সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘আপনার শুভগতি হইবে’ কীভাবে?

‘আপনার শুভগতি হইবে’ কীভাবে?

‘আপনার শুভগতি হইবে’ কীভাবে?

“সফলতা”—এক নজরকাড়া শব্দ! কেউ কেউ ব্যাবসায়িক উন্নতির সিঁড়িতে আরোহণ করেছে এবং ধনী হওয়ার ও সুনাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রচুর সফলতা অর্জন করেছে। আবার, অন্যেরা সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

সফলতা অনেকাংশে সেই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেটাকে আপনি আপনার জীবনের প্রধান চিন্তার বিষয় করে তোলেন। অন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনি আপনার সময় ও শক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করে থাকেন এবং আপনি উদ্যোগ দেখান কি না।

অনেক খ্রিস্টান লক্ষ করেছে যে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করা তাদেরকে প্রচুর পরিতৃপ্তি এনে দিয়েছে। পূর্ণসময়ের সেবাকে কেরিয়ার হিসেবে নেওয়া যুবক-বৃদ্ধ সকলকে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। তার পরও, কেউ কেউ হয়তো পরিচর্যাকে কিছুটা একঘেয়ে বিষয় বলে মনে করতে পারে আর তারা অন্যান্য লক্ষ্য অনুধাবন করার মাধ্যমে পরিচর্যাকে দ্বিতীয় স্থানে রাখে। কেন এইরকমটা হতে পারে? যে-বিষয়টা সত্যিই মূল্যবান, সেটা থেকে আপনার মনোযোগ হারিয়ে ফেলার বিষয়টা এড়ানোর জন্য আপনার কী করতে পারেন? আর কীভাবে ‘আপনার শুভগতি হইবে’ বা আপনি সফল হতে পারেন?—যিহো. ১:৮.

পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং বিভিন্ন শখ

অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের সত্য ঈশ্বরকে সেবা করা ও অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। যারা তা করে, তারা জীবনে সফল হতে যাচ্ছে আর সেইসঙ্গে তারা আন্তরিক প্রশংসা লাভের যোগ্য।

কিন্তু, কিছু অল্পবয়সি খ্রিস্টান পাঠ্যসূচিবহির্ভূত কার্যক্রম ও শখের ক্ষেত্রে অতি মাত্রায় জড়িত হয়ে পড়ে। এইধরনের কার্যক্রম হয়তো আপত্তিকর নয়। তবে, অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘এই ধরনের কার্যক্রমের পিছনে আমাকে কতটা সময় দিতে হবে? মেলামেশার বিষয়ে কী বলা যায়? এই ধরনের কার্যক্রমে রত থাকার সময় আমার আশেপাশের ব্যক্তিরা কোন ধরনের মনোভাব প্রদর্শন করবে? আর আমার জীবনে প্রধান চিন্তার বিষয়টা কী হতে পারে?’ তোমরা সম্ভবত বুঝতে পারছ যে, একজন ব্যক্তি এই ধরনের কার্যক্রমে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়তে পারে যে, ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তার হাতে সামান্যই সময় ও শক্তি অবশিষ্ট থাকবে। তাই, তোমরা বুঝতে পারছ যে, কেন অগ্রাধিকার স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।—ইফি. ৫:১৫-১৭.

ভিক্টরের কথা বিবেচনা করুন। * তিনি বলেন: “আমার বয়স যখন ১২ বছর, তখন আমি ভলিবল ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি অনেক পুরস্কার জিতেছিলাম। আমার একজন বিখ্যাত খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ ছিল।” সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, খেলাধুলার পিছনে ছোটা তার আধ্যাত্মিকতার ওপর যে-প্রভাব ফেলছিল, সেই বিষয়টা নিয়ে ভিক্টর চিন্তিত হয়ে পড়েন। একদিন, তিনি বাইবেল পড়তে চেষ্টা করার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, ক্ষেত্রের পরিচর্যা থেকে তিনি সামান্যই আনন্দ লাভ করতেন। “খেলাধুলা আমার শক্তি কেড়ে নিয়েছিল এবং শীঘ্র আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটা আমার আধ্যাত্মিকতার প্রতি উদ্যোগকেও কেড়ে নিচ্ছিল। আমি জানতাম যে, আমি যথাসাধ্য করছিলাম না।”

উচ্চশিক্ষা?

একজন খ্রিস্টানের তার পরিবারের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বস্তুগত চাহিদাগুলো মেটানো। (১ তীম. ৫:৮) কিন্তু, এর জন্য কি কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির আসলেই প্রয়োজন রয়েছে?

এই বিষয়টা বিবেচনা করা উত্তম হবে যে, উচ্চশিক্ষার পিছনে ছোটা যিহোবার সঙ্গে একজন ব্যক্তির সম্পর্কের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন আমরা একটা শাস্ত্রীয় উদাহরণ বিবেচনা করার মাধ্যমে এই বিষয়টা তুলে ধরি।

বারূক, ভাববাদী যিরমিয়ের সচিব ছিলেন। এক সময়, বারূকের যিহোবাকে সেবা করার যে-বিশেষ সুযোগ ছিল, তিনি সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে বরং উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছিলেন। যিহোবা তা লক্ষ করেছিলেন এবং যিরমিয়ের মাধ্যমে তাকে এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন: “তুমি কি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা করিবে? সে চেষ্টা করিও না।”—যির. ৪৫:৫.

সেই “মহৎ মহৎ বিষয়” কী ছিল, যেগুলোর চেষ্টা বারূক করছিলেন? তিনি হয়তো যিহুদি সমাজ ব্যবস্থায় বিখ্যাত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। অথবা সেই মহৎ মহৎ বিষয় বস্তুগত সমৃদ্ধিও হতে পারে। যেটাই হোক না কেন, তিনি শ্রেয় বা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি তার মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন, যেগুলোর আধ্যাত্মিক মূল্য রয়েছে। (ফিলি. ১:১০) তবে, বারূক স্পষ্টতই যিরমিয়ের দ্বারা প্রাপ্ত যিহোবার সাবধানবাণী শুনেছিলেন আর এভাবে তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।—যির. ৪৩:৬.

এই বিবরণ থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? বারূক যে-পরামর্শ লাভ করেছিলেন, তা ইঙ্গিত দেয় যে, কিছু একটা ভুল ছিল। তিনি নিজের জন্য মহৎ মহৎ বিষয়ের চেষ্টা করছিলেন। আপনার যদি নিজের ভরণপোষণ চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো উপায় থেকে থাকে, তাহলে শুধুমাত্র নিজের অথবা আপনার বাবা-মা কিংবা আত্মীয়স্বজনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য আপনার কি উচ্চশিক্ষার পিছনে সময়, টাকাপয়সা ও শক্তি ব্যয় করার আসলেই প্রয়োজন রয়েছে?

শ্জেগশ নামে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামারের কথা বিবেচনা করুন। তার সহকর্মীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য আরও উচ্চ পর্যায়ের কোর্সে ভরতি হয়েছিলেন। অল্পসময়ের মধ্যেই, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর অনুধাবন করার জন্য তার হাতে আর সময় ছিল না। তিনি স্মরণ করে বলেন: “আমি সারাক্ষণ অস্বস্তির মধ্যে থাকতাম। আর আমার বিবেক আমাকে দংশন করত কারণ আমি নিজের জন্য যে-আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো স্থাপন করেছিলাম, সেগুলো অর্জন করতে পারিনি।”

চাকরিতে মত্ত হয়ে যাওয়া

ঈশ্বরের বাক্য সত্য খ্রিস্টানদের কঠোর পরিশ্রমী ও দায়িত্ববান কর্মচারী এবং কর্মকর্তা হতে উৎসাহিত করে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই [ঈশ্বরেরই] কর্ম্ম বলিয়া কর।” (কল. ৩:২২, ২৩) কিন্তু, কঠোর পরিশ্রম যদিও প্রশংসা লাভের যোগ্য, তবে আরও কিছুর প্রয়োজন—আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক। (উপ. ১২:১৩) একজন খ্রিস্টান যদি তার জাগতিক কাজে মত্ত হয়ে যান, তাহলে আধ্যাত্মিক অনুধাবনগুলো খুব সহজেই দ্বিতীয় স্থানে চলে যাবে।

জাগতিক চাকরির মধ্যে ডুবে যাওয়া একজন খ্রিস্টানের সেই শক্তিকে কেড়ে নিতে পারে, যা তার নিজের আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখার এবং তার পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য প্রয়োজন। রাজা শলোমন বলেছিলেন যে, “পূর্ণ দুই মুষ্টি” প্রায়ই ‘পরিশ্রম ও বায়ুভক্ষণ’ দ্বারা লাভ করা যায়। একজন খ্রিস্টান যদি জাগতিক কেরিয়ারের মধ্যে অতিরিক্ত জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তিনি এক পর্যায়ে ক্রমাগত উদ্‌বিগ্নতার দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়বেন। এমনকী এই ধরনের একজন ব্যক্তি এমন এক কেরিয়ারের ফাঁদে আটকা পড়ে যেতে পারেন, যা খুব তাড়াতাড়িই একজনকে মানসিক ও শারীরিকভাবে একেবারে নিঃশেষ করে দিতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে তিনি কি ‘আনন্দ ও সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করিতে’ পারেন? (উপ. ৩:১২, ১৩; ৪:৬) আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তার হাতে কি পরিবারের মধ্যে তার দায়িত্বগুলো পালন করার ও বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাজে রত হওয়ার মতো যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক শক্তি অবশিষ্ট থাকবে?

ইয়ানুশ, যিনি ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে বাস করেন, তিনি তার কৃষি ব্যাবসার কাজে মত্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেন: “জগতের লোকেরা আমার প্রশংসা করত কারণ আমার পূর্ণ কর্মোদ্যোগ ছিল আর আমি নির্ধারিত প্রতিটা কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম ছিলাম। কিন্তু, আমার আধ্যাত্মিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং আমি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। শীঘ্র আমি সভাতে যোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমি এতটাই গর্বিত হয়ে উঠেছিলাম যে, প্রাচীনদের পরামর্শকে পর্যন্ত উপেক্ষা করেছিলাম এবং মণ্ডলী থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম।”

আপনি আপনার জীবনকে সফল করে তুলতে পারেন

আমরা তিনটে ক্ষেত্র বিবেচনা করেছি, যেগুলোতে একজন খ্রিস্টান হয়তো তার আধ্যাত্মিকতাকে বিসর্জন দিয়ে অতিরিক্ত জড়িয়ে পড়তে পারেন। আপনি কি এগুলোর কোনোটার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে নীচের প্রশ্ন, শাস্ত্রপদ ও মন্তব্যগুলো আপনাকে এই বিষয়টা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে যে, আপনি সত্যিই সফল কি না।

পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম এবং বিভিন্ন শখ: তোমরা এই ধরনের কার্যক্রমে কতটা মগ্ন হয়ে রয়েছ? এগুলো কি তোমার সেই সময়কে কেড়ে নিচ্ছে, যে-সময়টা আগে তুমি বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাজ করার জন্য ব্যবহার করতে? তোমার কাছে কি সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করাকে আগের চেয়ে কম আনন্দদায়ক বলে মনে হয়? যদি তা-ই হয়, রাজা দায়ূদকে অনুকরণ করো না কেন, যিনি যিহোবার কাছে এই মিনতি করেছিলেন: “আমার গন্তব্য পথ আমাকে জানাও।”—গীত. ১৪৩:৮.

একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ আগে উল্লেখিত ভিক্টরকে সাহায্য করেছিলেন। সেই অধ্যক্ষ তাকে এই কথা বলেছিলেন: “তুমি তোমার ভলিবল খেলার বিষয়টা নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলে থাকো।” “এই বিষয়টা আমাকে নাড়া দিয়েছিল,” ভিক্টর বলেন। “আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছি। শীঘ্র, আমি ক্লাবের জাগতিক বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং মণ্ডলীর মধ্যে বন্ধুবান্ধব খুঁজেছিলাম।” বর্তমানে ভিক্টর তার মণ্ডলীতে উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করছেন। তিনি এই সুপারিশ করেন: “তোমার বন্ধুবান্ধব, তোমার বাবা-মা অথবা মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছে জিজ্ঞেস করো যে, তোমার স্কুলের কার্যক্রম তোমাকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করেছে, নাকি তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে, এই বিষয়টা তারা লক্ষ করেছে কি না।”

তোমাদের মণ্ডলীর প্রাচীনদের এই ইঙ্গিত দাও না কেন যে, তোমরা ঈশ্বরের সেবায় আরও বিশেষ সুযোগ লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী? তোমরা কি সাহচর্য বা সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে এমন বয়স্ক ব্যক্তিদের সাহায্য করতে, হতে পারে তাদের কেনাকাটায় অথবা তাদের ঘরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে পার? তোমাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, তোমরা পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত হতে পার, অন্যদের কাছে তোমার আনন্দের কারণ সম্বন্ধে জানাতে পার।

উচ্চশিক্ষা: যিশু ‘আপনারই গৌরব চেষ্টা করিবার’ বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন। (যোহন ৭:১৮) কতটুকু জাগতিক পড়াশোনা করবেন, সেই বিষয়ে আপনি যে-সিদ্ধান্তই নিন না কেন, আপনি কি ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [শ্রেয়, পাদটীকা], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পারিয়াছেন’?—ফিলি. ১:৯, ১০.

শ্জেগশ নামে সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামার তার জীবনে কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রাচীনদের পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমি আমার জীবনকে সাদাসিধে করেছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমার আর জাগতিক উচ্চশিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেটা শুধু আমার সময় ও শক্তিকেই কেড়ে নেবে।” শ্জেগশ মণ্ডলীর বিভিন্ন কাজে আরও বেশি জড়িত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন, যেটাকে এখন অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল বলা হয়ে থাকে। হ্যাঁ, তিনি তার ঐশিক শিক্ষাকে বৃদ্ধি করার জন্য সময় বা ‘সুযোগ কিনিয়া লইয়াছিলেন।’—ইফি. ৫:১৬.

জাগতিক চাকরি: আপনি কি আপনার কাজে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছেন যে, আপনার আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো দূরে সরে যাচ্ছে? আপনি কি আপনার পরিবারের সঙ্গে ভাববিনিময় করার জন্য যথেষ্ট সময় নেন? আর মণ্ডলীতে, আপনি কি আপনার বক্তৃতার গুণগতমানকে বৃদ্ধি করছেন? অন্যদের সঙ্গে গঠনমূলক কথাবার্তা বলার বিষয়ে কী বলা যায়? ‘ঈশ্বরকে ভয় করুন, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করুন’ আর এর ফলে আপনি যিহোবার কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করবেন ও ‘নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করিতে’ দিতে পারবেন।—উপ. ২:২৪; ১২:১৩.

আগে উল্লেখিত ইয়ানুশ তার কৃষি ব্যাবসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল হননি; বরং তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। কোনো আয় না থাকায় এবং বিরাট ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়ায় তিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। ইয়ানুশ তার বিভিন্ন কাজকে সুবিন্যস্ত করেছিলেন এবং এখন তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী ও মণ্ডলীর একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করেন। তিনি বলেন: “আমি যখন মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকি আর সেইসঙ্গে একই সময়ে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিই, তখন আমার মনের শান্তি ও এক শান্ত হৃদয় থাকে।”—ফিলি. ৪:৬, ৭.

আপনার বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে সৎ মূল্যায়ন করার জন্য কিছুটা সময় করে নিন। যিহোবার সেবা করা হচ্ছে চিরকালীন সফলতার এক পথ। এটাকে আপনার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলুন।

আপনাকে হয়তো কিছু রদবদল করতে হতে পারে, এমনকী “ঈশ্বরের ইচ্ছা . . . যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ,” তা জানার জন্য অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পুরোপুরি বাদ দিতে হতে পারে। (রোমীয় ১২:২) কিন্তু, তাঁকে সর্বান্তঃকরণ সেবা প্রদান করার মাধ্যমে ‘আপনার শুভগতি হইতে’ পারে বা আপনি সফল হতে পারেন।

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[৩১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

কীভাবে আপনি সফল হতে পারেন?

যেহেতু আপনার মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করার মতো অনেক বিষয় রয়েছে, তাই কীভাবে আপনি প্রকৃত মূল্যবান বিষয়টার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলা এড়াতে পারেন? নীচের প্রশ্নগুলো গভীরভাবে বিবেচনা করার মাধ্যমে আপনার বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকার পরীক্ষা করার জন্য কিছুটা সময় করে নিন:

পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রম ও শখ

▪ এই ধরনের কাজে রত থাকার সময় তোমার আশেপাশের ব্যক্তিরা কোন ধরনের মনোভাব প্রদর্শন করে?

▪ এগুলোর পিছনে কতটা সময় দিতে হবে?

▪ এগুলো কি তোমার জীবনের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে?

▪ এগুলো কি তোমার সেই সময়কে কেড়ে নিচ্ছে, যে-সময়টা আগে তুমি বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাজ করার জন্য ব্যবহার করতে?

▪ মেলামেশার বিষয়ে কী বলা যায়?

▪ তুমি কি এইধরনের মেলামেশাকে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করার চেয়েও বেশি আনন্দদায়ক বলে মনে করো?

উচ্চশিক্ষা

▪ আপনার যদি নিজের ভরণপোষণ চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো উপায় থেকে থাকে, তাহলে আপনার কি উচ্চশিক্ষার পিছনে সময়, টাকাপয়সা ও প্রচেষ্টা ব্যয় করার আসলেই প্রয়োজন রয়েছে?

▪ নিজের ভরণপোষণ চালানোর জন্য আপনার কি কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির আসলেই প্রয়োজন রয়েছে?

▪ সভাতে যোগদানের ক্ষেত্রে কেমন প্রভাব পড়বে?

▪ আপনি কি ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [বা শ্রেয়], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পারিয়াছেন’?

▪ আপনার ভরণপোষণ জোগানোর ব্যাপারে যিহোবার ক্ষমতার প্রতি আপনার কি নিজের আস্থাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে?

চাকরি

▪ কীভাবে আপনার বাছাইগুলো আপনাকে ‘নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করিতে’ দেয়?

▪ আপনার হাতে কি পরিবারের মধ্যে আপনার দায়িত্বগুলো পালন করার ও বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাজে রত হওয়ার মতো যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক শক্তি অবশিষ্ট থাকে?

▪ আপনি কি আপনার পরিবারের সঙ্গে ভাববিনিময় করার জন্য যথেষ্ট সময় নেন?

▪ আপনি কি কাজের মধ্যে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছেন যে, আধ্যাত্মিক কাজগুলো দূরে সরে যাচ্ছে?

▪ এটা কি আপনার বক্তৃতার গুণগতমানের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে?

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা বারূককে উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্বন্ধে সাবধান করেছিলেন