সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“নিদ্রা হইতে জাগিবার” জন্য লোকেদের সাহায্য করুন

“নিদ্রা হইতে জাগিবার” জন্য লোকেদের সাহায্য করুন

“নিদ্রা হইতে জাগিবার” জন্য লোকেদের সাহায্য করুন

“তোমরা এই কাল জ্ঞাত আছ; ফলতঃ এখন তোমাদের নিদ্রা হইতে জাগিবার সময় হইল।”—রোমীয় ১৩:১১.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

কেন খ্রিস্টানদের জন্য আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

কেন জাগ্রত পরিচারকদের অন্যদের কথা শোনা এবং একজন পর্যবেক্ষক হওয়া উচিত?

সদয়ভাব ও কোমলতা আমাদের পরিচর্যায় কোন ভূমিকা রাখে?

১, ২. কোন অর্থে অনেক লোককে জেগে উঠতে হবে?

 প্রতি বছর, হাজার হাজার লোক মারা যায় কারণ তারা গাড়ি চালানোর সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে অথবা এমনকী ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যেরা তাদের চাকরি হারায় কারণ তারা কাজে যাওয়ার জন্য সময়মতো ঘুম থেকে ওঠে না কিংবা কাজের সময় ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু, আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতার আরও গুরুতর প্রভাব থাকতে পারে। এটা সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায়, যে-প্রসঙ্গে বাইবেল বলে: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে জাগিয়া থাকে।”—প্রকা. ১৬:১৪-১৬.

যিহোবার মহাদিন যখন এগিয়ে আসছে, তখন সমগ্র মানবজাতি আধ্যাত্মিক অর্থে ঘুমিয়ে রয়েছে। এমনকী খ্রিস্টীয়জগতের কিছু নেতাও তাদের পালকে ‘ঘুমন্ত দানবের’ মতো বলে উল্লেখ করেছে। আধ্যাত্মিক নিদ্রা বলতে কী বোঝায়? কেন সত্য খ্রিস্টানদের জন্য জেগে থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ? কীভাবে আমরা অন্যদেরকে এই ধরনের নিদ্রা থেকে জেগে উঠতে সাহায্য করতে পারি?

আধ্যাত্মিক নিদ্রা—এর মানে কী?

৩. আধ্যাত্মিকভাবে জেগে নেই এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

যে-লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, তারা সাধারণত সক্রিয় থাকে না। এর বিপরীতে, যারা আধ্যাত্মিকভাবে ঘুমিয়ে থাকে, তারা হয়তো অনেক ব্যস্ত থাকে—কিন্তু আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে নয়। তারা হয়তো রোজকার জীবনের চিন্তায় কিংবা আনন্দ, খ্যাতি অথবা ধনসম্পদ লাভের চেষ্টায় ভীষণ ব্যস্ত থাকে। এইসমস্ত কাজ করার দ্বারা তারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদার ব্যাপারে সামান্যই চিন্তা দেখিয়ে থাকে। কিন্তু, যে-ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকভাবে জেগে আছে, তারা বুঝতে পারে যে, আমরা “শেষকালে” বাস করছি আর তাই তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করায় যথাসম্ভব সক্রিয় থাকে।—২ পিতর ৩:৩, ৪; লূক ২১:৩৪-৩৬.

৪. “আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই,” এই পরামর্শের অর্থ কী?

প্রথম থিষলনীকীয় ৫:৪-৮ পদ পড়ুন। এখানে প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদেরকে “অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা” না যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? আমরা একটা যে-উপায়ে “নিদ্রা” যেতে পারি তা হল, যিহোবার নৈতিক মানগুলো উপেক্ষা করার মাধ্যমে। এ ছাড়া, আমরা আরেকটা যে-উপায়ে “নিদ্রা” যেতে পারি তা হল, অধার্মিক ব্যক্তিদের ধ্বংস করার জন্য যিহোবার সময় যে হয়ে গিয়েছে, এই সত্যটাকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, এইরকম অধার্মিক ব্যক্তিরা যেন আমাদেরকে তাদের বিভিন্ন পথ ও মনোভাব অবলম্বন করার জন্য প্রভাবিত না করে।

৫. কোন ধরনের মনোভাবগুলো আধ্যাত্মিকভাবে নিদ্রিত ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে?

কেউ কেউ মনে করে যে, এমন কোনো ঈশ্বর নেই, যাঁর কাছে তাদের নিকাশ দিতে হবে। (গীত. ৫৩:১) অন্যেরা মনে করে যে, ঈশ্বর আমাদের মানুষের ব্যাপারে আগ্রহী নন আর তাই আমাদেরও তাঁর প্রতি আগ্রহী হওয়ার কোনো মানে নেই। আবার অন্যেরা মনে করে, কোনো একটা গির্জার সদস্য হওয়া তাদেরকে ঈশ্বরের বন্ধু করে তুলবে। এইসমস্ত ব্যক্তি আধ্যাত্মিকভাবে নিদ্রিত রয়েছে। তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। কীভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি?

আমাদের নিজেদের জেগে থাকতে হবে

৬. কেন খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে?

অন্যদেরকে জাগিয়ে তোলার মতো অবস্থানে থাকার জন্য আমাদের নিজেদেরকে জেগে থাকতে হবে। এর সঙ্গে কী জড়িত? ঈশ্বরের বাক্য রূপক নিদ্রাকে ‘অন্ধকারের ক্রিয়া সকলের’—রঙ্গরস বা উদ্দাম আমোদপ্রমোদ, মত্ততা, স্বেচ্ছাচারিতা বা অবৈধ যৌনসম্পর্ক, লম্পটতা, বিবাদ, ঈর্ষার—সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে। (পড়ুন, রোমীয় ১৩:১১-১৪.) এইরকম আচরণ এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে। সতর্কতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। একজন গাড়ি চালক, যিনি গাড়ি চালানোর সময় ঘুমিয়ে পড়ার বিপদকে হালকাভাবে দেখেন, তিনি হয়তো তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেন। তাই একজন খ্রিস্টানের জন্য এই বিষয়ে অবগত থাকা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, আধ্যাত্মিক নিদ্রা মারাত্মক হতে পারে!

৭. কীভাবে লোকেদের প্রতি এক ভুল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের প্রভাবিত করতে পারে?

উদাহরণস্বরূপ, একজন খ্রিস্টান হয়তো এইরকম মনে করতে পারেন যে, তার এলাকার সকলে সুসমাচারকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। (হিতো. ৬:১০, ১১) তিনি হয়তো এভাবে যুক্তি করতে পারেন, ‘যেহেতু কেউই সাড়া দেবে না, তাহলে কেন লোকেদের কাছে পৌঁছানোর বা তাদের সাহায্য করার জন্য উদ্যম সহকারে চেষ্টা করতে হবে?’ এটা ঠিক যে, অনেকে হয়তো এখন আধ্যাত্মিকভাবে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু তাদের পরিস্থিতি ও মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে। কেউ কেউ জেগে ওঠে এবং সাড়া দিয়ে থাকে। আর আমরা নিজেরা জেগে থাকার—রাজ্যের বার্তাকে আগ্রহজনক উপায়ে তুলে ধরার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে দেখার—মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। আমাদের জেগে থাকার সঙ্গে নিজেদেরকে এই বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়াও জড়িত যে, কেন আমাদের পরিচর্যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

কোন বিষয়টা আমাদের পরিচর্যাকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে?

৮. কেন আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

মনে রাখবেন যে, এখন যে-প্রতিক্রিয়াই দেখা যাক না কেন, আমাদের প্রচার কাজ যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে এবং তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় ভূমিকা পালন করে। খুব শীঘ্র, সেই ব্যক্তিরা বিনাশরূপ দণ্ড ভোগ করবে, যারা সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না। লোকেরা আমাদের প্রচারের প্রতি যেভাবে সাড়া দিয়ে থাকে, তা তাদের বিচারের জন্য এক ভিত্তি স্বরূপ হবে। (২ থিষল. ১:৮, ৯) অধিকন্তু, একজন খ্রিস্টানের জন্য এইরকম যুক্তি করা ভুল হবে যে, যেহেতু “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে,” তাই উদ্যমের সঙ্গে প্রচার করার প্রয়োজন নেই। (প্রেরিত ২৪:১৫) ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যাদের “ছাগ” হিসেবে বিচার করা হবে, তারা “অনন্ত দণ্ডে” প্রবেশ করবে। আমাদের প্রচার কাজ ঈশ্বরের করুণাকে প্রকাশ করে, লোকেদেরকে পরিবর্তন হওয়ার এবং ‘অনন্ত জীবন’ লাভ করার জন্য পথ খুলে দেয়। (মথি ২৫:৩২, ৪১, ৪৬; রোমীয় ১০:১৩-১৫) আমরা যদি প্রচার না করতাম, তাহলে কীভাবে লোকেরা সেই বার্তা শোনার সুযোগ পেত, যার অর্থ হতে পারে জীবন?

৯. সুসমাচার প্রচারে অংশ নেওয়া কীভাবে আপনাকে ও অন্যদেরকে উপকৃত করেছে?

সুসমাচার প্রচার করা আমাদেরও উপকার করে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১৬.) যিহোবা এবং রাজ্যের আশা সম্বন্ধে কথা বলা যে আপনার বিশ্বাস ও ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেমকে শক্তিশালী করে থাকে, সেটা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? এটা কি আপনাকে খ্রিস্টীয় গুণাবলি গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করছে না? পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভক্তি প্রকাশ করা কি আপনার সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে না? অন্যদেরকে সত্য শিক্ষা দেওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছে এমন অনেক ব্যক্তি, ঈশ্বরের আত্মা যে সেই শিক্ষা গ্রহণকারীদের জীবনে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে, তা দেখে আনন্দিত হয়েছে।

পর্যবেক্ষক হোন

১০, ১১. (ক) কীভাবে যিশু এবং পৌল দেখিয়েছিল যে, তারা সতর্ক এবং পর্যবেক্ষক? (খ) সতর্ক এবং পর্যবেক্ষক হওয়া যেভাবে আমাদের পরিচর্যাকে উন্নত করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন।

১০ সুসমাচারের প্রতি ব্যক্তি-বিশেষদের আগ্রহ হয়তো বিভিন্ন উপায়ে জেগে উঠতে পারে। তাই, খ্রিস্টান পরিচারকদের সতর্ক পর্যবেক্ষক হতে হবে। যিশু এই ক্ষেত্রে আমাদের জন্য উদাহরণ। সিদ্ধ ব্যক্তি হওয়ায়, তিনি একজন ফরীশীর অব্যক্ত অসন্তোষের অনুভূতি, একজন পাপীষ্ঠা নারীর আন্তরিক অনুতাপ এবং একজন বিধবার আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন। (লূক ৭:৩৭-৫০; ২১:১-৪) যিশু প্রত্যেক ব্যক্তির আধ্যাত্মিক চাহিদার প্রতি সাড়া দিতে পারতেন। কিন্তু, ঈশ্বরের একজন দাসের উত্তম পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য সিদ্ধ ব্যক্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রেরিত পৌল সেই বিষয়টা তুলে ধরেছেন। তিনি নিজের উপস্থাপনাকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন, যাতে বিভিন্ন দলের এবং ভিন্ন ভিন্ন মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে সেটাকে আগ্রহজনক করে তুলতে পারেন।—প্রেরিত ১৭:২২, ২৩, ৩৪; ১ করি. ৯:১৯-২৩.

১১ যিশু এবং পৌলের মতো সতর্ক ও পর্যবেক্ষক হওয়ার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের মধ্যে কীভাবে সর্বোত্তম উপায়ে আগ্রহ জাগিয়ে তোলা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন ব্যক্তি-বিশেষদের কাছে যান, তখন সেই বিষয়গুলো খুঁজুন, যেগুলো তাদের সংস্কৃতি, আগ্রহ, পারিবারিক অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। হতে পারে, তারা যা করছে, তা আপনি সেই মুহূর্তেই লক্ষ করতে পারেন এবং কথোপকথন শুরু করার জন্য সেই সম্বন্ধে কোনো সৌজন্যমূলক মন্তব্য করতে পারেন।

১২. পরিচর্যায় রত থাকার সময়, কেন আমাদের কথোপকথন সম্বন্ধে সতর্ক থাকা উচিত?

১২ একজন সতর্ক পর্যবেক্ষক বিক্ষেপগুলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করেন। পরিচর্যায় থাকাকালীন, আমাদের সঙ্গীর সঙ্গে কথাবার্তা বলা গেঁথে তোলার মতো হতে পারে। তবে, আমরা মনে রাখতে চাই যে, আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যায় রত হওয়ার উদ্দেশ্য হল অন্যদের কাছে প্রচার করা। (উপ. ৩:১, ৭) তাই, আমাদের সতর্ক থাকা উচিত, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের কথাবার্তা যেন আমাদের পরিচর্যায় ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে। আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে আমরা যে-বিষয়গুলো জানাতে চাই সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা, আমাদের মনকে আমাদের উদ্দেশ্যের প্রতি কেন্দ্রীভূত রাখার এক উত্তম উপায়। তা ছাড়া, একটা সেল ফোন যদিও মাঝে মাঝে আমাদের পরিচর্যায় কার্যকারী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু আমাদের এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যে, গৃহকর্তার সঙ্গে কথোপকথন করার সময় কোনো ফোন কল যেন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে।

ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখান

১৩, ১৪. (ক) কোন বিষয়টা একজন ব্যক্তিকে আগ্রহী করে তুলবে, তা আমরা কীভাবে বুঝতে পারব? (খ) কোন বিষয়গুলো আধ্যাত্মিক বিষয়ে লোকেদের আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে পারে?

১৩ যে-পরিচারকরা জেগে আছে এবং সতর্ক রয়েছে, তারা সেই ব্যক্তিদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে, যাদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। আপনার এলাকায় কোনো ব্যক্তিকে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত করার জন্য আপনি কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করতে পারেন? তিনি কি এত এত ধর্ম, এলাকার দৌরাত্ম্য অথবা সরকারের ব্যর্থতা সম্বন্ধে উদ্‌বিগ্ন? আপনি কি সজীব বস্তুগুলোর বিস্ময়কর নকশার ওপর মন্তব্য করার অথবা বাইবেলের উপদেশ কতটা ব্যবহারিক সেই বিষয়টা তুলে ধরার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি তার আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে পারেন? প্রার্থনার বিষয়টা প্রায় সমস্ত সংস্কৃতির লোককে, এমনকী কিছু নাস্তিক ব্যক্তিকেও আগ্রহী করে তোলে। অনেকে ভেবে থাকে, আদৌ কেউ প্রার্থনা শোনেন কি না। আবার অন্যেরা হয়তো এই প্রশ্নের দ্বারা কৌতূহলী হয়ে ওঠে: ঈশ্বর কি সমস্ত প্রার্থনা শোনেন? যদি না শোনেন, তাহলে ঈশ্বর যাতে আমাদের প্রার্থনা শোনেন, সেইজন্য আমাদের কী করা উচিত?

১৪ অভিজ্ঞ প্রকাশকরা যেভাবে কথোপকথন শুরু করে থাকে, তা পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আমরা সম্ভবত কথোপকথন শুরু করার দক্ষতা সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি। লক্ষ করুন যে, কীভাবে তারা জেরা করা অথবা অতিরিক্ত কৌতূহল দেখানো এড়িয়ে চলে। কীভাবে তাদের কণ্ঠস্বর এবং মৌখিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যে, তারা গৃহকর্তার দৃষ্টিভঙ্গিগুলো বোঝার ব্যাপারে আগ্রহী?—হিতো. ১৫:১৩.

সদয়ভাব এবং দক্ষতা

১৫. কেন আমাদের প্রচার করার প্রচেষ্টায় সদয়ভাব থাকা উচিত?

১৫ আপনি কি গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠতে চাইবেন? যখন হঠাৎ করে জাগিয়ে তোলা হয়, তখন অনেকে ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। সাধারণত কোমলভাবে জাগিয়ে তোলাকেই পছন্দ করা হয়ে থাকে। লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সাক্ষাতের কারণে কেউ যদি রেগে যান, তাহলে সাধারণত সর্বোত্তম প্রতিক্রিয়াটা কী হতে পারে? আপনি যে তার অনুভূতি বুঝতে পেরেছেন তা সদয়ভাবে স্বীকার করুন, তাকে খোলাখুলি মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ জানান আর এরপর শান্তভাবে চলে আসুন। (হিতো. ১৫:১; ১৭:১৪; ২ তীম. ২:২৪) আপনার সদয়ভাব হয়তো এইরকম একজন ব্যক্তিকে পরবর্তী সময়ে তার কাছে আসা কোনো সাক্ষির প্রতি আরও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে।

১৬, ১৭. কীভাবে আমরা পরিচর্যায় আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে ব্যবহার করতে পারি?

১৬ অন্যান্য ক্ষেত্রে, আপনি হয়তো কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে কাটিয়ে ওঠার জন্য সক্ষম হতে পারেন। কেউ হয়তো কেবল বলতে পারেন, “আমি শুনতে চাই না। আমার নিজের ধর্ম আছে” অথবা “আমি আগ্রহী নই,” কারণ তার কাছে সেটাকেই কথোপকথন শেষ করে দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় বলে মনে হয়। কিন্তু, দক্ষতার সঙ্গে ও সদয়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি হয়তো এমন একটা কৌতূহলী প্রশ্ন উত্থাপন করতে সক্ষম হতে পারেন, যা আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি গৃহকর্তার আগ্রহকে জাগিয়ে তোলে।—পড়ুন, কলসীয় ৪:৬.

১৭ মাঝে মাঝে আমাদের যখন এমন লোকেদের সঙ্গে দেখা হয়, যারা মনে করে তারা এত ব্যস্ত যে তাদের শোনার মতো সময় নেই, তখন তাদের পরিস্থিতি স্বীকার করে চলে আসা সর্বোত্তম। তবে, কখনো কখনো আপনি হয়তো বুঝতে পারেন যে, আপনি সংক্ষিপ্ত এবং অর্থপূর্ণ কোনো কিছু বলতে পারেন। কিছু ভাইবোন এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে এই সমস্তকিছু করতে পারে যেমন, বাইবেল খুলে দেখানো, একটা চিন্তা উদ্রেককারী শাস্ত্রপদ পড়া এবং গৃহকর্তার কাছে একটা প্রশ্ন রেখে আসা। তাদের ছোট্ট উপস্থাপনা মাঝেমধ্যে এতটাই আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে যে, গৃহকর্তা তখন বুঝতে পেরেছেন তিনি এত ব্যস্ত নন যে সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা বলতে পারবেন না। যখন সুযোগ আসে, তখন এইরকম কিছু করার চেষ্টা করে দেখুন না কেন?

১৮. রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদানে আরও কার্যকারী হওয়ার জন্য আমরা হয়তো কী করতে পারি?

১৮ আমাদের রোজকার বিভিন্ন কাজের সময়ে যখন লোকেদের সঙ্গে দেখা হয়, তখন আমরা প্রায়ই সুসমাচারের প্রতি তাদের আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে পারি, যদি আমরা রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদান করার জন্য প্রস্তুত থাকি। অনেক ভাই ও বোন নিজেদের পকেটে অথবা হাতব্যাগে সাহিত্যাদি রেখে দেয়। এ ছাড়া, তারা নির্দিষ্ট কোনো শাস্ত্রপদও মনে রাখে, যাতে সুযোগ আসলে অন্যদের কাছে তা বলতে পারে। তা করার জন্য আপনি যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন, সেই সম্বন্ধে আপনি হয়তো আপনার মণ্ডলীর পরিচর্যা অধ্যক্ষ অথবা অগ্রগামীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

আমাদের আত্মীয়স্বজনকে কোমলভাবে জাগিয়ে তোলা

১৯. কেন আমাদের আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়?

১৯ স্বাভাবিকভাবেই, আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজনকে সুসমাচার গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে চাই। (যিহো. ২:১৩; প্রেরিত ১০:২৪, ৪৮; ১৬:৩১, ৩২) আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা যদি প্রত্যাখ্যাত হয়, তাহলে তা হয়তো আমাদের উদ্যমকে হ্রাস করে দিতে পারে। আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, আমরা এমন সামান্য কিছুই করতে বা বলতে পারি, যা তাদের মনোভাবকে পরিবর্তন করবে। কিন্তু, বিভিন্ন ঘটনা হয়তো আপনার আত্মীয়ের জীবনে অথবা দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে পারে। কিংবা আপনি হয়তো সত্যকে ব্যাখ্যা করার জন্য আপনার দক্ষতায় আরও উন্নতি করেছেন, যার ফলে এখন আপনি ভিন্ন কোনো ফল লাভ করতে পারেন।

২০. কেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সময় বিবেচনা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ?

২০ আমাদের আত্মীয়স্বজনের অনুভূতির প্রতি আমাদের অসংবেদনশীল হওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। (রোমীয় ২:৪) তাদের সঙ্গে আমাদের কি মধুর ভাব দেখিয়ে বা সদয়ভাবে কথা বলা উচিত নয়, ঠিক যেমনটা আমরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে বলে থাকি, যাদের সঙ্গে প্রচারে আমাদের দেখা হয়? মৃদুতা ও সম্মান দেখিয়ে কথা বলুন। শুধু উপদেশ না দিয়ে, সত্য কীভাবে আপনার মঙ্গলের জন্য আপনাকে প্রভাবিত করেছে, সেটার প্রমাণ দিন। (ইফি. ৪:২৩, ২৪) যিহোবা কীভাবে আপনার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন, ‘আপনাকে উপকারজনক শিক্ষা দান করিয়াছেন,’ তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করুন। (যিশা. ৪৮:১৭) আপনার আত্মীয়স্বজনরা যেন আপনার মধ্যে খ্রিস্টীয় জীবনযাপনের উদাহরণ দেখতে পায়।

২১, ২২. এমন একটা অভিজ্ঞতা বলুন, যেটা আত্মীয়স্বজনকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে।

২১ সম্প্রতি, একজন বোন লিখেছেন: “আমি সবসময়ই আমার কথাবার্তা ও আচরণের মাধ্যমে আমার ১৩ জন ভাইবোনের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি প্রতি বছর তাদের প্রত্যেকের কাছে চিঠি লিখি। তা সত্ত্বেও, ৩০ বছর ধরে আমার পরিবারের মধ্যে আমিই একমাত্র সাক্ষি।”

২২ সেই বোন আরও বলেছিলেন: “একদিন, আমি আমার এক দিদিকে ফোন করেছিলাম, যে আমার কাছ থেকে শত শত মাইল দূরে বাস করে। সে আমাকে বলেছিল যে, সে তার গির্জার নেতাকে অধ্যয়ন করাতে বলেছে, কিন্তু সেই ব্যক্তি কখনো তা করেননি। আমি যখন তাকে বলেছি যে, আমি তাকে সাহায্য করতে পারলে আনন্দিত হব, তখন সে বলেছিল: ‘ঠিক আছে, তবে আমি তোমাকে এখনই বলে রাখছি: আমি কখনো যিহোবার সাক্ষি হব না।’ ডাকযোগে তার কাছে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইটি পাঠানোর পর, আমি কয়েক দিন পর পরই তাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু, সে তখনও বইটি খুলে দেখেনি। অবশেষে, আমি তাকে বইটি নিয়ে আসতে বলেছিলাম এবং আমরা ফোনে ১৫ মিনিট ধরে সেখানে উদ্ধৃত কিছু শাস্ত্রপদ পড়েছিলাম ও আলোচনা করেছিলাম। আরও কয়েক বার ফোন করার পর, সে ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় নিয়ে অধ্যয়ন করতে চেয়েছিল। তার পর, অধ্যয়ন করার জন্য সে আমাকে ফোন করতে শুরু করেছিল, মাঝে মাঝে আমি সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই আর মাঝে মাঝে দিনে দু-বার সে ফোন করত। পরের বছর সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল আর এর পরের বছর সে অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিল।”

২৩. আধ্যাত্মিক নিদ্রা থেকে লোকেদেরকে জাগিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করার ক্ষেত্রে কেন আমাদের ক্লান্ত হয়ে পড়া উচিত নয়?

২৩ আধ্যাত্মিক নিদ্রা থেকে লোকেদেরকে জেগে উঠতে সাহায্য করা হল এক দক্ষতা আর এটার জন্য অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তবে, বিনয়ী লোকেরা তাদেরকে জাগিয়ে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার প্রতি এখনও সাড়া দিচ্ছে। গড়ে প্রতি মাসে ২০,০০০-রেরও বেশি লোক যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তাইজিত হচ্ছে। তাই, আসুন আমরা আমাদের প্রথম শতাব্দীর একজন ভাই আর্খিপ্পকে দেওয়া পৌলের পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দিই: “তুমি প্রভুতে যে পরিচারকের পদ পাইয়াছ সে বিষয়ে দেখিও, যেন তাহা সম্পন্ন কর।” (কল. ৪:১৭) পরের প্রবন্ধ তৎপরতার মনোভাব সহকারে প্রচার করা বলতে যা বোঝায়, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে সকলকে সাহায্য করবে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স]

যেভাবে আপনি নিজেকে জাগ্রত রাখতে পারেন

▪ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করায় ব্যস্ত থাকুন

▪ অন্ধকারের ক্রিয়াসকল এড়িয়ে চলুন

▪ আধ্যাত্মিক নিদ্রার বিপদ সম্বন্ধে অবগত থাকুন

▪ আপনার এলাকার লোকেদের সম্বন্ধে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

▪ অন্যদের কাছে প্রচার করার নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন

▪ আপনার পরিচর্যার গুরুত্ব সম্বন্ধে মনে রাখুন