সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক সভা

ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক সভা

ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক সভা

“এই সভা যখন শেষ হবে, তখন আপনারা বলবেন, ‘এটা সত্যিই ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক বার্ষিক সভা ছিল!’” এই কথাগুলো বলার দ্বারা যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য স্টিভেন লেট বিপুল সংখ্যক শ্রোতার মনে এই সভায় কী ঘটতে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে উত্তেজনার অনুভূতিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারা ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অভ্‌ পেনসিলভানিয়া-র ১২৬তম বার্ষিক সভার জন্য সমবেত হয়েছিল, যেটা ২০১০ সালের ২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির জার্সি শহরে যিহোবার সাক্ষিদের সম্মেলন হলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী সভার কিছু লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

প্রারম্ভিক বক্তৃতায় ভাই লেট, বাইবেলের যিহিষ্কেল বইয়ে বর্ণিত যিহোবার স্বর্গীয় রথ সম্বন্ধে এক উদ্দীপনামূলক আলোচনা করেছিলেন। এই বিশাল, গৌরবময় রথ ঈশ্বরের সংগঠনকে চিত্রিত করে, যেটার ওপর যিহোবার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এর স্বর্গীয় অংশ আত্মিক প্রাণীদের নিয়ে গঠিত ও এটা বিদ্যুতের গতিতে—স্বয়ং যিহোবার চিন্তাভাবনার গতিতে—চলাচল করে, ভাই লেট বলেছিলেন। যিহোবা ঈশ্বরের সংগঠনের পার্থিব অংশও একইভাবে চলাচল করে। ভাই লেট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈশ্বরের সংগঠনের দৃশ্যত অংশে ঘটা বেশ কিছু রোমাঞ্চকর অগ্রগতি সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন।

উদাহরণস্বরূপ, বেশ কিছু সংখ্যক শাখা অফিসকে একত্রে সমন্বিত করা হয়েছে, যার ফলে আগে সেই দেশগুলোর বেথেল হোমে সেবা করত এমন অনেক ব্যক্তি প্রচার কাজে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ লাভ করবে। ভাই লেট শ্রোতাদেরকে পরিচালকগোষ্ঠীর জন্য ক্রমাগত প্রার্থনা করার জোরালো পরামর্শ দেন, যাতে দাস শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচালকগোষ্ঠী সবসময় কেবল বিশ্বস্তই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিজ্ঞ বা বুদ্ধিমানও থাকে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

বিভিন্ন উৎসাহজনক রিপোর্ট ও হৃদয়গ্রাহী সাক্ষাৎকার

হাইতির শাখা কমিটি-তে সেবারত ট্যাব হ্যান্সবার্গার ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারিতে হওয়া ভূমিকম্পের পরের এক মর্মস্পর্শী রিপোর্ট তুলে ধরেছিলেন, যে-ভূমিকম্প সেই দেশের আনুমানিক ৩,০০,০০০ লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, পাদরি শ্রেণী লোকেদের কাছে এই কথা বলছিল যে, ভুক্তভোগীদের ঈশ্বর শাস্তি দিয়েছেন কারণ তারা অবিশ্বাসী ছিল কিন্তু তিনি ভালো লোকদের সুরক্ষা করছিলেন। অথচ, ভূমিকম্পে একটা কারাগারের দেওয়াল ভেঙে পড়ায় হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধী অবাধে ঘোরাফেরা করছিল। তাই, হাইতির অনেক সৎহৃদয়ের অধিবাসী, কেন আমাদের সময়টা এত সমস্যাপূর্ণ, সেই বিষয়ে সত্য জানার মাধ্যমে সান্ত্বনা লাভ করেছিল। ভাই হ্যান্সবার্গার হাইতির একজন বিশ্বস্ত ভাই, যিনি সেই দুর্যোগের কারণে তার স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন, তার কথা উদ্ধৃত করেছিলেন: “আমি এখনও চোখের জল ফেলি। আমি জানি না আমি আর কত দিন শোক করে যাব, কিন্তু আমি যিহোবার সংগঠনের প্রেম উপলব্ধি করে আনন্দ লাভ করি। আমার কাছে আশা রয়েছে আর আমি সেই আশা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।”

মার্ক স্যান্ডারসন, যিনি এখন ব্রুকলিন বেথেল পরিবারের একজন সদস্য, তিনি ফিলিপিনসের রিপোর্ট তুলে ধরেছিলেন। তিনি যেহেতু সেখানকার শাখা কমিটি-র একজন প্রাক্তন সদস্য ছিলেন, তাই তিনি সেই সময়ে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন, যখন তিনি সেই দেশের রাজ্য প্রকাশকদের সংখ্যা যে পর পর ৩২ বার শীর্ষে উঠেছিল এবং বাইবেল অধ্যয়নের সংখ্যা যেভাবে প্রকাশকদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেই বিষয়ে বলতে পেরেছিলেন। তিনি মিগেল নামে একজন ভাইয়ের কথা বলেছিলেন, যার নাতিকে খুন করা হয়েছিল। মিগেল অনেক চেষ্টাচরিত্র করে সেই খুনীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এবং তাকে কারাগারে পাঠাতে পেরেছিলেন। পরে, কারাগারে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মিগেলের সেই খুনীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ঘাবড়ে যাওয়া সত্ত্বেও মিগেল তার সঙ্গে মৃদু ও সদয়ভাবে কথা বলেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সেই ব্যক্তির সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন আর সেই ব্যক্তি উত্তম সাড়া দিয়েছিলেন ও যিহোবাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন। তিনি এখন বাপ্তাইজিত ভাই। মিগেল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর এখন তিনি তার এই নতুন ভাইকে কারাগার থেকে সময়ের আগেই মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করছেন। *

পরের কার্যক্রমে এক সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছিল, যেটি ঐশিক বিদ্যালয় বিভাগ-এর একজন নির্দেশক মার্ক নুমারের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। তিনি তিনটে দম্পতির—অ্যালেক্স ও সারা রাইনমুলার, ডেভিড ও ক্রিস্টা শেফার এবং রবার্ট ও কেট্রা সিরানকোর—সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পাবলিশিং (প্রকাশনা) সংক্রান্ত কমিটি-র একজন সাহায্যকারী অ্যালেক্স রাইনমুলার বলেছিলেন যে, কীভাবে তিনি কানাডায় অগ্রগামীর কাজ করার সময় সত্যকে আপন করে নিয়েছিলেন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর আর তাকে প্রায়ই একা একা কাজ করতে হতো। তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, বেথেলে কে তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, তখন ভাই রাইনমুলার তিন জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকে কীভাবে তাকে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করায় সাহায্য করেছিল, তা তুলে ধরেছিলেন। তার স্ত্রী সারা, একজন বোনের সঙ্গে নিজের বন্ধুত্বের কথা বলেছিলেন, যে-বোন তার বিশ্বাসের জন্য দশকের পর দশক ধরে চিনের কারাগারে বন্দি ছিলেন। সারা বলেছিলেন যে, তিনি ব্যক্তিগত প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার ওপর নির্ভর করার বিষয়টা শিখেছেন।

টিচিং (শিক্ষাদান) সংক্রান্ত কমিটি-র একজন সাহায্যকারী ডেভিড শেফার তার মায়ের দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য মায়ের প্রশংসা করেছিলেন এবং এমন কয়েক জন ভাই সম্বন্ধে বলেছিলেন, যারা কাঠুরে ছিল এবং তাকে তরুণ বয়সে একজন সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করেছিল। তার স্ত্রী ক্রিস্টা আনন্দের সঙ্গে বেথেল পরিবারের সেই বয়স্ক সদস্যদের দ্বারা কীভাবে উৎসাহিত হয়েছিলেন সেই সম্বন্ধে বলেছিলেন, যারা নিজেদের যিশুর পরামর্শ অনুযায়ী “ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত” বলে প্রমাণ করেছেন।—লূক ১৬:১০.

রাইটিং (লিখন) সংক্রান্ত কমিটি-র একজন সাহায্যকারী রবার্ট সিরানকো আনন্দের সঙ্গে তার ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা এবং দাদু-দিদিমার কথা স্মরণ করেন, যারা হাঙ্গেরির অভিবাসী ও অভিষিক্ত খ্রিস্টান ছিল। তিনি ১৯৫০ সালের বিশাল সম্মেলনে যোগ দিয়ে একেবারে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন, যখন তিনি সবেমাত্র বালক আর তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবার সংগঠন তার নিজের মণ্ডলী থেকেও আরও অনেক বড়ো। তার স্ত্রী কেট্রা বলেছিলেন যে, ধর্মভ্রষ্টতা ও অন্যান্য সমস্যার দ্বারা জর্জরিত একটা মণ্ডলীতে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সময় কীভাবে তিনি আনুগত্য সম্বন্ধে শিখেছিলেন। তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন আর অবশেষে তাকে এমন একটা মণ্ডলীতে একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল, যেখানকার একতা তার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল।

এরপর, মানফ্রেট তোনাক ইথিওপিয়ার ওপর একটা রিপোর্ট তুলে ধরেছিলেন। এই দেশ বাইবেলের সময় থেকে বিদ্যমান আর এখন এখানে ৯,০০০-রেরও বেশি সুসমাচার প্রকাশক রয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ রাজধানী আদ্দিস আবাবায় অথবা এর কাছাকাছি বাস করে। তাই, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি মনোযোগ প্রয়োজন। এই প্রয়োজন সম্বন্ধে তুলে ধরার জন্য অন্যান্য দেশে বসবাসরত ইথিওপীয় সাক্ষিদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেন তারা সেই দেশের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচার করার জন্য পরিদর্শন করে। অনেকে সেখানে গিয়েছিল, স্থানীয় সাক্ষিদের উৎসাহিত করেছিল এবং আগ্রহী শ্রোতাদের খুঁজে পেয়েছিল।

একটা কার্যক্রমে রাশিয়ার যিহোবার সাক্ষি ও তাদের বৈধ অধিকারের জন্য লড়াই সম্বন্ধে সিম্পোসিয়াম তুলে ধরা হয়েছিল। রাশিয়ার শাখা কমিটি-র একজন সদস্য অলিস বার্গডাল রাশিয়ায়, বিশেষভাবে মস্কোতে সাক্ষিদের ওপর তাড়নার ইতিহাস সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র শাখার আইন বিভাগ-এর ফিলিপ ব্রুমলি, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) যে সাক্ষিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা নয়টা অভিযোগ শুনেছিল, সেই রোমাঞ্চকর ঘটনা সম্বন্ধে বলেছিলেন। আদালত সর্বসম্মতভাবে বুঝতে পেরেছিল যে, নয়টা অভিযোগের মধ্যে একটারও কোনো ভিত্তি নেই আর সেইসঙ্গে কয়েকটা মামলায় তুলে ধরা যুক্তিতর্ক কেন ভুল ছিল, সেগুলোর সুনির্দিষ্ট কারণও ব্যাখ্যা করেছিল। যদিও তখন মামলার রায় ঘোষণা করা হয়নি কিন্তু ভাই ব্রুমলি আদালতের শুনানি অন্যান্য দেশের বিভিন্ন মামলার রায়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

এই রোমাঞ্চকর সংবাদের পর, ভাই লেট ঘোষণা করেছিলেন যে, ইসিএইচআর উপযুক্তভাবেই ফ্রান্সের সরকার ও যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে চলা কর সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদী একটা মামলাকে বিবেচনা করে দেখেছে। এই উচ্চ আদালত এর কাছে তুলে ধরা মামলার মধ্যে অল্প কয়েকটা গ্রহণ করে থাকে। ইসিএইচআর এই পর্যন্ত যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে জড়িত মোট ৩৯টা মামলা বিবেচনা করেছে এবং এগুলোর মধ্যে ৩৭টা মামলায় আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। ভাই লেট ঈশ্বরের সমস্ত লোককে প্রার্থনার মাধ্যমে সম্প্রতি ঘটে চলা বিষয়গুলো যিহোবা ঈশ্বরের সামনে উপস্থাপন করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।

মণ্ডলীর প্রাচীনদের জন্য বিদ্যালয়-এর ক্ষেত্রের পরিচর্যা সংক্রান্ত নির্দেশক রিচার্ড মরলান শেষ রিপোর্টটা তুলে ধরেছিলেন। তিনি উদ্যমের সঙ্গে সেই বিদ্যালয় সম্বন্ধে এবং যে-প্রাচীনরা সেখানে যোগ দিয়েছিল, তাদের উপলব্ধিপরায়ণ প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন।

পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্যদের তুলে ধরা অন্যান্য বক্তৃতা

পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য গায় পিয়ার্স হৃদয়গ্রাহী এক বক্তৃতা তুলে ধরেছিলেন, যা ২০১১ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল, যেটি বলে, ‘যিহোবার নামে আশ্রয় নিন।’ (সফ. ৩:১২NW) তিনি বলেছিলেন যে, যদিও বর্তমান সময়টা অনেক দিক দিয়ে যিহোবার লোকেদের জন্য আনন্দের সময় কিন্তু তা একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ও গাম্ভীর্যপূর্ণ এক সময়। যিহোবার মহাদিন নিকটবর্তী; অথচ লোকেরা এখনও মিথ্যা ধর্ম, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বস্তুগত সম্পদ, পলায়নবাদ (এমন এক দর্শনবিদ্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন) ও এইরকম বিষয়গুলোতে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে। এক প্রকৃত আশ্রয় লাভ করার জন্য আমাদের যিহোবার নামে ডাকতে হবে, যার অন্তর্ভুক্ত সেই নামের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিকে জানা, গভীর সম্মান করা, তাঁর ওপর নির্ভর করা এবং আমাদের সমস্তকিছু দিয়ে তাঁকে প্রেম করা।

এরপর, পরিচালকগোষ্ঠীর আরেক সদস্য ডেভিড স্প্ল্যান এক হৃদয়গ্রাহী, চিন্তা উদ্রেককারী বক্তৃতা তুলে ধরেছিলেন, যেটির মূলভাব হল “আপনি কি ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করেছেন?” তিনি বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের বিশ্রামের অর্থ নিষ্ক্রিয় থাকা নয় কারণ যিহোবা ও তাঁর পুত্র রূপক বিশ্রামদিনের পুরো সময়জুড়ে “কার্য্য করিতেছেন,” যেন পৃথিবীতে সৃষ্ট বিষয়গুলোর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সফলভাবে পরিপূর্ণ হয়। (যোহন ৫:১৭) তাহলে, আমরা কীভাবে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারি? পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং খ্রিস্ট ও তাঁর বলিদানে বিশ্বাস দেখিয়ে চলা হল কেবল এই প্রশ্নের উত্তরের একটা অংশ। আমাদেরকে বিশ্বাস অনুশীলন ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্য মনে রেখে জীবনযাপন করতে হবে, আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব সেই উদ্দেশ্যের মধ্যে অবদান রাখতে হবে। কখনো কখনো সেটা এক বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে উঠবে কিন্তু আমাদের পরামর্শ মেনে নিতে হবে এবং যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। ভাই স্প্ল্যান শ্রোতাদের কাছে আন্তরিক অনুরোধ করেছিলেন, যেন তারা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার জন্য যথাসাধ্য করে।

পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য অ্যান্থনি মরিস শেষ বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন, যেটির শিরোনাম ছিল “আমরা কীসের অপেক্ষায় আছি?” তৎপরতার মনোভাব ও পিতৃসুলভ আন্তরিকতা সহকারে ভাই মরিস শ্রোতাদেরকে আমাদের সামনে থাকা সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক ঘটনাগুলো সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, যেগুলোর জন্য সমস্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছে। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল “শান্তি ও নিরাপত্তা!” বলে চিৎকার করা ও মিথ্যা ধর্মের ধ্বংস। (১ থিষল. ৫:২, ৩; প্রকা. ১৭:১৫-১৭) ভাই মরিস সাবধান করে দিয়েছিলেন যেন আমরা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা যে-সমস্ত ঘটনা এই ধরনের ভবিষ্যদ্‌বাণীকে পরিপূর্ণ করে না, সেগুলো দেখে, এইরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ফেলি যে, “নিশ্চয়ই আরমাগিদোন শুরু হয়ে গিয়েছে।” তিনি মীখা ৭:৭ পদে বর্ণিত আনন্দপূর্ণ, ধৈর্যশীল ও অপেক্ষা করার মনোভাব বজায় রাখার সুপারিশ করেছিলেন। আবার একই সঙ্গে তিনি সকলকে পরিচালকগোষ্ঠীকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে “সমর্থন” করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন, ঠিক যেমন ঘোরতর যুদ্ধে প্রবেশ করার সময় সৈন্যরা একে অন্যের নিকটবর্তী থাকে। “হে সদাপ্রভুর অপেক্ষাকারী সকলে,” তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের অন্তঃকরণ সবল হউক।”—গীত. ৩১:২৪.

উপসংহারে কিছু রোমাঞ্চকর, ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘোষণা করা হয়েছিল। পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য জেফ্রি জ্যাকসন ইংরেজি অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে সীমিত জ্ঞান রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার সহজ অধ্যয়ন সংস্করণ প্রকাশ করার পরিকল্পনা সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন। তার পর, স্টিভেন লেট ঘোষণা করেছিলেন যে, পরিচালকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত জেলা অধ্যক্ষ ও তাদের স্ত্রীদের জন্য পালকীয় সাক্ষাতের ব্যবস্থা করবে। এরপর তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, এখন থেকে মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-কে অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল বলে অভিহিত করা হবে। সেইসঙ্গে তিনি আরও জানান, খুব শীঘ্র খ্রিস্টান দম্পতিদের জন্য বাইবেল স্কুল নামে এক নতুন স্কুল চালু করা হবে। এই স্কুল দম্পতিদের আরও প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, যাতে তারা যিহোবার সংগঠনে আরও বেশি সাহায্যকারী হয়ে উঠতে পারে। ভাই লেট আরও ঘোষণা করেছিলেন যে, প্রতি বছর প্যাটারসনে দুটো ক্লাসের মাধ্যমে ভ্রমণ অধ্যক্ষদের ও তাদের স্ত্রীদের জন্য স্কুল এবং শাখা কমিটির সদস্যদের ও তাদের স্ত্রীদের জন্য স্কুল-এর ব্যবস্থা করা হবে আর যারা পূর্বে এই স্কুলে যোগদান করেছিল, তারা দ্বিতীয় বারের মতো যোগ দিতে পারবে।

সেই কার্যক্রমের শেষ অংশটা হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল, যখন পরিচালকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের সদস্য ৯৭ বছর বয়সি ভাই জন ই. বার নম্রতা ও আন্তরিকতা সহকারে প্রার্থনা করেছিলেন। * সভার শেষে প্রত্যেকেই এইরকম অনুভূতি নিয়ে ফিরে গিয়েছিল যে, এটা সত্যিই ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক দিন।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ২০১১ (ইংরেজি) বইয়ের ৬২-৬৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ভাই বার ২০১০ সালের ৪ ডিসেম্বর তার পার্থিব জীবন শেষ করেছেন।

[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

উপস্থিত শ্রোতারা সকলেই সাক্ষাৎকারগুলো উপভোগ করেছিল

[২০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যিহোবা ইথিওপিয়ার প্রচার কাজে আশীর্বাদ করেছেন