সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রথম শতাব্দীতে এবং বর্তমানে ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত

প্রথম শতাব্দীতে এবং বর্তমানে ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত

প্রথম শতাব্দীতে এবং বর্তমানে ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত

“এই সকল কর্ম্ম সেই একমাত্র আত্মা সাধন করেন।”—১ করি. ১২:১১.

১. এই অধ্যয়ন প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করব?

 পঞ্চাশত্তমীর দিন। এই কথাগুলো কতই না রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়! (প্রেরিত ২:১-৪) প্রথম শতাব্দীতে সেই সময়ে পবিত্র আত্মার বর্ষণ, ঈশ্বরের দাসদের সঙ্গে তাঁর আচরণের এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে। আগের প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু উপায় সম্বন্ধে বিবেচনা করেছি, যেগুলোর মাধ্যমে ঈশ্বরের আত্মা প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন কঠিন দায়িত্ব পালন করতে এবং সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে সমর্থ করেছিল। কিন্তু, ঈশ্বরের আত্মা প্রাক্‌খ্রিস্টীয় সময়ে এবং প্রথম শতাব্দীতে যেভাবে কাজ করেছিল, সেটার মধ্যে পার্থক্য কী? আর বর্তমানে কীভাবে খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার কাজ থেকে উপকার লাভ করে? আসুন আমরা তা দেখি।

“দেখুন, আমি ঈশ্বরের দাসী”

২. কীভাবে মরিয়ম পবিত্র আত্মার কাজ দেখেছিলেন?

প্রতিজ্ঞাত পবিত্র আত্মা যখন বর্ষিত হয়েছিল, তখন মরিয়ম যিরূশালেমের সেই বিরাট ওপরের কুঠরিতে উপস্থিত ছিলেন। (প্রেরিত ১:১৩, ১৪) তবে, এই ঘটনা ঘটার তিন দশকেরও বেশি সময় আগে, তিনি যিহোবার আত্মার কাজকে আরও উল্লেখযোগ্য উপায়ে দেখেছিলেন। যিহোবা তাঁর পুত্রের জীবনকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে স্থানান্তরিত করেছিলেন আর তা তিনি মরিয়মের গর্ভসঞ্চারণ করার মাধ্যমে করেছিলেন, যিনি তখনও একজন কুমারী ছিলেন। তার প্রতি যা ঘটেছিল, তা “পবিত্র আত্মা হইতে” হয়েছিল।—মথি ১:২০.

৩, ৪. মরিয়ম কোন মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন আর কীভাবে আমরা তাকে অনুকরণ করতে পারি?

কেন মরিয়মকে সেই অতুলনীয় বিশেষ সুযোগ প্রদান করা হয়েছিল? স্বর্গদূত তার প্রতি ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার পর, মরিয়ম বিস্ময়ে বলে উঠেছিলেন: “দেখুন, আমি প্রভুর [ঈশ্বরের] দাসী; আপনার বাক্যানুসারে আমার প্রতি ঘটুক।” (লূক ১:৩৮) এই বিষয় সম্বন্ধে এভাবে বলার মাধ্যমে মরিয়ম এমন মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন, যা ঈশ্বর ইতিমধ্যেই লক্ষ করেছিলেন। তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তিনি এই বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রস্তুত আছেন। সমাজের লোকেরা তার গর্ভাবস্থাকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে অথবা যার সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা কোন সম্ভাব্য প্রভাব ফেলতে পারে, সেই সম্বন্ধে তিনি কোনো প্রশ্ন তোলেননি। নিজেকে একজন হীন দাসী হিসেবে উল্লেখ করে মরিয়ম দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তার প্রভু হিসেবে যিহোবার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করেন।

মাঝে মাঝে আপনি কি ঈশ্বরের সেবায় বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দায়িত্বের কারণে কিছুটা ভারগ্রস্ত বোধ করেছেন? আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার সময় সম্পূর্ণরূপে তাঁর ওপর নির্ভর করি? আমি কি সত্যিই এক ইচ্ছুক মনোভাব প্রদর্শন করি?’ এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে, ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদেরকে তাঁর আত্মা দান করেন, যারা সমস্ত হৃদয়ে তাঁর ওপর নির্ভর করে এবং তাঁর সার্বভৌম ইচ্ছা সম্বন্ধে স্বীকার করে।—প্রেরিত ৫:৩২.

পিতর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করেছিলেন

৫. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের আগে, পিতর কোন কোন উপায়ে পবিত্র আত্মাকে কার্যরত দেখেছিলেন?

মরিয়মের মতো, প্রেরিত পিতরও সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের আগে ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার জোরালো কাজ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। যিশু তাকে ও অন্যান্য প্রেরিতকে ভূত ছাড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (মার্ক ৩:১৪-১৬) আর যদিও শাস্ত্র অনেক বিস্তারিত বিষয় সম্বন্ধে জানায় না, কিন্তু খুব সম্ভবত পিতর সেই ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন বলে মনে হয়। ঈশ্বরের আত্মা সেই সময়ও প্রকাশ পেয়েছিল, যখন যিশু পিতরকে গালীল সমুদ্রের ওপর দিয়ে হেঁটে তাঁর কাছে আসতে বলেছিলেন আর পিতর তা-ই করেছিলেন। (পড়ুন, মথি ১৪:২৫-২৯.) স্পষ্টতই, পিতর বিভিন্ন পরাক্রমী কাজ করার ব্যাপারে সাহায্য লাভের জন্য পবিত্র আত্মার ওপর নির্ভর করেছিলেন। শীঘ্র, সেই আত্মা পিতর এবং তার সহশিষ্যদের ওপরে নতুন নতুন উপায়ে কাজ করেছিল।

৬. ঈশ্বরের আত্মার মাধ্যমে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে এবং পরে পিতর কী করতে পেরেছিলেন?

সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে উৎসবের সময়ে, পিতর এবং অন্যদেরকে সেইসমস্ত ভাষায় কথা বলার অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল, যে-ভাষাগুলোতে যিরূশালেমে কয়েক দিনের জন্য আগত লোকেরা কথা বলত। এরপর, সমবেত লোকেদের উদ্দেশে কথা বলার জন্য পিতর নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:১৪-৩৬) হ্যাঁ, এই ব্যক্তিই, যিনি মাঝেমধ্যে কোনো কিছু না ভেবেই কথা বলেছিলেন এবং ভয়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন, তিনিই হুমকি ও তাড়না সত্ত্বেও নির্ভীকভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সাহসী হয়ে উঠেছিলেন। (প্রেরিত ৪:১৮-২০, ৩১) ঐশিক প্রকাশের মাধ্যমে তিনি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। (প্রেরিত ৫:৮, ৯) আর এমনকী তাকে পুনরুত্থিত করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল।—প্রেরিত ৯:৪০.

৭. কেবল অভিষিক্ত হওয়ার পরই, পিতরের কাছে যিশুর কোন শিক্ষাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল?

এমনকী পঞ্চাশত্তমীর দিনের আগে, পিতর এমন অনেক সত্যের অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন, যেগুলো সম্বন্ধে যিশু শিক্ষা দিয়েছিলেন। (মথি ১৬:১৬, ১৭; যোহন ৬:৬৮) কিন্তু, যিশুর শিক্ষার এমন কিছু দিকও ছিল, যেগুলো পঞ্চাশত্তমীর দিনের আগে তার কাছে অস্পষ্ট ছিল। উদাহরণস্বরূপ, পিতর বুঝতে পারেননি যে, তৃতীয় দিনে খ্রিস্ট একজন আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে পুনরুত্থিত হবেন; কিংবা পিতর এই বিষয়টাও উপলব্ধি করতে পারেননি যে, রাজ্য স্বর্গে স্থাপিত হবে। (যোহন ২০:৬-১০; প্রেরিত ১:৬) মানুষ যে আত্মিক প্রাণী হয়ে স্বর্গীয় রাজ্যে শাসন করবে, সেই ধারণা পিতরের কাছে নতুন ছিল। কিন্তু, একবার পবিত্র আত্মার মাধ্যমে বাপ্তাইজিত হওয়ার এবং তাকে স্বর্গীয় আশা প্রদান করার পরই তিনি এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে যিশুর শিক্ষার অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন।

৮. অভিষিক্ত ব্যক্তি এবং ‘আরও মেষের’ লোকেদের কাছে কোন জ্ঞান প্রাপ্তিসাধ্য হয়েছে?

যিশুর শিষ্যদের কাছে আগে যে-অন্তর্দৃষ্টিগুলো বোধের অগম্য ছিল, সেগুলো পবিত্র আত্মার বর্ষণের পর সহজেই বোঝা গিয়েছিল। অনুপ্রাণিত হয়ে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর লেখকরা যিহোবার উদ্দেশ্যের বিস্ময়কর দিকগুলো তুলে ধরেছিল আর তা আমাদের উপকারের জন্য। (ইফি. ৩:৮-১১, ১৮) বর্তমানে, আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং ‘আরও মেষের’ লোকেরা একত্রে আধ্যাত্মিক পুষ্টি লাভ করে এবং এই একই সত্যগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করে। (যোহন ১০:১৬) আপনি কি ঈশ্বরের বাক্যের সেই জ্ঞান এবং বোধগম্যতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, যা পবিত্র আত্মা এভাবে আপনার কাছে প্রাপ্তিসাধ্য করেছে?

পৌল “পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” হয়েছিলেন

৯. পবিত্র আত্মার মাধ্যমে পৌল কী সম্পাদন করতে সমর্থ হয়েছিলেন?

সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের এক বছর বা তারও বেশি সময় পর, আরও একজন ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দান লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন শৌল, যিনি পরে পৌল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। আত্মা তার ওপর এমন সব উপায়ে কাজ করেছিল, যা বর্তমানে আমাদের জন্য উপকারজনক। প্রেরিত পৌল বাইবেলের ১৪টি বই লেখার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আর পিতরের মতো পৌলকেও ঈশ্বরের আত্মা স্বর্গে অমরত্ব এবং অক্ষয় জীবনের আশা সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বুঝতে এবং লিখতে সমর্থ করেছিল। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে পৌল আরোগ্য করেছিলেন, ভূত ছাড়িয়েছিলেন এবং এমনকী মৃত ব্যক্তিকে পুনরুত্থিতও করেছিলেন! কিন্তু, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষমতার আরও গুরুত্বপূর্ণ এক উদ্দেশ্য ছিল আর এটা এমন এক ক্ষমতা, যে-সম্বন্ধে বর্তমানে ঈশ্বরের সমস্ত দাস অলৌকিকভাবে না হলেও অভিজ্ঞতা লাভ করে।

১০. কীভাবে পবিত্র আত্মা পৌলকে কথা বলতে সাহায্য করেছিল?

১০ পৌল, যিনি “পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” হয়েছিলেন, তিনি নির্ভীকভাবে একজন মায়াবীর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। কুপ্রের প্রধান অধ্যক্ষের ওপর সেটা কত প্রভাবই না ফেলেছিল, যিনি সমস্ত কথাবার্তা শুনছিলেন! সেই দেশাধ্যক্ষ “প্রভুর [ঈশ্বরের] উপদেশে চমৎকৃত হইয়া” সত্য গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৮-১২) স্পষ্টতই, যখন সত্য সম্বন্ধে কথা বলার বিষয়টা আসত, তখন পৌল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার গুরুত্ব সম্বন্ধে খুব ভালোভাবেই জানতেন। (মথি ১০:২০) এর পরে, তিনি ইফিষের মণ্ডলীকে এই বিষয়ে বিনতি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, যেন তাকে “উপযুক্ত বক্তৃতা” বা কথা বলার ক্ষমতা দেওয়া হয়।—ইফি. ৬:১৮-২০.

১১. কীভাবে পৌল ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন?

১১ পবিত্র আত্মা কেবল পৌলকে কথা বলতে সমর্থই করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে তাকে কিছু কিছু এলাকায় কথা বলার বিষয়ে বাধাও দিয়েছিল। তিনি যখন তার মিশনারি যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন পৌল ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:২; পড়ুন, প্রেরিত ১৬:৬-১০.) যিহোবা এখনও তাঁর আত্মার মাধ্যমে প্রচার কাজে পরিচালনা দেন। পৌলের মতো, যিহোবার সমস্ত বিশ্বস্ত দাস নির্ভীকভাবে এবং উদ্যোগের সঙ্গে সত্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। যদিও বর্তমানে ঈশ্বরের নির্দেশনা পৌলের সময়ের মতো এত স্পষ্ট নয়, তবুও আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করছেন, যেন যোগ্য ব্যক্তিরা সত্য সম্বন্ধে শুনতে পায়।—যোহন ৬:৪৪.

“ক্রিয়াসাধক গুণ নানা প্রকার”

১২-১৪. ঈশ্বরের আত্মা কি তাঁর সকল দাসের ওপর একই উপায়ে কাজ করে? ব্যাখ্যা করুন।

১২ প্রথম শতাব্দীর অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ওপর যিহোবার আশীর্বাদের বিবরণ কি বর্তমানে ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাসদের জন্য যথেষ্ট উৎসাহ জোগায়? নিঃসন্দেহে! তার দিনের আত্মার অলৌকিক বর বা দানের বিষয়ে করিন্থের মণ্ডলীর প্রতি বলা পৌলের এই অনুপ্রাণিত কথাগুলো মনে রাখুন: “অনুগ্রহ-দান নানা প্রকার, কিন্তু আত্মা এক; এবং পরিচর্য্যা নানা প্রকার, কিন্তু প্রভু এক; এবং ক্রিয়াসাধক গুণ নানা প্রকার, কিন্তু ঈশ্বর এক; তিনি সকলেতে সকল ক্রিয়ার সাধনকর্ত্তা।” (১ করি. ১২:৪-৬, ১১) হ্যাঁ, পবিত্র আত্মা একটা উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের বিভিন্ন দাসের ওপর ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে কাজ করতে পারে। বস্তুতপক্ষে, পবিত্র আত্মা খ্রিস্টের “ক্ষুদ্র মেষপাল” এবং তাঁর “আরও মেষ,” উভয়ের জন্যই প্রাপ্তিসাধ্য। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১৬) তবে, এটা মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্যের ওপর সবসময় একই উপায়ে কাজ করে না।

১৩ উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীনরা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত। (প্রেরিত ২০:২৮) কিন্তু, আত্মায় অভিষিক্ত সমস্ত ব্যক্তি মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করে না। এটা থেকে আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি? সহজভাবে বললে, ঈশ্বরের আত্মা মণ্ডলীর সদস্যদের ওপর বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে।

১৪ “দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা” অর্থাৎ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ওপর যে-আত্মা প্রদান করা হয়, সেই একই আত্মা, যেটার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর একজাত পুত্রকে মৃত্যু থেকে স্বর্গে অমর জীবন লাভ করার জন্য উত্থিত করেছেন। (পড়ুন, রোমীয় ৮:১১, ১৫.) এটা সেই একই আত্মা, যেটার মাধ্যমে যিহোবা সমস্ত নিখিলবিশ্ব অস্তিত্বে নিয়ে এসেছিলেন। (আদি. ১:১-৩) সেই একই আত্মার মাধ্যমে যিহোবা বৎসলেলকে আবাসের বিশেষ কাজের জন্য যোগ্য করে তুলেছিলেন, শিম্‌শোনকে এমন কাজগুলো করার জন্য ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন, যেটার জন্য তার উল্লেখযোগ্য শক্তির প্রয়োজন হয়েছিল এবং পিতরকে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে সমর্থ করেছিলেন। তাই, আসুন আমরা ঈশ্বরের আত্মা লাভ করার সঙ্গে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হওয়াকে মিলিয়ে না ফেলি কারণ ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হওয়ার বিষয়টা কেবল আত্মার এক বিশেষ কাজ। আত্মায় অভিষিক্ত হওয়া ঈশ্বরের বাছাইয়ের ওপর নির্ভর করে।

১৫. পবিত্র আত্মা দ্বারা বাপ্তাইজিত হওয়ার বিষয়টা কি অনন্তকাল ধরে চলবে? ব্যাখ্যা করুন।

১৫ যতদিন পর্যন্ত তাঁর বিশ্বস্ত দাসেরা রয়েছে, ততদিন পর্যন্ত ঈশ্বরের পবিত্র সক্রিয় শক্তি তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের ওপরে বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে চলেছে আর তা আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হওয়ার বিষয়টা শুরু হওয়ার আরও হাজার হাজার বছর আগে থেকেই। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে সেই নতুন কাজ শুরু হয় কিন্তু এটা চিরকাল ধরে চলতে থাকবে না। পবিত্র আত্মার দ্বারা বাপ্তাইজিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের লোকেদের ওপর ক্রমাগত কাজ করে যাবে, যেন তারা অনন্তকালের জন্য তাঁর ইচ্ছা পালন করতে পারে।

১৬. ঈশ্বরের দাসেরা তাঁর আত্মার সাহায্যে এখন কী করছে?

১৬ যিহোবার পবিত্র আত্মার মাধ্যমে পৃথিবীতে এখন নির্দিষ্টভাবে কী ঘটছে? প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭ পদ উত্তর দেয়: “আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, আইস। যে শুনে, সেও বলুক, আইস। আর যে পিপাসিত, সে আইসুক; যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক।” ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে বর্তমানে খ্রিস্টানরা, “ইচ্ছা করে” এমন যে-কাউকে জীবন-জল গ্রহণ করার জন্য জীবনদানকারী আমন্ত্রণ জানায়। অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এটা করায় নেতৃত্ব নিচ্ছে। তবে, আরও মেষও এই আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে যোগ দেয়। উভয় শ্রেণীর লোকেরাই এই কাজ সম্পাদন করার ক্ষেত্রে একই পবিত্র আত্মার সঙ্গে সহযোগিতা করে। উভয় শ্রেণীর লোকেরাই যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে “পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হয়েছে। (মথি ২৮:১৯) আর তারা সকলেই তাদের জীবনে ঈশ্বরের আত্মাকে কাজ করতে দেয় আর এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে আত্মার ফল উৎপন্ন করার জন্য এটাকে সুযোগ দেয়। (গালা. ৫:২২, ২৩) অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মতো আরও মেষও নিজেদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের আত্মাকে সুযোগ দেয়। পবিত্র আত্মার সাহায্যে, তারা পবিত্রতার বিষয়ে যিহোবা যা চান, তা করার জন্য তাদের যথাসাধ্য করে থাকে।—২ করি. ৭:১; প্রকা. ৭:৯, ১৪.

পবিত্র আত্মার জন্য যাচ্ঞা করে চলুন

১৭. কীভাবে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে, আমাদের ঈশ্বরের আত্মা রয়েছে?

১৭ তাই, আপনার ঈশ্বরদত্ত আশা স্বর্গে বা পৃথিবীতে অনন্তজীবন, যা-ই হোক না কেন, যিহোবা আপনাকে “পরাক্রমের উৎকর্ষ [“অসাধারণ মহাশক্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” দিতে পারেন, যাতে আপনি আপনার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে এবং আপনার পুরস্কার লাভ করতে পারেন। (২ করি. ৪:৭) আপনি যদি ক্রমাগত রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলেন, তাহলে উপহাসের মুখোমুখি হতে পারেন। কিন্তু, মনে রাখবেন যে, ‘আপনি যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হন, তবে আপনি ধন্য; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা আপনার উপরে অবস্থিতি করিতেছেন।’—১ পিতর ৪:১৪.

১৮, ১৯. যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আপনাকে কীভাবে সাহায্য করবেন আর এই ক্ষেত্রে আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?

১৮ পবিত্র আত্মা হচ্ছে সেই ব্যক্তিদের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে বিনামূল্যে এক উপহার, যারা আন্তরিকভাবে এর অন্বেষণ করে। এটা কেবল আপনার ক্ষমতাকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর সেবায় আপনার সর্বোত্তমটা করার ব্যাপারে আপনার আকাঙ্ক্ষাকেও বৃদ্ধি করতে পারে। “ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী।” পবিত্র আত্মার মতো এই অমূল্য দান ও সেইসঙ্গে “জীবনের বাক্য ধরিয়া” রাখার ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা “সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন” করার সুযোগ করে দেয়।—ফিলি. ২:১২, ১৩, ১৬.

১৯ তাহলে, ঈশ্বরের আত্মার ওপর পুরোপুরি আস্থা সহকারে হৃদয় দিয়ে সমস্ত কাজ করুন, আপনাকে যে-কাজ দেওয়া হয়েছে, সেটাতে দক্ষ হয়ে উঠুন এবং সাহায্যের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করুন। (যাকোব ১:৫) তাঁর বাক্য বোঝার, জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং সুসমাচার প্রচার করার জন্য আপনার যা প্রয়োজন, তিনি আপনাকে তা দান করবেন। “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে” আর এর অন্তর্ভুক্ত পবিত্র আত্মা লাভ করা। (লূক ১১:৯, ১৩) তাই, যিহোবার কাছে বিনতি করে চলুন, যেন আপনি সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের—প্রাচীন ও আধুনিক কালের উভয় ব্যক্তিদের—ন্যায় হতে পারেন, যারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• মরিয়মের মতো আমরা কোন মনোভাব প্রদর্শন করতে পারি, যা আমাদের জন্য বিভিন্ন আশীর্বাদ নিয়ে আসবে?

• কোন অর্থে পৌল ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন?

• কীভাবে ঈশ্বরের দাসেরা বর্তমানে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের আত্মা পৌলকে মন্দ আত্মার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বর্তমানে, পবিত্র আত্মা খ্রিস্টানদের সাহায্য করার জন্য প্রাপ্তিসাধ্য, তা তাদের আশা যা-ই হোক না কেন