সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আসুন আমরা একত্রে আনন্দ করি!

আসুন আমরা একত্রে আনন্দ করি!

আসুন আমরা একত্রে আনন্দ করি!

সুখ এবং আনন্দ লাভ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকের জন্য, অন্যদের সঙ্গে ইতিবাচক অনুভূতি নিয়ে কথা বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে, বিশেষভাবে বড়ো বড়ো শহরে, লোকেরা একাকিত্ব বোধ করে এবং নিজেদেরকে পৃথক করে রাখে।

“একাকিত্ব খুবই সাধারণ একটা বিষয়,” আলবার্টো ওলিভেরিও নামে একজন অধ্যাপক বলেন আর “এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বড়ো বড়ো শহরের জীবনযাত্রা, পৃথক থাকতে প্ররোচিত করে। অনেক ক্ষেত্রে, এই বিষয়টার কারণে আমরা একজন সহকর্মীর, একজন প্রতিবেশীর কিংবা পাশের কোনো সুপার মার্কেটের কাউন্টারে কাজ করেন এমন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনকে উপেক্ষা করতে পরিচালিত হই।” এই ধরনের পৃথকীকরণ প্রায়ই হতাশার দিকে পরিচালিত করে।

কিন্তু, সহখ্রিস্টানদের পরিস্থিতি ও সেইসঙ্গে তাদের মনোভাবও ভিন্ন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সতত আনন্দ কর।” (১ থিষল. ৫:১৬) আমাদের আহ্লাদিত হওয়ার এবং একত্রে আনন্দ করার অনেক কারণ রয়েছে। আমরা পরাৎপর ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা করি; আমরা বাইবেলের সত্যের বার্তা বুঝতে পারি; আমাদের পরিত্রাণ এবং অনন্তজীবনের আশা রয়েছে; আর সেইসঙ্গে আমরা অন্যদেরকে একই আশীর্বাদ লাভ করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি।—গীত. ১০৬:৪, ৫; যির. ১৫:১৬; রোমীয় ১২:১২.

আনন্দ করা এবং অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া সত্য খ্রিস্টানদের বৈশিষ্ট্য। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল ফিলিপীয়দের উদ্দেশে এই কথা লিখেছিলেন: “আমি . . . আনন্দ করিতেছি, আর তোমাদের সকলের সঙ্গে আনন্দ করিতেছি। সেই প্রকারে তোমরাও আনন্দ কর, আর আমার সঙ্গে আনন্দ কর।” (ফিলি. ২:১৭, ১৮) এখানে মাত্র কয়েকটা শব্দের ব্যবধানে পৌল দু-বার আনন্দিত হওয়ার এবং পরস্পরের সঙ্গে আনন্দ করার বিষয়ে বলেন।

অবশ্যই, নিজেদেরকে পৃথক করে রাখার মতো যেকোনো প্রবণতা সম্বন্ধে খ্রিস্টানদের সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদেরকে আলাদা করে রাখে এমন কেউই সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে আনন্দ করতে পারে না। তাই, কীভাবে আমরা আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে ‘প্রভুতে আনন্দ করিবার’ বিষয়ে পৌলের এই জোরালো পরামর্শ অনুসরণ করতে পারি?—ফিলি. ৩:১.

সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে আনন্দ করুন

পৌল যখন ফিলিপীয়দের উদ্দেশে তার চিঠিটা লিখেছিলেন, তখন তিনি হয়তো তার প্রচার কাজের কারণে রোমে একজন বন্দি হিসেবে ছিলেন। (ফিলি. ১:৭; ৪:২২) তা সত্ত্বেও, কারাবন্ধন পরিচর্যার প্রতি তার উদ্যোমকে হ্রাস করে দেয়নি। এর বৈসাদৃশ্যে, তিনি যিহোবাকে যথাসম্ভব পূর্ণরূপে সেবা করতে পেরে এবং “পেয় নৈবেদ্যরূপে সেচিত” হয়ে আনন্দিত ছিলেন। (ফিলি. ২:১৭) পৌলের মনোভাব দেখায় যে, আনন্দ একজন ব্যক্তির পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে না। বন্দি থাকা সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন: ‘আমি পরেও আনন্দ করিব।’—ফিলি. ১:১৮.

পৌল ফিলিপীতে মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সেখানকার ভাইবোনদের প্রতি বিশেষ স্নেহ অনুভব করেছিলেন। তিনি জানতেন যে, যিহোবার সেবায় তিনি যে-আনন্দ লাভ করেছিলেন, তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, তাদের জন্যও উৎসাহজনক হবে। তাই, তিনি লিখেছিলেন: “এখন হে ভ্রাতৃগণ, আমার বাসনা এই যে, তোমরা জান, আমার সম্বন্ধে যাহা যাহা ঘটিয়াছে, তদ্দ্বারা বরং সুসমাচারের পথ পরিষ্কার হইয়াছে; বিশেষতঃ সমস্ত স্কন্ধাবারে এবং অন্যান্য সকলের নিকটে আমার বন্ধন খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় বলিয়া প্রকাশ পাইয়াছে।” (ফিলি. ১:১২, ১৩) পৌল যে তার এই উৎসাহজনক অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন, তা তার আনন্দিত হওয়ার এবং ভাইবোনদের সঙ্গে আনন্দ করার একটা উপায় ছিল। এর ফলে, ফিলিপীয়রাও নিশ্চয়ই পৌলের সঙ্গে আনন্দ করেছিল। কিন্তু, তা করার জন্য যে-বিষয়টার প্রয়োজন ছিল, তা হল পৌল যা-কিছু ভোগ করছিলেন, সেটার কারণে যেন তারা নিরুৎসাহিত হয়ে না পড়ে। এর পরিবর্তে, তাদের পৌলের উদাহরণ অনুকরণ করার প্রয়োজন ছিল। (ফিলি. ১:১৪; ৩:১৭) অধিকন্তু, ফিলিপীয়রা ক্রমাগত তাদের প্রার্থনায় পৌলের বিষয়ে উল্লেখ করতে এবং তাকে যথাসাধ্যভাবে সাহায্য ও সমর্থন করতে পারত।—ফিলি. ১:১৯; ৪:১৪-১৬.

আমরাও কি পৌলের মতো একই আনন্দপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করি? আমরা কি আমাদের জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির ও সেইসঙ্গে আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যার ইতিবাচক দিকগুলো দেখার জন্য প্রচেষ্টা করি? আমরা যখন আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তখন সাক্ষ্যদানের কাজ নিয়ে আনন্দ করা উত্তম। তা করার জন্য যে আমাদেরকে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে এমন নয়। আমরা হয়তো নির্দিষ্ট কোনো কার্যকারী ভূমিকা অথবা যুক্তি তুলে ধরার মাধ্যমে রাজ্যের বার্তার প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলাম। হতে পারে যে, নির্দিষ্ট কোনো বাইবেলের পদ নিয়ে একজন গৃহকর্তার সঙ্গে আমাদের এক উত্তম আলোচনা হয়েছিল। কিংবা হয়তো এমনটাও হয়েছে যে, এলাকার লোকেরা আমাদেরকে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে চিনতে পেরেছিল আর এটাই এক চমৎকার সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া একত্রে আনন্দ করার একটা উপায়।

যিহোবার অনেক লোক প্রচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য ত্যাগস্বীকার করেছে এবং এখনও করছে। অগ্রগামী, ভ্রমণ অধ্যক্ষ, বেথেলকর্মী, মিশনারি এবং আন্তর্জাতিক দাসেরা, পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দেয় এবং তারা তা করে আনন্দিত হয়। আমরাও কি আনন্দিত হই এবং তাদের সঙ্গে আনন্দ করি? তাহলে, আসুন আমরা “ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে” এই প্রিয় ‘সহকারীদের’ প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করি। (কল. ৪:১১) আমরা যখন মণ্ডলীর সভাগুলোতে এবং বড়ো বড়ো খ্রিস্টীয় সমাবেশে একত্রে মিলিত হই, তখন আমরা তাদেরকে আন্তরিকভাবে উৎসাহ প্রদান করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা তাদের উদ্যোগী উদাহরণও অনুকরণ করতে পারি। আর আমরা তাদের প্রতি আতিথেয়তা দেখানোর মাধ্যমে, হতে পারে তাদের সঙ্গে এক বেলা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা এবং গঠনমূলক অভিব্যক্তিগুলো শোনার জন্য “সুযোগ” করে নিতে পারি।—ফিলি. ৪:১০.

যারা পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আনন্দ করুন

তাড়না সহ্য করা এবং পরীক্ষা কাটিয়ে ওঠা, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার ব্যাপারে পৌলের দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করেছিল। (কল. ১:২৪; যাকোব ১:২, ৩) ফিলিপীর ভাইবোনেরাও হয়তো একই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে এবং তার অধ্যবসায়ের দ্বারা উৎসাহিত হতে পারে, তা জানা পৌলকে আনন্দিত হওয়ার এবং তাদের সঙ্গে আনন্দ করার কারণ জুগিয়েছিল। তাই, তিনি লিখেছিলেন: “তোমাদিগকে খ্রীষ্টের নিমিত্ত এই বর দেওয়া হইয়াছে, যেন কেবল তাঁহাতে বিশ্বাস কর, তাহা নয়, কিন্তু তাঁহার নিমিত্ত দুঃখভোগও কর; কারণ আমাতে যেরূপ দেখিয়াছ, এবং এখনও আমাতে হইতেছে শুনিতেছ, সেইরূপ প্রাণপণ তোমাদেরও হইতেছে।”—ফিলি. ১:২৯, ৩০.

একইভাবে, বর্তমানেও খ্রিস্টানরা তাদের সাক্ষ্যদানের জন্য বিরোধিতা ভোগ করে থাকে। যদিও মাঝে মাঝে এইরকম বিরোধিতা চরম হয় কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তা সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। এটা হয়তো ধর্মভ্রষ্টদের কাছ থেকে মিথ্যা অভিযোগের, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শত্রুতার, সহকর্মী অথবা সহছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে উপহাসের আকারে আসতে পারে। যিশু সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেন এই পরীক্ষাগুলো আমাদেরকে অবাক এবং নিরুৎসাহিত না করে। এর পরিবর্তে, এগুলো যেন আমাদের আনন্দের কারণ হয়। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।”—মথি ৫:১১, ১২.

আমরা যখন শুনতে পাই যে, কোনো কোনো দেশে আমাদের ভাইবোনেরা প্রচণ্ড তাড়না ভোগ করছে, তখন আমাদের ভয় পাওয়া অথবা আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, তাদের অধ্যবসায়ের কারণে আমাদের আনন্দ করা উচিত। আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি, যিহোবার কাছে বলতে পারি যেন তিনি তাদেরকে বিশ্বাস ও ধৈর্য বজায় রাখার জন্য সাহায্য করেন। (ফিলি. ১:৩, ৪) যদিও এই প্রিয় ভাইবোনদের জন্য আমরা হয়তো সামান্য কিছুই করতে পারি কিন্তু আমরা হয়তো আমাদের মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করতে পারি, যারা বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের প্রতি আগ্রহ দেখাতে এবং তাদের জন্য সমর্থন জোগাতে পারি। তাদেরকে আমাদের পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে, তাদের সঙ্গে প্রচার কাজে অংশ নিয়ে এবং বিনোদনের মাধ্যমে একত্রে সময় ব্যয় করে, আমরা তাদের সঙ্গে আনন্দ করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ করে নিতে পারি।

আমাদের একত্রে আনন্দ করার অনেক কারণ রয়েছে! আসুন আমরা, জগতের এই পৃথকীকরণ হওয়ার মনোভাবকে প্রতিরোধ করি এবং আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে ক্রমাগত আমাদের আনন্দ ভাগ করে নিই। তা করার মাধ্যমে আমরা কেবল মণ্ডলীর প্রেম এবং একতার ক্ষেত্রেই অবদান রাখব না কিন্তু সেইসঙ্গে পূর্ণমাত্রায় খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃত্ব উপভোগ করব। (ফিলি. ২:১, ২) হ্যাঁ, “প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর,” পৌল আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “পুনরায় বলিব, আনন্দ কর।”—ফিলি. ৪:৪.

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

গ্লোব: Courtesy of Replogle Globes