সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“জাগিয়া থাক” কেন তা এত গুরুত্বপূর্ণ?

“জাগিয়া থাক” কেন তা এত গুরুত্বপূর্ণ?

“জাগিয়া থাক” কেন তা এত গুরুত্বপূর্ণ?

“আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩) এই প্রশ্নের উত্তরে, যিশু তাঁর শিষ্যদের এমন একটা চিহ্ন সম্বন্ধে বলেছিলেন, যা ছিল স্পষ্ট, পুঙ্খানুপুঙ্খ, শনাক্তকারী এবং নির্ভুল, যেমনটা মথি ২৪ অধ্যায়, মার্ক ১৩ অধ্যায় এবং লূক ২১ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন: “জাগিয়া থাক।”—মথি ২৪:৪২.

সেই চিহ্নটা যদি এতটা স্পষ্টই হয়ে থাকে, তাহলে কেন এই বাড়তি উপদেশ? এই দুটো সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করুন। প্রথমত, বিভিন্ন বিক্ষেপের কারণে কেউ কেউ হয়তো চিহ্নটা উপেক্ষা করার জন্য প্ররোচিত হতে আর এর ফলে তাদের আধ্যাত্মিকতা অথবা জেগে থাকার বিষয়টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, একজন খ্রিস্টান হয়তো সেই চিহ্নের নির্দিষ্ট কিছু দিক শনাক্ত করতে পারেন, তবে তার চারপাশের পরিস্থিতির কারণে তিনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, এটা সরাসরি তার ওপর প্রভাব ফেলে না। তাই, তিনি হয়তো এই যুক্তি দেখাতে পারেন, “মহাক্লেশ” অর্থাৎ যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর চূড়ান্ত পরিণতি আসতে এখনও অনেক দেরি আছে আর তাই ‘জাগিয়া থাকা’ এখনও পর্যন্ত এতটা আবশ্যক নয়।—মথি ২৪:২১.

‘লোকে বুঝিতে পারিল না’

যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে নোহের সমসাময়িক ব্যক্তিদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। নোহের প্রচার কাজ, বিশাল জাহাজের নির্মাণপ্রকল্প এবং তখনকার দিনের দৌরাত্ম্য অলক্ষিত ছিল না। তা সত্ত্বেও, অধিকাংশ লোক “বুঝিতে পারিল না।” (মথি ২৪:৩৭-৩৯) সাবধানবাণীর প্রতি একইরকম মনোভাব বর্তমানেও দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গতিসীমার চিহ্নগুলো এক নির্ভুল বার্তা প্রদান করে থাকে, কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকে সেগুলোকে উপেক্ষা করে। কর্তৃপক্ষরা প্রায়ই শহরের রাস্তাগুলোতে গতিরোধক স্থাপন করার তাগিদ অনুভব করে থাকে, যেন চালকরা ধীরে চালাতে বাধ্য হয়। একইভাবে, একজন খ্রিস্টান হয়তো শেষকালের চিহ্ন সম্বন্ধে সচেতন থাকতে পারেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এমন কাজকর্মে জড়িত হয়ে পড়েন, যেগুলো এর তাৎপর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আরিল নামে পশ্চিম আফ্রিকার একজন কিশোরীর এইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

আরিল টেলিভিশনে মহিলাদের হ্যান্ডবল খেলা দেখতে পছন্দ করত। তার স্কুলে যখন একটা দল গঠন করা হয়েছিল, তখন খেলায় অংশ নেওয়ার প্রত্যাশা, তার আধ্যাত্মিকতার পক্ষে সম্ভাব্য বিপদ সম্বন্ধে তার সতর্ক মনোভাবকে দুর্বল করে দিয়েছিল। সে একজন গোলরক্ষক হওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরপর কী ঘটেছিল? সে ব্যাখ্যা করে: “আমার দলের কিছু সদস্যের ছেলেবন্ধু ছিল, যারা মাদকদ্রব্য সেবন করত এবং ধূমপান করত। আমি আলাদা ছিলাম বলে তারা আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করত কিন্তু আমি মনে করেছিলাম যে, আমি বিষয়টা সামলাতে পারব। অপ্রত্যাশিতভাবে, সেই খেলাই আমার আধ্যাত্মিকতাকে নষ্ট করে দিতে শুরু করেছিল। আমি সারাদিন শুধু হ্যান্ডবল নিয়েই ভাবতাম। খ্রিস্টীয় সভাগুলোর সময় আমার চিন্তাভাবনা প্রায়ই কিংডম হল থেকে হ্যান্ডবল খেলার মাঠে চলে যেত। আমার খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্বও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। খেলার প্রতি ভালোবাসা জয়ের নেশায় পরিণত হয়েছিল। আমার মধ্যে প্রতিযোগিতার যে-নতুন মনোভাব গড়ে উঠেছিল, সেটা পূরণ করার জন্য আমি কঠোর অনুশীলন করতে থাকি। এর ফলে চাপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। হ্যান্ডবলের জন্য আমি এমনকী আমার বন্ধুত্বকেও বিসর্জন দিয়েছিলাম।

“সেই সময় বিষয়টা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, যখন একটা খেলায় আমাদের বিপক্ষ দলকে পেনাল্টি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আমি গোল ঠেকানোর জন্য উদ্যত হয়েছিলাম। আশ্চর্যের বিষয় হল, নিজের অজান্তেই আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করেছিলাম, যেন তিনি আমাকে গোল ঠেকানোর জন্য সাহায্য করেন! এই ঘটনা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, আমার আধ্যাত্মিকতা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কীভাবে আমি তা পুনরায় লাভ করেছিলাম?

“আমি যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—আমি আমার জীবন নিয়ে কী করব? * নামক ডিভিডিটা দেখেছিলাম। আমি আবারও সেটা দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর সেই সময় বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলাম। আসলে, আমিও সেই নাটকের যুবক আন্দ্রের মতো একই বিপদজনক অবস্থার মধ্যে ছিলাম। আমি বিশেষভাবে সেই বিষয়টার প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলাম, যা একজন প্রাচীন আন্দ্রেকে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন—ফিলিপীয় ৩:৮ পদ পড়া এবং তা নিয়ে ধ্যান করা। সেটা কার্যকারী হয়েছিল। আমি দলত্যাগ করেছিলাম।

“এটা আমার জীবনকে কতই না বদলে দিয়েছিল! আমার প্রতিযোগিতার মনোভাব এবং এর ফলে আসা চাপগুলো দূর হয়ে গিয়েছিল। আমি আরও সুখ অনুভব করেছিলাম এবং আমার খ্রিস্টান বন্ধুদের আরও নিকটবর্তী হতে পেরেছিলাম। আধ্যাত্মিক কার্যক্রম আরও বেশি অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আমি সভাগুলোতে মনোযোগ দিতে এবং আবারও সেগুলো উপভোগ করতে পেরেছিলাম। পরিচর্যার ক্ষেত্রেও আমি উন্নতি করেছিলাম। এখন আমি নিয়মিতভাবে একজন সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছি।”

কোনো বিক্ষেপ যদি আপনাকে যিশুর দেওয়া চিহ্নকে উপেক্ষা করার জন্য চাপ দেয়, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন, যেমনটা আরিল নিয়েছিল। আপনি হয়তো নীচে দেওয়া কিছু বিষয় করে দেখতে পারেন। ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স দেখুন, যেটাকে গুপ্তধনের এক মানচিত্র বলে অভিহিত করা হয়েছে। অন্যেরা কীভাবে বিভিন্ন প্রলোভনের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে, সেই সম্বন্ধে সেখানে আপনার জন্য যুক্তিযুক্ত পরামর্শ এবং ব্যক্তি বিশেষদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য রয়েছে। ভালোভাবে প্রস্তুতি এবং নোট নেওয়ার মাধ্যমে খ্রিস্টীয় সভাগুলো থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করুন। কেউ কেউ দেখেছে যে, হলের সামনের দিকে বসাটা অনেক উপকারজনক। যখন শ্রোতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে, তখন শুরুর দিকেই একটা মন্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করুন। অধিকন্তু, চিহ্নের বিভিন্ন দিক এবং ‘শেষ কালের’ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংবাদগুলো মিলিয়ে দেখার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকুন।—২ তীম. ৩:১-৫; ২ পিতর ৩:৩, ৪; প্রকা. ৬:১-৮.

‘তোমরা প্রস্তুত থাক’

শেষকালের চিহ্ন বিশ্বব্যাপী দেখা যায়, এর সঙ্গে ‘সমুদয় জগৎ’ জড়িত। (মথি ২৪:৭, ১৪) লক্ষ লক্ষ লোক এমন এলাকাগুলোতে বাস করে, যেখানে মহামারী, খাদ্যাভাব, ভূমিকম্প এবং ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত অন্যান্য ঘটনা মারাত্মকভাবে আঘাত হানে। এর বৈসাদৃশ্যে, অনেকে আপেক্ষিক শান্তি ও প্রশান্তি অনুভব করে থাকে। আপনি যদি কখনো ব্যক্তিগতভাবে চিহ্নের কিছু দিক সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ না করেন, তাহলে কি আপনার এই যুক্তি করা উচিত যে, মহাক্লেশ এখনও অনেক দূরে রয়েছে? এইরকম যুক্তি করাটা বিজ্ঞতার কাজ হবে না।

উদাহরণস্বরূপ, “দুর্ভিক্ষ ও মহামারী” সম্বন্ধে যিশু কী বলেছিলেন, তা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন। (লূক ২১:১১) প্রথমত, তিনি বলেননি যে, এগুলো সমস্ত এলাকায় একই সময়ে অথবা একই মাত্রায় আঘাত হানবে। এর পরিবর্তে, তিনি বলেছিলেন যে, এগুলো “স্থানে স্থানে” ঘটবে। তাই, আমরা এইরকমটা আশা করতে পারি না যে, একই ঘটনাগুলো একই সময়ে সমস্ত জায়গায় ঘটবে। দ্বিতীয়ত, খাদ্যাভাব সম্বন্ধে উল্লেখ করার কিছু সময় পরে, যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর কিছু অনুসারীকে ভোগপীড়ার বা অতিরিক্ত না খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় . . . তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়।” (লূক ২১:৩৪) তাই, সমস্ত খ্রিস্টানের এইরকমটা আশা করা উচিত নয় যে, তারা চিহ্নের প্রতিটা দিক সম্বন্ধেই অভিজ্ঞতা লাভ করবে। এর পরিবর্তে, যিশু বলেছিলেন: “তোমরাও যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট।” (লূক ২১:৩১) আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আমরা চিহ্নের সমস্ত দিক দেখতে পারি, তা আমরা আমাদের এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে যে-বিষয় সম্বন্ধেই অভিজ্ঞতা লাভ করি না কেন।

এই বিষয়টাও মনে রাখবেন যে, যিহোবা ইতিমধ্যেই মহাক্লেশ শুরু হওয়ার ‘দিন ও দণ্ড’ নির্ধারণ করে ফেলেছেন। (মথি ২৪:৩৬) পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনার অগ্রগতি এই তারিখকে বদলাতে পারবে না।

যিশু সমস্ত জায়গার খ্রিস্টানদের উপদেশ দিয়েছিলেন: ‘তোমরা প্রস্তুত থাক।’ (মথি ২৪:৪৪) আমাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত। অবশ্য, আমরা প্রত্যেকটা দিনই সারাদিনের জন্য ঈশতান্ত্রিক কাজকর্মে রত থাকতে পারি না। এ ছাড়া, আমরা কেউই জানি না যে, যে-মুহূর্তে মহাক্লেশ শুরু হবে, তখন আমরা কী করতে থাকব। কেউ কেউ হয়তো ক্ষেত্রে অথবা টুকিটাকি গৃহস্থালী কাজ করতে থাকবে। (মথি ২৪:৪০, ৪১) তাই, নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখার জন্য আমরা কী করতে পারি?

এমানুয়েল, ভিকটরিন এবং তাদের ছয় মেয়ে আফ্রিকার এমন একটা এলাকায় বাস করে, যেখানে তারা চিহ্নকে নির্দেশ করে এমন সমস্ত ঘটনা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না। তাই, তারা নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখার জন্য প্রতিদিন আধ্যাত্মিক আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমানুয়েল ব্যাখ্যা করেন: “সবার জন্য সুবিধাজনক একটা সময় খুঁজে বের করা অনেক কঠিন ছিল। আমরা অবশেষে সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টা অর্থাৎ আধ ঘন্টা সময় বেছে নিয়েছিলাম। দৈনিক শাস্ত্রপদ সম্বন্ধে বিবেচনা করার পর, আমরা সেই সপ্তাহে মণ্ডলীতে অধ্যয়নের জন্য নির্ধারিত একটা প্রকাশনা থেকে কয়েকটা অনুচ্ছেদ প্রস্তুত করি।” এই কার্যক্রম কি তাদেরকে জেগে থাকতে সাহায্য করেছে? অবশ্যই! এমানুয়েল মণ্ডলীর প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর। ভিকটরিন প্রায়ই একজন সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন ও সেইসঙ্গে অনেককে সত্য গ্রহণ করে নিতে সাহায্য করেছেন। তাদের মেয়েরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভালোভাবে উন্নতি করছে।

যিশু আমাদের উপদেশ দিয়েছেন: “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও।” (মার্ক ১৩:৩৩) কোনো বিক্ষেপ যেন আপনার আধ্যাত্মিক সতর্কতাকে হ্রাস করে না দেয়। এর পরিবর্তে, আমাদের প্রকাশনাগুলোতে প্রাপ্ত উত্তম পরামর্শে এবং মণ্ডলীর সভাগুলোতে মনোযোগ দিন, যেমনটা আরিল দিয়েছিল। এমানুয়েলের পরিবারের মতো, প্রতিদিন এমন কিছু করার চেষ্টা করুন, যাতে আপনি প্রস্তুত থাকতে এবং ‘জাগিয়া থাকিতে’ পারেন।

[পাদটীকা]

^ একজন অল্পবয়সি খ্রিস্টান সম্বন্ধে আধুনিক দিনের একটা নাটক, যে যিহোবার দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা করার জন্য সংগ্রাম করে।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রতিদিন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা এমানুয়েল এবং তার পরিবারকে ‘প্রস্তুত থাকিতে’ সাহায্য করে