সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্বাসঘাতকতা কালের এক অশুভ চিহ্ন!

বিশ্বাসঘাতকতা কালের এক অশুভ চিহ্ন!

বিশ্বাসঘাতকতা কালের এক অশুভ চিহ্ন!

“আমরা কেমন সাধু [“অনুগত,” NW], ধার্ম্মিক ও নির্দ্দোষাচারী ছিলাম।”—১ থিষল. ২:১০.

এই মূল বিষয়গুলো আলাদা করুন:

দলীলা, অবশালোম ও ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার বিশ্বাসঘাতকতা থেকে আমরা কোন কোন সাবধানবাণীমূলক শিক্ষা লাভ করতে পারি?

কীভাবে আমরা যোনাথন ও পিতরের দেখানো আনুগত্যকে অনুকরণ করতে পারি?

কীভাবে আমরা নিজেদের বিবাহসাথির প্রতি ও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় থাকতে পারি?

১-৩. (ক) কালের এক অশুভ চিহ্ন কী আর এর সঙ্গে কী জড়িত? (খ) আমরা কোন তিনটে প্রশ্নের উত্তর লাভ করব?

 দলীলা, অবশালোম ও ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার মধ্যে কোন মিল রয়েছে? তারা সকলে আনুগত্যহীন ছিল—দলীলা তার প্রেমিক বিচারক শিম্‌শোনের প্রতি; অবশালোম তার বাবা রাজা দায়ূদের প্রতি; যিহূদা তার প্রভু খ্রিস্ট যিশুর প্রতি। প্রতিটা ক্ষেত্রে, তাদের নিন্দনীয় কাজ অন্যদের জন্য সর্বনাশ নিয়ে এসেছিল! কিন্তু, কেন আমাদের এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করা উচিত?

আধুনিক দিনের একজন গ্রন্থকার বিশ্বাসঘাতকতাকে বর্তমানের সবচেয়ে সাধারণ গর্হিত কাজের মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছেন। এতে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। কারণ “যুগান্তের” চিহ্ন দেওয়ার সময় যিশু বলেছিলেন: “অনেকে . . . এক জন অন্যকে সমর্পণ করিবে” বা একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। (মথি ২৪:৩, ১০) এই ধরনের আনুগত্যহীনতা নিশ্চিত করে যে, আমরা “শেষ কালে” বাস করছি, যে-সময়ে লোকেরা “অসাধু [“আনুগত্যহীন,” NW], . . . বিশ্বাসঘাতক” হবে বলে পৌল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। (২ তীম. ৩:১, ২, ৪) যদিও গ্রন্থকার এবং চিত্রনাট্যকাররা সাহিত্যে ও সিনেমাতে প্রতারণাপূর্ণ কাজগুলোকে প্রায়ই নাটকীয়ভাবে এবং রোমান্টিকভাবে তুলে ধরে, কিন্তু বাস্তব জীবনে আনুগত্যহীনতা ও বিশ্বাসঘাতকতা, যন্ত্রণা এবং কষ্ট নিয়ে আসে। সত্যিই, এই ধরনের কাজ কালের এক অশুভ চিহ্ন!

সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বাইবেল থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি, যারা অতীতে আনুগত্যহীনতা দেখিয়েছিল? অন্যদের প্রতি তাদের নিষ্ঠাকে প্রমাণ করতে পেরেছে এমন কোন ব্যক্তিদের উদাহরণ আমরা অনুকরণ করতে পারি? আর কাদের প্রতি আমাদের দৃঢ়ভাবে আনুগত্য বজায় রাখতে হবে? আসুন আমরা তা লক্ষ করি।

অতীতের বিভিন্ন সাবধানবাণীমূলক উদাহরণ

৪. কীভাবে দলীলা শিম্‌শোনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন আর কেন সেই কাজ অত্যন্ত ঘৃণ্য ছিল?

প্রথমে, সেই কুচক্রান্তকারী দলীলা সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, বিচারক শিম্‌শোন যার প্রেমে পড়েছিলেন। শিম্‌শোন ঈশ্বরের লোকেদের পক্ষ হয়ে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। দলীলার যে শিম্‌শোনের প্রতি কোনো অনুগত প্রেম নেই সম্ভবত তা বুঝতে পেরে, পাঁচ জন পলেষ্টীয় ভূপাল শিম্‌শোনের মহাশক্তির রহস্য খুঁজে বের করার জন্য তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যাতে তারা শিম্‌শোনকে হত্যা করতে পারে। অর্থলোভী দলীলা তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন কিন্তু শিম্‌শোনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করার ব্যাপারে তার প্রচেষ্টা তিন বার ব্যর্থ হয়েছিল। দলীলা তখন “প্রতিদিন বাক্য দ্বারা তাঁহাকে” পীড়াপীড়ি করে “ব্যস্ত করিয়া” তুলেছিলেন। অবশেষে, “প্রাণধারণে [শিম্‌শোনের] বিরক্তি বোধ হইল।” তাই শিম্‌শোন তাকে বলতে বাধ্য হন যে, তার চুল কখনো কাটা হয়নি আর যদি তা কাটা হয়, তাহলে তিনি তার শক্তি হারিয়ে ফেলবেন। * দলীলা সেটা জানতে পেরে, শিম্‌শোন যখন তার কোলের ওপর ঘুমিয়েছিলেন, তখন শিম্‌শোনের চুল ক্ষৌরি করিয়ে দিয়েছিলেন আর এরপর তাকে তার শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, যাতে তারা তার প্রতি যা খুশি তা করতে পারে। (বিচার. ১৬:৪, ৫, ১৫-২১) দলীলার এই কাজ কতই না ঘৃণ্য ছিল! একমাত্র তার লোভের কারণেই দলীলা এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, যিনি তাকে ভালোবাসতেন।

৫. (ক) কীভাবে অবশালোম দায়ূদের প্রতি আনুগত্যহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন আর সেটা তার সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে দিয়েছিল? (খ) অহীথোফল যে একজন বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিলেন, সেই বিষয়ে দায়ূদ কেমন অনুভব করেছিলেন?

এরপর, প্রতারক অবশালোম সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে তিনি তার বাবা রাজা দায়ূদের সিংহাসন দখল করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। অবশালোম চাতুর্যপূর্ণ প্রতিজ্ঞা ও স্নেহের কপট অভিব্যক্তি ব্যবহার করে লোকেদের কাছে নিজেকে অনুগ্রহের পাত্র হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে প্রথমে ‘ইস্রায়েল লোকদের চিত্ত হরণ করিয়াছিলেন।’ তিনি তাদেরকে আলিঙ্গন এবং চুম্বন করতেন আর তা দেখে এমন মনে হতো যেন তিনি সত্যি সত্যিই তাদের এবং তাদের চাহিদাগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। (২ শমূ. ১৫:২-৬) অবশালোম এমনকী দায়ূদের আস্থাভাজন ব্যক্তি অহীথোফলের সমর্থন লাভ করতেও সক্ষম হয়েছিলেন, যিনি একজন বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিলেন এবং বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১৫:৩১) এই ধরনের আনুগত্যহীনতা দায়ূদকে কতটা প্রভাবিত করেছিল, তা তিনি গীতসংহিতার ৩ ও ৫৫ গীতে বর্ণনা করেন। (গীত. ৩:১-৮; পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৫:১২-১৪.) অবশালোম যিহোবার নিযুক্ত রাজার বিরুদ্ধে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষাপূর্ণ পরিকল্পনা এবং খোলাখুলি চক্রান্তের মাধ্যমে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি অসম্মান প্রকাশ করেছিলেন। (১ বংশা. ২৮:৫) শেষপর্যন্ত, সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল এবং দায়ূদ যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে শাসন করে গিয়েছিলেন।

৬. কীভাবে যিহূদা যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন আর যিহূদা নামটা কোন শব্দের সমার্থ শব্দ হয়ে উঠেছে?

এখন, বিশ্বাসঘাতক ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা, খ্রিস্টের প্রতি যা করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। যিশু তাঁর ১২ জন প্রেরিতের সঙ্গে শেষ বারের মতো নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করার সময় তাদেরকে বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমাদের মধ্যে এক জন আমাকে সমর্পণ করিবে” বা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। (মথি ২৬:২১) পরে সেই রাতেই, যিশু গেৎশিমানী বাগানে পিতর, যাকোব ও যোহনকে বলেছিলেন: “এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করিতেছে,” বা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, “সে নিকটে আসিয়াছে।” ঠিক তখনই যিহূদা তার সহচক্রান্তকারীদের সঙ্গে সেই বাগানে এসে ‘যীশুর নিকট গিয়া বলিলেন, রব্বি, নমস্কার, আর তাঁহাকে আগ্রহপূর্ব্বক চুম্বন করিলেন।’ (মথি ২৬:৪৬-৫০; লূক ২২:৪৭, ৫২) যিহূদা ‘নির্দ্দোষ রক্ত সমর্পণ করিয়াছিলেন’ বা নির্দোষ রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন এবং যিশুকে খ্রিস্টের শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আর অর্থপ্রিয় যিহূদা কীসের জন্য তা করেছিলেন? শুধুমাত্র ৩০ রৌপ্যমুদ্রার জন্য! (মথি ২৭:৩-৫) তখন থেকে যিহূদা নামটা “বিশ্বাসঘাতক” শব্দের সমার্থ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আর তা বিশেষ করে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যিনি বন্ধুত্বের ভান করে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। *

৭. আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করেছি (ক) অবশালোম ও যিহূদার জীবন থেকে এবং (খ) দলীলার জীবন থেকে?

সাবধানবাণীমূলক এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পেরেছি? অবশালোম ও যিহূদা উভয়ই যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাজ করায় তাদের এক লজ্জাজনক পরিণতি হয়েছিল। (২ শমূ. ১৮:৯, ১৪-১৭; প্রেরিত ১:১৮-২০) দলীলা নামটা চিরকাল প্রতারণা এবং কপট প্রেমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। অন্ধ উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং লোভের প্রতি আমাদের যে-প্রবণতাই থাকুক না কেন, তা প্রত্যাখ্যান করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ, যা কিনা আমাদেরকে যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলার দিকে পরিচালিত করতে পারে! অন্য আর কোনো শিক্ষা কি আমাদেরকে আনুগত্যহীনতার মতো জঘন্য আচরণ প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করার ব্যাপারে এতটা জোরালো হতে পারে?

সেই ব্যক্তিদের অনুকরণ করুন, যারা অনুগত বলে প্রমাণিত হয়েছে

৮, ৯. (ক) কেন যোনাথন দায়ূদের প্রতি তার আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা যোনাথনকে অনুকরণ করতে পারি?

বাইবেল অনেক অনুগত ব্যক্তি সম্বন্ধেও বর্ণনা করে। আসুন আমরা তাদের মধ্যে থেকে দুজন ব্যক্তি সম্বন্ধে বিবেচনা করি এবং দেখি যে, তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি। শুরুতেই আমরা এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে বিবেচনা করব, যিনি দায়ূদের প্রতি অনুগত বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন। যোনাথন অর্থাৎ রাজা শৌলের সবচেয়ে বড়ো ছেলেই সম্ভবত ইস্রায়েলের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হতেন—যদি একটা বিষয় না ঘটত। যিহোবা দায়ূদকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যোনাথন ঈশ্বরের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে দায়ূদকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেননি। এর পরিবর্তে, যোনাথনের ‘প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইয়াছিল’ কারণ যোনাথন দায়ূদের প্রতি তার আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি এমনকী দায়ূদকে নিজের সজ্জা, খড়্গ, ধনুক ও কটিবন্ধন দিয়েছিলেন আর এভাবে তাকে রাজকীয় সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। (১ শমূ. ১৮:১-৪) যোনাথন ‘দায়ূদের হস্ত সবল’ করার জন্য তার যথাসাধ্য করেছিলেন, এমনকী শৌলের সামনে দায়ূদের পক্ষসমর্থন করার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়েছিলেন। যোনাথন অনুগতভাবে দায়ূদকে এই কথা বলেছিলেন: “তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব।” (১ শমূ. ২০:৩০-৩৪; ২৩:১৬, ১৭) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যোনাথনের মৃত্যুর পর দায়ূদ একটা বিলাপগীতে যোনাথনের জন্য নিজের দুঃখ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন।—২ শমূ. ১:১৭, ২৬.

যোনাথন কার প্রতি তার আনুগত্য দেখাবেন, সেটা নিয়ে তার কোনো দ্বিধা ছিল না। তিনি সার্বভৌম যিহোবার প্রতি পুরোপুরি বশীভূত ছিলেন এবং দায়ূদকে ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে পূর্ণরূপে সমর্থন করেছিলেন। একইভাবে বর্তমানেও, এমনকী আমাদেরকে যদি মণ্ডলীতে কোনো বিশেষ সুযোগ প্রদান করা না-ও হয়, তবুও আমাদের স্বেচ্ছায় সেই ভাইদের সমর্থন করা উচিত, যাদেরকে আমাদের মাঝে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।—১ থিষল. ৫:১২, ১৩; ইব্রীয় ১৩:১৭, ২৪.

১০, ১১. (ক) কেন পিতর অনুগতভাবে যিশুর সঙ্গে থেকে গিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা পিতরকে অনুকরণ করতে পারি আর সেটা আমাদেরকে কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

১০ আমরা আরেকটা যে-উত্তম উদাহরণ বিবেচনা করব, তা হল প্রেরিত পিতরের উদাহরণ, যিনি যিশুর প্রতি তার আনুগত্য সম্বন্ধে স্বীকার করেছিলেন। শীঘ্র তাঁর যে-মাংস এবং রক্ত বলিদান করা হবে, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস দেখানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে গিয়ে, খ্রিস্ট যখন সুস্পষ্ট ও রূপক ভাষা ব্যবহার করেছিলেন, তখন তাঁর অনেক শিষ্যের কাছে তাঁর কথাগুলোকে কঠিন বলে মনে হয়েছিল আর তাই তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। (যোহন ৬:৫৩-৬০, ৬৬) তাই, যিশু তাঁর ১২ জন প্রেরিতের দিকে ফিরে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে?” সেই সময় পিতরই এই উত্তর দিয়েছিলেন: “প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে; আর আমরা বিশ্বাস করিয়াছি এবং জ্ঞাত হইয়াছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।” (যোহন ৬:৬৭-৬৯) এর অর্থ কি এই ছিল যে, যিশু তাঁর আসন্ন বলিদান সম্বন্ধে সবেমাত্র যা বলেছিলেন, সেটা পিতর পুরোপুরিভাবে বুঝতে পেরেছিলেন? হয়তো না। তা সত্ত্বেও, পিতর ঈশ্বরের অভিষিক্ত পুত্রের প্রতি অনুগত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।

১১ পিতর এই যুক্তি দেখাননি যে, বিভিন্ন বিষয়ে যিশুর নিশ্চয়ই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে আর পরে তিনি তাঁর কথা ফিরিয়ে নেবেন। এর পরিবর্তে, পিতর নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, যিশুর কাছে “অনন্ত জীবনের কথা” আছে। একইভাবে, বর্তমানে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই, যখন আমরা ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষের’ কাছ থেকে প্রাপ্ত খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদিতে এমন কোনো বিষয় পাই, যা বোঝা কঠিন অথবা যা আমাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে না? আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল রেখে কোনো একটা পরিবর্তন করা হবে, শুধুমাত্র এইরকম আশা করার পরিবর্তে, আমাদের সেটার অর্থ বোঝার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত।পড়ুন, লূক ১২:৪২.

আপনার বিবাহসাথির প্রতি অনুগত থাকুন

১২, ১৩. কেন একজন ব্যক্তি হয়তো তার বিবাহসাথির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন আর কেন তা ঘটার পিছনে একজন ব্যক্তির বয়স এক অজুহাত হতে পারে না?

১২ যেকোনো ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে এমন এক জঘন্য কাজ, যে-কাজকে আমরা কোনোভাবেই খ্রিস্টীয় পরিবারের এবং মণ্ডলীর শান্তি ও একতাকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেব না। এই বিষয়টা মনে রেখে আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা আমাদের বিবাহসাথির প্রতি ও আমাদের ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ়ভাবে আনুগত্য বজায় রাখতে পারি।

১৩ পারদারিকতা হচ্ছে সবচেয়ে সাংঘাতিক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে একটা। একজন পারদারিক ব্যক্তি বিবাহসাথির প্রতি তার বিশ্বস্ততাকে নষ্ট করেন এবং অন্যের প্রতি মনোযোগ দেন। যে-সাথির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়, তিনি হঠাৎ একা হয়ে যান—তার জীবনটা একেবারে ওলটপালট হয়ে যায়। দুজন ব্যক্তি, যারা একসময় একে অন্যকে ভালোবাসত, তাদের মধ্যে কীভাবে সেই বিষয়টা ঘটে? প্রায় ক্ষেত্রেই, প্রথম পদক্ষেপটা সেই সময় নেওয়া হয়, যখন বিবাহসাথিরা আবেগগতভাবে একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েলা টারনাটুরি ব্যাখ্যা করেন যে, কোনো দম্পতি তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় রাখার জন্য যথাসাধ্য করা বন্ধ করে দিলে বিশ্বাসঘাতকতা দেখা দিতে পারে। বিবাহসাথির কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার এই বিষয়টা কারো কারো ক্ষেত্রে এমনকী মধ্যবয়সে গিয়েও ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ বছর বয়সি একজন বিবাহিত ব্যক্তি অন্য একজন মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার সঙ্গে থাকার জন্য নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিলেন, যে-স্ত্রী ২৫ বছর ধরে তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। কেউ কেউ এটাকে মধ্যবয়সের বাতিক বলে অজুহাত দেখিয়ে থাকে। কিন্তু, এই বিষয়টাকে এড়ানো অসম্ভব এমনভাবে না বলে বরং আসুন আমরা এটাকে প্রকৃতপক্ষে যা বলে, ঠিক তা-ই বলি আর তা হল মধ্যবয়সের বিশ্বাসঘাতকতা। *

১৪. (ক) একটা বিয়েতে প্রতারণা সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন? (খ) বৈবাহিক বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে যিশু কী বলেছিলেন?

১৪ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন, যারা কোনো শাস্ত্রীয় কারণ ছাড়াই তাদের সাথিকে পরিত্যাগ করে? আমাদের ঈশ্বর ‘স্ত্রীত্যাগ [“বিবাহ বিচ্ছেদ,” ইজি-টু-রিড ভারসন] ঘৃণা করেন’ এবং তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতি কঠোর বাক্য বলেছেন, যারা তাদের বিবাহসাথির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ও তাদেরকে পরিত্যাগ করে। (পড়ুন, মালাখি ২:১৩-১৬.) তাঁর পিতার সঙ্গে মিল রেখে যিশুও শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তি তার নির্দোষ সাথিকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বা পরিত্যাগ করে, এমন ভাব দেখাতে পারেন না, যেন কিছুই ঘটেনি।পড়ুন, মথি ১৯:৩-৬, .

১৫. বিবাহিত ব্যক্তিরা কীভাবে তাদের বিবাহসাথির প্রতি তাদের আনুগত্যকে দৃঢ় করতে পারে?

১৫ বিবাহিত ব্যক্তিরা কীভাবে তাদের বিবাহসাথির প্রতি অনুগত থাকতে পারে? ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় [অথবা স্বামীতে] আমোদ কর” এবং “তুমি আপন প্রিয়া ভার্য্যার [অথবা প্রিয় স্বামীর] সহিত সুখে জীবন যাপন কর।” (হিতো. ৫:১৮; উপ. ৯:৯) দুজন সাথির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে শারীরিক ও আবেগগত উভয়ভাবেই নিজেদের সম্পর্ককে দৃঢ় রাখার জন্য অবশ্যই যথাসাধ্য করতে হবে। এর মানে হচ্ছে, পরস্পরের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটানো এবং পরস্পরের আরও নিকটবর্তী হওয়া। তাদেরকে নিজেদের বিয়ে এবং যিহোবার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। তা করার জন্য, দম্পতিদের একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে, একসঙ্গে নিয়মিতভাবে পরিচর্যায় কাজ করতে হবে এবং যিহোবার আশীর্বাদের জন্য একসঙ্গে প্রার্থনা করতে হবে।

যিহোবার প্রতি অনুগত থাকুন

১৬, ১৭. (ক) পরিবারে ও মণ্ডলীর মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য কীভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে? (খ) কোন উদাহরণ তুলে ধরে যে, সমাজচ্যুত আত্মীয়স্বজনের সংসর্গে না থাকার বিষয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞার বাধ্য হওয়া উত্তম ফলাফল নিয়ে আসতে পারে?

১৬ মণ্ডলীতে এমন সদস্যরা রয়েছে, যারা গুরুতর পাপ করেছে এবং যাদেরকে “তীক্ষ্ণভাবে” অনুযোগ করা হয়েছে, “যেন তাহারা বিশ্বাসে নিরাময় হয়।” (তীত ১:১৩) আবার কাউকে কাউকে তাদের আচরণের জন্য সমাজচ্যুত করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। শাসনের দ্বারা “যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে,” তাদেরকে এটা আধ্যাত্মিকভাবে পুনরুদ্ধার লাভ করতে সাহায্য করেছে। (ইব্রীয় ১২:১১) সমাজচ্যুত ব্যক্তিটি যদি আমাদের কোনো আত্মীয় অথবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে থাকেন, তাহলে? সেই সময় আমাদের আনুগত্য, সেই ব্যক্তির প্রতি নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য, ঝুঁকির মুখে থাকে। কোনো সমাজচ্যুত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার ব্যাপারে যিহোবার আজ্ঞা আমরা মেনে চলব কি না, তা দেখার জন্য তিনি আমাদের প্রতি লক্ষ রাখছেন।পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩.

১৭ একটা পরিবার যখন সমাজচ্যুত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মেলামেশা না করার ব্যাপারে যিহোবার আইনকে অনুগতভাবে সমর্থন করে, তখন এর ফলে যে-উত্তম ফল লাভ করা যায়, সেটার মাত্র একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। একজন যুবক দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজচ্যুত ছিল আর এই সময়টাতে তার বাবা, মা ও চার ভাই তার ‘সংসর্গে থাকে নাই।’ কখনো কখনো, সে তাদের বিভিন্ন কাজে নিজেকে জড়িত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটা প্রশংসনীয় যে, সেই পরিবারের প্রত্যেক সদস্য তার সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ না রাখার ব্যাপারে দৃঢ় ছিল। তাকে পুনর্বহাল করার পর সে বলেছিল, সে সবসময় তার পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করার অভাব বোধ করত আর তা বিশেষভাবে রাতের বেলাতে, যখন সে একা থাকত। কিন্তু সে স্বীকার করেছিল, তার পরিবার যদি তার সঙ্গে সামান্যও মেলামেশা করত, তাহলে সেই সামান্য মেলামেশাই তাকে পরিতৃপ্ত করতে পারত। কিন্তু, যেহেতু তার পরিবারের কোনো সদস্যই তার সঙ্গে এমনকী বিন্দুমাত্র ভাববিনিময়ও করেনি, তাই তাদের সঙ্গে থাকার প্রবল আকাঙ্ক্ষাই যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করার পিছনে এক অনুপ্রেরণাদায়ক শক্তি হয়ে উঠেছিল। আপনি যদি কখনো আপনার সমাজচ্যুত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মেলামেশা না করার ব্যাপারে ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করার জন্য প্রলোভিত হন, তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন।

১৮. আনুগত্যের উপকারিতা বনাম আনুগত্যহীনতার পরিণতি সম্বন্ধে পরীক্ষা করার পর, আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?

১৮ আমরা এক প্রতারণাপূর্ণ, আনুগত্যহীন জগতে বাস করছি। কিন্তু তার পরও, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমাদের চারপাশে যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে আমরা অনুকরণ করার মতো অনুগত ব্যক্তিদের উদাহরণ খুঁজে পেতে পারি। তাদের জীবনধারা তাদের পক্ষে কথা বলে, যেন এইরকম বলতে চায়: “বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের কাছে আমরা কেমন অনুগত, ধার্ম্মিক ও নির্দ্দোষাচারী ছিলাম, তাহার সাক্ষী তোমরা আছ, ঈশ্বরও আছেন।” (১ থিষল. ২:১০) আমরা সকলে যেন ঈশ্বরের প্রতি এবং একে অন্যের প্রতি চিরকাল অনুগত থাকার ব্যাপারে দৃঢ় থাকি।

[পাদটীকাগুলো]

^ শিম্‌শোনের চুল নয় বরং তা যে-বিষয়কে চিত্রিত করত, সেটাই অর্থাৎ একজন নাসরীয় হিসেবে যিহোবার সঙ্গে শিম্‌শোনের বিশেষ সম্পর্কই তার শক্তির উৎস ছিল।

^ এই কারণে, “যিহূদার চুম্বন” অভিব্যক্তিটির অর্থ হল “বিশ্বাসঘাতকতার কাজ।”

^ কোনো বিবাহসাথির আনুগত্যহীনতার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য লাভ করার জন্য ২০১০ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৯-৩২ পৃষ্ঠায় “একজন সাথির বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

পিতর ঈশ্বরের অভিষিক্ত পুত্রের প্রতি অনুগত ছিলেন, এমনকী যদিও অন্যেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল