সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবাকে সেবা করা আমার আনন্দ হয়ে উঠেছে

যিহোবাকে সেবা করা আমার আনন্দ হয়ে উঠেছে

যিহোবাকে সেবা করা আমার আনন্দ হয়ে উঠেছে

বলেছেন ফ্রেড রাস্ক

আমার জীবনের প্রথম দিকে আমি গীতসংহিতা ২৭:১০ পদে প্রাপ্ত দায়ূদের এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম: “আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন।” আসুন, আমি আপনাদের বলি যে, কীভাবে এই বিষয়টা আমার বেলায় সত্য হয়েছিল।

আমি উনিশ-শো ত্রিশ দশকে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় আমার ঠাকুরদাদার তুলার খামারে বড়ো হয়েছি, আর সেই সময়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। আমার বাবা, আমার মা ও নবজাত ভাইয়ের মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন আর তিনি আমাকে তার বিপত্নীক বাবার কাছে রেখে চাকরির জন্য দূরের একটা শহরে চলে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কখনো সফল হননি।

আমার বড়ো পিসিরা বাড়িঘরের দেখাশোনা করত। যদিও ঠাকুরদাদা একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন না কিন্তু তার মেয়েরা গোঁড়া সাউদার্ন ব্যাপ্টিস্ট ছিল। মার খাওয়ার ভয়ে আমি প্রতি রবিবার গির্জায় যেতে বাধ্য হতাম। এই কারণগুলোর জন্য ছোটোবেলা থেকেই ধর্মের প্রতি আমার তেমন কোনো সম্মানই ছিল না। কিন্তু, আমি স্কুলে যেতে এবং খেলাধুলা করতে পছন্দ করতাম।

যে-সাক্ষাৎ আমার জীবনকে বদলে দিয়েছিল

১৯৪১ সালের এক দুপুরে, একজন বয়স্ক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে আসেন আর তখন আমার বয়স ১৫ বছর। তাকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ইনি হচ্ছেন “তোমার আংকেল আর তার নাম তালমাজ রাস্ক।” আমি কখনো তার সম্বন্ধে শুনিনি কিন্তু জানতে পেরেছিলাম যে, তিনি ও তার স্ত্রী যিহোবার সাক্ষি। পৃথিবীতে চিরকাল বাস করার বিষয়ে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তিনি যা ব্যাখ্যা করেছিলেন, তা গির্জায় শোনা কথাগুলোর চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল। অধিকাংশ পরিবার তাদের কথাগুলোকে প্রত্যাখ্যান—এমনকী অবজ্ঞা—করেছিল। তাদেরকে আর কখনোই বাড়িতে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু, আমার মেরি পিসি, যিনি আমার চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড়ো ছিলেন, তিনি একটা বাইবেল ও সেইসঙ্গে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করে এমন কিছু প্রকাশনা নিয়েছিলেন।

মেরি পিসি খুব শীঘ্র এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছিলেন যে, তিনি বাইবেলের সত্য খুঁজে পেয়েছেন আর তাই তিনি ১৯৪২ সালে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত এই কথাগুলো সম্বন্ধেও অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, যেমন: “আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” (মথি ১০:৩৪-৩৬) পরিবারের কাছ থেকে প্রচণ্ড বিরোধিতা এসেছিল। মেরি পিসির বড়ো বোন অর্থাৎ আমার আরেক পিসি, যিনি প্রশাসনিক বিভাগের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন, তিনি মেয়রের সঙ্গে চক্রান্ত করে তালমাজ আংকেলকে গ্রেপ্তার করান। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি কোনো লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন। তাকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

আমাদের স্থানীয় সংবাদপত্রে বলা হয়েছিল যে, মেয়র, যিনি একজন বিচারকও ছিলেন, তিনি নগর আদালতে উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বলেছিলেন: “এই ব্যক্তি যে-সাহিত্যাদি বিতরণ করছেন . . . তা বিষের মতোই মারাত্মক।” আমার আংকেল আপিল করে মামলায় জিতে গিয়েছিলেন, তবে ইতিমধ্যেই তাকে দশ দিন জেলে কাটাতে হয়েছিল।

যেভাবে মেরি পিসি আমাকে সাহায্য করেছিলেন

মেরি পিসি যে-নতুন বিশ্বাস সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন, সেই সম্বন্ধে আমাকে বলার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কাছেও সাক্ষ্য দিতে শুরু করেছিলেন। আমি তার সঙ্গে এমন একটা বাইবেল অধ্যয়নে গিয়েছিলাম, যেখানে একজন ব্যক্তি নতুন জগৎ (ইংরেজি) নামক বইটি গ্রহণ করেছিলেন। * তার স্ত্রী বলেছিলেন যে, তার স্বামী সারারাত জেগে বইটি পড়েছেন। যদিও আমি এত তাড়াতাড়ি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত কোনো বিষয়ে জড়াতে চাইনি, কিন্তু আমি যা শিখছিলাম, সেটা আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল। তবে, মূলত বাইবেলের শিক্ষাগুলো নয় বরং তাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হতো, সেটাই আমাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, সাক্ষিরা ঈশ্বরের লোক।

উদাহরণস্বরূপ, একদিন টম্যাটো খেতের আগাছা পরিষ্কার করে বাড়ি ফেরার পথে মেরি পিসি এবং আমি আবর্জনা পোড়ানোর পাত্রের মধ্যে এই প্রমাণ দেখতে পেয়েছিলাম যে, তার দিদিরা তার সাহিত্যাদি ও সেইসঙ্গে একটা ফনোগ্রাফ এবং বাইবেলের বার্তা সম্বলিত কিছু রেকর্ড পুড়িয়ে ফেলেছে। আমি প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম দেখে আমার একজন পিসি আমাকে টিটকারি মেরে এই কথা বলেছিলেন: “আমরা যা করেছি, এর জন্য পরে তুই আমাদেরকে হাজার বার ধন্যবাদ দিবি।”

১৯৪৩ সালে মেরি পিসিকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল কারণ তিনি তার নতুন বিশ্বাস ত্যাগ করতে এবং প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার করা বন্ধ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সেই সময় আমি শুধু ঈশ্বরের যে একটা নাম—যিহোবা—আছে, সেটা জেনেই নয় বরং এটা জেনেও রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম যে, তিনি একজন প্রেমময় এবং সমবেদনাময় ঈশ্বর, যিনি লোকেদেরকে নরকে পোড়ান না। আমি এও জানতে পেরেছিলাম যে, যিহোবার একটা প্রেমময় সংগঠন রয়েছে, যদিও আমি একটা সভাতেও যোগদান করিনি।

পরে, একদিন আমি যখন লনের ঘাস কাটছিলাম, তখন ধীরে ধীরে একটা গাড়ি এসে থামে এবং ভিতর থেকে দুজন ব্যক্তির মধ্যে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আমার নাম ফ্রেড কি না। আমি যখন বুঝতে পেরেছিলাম যে, তারা সাক্ষি, তখন আমি বলেছিলাম: “দাঁড়ান আমি ভিতরে আসছি, চলুন আমরা নিরাপদ কোনো জায়গায় গিয়ে কথা বলি।” মেরি পিসি আমার সঙ্গে তাদের দেখা করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাদের মধ্যে শিলড্‌ টুটজিয়ান নামে একজন ভ্রমণ পরিচারক আমাকে একেবারে সঠিক সময়ে উৎসাহ এবং আধ্যাত্মিক নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। যেহেতু আমি যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করতে শুরু করেছিলাম, তাই তখন আমিই পরিবারের কাছ থেকে আসা বিরোধিতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলাম।

মেরি পিসি ভার্জিনিয়া থেকে আমাকে চিঠি লিখে পাঠান এবং বলেন যে, আমি যদি যিহোবার সেবা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে থাকি, তাহলে আমি তার কাছে গিয়ে তার সঙ্গে থাকতে পারি। আমি সঙ্গেসঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ১৯৪৩ সালের অক্টোবর মাসের এক শুক্রবার বিকেলে আমি একটা বাক্সের মধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র ভরি এবং আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা গাছের সঙ্গে সেটা বেঁধে রাখি। শনিবার দিন গিয়ে আমি বাক্সটা নিয়ে আসি এবং একজন প্রতিবেশীর বাড়ির পিছন দিকের রাস্তা ধরে শহরে যাওয়ার জন্য একটা গাড়িতে উঠি। রোয়ানক শহরে গিয়ে আমি মেরি পিসিকে বোন এডনা ফউলসের বাড়িতে দেখতে পাই।

আধ্যাত্মিক উন্নতি, বাপ্তিস্ম এবং বেথেল

বোন এডনা ছিলেন একজন সমবেদনাময় অভিষিক্ত সাক্ষি—আধুনিক দিনের লুদিয়া—যিনি বিরাট একটা বাড়ি ভাড়া করে সেখানে মেরি পিসিকে ছাড়াও নিজের ভাইয়ের স্ত্রীকে ও সেইসঙ্গে তার দুই মেয়েকে জায়গা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, এই দুই মেয়ে—গ্ল্যাডিস এবং গ্রেইস গ্রেগরি—মিশনারি হয়ে ওঠে। গ্ল্যাডিসের বয়স এখন ৯০-এর কোঠায় আর তিনি এখনও জাপানের শাখা অফিসে বিশ্বস্তভাবে সেবা করছেন।

বোন এডনার বাড়িতে থাকাকালীন, আমি নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগদান করতে শুরু করি এবং পরিচর্যার জন্য প্রশিক্ষণ লাভ করি। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করার স্বাধীনতা পেয়ে আমি আমার বৃদ্ধিরত আধ্যাত্মিক ক্ষুধা মেটাতে পেরেছিলাম। ১৯৪৪ সালের ১৪ জুন আমি বাপ্তাইজিত হয়েছিলাম। মেরি পিসি এবং গ্ল্যাডিস ও গ্রেইস অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিল এবং উত্তর ভার্জিনিয়ায় একটা কার্যভার গ্রহণ করেছিল। সেখানে তারা লিসবার্গে একটা মণ্ডলী স্থাপন করার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল। ১৯৪৬ সালের প্রথম দিকে, আমি পার্শ্ববর্তী একটা এলাকায় অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিলাম। সেই বছরের গরমের সময় আমরা একসঙ্গে ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে, আগস্টের ৪-১১ তারিখে অনুষ্ঠিত এক স্মরণীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই।

সেই সম্মেলনে, নেথেন নর, যিনি সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি ব্রুকলিন বেথেলকে আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল একটা নতুন বাসভবন তৈরি করা এবং ছাপাখানাকে বাড়ানো। আর এর জন্য অনেক যুবক ভাইয়ের প্রয়োজন ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, সেখানেই আমি যিহোবার সেবা করতে চাই। তাই, আমি আমার আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম এবং কয়েক মাসের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের ১ ডিসেম্বরে বেথেলে গিয়েছিলাম।

প্রায় এক বছর পর, ছাপাখানার অধ্যক্ষ ভাই ম্যাক্স লারসন মেইলিং ডিপার্টমেন্টে আমার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়ান। তিনি আমাকে জানান যে, আমাকে সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে কার্যভার দেওয়া হয়েছে। সেই কার্যভারে, বিশেষভাবে ডিপার্টমেন্টের অধ্যক্ষ ভাই টি. জে. (বাড) সুলিভানের সঙ্গে কাজ করার সময় আমি বাইবেলের নীতিগুলোর প্রয়োগ ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরের সংগঠনের কাজ সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম।

আমার বাবা আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েক বার বেথেলে এসেছিলেন। শেষবয়সে তিনি ধর্মকর্ম করতে শুরু করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে, আমার সঙ্গে শেষ বারের মতো দেখা করতে এসে তিনি বলেছিলেন, “তুমি চাইলে আমাকে দেখার জন্য আসতে পার, কিন্তু আমি আর কখনো তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য এখানে আসব না।” তিনি মারা যাওয়ার আগে, আমি কয়েক বার তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি স্বর্গে যাবেন। আমি এইরকমটা আশা রাখি যে, তিনি যিহোবার স্মৃতিতে রয়েছেন আর যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে পুনরুত্থানের সময় তিনি যেখানে থাকবেন বলে মনে করতেন, সেখানে নয় বরং পুনর্স্থাপিত পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা সহকারে এই পৃথিবীতে থাকবেন।

অন্যান্য স্মরণীয় সম্মেলন এবং নির্মাণকাজ

সম্মেলনগুলো সবসময়ই আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার এক মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। ১৯৫০ সালে, নিউ ইয়র্কে ইয়াংকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো বিশেষভাবে সেইরকমই ছিল। ১৯৫৮ সালে, ইয়াংকি স্টেডিয়াম এবং পোলো গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত একটা অধিবেশনই ১২৩টা দেশ থেকে আসা ২,৫৩,৯২২ জন লোক দিয়ে ভরে গিয়েছিল। সেই সম্মেলনের একটা ঘটনা আমি কখনোই ভুলব না। আমি যখন সম্মেলনের অফিসে সাহায্য করছিলাম, তখন ভাই নর দ্রুত হেঁটে আমার কাছে আসেন। “ফ্রেড” তিনি বলেন, “পাশের ভাড়া করা খাবারের হলে এখন যে-অগ্রগামীরা উপস্থিত হয়েছে, তাদের উদ্দেশে কথা বলার জন্য আমি আসলে কোনো ভাইকে দায়িত্ব দিতে ভুলে গিয়েছি। তুমি কি তাড়াতাড়ি সেখানে আসতে পারো এবং আসার পথে যে-বিষয়বস্তু তোমার মাথায় আসে, সেটার ওপর ভিত্তি করে তাদের উদ্দেশে একটা ভালো বক্তৃতা দিতে পারো?” সেখানে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমি ক্রমাগত প্রার্থনা করেছিলাম।

যেহেতু ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে মণ্ডলীগুলোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, তাই কিংডম হলের জন্য ভাড়া করা বিল্ডিংগুলোর সংখ্যা যথেষ্ট ছিল না। তাই, ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে, ম্যানহাটেনে তিনটে বিল্ডিং কিনে সেগুলোর সংস্কার করা হয়েছিল আর এভাবে সভার জন্য উপযুক্ত স্থান জোগানো হয়েছিল। এই প্রকল্পগুলোর জন্য যে-বিল্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছিল, আমি তার সভাপতি ছিলাম। এ ছাড়া, এই বিল্ডিংগুলো অর্থাৎ যেগুলো সত্য উপাসনার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিল, সেগুলোর আর্থিক সংস্থান জোগানো ও সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে যিহোবা যেভাবে মণ্ডলীগুলোকে আশীর্বাদ করে যাচ্ছিলেন, সেই বিষয়েও আমার অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি ছিল।

জীবনের বিভিন্ন পরিবর্তন

১৯৫৭ সালের কোনো একটা দিনে আমি যখন বেথেল হোম এবং ছাপাখানার মধ্যবর্তী পার্কের মধ্যে দিয়ে হেঁটে কাজে যাচ্ছিলাম, তখন বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। আমি আমার সামনেই অপূর্ব সুন্দরী একজন নতুন বেথেলকর্মীকে দেখতে পাই, যার চুল ছিল সোনালি রঙের। তার কাছে কোনো ছাতা ছিল না, তাই আমি তাকে আমার ছাতার নীচে আসতে বলি। মার্জরির সঙ্গে আমার এভাবেই দেখা হয়েছিল আর ১৯৬০ সালে আমাদের বিয়ের পর থেকে আমরা যিহোবার সেবায় সুখে-দুঃখে একত্রে আনন্দের সঙ্গে চলছি। আমরা ২০১০ সালে আমাদের ৫০তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেছি।

হানিমুন থেকে আসতে না আসতেই ভাই নর আমাকে বলেন যে, আমাকে গিলিয়েড স্কুল-এর একজন নির্দেশক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। সেটা কত বিশেষ এক সুযোগই না ছিল! ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মূলত শাখা অফিসের সেই কর্মীদের জন্য পাঁচটা দীর্ঘমেয়াদি ক্লাস গঠন করা হয়, যাদেরকে শাখা অফিস দেখাশোনা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের শরৎকালে পুনরায় পাঁচ মাস মেয়াদি ক্লাশ শুরু হয়েছিল এবং আবারও মিশনারিদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল।

১৯৭২ সালে আমাকে গিলিয়ড স্কুল থেকে রাইটিং কোরেস্‌পনডেন্স ডিপার্টমেন্ট-এ বদলি করা হয়েছিল, যেখানে আমি একজন অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতাম। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন এবং সমস্যা নিয়ে বিবেচনা করার সময় গবেষণা করা, আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে ও সেইসঙ্গে অন্যদের সহায়তা করার সময় আমাদের ঈশ্বরের উচ্চ নীতিগুলোর প্রয়োগ সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।

এরপর, ১৯৮৭ সালে আমাকে হসপিটাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস নামক একটা নতুন ডিপার্টমেন্টে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি-র প্রাচীনরা কীভাবে ডাক্তার, বিচারক এবং সমাজকর্মীদের সঙ্গে রক্ত সম্বন্ধে আমাদের শাস্ত্রীয় অবস্থান নিয়ে কথা বলবে, সেই বিষয়ে তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একটা বড়ো সমস্যা ছিল যে, ডাক্তাররা নিজেদের ইচ্ছেখুশিমতো আমাদের সন্তানদের রক্ত দিত আর তা করার জন্য প্রায়ই তারা আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিত।

ডাক্তারদেরকে যখন রক্ত সঞ্চালনের বিকল্প পদ্ধতি সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়া হতো, তখন তারা সাধারণত এভাবে উত্তর দিত যে, সেগুলো সব জায়গায় পাওয়া যায় না অথবা সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল। যে-চিকিৎসক এইরকম কথা বলতেন, তাকে আমি প্রায়ই বলতাম, “দয়া করে আপনার হাতটা একটু বাড়িয়ে দিন।” তার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে আমি তখন বলতাম, “আপনি নিজেই জানেন যে, আপনার হাতে রক্ত না নেওয়ার সবচেয়ে উত্তম এক বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে।” এইরকম প্রশংসা তাকে সেই বিষয়টা মনে করিয়ে দিত, যে-সম্বন্ধে তিনি খুব ভালোভাবে অবগত আছেন—অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত ধারালো ছুরি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।

যিহোবা, বিগত দুই দশক ধরে ডাক্তার ও বিচারকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এই প্রচেষ্টাগুলোর ওপর প্রচুর আশীর্বাদ করেছেন। তারা যখন আমাদের অবস্থান সম্বন্ধে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল, তখন তাদের মনোভাব লক্ষণীয়ভাবে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তারা জানতে পেরেছিল, রক্ত সঞ্চালনের বিকল্প পদ্ধতিগুলো যে কার্যকারী, সেই সম্বন্ধে চিকিৎসাগত গবেষণার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে আর সেইসঙ্গে এমন অনেক সহযোগিতাপরায়ণ ডাক্তার এবং হাসপাতালও রয়েছে, যেখানে একজন রোগীকে নিয়ে যাওয়া যায়।

১৯৯৬ সালে থেকে মার্জরি এবং আমি, ব্রুকলিনের উত্তর দিকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) দূরে অবস্থিত নিউ ইয়র্কের প্যাটারসনের ওয়াচটাওয়ার এডুকেশনাল সেন্টার-এ সেবা করছি। সেখানে আমি অল্পসময়ের জন্য সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে এবং এরপর কিছু সময়ের জন্য শাখার কর্মীদেরকে ও সেইসঙ্গে ভ্রমণ অধ্যক্ষদেরকে শিক্ষা দেওয়ার কাজ করেছি। বিগত ১২ বছর ধরে আমি আবারও রাইটিং কোরেস্‌পনডেন্স-এর অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেছি, যা ব্রুকলিন থেকে প্যাটারসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বার্ধক্যের বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

যেহেতু আমার বয়স ৮০-র কোঠার মাঝামাঝি, তাই বেথেলে সেবা করার যে-বিশেষ সুযোগগুলো আমার রয়েছে, সেগুলোর দেখাশোনা করা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আমি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে চলেছি। আমিও হিষ্কিয়ের মতো অনুভব করি, যাকে যিহোবা দীর্ঘায়ু প্রদান করেছিলেন। (যিশা. ৩৮:৫) আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যও দুর্বল হয়ে পড়েছে আর আমরা তার অ্যালজেইমারস্‌ রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য একত্রে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মার্জরি যিহোবার একজন দক্ষ পরিচারক, অল্পবয়সিদের জন্য একজন বিজ্ঞ পরামর্শদাতা এবং আমার একজন বিশ্বস্ত সাহায্যকারী ও অনুগত সঙ্গী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সে সবসময়ই বাইবেলের একজন উত্তম ছাত্রী ও চমৎকার শিক্ষক ছিল আর আমাদের সঙ্গে অনেক আধ্যাত্মিক ছেলে-মেয়ে যোগাযোগ করে থাকে।

আমার মেরি পিসি ২০১০ সালের মার্চ মাসে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ঈশ্বরের বাক্যের খুবই দক্ষ একজন শিক্ষক ছিলেন ও সেইসঙ্গে অন্যদেরকে সত্য উপাসনার পক্ষ নেওয়ার জন্য সাহায্য করেছেন। তিনি পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় অনেক বছর ব্যয় করেছিলেন। আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শেখানোর এবং তারই মতো আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবার একজন দাস হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য তিনি যে-ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটার জন্য আমি তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। মেরি পিসিকে তার স্বামীর পাশে কবর দেওয়া হয়েছে, যিনি আগে ইজরায়েলে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করতেন। আমি এই ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিত যে, তারা যিহোবার স্মৃতিতে রয়েছে, পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি যখন পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি যে, যিহোবার সেবায় আমি ৬৭ বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেছি, তখন আমি প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করেছি বলে সেটার জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে উঠি। যিহোবার ইচ্ছা পালন করা আমার আনন্দ হয়ে এসেছে! তাঁর অযাচিত দয়ার প্রতি নির্ভরতা থাকায়, আমি তাঁর পুত্রের এই প্রতিজ্ঞার অংশ হওয়ার জন্য ঐকান্তিকভাবে আশা রাখি: “আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী, কি ভ্রাতা, কি ভগিনী, কি পিতা, কি মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শত গুণ পাইবে, এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে।”—মথি ১৯:২৯.

[পাদটীকা]

^ ১৯৪২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তবে এখন আর ছাপানো হয় না।

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে আমার ঠাকুরদাদার তুলার খামারে

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেরি পিসি এবং তালমাজ আংকেল

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেরি পিসি, গ্ল্যাডিস এবং গ্রেইস

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪৪ সালের ১৪ জুন আমার বাপ্তিস্মের সময়

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

বেথেলে সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৮ সালে ইয়াংকি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সময় মেরি পিসির সঙ্গে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের বিয়ের দিন মার্জরির সঙ্গে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

২০০৮ সালে একত্রে