সমগ্র মানবজাতির উপকারের জন্য এক রাজকীয় যাজকবর্গ
সমগ্র মানবজাতির উপকারের জন্য এক রাজকীয় যাজকবর্গ
“তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ।’”—১ পিতর ২:৯.
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
প্রথম কখন এক রাজকীয় যাজকবর্গ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল?
কীভাবে নতুন চুক্তি রাজকীয় যাজকবর্গ গঠন করেছিল?
রাজকীয় যাজকবর্গ মানবজাতির জন্য কোন উপকারগুলো নিয়ে আসবে?
১. কেন ‘প্রভুর সান্ধ্যভোজকে’ স্মরণার্থ দিবস বলেও অভিহিত করা হয় আর এর উদ্দেশ্য কী?
তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নিশান সন্ধ্যায়, যিশু ও তাঁর ১২ জন প্রেরিত শেষ বারের মতো যিহুদি নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করে। বিশ্বাসঘাতক যিহূদাকে বের করে দেওয়ার পর, যিশু এক ভিন্ন ধরনের উদ্যাপনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যেটাকে পরে “প্রভুর সান্ধ্যভোজ” বলে অভিহিত করা হয়। (১ করি. ১১:২০, NW) যিশু দু-বার বলেছিলেন যে, “আমার স্মরণার্থে ইহা করিও।” এই ঘটনাটা স্মরণার্থ দিবস, খ্রিস্টের স্মরণার্থ দিবস হিসেবেও পরিচিত, যা তাঁর মৃত্যুর ওপর জোর দেয়। (১ করি. ১১:২৪, ২৫) এই আদেশের বাধ্য হয়ে বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিরা প্রতি বছর স্মরণার্থ সভা উদ্যাপন করে থাকে। ২০১২ সালে, বাইবেল ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ই নিশান, ৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর শুরু হবে।
২. যিশু যে-প্রতীকগুলো ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলো সম্বন্ধে তিনি কী বলেছিলেন?
২ শিষ্য লূক, সেই সময়ে যিশু যা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, তা দুটো পদে সারাংশ করেন: “তিনি রুটী লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং তাঁহাদিগকে দিলেন, বলিলেন, ইহা আমার শরীর, যাহা তোমাদের নিমিত্ত দেওয়া যায়, ইহা আমার স্মরণার্থে করিও। আর সেইরূপে তিনি ভোজন শেষ হইলে পানপাত্রটী লইয়া কহিলেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়।” (লূক ২২:১৯, ২০) এই কথাগুলোকে প্রেরিতরা কীভাবে বুঝতে পেরেছিল?
৩. প্রেরিতরা প্রতীকগুলোর অর্থ কীভাবে বুঝেছিল?
৩ যিহুদি হিসেবে প্রেরিতরা পশু বলির সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত ছিল, যা যাজকরা যিরূশালেম মন্দিরে ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করত। এই ধরনের বলিগুলো যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য উৎসর্গ করা হতো, আবার অনেক বলি পাপের ক্ষমা লাভের জন্য উৎসর্গ করা হতো। (লেবীয়. ১:৪; ২২:১৭-২৯) তাই, যিশু যখন বলেছিলেন যে, তাঁর দেহ ও রক্ত ‘তাহাদের নিমিত্ত দেওয়া এবং পাতিত করা’ যাবে, তখন তিনি যে নিজ সিদ্ধ জীবনকে বলি হিসেবে উৎসর্গ করতে যাওয়ার বিষয়টা বুঝিয়েছিলেন, তা প্রেরিতরা বুঝতে পেরেছিল। এটা এমন এক বলি হয়ে উঠবে, যা পশু বলির চেয়ে আরও অনেক বেশি মূল্যবান।
৪. যিশু সেই সময় কী বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম”?
৪ যিশুর এই কথাগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায় যে, “এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম”? প্রেরিতরা যিরমিয় ৩১:৩১-৩৩ পদে লিপিবদ্ধ নতুন নিয়ম বা চুক্তি সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে জানত। (পড়ুন।) যিশুর কথাগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তখন তিনি এমন এক নতুন চুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন, যা সেই ব্যবস্থা চুক্তির পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে, যে-ব্যবস্থা চুক্তি যিহোবা মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলের সঙ্গে প্রবর্তন করেছিলেন। এই দুটো চুক্তি কি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ছিল?
৫. ব্যবস্থা চুক্তি ইস্রায়েলকে কোন প্রত্যাশাগুলো প্রদান করেছিল?
৫ হ্যাঁ, সেগুলোর উদ্দেশ্য পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ব্যবস্থা চুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় যিহোবা সেই জাতিকে বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রা. ১৯:৫, ৬) ইস্রায়েলীয়দের কাছে এই কথাগুলোর অর্থ কী ছিল?
এক রাজকীয় যাজকবর্গ সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞা
৬. ব্যবস্থা চুক্তি কোন প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছিল?
৬ ইস্রায়েলীয়রা “নিয়ম” বা চুক্তি শব্দটি বুঝতে পারত কারণ যিহোবা তাদের পূর্বপুরুষ নোহ ও অব্রাহামের সঙ্গে এই ধরনের গুরুগম্ভীর চুক্তি করেছিলেন। (আদি. ৬:১৮; ৯:৮-১৭; ১৫:১৮; ১৭:১-৯) অব্রাহামের সঙ্গে তাঁর চুক্তির অংশ হিসেবে যিহোবা এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদি. ২২:১৮) এই প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য যিহোবা ব্যবস্থা চুক্তি করেছিলেন। এর ওপর ভিত্তি করে ইস্রায়েল “সকল জাতি অপেক্ষা” যিহোবার “নিজস্ব অধিকার” হতে পারত। কোন উদ্দেশ্যে? ‘সদাপ্রভুর নিমিত্তে যাজকদের এক রাজ্য হইবার’ উদ্দেশ্যে।
৭. “যাজকদের এক রাজ্য” অভিব্যক্তিটির অর্থ কী ছিল?
৭ ইস্রায়েলীয়রা রাজা এবং যাজকদের বিষয়ে জানতেন কিন্তু অতীতে মল্কীষেদকই একমাত্র ব্যক্তি যিনি যিহোবার অনুমোদন অনুযায়ী একইসঙ্গে রাজা ও যাজক ছিলেন। (আদি. ১৪:১৮) যিহোবা সেই সময় ওই জাতিকে “যাজকদের এক রাজ্য” গঠন করার সুযোগ দিয়েছিলেন। অনুপ্রাণিত লেখাগুলো যেমন পরবর্তী সময়ে নির্দেশ করে যে, এর অর্থ ছিল এক রাজকীয় যাজকবর্গ অর্থাৎ রাজাদের উৎপন্ন করা, যারা যাজকও হয়ে উঠবে।—১ পিতর ২:৯.
৮. ঐশিকভাবে নিযুক্ত যাজকরা কোন সেবা প্রদান করে?
৮ একজন রাজা অবশ্যই শাসন করেন। কিন্তু, একজন যাজক কী করেন? ইব্রীয় ৫:১ পদ ব্যাখ্যা করে: “প্রত্যেক মহাযাজক মনুষ্যদের মধ্য হইতে গৃহীত হইয়া মনুষ্যদের পক্ষে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কার্য্যে নিযুক্ত হন, যেন তিনি পাপার্থক উপহার ও বলি উৎসর্গ করেন।” তাই, যিহোবার দ্বারা নিযুক্ত একজন যাজক উল্লেখিত বলিগুলোর মাধ্যমে ঈশ্বরের সামনে পাপী মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের হয়ে তাঁর কাছে মিনতি করেন। অন্যদিকে, একজন যাজক লোকেদের সামনে যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদেরকে ঐশিক আইন সম্বন্ধে শিক্ষা দেন। (লেবীয়. ১০:৮-১১; মালাখি ২:৭) এই উপায়গুলোর মাধ্যমে ঐশিকভাবে নিযুক্ত একজন যাজক লোকেদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত করার জন্য কাজ করেন।
৯. (ক) কোন শর্তে ইস্রায়েল “যাজকদের এক রাজ্য” গঠন করার প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারত? (খ) কেন যিহোবা ইস্রায়েলের মধ্যেই এক যাজকবর্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? (গ) ব্যবস্থা চুক্তির অধীনে কোন বিষয়টা ইস্রায়েলকে “যাজকদের এক রাজ্য” উৎপন্ন করতে বাধা দিয়েছিল?
৯ এভাবে, ব্যবস্থা চুক্তি ইস্রায়েলকে ‘সকল জাতির’ উপকারার্থে এক রাজকীয় যাজকবর্গ গঠন করার সুযোগ দিয়েছিল। তবে, এই অসাধারণ প্রত্যাশার সঙ্গে এই শর্ত ছিল: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর।” ইস্রায়েলীয়রা কি ‘সদাপ্রভুর রবে অবধান করিতে’ পারত? হ্যাঁ, কিছুটা হলেও পারত। তারা কি সেগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করতে পারত? না। (রোমীয় ৩:১৯, ২০) এই কারণেই, যিহোবা সেই সময় ইস্রায়েলের মধ্যেই যেকোনো রাজপদ থেকে পৃথক এক যাজকবর্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেন ইস্রায়েলীয়রা যে-পাপগুলো করে ফেলত, সেগুলোর জন্য তারা পশুবলি উৎসর্গ করতে পারে। (লেবীয়. ৪:১–৬:৭) এই পাপগুলোর সঙ্গে যাজকদের নিজেদের পাপও অন্তর্ভুক্ত ছিল। (ইব্রীয় ৫:১-৩; ৮:৩) যিহোবা এই বলিগুলো গ্রহণ করতেন, কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গকারীদের পাপের ক্ষতি পূরণ করতে পারত না। ব্যবস্থার অধীনস্থ যাজকবর্গ এমনকী আন্তরিক ইস্রায়েলীয়দেরকেও সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত করতে পারত না। প্রেরিত পৌল এটাকে এভাবে বলেছেন: “বৃষের কি ছাগের রক্ত যে পাপ হরণ করিবে, ইহা হইতেই পারে না।” (ইব্রীয় ১০:১-৪) ব্যবস্থা লঙ্ঘন করার কারণে ইস্রায়েলীয়রা প্রকৃতপক্ষে শাপগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। (গালা. ৩:১০) এইরকম এক অবস্থায় তারা এক রাজকীয় যাজকবর্গ হিসেবে কখনোই জগতের লোকেদের সেবা করতে পারত না।
১০. ব্যবস্থা চুক্তি কোন উদ্দেশ্য সম্পাদন করেছিল?
১০ তাহলে, তারা যে “যাজকদের এক রাজ্য” উৎপন্ন করতে পারবে, সেই সম্বন্ধে যিহোবার প্রতিজ্ঞা কি এক অর্থহীন প্রতিজ্ঞা ছিল? মোটেও না। তারা যদি আন্তরিকভাবে বাধ্য হওয়ার চেষ্টা করত, তাহলে তারা এই সুযোগটা লাভ করতে পারত কিন্তু ব্যবস্থার অধীনে থেকে নয়। কেন? (পড়ুন, গালাতীয় ৩:১৯-২৫.) এটা বোঝার জন্য আমাদেরকে ব্যবস্থা চুক্তির উদ্দেশ্য কী ছিল, সেটা জানতে হবে। ব্যবস্থা বাধ্য ইস্রায়েলীয়দেরকে মিথ্যা উপাসনা থেকে সুরক্ষা প্রদান করত। এটা তাদের এও বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, তারা পাপী এবং মহাযাজক তাদের জন্য যে-বলি উৎসর্গ করতেন, সেটার চেয়ে আরও মহৎ বলির প্রয়োজন রয়েছে। এটা ছিল পরিচালক দাস, যা তাদেরকে খ্রিস্ট অথবা মশীহের কাছে নিয়ে এসেছিল, যে-উপাধির অর্থ হল “অভিষিক্ত ব্যক্তি।” কিন্তু, যখন মশীহ এসেছিলেন, তখন তিনি নতুন চুক্তি প্রবর্তন করেন, যে-সম্বন্ধে যিরমিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যারা খ্রিস্টকে গ্রহণ করে নিয়েছিল, তাদেরকে নতুন চুক্তির অংশী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আর তারা আসলেই “যাজকদের এক রাজ্য” হয়ে উঠেছিল। আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে।
নতুন চুক্তি এক রাজকীয় যাজকবর্গ গঠন করে
১১. কীভাবে যিশু এক রাজকীয় যাজকবর্গের ভিত্তি হয়ে উঠেছিলেন?
১১ উনত্রিশ খ্রিস্টাব্দে নাসরতের যিশু মশীহ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রায় ৩০ বছর বয়সে তিনি তাঁর ক্ষেত্রে যিহোবার যে-বিশেষ ইচ্ছা রয়েছে, সেটা পালন করার জন্য নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন আর সেটার প্রতীক স্বরূপ জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। যিহোবা তাঁকে “আমার প্রিয় পুত্ত্র” হিসেবে স্বীকার করেছিলেন, তাঁকে অভিষিক্ত করেছিলেন, তবে তেল দ্বারা নয় বরং পবিত্র আত্মা দ্বারা। (মথি ৩:১৩-১৭; প্রেরিত ১০:৩৮) সেই অভিষেক তাঁকে সমগ্র মানব পরিবারের বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মহাযাজক হিসেবে এবং তাদের ভাবী রাজা হিসেবে কার্যভার প্রদান করেছিল। (ইব্রীয় ১:৮, ৯; ৫:৫, ৬) তিনি এক প্রকৃত রাজকীয় যাজকবর্গের ভিত্তি হয়ে উঠেছিলেন।
১২. যিশুর বলিদান কী সম্ভবপর করেছিল?
১২ মহাযাজক হিসেবে যিশু এমন কোন বলি উৎসর্গ করতে পারতেন, যা বিশ্বাসী ব্যক্তিদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ পুরোপুরিভাবে ঢেকে দেবে? তিনি যখন তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবস প্রবর্তন করেছিলেন, তখন তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর নিজের সিদ্ধ মানবজীবনই ছিল সেই বলি। (পড়ুন, ইব্রীয় ৯:১১, ১২.) ২৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বাপ্তিস্মের সময় থেকেই যিশু একজন মহাযাজক হিসেবে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পরীক্ষিত হয়েছিলেন এবং প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন। (ইব্রীয় ৪:১৫; ৫:৭-১০) পুনরুত্থিত হওয়ার পর, তিনি স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন এবং স্বয়ং যিহোবার কাছে তাঁর বলিদানের মূল্য উপস্থাপন করেছিলেন। (ইব্রীয় ৯:২৪) এর ফলে, যিশু তাঁর বলিদানে যারা বিশ্বাস দেখিয়ে চলে, তাদের হয়ে যিহোবার কাছে অনুরোধ করতে পারেন এবং তাদেরকে অনন্তজীবনের প্রতি দৃষ্টি রেখে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য সহযোগিতা করতে পারেন। (ইব্রীয় ৭:২৫) এ ছাড়া, তাঁর বলিদান নতুন চুক্তি কার্যকর করার জন্য কাজ করেছিল।—ইব্রীয় ৮:৬; ৯:১৫.
১৩. সেই ব্যক্তিদের প্রত্যাশা কী ছিল, যাদেরকে নতুন চুক্তির অংশী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল?
১৩ যাদেরকে নতুন চুক্তির অংশী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারা পবিত্র আত্মার দ্বারাও অভিষিক্ত হয়েছিল। (২ করি. ১:২১) বিশ্বস্ত যিহুদি এবং এরপর পরজাতীয়রা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। (ইফি. ৩:৫, ৬) নতুন চুক্তির অধীনস্থ ব্যক্তিদের কোন প্রত্যাশাগুলো ছিল? তারা তাদের পাপের প্রকৃত ক্ষমা লাভ করেছিল। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তাহাদের অপরাধ ক্ষমা করিব, এবং তাহাদের পাপ আর স্মরণে আনিব না।” (যির. ৩১:৩৪) দ্বিতীয়ত, তাদের পাপগুলো বৈধভাবে বাতিল করায় তারা “রাজকীয় যাজকবর্গ” হওয়ার এক অবস্থানে থাকবে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।” (১ পিতর ২:৯) পিতর এখানে ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সময় ইস্রায়েলীয়দের প্রতি বলা যিহোবার কথাগুলো উদ্ধৃত করেন এবং সেগুলো নতুন চুক্তির অধীনস্থ খ্রিস্টানদের প্রতি প্রয়োগ করেন।—যাত্রা. ১৯:৫, ৬.
এক রাজকীয় যাজকবর্গ সমগ্র মানবজাতির উপকার নিয়ে আসে
১৪. রাজকীয় যাজকবর্গ কোথায় সেবা করবে?
১৪ নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা কোথায় সেবা করবে? পৃথিবীতে, যেখানে একটা দল হিসেবে তারা ‘তাঁহারই গুণকীর্ত্তন করিবার’ এবং আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর মাধ্যমে লোকেদের কাছে যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করার দ্বারা এক যাজকবর্গ হিসেবে সেবা করবে। (মথি ২৪:৪৫; ১ পিতর ২:৪, ৫) তাদের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের পর, তারা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করবে, পুরোপুরিভাবে উভয় দায়িত্বই সম্পন্ন করবে। (লূক ২২:২৯; ১ পিতর ১:৩-৫; প্রকা. ১:৬) এই বিষয়টার সত্যতা স্বরূপ, প্রেরিত যোহন একটা দর্শনে স্বর্গে যিহোবার সিংহাসনের সামনে বেশ কিছু সংখ্যক আত্মিক প্রাণীকে দেখেন। “মেষশাবকের” উদ্দেশে ‘এক নূতন গীতে’ তারা গায়: “তুমি . . . আপনার রক্ত দ্বারা সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে ঈশ্বরের নিমিত্ত লোকদিগকে ক্রয় করিয়াছ; এবং আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে তাহাদিগকে রাজ্য ও যাজক করিয়াছ; আর তাহারা পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবে।” (প্রকা. ৫:৮-১০) পরে আরেকটা দর্শনে যোহন এই শাসকদের সম্বন্ধে বলেন: “তাহারা ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে রাজত্ব করিবে।” (প্রকা. ২০:৬) খ্রিস্টের সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা সমগ্র মানবজাতির উপকারের জন্য এক রাজকীয় যাজকবর্গ গঠন করে।
১৫, ১৬. রাজকীয় যাজকবর্গ মানবজাতির জন্য কোন উপকারগুলো নিয়ে আসবে?
১৫ যারা পৃথিবীতে রয়েছে, তাদের জন্য ১,৪৪,০০০ জন কোন উপকার নিয়ে আসবে? প্রকাশিত বাক্য ২১ অধ্যায় তাদেরকে স্বর্গীয় নগর, নতুন যিরূশালেম হিসেবে চিত্রিত করে, তাদেরকে ‘মেষশাবকের ভার্য্যা’ বলে অভিহিত করে। (প্রকা. ২১:৯) ২ থেকে ৪ পদ বলে: “আর আমি দেখিলাম, ‘পবিত্র নগরী, নূতন যিরূশালেম,’ স্বর্গ হইতে ঈশ্বরের নিকট হইতে, নামিয়া আসিতেছে; সে আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার ন্যায় প্রস্তুত হইয়াছিল। পরে আমি সিংহাসন হইতে এই উচ্চ বাণী শুনিলাম, দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” কতই না চমৎকার আশীর্বাদ! মৃত্যুকে নির্মূল করে দেওয়ার ফলে কান্না, শোক, আর্তনাদ এবং ব্যথার প্রধান কারণ দূর হয়ে যাবে। এর অর্থ হবে, বিশ্বস্ত মানুষদেরকে সিদ্ধতায় নিয়ে যাওয়া, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সঙ্গে পুনরায় সম্মিলিত করা।
১৬ এই রাজকীয় যাজকবর্গ যে-আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, সেই সম্বন্ধে আরও বর্ণনা করে প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২ পদ বলে: “তিনি আমাকে ‘জীবন-জলের নদী’ দেখাইলেন, তাহা স্ফটিকের ন্যায় উজ্জ্বল, তাহা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে; ‘নদীর এপারে ওপারে জীবন-বৃক্ষ আছে, তাহা দ্বাদশ বার ফল উৎপন্ন করে, এক এক মাসে আপন আপন ফল দেয়, এবং সেই বৃক্ষের পত্র জাতিগণের আরোগ্য নিমিত্তক’।” এই রূপক ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে ‘জাতিগণ’ অথবা মানবজাতির পরিবার আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অসিদ্ধতা থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করবে। সত্যিই, ‘প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইবে।’
রাজকীয় যাজকবর্গ তাদের কাজ সম্পাদন করে
১৭. রাজকীয় যাজকবর্গ অবশেষে কী সম্পাদন করবে?
১৭ এক হাজার বছরের উপকারজনক সেবার শেষে, রাজকীয় যাজকবর্গ তাদের পার্থিব প্রজাদেরকে মানব সিদ্ধতায় নিয়ে যাবে। মহাযাজক ও রাজা হিসেবে খ্রিস্ট তখন যিহোবার কাছে সম্পূর্ণরূপে পুনর্স্থাপিত মানব পরিবারকে উপস্থাপন করবেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:২২-২৬.) রাজকীয় যাজকবর্গ তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণরূপে সম্পাদন করবে।
১৮. রাজকীয় যাজকবর্গ তাদের কাজ সম্পাদন করার পর, কীভাবে যিহোবা খ্রিস্টের সহযোগীদের ব্যবহার করবেন?
১৮ এরপর, খ্রিস্টের বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত এই সহযোগীদেরকে যিহোবা কীভাবে ব্যবহার করবেন? প্রকাশিত বাক্য ২২:৫ পদ অনুযায়ী, “তাহারা যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবে।” কাদের ওপর? বাইবেল আমাদেরকে তা বলে না। কিন্তু, তারা যে-ধরনের জীবনের অধিকারী, তা এবং অসিদ্ধ লোকেদের এক জগৎকে সাহায্য করার ব্যাপারে তাদের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটা তাদেরকে যিহোবার উদ্দেশ্যে চিরকাল এক রাজকীয় অবস্থান বজায় রাখতে সজ্জিত করবে।
১৯. যারা স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত থাকবে, তাদেরকে কী মনে করিয়ে দেওয়া হবে?
১৯ আমরা যখন ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবস উদ্যাপন করার জন্য একত্রিত হব, তখন বাইবেলের এই শিক্ষাগুলো আমাদের মনের মধ্যে থাকবে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের যে-অল্পসংখ্যক অবশিষ্টাংশ এখনও পৃথিবীতে রয়েছে, তারা তাড়িশূন্য রুটি ও লাল দ্রাক্ষারসের প্রতীকগুলো গ্রহণ করবে আর এভাবে তারা যে নতুন চুক্তির অংশী, সেটাকে চিত্রিত করবে। খ্রিস্টের বলিদানের এই প্রতীকগুলো তাদেরকে তাদের চমৎকার সুযোগ এবং ঈশ্বরের অনন্ত উদ্দেশ্যে তাদের যে-দায়িত্বগুলো রয়েছে, সেই সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেবে। আমরা সকলে যেন সমগ্র মানবজাতির উপকারের জন্য যিহোবা ঈশ্বর যে এক রাজকীয় যাজকবর্গের ব্যবস্থা করেছেন, সেটার প্রতি গভীর উপলব্ধি সহকারে যোগদান করি।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজকীয় যাজকবর্গ মানবজাতির জন্য অনন্ত উপকার নিয়ে আসবে