সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

ইব্রীয় শাস্ত্রে কতগুলো মশীহ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে, সেটা কি একেবারে সঠিকভাবে বলা সম্ভব?

ইব্রীয় শাস্ত্র নিয়ে মনোযোগপূর্বক অধ্যয়ন করা আমাদেরকে এমন অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী শনাক্ত করতে সমর্থ করে, যেগুলো যিশু খ্রিস্টে পরিপূর্ণ হয়েছে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো মশীহের পটভূমি, আবির্ভূত হওয়ার সময়, তাঁর কাজ, তাঁর প্রতি লোকেদের আচরণ এবং যিহোবা ঈশ্বরের ব্যবস্থায় তাঁর অবস্থান সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল। সেইসমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী মিলে একটা চমৎকার চিত্র তৈরি করে, যা যিশুকে মশীহ হিসেবে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে। কিন্তু, আমরা যদি ইব্রীয় শাস্ত্রে কতগুলো ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে, তা একেবারে সঠিকভাবে নির্ণয় করার চেষ্টা করি, তাহলে সতর্কতা বজায় রাখা প্রয়োজন।

কোনটা মশীহ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী কিংবা কোনটা নয়, সেই বিষয়ে সকলেই একমত হয় না। আলফ্রেট এডারশাইম তার লিখিত মশীহ যিশুর জীবন ও সময়কাল (ইংরেজি) বইয়ে বলেছিলেন যে, প্রাচীন রব্বিদের বিভিন্ন রচনা ইব্রীয় শাস্ত্রের ৪৫৬টি বাক্যাংশকে মশীহ সংক্রান্ত বাক্যাংশ হিসেবে আলাদা করে বিভক্ত করেছিল, যদিও সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই সুনির্দিষ্টভাবে মশীহ সম্বন্ধে উল্লেখ করে না। সেই ৪৫৬টি বাক্যাংশ নিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা করা, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা আসলেই যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক বাক্য কি না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ, এডারশাইম বলেছিলেন যে, যিহুদিরা আদিপুস্তক ৮:১১ পদকে মশীহ সংক্রান্ত বাক্যাংশ বলে বিবেচনা করত। তারা এইরকম মনে করত যে, “কপোতের নিয়ে আসা জলপাই গাছের পাতা মশীহের পর্বত থেকে নেওয়া হয়েছিল।” লেখক যাত্রাপুস্তক ১২:৪২ পদের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। এই পদকে যিহুদিরা কেমন ভুলভাবে বুঝেছিল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন: “মোশি যেমন প্রান্তর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন, তেমনই মশীহ রোম থেকে বের হয়ে আসবেন।” নিঃসন্দেহে, অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি ও অন্যান্য লোক ওই দুটো পদ এবং এগুলোর ভুল ব্যাখ্যাকে যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করাকে কঠিন বলে মনে করেছিল।

আমরা যদি আমাদের মনোযোগকে শুধুমাত্র সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর দিকে কেন্দ্রীভূত রাখি, যেগুলো আসলেই যিশু খ্রিস্টে পরিপূর্ণ হয়েছিল, তার পরও আমরা একেবারে সঠিক সংখ্যার বিষয়ে একমত হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হব। উদাহরণস্বরূপ, যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ের কথা ধরুন, যেখানে মশীহ সংক্রান্ত বেশ কিছু ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক তথ্য রয়েছে। যিশাইয় ৫৩:২-৭ পদ ভবিষ্যদ্‌বাণী করে: “তাঁহার এমন রূপ . . . নাই . . . তিনি অবজ্ঞাত ও মনুষ্যদের ত্যাজ্য . . . আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন . . . তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ . . . হইলেন . . . মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়, . . . সেইরূপ তিনি” নীত হয়েছিলেন। যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ের এই পুরো বাক্যাংশকে কি মশীহ সংক্রান্ত একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী হিসেবে গণনা করা উচিত, নাকি এখানে মশীহ সম্বন্ধে প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যকে আলাদা একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে গণ্য করা উচিত?

এ ছাড়া, যিশাইয় ১১:১ পদও বিবেচনা করুন, যেটি বলে: “যিশয়ের গুঁড়ি হইতে এক পল্লব নির্গত হইবেন, তাহার মূল হইতে উৎপন্ন এক চারা ফল প্রদান করিবেন।” ১০ পদে এই ভবিষ্যদ্‌বাণীটি আবারও চোখে পড়ে, যেখানে একইরকম শব্দ রয়েছে। আমাদের কি এই দুটো পদকে আলাদা দুটো ভবিষ্যদ্‌বাণী হিসেবে গণনা করা উচিত, নাকি এমন একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী হিসেবে গণনা করা উচিত, যেটাকে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে? তাই, যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় এবং যিশাইয় ১১ অধ্যায় সম্বন্ধে এই উপসংহারগুলো স্পষ্টতই মশীহ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীর সর্বমোট সংখ্যাকে প্রভাবিত করবে।

সুতরাং, ইব্রীয় শাস্ত্রে মশীহ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীর সর্বমোট সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের একেবারে নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলা উচিত। যিহোবার সংগঠন বিভিন্ন তালিকা প্রকাশ করেছে, যেগুলো যিশুর বিষয়ে অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী এবং সেগুলোর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে তুলে ধরেছে। * এই তালিকাগুলো আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অধ্যয়ন এবং আমাদের জনসাধারণ্যে পরিচর্যার ক্ষেত্রে সহায়ক ও উৎসাহের উৎস হতে পারে। অধিকন্তু, মশীহ সংক্রান্ত প্রচুর ভবিষ্যদ্‌বাণী, তা সেগুলোর সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, আমাদেরকে এই জোরালো প্রমাণ দেয় যে, যিশুই খ্রিস্ট বা মশীহ।

[পাদটীকা]

^ শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি), খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২২৩; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮৭; ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি উপকারী’ (ইংরেজি), পৃষ্ঠা ৩৪৩-৩৪৪; বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? পৃষ্ঠা ২০০.