সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এটা আমাকে কিছুটা লক্ষণীয় করে তুলেছিল”

“এটা আমাকে কিছুটা লক্ষণীয় করে তুলেছিল”

আমাদের আর্কাইভ থেকে

“এটা আমাকে কিছুটা লক্ষণীয় করে তুলেছিল”

পূর্ণসময়ের প্রচারক শার্লট হোয়াইট যখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলে পৌঁছেছিলেন, তখন তাকে চাকার ওপর বসানো একটা সুটকেস টানতে দেখে অনেকেই তার দিকে তাকিয়েছিল।

সময়টা ছিল ১৯০৮ সাল আর বোন হোয়াইট একেবারে নতুন এক উদ্ভাবন—ডউন মোবাইল—নিয়ে এসে নিশ্চিতভাবেই শহরের লোকেদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। “এটা নিয়ে বেশ কথাবার্তা হয়েছিল আর এটা আমাকে কিছুটা লক্ষণীয় করে তুলেছিল,” তিনি বলেছিলেন।

বাইবেল ছাত্ররা—যে-নামে তখন যিহোবার সাক্ষিদের ডাকা হতো—অধ্যবসায়ের সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করে যে-মূল্যবান সত্যগুলো শিখেছিল, সেগুলো জানানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিল। অনেকে মিলেনিয়াল ডউন বা সহস্র বছরের ভোর (পরে শাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন নামেও বলা হতো) নামে ধারাবাহিক বইগুলোর মাধ্যমে বাইবেলের জ্ঞান অর্জন করেছিল। যে-খ্রিস্টানরা ইচ্ছুক এবং সক্ষম ছিল, তারা এই বইগুলো, যেগুলোকে “বাইবেল ছাত্রদের জন্য সহায়ক” হিসেবে বর্ণিত করা হয়েছিল, সেগুলো অন্যান্য আগ্রহী পাঠকদের কাছে অর্পণ করার জন্য দূরদূরান্তে—বিভিন্ন শহরে, গ্রামে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে—ভ্রমণ করেছিল।

১৯০৮ সালে, বোন হোয়াইট ও অন্যান্য উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা ১·৬৫ মার্কিন ডলার মূল্যের বিনিময়ে কার্ডবোর্ডের ওপর কাপড় দিয়ে বাঁধাই করা ছয় খণ্ডের এক সেট বই দেওয়ার প্রস্তাব দিত। এই বইগুলো সঙ্গেসঙ্গে অর্পণ করার পরিবর্তে, তারা অর্ডার নিত এবং পরে আবার—সাধারণত বেতন পাওয়ার দিনে—সামান্য ছাপা খরচের বিনিময়ে সেগুলো বিলি করার জন্য সেখানে ফিরে যেত। একজন বিরোধী অভিযোগ করে বলেছিলেন যে, বইগুলো নেওয়ার পর লোকেরা কীভাবে এত কম দাম দিয়ে থাকে!

মেলিন্ডা কিফার স্মরণ করেন যে, তিনি সপ্তাহে দু-শো থেকে তিন-শো বইয়ের অর্ডার নিতেন। কিন্তু, ডউন বইগুলোর প্রতি যে-ব্যাপক আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, সেটা এক সমস্যাও উত্থাপন করেছিল। কারণ, শুধুমাত্র ষষ্ঠ খন্ডেই ৭৪০ পৃষ্ঠা ছিল! দ্যা ওয়াচ টাওয়ার স্বীকার করে, “পঞ্চাশটি বইয়ের ওজন ছিল চল্লিশ পাউন্ড” (১৮ কিলোগ্রাম) যা বিলি করার কাজকে বিশেষত বোনদের জন্য “অনেক কষ্টসাধ্য” করে তুলেছিল।

ডউন বইগুলো বিলি করার সমস্যাটা সমাধান করার জন্য ভাই জেমস্‌ কোল, দু-চাকাবিশিষ্ট এমন একটা ফ্রেম উদ্ভাবন করেছিলেন, যেটা ভাঁজ করে রাখা যেত এবং যেটার সঙ্গে একটা সুটকেসকে স্ক্রু দিয়ে আটকে রাখা যেত। বইয়ে ভরা ভারী কার্টনগুলো আর বহন করতে হতো না বলে উদ্ভাবক নিজেই এই মন্তব্য করেছিলেন: “আমাকে আর ঘাড় ভাঙতে হবে না।” তিনি ১৯০৮ সালে ওহাইওর সিনসিন্নাটিতে অনুষ্ঠিত বাইবেল ছাত্রদের সম্মেলনে উৎফুল্ল শ্রোতাদের সামনে এই নতুন হাতিয়ারটা উপস্থাপন করেছিলেন। আড়াআড়িভাবে আটকানো প্রতিটা দণ্ডের বোতামে ডউন-মোবাইল নামটা খোদাই করা ছিল কারণ এটার প্রধান বহনীয় মালামাল ছিল সহস্র বছরের ভোর বইয়ের খণ্ডগুলো। কয়েক বার ব্যবহার করার পর, কয়েক ডজন বই ভরতি একটা সুটকেস বহন করে নিয়ে যাওয়ার কাজটা খুবই সহজ এবং এক হাতে করার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। এটার উচ্চতাকে প্রয়োজন অনুযায়ী রদবদল করা যেত এবং চাকাগুলো মাটির রাস্তাতেও চালানো যেত। পরিচর্যায় একটা দিন পার করার পর, পায়ে হেঁটে অথবা ট্রামে করে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময়ে রবারের চাকাগুলোকে ভাঁজ করে সুটকেসের এক পাশে তুলে রাখা যেত।

পূর্ণসময়ের সেবায় রত বোনেরা বিনামূল্যে একটা ডউন-মোবাইল পেতে পারত। তবে অন্যদের জন্য এটার মূল্য ছিল ২·৫০ মার্কিন ডলার। এখানে দেওয়া ছবিটার মতো, বোন কিফার ডউন-মোবাইল ব্যবহার করায় এতটাই পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন যে, তিনি এক হাতে একটা সুটকেস ভরতি বই টেনে নিয়ে যেতে এবং অন্য হাতে আরেকটা ব্যাগ ভরতি বই বহন করে নিয়ে যেতে পারতেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার একটা খনির শহরে অনেক আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ায়, তিনি বিলি করার দিনে সাধারণত তিন-চার বার অ্যালিগেনি নদীর সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতেন।

১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে, একজন বিমানচালক চাকাবিশিষ্ট সুটকেস ও ব্যাগ উদ্ভাবন করেছিলেন, যেগুলো এখন বিমানবন্দরে এবং কর্মব্যস্ত শহরের রাস্তাঘাটে অনেক দেখা যায়। কিন্তু, প্রায় এক-শো বছর আগেই উদ্যোগী বাইবেল ছাত্ররা সম্ভবত কৌতূহলী প্রত্যক্ষদর্শীদের স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার বিষয়টা উপভোগ করেছিল, যখন তারা বাইবেলের সত্যের মূল্যবান বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ডউন-মোবাইল টানতে টানতে লক্ষণীয়ভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া-আসা করত।

[৩২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

বোন কিফার বিলি করার দিনে সাধারণত তিন-চার বার অ্যালিগেনি নদীর সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতেন

[৩২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

এটা ডউন বইগুলো বিলি করার সমস্যাটা সমাধান করেছিল