সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক দুষ্ট জগতে “প্রবাসী”

এক দুষ্ট জগতে “প্রবাসী”

এক দুষ্ট জগতে “প্রবাসী”

“বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা সকলে . . . আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।”—ইব্রীয় ১১:১৩.

১. এই জগৎ সম্বন্ধে তাঁর অনুসারীদের অবস্থানের বিষয়ে যিশু কী বলেছেন?

 “ইহারা জগতে রহিয়াছে,” যিশু তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১১, ১৪) এভাবে, যিশু ‘এই যুগ’ সম্বন্ধে তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের অবস্থান স্পষ্টভাবে নির্দেশ করেছিলেন, যে-যুগের দেব হচ্ছে শয়তান। (২ করি. ৪:৪) যদিও তারা এই দুষ্ট জগতে বাস করছিল, তবুও তারা এর অংশ ছিল না। এই যুগে তাদের পরিস্থিতি হবে ‘বিদেশী ও প্রবাসীর’ মতো।—১ পিতর ২:১১.

তারা “প্রবাসী” হিসেবে বাস করেছিল

২, ৩. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, হনোক, নোহ ও অব্রাহাম এবং সারা “বিদেশী ও প্রবাসী” হিসেবে বাস করেছিল?

প্রাচীন কাল থেকেই যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা যে-ভক্তিহীন জগতে বাস করত, সেখানকার লোকেদের চেয়ে তারা একেবারে আলাদা ছিল। জলপ্লাবনের আগে, হনোক এবং নোহ “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” (আদি. ৫:২২-২৪; ৬:৯) তারা দুজনেই, শয়তানের দুষ্ট জগতের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার ঘোষণা করার ব্যাপারে সাহসী প্রচারক ছিল। (পড়ুন, ২ পিতর ২:৫; যিহূদা ১৪, ১৫.) যেহেতু তারা এক ভক্তিহীন জগতে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করত, তাই হনোক “ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন” এবং নোহ “তৎকালিক লোকদের মধ্যে . . . সিদ্ধ [“ত্রুটিহীন,” জুবিলী বাইবেল] লোক ছিলেন।”—ইব্রীয় [হিব্রু] ১১:৫; আদি. ৬:৯.

ঈশ্বরের আমন্ত্রণে অব্রাহাম এবং সারা কল্‌দীয় দেশের ঊর নগরের আরামদায়ক জীবনযাপন ত্যাগ করেছিল এবং বিদেশে যাযাবরের মতো বাস করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করে নিয়েছিল। (আদি. ১১:২৭, ২৮; ১২:১) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “বিশ্বাসে অব্রাহাম, যখন আহূত হইলেন, তখন যে স্থান অধিকারার্থে প্রাপ্ত হইবেন, সেই স্থানে যাইবার আজ্ঞা মান্য করিলেন, এবং কোথায় যাইতেছেন তাহা না জানিয়া যাত্রা করিলেন। বিশ্বাসে তিনি বিদেশের ন্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবাসী হইলেন, তিনি সেই প্রতিজ্ঞার সহাধিকারী ইস্‌হাক ও যাকোবের সহিত তাম্বুতেই বাস করিতেন।” (ইব্রীয় ১১:৮, ৯) যিহোবার এই বিশ্বস্ত দাসদের সম্বন্ধে পৌল বলেছিলেন: “বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা সকলে মরিলেন; ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, এবং আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।”—ইব্রীয় ১১:১৩.

ইস্রায়েলীয়দের প্রতি এক সাবধানবাণী

৪. নিজেদের দেশে বাস করতে শুরু করার আগে ইস্রায়েলীয়দের কোন সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছিল?

অব্রাহামের বংশধর, ইস্রায়েলীয়রা বহুসংখ্যক হয়ে উঠেছিল এবং পরিশেষে এমন একটা জাতি হয়ে উঠেছিল, যাদের একটি ব্যবস্থাবিধি এবং একটা দেশ ছিল। (আদি. ৪৮:৪; দ্বিতীয়. ৬:১) ইস্রায়েলের লোকেদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত ছিল না যে, তাদের দেশের প্রকৃত মালিক হচ্ছেন যিহোবা। (লেবীয়. ২৫:২৩) তারা ছিল ভাড়াটিয়ার মতো, যারা মালিকের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাতে বাধ্য। অধিকন্তু, তাদেরকে মনে রাখতে হতো যে, “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচে না”; বস্তুগত সমৃদ্ধির কারণে তারা যেন যিহোবাকে ভুলে না যায়। (দ্বিতীয়. ৮:১-৩) নিজেদের দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে ইস্রায়েলীয়দেরকে এই সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছিল: “তোমার পিতৃপুরুষ অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের কাছে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতে শপথ করিয়াছেন, সেই দেশে তিনি তোমাকে উপস্থিত করিলে পর তুমি যাহা গাঁথ নাই, এমন বৃহৎ বৃহৎ ও সুন্দর সুন্দর নগর, এবং যাহাতে কিছুই সঞ্চয় কর নাই, উত্তম উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ এমন সকল গৃহ, ও যাহা খুদ নাই, এমন সকল খনিত কূপ, এবং যাহা প্রস্তুত কর নাই, এমন সকল দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও জিতক্ষেত্র পাইয়া যখন তুমি ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে, তৎকালে আপনার বিষয়ে সাবধান থাকিও, . . . সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না।”—দ্বিতীয়. ৬:১০-১২.

৫. কেন যিহোবা ইস্রায়েলকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আর তাদের ওপর থেকে অনুগ্রহ সরিয়ে নিয়ে কোন নতুন জাতির প্রতি তাঁর অনুগ্রহ দেখাতে শুরু করেছিলেন?

এই সাবধানবাণী ভিত্তিহীন ছিল না। নহিমিয়ের দিনে একদল লেবীয়, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করার পর যা ঘটেছিল, সেটা লজ্জার সঙ্গে স্মরণ করেছিল। ইস্রায়েলের লোকেরা আরামদায়ক গৃহে বাস করার এবং প্রচুর খাদ্য ও দ্রাক্ষারস লাভ করার পর “ভোজন করিয়া তৃপ্ত ও পুষ্ট হইল।” তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, এমনকী তাদেরকে সাবধান করার জন্য তিনি যে-ভাববাদীদের প্রেরণ করেছিলেন, তাদেরকে হত্যা করেছিল। আর তাই যিহোবা তাদেরকে তাদের শত্রুদের হাতে সমর্পণ করেছিলেন। (পড়ুন, নহিমিয় ৯:২৫-২৭; হোশেয় ১৩:৬-৯) পরবর্তী সময়ে, রোমীয় শাসনাধীনে অবিশ্বস্ত যিহুদিরা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, তারা প্রতিজ্ঞাত মশীহকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল! যিহোবা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তাদের ওপর থেকে অনুগ্রহ সরিয়ে নিয়ে এক নতুন জাতি, আত্মিক ইস্রায়েলের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ দেখাতে শুরু করেছিলেন।—মথি ২১:৪৩; প্রেরিত ৭:৫১, ৫২; গালা. ৬:১৬.

“জগতের নহ”

৬, ৭. (ক) জগৎ সম্বন্ধে তাঁর অনুসারীদের অবস্থানের বিষয়ে যিশু যা বলেছিলেন, সেটাকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? (খ) কেন সত্য খ্রিস্টানরা শয়তানের বিধিব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠেনি?

এই প্রবন্ধের শুরুতেই যেমন দেখানো হয়েছে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক যিশু খ্রিস্ট এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, তাঁর অনুসারীরা জগৎ থেকে অর্থাৎ শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা থেকে পৃথক থাকবে। যিশু তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি জগতের হইতে, তবে জগৎ আপনার নিজস্ব ভালবাসিত; কিন্তু তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে।”—যোহন ১৫:১৯.

যখন খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন খ্রিস্টানরা কী জগতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিয়েছিল অর্থাৎ এর অভ্যাসগুলো গ্রহণ করেছিল এবং এর অংশ হয়ে উঠেছিল? না। তারা যেখানেই বাস করত, সেখানেই তাদেরকে শয়তানের বিধিব্যবস্থা থেকে নিজেদেরকে পৃথক রাখতে হতো। খ্রিস্ট মারা যাওয়ার প্রায় ৩০ বছর পর, পিতর রোমীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা আমি নিবেদন করি, তোমরা বিদেশী ও প্রবাসী বলিয়া মাংসিক অভিলাষ সকল হইতে নিবৃত্ত হও, সেগুলি আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ।”—১ পিতর ১:১; ২:১১, ১২.

৮. একজন ইতিহাসবেত্তা, জগতের সঙ্গে প্রাথমিক খ্রিস্টানদের সম্পর্ক সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করেছেন?

প্রাথমিক খ্রিস্টানরা যে রোমীয় সাম্রাজ্যে নিজেদেরকে “বিদেশি ও প্রবাসী” হিসেবে গণ্য করত, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করে ইতিহাসবেত্তা কেনিথ স্কট লটুরেট লিখেছিলেন: “এটা ইতিহাসের খুবই সাধারণ একটা বিষয় যে, প্রথম তিন শতাব্দী ধরে খ্রিস্ট ধর্ম ক্রমাগত এবং প্রায়ই চরম তাড়নার শিকার হয়েছে . . . বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল। তারা পৌত্তলিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করত বলে খ্রিস্টানদেরকে নাস্তিক বলে অভিহিত করা হতো। সামাজিক জীবনযাপনের বেশির ভাগ বিষয়গুলো—পৌত্তলিক উৎসব, সাধারণ চিত্তবিনোদন, যেগুলোকে খ্রিস্টানরা পৌত্তলিক বিশ্বাস, অভ্যাস এবং অনৈতিকতায় ছেয়ে আছে বলে মনে করত, সেগুলো—পরিহার করত বলে তাদেরকে মানবজাতিকে ঘৃণা করে বলে উপহাস করা হতো।”

জগৎসংসার পূর্ণমাত্রায় ভোগ না করা

৯. সত্য খ্রিস্টান হিসেবে কীভাবে আমরা এই প্রমাণ দিই যে, আমরা “মানবজাতিকে ঘৃণা” করি না?

বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? ‘এই উপস্থিত মন্দ যুগের’ ব্যাপারে আমরাও প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মতো একই মনোভাব বজায় রাখি। (গালা. ১:৪) এই কারণে আমাদেরকে অনেকে ভুল বোঝে আর এমনকী কেউ কেউ ঘৃণা করে। কিন্তু, নিশ্চিতভাবেই আমরা “মানবজাতিকে ঘৃণা” করি না। সহমানবদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে আমরা ঘরে ঘরে যাই, ‘[ঈশ্বরের] রাজ্যের সুসমাচার’ নিয়ে প্রত্যেক লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করি। (মথি ২২:৩৯; ২৪:১৪) আমরা তা করি, কারণ আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, খ্রিস্টের অধীনস্থ যিহোবার রাজ্য সরকার শীঘ্র অসিদ্ধ মানব শাসনকে ধ্বংস করে দিয়ে এর স্থানে এক নতুন ধার্মিক বিধিব্যবস্থা নিয়ে আসবে।—দানি. ২:৪৪; ২ পিতর ৩:১৩.

১০, ১১. (ক) কীভাবে আমরা জগৎকে স্বল্পমাত্রায় ভোগ করে থাকি? (খ) কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে সতর্ক খ্রিস্টানরা জগৎকে পূর্ণমাত্রায় ভোগ করা থেকে বিরত থাকে?

১০ যেহেতু বর্তমান বিধিব্যবস্থার ধ্বংস আসন্ন, তাই যিহোবার দাস হিসেবে আমরা এটা বুঝতে পারি যে, এই মৃতপ্রায় জগতে স্থায়ীভাবে বাস করার সময় এখন নয়। আমরা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দিই: “আমি এই কথা বলিতেছি, ভ্রাতৃগণ, সময় সঙ্কুচিত, এখন হইতে . . . যাহারা ক্রয় করিতেছে, তাহারা যেন কিছুই রাখে নাই; আর যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না, যেহেতুক এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে।” (১ করি. ৭:২৯-৩১) কিন্তু, কীভাবে বর্তমান দিনের খ্রিস্টানরা জগৎকে ভোগ করে থাকে? বিশ্বব্যাপী শত শত ভাষায় বাইবেলের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা এবং যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করার দ্বারা তারা তা করে থাকে। জীবিকার্জনের জন্য তারা জগৎকে স্বল্পমাত্রায় ভোগ করে থাকে। তারা জগতে প্রাপ্তিসাধ্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং সেবা ক্রয় করে থাকে। কিন্তু, তারা এই অর্থে জগৎকে পূর্ণমাত্রায় ভোগ করা এড়িয়ে চলে যে, তারা জাগতিক সহায়সম্পদ এবং পেশাকে সঠিক স্থানে রাখে।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

১১ সতর্ক খ্রিস্টানরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জগৎকে পূর্ণমাত্রায় ভোগ করা থেকে বিরত থাকে। এই জগতের অনেক লোক উচ্চশিক্ষাকে খ্যাতি এবং সমৃদ্ধশালী জীবনযাপনের এক অপরিহার্য সিঁড়ি বলে বিবেচনা করে। কিন্তু, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা প্রবাসী হিসেবে বাস করি এবং ভিন্ন লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করি। আমরা ‘উচ্চ উচ্চ বিষয় ভাবা’ এড়িয়ে চলি। (রোমীয় ১২:১৬; যির. ৪৫:৫) যেহেতু আমরা যিশুর অনুসারী, তাই আমরা তাঁর এই সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিই: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) এই কারণেই, অল্পবয়সি খ্রিস্টানদেরকে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে আর তা করতে গিয়ে তারা মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য যতটা দরকার, ঠিক ততটা শিক্ষা লাভ করবে, তবে তাদের মনোযোগ যেন ‘তাহাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, শক্তি এবং চিত্ত দিয়া’ যিহোবার সেবা করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করার ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে। (লূক ১০:২৭) তা করার মাধ্যমে, তারা “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” হতে পারে।—লূক ১২:২১; পড়ুন, মথি ৬:১৯-২১.

জীবনের ভাবনাগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হওয়া এড়িয়ে চলুন

১২, ১৩. কীভাবে মথি ৬:৩১-৩৩ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া আমাদেরকে জগতের লোকেদের থেকে আলাদা করে?

১২ বস্তুগত বিষয়ের প্রতি যিহোবার দাসদের মনোভাব জগতের লোকেদের থেকে আলাদা। এই ক্ষেত্রে, যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:৩১-৩৩) ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক সহবিশ্বাসী দেখেছে যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সরবরাহ করেন।

১৩ “ভক্তি, সন্তোষযুক্ত হইলে, মহালাভের উপায়।” (১ তীম. ৬:৬) এটা বর্তমান জগতের লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একেবারে আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, কমবয়সি লোকেরা যখন বিয়ে করে, তখন তাদের মধ্যে অনেকে সঙ্গেসঙ্গে ‘সমস্তকিছু পাওয়ার’ প্রত্যাশা করে—সমস্ত আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সুসজ্জিত একটা বাড়ি অথবা অ্যাপার্টমেন্ট, একটা সুন্দর গাড়ি ও সেইসঙ্গে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সামগ্রী। কিন্তু, যে-খ্রিস্টানরা প্রবাসী হিসেবে বাস করে, তারা যুক্তিযুক্ত মাত্রার চেয়ে বেশি এবং তাদের পক্ষে অসম্ভব এমন বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা করে না। বস্তুতপক্ষে, এটা সত্যিই প্রশংসাজনক যে, অনেকে উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে যিহোবার সেবায় আরও বেশি সময় ও শক্তি প্রদান করার জন্য কিছু বস্তুগত আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেছে। অন্যেরা অগ্রগামী হিসেবে, বেথেলে, ভ্রমণ কাজে অথবা মিশনারি হিসেবে সেবা করে থাকে। আমরা যিহোবার সহউপাসকদের সর্বান্তঃকরণের সেবাকে কতই না মূল্যবান বলে গণ্য করি!

১৪. যিশুর বীজবাপকের নীতিগল্প থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

১৪ বীজবাপকের নীতিগল্পে যিশু বলেছিলেন যে, “সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া” আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যকে চেপে রাখতে এবং এভাবে আমাদেরকে ফলহীন করে দিতে পারে। (মথি ১৩:২২) আমরা যদি এই বিধিব্যবস্থায় প্রবাসী হিসেবে সন্তুষ্ট মনোভাব নিয়ে বাস করি, তাহলে তা আমাদেরকে এই ফাঁদে পড়া এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। এর পরিবর্তে, এটা আমাদেরকে আমাদের চোখ “সরল” রাখতে অথবা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে, শুধু সেটার দিকেই তাকাতে এবং রাজ্যের বিষয়গুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখতে সমর্থ করবে।—মথি ৬:২২.

‘জগৎ বহিয়া যাইতেছে’

১৫. প্রেরিত যোহনের কোন কথাগুলো বর্তমান জগৎ সম্বন্ধে সত্য খ্রিস্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণকে নির্ধারণ করে?

১৫ একটা যে-প্রধান কারণে সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা নিজেদেরকে এই জগতে “বিদেশী ও প্রবাসী” বলে গণ্য করি, তা হল আমাদের এই দৃঢ়প্রত্যয় রয়েছে যে, এই জগতের সময় সংক্ষিপ্ত। (১ পিতর ২:১১; ২ পিতর ৩:৭) এই দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের জীবনের বাছাই, আকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করে। প্রেরিত যোহন সহবিশ্বাসীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা জগৎকে ও জগতীস্থ বিষয়গুলোকে প্রেম না করে কারণ “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৫-১৭.

১৬. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা স্বতন্ত্র লোক হিসেবে আলাদা হয়েছি?

১৬ ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল যে, তারা যদি যিহোবার বাধ্য থাকে, তাহলে তারা “সকল জাতি অপেক্ষা” তাঁর “নিজস্ব অধিকার” হবে। (যাত্রা. ১৯:৫) ইস্রায়েলীয়রা যখন বাধ্য ছিল, তখন উপাসনা এবং জীবনধারার ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য জাতি থেকে আলাদা ছিল। বর্তমানেও যিহোবা নিজের জন্য সেই লোকেদের পৃথক করেছেন, যারা শয়তানের জগৎ থেকে লক্ষণীয়ভাবে আলাদা। আমাদেরকে বলা হয়েছে: ‘ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন কর এবং পরমধন্য আশাসিদ্ধির জন্য, এবং মহান্‌ ঈশ্বর ও আমাদের ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের প্রতাপের প্রকাশপ্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা কর। ইনি আমাদের নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন, যেন মূল্য দিয়া আমাদিগকে সমস্ত অধর্ম্ম হইতে মুক্ত করেন, এবং আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে, শুচি করেন।’ (তীত ২:১১-১৪) এই “প্রজাবর্গ” অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং যিশুর সেই লক্ষ লক্ষ “আরও মেষ” নিয়ে গঠিত, যারা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে সাহায্য ও সমর্থন করে।—যোহন ১০:১৬.

১৭. কেন অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের সহযোগীরা, এই দুষ্ট জগতে প্রবাসী হিসেবে বাস করছে বলে কখনো অনুশোচনা করবে না?

১৭ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের জন্য ‘পরমধন্য আশা’ হল, স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজত্ব করা। (প্রকা. ৫:১০) যখন আরও মেষের জন্য পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা পূর্ণ হবে, তখন তারা আর এক দুষ্ট জগতে প্রবাসী হিসেবে থাকবে না। তাদের অনেক চমৎকার বাড়ি ও সেইসঙ্গে খাদ্য এবং পানীয়ের প্রাচুর্য থাকবে। (গীত. ৩৭:১০, ১১; যিশা. ২৫:৬; ৬৫:২১, ২২) ইস্রায়েলীদের মতো, তারা কখনো ভুলে যাবে না যে, এই সমস্তকিছু “সমস্ত পৃথিবীর ঈশ্বর” যিহোবার কাছ থেকে। (যিশা. ৫৪:৫) অভিষিক্ত ব্যক্তি অথবা আরও মেষ, কেউই এই দুষ্ট জগতে প্রবাসী হিসেবে বাস করায় অনুশোচনা করবে না।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কোন অর্থে প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা প্রবাসী হিসেবে বাস করেছিল?

• প্রাথমিক খ্রিস্টানরা জগতের মধ্যে নিজেদেরকে কীভাবে গণ্য করত?

• কীভাবে সত্য খ্রিস্টানরা জগৎকে স্বল্পমাত্রায় ভোগ করে থাকে?

• কেন আমরা এই দুষ্ট জগতে প্রবাসী হিসেবে বাস করছি বলে কখনো অনুশোচনা করব না?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রাথমিক খ্রিস্টানরা দৌরাত্ম্য এবং অনৈতিক আমোদপ্রমোদ থেকে বিরত ছিল