই, জয়ী হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন!
২১. পরবর্তী প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?
২১ “সদাপ্রভুর . . . মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন” যে ‘আসিবেই,’ তা নিশ্চিত। (মালাখি ৪:৫) সেই দিনে যেন খ্রিস্টীয় পরিবারগুলোকে অসতর্ক অবস্থায় দেখতে পাওয়া না যায়। পরিবারের সকলের জন্য তাদের শাস্ত্রীয় দায়িত্ব পালন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক থাকার এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য আপনারা আর কী করতে পারেন? পরবর্তী প্রবন্ধে এমন তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো পুরো পরিবারের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ওপর প্রভাব ফেলে।
[পাদটীকা]
^ ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১২-১৬ পৃষ্ঠা এবং ২০০৪ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২১-২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কী শিখেছেন?
• কেন খ্রিস্টান পরিবারগুলোর জন্য ‘জাগিয়া থাকা’ অপরিহার্য?
• কীভাবে একজন স্বামী উত্তম মেষপালককে অনুকরণ করে পারেন?
• একজন উদাহরণযোগ্য স্ত্রী তার স্বামীকে সমর্থন করার জন্য কী করতে পারেন?
• কীভাবে অল্পবয়সিরা তাদের পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন সমর্থনকারী স্ত্রী একজন আধ্যাত্মিকমনা পুরুষের কাছে অতি মূল্যবান