সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবন ও শান্তির জন্য আত্মার বশে চলুন

জীবন ও শান্তির জন্য আত্মার বশে চলুন

জীবন ও শান্তির জন্য আত্মার বশে চলুন

‘মাংসের বশে নয়, কিন্তু আত্মার বশে চল।’—রোমীয় ৮:৪.

১, ২. (ক) গাড়ি চালানোর সময় একজন ব্যক্তি যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন, তাহলে কোন মারাত্মক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে? (খ) আধ্যাত্মিকভাবে বিক্ষিপ্ত হওয়ার ফলে কোন বিপদ দেখা দিতে পারে?

 “বি ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ি চালানোর বিষয়টা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে আর প্রতি বছর এটা খারাপ থেকে খারাপের দিকেই যাচ্ছে।” এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ সচিবের বিবৃতি। বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে সেলফোন হচ্ছে এমন একটা সামগ্রী, যা একজন চালককে সেই বিষয়টা থেকে তার মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়, যা তার করার কথা—গাড়ি চালানো। একটা সমীক্ষায় যে-লোকেদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি লোক বলেছিল যে, তারা এমন গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল বা প্রায় ধাক্কা খেতে যাচ্ছিল, যেটার চালক সেলফোন ব্যবহার করছিলেন। গাড়ি চালানোর সময় একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করা হয়তো সুবিধাজনক বলে মনে হয় কিন্তু এর ফলাফল হতে পারে মারাত্মক।

আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। ঠিক যেমন একজন বিক্ষিপ্ত চালক প্রায়ই বিপদ সংকেতগুলো লক্ষ করতে ব্যর্থ হন, তেমনই আধ্যাত্মিকভাবে বিক্ষিপ্ত একজন ব্যক্তি সহজেই ক্ষতিকর পথের দিকে ধাবিত হতে পারেন। আমরা যদি নিজেদেরকে খ্রিস্টীয় পথ এবং ঈশতান্ত্রিক কাজগুলো থেকে ভেসে চলে যাওয়ার সুযোগ দিই, তাহলে এর ফলে আমাদের বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হতে পারে। (১ তীম. ১:১৮, ১৯) প্রেরিত পৌল এই বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যখন তিনি রোমের সহখ্রিস্টানদেরকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন: “মাংসের ভাব মৃত্যু, কিন্তু আত্মার ভাব জীবন ও শান্তি।” (রোমীয় ৮:৬) এর দ্বারা পৌল কী বুঝিয়েছিলেন? কীভাবে আমরা “মাংসের ভাব” এড়িয়ে চলতে এবং “আত্মার ভাব” অনুধাবন করতে পারি?

তাদের “কোন দণ্ডাজ্ঞা নাই”

৩, ৪. (ক) পৌল কোন ব্যক্তিগত লড়াই সম্বন্ধে লিখেছেন? (খ) কেন আমাদের পৌলের পরিস্থিতির প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত?

রোমীয়দের কাছে লেখা চিঠিতে পৌল এমন একটা লড়াই সম্বন্ধে লিখেছিলেন, যা তিনি নিজেই করছিলেন—তার মাংস ও মনের মধ্যে লড়াই। (পড়ুন, রোমীয় ৭:২১-২৩.) পৌল কোনো অজুহাত দেখাচ্ছিলেন না বা আত্মকরুণা লাভের চেষ্টা করছিলেন না, এমন যেন তিনি পাপের দ্বারা এতটাই ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি নিরুপায় ছিলেন। সর্বোপরি, তিনি ছিলেন একজন পরিপক্ব ও আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টান, যাকে “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। (রোমীয় ১:১; ১১:১৩) তাহলে, কেন পৌল তার ব্যক্তিগত লড়াই সম্বন্ধে লিখেছিলেন?

পৌল অকপটভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, নিজের ক্ষমতায় তিনি যেভাবে চান, সেভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা তার পক্ষে অসাধ্য। এর কারণ কী? “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে,” তিনি বলেছিলেন। (রোমীয় ৩:২৩) আদমের একজন বংশধর হিসেবে, পৌল অসিদ্ধ মাংসের পাপপূর্ণ প্রভাবের অধীন ছিলেন। আমরা তার অবস্থা বুঝতে পারি কারণ আমরা সকলে অসিদ্ধ এবং প্রতিদিন আমাদের একই ধরনের লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়। অধিকন্তু, এমন অনেক বিক্ষেপ রয়েছে, যেগুলো আমাদের মনোযোগকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে ও সেইসঙ্গে আমাদেরকে ‘জীবনে যাইবার দুর্গম পথ’ থেকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারে। (মথি ৭:১৪) কিন্তু, তাই বলে পৌলের পরিস্থিতি যে আশাহীন ছিল এমন নয় আর সেটা আমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

৫. পৌল কোথা থেকে সাহায্য এবং স্বস্তি লাভ করেছেন?

পৌল লিখেছিলেন: “কে আমাকে নিস্তার করিবে? আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি।” (রোমীয় ৭:২৪, ২৫) এরপর, তিনি সেই ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেছিলেন, যারা ‘খ্রিস্ট যীশুতে আছে’ আর তারা হল অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা। (পড়ুন, রোমীয় ৮:১, ২.) তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা তাদেরকে তাঁর পুত্র হিসেবে দত্তক নিয়েছেন, তাদেরকে “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন। (রোমীয় ৮:১৪-১৭) ঈশ্বরের আত্মা ও সেইসঙ্গে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি বিশ্বাস, তাদেরকে পৌলের দ্বারা বর্ণিত লড়াইয়ে জয়ী হতে সমর্থ করেছে আর তাই তাদের কোনো “দণ্ডাজ্ঞা নাই।” তারা “পাপের ও মৃত্যুর ব্যবস্থা হইতে” মুক্ত।

৬. কেন ঈশ্বরের সমস্ত দাসেরই পৌলের কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

যদিও পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে মন্তব্য করেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা এবং খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান সম্বন্ধে তিনি যা বলেছিলেন, সেটা যিহোবার সমস্ত দাসের জন্য উপকারজনক হতে পারে, তা তাদের আশা যা-ই হোক না কেন। এ ছাড়া, যদিও পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের এই ধরনের পরামর্শ দিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, তবুও ঈশ্বরের সমস্ত দাসের পক্ষে পৌলের লিখিত বাক্যগুলো বোঝা এবং তা থেকে উপকার লাভ করার প্রচেষ্টা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

যেভাবে ঈশ্বর “মাংসে পাপের দণ্ডাজ্ঞা করিয়াছেন”

৭, ৮. (ক) কোন অর্থে ব্যবস্থা “মাংস দ্বারা দুর্ব্বল” ছিল? (খ) তাঁর আত্মা ও সেইসঙ্গে মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে ঈশ্বর কী সম্পাদন করেছেন?

রোমীয় ৭ অধ্যায়ে, পৌল অসিদ্ধ মাংসের ওপর পাপের ক্ষমতা সম্বন্ধে স্বীকার করেছিলেন। ৮ অধ্যায়ে তিনি পবিত্র আত্মার ক্ষমতা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন। প্রেরিত ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কীভাবে ঈশ্বরের আত্মা খ্রিস্টানদেরকে পাপের ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে, যেন তারা যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে এবং তাঁর অনুমোদন লাভ করতে পারে। পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, ঈশ্বরের আত্মা এবং তাঁর পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে ঈশ্বর এমন কিছু সম্পাদন করেছেন, যা মোশির ব্যবস্থা করতে পারত না।

ব্যবস্থা ও সেইসঙ্গে এর অনেক আজ্ঞা পাপীদেরকে দণ্ডাজ্ঞা প্রদান করত। অধিকন্তু, ইস্রায়েলের মহাযাজকরা, যারা ব্যবস্থার অধীনে সেবা করত, তারা অসিদ্ধ ছিল আর তাই পাপের জন্য উপযুক্ত বলি প্রদান করতে পারত না। এই কারণে, ব্যবস্থা “মাংস দ্বারা দুর্ব্বল” ছিল। কিন্তু, “নিজ পুত্ত্রকে পাপময় মাংসের সাদৃশ্যে . . . পাঠাইয়া দিয়া” এবং তাঁকে মুক্তির মূল্য হিসেবে প্রদান করার মাধ্যমে ঈশ্বর “মাংসে পাপের দণ্ডাজ্ঞা করিয়াছেন” আর এভাবে ‘ব্যবস্থার দুর্ব্বলতাকে’ জয় করেছেন। এর ফলে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ওপর তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে ধার্মিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাদেরকে এই জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, যেন তারা ‘মাংসের বশে নয় কিন্তু আত্মার বশে চলে।’ (পড়ুন, রোমীয় ৮:৩, ৪.) বস্তুতপক্ষে, “জীবন-মুকুট” লাভ করার জন্য তাদেরকে অবশ্যই বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাদের পার্থিব জীবনধারার শেষ পর্যন্ত তা করতে হবে।—প্রকা. ২:১০.

৯. রোমীয় ৮:২ পদে ব্যবহৃত “ব্যবস্থা” শব্দটির অর্থ কী?

“ব্যবস্থা” ছাড়াও, পৌল ‘আত্মার ব্যবস্থা’ এবং “পাপের ও মৃত্যুর ব্যবস্থা” সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন। (রোমীয় ৮:২) এই ব্যবস্থাগুলো কী? এখানে উল্লেখিত “ব্যবস্থা” শব্দটি নির্দিষ্ট নিয়মকানুনকে নির্দেশ করে না, যেমনটা মোশির ব্যবস্থায় ছিল। একটা তথ্যগ্রন্থ বলে: “ব্যবস্থা শব্দটির জন্য এখানে যে-গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির অর্থ হল কোনো একটা কাজের—ভালো অথবা মন্দ কাজের—আভ্যন্তরীণ এক নীতি, যা একটা আইনের সঙ্গে মিল রেখে নিয়মিতভাবে কাজ করে। এ ছাড়া, শব্দটি একজন ব্যক্তির জীবনের মানকেও নির্দেশ করে।”

১০. কীভাবে আমরা পাপ ও মৃত্যুর ব্যবস্থার অধীন?

১০ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) আদমের বংশধর হিসেবে আমরা সবাই পাপ ও মৃত্যুর ব্যবস্থার অধীন। আমাদের পাপপূর্ণ মাংস ক্রমাগত এমন বিষয়গুলো করতে প্ররোচিত করে, যেগুলো ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে আর এর ফল কেবল মৃত্যু। গালাতীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে পৌল এই ধরনের কাজ এবং বৈশিষ্ট্যগুলোকে “মাংসের কার্য্য সকল” বলে অভিহিত করেছেন। এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “যাহারা এই প্রকার আচরণ করে, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (গালা. ৫:১৯-২১) এই ধরনের ব্যক্তিরা সেই ব্যক্তিদের মতোই, যারা মাংসের বশে চলে। (রোমীয় ৮:৪) তাদের ‘কাজের আভ্যন্তরীণ নীতি’ এবং তাদের ‘জীবনের মান’ পুরোপুরি মাংসিক। কিন্তু, যারা বেশ্যাগমন করে, প্রতিমাপূজায় রত হয় এবং কুহক বা প্রেতচর্চা করে অথবা অন্যান্য গুরুতর পাপে জড়িত হয়, কেবল তারাই কি মাংসের বশে চলে? না, কারণ মাংসের কাজের মধ্যে সেই বিষয়গুলোও রয়েছে, যেগুলোকে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিত্বের সামান্য ত্রুটি বলে বিবেচনা করে, যেমন ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা এবং মাৎসর্য বা হিংসা। কে এমনটা বলতে পারে যে, তিনি মাংসের বশে চলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত?

১১, ১২. আমরা যেন পাপ ও মৃত্যুর ব্যবস্থাকে জয় করার ব্যাপারে সাহায্য লাভ করতে পারি, সেটার জন্য যিহোবা কোন ব্যবস্থা করেছেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ উপভোগ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১১ আমরা কতই না আনন্দিত হতে পারি যে, যিহোবা আমাদের জন্য পাপ ও মৃত্যুর ব্যবস্থাকে জয় করা সম্ভবপর করেছেন! যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” ঈশ্বরের প্রেম গ্রহণ করে নেওয়ার এবং যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ওপর বিশ্বাস দেখানোর মাধ্যমে আমরা সেই দণ্ডাজ্ঞা থেকে মুক্ত হতে পারি, যা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপের কারণে পেয়েছি। (যোহন ৩:১৬-১৮) তাই, আমরা হয়তো উচ্চরবে এই কথা বলতে পরিচালিত হই, যেমনটা পৌল বলেছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি।”

১২ আমাদের পরিস্থিতি, কোনো গুরুতর অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করার মতো একই। আমরা যদি পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই সেই বিষয়গুলো করতে হবে, যেগুলো ডাক্তার আমাদেরকে করতে বলেন। যদিও মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলার মাধ্যমে আমরা পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারি কিন্তু তারপরও আমরা অসিদ্ধ এবং পাপী। উত্তম আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য লাভ করার এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ উপভোগ করার সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত। “ব্যবস্থার ধর্ম্মবিধি” পরিপূর্ণ করার পাশাপাশি পৌল আত্মার বশে চলার বিষয়টাও তুলে ধরেছেন।

আত্মার বশে চলুন—কীভাবে?

১৩. আত্মার বশে চলার অর্থ কী?

১৩ আমরা যখন চলতে থাকি, তখন আমরা ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে ও লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাই। তাই, আত্মার বশে চলার জন্য যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক অগ্রগতি বজায় রাখা—আধ্যাত্মিকভাবে একেবারে সিদ্ধ হওয়া নয়। (১ তীম. ৪:১৫) দিন দিন এবং যথাসাধ্যভাবে আমাদেরকে আত্মার পরিচালনা অনুযায়ী চলার অথবা জীবনযাপন করার প্রচেষ্টা করতে হবে। ‘আত্মার বশে চলা’ ঈশ্বরের অনুগ্রহ নিয়ে আসে।—গালা. ৫:১৬.

১৪. ‘যাহারা আত্মার বশে আছে,’ তাদের প্রবণতা কী?

১৪ রোমীয়দের কাছে লেখা তাঁর চিঠিতে পৌল এরপর দু-ধরনের ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বলেন, যারা দু-রকম বিষয়ে ভাবে। (পড়ুন, রোমীয় ৮:৫.) নিঃসন্দেহে, এখানে মাংসিক শব্দটি আক্ষরিক দেহকে বোঝাচ্ছে না। বাইবেলে “মাংসিক” শব্দটি মাঝে মাঝে আমাদের অসিদ্ধ স্বভাবকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এই স্বভাবই মাংস ও মনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে, যে-সম্বন্ধে পৌল আগে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু, তার বিপরীতে যারা ‘মাংসের বশে আছে,’ তারা এমনকী কোনো লড়াইও করে না। ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে কী চান, সেটা বিবেচনা করার এবং তাদেরকে তিনি যে-সাহায্য প্রদান করেছেন, তা গ্রহণ করার পরিবর্তে, তারা “মাংসিক বিষয় ভাবে।” তারা প্রায়ই তাদের মাংসিক এবং পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে থাকে। এর বৈসাদৃশ্যে, যারা ‘আত্মার বশে আছে,’ তারা “আত্মিক বিষয়”—আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা এবং কাজকর্ম সম্বন্ধে—ভাবে।

১৫, ১৬. (ক) কীভাবে কোনো কিছু নিয়ে ভাবা একজন ব্যক্তির মনোভাবকে প্রভাবিত করে থাকে? (খ) বর্তমানে অধিকাংশ লোক যে-সমস্ত বিষয় নিয়ে ভাবে, সেই সম্বন্ধে আমরা কী বলতে পারি?

১৫ পড়ুন, রোমীয় ৮:৬. কোনো কিছু করার জন্য—হোক তা ভালো অথবা মন্দ—একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। যে-লোকেরা ক্রমাগত মাংসিক বিষয় ভাবে, তারা শীঘ্র এমন মনোভাব বা প্রবণতা গড়ে তোলে, যেগুলো পুরোপুরি মাংসিক বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত। তাদের মনোভাব, আগ্রহ এবং অনুরাগ সাধারণত সম্পূর্ণরূপে এই ধরনের বিষয়গুলোর দ্বারা পূর্ণ থাকে।

১৬ বর্তমানে, অধিকাংশ লোক কোন বিষয়গুলোতে আগ্রহী? প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে।” (১ যোহন ২:১৬) এই অভিলাষগুলোর সঙ্গে এই ধরনের বিষয়গুলো যুক্ত, যেমন বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্ক করা, খ্যাতি এবং ধনসম্পদ। বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা, সংবাদপত্র, চলচ্চিত্র, টিভির অনুষ্ঠানমালা এবং ইন্টারনেট এই ধরনের বিষয়বস্তুতে পরিপূর্ণ আর মূলত এই কারণেই অধিকাংশ লোক এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে এবং আসলেই ভাবতে চায়। কিন্তু, “মাংসের ভাব মৃত্যু”—এখন আধ্যাত্মিকভাবে এবং নিকট ভবিষ্যতে দৈহিকভাবে। কেন? “কেননা মাংসের ভাব ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতা, কারণ তাহা ঈশ্বরের ব্যবস্থার বশীভূত হয় না, বাস্তবিক হইতে পারেও না। আর যাহারা মাংসের অধীনে থাকে, তাহারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না।”—রোমীয় ৮:৭, ৮.

১৭, ১৮. কীভাবে আমরা আত্মার ভাব অনুসারে চলতে পারি এবং আমরা যদি এভাবে চলি, তাহলে এর ফল কী হবে?

১৭ অন্যদিকে, “আত্মার ভাব জীবন ও শান্তি”—ভবিষ্যতে অনন্তজীবন এবং সেইসঙ্গে এখন মনের শান্তি ও ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি। কীভাবে আমরা “আত্মার ভাব” অনুসারে চলতে পারি? নিয়মিতভাবে আত্মার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার এবং আমাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক প্রবণতা ও মনোভাব গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা এমন ভাব বজায় রাখি, যা “ঈশ্বরের ব্যবস্থার বশীভূত” এবং তাঁর চিন্তাভাবনার ‘অধীন।’ আমরা যখন কোনো প্রলোভনের মুখোমুখি হই, তখন আমাদের কোন পথে চলতে হবে, সেই সম্বন্ধে আমরা অনিশ্চিত থাকব না। আমরা সঠিক বাছাই করতে পরিচালিত হব আর তা হল আত্মার বশে চলা।

১৮ তাই, আমাদের জন্য আত্মার বিষয় নিয়ে ভাবা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ‘আপন আপন মনের কটি বাঁধিবার,’ আধ্যাত্মিক তালিকাকে ঘিরে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলার, যার মধ্যে প্রার্থনাও রয়েছে, বাইবেল পাঠ ও অধ্যয়ন করার, সভায় উপস্থিতির এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যার মাধ্যমে আমরা তা করে থাকি। (১ পিতর ১:১৩) মাংসিক বিষয়গুলোর দ্বারা নিজেদেরকে বিক্ষিপ্ত হতে না দিয়ে বরং আসুন আমরা আত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবি। এভাবে আমরা আত্মার বশে চলতে পারব। আর তা করা আমাদের জন্য বিভিন্ন আশীর্বাদ নিয়ে আসবে কারণ আত্মার ভাব মানে জীবন ও শান্তি।—গালা. ৬:৭, ৮.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• ‘ব্যবস্থার দুর্ব্বলতা’ বলতে কী বুঝিয়েছিল আর কীভাবে ঈশ্বর সেটাকে জয় করেছেন?

• “মৃত্যুর ব্যবস্থা” বলতে কী বোঝায় আর কীভাবে আমরা সেটা থেকে মুক্ত হতে পারি?

• “আত্মার ভাব” গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি মাংসের বশে চলেন, নাকি আত্মার বশে চলেন?