সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অবিবাহিত এবং বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বিজ্ঞ পরামর্শ

অবিবাহিত এবং বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বিজ্ঞ পরামর্শ

অবিবাহিত এবং বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বিজ্ঞ পরামর্শ

“এই কথা আমি . . . বলিতেছি; . . . তোমরা যেন শিষ্টাচরণ কর, এবং একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত থাক।”—১ করি. ৭:৩৫.

১, ২. কেন একজন ব্যক্তির, অবিবাহিত এবং বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বাইবেলের পরামর্শ খোঁজা উচিত?

 বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণ করার সময়, তা আমাদের জন্য যত বেশি আনন্দ, হতাশা অথবা উদ্‌বিগ্নতা নিয়ে আসে, তা জীবনের অন্য আর কোনো দিক নিয়ে আসে না। যদিও এই ধরনের আবেগের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তা, আমাদের জন্য ঐশিক নির্দেশনা খোঁজার যথেষ্ট কারণ জোগায়, তবুও তা করার আরও অন্যান্য উদ্দেশ্য রয়েছে। যে-খ্রিস্টান অবিবাহিত থেকে সন্তুষ্ট আছেন, তিনি হয়তো এইরকমটা মনে করতে পারেন যে, তার পরিবার অথবা বন্ধুবান্ধব তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছে। আবার অন্য আরেকজন হয়তো বিয়ে করতে চান কিন্তু এখনও উপযুক্ত সাথি খুঁজে পাননি। কারো কারো জন্য একজন স্বামী বা স্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে যে-দায়িত্বগুলো আসে, সেগুলোর জন্য কীভাবে প্রস্তুত হতে হবে, সেই ব্যাপারে নির্দেশনার প্রয়োজন। আর অবিবাহিত এবং বিবাহিত উভয় খ্রিস্টানেরই যৌন নৈতিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।

আমাদের ব্যক্তিগত সুখের পাশাপাশি এই বিষয়গুলো যিহোবা ঈশ্বরের সামনে আমাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করে। করিন্থীয়দের প্রতি লেখা তার প্রথম চিঠির ৭ অধ্যায়ে, পৌল অবিবাহিত এবং বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল তার পাঠকদেরকে ‘শিষ্টাচরণ করিবার, এবং একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত থাকিবার’ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করা। (১ করি. ৭:৩৫) আপনি যখন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তার পরামর্শ নিয়ে বিবেচনা করেন, তখন আপনার পরিস্থিতিকে—অবিবাহিত বা বিবাহিত জীবনকে—এমনভাবে দেখার চেষ্টা করুন, যেন আপনি যিহোবাকে আরও পূর্ণরূপে সেবা করতে পারেন।

এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত

৩, ৪. (ক) লোকেরা যখন কোনো অবিবাহিত বন্ধু অথবা আত্মীয়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত চিন্তা দেখিয়ে থাকে, তখন মাঝেমধ্যে কোন সমস্যাগুলো দেখা দেয়? (খ) কীভাবে পৌলের কথাগুলো, বিয়ে সম্বন্ধে সঠিক চিন্তাভাবনা বজায় রাখার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারে?

প্রথম শতাব্দীর যিহুদি সমাজের মতো, বর্তমানেও অনেক সংস্কৃতিতে বিয়েকে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয় হিসেবে মনে করে এর ওপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে। কোনো যুবক বা যুবতী যখন বিয়ে না করেই একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করে, তখন তার জন্য চিন্তা করে থাকে এমন বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন হয়তো তাকে কিছু পরামর্শ দেওয়ার তাগিদ অনুভব করতে পারে। কথাবার্তা বলার সময়, তারা হয়তো তাকে আরও মন লাগিয়ে একজন সাথি খোঁজার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা হয়তো বিপরীত লিঙ্গের কোনো উপযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে ইঙ্গিত দিতে পারে। তারা হয়তো এমনকী দুজন অবিবাহিত ব্যক্তিকে পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কৌশলতার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এই ধরনের বিষয়গুলোর কারণে মাঝেমধ্যে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরে এবং অনুভূতিতে আঘাত লাগে।

পৌল কখনো অন্যদেরকে বিয়ে করার অথবা অবিবাহিত থাকার জন্য চাপ দেননি। (১ করি. ৭:৭) স্ত্রী না থাকা সত্ত্বেও, তিনি যিহোবাকে সেবা করে সন্তুষ্ট ছিলেন, তবে অন্যদের বিবাহিত জীবন উপভোগ করার অধিকারের প্রতিও তিনি সম্মান দেখিয়েছিলেন। বর্তমানেও, প্রত্যেক খ্রিস্টানেরই নিজেদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে, তারা বিয়ে করবে, নাকি অবিবাহিত থাকবে। এর মধ্যে যেকোনো একটা বিষয় বেছে নেওয়ার জন্য অন্যেরা যেন তাদেরকে চাপ না দেয়।

অবিবাহিত জীবনকে সফল করে তোলা

৫, ৬. কেন পৌল অবিবাহিত থাকার বিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন?

করিন্থীয়দের প্রতি পৌলের কথাগুলোর এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, অবিবাহিত জীবন সম্বন্ধে তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৮.) যদিও পৌল অবিবাহিত ছিলেন, তবুও তিনি নিজেকে বিবাহিত ব্যক্তিদের থেকে উচ্চে তুলে ধরেননি, যেমনটা খ্রিস্টীয়জগতের চিরকুমার পাদরি শ্রেণী তুলে ধরে। এর বিপরীতে, প্রেরিত এমন একটা সুযোগ সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন, যা অনেক অবিবাহিত সুসমাচার পরিচারক উপভোগ করে থাকে। সেই সুযোগটা কী?

একজন অবিবাহিত খ্রিস্টানের প্রায়ই যিহোবার সেবায় এমন কাজগুলো গ্রহণ করার সুযোগ থাকে, যেগুলো হয়তো একজন বিবাহিত ব্যক্তির থাকে না। পৌল “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হিসেবে এক বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলেন। (রোমীয় ১১:১৩) প্রেরিত ১৩ থেকে ২০ অধ্যায় পড়ুন এবং তিনি ও তার সহমিশনারিরা যে একটার পর একটা জায়গায় প্রচারের এলাকা উন্মোচন করেন এবং মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেন, সেই বিষয়টা অনুসরণ করুন। সেবা করতে গিয়ে পৌল এমন অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন, যেগুলো বর্তমানে খুব কম লোকই করে থাকে। (২ করি. ১১:২৩-২৭, ৩২, ৩৩) শিষ্য হওয়ার জন্য অনেককে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি যে-আনন্দ লাভ করেছিলেন, তা সেই কষ্টকে সার্থক করে তুলেছিল। (১ থিষল. ১:২-৭, ৯; ২:১৯) তিনি যদি বিবাহিত হতেন অথবা তার যদি একটা পরিবার থাকত, তাহলে তিনি কি এই সমস্তকিছু সম্পন্ন করতে পারতেন? সম্ভবত না।

৭. এমন অবিবাহিত সাক্ষিদের একটা উদাহরণ দিন, যারা রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের পরিস্থিতির সদ্‌ব্যবহার করেছে।

অনেক অবিবাহিত খ্রিস্টান, রাজ্যের পক্ষে অনেক কাজ সম্পাদন করার জন্য তাদের বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে থাকে। সারা এবং লিম্বানিয়া নামে বলিভিয়ার দুজন অবিবাহিত বোন এমন একটা এলাকায় গিয়েছিলেন, যেখানকার লোকেদের কাছে অনেক বছর ধরে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছিল না। সেখানে কোনো বিদ্যুৎ ছিল না বলে কি সমস্যা হয়েছিল? তারা বলেছিল: “সেখানে কোনো রেডিও অথবা টিভি নেই আর তাই লোকেরা তাদের সময় কাটানোর প্রধান উপায় অর্থাৎ পাঠ করা থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে নেয়নি।” গ্রামের কিছু লোক অগ্রগামী বোনদেরকে যিহোবার সাক্ষিদের এমন কিছু প্রকাশনা দেখিয়েছিল, যেগুলো তারা তখনও পাঠ করছিল, তবে সেগুলো এখন আর ছাপানো হয় না। যেহেতু বোনেরা প্রায় প্রতিটা ঘরেই আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে পেত, তাই সেই এলাকার প্রতিটা ঘরে সাক্ষাৎ করা তাদের জন্য কঠিন ছিল। একজন বৃদ্ধ মহিলা তাদেরকে বলেছিলেন: “ধ্বংস নিশ্চয়ই খুব নিকটে কারণ যিহোবার সাক্ষিরা অবশেষে আমাদের এখানে এসে পৌঁছেছে।” অল্প সময়ের মধ্যেই সেই গ্রামের কিছু লোক মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগদান করতে শুরু করেছিল।

৮, ৯. (ক) পৌল যখন অবিবাহিত থাকা সম্বন্ধে ইতিবাচকভাবে কথা বলেছিলেন, তখন তার মনে কোন বিষয়টা ছিল? (খ) অবিবাহিত খ্রিস্টানদের কোন সুযোগগুলো রয়েছে?

অবশ্য, বিবাহিত খ্রিস্টানরাও এমন এলাকাগুলোতে সুসমাচার প্রচার করে উত্তম ফল লাভ করেছে, যেখানে কাজ করা কঠিন। কিন্তু, অবিবাহিত অগ্রগামীদের জন্য খোলা রয়েছে এমন কিছু কার্যভার সেই ব্যক্তিদের জন্য কঠিন বলে প্রমাণিত হতে পারে, যারা বিবাহিত অথবা যাদের সন্তান রয়েছে। পৌল যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোকে লিখেছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে, সুসমাচার প্রচার করার জন্য এখনও প্রচুর কাজ বাকি আছে। তিনি চেয়েছিলেন যেন সকলে আনন্দ লাভ করে, যেমনটা তিনি করেছিলেন। সেই কারণেই, একজন অবিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে যিহোবার সেবা করা সম্বন্ধে তিনি ইতিবাচকভাবে কথা বলেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন অবিবাহিত অগ্রগামী বোন লিখেছিলেন: “কিছু লোক মনে করে যে, অবিবাহিত ব্যক্তির পক্ষে সুখী হওয়া অসম্ভব। কিন্তু, আমি দেখেছি যে, স্থায়ী সুখ যিহোবার সঙ্গে একজন ব্যক্তির বন্ধুত্বের ওপর নির্ভর করে। যদিও অবিবাহিত থাকা ত্যাগস্বীকার করার মতো একটা বিষয়, তবুও এটা এক অপূর্ব দান হয়ে ওঠে, যদি কিনা আপনি সেটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করে থাকেন।” সুখ খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন: “অবিবাহিত থাকা সুখের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয় বরং তা সুখের এক উৎস হতে পারে। আমি জানি যে, যিহোবা তাঁর কোমল স্নেহ থেকে কাউকেই বঞ্চিত করেন না, তা তিনি অবিবাহিত বা বিবাহিত যা-ই হয়ে থাকুন না কেন।” তিনি এখন আনন্দের সঙ্গে এমন একটা দেশে সেবা করছেন, যেখানে রাজ্যের প্রকাশকদের অনেক প্রয়োজন। আপনি যদি একজন অবিবাহিত ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি অন্যদেরকে সত্য শেখানোর ব্যাপারে আরও বেশি সময় ব্যয় করার জন্য আপনার স্বাধীনতাকে ব্যবহার করতে পারেন? যদি করেন, তাহলে আপনিও হয়তো অবিবাহিত থাকাকে যিহোবার কাছ থেকে এক অমূল্য দান হিসেবে দেখবেন।

যে-অবিবাহিত ব্যক্তিরা বিয়ে করতে চায়

১০, ১১. সেই ব্যক্তিদেরকে যিহোবা কীভাবে সাহায্য করে থাকেন, যারা বিয়ে করতে চায় কিন্তু এখনও একজন উপযুক্ত সাথি খুঁজে পাচ্ছে না?

১০ বেশ কিছু সময় ধরে অবিবাহিত থাকার পর, যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাস একজন বিবাহসাথি খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এর জন্য যে নির্দেশনার প্রয়োজন, তা উপলব্ধি করে তারা একজন উপযুক্ত সাথি খোঁজার ব্যাপারে যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে থাকে। ১ করিন্থীয় ৭:৩৬ পদ বলে: “যদি কাহারও বোধ হয় যে, সে তাহার কুমারী কন্যার [‘সে নিজের কৌমার্যের,’ NW] প্রতি অশিষ্টাচরণ করিতেছে, যদি সৌকুমার্য্য অতীত হইয়া থাকে, আর এই প্রকার হওয়া আবশ্যক হয়, তবে সে যাহা ইচ্ছা করে, তাহা করুক; ইহাতে তাহার পাপ নাই, বিবাহ হউক।”

১১ আপনি যদি এমন কাউকে বিয়ে করতে চান, যিনি আপনার মতোই যিহোবাকে পূর্ণহৃদয়ে সেবা করতে আকাঙ্ক্ষী, তাহলে প্রার্থনায় বিষয়টা তাঁকে জানান। (ফিলি. ৪:৬, ৭) আপনাকে যতটা দীর্ঘসময়ই অপেক্ষা করতে হোক না কেন, হতাশ হয়ে পড়বেন না। আপনার সহায় হিসেবে আমাদের প্রেমময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন আর তিনি আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আবেগগতভাবে সাহায্য করবেন।—ইব্রীয় ১৩:৬.

১২. কেন একজন খ্রিস্টানের জন্য বিয়ের প্রস্তাবকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা উচিত?

১২ বিয়ে করতে চান এমন একজন অবিবাহিত খ্রিস্টান হয়তো সেইরকম একজন ব্যক্তির কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেতে করতে পারেন, যার আধ্যাত্মিকতার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে অথবা এমনকী যিনি অবিশ্বাসী। আপনার বেলায় যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে মনে রাখবেন যে, ভুল বিবাহিত সাথি বাছাইয়ের কারণে যে-দুঃখ ভোগ করতে হয়, সেটার কষ্ট অবিবাহিত থাকাকালীন একজন ব্যক্তি যে-তীব্র আকাঙ্ক্ষা বোধ করেন, সেটার চেয়ে আরও বেশি হতে পারে। আর একবার বিয়ে করার পর, তা সেটা সফল হোক বা না হোক, আপনাকে সারাজীবনের জন্য আপনার সাথির সঙ্গে থাকতেই হবে। (১ করি. ৭:২৭) হতাশ হয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেবেন না, যার ফলে কিনা আপনাকে পরে অনুশোচনা করতে হয়।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৩৯.

বিয়ের বাস্তবতাগুলোর জন্য প্রস্তুত হোন

১৩-১৫. বিয়ে করার আগে একটা দম্পতির কোন সম্ভাব্য সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত?

১৩ যদিও পৌল একজন অবিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু তাই বলে তিনি সেই ব্যক্তিদের ছোটো করে দেখেননি, যারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর পরিবর্তে, তার অনুপ্রাণিত পরামর্শ দম্পতিদেরকে বিবাহিত জীবনের বাস্তবতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং তাদের বিয়েকে স্থায়ী করার জন্য সাহায্য করে থাকে।

১৪ কোনো কোনো দম্পতিকে, ভবিষ্যতের জন্য তাদের যে-প্রত্যাশাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে রদবদল করতে হবে। বিবাহপূর্ব মেলামেশা করার সময়, দুজন ব্যক্তি হয়তো মনে করতে পারে যে, তাদের প্রেম হচ্ছে অদ্বিতীয়, অসাধারণ এবং তাদের বৈবাহিক সুখের এক নিশ্চয়তা। তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিয়ে করে থাকে এবং এমন মনে করে যে, কোনোকিছুই কখনো তাদের দুজনের সুখ কেড়ে নিতে পারবে না। এই ধরনের চিন্তাভাবনা অবাস্তব। যদিও বিবাহিত জীবনের রোমান্টিক দিকগুলো মনোরম হয়ে থাকে, কিন্তু শুধু এগুলোই একজন বর ও কনেকে সেই ক্লেশগুলোর জন্য সজ্জিত করে না, যেগুলো প্রত্যেকটা বিয়েতে এসে থাকে।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:২৮. *

১৫ নববিবাহিত অনেক দম্পতি যখন দেখে যে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তাদের সাথিদের সঙ্গে মতের অমিল হচ্ছে, তখন তারা অবাক হয়ে যায় আর এমনকী হতাশ হয়ে পড়ে। সেই দুজন হয়তো দেখতে পারে যে, তারা কীভাবে টাকাপয়সা খরচ করবে, কীভাবে অবসর সময় কাটাবে, কোথায় বাস করবে, এবং কত ঘন ঘন শ্বশুরবাড়ি যাবে, সেই ব্যাপারে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হচ্ছে। আর প্রত্যেকের মধ্যেই ব্যক্তিত্বের ত্রুটি রয়েছে, যা অন্যজনের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। বিবাহপূর্ব মেলামেশার সময় এই বিষয়গুলোর গুরুত্বকে হালকা করে দেখা খুবই সহজ কিন্তু পরে এগুলো বিয়েতে প্রচণ্ড চাপ নিয়ে আসতে পারে। তাই, যে-বিষয়গুলো উদ্‌বিগ্নতা নিয়ে আসতে পারে, সেগুলো বিয়ের আগেই একটা দম্পতির সমাধান করা উচিত।

১৬. দাম্পত্য জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কেন একটা দম্পতির একমত হওয়া উচিত?

১৬ সফল ও সুখী হওয়ার জন্য একটা দম্পতিকে অবশ্যই একত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করতে হবে। কীভাবে তারা তাদের সন্তানদেরকে শাসন করবে এবং বয়স্ক বাবা-মায়ের যত্ন নেবে, সেই বিষয়ে তাদের একমত হওয়া উচিত। পারিবারিক সমস্যাগুলোর কারণে যে-চাপগুলো আসে, সেগুলো যেন দুজনকে পৃথক করে না দেয়। বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর মাধ্যমে তারা অনেক সমস্যার সমাধান করতে, যে-সমস্যাগুলো থেকে যায়, সেগুলো সহ্য করতে এবং একত্রে সুখী থাকতে পারবে।—১ করি. ৭:১০, ১১.

১৭. কেন বিবাহিত দম্পতিরা “সংসারের বিষয় চিন্তা করে”?

১৭ প্রথম করিন্থীয় ৭:৩২-৩৪ পদে পৌল বিয়ের আরেকটা বাস্তবতা সম্বন্ধে তুলে ধরেন। (পড়ুন।) বিবাহিত লোকেরা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অন্যান্য অনাধ্যাত্মিক ব্যাপারগুলোর কারণে “সংসারের বিষয়ে চিন্তা করে।” কেন? অবিবাহিত থাকাকালীন একজন ভাই হয়তো নিজেকে পরিচর্যায় বিলিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু, একজন স্বামী হিসেবে তিনি দেখতে পারেন যে, তার স্ত্রীর যত্ন নেওয়ার এবং তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সেই সময় এবং শক্তি থেকে কিছুটা ব্যবহার করতে হবে। স্বামীর প্রতি একজন স্ত্রীর বেলায়ও একই বিষয় সত্য। প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়ায় যিহোবা এই চাহিদা সম্বন্ধে উপলব্ধি করেন। তিনি জানেন যে, একটা সফল বিয়েতে প্রায়ই সেই সময় এবং শক্তি থেকে কিছুটা অংশ দেওয়া প্রয়োজন, যা একজন স্বামী ও স্ত্রী আগে অবিবাহিত থাকাকালীন তাঁর সেবায় ব্যবহার করত।

১৮. বিয়ের পর কিছু ব্যক্তিকে হয়তো সামাজিক কাজকর্মের ব্যাপারে কোন রদবদলগুলো করতে হতে পারে?

১৮ কিন্তু, আরও শিক্ষা রয়েছে। একটা দম্পতি যদি তাদের বিয়েকে দৃঢ় রাখার জন্য যিহোবার সেবা থেকে কিছুটা সময় এবং শক্তি নিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সেই সময় এবং শক্তির বেলায়ও একইরকম করা উচিত, যা তারা অবিবাহিত থাকাকালীন বিনোদনের জন্য ব্যবহার করত। একজন স্বামী যদি তার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলায় মগ্ন থাকেন, তাহলে তা একজন স্ত্রীর ওপর কোন প্রভাব ফেলবে? কিংবা একজন স্ত্রী যদি বিভিন্ন শখ পূরণ করার জন্য তার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনেকটা সময় ব্যয় করে থাকেন, তাহলে একজন স্বামী হয়তো কেমন অনুভব করতে পারেন? অবহেলিত সাথি হয়তো শীঘ্র নিজেকে একাকী এবং অসুখী বলে ভাবতে পারেন এবং এইরকমটা মনে করতে পারেন যে, তিনি ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যারা বিয়ে করে, তারা যদি একজন স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে তাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের সর্বোত্তমটা করে থাকে, তাহলে এটা এড়ানো যেতে পারে।—ইফি. ৫:৩১.

যিহোবা চান যেন আমরা নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকি

১৯, ২০. (ক) কেন বিবাহিত ব্যক্তিরা অনৈতিকতার প্রলোভন থেকে মুক্ত নয়? (খ) কোনো বিবাহিত দম্পতি যদি দীর্ঘসময় ধরে পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা কোন ঝুঁকি নিয়ে থাকে?

১৯ যিহোবার দাসেরা নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কেউ কেউ এই ক্ষেত্রে যে-সমস্যাগুলো আসে, সেগুলো এড়িয়ে চলার জন্য বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু, বিয়ে যৌন সংক্রান্ত অশুচিতার বিরুদ্ধে এমনি এমনিই সুরক্ষা জোগায় না। বাইবেলের সময়ে একটা শক্তিশালী নগর কেবল সেই সময়ই লোকেদের জন্য সুরক্ষা জোগাতে পারত, যদি তারা এর প্রাচীরের ভিতরে থাকত। একজন ব্যক্তি যদি এমন সময়ে প্রধান ফটকের বাইরে যেতেন, যখন দুর্বৃত্ত এবং খুনী ব্যক্তিরা বাইরে ঘোরাফেরা করত, তাহলে তার লুণ্ঠিত এবং হত হওয়ার আশঙ্কা থাকত। একইভাবে, একমাত্র সেই সময়ই বিবাহিত দম্পতিরা অনৈতিকতা থেকে সুরক্ষা লাভ করতে পারে, যখন তারা তাদের জন্য যৌনতার বিষয়ে বিয়ের উদ্যোক্তা যে-সীমা আরোপ করেছেন, সেটার মধ্যে থাকে।

২০ পৌল ১ করিন্থীয় ৭:২-৫ পদে সেই সীমা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন। শুধু স্বামীর সঙ্গেই যৌনসম্পর্ক করা একজন স্ত্রীর জন্য বিশেষ সুযোগ; একইভাবে শুধু স্ত্রীর সঙ্গেই একই বিষয় করার বিশেষ সুযোগ স্বামীর রয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে আশা করা হয়, যেন তারা অন্যকে বৈবাহিক “প্রাপ্য” প্রদান করে অথবা যৌনসম্পর্ক করে, যে-প্রাপ্য একজন বিবাহিত ব্যক্তির লাভ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু, কিছু স্বামী এবং স্ত্রী দীর্ঘসময় ধরে পৃথক থাকে—আলাদা আলাদাভাবে ছুটি কাটায় অথবা জাগতিক কাজের জন্য পরস্পরের কাছ থেকে দূরে থাকে আর এভাবে একে অপরকে তাদের “প্রাপ্য” থেকে বঞ্চিত করে। ‘অসংযমতার’ কারণে একজন ব্যক্তি যদি শয়তানের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেন এবং পারদারিকতা করে ফেলেন, তা হলে এর ফলে যে-দুঃখজনক পরিণতি আসে, তা একটু কল্পনা করুন। যিহোবা সেই মস্তকদেরকে আশীর্বাদ করেন, যারা তাদের বিয়েকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ জুগিয়ে থাকে।—গীত. ৩৭:২৫.

বাইবেলের পরামর্শ মেনে চলার উপকারগুলো

২১. (ক) কেন অবিবাহিত থাকার অথবা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন? (খ) কেন ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ের পরামর্শ উপকারজনক?

২১ অবিবাহিত এবং বিবাহিত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটা। মানব সম্পর্কের অধিকাংশ সমস্যার কারণ হচ্ছে অসিদ্ধতা, যা সমস্ত লোকের মধ্যেই বিদ্যমান। তাই, যিহোবার অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ রয়েছে এমন ব্যক্তিরাও হতাশা থেকে পুরোপুরি রেহাই পায় না, তা তারা অবিবাহিত বা বিবাহিত, যা-ই হোক না কেন। আপনি যদি ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ের বিজ্ঞ পরামর্শ কাজে লাগান, তাহলে আপনি এই ধরনের সমস্যা কমাতে পারেন। যিহোবার চোখে আপনি “ভালো” করবেন, তা আপনি অবিবাহিত বা বিবাহিত যা-ই হয়ে থাকুন না কেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৩৮. *) ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করাই হচ্ছে সবচেয়ে মহৎ লক্ষ্য, যা আপনি অর্জন করতে পারেন। তাঁর অনুগ্রহ লাভ করার মাধ্যমে আপনি ক্রমাগত তাঁর নতুন জগতের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবেন। সেখানে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে কোনো চাপ থাকবে না, যা কিনা বর্তমানে খুবই সাধারণ।

[পাদটীকাগুলো]

^ পারিবারিক সুখের রহস্য নামক বইয়ের ২ অধ্যায়ের ১৬-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন।

^ ১ করিন্থীয় ৭:৩৮ (NW): “যে কৌমার্য ত্যাগ করে বিয়ে করে, সেও ভালো করে, কিন্তু যে তা ত্যাগ না করে অবিবাহিত থাকে, সে আরও ভালো করে।”

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

• কেন কারোরই অন্যকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়া উচিত নয়?

• যিহোবার একজন অবিবাহিত দাস হিসেবে কীভাবে আপনি আপনার সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন?

• বিবাহপূর্ব মেলামেশা করছে এমন একটা দম্পতি কীভাবে বিয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে?

• কেন বিয়ে যৌন অনৈতিকতার বিরুদ্ধে এমনি এমনিই সুরক্ষা জোগায় না?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

যে-অবিবাহিত খ্রিস্টানরা তাদের পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য তাদের সময় ব্যবহার করে থাকে, তারা আনন্দ লাভ করে

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিয়ের পরে কাউকে কাউকে কোন রদবদলগুলো করতে হতে পারে?