সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘পুত্ত্র পিতাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন’

‘পুত্ত্র পিতাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন’

‘পুত্ত্র পিতাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন’

“পিতা কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পুত্ত্র জানেন, আর পুত্ত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন, সে জানে।”—লূক ১০:২২.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কেন যিশু তাঁর পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে এক অদ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন?

কীভাবে যিশু অন্যদের কাছে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন?

কোন কোন উপায়ে আপনি পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে যিশুকে অনুকরণ করতে পারেন?

১, ২. কোন প্রশ্নটা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে এবং কেন?

 ‘ঈশ্বর কে?’ এই প্রশ্নটা অনেককেই বিভ্রান্ত করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদিও অধিকাংশ নামধারী খ্রিস্টান বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর হলেন এক ত্রিত্ব, কিন্তু অনেকে স্বীকার করে যে, এই মতবাদ বোঝা অসম্ভব। একজন গ্রন্থকার ও পাদরি স্বীকার করেছিলেন: “এটা এমন একটা মতবাদ, যা মানুষের সীমাবদ্ধ চিন্তাশক্তির দ্বারা বোঝা অসাধ্য। এটা স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি অথবা মানবযুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে।” অন্যদিকে, অধিকাংশ লোকই, যারা বিবর্তনবাদকে মেনে নেয়, তারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর বলে কেউ নেই। তারা বলে যে, সমস্ত বিস্ময়কর সৃষ্টি আকস্মিক ঘটনার ফল। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার পরিবর্তে, চার্লস ডারউইন বলেছিলেন: “আমার কাছে যেটাকে সবচেয়ে নিরাপদ উপসংহার বলে মনে হয়, সেটা হল সমস্ত বিষয়বস্তু মানুষের বোধের অগম্য।”

অধিকাংশ লোক, তা তাদের বিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করে থাকে। কিন্তু, তারা যখন এক সন্তোষজনক উপসংহারে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন অনেকে পরিশেষে ঈশ্বরের অনুসন্ধান করা বন্ধ করে দেয়। বস্তুতপক্ষে, শয়তান ‘অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়া’ রেখেছে। (২ করি. ৪:৪) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অধিকাংশ মানুষই পিতা অর্থাৎ নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে অজ্ঞ এবং বিভ্রান্তই রয়ে গিয়েছে!—যিশা. ৪৫:১৮.

৩. (ক) কে আমাদের কাছে সৃষ্টিকর্তাকে প্রকাশ করেছেন? (খ) এখন আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

তা সত্ত্বেও, লোকেদের জন্য ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য জানা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ একমাত্র যারা “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে,” তারাই রক্ষা পাবে। (রোমীয় ১০:১৩) ঈশ্বরের নামে ডাকার সঙ্গে যিহোবাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে জানা জড়িত। যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদেরকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই জ্ঞান সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। তিনি পিতাকে তাদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন। (পড়ুন, লূক ১০:২২.) কেন যিশু পিতাকে এমনভাবে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন, যেভাবে অন্য আর কেউ করতে পারত না? কীভাবে যিশু তা করেছিলেন? আর কীভাবে আমরা অন্যদের কাছে পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করি।

যিশু খ্রিস্ট —অদ্বিতীয়ভাবে যোগ্য

৪, ৫.  কেন যিশু তাঁর পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে এক অদ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন?

যিশু তাঁর পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে বিশেষভাবে যোগ্য ছিলেন। কেন? কারণ, সমস্ত ধরনের জীবিত প্রাণী সৃষ্টি করার আগে, সেই আত্মিক প্রাণী, যিনি পরে মানুষ যিশু হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছিলেন, তিনি ইতিমধ্যেই স্বর্গে ‘ঈশ্বরের একজাত পুত্ত্র’ হিসেবে ছিলেন। (যোহন ১:১৪; ৩:১৮) কী এক অদ্বিতীয় অবস্থান! যখন অন্য কোনো সৃষ্টিই অস্তিত্বে ছিল না, তখন পুত্র পিতার আন্তরিক মনোযোগ লাভ করেছিলেন এবং তাঁর পিতা ও পিতার গুণাবলি সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন। নিশ্চিতভাবেই, পিতা এবং পুত্র অগণিত সময় ধরে পরস্পরের সঙ্গে প্রচুর ভাববিনিময় করেছিলেন এবং একে অন্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা গড়ে তুলেছিলেন। (যোহন ৫:২০; ১৪:৩১) পুত্র নিশ্চয়ই তাঁর পিতার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে কত অন্তর্দৃষ্টিই না লাভ করেছিলেন!—পড়ুন, কলসীয় ১:১৫-১৭.

পিতা পুত্রকে তাঁর মুখপাত্র, “ঈশ্বরের বাক্য” হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। (প্রকা. ১৯:১৩) তাই, যিশু অন্যদের কাছে পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে এক অদ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। উপযুক্তভাবেই, সুসমাচার লেখক যোহন যিশুকে “বাক্য” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি “পিতার ক্রোড়ে” রয়েছেন। (যোহন ১:১, ১৮) যোহন হয়তো এমন একটা প্রথা সম্বন্ধে চিন্তা করছিলেন, যা খাবারের সময় সাধারণ ছিল। একজন অতিথিকে আরেকজন অতিথির কাছাকাছি বসতে দেওয়া হতো, যাতে তারা হয়তো সহজেই কথাবার্তা বলতে পারে। একইভাবে, পুত্র পিতার “ক্রোড়ে” ছিলেন আর তাই তিনি তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথাবার্তা বলতে সমর্থ ছিলেন।

৬, ৭. কীভাবে পিতা ও পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল?

পিতা ও পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছিল। পুত্র ‘ঈশ্বরের কাছে দিন দিন আনন্দময় ছিলেন।’ (পড়ুন, হিতোপদেশ ৮:২২, ২৩, ৩০, ৩১.) তাই, এটা যুক্তিযুক্ত যে, সেই সময় তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছিল, যখন তারা একত্রে কাজ করেছিল এবং যখন পুত্র তাঁর পিতার গুণাবলি অনুকরণ করতে শিখেছিলেন। অন্যান্য বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণী সৃষ্টি করার পর, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে যিহোবা কীভাবে আচরণ করেছিলেন, তা পুত্র দেখেছিলেন আর তাই ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের প্রতি তাঁর উপলব্ধি নিশ্চিতভাবেই আরও গভীর হয়ে উঠেছিল।

এমনকী পরবর্তী সময়ে শয়তান যখন যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল, তখনও তা পুত্রকে এটা শেখার এক সুযোগ করে দিয়েছিল যে, সেই সময়ে যিহোবা কীভাবে প্রেম, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং শক্তি ব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। এর ফল স্বরূপ, নিঃসন্দেহে যিশু সেই কঠিন সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন, যে-সমস্যাগুলোর সঙ্গে তিনি পরবর্তীতে পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যার সময়ে সম্মুখীন হয়েছিলেন।—যোহন ৫:১৯.

৮. কীভাবে সুসমাচারের বিবরণগুলো আমাদেরকে পিতার গুণাবলি সম্বন্ধে যথেষ্ট জানতে সাহায্য করে?

যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে পুত্র পিতাকে অন্য যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। পুত্র যা-কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা যেভাবে পিতাকে জানতে পারি, সেগুলোর চেয়ে অন্য আর কোন উত্তম উপায়েই বা আমরা পিতাকে জানতে পারতাম? উদাহরণস্বরূপ, কেবল অভিধানের সংজ্ঞা পড়ার মাধ্যমে “প্রেম” শব্দটির অর্থ কী, তা পুরোপুরি বোঝা আমাদের পক্ষে কত কঠিনই না হতো। কিন্তু, যিশুর পরিচর্যা এবং যেভাবে তিনি অন্যদের যত্ন নিয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে সুসমাচার লেখকদের সুস্পষ্ট বর্ণনা গভীরভাবে বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা “ঈশ্বর প্রেম,” এই উক্তি সম্বন্ধে যথেষ্ট অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি। (১ যোহন ৪:৮, ১৬) ঈশ্বরের অন্যান্য গুণ সম্বন্ধেও একই বিষয় সত্য, যেগুলো পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।

যেভাবে যিশু তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন

৯. (ক) মূলত কোন দুটো উপায়ে যিশু তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন? (খ) যিশু যেভাবে তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছেন, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

কীভাবে যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে এবং ব্যাপক অর্থে তাঁর অনুসারীদের কাছে পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন? মূলত দুটো উপায়ে তিনি তা করেছিলেন: তাঁর বিভিন্ন শিক্ষার মাধ্যমে এবং তাঁর আচরণের মাধ্যমে। আসুন আমরা প্রথমে যিশুর শিক্ষাগুলো নিয়ে বিবেচনা করি। যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে যা-কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলোর মধ্যে তাঁর পিতার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং বিভিন্ন পথ সম্বন্ধে তাঁর নিজের গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রতিফলিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিশু তাঁর পিতাকে একটা পালের একজন যত্নবান মালিকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যিনি হারিয়ে যাওয়া একটা মেষ খুঁজতে যান। যিশু বলেছিলেন যে, মালিক যখন সেই হারানো মেষটা ফিরে পান, তখন ‘যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত অধিক আনন্দ করেন।’ কেন যিশু এই দৃষ্টান্তটি ব্যবহার করেছিলেন? “সেইরূপ,” যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন, “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।” (মথি ১৮:১২-১৪) এই দৃষ্টান্ত থেকে যিহোবা সম্বন্ধে আপনি কী শিখতে পারেন? এমনকী মাঝে মাঝে, আপনি যখন মনে করেন যে আপনার সামান্যই মূল্য রয়েছে এবং আপনার কথা ভুলে যাওয়া হয়েছে, তখনও আপনার স্বর্গীয় পিতা আপনার প্রতি আগ্রহী এবং আপনার জন্য চিন্তা করেন। তাঁর চোখে আপনি “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে” একজন।

১০. কীভাবে যিশু তাঁর নিজের আচরণের মাধ্যমে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন?

১০ দ্বিতীয় যে-উপায়ে যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন, তা হল তাঁর আচরণের মাধ্যমে। তাই, প্রেরিত ফিলিপ যখন যিশুকে বলেছিলেন: “পিতাকে আমাদের দেখাউন,” তখন যিশু উপযুক্তভাবে বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৮, ৯) কীভাবে যিশু তাঁর পিতার গুণাবলি প্রদর্শন করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন। একজন কুষ্ঠরোগী যখন সুস্থ হওয়ার জন্য যিশুর কাছে বিনতি করেছিলেন, তখন যিশু সেই “সর্ব্বাঙ্গকুষ্ঠ” ব্যক্তিকে স্পর্শ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও।” সুস্থ হওয়ার পর সেই কুষ্ঠরোগী বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাকে সুস্থ করার জন্য যিহোবাই যিশুকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (লূক ৫:১২, ১৩) এ ছাড়া, লাসারের মৃত্যুর পর যিশু যখন ‘আত্মাতে উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছিলেন ও উদ্বিগ্ন হইয়াছিলেন’ এবং ‘কাঁদিয়াছিলেন,’ তখনও শিষ্যরা নিশ্চয়ই পিতার সমবেদনা অনুভব করতে পেরেছিল। যদিও যিশু জানতেন যে, তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করতে যাচ্ছেন, তবুও তিনি লাসারের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের মধ্যে যে-কষ্ট ছিল, তা অনুভব করতে পেরেছিলেন। (যোহন ১১:৩২-৩৫, ৪০-৪৩) নিঃসন্দেহে, আপনারও বাইবেলের এমন প্রিয় বিবরণগুলো রয়েছে, যেগুলো আপনাকে করুণাময় পিতাকে দেখতে সমর্থ করে, যা যিশুর কাজগুলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

১১. (ক) যিশু যখন মন্দির পরিষ্কার করেছিলেন, তখন তিনি তাঁর পিতা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কেন যিশুর মন্দির পরিষ্কার করার বিবরণ আমাদেরকে আশ্বাস প্রদান করে?

১১ কিন্তু, যিশুর মন্দির পরিষ্কার করার ঘটনা থেকে আপনি কোন উপসংহারে আসতে পারেন? দৃশ্যটা কল্পনা করুন: যিশু তৃণ দিয়ে এক গাছা কশা তৈরি করেন এবং যারা গরু এবং মেষ বিক্রি করছিল, তাদেরকে বের করে দেন। তিনি পোদ্দারদের মুদ্রা ছড়িয়ে দেন এবং মেজ উলটে ফেলেন। (যোহন ২:১৩-১৭) এই দৃঢ় পদক্ষেপ শিষ্যদেরকে রাজা দায়ূদের এই ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল: “তোমার গৃহনিমিত্তক উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করিয়াছে।” (গীত. ৬৯:৯) দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে যিশু সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। সেই বিবরণে, আপনি কি পিতার ব্যক্তিত্ব দেখতে পান? এটা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পৃথিবী থেকে দুষ্টতা সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ঈশ্বরের শুধুমাত্র অসীম শক্তিই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আন্তরিক আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যিশুর জোরালো প্রতিক্রিয়ার এই বর্ণনা প্রকাশ করে যে, পিতা যখন বর্তমানে পৃথিবীতে বেড়ে চলা দুষ্টতা দেখেন, তখন তিনি কেমন অনুভব করেন। আমরা যখন অবিচারের মুখোমুখি হই, তখন এটা আমাদেরকে কত আশ্বাসই না প্রদান করে!

১২, ১৩. যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটা থেকে আপনি যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখতে পারেন?

১২ আসুন আমরা আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করি আর তা হল, যিশু যেভাবে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন। কে শ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে তারা তর্কবিতর্ক করেই চলেছিল। (মার্ক ৯:৩৩-৩৫; ১০:৪৩; লূক ৯:৪৬) পিতার সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার অভিজ্ঞতা থেকে যিশু জানতেন যে, এই ধরনের গর্বিত মনোভাব সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন। (২ শমূ. ২২:২৮; গীত. ১৩৮:৬) অধিকন্তু, যিশু দেখেছিলেন যে, এই ধরনের প্রবণতা শয়তান দিয়াবল প্রকাশ করেছিল। সেই অহংকারী ব্যক্তি বিশিষ্টতা এবং পদমর্যাদা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। তাই, যে-শিষ্যদেরকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ক্রমাগত এইরকম এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনোভাব দেখতে পেয়ে যিশু নিশ্চয়ই কত দুঃখই না পেয়েছিলেন! এই মনোভাব এমনকী সেই ব্যক্তিদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল, যাদেরকে তিনি প্রেরিত হিসেবে মনোনীত করেছিলেন! তারা এমনকী যিশুর পার্থিব জীবনের একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনোভাব দেখিয়েছিল। (লূক ২২:২৪-২৭) তা সত্ত্বেও, তারা যে একসময় তাঁর মতো নম্র ভাব বা মনোভাব অনুকরণ করতে শিখবে, সেই বিষয়ে আশা হারিয়ে না ফেলে যিশু তাদেরকে সবসময় সদয়ভাবে তিরস্কার করেছিলেন।—ফিলি. ২:৫-৮.

১৩ যিশু যেভাবে তাঁর শিষ্যদের ভুল প্রবণতা ধৈর্য সহকারে সংশোধন করেছিলেন, সেটার মধ্যে আপনি কি পিতার ব্যক্তিত্ব দেখতে পান? আপনি কি যিশুর কাজে এবং কথায় পিতাকে দেখতে পান, যিনি তাঁর লোকেরা বার বার ভুল করা সত্ত্বেও তাদেরকে পরিত্যাগ করেন না? ঈশ্বরের গুণাবলি সম্বন্ধে মনে রেখে, আমরা কি সেই সময়ে আমাদের অনুতাপ প্রকাশ করার জন্য তাঁর কাছে আসতে অনুপ্রাণিত হই না, যখন আমরা ভুল করি?

পুত্র ইচ্ছুকভাবে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন

১৪. কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক ছিলেন?

১৪ অনেক স্বৈরাচারী শাসক, তথ্য জানতে না দেওয়ার মাধ্যমে লোকেদেরকে নিয়ন্ত্রণাধীনে এবং অজ্ঞানতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। এর বৈসাদৃশ্যে, যিশু পিতা সম্বন্ধে যে-তথ্য জানতেন, তা জানানোর ব্যাপারে ইচ্ছুক ছিলেন বা মানস করেছিলেন, অন্যদের কাছে পিতাকে পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করেছিলেন। (পড়ুন, মথি ১১:২৭.) এ ছাড়া, যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে ‘এমন বুদ্ধি দিয়াছিলেন, যাহাতে তাহারা সেই সত্যময়কে’ অর্থাৎ যিহোবা ঈশ্বরকে ‘জানিতে পারে।’ (১ যোহন ৫:২০) এর অর্থ কী? যিশু তাঁর অনুসারীদের হৃদয় খুলে দিয়েছিলেন, যেন তারা পিতা সম্বন্ধে তাঁর শিক্ষাগুলো বুঝতে পারে। ঈশ্বর হলেন বোধের অগম্য ত্রিত্বের এক অংশ, এই ধরনের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে যিশু পিতাকে রহস্যের বেড়াজালে আবৃত করে রাখেননি।

১৫. কেন যিশু তাঁর পিতা সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানানোর ব্যাপারে বিরত ছিলেন?

১৫ যিশু তাঁর পিতা সম্বন্ধে যা জানতেন, সেগুলোর সমস্তই কি প্রকাশ করেছিলেন? না, তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে এমন অনেক কিছু জানানোর ব্যাপারে বিরত ছিলেন, যেগুলো তিনি জানতেন। (পড়ুন, যোহন ১৬:১২.) কেন? কারণ সেই সময়ে তাঁর শিষ্যরা এই ধরনের জ্ঞান ‘সহ্য করিতে পারিত না।’ তবে, যিশু যেমনটা বলেছিলেন যে, “সহায়” অর্থাৎ পবিত্র আত্মা আসার ফলে অনেক জ্ঞান প্রকাশিত হবে, যে-আত্মা তাদেরকে ‘সমস্ত সত্যের’ দিকে নিয়ে যাবে বা পরিচালিত করবে। (যোহন ১৬:৭, ১৩) ঠিক যেমন বিজ্ঞ বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানরা যথেষ্ট বোঝার মতো বড়ো না হওয়া পর্যন্ত কিছু তথ্য জানানোর ব্যাপারে বিরত থাকতে পারে, তেমনই যিশু সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন, যতক্ষণ না শিষ্যরা পরিপক্ব হয় এবং পিতা সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বুঝতে সমর্থ হয়। যিশু সদয়ভাবে তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করেছিলেন।

অন্যদের যিহোবাকে জানতে সাহায্য করার দ্বারা যিশুকে অনুকরণ করুন

১৬, ১৭. কেন আপনি অন্যদের কাছে পিতা সম্বন্ধে জানানোর মতো এক অবস্থানে রয়েছেন?

১৬ আপনি যখন কারো সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে পারেন এবং তার সদয় ব্যক্তিত্ব উপলব্ধি করেন, তখন আপনি কি অন্যদেরকে তার সম্বন্ধে বলার জন্য অনুপ্রাণিত হন না? পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিশু তাঁর পিতা সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন। (যোহন ১৭:২৫, ২৬) অন্যদের কাছে যিহোবাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে তাঁকে অনুকরণ করা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব?

১৭ আমরা যেমন বিবেচনা করেছি যে, পিতা সম্বন্ধে অন্যদের চেয়ে যিশুর আরও গভীর জ্ঞান ছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি তাঁর জানা কিছু বিষয় জানানোর ব্যাপারে ইচ্ছুক ছিলেন, এমনকী তাঁর অনুসারীদেরকে ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের গভীর দিকগুলো বোঝার জন্য বুদ্ধিও দিয়েছিলেন। যিশুর সাহায্যে আমরা কি আমাদের পিতাকে এমনভাবে বুঝতে পারছি না, যেভাবে বর্তমানে অধিকাংশ লোক পারে না? আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, যিশু তাঁর শিক্ষা এবং আচরণের মাধ্যমে ইচ্ছুকভাবে তাঁর পিতাকে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন! বাস্তবিকই, আমরা পিতাকে জানি বলে উপযুক্তভাবেই শ্লাঘা করতে পারি। (যির. ৯:২৪; ১ করি. ১:৩১) আমরা যখন যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছি, তখন তিনিও আমাদের নিকটবর্তী হয়েছেন। (যাকোব ৪:৮) তাই, আমরা এখন আমাদের জ্ঞান সম্বন্ধে অন্যদেরকে জানানোর মতো এক অবস্থানে রয়েছি। কীভাবে আমরা তা জানাতে পারি?

১৮, ১৯. কোন কোন উপায়ে আপনি পিতাকে অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারেন? ব্যাখ্যা করুন।

১৮ আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে পিতাকে প্রকাশ করার দ্বারা যিশুকে অনুকরণ করতে হবে। মনে রাখবেন, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এমন অনেক ব্যক্তি জানে না যে, ঈশ্বর কে। ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো মিথ্যা শিক্ষাগুলোর দ্বারা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা হয়তো ঈশ্বরের নাম, মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য এবং বাইবেলে প্রকাশিত তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে যা জানি, তা তাদেরকে জানাতে পারি। অধিকন্তু, আমরা হয়তো সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে বাইবেলের কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে পারি, যেগুলো ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বকে এমন এক উপায়ে প্রকাশ করে, যেটা আমরা আগে উপলব্ধি করিনি। এভাবে, তারাও হয়তো উপকার লাভ করতে পারে।

১৯ যিশুকে অনুকরণ করার চেষ্টা করার সময় আপনার আচরণ দ্বারা পিতাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে কী বলা যায়? লোকেরা যখন আমাদের কাজে খ্রিস্টের প্রেম দেখতে পায়, তখন তারা পিতা ও সেইসঙ্গে যিশুর নিকটবর্তী হবে। (ইফি. ৫:১, ২) প্রেরিত পৌল আমাদেরকে ‘তাহার অনুকারী হইতে’ উৎসাহিত করেছিলেন, ‘যেমন তিনিও খ্রীষ্টের অনুকারী’ ছিলেন। (১ করি. ১০:৩৪) আমাদের আচরণের মাধ্যমে যিহোবাকে দেখার ব্যাপারে লোকেদেরকে সাহায্য করার কত অপূর্ব এক সুযোগই না আমাদের রয়েছে! হ্যাঁ, অন্যদের কাছে পিতাকে প্রকাশ করার দ্বারা আমরা সকলে যেন যিশুকে অনুকরণ করে চলি।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]