সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না”

“তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না”

“তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না”

“তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।”—হিতো. ৩:৫.

১, ২. (ক) আমরা কোন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি? (খ) দুর্দশার সঙ্গে মোকাবিলা করার, কোনো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অথবা কোনো প্রলোভন প্রতিরোধ করার সময় কার ওপর আমাদের নির্ভর করা উচিত এবং কেন?

 সিনথিয়ার * কর্মকর্তা ইতিমধ্যেই তার কোম্পানির কিছু অংশ বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং কয়েক জন কর্মচারীকে ছাটাই করেছিলেন। সিনথিয়া এইরকমটা মনে করেছিলেন যে, এরপর তাকেও ছাটাই করা হবে। তিনি যদি তার চাকরি হারান, তাহলে কী করবেন? কীভাবে তিনি তার বিল পরিশোধ করবেন? পামেলা নামে একজন খ্রিস্টান বোন এমন একটা জায়গায় যেতে চান, যেখানে রাজ্যের ঘোষণাকারীদের অনেক প্রয়োজন কিন্তু তার কি যাওয়া উচিত? স্যামুয়েল নামে একজন যুবকের আরেক ধরনের উদ্‌বিগ্নতা রয়েছে। সে একেবারে অল্পবয়সেই পর্নোগ্রাফি দেখার বিপদে জড়িয়ে পড়েছিল। স্যামুয়েলের বয়স এখন ২০-এর কোঠায় আর সে সেই অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার এক তীব্র প্রলোভন অনুভব করছে। কীভাবে সে এই চাপকে প্রতিরোধ করতে পারে?

দুর্দশামূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার অথবা প্রলোভনগুলোর প্রতিরোধ করার সময় আপনি কার ওপর নির্ভর করেন? আপনি কি সম্পূর্ণরূপে নিজের ওপর নির্ভর করেন, নাকি ‘সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ করেন’? (গীত. ৫৫:২২) “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে,” বাইবেল বলে, “তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।” (গীত. ৩৪:১৫) তাই, আমাদের সমস্ত চিত্তে যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করা ও সেইসঙ্গে নিজ বিবেচনায় নির্ভর না করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—হিতো. ৩:৫.

৩. (ক) যিহোবার ওপর নির্ভর করার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) কোন কারণে হয়তো কারো কারো নিজ বিবেচনায় নির্ভর করার প্রবণতা থাকে?

সমস্ত চিত্তে যিহোবার ওপর নির্ভর করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তাঁর মতো করে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করা। তা করার প্রধান উপায় হল, ক্রমাগতভাবে প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হওয়া এবং তাঁর নির্দেশনার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করা। কিন্তু, সম্পূর্ণরূপে যিহোবার ওপর নির্ভর করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, লিন নামে একজন খ্রিস্টান বোন স্বীকার করেন, “যিহোবার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার বিষয়টা শেখার জন্য আমি ক্রমাগতভাবে লড়াই করছি।” কেন? “বাবার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই,” তিনি বলেন, “আর যদিও আমার মা রয়েছে কিন্তু তিনি আমার আবেগগত অথবা শারীরিক বিষয় নিয়ে কখনো চিন্তাই করেননি। তাই, খুব শীঘ্র আমি নিজেই নিজের যত্ন নিতে শিখি।” লিনের এই পটভূমির কারণে তার পক্ষে কারো ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভর করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সাফল্যের কারণেও একজন ব্যক্তি স্বনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেন। নিজের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে একজন প্রাচীন হয়তো, প্রথমে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা না করেই মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের তত্ত্বাবধান করা শুরু করে দিতে পারেন।

৪. এই প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের প্রার্থনা অনুযায়ী জীবনযাপন করার এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করি। তাহলে, কীভাবে আমরা আমাদের চিন্তার বিষয়গুলো তাঁর ওপর অর্পণ করা এবং কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রচেষ্টা করা, এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি? সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, আমাদের কোন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে? আমরা যখন বিভিন্ন প্রলোভন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি, তখন কেন প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ? বিভিন্ন শাস্ত্রীয় উদাহরণ গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব।

দুর্দশার সময়

৫, ৬. হিষ্কিয় সেই সময় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যখন তাকে অশূরের রাজা হুমকি দিয়েছিলেন?

যিহূদার রাজা হিষ্কিয় সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলেন, তাঁহার পশ্চাদ্গমন হইতে ফিরিলেন না, বরং সদাপ্রভু মোশিকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছিলেন, সে সমস্ত পালন করিতেন।” হ্যাঁ, “তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে নির্ভর করিতেন।” (২ রাজা. ১৮:৫, ৬) হিষ্কিয় সেই সময় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যখন অশূরের রাজা সন্‌হেরীব এক বিরাট সৈন্যদলের সঙ্গে রব্‌শাকিসহ তার প্রতিনিধিদেরকে যিরূশালেমে পাঠিয়েছিলেন? শক্তিশালী অশূরীয় সৈন্যদল ইতিমধ্যেই যিহূদার বেশ কয়েকটা দৃঢ় নগর দখল করে নিয়েছিল আর সন্‌হেরীব এরপর যিরূশালেমের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। হিষ্কিয় যিহোবার গৃহে যান এবং এই প্রার্থনা করতে শুরু করেন: “হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, বিনতি করি, তুমি তাহার হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, হে সদাপ্রভু, তুমি কেবল তুমিই ঈশ্বর।”—২ রাজা. ১৯:১৪-১৯.

হিষ্কিয় তাঁর প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন। এমনকী, প্রার্থনা করার জন্য মন্দিরে উঠে যাওয়ার আগে, তিনি লোকেদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা রব্‌শাকির টিটকারির উত্তর না দেয়। এ ছাড়া, হিষ্কিয় ভাববাদী যিশাইয়ের কাছে একদল প্রতিনিধি পাঠিয়ে তার কাছ থেকে উপদেশ চেয়েছিলেন। (২ রাজা. ১৮:৩৬; ১৯:১, ২) হিষ্কিয় সেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন, যেগুলো তিনি উপযুক্তভাবেই নিতে পারতেন। এই সময়টাতে তিনি মিশর অথবা প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে সমর্থন চাওয়ার মাধ্যমে এমন কোনো সমাধান লাভের চেষ্টা করেননি, যা যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নিজ বিবেচনার ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে, হিষ্কিয় যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। যিহোবার দূত সন্‌হেরীবের ১,৮৫,০০০ জন লোককে বধ করার পর, সন্‌হেরীব ‘প্রস্থান করিয়াছিলেন’ এবং নীনবীতে ফিরে গিয়েছিলেন।—২ রাজা. ১৯:৩৫, ৩৬.

৭. হান্না এবং যোনার প্রার্থনা থেকে আমরা কোন সান্ত্বনা লাভ করতে পারি?

ইল্‌কানা নামে একজন লেবীয়ের স্ত্রী হান্নাও সেই সময় যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন, যখন তিনি একজন সন্তান ধারণ করতে না পারার কারণে নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন। (১ শমূ. ১:৯-১১, ১৮) ভাববাদী যোনা এক বৃহৎ মাছের পেট থেকে উদ্ধার লাভ করেছিলেন, যখন তিনি এই প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি সঙ্কট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আর তিনি আমাকে উত্তর দিলেন; আমি পাতালের উদর হইতে আর্ত্তনাদ করিলাম, তুমি আমার রব শ্রবণ করিলে।” (যোনা ২:১, ২, ১০) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, আমাদের পরিস্থিতি যত ভয়াবহই হোক না কেন, আমরা “বিনতি” সহকারে যিহোবাকে ডাকতে পারি!—পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৫:১, ১৬.

৮, ৯. হিষ্কিয়, হান্না এবং যোনার প্রার্থনার মধ্যে কোন চিন্তার বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে আর তা থেকে আমরা কী শিখি?

এ ছাড়া, হিষ্কিয়, হান্না এবং যোনার উদাহরণ আমাদেরকে এই বিষয়েও অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা প্রদান করে যে, প্রচণ্ড চাপের মুখে আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমাদের কী ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এই তিন জনই যখন চরম দুর্দশার মধ্যে ছিলেন, তখন আবেগগতভাবে কষ্ট পেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, তাদের প্রার্থনা দেখায় যে, তারা কেবল নিজেদের বিষয় নিয়ে এবং তাদের সমস্যাগুলো থেকে স্বস্তি পাওয়ার বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন ছিল না। ঈশ্বরের নাম, তাঁর উপাসনা এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করা তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। যিহোবার নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছিল বলে হিষ্কিয় কষ্ট পেয়েছিলেন। হান্না যে-পুত্রের জন্য অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষী ছিলেন, তাকেই শীলোতে অবস্থিত আবাসে সেবা করতে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আর যোনা বলেছিলেন: “আমি যে মানত করিয়াছি, তাহা পূর্ণ করিব।”—যোনা ২:৯.

আমরা যখন কোনো একটা কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার লাভ করার জন্য প্রার্থনা করি, তখন আমাদের মনোভাব পরীক্ষা করে দেখা বিজ্ঞতার কাজ। আমরা কি কেবল সমস্যা থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য চিন্তা করি, নাকি আমরা যিহোবা ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর কথা মনে রাখি? ব্যক্তিগত দুঃখকষ্টের কারণে আমরা সহজেই আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারি যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার ব্যাপারটা ধীরে ধীরে গৌণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে। আমরা যখন সাহায্য চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন আসুন আমরা যিহোবার ওপর, তাঁর নামের পবিত্রীকরণের ওপর এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনের ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি। এইরকমটা করা আমাদেরকে এমনকী সেই সময়ও এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে, যখন আমরা যে-সমাধান লাভ করার আশা করি, সেটা বাস্তবে পরিণত না-ও হয়। আমাদের প্রার্থনার উত্তর হয়তো এও হতে পারে যে, আমাদেরকে ঈশ্বরের সাহায্যে সেই পরিস্থিতি সহ্য করতে হবে।—পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৯; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়

১০, ১১. যিহোশাফট সেই সময় কী করেছিলেন, যখন তিনি তার পক্ষে সামলানো কঠিন এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন?

১০ কীভাবে আপনি জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকেন? এমনটা কি হতে পারে যে, আপনি প্রথমে সিদ্ধান্ত নেন এবং এরপর যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, যেন তিনি আপনার সিদ্ধান্তে আশীর্বাদ করেন? মোয়াবীয় এবং অম্মোনীয়র যৌথবাহিনী যখন যিহূদার রাজা যিহোশাফটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এসেছিল, তখন তিনি কী করেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন। তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবস্থাই যিহূদার ছিল না। যিহোশাফটকে কোন পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল?

১১ “যিহোশাফট ভীত হইয়া সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন,” বাইবেল বলে। তিনি সমস্ত যিহূদাতে উপবাস ঘোষণা করেছিলেন এবং ‘সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবার’ জন্য লোকেদের একত্রিত করেছিলেন। এরপর তিনি যিহূদার ও যিরূশালেমের সমাজের মধ্যে উঠে দাঁড়ান এবং প্রার্থনা করেন। প্রার্থনার একটা অংশে তিনি মিনতি করেছিলেন: “হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি কি উহাদের বিচার করিবে না? আমাদের বিরুদ্ধে ঐ যে বৃহৎ দল আসিতেছে, উহাদের বিরুদ্ধে আমাদের ত নিজের কোন সামর্থ্য নাই; কি করিতে হইবে, তাহাও আমরা জানি না; আমরা কেবল তোমার দিকে চাহিয়া আছি।” সত্য ঈশ্বর যিহোশাফটের প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং অলৌকিকভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেছিলেন। (২ বংশা. ২০:৩-১২, ১৭) বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, বিশেষভাবে আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময়, আমাদের নিজ বিবেচনার ওপর নির্ভর না করে বরং যিহোবার ওপর নির্ভর করা কি উচিত নয়?

১২, ১৩. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে রাজা দায়ূদ কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১২ সেই সময় আমাদের কী করা উচিত, যখন আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যা সমাধান করা—হতে পারে অতীতের অভিজ্ঞতার কারণে আমরা দ্রুত কোনো সমাধান সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারি বলে—কিছুটা সহজ মনে হয়? রাজা দায়ূদের একটা ঘটনা এই ক্ষেত্রে আমাদেরকে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। অমালেকীয়রা যখন সিক্লগ নগরের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন তারা দায়ূদের স্ত্রীদের এবং সন্তানদের ও সেইসঙ্গে তার লোকেদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। দায়ূদ যিহোবাকে জিজ্ঞেস করে বলেছিলেন: “ঐ সৈন্যদলের পশ্চাতে পশ্চাতে গেলে আমি কি তাহাদের নাগাল পাইব?” যিহোবা উত্তর দিয়েছিলেন: “তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া যাও, নিশ্চয়ই তাহাদের নাগাল পাইবে, ও সকলকে উদ্ধার করিবে।” দায়ূদ সেই অনুযায়ী কাজ করেছিলেন এবং “অমালেকীয়েরা যাহা কিছু লইয়া গিয়াছিল, দায়ূদ সে সমস্ত উদ্ধার করিলেন।”—১ শমূ. ৩০:৭-৯, ১৮-২০.

১৩ অমালেকীয়রা আকস্মিকভাবে আক্রমণ করার কিছুদিন পর, পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে এসেছিল। আবারও দায়ূদ যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং এক স্পষ্ট উত্তর লাভ করেছিলেন। ঈশ্বর বলেছিলেন: “যাও, আমি অবশ্য তোমার হস্তে পলেষ্টীয়দিগকে সমর্পণ করিব।” (২ শমূ. ৫:১৮, ১৯) এর অল্পসময় পরই, পলেষ্টীয়রা আবারও দায়ূদের বিরুদ্ধে এসেছিল। তখন তিনি কী করেছিলেন? তিনি এই যুক্তি দেখাতে পারতেন: ‘আমি এর আগে আরও দু-বার একই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছি। আমি ঈশ্বরের শত্রুদের বিরুদ্ধে যাব, যেমনটা আগে গিয়েছিলাম।’ নাকি দায়ূদ যিহোবার নির্দেশনার অন্বেষণ করেছিলেন? দায়ূদ তার অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করেননি। তিনি আবারও যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। আর এর জন্য তিনি নিশ্চয়ই কত আনন্দিতই না হয়েছিলেন! সেই সময় তিনি যে-নির্দেশনা লাভ করেছিলেন, তা আগের চেয়ে ভিন্ন ছিল। (২ শমূ. ৫:২২, ২৩) আমরা যখন একই ধরনের পরিস্থিতি ও সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমরা কেবলমাত্র আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর না করি।—পড়ুন, যিরমিয় ১০:২৩.

১৪. যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ গিবিয়োনীয়দের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

১৪ অসিদ্ধ হওয়ায় আমাদের সকলের—এমনকী অভিজ্ঞ প্রাচীনদেরও—বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নির্দেশনার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করতে ব্যর্থ হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। চতুর গিবিয়োনীয়রা যখন ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং কোনো দূর দেশ থেকে আসার ভান করে মোশির উত্তরসূরী যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের কাছে এসেছিল, তখন যিহোশূয় এবং প্রাচীনবর্গ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। যিহোবার কাছে জিজ্ঞেস না করেই, যিহোশূয় এবং অন্যেরা নিজে নিজে গিবিয়োনীয়দের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেছিল এবং তাদের সঙ্গে একটা নিয়ম বা চুক্তি করেছিল। এমনকী যদিও যিহোবা পরিশেষে এই চুক্তিকে সমর্থন করেছিলেন কিন্তু তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন, যেন তাঁর নির্দেশনা অন্বেষণ করতে ব্যর্থ হওয়ার এই বিবরণটা আমাদের উপকারের জন্য শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়।—যিহো. ৯:৩-৬, ১৪, ১৫.

প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য লড়াই করার সময়

১৫. প্রলোভন প্রতিরোধ করার সময় কেন প্রার্থনা গুরুত্বপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা করুন।

১৫ আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ‘পাপের ব্যবস্থা’ থাকায়, পাপপূর্ণ প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রাণপণ লড়াই করতে হবে। (রোমীয় ৭:২১-২৫) তবে, এটা এমন লড়াই, যেটাতে জয়ী হওয়া যেতে পারে। কীভাবে? যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন যে, পরীক্ষা বা প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য প্রার্থনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, লূক ২২:৪০.) এমনকী ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার পরও যদি অন্যায় আকাঙ্ক্ষা বা চিন্তাভাবনা থেকেই যায়, তাহলে এই পরীক্ষার সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদেরকে “ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা” করে চলতে হবে। আমাদেরকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, “তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না।” (যাকোব ১:৫) যাকোব আরও লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ কি [আধ্যাত্মিকভাবে] রোগগ্রস্ত? সে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা প্রভুর [ঈশ্বরের] নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন। তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে।”—যাকোব ৫:১৪, ১৫.

১৬, ১৭. প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থনা করার সর্বোত্তম সময় কখন?

১৬ প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য প্রার্থনা অপরিহার্য কিন্তু আমাদের একেবারে সঠিক সময়ে প্রার্থনা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে অবগত থাকতে হবে। হিতোপদেশ ৭:৬-২৩ পদে উল্লেখিত একজন যুবকের কথা বিবেচনা করুন। সন্ধ্যার সময় সে সেই রাস্তার দিকে যায়, যেখানে একজন দুশ্চরিত্রের মহিলা বাস করেন বলে সবাই জানে। তার মধুর বাক্যে প্ররোচিত হয়ে এবং ওষ্ঠাধরের চাটুবাদে আকর্ষিত হয়ে সে তার পিছনে পিছনে গিয়েছিল, যেমন গরু হত হতে যায়। কেন সেই যুবক সেখানে গিয়েছিল? যেহেতু সে “বুদ্ধিবিহীন” অর্থাৎ অনভিজ্ঞ ছিল, তাই সে হয়তো মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোর সঙ্গে লড়াই করছিল। (হিতো. ৭:৭) কোন সময় প্রার্থনা করা তার জন্য সবচেয়ে উপকারজনক হতো? অবশ্য, লড়াই চলাকালে প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য যেকোনো সময়ে প্রার্থনা করা তার জন্য মূল্যবান বলে গণ্য হতো। কিন্তু, তার জন্য সেই সময় প্রার্থনা করা সবচেয়ে উত্তম হতো, যখন সেই রাস্তায় যাওয়ার ধারণা প্রথম তার মাথায় এসেছিল।

১৭ বর্তমানে, একজন ব্যক্তি হয়তো পর্নোগ্রাফি দেখার বিষয়টাকে প্রতিরোধ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছেন। কিন্তু, ধরুন তিনি ইন্টারনেটের এমন সাইটগুলোতে যেতেন, যেখানে উত্তেজনাকর ছবি অথবা ভিডিও রয়েছে বলে তিনি জানেন। তার এই পরিস্থিতি কি হিতোপদেশ ৭ অধ্যায়ে উল্লেখিত সেই যুবকের অবস্থার মতো একইরকম হবে না? সেই পথে যাওয়া কতই না বিপদজনক! পর্নোগ্রাফি দেখার প্রলোভনকে প্রতিরোধ করার জন্য একজন ব্যক্তিকে ইন্টারনেটের সেই সাইটগুলোতে যেতে শুরু করার পূর্বে, প্রার্থনায় যিহোবার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

১৮, ১৯. (ক) কেন প্রলোভন প্রতিরোধ করা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারে কিন্তু কীভাবে আপনি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন? (খ) আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?

১৮ প্রলোভন প্রতিরোধ করা অথবা মন্দ অভ্যাসগুলো কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন “মাংস আত্মার বিরুদ্ধে, এবং আত্মা মাংসের বিরুদ্ধে অভিলাষ করে।” তাই, ‘আমরা যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সাধন করি না।’ (গালা. ৫:১৭) এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করার জন্য, যখন মন্দ চিন্তাভাবনা অথবা পরীক্ষা বা প্রলোভন প্রথম মনের মধ্যে আসে, তখন আমাদের ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করতে হবে আর এরপর আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই” এবং যিহোবার সাহায্যে আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি।—১ করি. ১০:১৩.

১৯ আমরা কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ অথবা প্রলোভন প্রতিরোধ করার চেষ্টা, যা-ই করি না কেন, যিহোবা আমাদের এক অপূর্ব দান—প্রার্থনা করার মূল্যবান সুযোগ—প্রদান করেছেন। এর মাধ্যমে আমরা তাঁর ওপর আমাদের নির্ভরতাকে প্রকাশ করি। আমাদের সবসময় ঈশ্বরের কাছে তাঁর পবিত্র আত্মা চাওয়া উচিত, যা আমাদেরকে নির্দেশনা এবং শক্তি প্রদান করবে। (লূক ১১:৯-১৩) আর সর্বোপরি, আসুন আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি, নিজ বিবেচনার ওপর নয়।

[পাদটীকা]

^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যিহোবার ওপর নির্ভর করার ব্যাপারে আপনি হিষ্কিয়, হান্না এবং যোনার কাছ থেকে কী শিখেছেন?

• কীভাবে দায়ূদ এবং যিহোশূয়ের উদাহরণ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার ওপর জোর দেয়?

• বিশেষভাবে কখন প্রলোভন সম্বন্ধে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রলোভন প্রতিরোধ করার সময় কখন প্রার্থনা করা সবচেয়ে উপকারজনক?