সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক সুদীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে বিজয়লাভ!

এক সুদীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে বিজয়লাভ!

এক সুদীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে বিজয়লাভ!

এটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে এবং ১৫ বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল। সেই পুরোটা সময়জুড়েই রাশিয়ার সত্য খ্রিস্টানরা ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরোধীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। এই বিরোধীরা যিহোবার সাক্ষিদেরকে মস্কোর ভিতরে এবং মস্কোর বাইরেও অবৈধ বলে তুলে ধরার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবা আইনি বিজয় এনে দেওয়ার মাধ্যমে রাশিয়ায় আমাদের প্রিয় ভাই ও বোনদের নীতিনিষ্ঠাকে পুরস্কার লাভের যোগ্য বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু, কোন বিষয়টা এই ধরনের বিরোধিতার সৃষ্টি করেছিল?

অবশেষে স্বাধীনতা!

১৯৯০-এর দশকের প্রথমার্ধে রাশিয়ায় আমাদের ভাইবোনেরা পুনরায় ধর্মীয় স্বাধীনতা লাভ করেছিল, যা তারা ১৯১৭ সালে হারিয়েছিল। ১৯৯১ সালে তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের দ্বারা স্বীকৃত এক ধর্ম হিসেবে নিবন্ধীকৃত হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর, যিহোবার সাক্ষিরা রাশিয়ান ফেডারেশনের অধীনে নিবন্ধীকৃত হয়েছিল। অধিকন্তু, যে-সাক্ষিরা কয়েক দশক আগে ধর্মীয় তাড়নার শিকার হয়েছিল, রাষ্ট্র সরকারিভাবে তাদেরকে রাজনৈতিক বিরোধিতার শিকার বলে অভিহিত করেছিল। মস্কোর বিচার বিভাগ ১৯৯৩ সালে মস্কোর যিহোবার সাক্ষিদের দল এই নাম নিবন্ধীভুক্ত করে, যে-বৈধ নামে আমরা সেখানে পরিচিত। সেই একই বছরে, রাশিয়ার নতুন সংবিধান, যেটা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছে, সেটাও কার্যকর হয়েছিল। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, একজন ভাই আনন্দে বলে উঠেছিলেন: “আমরা এই ধরনের স্বাধীনতার কথা কখনো স্বপ্নেও চিন্তা করিনি!” তিনি আরও বলেছিলেন: “এর জন্য আমরা ৫০ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলাম!”

রাশিয়ায় আমাদের ভাইবোনেরা অবিলম্বে তাদের প্রচার কাজ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সেই অনুকূল ‘সময়ের’ সদ্‌ব্যবহার করেছিল আর অনেকে সাড়া দিয়েছিল। (২ তীম. ৪:২) একজন মহিলা পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছিলেন যে, “লোকেরা ধর্মের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিল।” অল্পসময়ের মধ্যেই প্রকাশক, অগ্রগামী এবং মণ্ডলীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সত্যি বলতে কী, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে মস্কোতে যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা ৩০০ জন থেকে বেড়ে গিয়ে ৫০০০ জনের ওপরে উন্নীত হয়েছিল! মস্কোতে যিহোবার নতুন দাসদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখনই ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরোধীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, তারা এক আইনি যুদ্ধ শুরু করার মাধ্যমে আক্রমণ করেছিল। অবশেষে সেই লড়াইয়ের মীমাংসা হওয়ার আগে চারটে দীর্ঘ পর্যায় অতিক্রান্ত হয়েছিল।

অপরাধ সংক্রান্ত তদন্ত অন্যদিকে দিকে মোড় নেয়

সেই লড়াইয়ের প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালের জুন মাসে। মস্কোর একটা দল খোলাখুলিভাবে অর্থোডক্স গির্জার সঙ্গে যোগ দিয়ে আমাদের ভাইবোনদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেছিল যে, তারা অপরাধমূলক কাজে জড়িত রয়েছে। সেই দলের লোকেরা এমন পরিবারের সদস্য হওয়ার ভান করেছিল, যারা তাদের বিবাহসাথি অথবা সন্তানরা যিহোবার সাক্ষি হয়েছে বলে ক্ষুদ্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে তদন্তকারীরা অপরাধের প্রমাণ খুঁজতে শুরু করেছিল কিন্তু তারা কোনো প্রমাণই পায়নি। তার পরও, সেই একই দল আদালতে আরেকটা অভিযোগ—আবারও আমাদের ভাইবোনদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ—দায়ের করেছিল। তদন্তকারীরা আবারও অনুসন্ধান চালিয়েছিল, কিন্তু সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, বিরোধীরা একই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৃতীয় বারের মতো একই অভিযোগ পেশ করে। আবারও, মস্কোর যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছিল, কিন্তু প্রতিপক্ষের আইনজীবী সেই একই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন—ফৌজদারি বা অপরাধ সংক্রান্ত মামলা শুরু করার কোনো ভিত্তিই নেই। এরপর, বিরোধীরা চতুর্থ বারের মতো সেই একই অভিযোগের বিষয়ে মামলা দায়ের করেছিল এবং আবারও প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা কোনো প্রমাণই খুঁজে পায়নি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, সেই একই দল আরেকবার তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করেছিল। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ১৩ এপ্রিল নতুন তদন্তকারী মামলাটা নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন।

“কিন্তু তার পর অদ্ভুত কিছু ঘটেছিল,” সেই মামলার সঙ্গে জড়িত একজন আইনজীবী বলেন। যদিও প্রতিপক্ষের আইনজীবীর কার্যালয়ের যে-প্রতিনিধি পঞ্চম বারের তদন্ত চালিয়েছিলেন, তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, অপরাধমূলক কাজের কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি, কিন্তু তার পরও সেই প্রতিনিধি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, আমাদের ভাইবোনদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দায়ের করা উচিত। দেওয়ানি মামলা হল, পুলিশ নয় বরং জনগণের দ্বারা দায়েরকৃত মামলা। সেই প্রতিনিধি এই অভিযোগ করেছিল যে, মস্কোর যিহোবার সাক্ষিদের দল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। নর্দান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্কিট অভ্‌ মস্কো সেই বিষয়ে একমত ছিল এবং একটা দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছিল। * ১৯৯৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মস্কোর গোলোভিন্‌স্কি জেলা আদালতে সেটার শুনানি হয়েছিল। এটা ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু।

আদালতে বাইবেল

উত্তর মস্কোর জনাকীর্ণ এক আদালতে প্রতিপক্ষের আইনজীবী তাতিয়ানা কনদ্রাতিয়েভা ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত একটা রাষ্ট্রীয় আইন ব্যবহার করে প্রথম আঘাত করেছিলেন, যে-আইন অর্থোডক্স খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, যিহুদি ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্মকে প্রথাগত ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করে। * আসলে, সেই একই আইন অন্যান্য ধর্মগুলোর জন্যও বৈধ স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টাকে কঠিন করে তুলেছিল। এ ছাড়া, সেই আইন আদালতকে এমন যেকোনো ধর্মকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করার অধিকার দিয়েছিল, যা ঘৃণাকে উসকে দেয়। সেই আইন ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের আইনজীবী এই মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা ঘৃণাকে উসকে দেয় এবং পরিবারগুলোকে ভেঙে দেয় আর তাই তাদেরকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত।

আমাদের ভাইদের পক্ষে লড়ছিলেন এমন একজন আইনজীবী জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মস্কোর মণ্ডলীর মধ্যে কোন ব্যক্তিরা সেই আইনকে লঙ্ঘন করছে?” প্রতিপক্ষের আইনজীবী একজনের নামও উল্লেখ করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও, তিনি দাবি করেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিদের সাহিত্যাদি ধর্মীয় শত্রুতাকে উসকে দেয়। তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য তিনি প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকা এবং অন্যান্য প্রকাশনা থেকে পড়ে শুনিয়েছিলেন (ওপরে দেখুন)। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এই সাহিত্যাদি কীভাবে শত্রুতার সৃষ্টি করে, তখন তিনি বলেছিলেন, “যিহোবার সাক্ষিরা শিক্ষা দেয়, তাদের কাছে সত্য ধর্ম রয়েছে।”

আমাদের একজন আইনজীবী ভাই, বিচারক এবং প্রতিপক্ষের আইনজীবীর হাতে বাইবেল দিয়েছিলেন এবং ইফিষীয় ৪:৫ পদ পড়েছিলেন, যেটি বলে: “প্রভু এক, বিশ্বাস এক, বাপ্তিস্ম এক।” কিছুক্ষণের মধ্যে বিচারক, প্রতিপক্ষের আইনজীবী এবং সেই আইনজীবী ভাই সকলেই হাতে বাইবেল নিয়ে যোহন ১৭:১৮ এবং যাকোব ১:২৭ পদের মতো শাস্ত্রপদ নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেছিল। আদালত জিজ্ঞেস করেছিল, “এই শাস্ত্রপদগুলো কি ধর্মীয় শত্রুতাকে উসকে দেয়?” প্রতিপক্ষের আইনজীবী উত্তর দিয়েছিলেন যে, তিনি বাইবেলের ওপর মন্তব্য করার ব্যাপারে দক্ষ নন। আইনজীবী ভাই রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার এমন কিছু সাহিত্যাদি, যেগুলো যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে, সেগুলো দেখিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এই ধরনের কথা কি সেই আইনকে লঙ্ঘন করে?” প্রতিপক্ষের সেই আইনজীবী উত্তরে বলেছিলেন: “আমি যাজকদের কোনো যুক্তিতর্কের ওপর মন্তব্য করার ব্যাপারে সক্ষম নই।”

প্রতিপক্ষ দল স্তিমিত হয়ে পড়ে

সাক্ষিদের ওপর পরিবার ভেঙে ফেলার অভিযোগ নিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিপক্ষের আইনজীবী উল্লেখ করেছিলেন যে, তারা ছুটির দিনগুলো যেমন, বড়দিন পালন করে না। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, রাশিয়ার আইন নাগরিকদের বড়দিন উদ্‌যাপন করার জন্য জোর করে না। রাশিয়ার লোকেদের—যাদের মধ্যে রাশিয়ার যিহোবার সাক্ষিরাও রয়েছে—বাছাই করার সুযোগ আছে। প্রতিপক্ষের আইনজীবী আরও দাবি করেছিলেন যে, আমাদের সংগঠন ‘সন্তানদেরকে স্বাভাবিক বিশ্রাম ও মানসিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে।’ তার পরও, যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনোই সাক্ষি বাবা-মার ঘরে বেড়ে ওঠা কোনো অল্পবয়সির সঙ্গে কথা বলেননি। সাক্ষিদের পক্ষের একজন আইনজীবী যখন প্রতিপক্ষের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, তিনি কখনো যিহোবার সাক্ষিদের কোনো সভায় যোগদান করেছিলেন কি না, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “সেটার কোনো প্রয়োজনই হয়নি।”

প্রতিপক্ষের আইনজীবী মনোরোগবিদ্যার একজন অধ্যাপককে আদালতে এক কুশলী সাক্ষি হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন। সেই ব্যক্তি অভিযোগ করেছিলেন যে, আমাদের সাহিত্যাদি পড়া মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। সাক্ষিদের পক্ষের আইনজীবী যখন মন্তব্য করেছিলেন যে, আদালতের উদ্দেশে লেখা অধ্যাপকের বিবরণ হুবহু মস্কোর বিশপদের প্রস্তুতকৃত বিবরণের মতো ছিল, তখন অধ্যাপক স্বীকার করেছিলেন যে, কিছু অংশ একেবারে একই ছিল। তিনি বলেছিলেন, “আমরা একই উৎস থেকে কাজ করেছি।” আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গিয়েছিল যে, তিনি কখনো কোনো যিহোবার সাক্ষির চিকিৎসা পর্যন্ত করেননি। অন্যদিকে, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এমন আরেকজন মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপককে নিয়ে আসা হয়েছিল, যিনি ১০০ জনেরও বেশি যিহোবার সাক্ষির ওপর গবেষণা চালিয়েছিলেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, সেই দলের লোকেদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা স্বাভাবিক এবং তিনি আরও বলেছিলেন, সেই দলের সদস্যরা যখন থেকে যিহোবার সাক্ষি হয়েছে, তখন থেকে অন্যান্য ধর্মের প্রতি আরও সহিষ্ণুতা গড়ে তুলেছে।

বিজয়—কিন্তু চূড়ান্ত নয়

১৯৯৯ সালের ১২ মার্চ বিচারক পাঁচ জন পণ্ডিত ব্যক্তিকে যিহোবার সাক্ষিদের সাহিত্যাদি অধ্যয়ন করে দেখার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন এবং কিছু সময়ের জন্য মামলাটা স্থগিত রেখেছিলেন। অন্যদিকে, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের বিচার মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই আমাদের সাহিত্যাদি অধ্যয়ন করার জন্য পণ্ডিত ব্যক্তিদের একটা দল গঠন করার আদেশ দিয়েছিল আর এই ঘটনার সঙ্গে মস্কোর সেই মামলার কোনো সম্পর্কই ছিল না। মন্ত্রণালয়ের দ্বারা নিযুক্ত সেই দল ১৯৯৯ সালের ১৫ এপ্রিল এই রিপোর্ট জমা দিয়েছিল যে, আমাদের সাহিত্যাদির মধ্যে ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। আর তাই, ১৯৯৯ সালের ২৯ এপ্রিল বিচার মন্ত্রণালয় যিহোবার সাক্ষিদের জাতীয় নিবন্ধন নবায়ন করেছিল। এই ধরনের নতুন ইতিবাচক তথ্য থাকা সত্ত্বেও, মস্কোর আদালত আমাদের সাহিত্যাদি পরীক্ষা করার জন্য এক নতুন দল গঠনের ব্যাপারে জোরাজুরি করেছিল। এটা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল—একদিকে যিহোবার সাক্ষিদের ধর্ম রাশিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়ের দ্বারা আইনের ভিত্তিতে জাতীয়ভাবে অনুমোদিত ছিল, কিন্তু একইসঙ্গে অন্যদিকে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মস্কোর বিচার বিভাগের দ্বারা তাদের তদন্ত করা হচ্ছিল!

সেই বিচার পুনরায় শুরু হওয়ার আগে প্রায় দুই বছর পার হয়ে গিয়েছিল এবং ২০০১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারক ইলেনা প্রহোরিচেভা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। তিনি পণ্ডিত ব্যক্তিদের যে-দলকে নিযুক্ত করেছিলেন, তাদের তথ্য বিবেচনা করার পর, এই রায় ঘোষণা করেছিলেন: “মস্কোতে যিহোবার সাক্ষি ধর্মীয় দলের কার্যকলাপকে বন্ধ করে দেওয়ার বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কোনো ভিত্তিই নেই।” অবশেষে, আইনগতভাবে এটা প্রমাণিত হয়েছিল যে, আমাদের ভাইবোনেরা তাদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ থেকে নির্দোষ! তবুও প্রতিপক্ষের আইনজীবী সেই রায়কে অগ্রাহ্য করেছিলেন এবং মস্কোর নগর আদালতে আপিল করেছিলেন। তিন মাস পর, ২০০১ সালের ৩০ মে সেই আদালত বিচারক প্রহোরিচেভার রায়কে বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছিল। সেই আদালত নির্দেশ দিয়েছিল যে, একই প্রতিপক্ষের আইনজীবী দ্বারা আবারও বিচারকার্য পরিচালনা করতে হবে, কিন্তু বিচারক ভিন্ন হবে। তৃতীয় পর্যায় মাত্র শুরু হতে যাচ্ছিল।

পরাজয়—কিন্তু চূড়ান্ত নয়

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর, বিচারক ভেরা দুবিনস্কাইয়া পুনরায় এই বিচারকার্য আরম্ভ করেছিলেন। * প্রতিপক্ষের আইনজীবী কনদ্রাতিয়েভা যদিও আবার এই অভিযোগ করেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা ঘৃণাকে উসকে দেয়, কিন্তু তিনি আরও যোগ করেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিদের বৈধ দলকে নিষিদ্ধ করাটা আসলে মস্কোর যিহোবার সাক্ষিদের অধিকারগুলোকে সুরক্ষা করারই এক উপায় ছিল! এই ধরনের অদ্ভুত দাবির প্রতিক্রিয়া হিসেবে সঙ্গেসঙ্গে মস্কোর ১০,০০০ যিহোবার সাক্ষির স্বাক্ষরিত একটা দরখাস্ত আদালতে পেশ করা হয়েছিল, যেটাতে প্রতিপক্ষের আইনজীবীর প্রস্তাবিত “সুরক্ষা” বর্জন করার বিষয়ে আবেদন করা হয়।

প্রতিপক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা যে অপরাধের দোষে দোষী, সেটার স্বপক্ষে তার কোনো প্রমাণ তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেছিলেন যে, এই বিচার যিহোবার সাক্ষিদের কোনো কার্যকলাপ নিয়ে নয় বরং তাদের সাহিত্যাদি এবং বিভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে চলছিল। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, কুশলী সাক্ষি হিসেবে তিনি রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার একজন মুখপাত্রকে উপস্থিত করবেন। অবশ্য, সেই ঘোষণার ফলে এই বিষয়টা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার সাক্ষিদেরকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করার প্রচেষ্টায় পাদরি শ্রেণীর সদস্যরা পুরোপুরি জড়িত। ২০০৩ সালের ২২ মে, বিচারক আদেশ জারি করেছিলেন যে, বিশেষজ্ঞদের একটা দল আবারও যিহোবার সাক্ষিদের সাহিত্যাদি অধ্যয়ন করবে।

২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, সেই দলের অধ্যয়নের ফলাফল পুনরালোচনা করার জন্য পুনরায় বিচার আরম্ভ হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, আমাদের সাহিত্যাদি পাঠকদেরকে “পরিবার এবং বৈবাহিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার” জন্য উৎসাহিত করে আর সেইসঙ্গে আমাদের সাহিত্যাদি ঘৃণাকে উসকে দেয় বলে যে-দাবি করা হয়েছিল, সেটা “অপ্রমাণিত” ছিল। অন্যান্য পণ্ডিতও এই বিষয়ে একমত ছিল। ধর্মীয় ইতিহাসের একজন অধ্যাপককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “কেন যিহোবার সাক্ষিরা প্রচার করে?” তিনি আদালতকে উত্তর দিয়েছিলেন: “একজন খ্রিস্টানের জন্য প্রচার কাজ করা আবশ্যক। সুসমাচারের বিবরণগুলো সেটাই বলে এবং খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদেরকে সেটা করারই কার্যভার দিয়েছিলেন—‘যাও এবং সকল দেশে প্রচার করো।’” তা সত্ত্বেও, বিচারক ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ মস্কোতে যিহোবার সাক্ষিদের কার্যকলাপকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ১৬ জুলাই মস্কোর নগর আদালত সেই রায়কে সমর্থন করেছিল। * এই রায়ের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে দীর্ঘসময়ের একজন সাক্ষি বলেছিলেন: “সোভিয়েত শাসনাধীনে, রাশিয়ার একজন ব্যক্তিকে নাস্তিক হতে হতো। আর এখন একজন ব্যক্তিকে অর্থোডক্স হতে হবে।”

এই নিষেধাজ্ঞার প্রতি ভাইবোনেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? অনেকটা প্রাচীনকালের নহিমিয়ের মতো। তার সময়ে, ঈশ্বরের লোকেদের শত্রুরা যখন যিরূশালেমের প্রাচীর নির্মাণের জন্য তার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছিল, তখন নহিমিয় এবং তার লোকেরা কোনো ধরনের বিরোধিতার দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়নি। এর পরিবর্তে, তারা ‘প্রাচীর গাঁথিয়াছিল’ এবং “কার্য্য করিতে মন” দিয়েছিল। (নহি. ৪:১-৬) একইভাবে, মস্কোতে আমাদের ভাইবোনেরা বিরোধীদের কারণে তাদের সেই কাজ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়নি, যে-কাজ—সুসমাচার প্রচার কাজ—বর্তমানে সম্পন্ন করতে হবে। (১ পিতর ৪:১২, ১৬) তারা নিশ্চিত ছিল যে, যিহোবা তাদের প্রতি লক্ষ রাখবেন এবং তারা এই সুদীর্ঘ লড়াইয়ের চতুর্থ পর্যায় গ্রহণ করার জন্য তৈরি ছিল।

বিরোধিতা বৃদ্ধি পায়

২০০৪ সালের ২৫ আগস্ট, আমাদের ভাইবোনেরা রাশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক দরখাস্ত পেশ করেছিল। ৭৬টি খণ্ড ও ৩,১৫,০০০টি স্বাক্ষরবিশিষ্ট সেই দরখাস্তে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্‌বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সময়, রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জা তার আসল চেহারা প্রকাশ করেছিল। মস্কোর বিশপদের একজন মুখপাত্র ঘোষণা করেছিলেন: “আমরা যিহোবার সাক্ষিদের কার্যকলাপের তীব্র বিরোধিতা করি।” একজন মুসলিম নেতা বলেছিলেন যে, নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়টা ছিল “এক মাইলফলক এবং ইতিবাচক ঘটনা।”

স্বাভাবিকভাবেই, রাশিয়ার সমাজের বিভ্রান্ত লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদেরকে আক্রমণ করার জন্য সাহসী হয়ে উঠেছিল। কিছু সাক্ষি যখন মস্কোতে প্রচার কাজে অংশ নিয়েছিল, সেই সময়ে বিরোধীরা তাদের ঘুষি ও লাথি মেরেছিল। একজন বোন বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আসার সময় ক্রোধান্বিত এক ব্যক্তি তাকে তাড়া করেছিলেন এবং এত নিষ্ঠুরভাবে তার মেরুদণ্ডে লাথি মেরেছিলেন যে, সেই বোন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। তার চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়েছিল; কিন্তু, পুলিশ সেই আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। অন্যান্য সাক্ষিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, আঙুলের ছাপ নিয়েছিল, ছবি তুলেছিল এবং সারারাত হাজতে রেখেছিল। মস্কোর যে-স্থানগুলোতে সভা করা হতো, সেখানকার ম্যানেজারদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, যদি তারা তাদের হলগুলো সাক্ষিদের কাছে ভাড়া দেয়, তাহলে তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। অল্পসময়ের মধ্যেই, অনেক মণ্ডলী সভা করার জন্য তাদের ভাড়া করা স্থানগুলো হারিয়েছিল। চল্লিশটা মণ্ডলীকে চারটে হলবিশিষ্ট একই কিংডম হল বিল্ডিং ব্যবহার করতে হয়েছিল। সেই বিল্ডিং ব্যবহার করত এমন একটা মণ্ডলীকে সকাল সাড়ে সাতটায় জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতার ব্যবস্থা করতে হতো। একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ বলেছিলেন, “সভায় যোগদান করার জন্য প্রকাশকদের যদিও ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতে হতো, কিন্তু তারা সকলে স্বেচ্ছায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তা করে আসছিল।”

“সাক্ষ্য দিবার জন্য”

মস্কোর নিষেধাজ্ঞা যে অন্যায্য ছিল, তা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের আইনজীবীরা ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের সাহায্য চেয়েছিল। (৬ পৃষ্ঠায় “যে-কারণে রাশিয়ার একটা রায়কে ফ্রান্সে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছিল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) ছয় বছর পর, ২০১০ সালের ১০ জুন সেই আদালত যিহোবার সাক্ষিদের পুরোপুরি নির্দোষ বলে প্রমাণিত করে সর্বসম্মত রায় দিয়েছিল! * আদালত আমাদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ নিয়ে পর্যালোচনা করেছিল এবং সেগুলোকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। তাই আদালত এই সিদ্ধান্তে এসেছিল যে, রাশিয়ার সরকারের উচিত “যিহোবার সাক্ষিদের নিষিদ্ধকরণ ঘোষণা বাতিল করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যা-কিছু করা হয়েছে, তা যথাসম্ভব সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া।”—৮ পৃষ্ঠায় “আদালতের রায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ইউরোপীয় মানবাধিকার চুক্তি যিহোবার সাক্ষিদের কার্যকলাপকে সুরক্ষা করে আর সেই সিদ্ধান্ত কেবল রাশিয়ার প্রতি নয় কিন্তু একইসঙ্গে সেই ৪৬টা রাষ্ট্রের প্রতি প্রযোজ্য, যারা ইউরোপীয় পরিষদের সদস্য। এর চেয়েও বড়ো বিষয়টা হল, সেই আইন এবং প্রকৃত ঘটনা নিয়ে এত বেশি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি, বিচারক, বিধানসভার সদস্য এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ তা আগ্রহ সহকারে পড়বে। কেন তা বলা যায়? কারণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আদালত কেবলমাত্র পূর্বে যে-আট বার যিহোবার সাক্ষিদের পক্ষে রায় দিয়েছিল, সেগুলোই উল্লেখ করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবার সাক্ষিরা এর আগে আর্জেন্টিনা, কানাডা, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে যে-নয় বার বিজয়লাভ করেছিল, সেগুলো সম্বন্ধেও উল্লেখ করেছে। এইসমস্ত তথ্য ও মস্কোর আইনজীবীর তুলে ধরা মিথ্যা অভিযোগগুলো সম্বন্ধে আদালতের দৃঢ় রায়, বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের দলকে তাদের বিশ্বাস ও কার্যক্রমের পক্ষসমর্থন করার জন্য এক জোরালো অস্ত্র জোগায়।

যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে, তাহাদের ও পরজাতিগণের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য, নীত হইবে।” (মথি ১০:১৮) এই আইনি লড়াই, যা বিগত ১৫ বছর ধরে চলেছিল, সেটা আমাদের ভাইবোনদেরকে পুরো মস্কোজুড়ে এবং এর বাইরে এমনভাবে যিহোবার নাম সম্বন্ধে জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে, যেমনটা আগে কখনো হয়নি। এই মামলাগুলোর ফলে যেসমস্ত কিছু ঘটেছিল, সেগুলোর দ্বারা “সাক্ষ্য” দেওয়া হয়েছিল এবং ‘সুসমাচারের পথ পরিষ্কার হইয়াছিল।’ (ফিলি. ১:১২) বস্তুতপক্ষে, মস্কোর সাক্ষিরা যখন প্রচার কাজে অংশ নেয়, তখন অনেক গৃহকর্তা তাদেরকে জিজ্ঞেস করে: “কিন্তু, তারা কি আপনাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি?” এই প্রশ্ন প্রায়ই আমাদের ভাইবোনদেরকে গৃহকর্তাদের কাছে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে আরও তথ্য জানানোর সুযোগ করে দেয়। স্পষ্টতই, কোনো বিরোধী শক্তিই আমাদের রাজ্যের প্রচার কাজ থেকে আমাদেরকে থামাতে পারবে না। আমরা প্রার্থনা করি যে, যিহোবা যেন রাশিয়ায় আমাদের প্রেমময় ও সাহসী ভাইবোনদেরকে ক্রমাগত আশীর্বাদ করেন এবং টিকিয়ে রাখেন।

[পাদটীকাগুলো]

^ এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ২০ এপ্রিল। এর দুই সপ্তাহ পর অর্থাৎ ৫ মে রাশিয়া, ইউরোপীয় মানবাধিকার চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেছিল।

^ “এই আইন রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার প্রচণ্ড চাপের কারণে গৃহীত হয়েছিল, যেটা রাশিয়ায় এর আধিপত্য রক্ষার ব্যাপারে সদাসতর্ক ছিল এবং যিহোবার সাক্ষিদের নিষিদ্ধ হতে দেখার ব্যাপারে উৎসুক ছিল।”—অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, জুন ২৫, ১৯৯৯.

^ আশ্চর্যজনক বিষয়টা হল, সেই একই তারিখ ছিল রাশিয়ায় একটা আইন পাশ হওয়ার দশম বর্ষপূর্তির দিন, যে-আইনে যিহোবার সাক্ষিদেরকে সোভিয়েত শাসনাধীনে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।

^ নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষণা, নিবন্ধীকৃত সেই বৈধসত্তাকে বাতিল করে দিয়েছিল, যেটা মস্কোর বিভিন্ন মণ্ডলী ব্যবহার করত। বিরোধীরা আশা করেছিল যে, এই বাতিলকরণ আমাদের ভাইবোনদেরকে তাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাধা দেবে।

^ ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের প্রধান পরিষদ-এর পাঁচ জন বিচারককে নিয়ে গঠিত একটা দল, রাশিয়ার দরখাস্ত প্রত্যাখ্যান করেছিল, যে-দরখাস্তে মামলাটা আদালতের প্রধান পরিষদ-এ পেশ করার অনুরোধ করা হয়েছিল। তাই, ২০১০ সালের ১০ জুন বিচার চূড়ান্ত ও তা বলবৎ করা হয়েছিল।

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

যে-কারণে রাশিয়ার একটা রায়কে ফ্রান্সে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছিল

১৯৯৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউরোপীয় মানবাধিকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। (১৯৯৮ সালের ৫ মে রাশিয়া সেই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেছিল।) সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে রাশিয়া সরকার এই ঘোষণা দিয়েছিল যে, এর প্রজাদের রয়েছে:

‘ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার এবং ঘরে ও জনসাধারণ্যে তাদের ধর্মচর্চা করার অধিকার আর সেইসঙ্গে তারা যদি তাদের ধর্ম পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে তা করার অধিকার।’—ধারা ৯.

‘তারা যা চিন্তা করে, সেগুলো যুক্তিসম্মতভাবে বলার ও লেখার এবং অন্যদের কাছে তথ্য জানানোর অধিকার।’—ধারা ১০.

‘শান্তিপূর্ণ সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করার অধিকার।’—ধারা ১১.

যে-ব্যক্তি-বিশেষ অথবা সংগঠন এই চুক্তি লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে এবং যারা রাষ্ট্রীয় সমস্ত বৈধ উপায়গুলোর সাহায্য লাভের প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, তারা তাদের মামলা ফ্রান্সের স্ট্রেসবার্গের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে উত্থাপন করতে পারে (ওপরে দেখানো হয়েছে)। এটা ৪৭ জন বিচারককে নিয়ে গঠিত, যে-সংখ্যাটা ইউরোপীয় মানবাধিকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এমন দেশগুলোর সংখ্যার সমান। সেই আদালতের বিচার অলঙ্ঘনীয়। যে-দেশগুলো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তাদেরকে সেই বিচার মেনে নিতে হবে।

[৮ পৃষ্ঠার বাক্স]

আদালতের রায়

এখানে আদালতের রায়ের তিনটা সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি তুলে ধরা হল।

একটা অভিযোগ করা হয়েছিল যে, যিহোবার সাক্ষিরা পরিবারগুলোকে ভেঙ্গে দেয়। আদালত ভিন্নভাবে রায় দিয়েছিল। এটি বলেছিল:

“পরিবারের ধর্মভীরু আত্মীয়ের ধর্ম সম্বন্ধে প্রকাশ এবং চর্চা করার যে-স্বাধীনতা রয়েছে, সেটাকে মেনে নেওয়ার ও সম্মান করার ব্যাপারে, ধর্মভীরু নয় এমন সদস্যদের বিরোধিতা এবং অনিচ্ছাই হচ্ছে দ্বন্দ্বের উৎস।”—অনু. ১১১.

এ ছাড়া, আদালত “মগজ ধোলাই” করার বিষয়ে যে-অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটার পক্ষেও কোনো প্রমাণ পায়নি, তাই বলা হয়েছিল:

“আদালতের কাছে এটা বেশ লক্ষণীয় বিষয় যে, [রাশিয়ার] বিভিন্ন আদালত এমন একজন ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেনি, যার বিবেকের স্বাধীনতা ওই ধরনের কৌশলগুলোর দ্বারা খর্ব করা হয়েছে।”—অনু. ১২৯.

আরেকটা অভিযোগ করা হয়েছিল যে, যিহোবার সাক্ষিরা রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি গ্রহণ না করার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকে। আদালত এর বিপরীতে রায় দিয়েছিল, বলেছিল যে:

“নির্দিষ্ট চিকিৎসাসেবা গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করার অথবা এক বিকল্প চিকিৎসাসেবা বাছাই করার স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী অস্ত্রোপচার অথবা চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবেন কি করবেন না, সেই ক্ষেত্রে যেমন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তেমনই রক্ত সঞ্চালন করবেন কি করবেন না, সেই ক্ষেত্রেও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”—অনু. ১৩৬.