সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখুন

যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখুন

যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখুন

“হে আমার পুত্ত্র . . . তুমি আপন পিতার ঈশ্বরকে জ্ঞাত হও, এবং একাগ্র অন্তঃকরণে . . . তাঁহার সেবা কর।” —১ বংশা. ২৮:৯.

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করুন:

রূপক হৃদয় কী?

আমাদের হৃদয়কে পরীক্ষা করার জন্য আমরা কোন উপায় অবলম্বন করতে পারি?

কীভাবে আমরা নিজেদের হৃদয়কে যিহোবার প্রতি একাগ্র রাখতে পারি?

১, ২. (ক) ঈশ্বরের বাক্যে দেহের কোন অঙ্গকে অন্য যেকোনো অঙ্গের চেয়ে প্রায়ই অনেক বেশি বার রূপকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে? (খ) কেন আমাদের জন্য রূপক হৃদয়ের অর্থ বোঝা গুরুত্বপূর্ণ?

 ঈশ্বরের বাক্য প্রায়ই মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্বন্ধে রূপকভাবে উল্লেখ করে। উদাহরণস্বরূপ, কুলপতি ইয়োব বলেছিলেন: “আমার হস্তে অত্যাচার নাই।” রাজা শলোমন এই মন্তব্য করেছিলেন: “মঙ্গল-সমাচার অস্থি সকল পুষ্ট করে।” যিহোবা যিহিষ্কেলকে আশ্বাস দিয়েছিলেন: “চক্‌মকি পাথর হইতেও . . . আমি তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম।” আর প্রেরিত পৌলকে বলা হয়েছিল: “আপনি কতকগুলি অদ্ভুত কথা আমাদের কাণে তুলিতেছেন।”—ইয়োব ১৬:১৭; হিতো. ১৫:৩০; যিহি. ৩:৯; প্রেরিত ১৭:২০.

কিন্তু, বাইবেল মানবদেহের একটা অঙ্গকে অন্য যেকোনো অঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি বার রূপকভাবে উল্লেখ করেছে। এটা হচ্ছে সেই অঙ্গ, যেটার বিষয়ে বিশ্বস্ত হান্না একটা প্রার্থনায় উল্লেখ করেছিলেন: “আমার অন্তঃকরণ সদাপ্রভুতে উল্লাসিত।” (১ শমূ. ২:১) বস্তুতপক্ষে, বাইবেল লেখকরা প্রায় এক হাজার বার হৃদয় শব্দটি উল্লেখ করেছে আর প্রায় সবসময়ই তা রূপক অর্থে তুলে ধরা হয়েছে। * হৃদয় কোন বিষয়কে চিত্রিত করে, তা বোঝা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাইবেল বলে যে, আমাদের এটাকে রক্ষা করতে হবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২৩.

রূপক হৃদয়—এটা কী?

৩. কীভাবে আমরা বাইবেলে উল্লেখিত “হৃদয়” শব্দের অর্থ বুঝতে পারি? উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরুন।

ঈশ্বরের বাক্য যদিও “হৃদয়” শব্দের কোনো আভিধানিক সংজ্ঞা প্রদান করে না, কিন্তু এটি আমাদের সেই শব্দের অর্থ বুঝতে সমর্থ করে। কীভাবে? উদাহরণস্বরূপ, একটা অপূর্ব মোজেইক করা দেওয়াল সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যা হাজার হাজার ছোটো নুড়িপাথর কাছাকাছি বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি পুরো মোজেইকটা লক্ষ করার জন্য একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখেন যে, খুব সতর্কভাবে বসানো নুড়িপাথর একসঙ্গে একটা নকশা অথবা চিত্র গঠন করেছে। একইভাবে, আমরাও যদি একটু পিছিয়ে গিয়ে বাইবেলের যে-জায়গাগুলোতে “হৃদয়” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো লক্ষ করি, তাহলে আমরাও বুঝতে পারব যে, উল্লেখিত এই অংশগুলো একসঙ্গে বিবেচনা করলে সেগুলো একটা নকশা অথবা চিত্র গঠন করে। কোন চিত্র গঠন করে?

৪. (ক) “হৃদয়” শব্দটি কোন বিষয়কে চিত্রিত করে? (খ) মথি ২২:৩৭ পদে প্রাপ্ত যিশুর কথাগুলোর অর্থ কী?

বাইবেল লেখকরা মানুষের ভিতরের পুরো সত্তাকে বর্ণনা করার জন্য “হৃদয়” শব্দটি ব্যবহার করেছে। এর অন্তর্ভুক্ত এই ধরনের বিষয়গুলো যেমন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা, চিন্তাভাবনা, স্বভাব, মনোভাব, সামর্থ্য, প্রেরণা এবং লক্ষ্য। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৭; হিতোপদেশ ১৬:৯; প্রেরিত ২:২৬.) একটি তথ্যগ্রন্থ বলে, এটা হচ্ছে “অন্তরস্থ সম্পূর্ণ মানুষ।” কিছু ক্ষেত্রে, “হৃদয়” শব্দটির আরও ক্ষুদ্র অর্থ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যিশু বলেছিলেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭) এই ক্ষেত্রে, “অন্তঃকরণ” শব্দটি ভিতরের ব্যক্তির আবেগ, আকাঙ্ক্ষা ও অনুভূতিকে নির্দেশ করে। আলাদা আলাদাভাবে অন্তঃকরণ, প্রাণ ও মন উল্লেখ করার মাধ্যমে যিশু এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে আমাদের অনুভূতির মাধ্যমে আর সেইসঙ্গে আমরা যেভাবে জীবনযাপন করি এবং আমাদের মানসিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করি, সেগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। (যোহন ১৭:৩; ইফি. ৬:৬) কিন্তু, যখন শুধু “অন্তঃকরণ” শব্দটি উল্লেখ করা হয়, তখন তা ভিতরের সম্পূর্ণ ব্যক্তিকে বোঝায়।

যে-কারণে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে হবে

৫. কেন আমরা একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করার জন্য যথাসাধ্য করতে চাই?

 রাজা দায়ূদ, হৃদয় সম্বন্ধে শলোমনকে এই কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “হে আমার পুত্ত্র . . . তুমি আপন পিতার ঈশ্বরকে জ্ঞাত হও, এবং একাগ্র অন্তঃকরণে ও ইচ্ছুক মনে তাঁহার সেবা কর; কেননা সদাপ্রভু সমস্ত অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করেন, ও চিন্তার সমস্ত কল্পনা বুঝেন।” (১ বংশা. ২৮:৯) প্রকৃতপক্ষে, যিহোবা সমস্ত হৃদয়ের পরীক্ষা করেন, যার মধ্যে আমাদের হৃদয়ও রয়েছে। (হিতো. ১৭:৩; ২১:২) আর আমাদের হৃদয়ের মধ্যে তিনি যা খুঁজে পান, সেটা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এবং আমাদের ভবিষ্যতের ওপর এক জোরালো প্রভাব ফেলে। তাই, একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করার জন্য যথাসাধ্য করার মাধ্যমে আমাদের দায়ূদের অনুপ্রাণিত পরামর্শ অনুসরণ করার উত্তম কারণ রয়েছে।

৬. যিহোবাকে সেবা করার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্প সম্বন্ধে আমাদের কী উপলব্ধি করা উচিত?

যিহোবার লোক হিসেবে আমাদের উদ্যোগী কাজগুলো দেখায় যে, আমাদের আসলেই একাগ্র হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবা করার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। একই সময়ে, আমরা এটাও উপলব্ধি করি যে, শয়তানের দুষ্ট জগতের বিভিন্ন চাপ এবং আমাদের মাংসের পাপপূর্ণ প্রবণতা হচ্ছে শক্তিশালী প্রভাব, যেগুলো ঈশ্বরকে সর্বান্তঃকরণে সেবা করার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে। (যির. ১৭:৯; ইফি. ২:২) তাই, আমরা যে ঈশ্বরের সেবা করার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তে দুর্বল হয়ে পড়ছি না—নিজেদের রক্ষা করার ব্যাপারে অসতর্ক হয়ে পড়ছি না—তা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের নিয়মিতভাবে নিজেদের হৃদয়কে পরীক্ষা করতে হবে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

৭. কী আমাদের হৃদয়ের অবস্থাকে প্রকাশ করে দেয়?

স্পষ্টতই, আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব দেখা যায় না—ঠিক যেমন একটা গাছের কেন্দ্রীয় অংশ বা হৃদয় দেখা যায় না। তা সত্ত্বেও, যিশু পর্বতেদত্ত উপদেশে উল্লেখ করেছিলেন যে, ফল যেমন একটা গাছের অবস্থাকে প্রকাশ করে দেয়, তেমনই আমাদের কার্যকলাপ আমাদের হৃদয়ের প্রকৃত অবস্থাকে প্রকাশ করে দেয়। (মথি ৭:১৭-২০) আসুন আমরা এইরকম একটা বাহ্যিক কাজ সম্বন্ধে বিবেচনা করি।

আমাদের হৃদয়কে পরীক্ষা করার এক বাস্তব উপায়

৮. আমাদের হৃদয়ে যা রয়েছে, সেটার সঙ্গে মথি ৬:৩৩ পদে প্রাপ্ত যিশুর কথাগুলোর কী সম্পর্ক রয়েছে?

এর আগে, সেই একই উপদেশে যিশু তাঁর শ্রোতাদের এও বলেছিলেন যে, তাদের কোন সুনির্দিষ্ট কাজটা যিহোবাকে সর্বান্তঃকরণে সেবা করার ব্যাপারে তাদের অন্তরস্থ আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করবে। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:৩৩) প্রকৃতপক্ষে, আমরা নিজেদের জীবনে যে-বিষয়টাকে প্রথমে রাখি, সেটার মাধ্যমেই আমরা আমাদের হৃদয়ের গভীরের আকাঙ্ক্ষা, চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা কী, তা তুলে ধরি। তাই, আমাদের জীবনের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে এক বাস্তব উপায়, যা এই বিষয়টাকে নিশ্চিত করে যে, আমরা একাগ্র হৃদয়ে ঈশ্বরকে সেবা করছি কি না।

৯. যিশু কয়েকজন ব্যক্তিকে কোন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আর তাদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কোন বিষয়টা প্রকাশ পেয়েছিল?

যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘প্রথমে তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ জোরালো পরামর্শ দেওয়ার অল্পসময় পরেই এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যা তুলে ধরে যে, একজন ব্যক্তি যে-বিষয়টাকে জীবনে প্রথমে রাখেন, সেটা কীভাবে সেই ব্যক্তির হৃদয়ের অবস্থাকে সত্যিই প্রকাশ করে দেয়। সুসমাচার লেখক লূক এই বিষয়টা বলার মাধ্যমে সেই ঘটনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন যে, যিশু দৃঢ়ভাবে বা “একান্ত মনে যিরূশালেমে যাইতে উন্মুখ হইলেন,” এমনকী যদিও তিনি ভালো করেই জানতেন যে, সেখানে শেষপর্যন্ত তাঁর জন্য কী অপেক্ষা করছে। যিশু ও তাঁর শিষ্যরা “পথে যাইতেছেন” এমন সময়ে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, যাদেরকে তিনি এই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন: “আমার পশ্চাৎ আইস।” সেই লোকেরা যিশুর আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিল—তবে নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে। একজন উত্তর দিয়েছিল: “প্রভু, অগ্রে আমার পিতার কবর দিয়া আসিতে অনুমতি করুন।” আরেকজন বলেছিল: “প্রভু আমি আপনার পশ্চাৎ যাইব, কিন্তু অগ্রে নিজ বাটীর লোকদের নিকটে বিদায় লইয়া আসিতে অনুমতি করুন।” (লূক ৯:৫১, ৫৭-৬১) যিশুর দৃঢ়, সর্বান্তঃকরণ সংকল্প এবং ওই ব্যক্তিদের দুর্বল শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাবের মধ্যে কতই না পার্থক্য ছিল! তাদের নিজস্ব চিন্তার বিষয়গুলোকে রাজ্যের বিষয়গুলোর চেয়ে প্রথমে রাখার মাধ্যমে তারা প্রকাশ করেছিল যে, তাদের হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি একাগ্র ছিল না।

১০. (ক) খ্রিস্টের অনুসারীরা যিশুর আমন্ত্রণের প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? (খ) যিশু কোন সংক্ষিপ্ত দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন?

১০ এইরকম সম্ভাব্য শিষ্যদের বিপরীতে, আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে যিশুর অনুসারী হওয়ার জন্য তাঁর আমন্ত্রণকে গ্রহণ করেছি আর এখন প্রতিদিন যিহোবাকে সেবা করছি। এভাবে আমরা প্রকাশ করি যে, আমাদের হৃদয়ে যিহোবা সম্বন্ধে আমরা কেমন অনুভব করি। কিন্তু, মণ্ডলীতে সক্রিয় থাকার পরও, আমাদেরকে নিজেদের হৃদয়ের অবস্থার ব্যাপারে এক সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে। সেটা কী? সেই সম্ভাব্য শিষ্যদের সঙ্গে বলা একই কথাবার্তায় যিশু এই বলে সেই বিপদটা সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিলেন: “যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়।” (লূক ৯:৬২) এই দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

আমরা কি ‘যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হই’?

১১. যিশুর দৃষ্টান্তে উল্লেখিত মজুরের কাজের ব্যাপারে কী ঘটেছিল এবং কেন?

১১ যিশুর তুলে ধরা সংক্ষিপ্ত দৃষ্টান্তের শিক্ষাটা স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য, আসুন আমরা এই শব্দচিত্রে কিছু চরিত্র ও বিস্তারিত বিষয় যুক্ত করি। একজন মজুর জমি চাষ করায় ব্যস্ত আছেন। কিন্তু, চাষ করার সময় তিনি নিজের ঘরের কথা চিন্তা করা থেকে বিরত হতে পারেন না, যেখানে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, খাবারদাবার, গানবাজনা, আনন্দউল্লাস ও বৈচিত্র্যময় বিষয় রয়েছে। তিনি সেগুলোর জন্য আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করেন। বেশ খানিকটা জমি চাষ করার পর, জীবনের ওই সুখকর বিষয়গুলোর জন্য সেই মজুরের আকাঙ্ক্ষা এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, তিনি “পিছনে” বা পিছনের বিষয়গুলোর দিকে ফিরে তাকান। যদিও সেই জমিতে চারা রোপণ না করা পর্যন্ত অনেক কাজ রয়েছে, তবুও সেই মজুর বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন এবং তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিশ্চিতভাবেই, সেই মজুরের প্রভু তার কর্মীর ধৈর্যের অভাব দেখে হতাশ হন।

১২. যিশুর দৃষ্টান্তের মজুর এবং বর্তমানের কিছু খ্রিস্টানের মধ্যে আমরা কোনো সাদৃশ্য দেখতে পারি?

১২ এখন, আধুনিক দিনের পরিস্থিতিতে একটা সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা বিবেচনা করুন। সেই মজুর এমন যেকোনো খ্রিস্টানকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, যাকে দেখে মনে হয় তিনি ভালোভাবে কাজ করছেন, কিন্তু আসলে তিনি আধ্যাত্মিক বিপদের মধ্যে রয়েছেন। তুলনা করার জন্য আসুন আমরা এমন একজন ভাই সম্বন্ধে কল্পনা করি, যিনি পরিচর্যায় ব্যস্ত আছেন। তবে, সভাগুলোতে যোগ দেওয়া ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়া সত্ত্বেও, তিনি জগতের জীবনধারার এমন নির্দিষ্ট কিছু দিক সম্বন্ধে চিন্তা করা থেকে বিরত হতে পারেন না, যেগুলোকে তার কাছে আবেদনময় বলে মনে হয়। হৃদয়ের গভীরে তিনি সেগুলোর জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করেন। অবশেষে, কয়েক বছর ধরে তার পরিচর্যা সম্পন্ন করার পর, এই জগতের কিছু বিষয়ের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, তিনি “পিছনে” বা পিছনের বিষয়গুলোর দিকে ফিরে তাকান। যদিও পরিচর্যায় এখনও অনেক কিছু করার আছে, তবুও তিনি “জীবনের বাক্য ধরিয়া” রাখেন না এবং ঈশতান্ত্রিক কার্যকলাপে তার অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (ফিলি. ২:১৬) যিহোবা অর্থাৎ ‘শস্যক্ষেত্রের স্বামী’ এইরকম যেকোনো ধরনের ধৈর্যের অভাব দেখে দুঃখিত হন।—লূক ১০:২.

১৩. যিহোবাকে একাগ্র হৃদয়ে সেবা করার সঙ্গে কী জড়িত?

১৩ শিক্ষাটা স্পষ্ট। আমরা যদি নিয়মিতভাবে গঠনমূলক ও পরিতৃপ্তিদায়ক কার্যকলাপে অংশ নিই যেমন, মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিই এবং ক্ষেত্রে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করি, তাহলে সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু, যিহোবাকে একাগ্র হৃদয়ে সেবা করার সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত। (২ বংশা. ২৫:১, ২, ২৭) একজন খ্রিস্টান যদি তার হৃদয়ের গভীরে “পিছনে” বা পিছনের বিষয়গুলোকে—অর্থাৎ জগতের জীবনধারার নির্দিষ্ট কিছু দিককে—ভালোবেসেই চলেন, তাহলে তিনি ঈশ্বরের কাছে তার সুনাম হারানোর বিপদের মুখে রয়েছেন। (লূক ১৭:৩২) একমাত্র যখন আমরা সত্যিকার অর্থেই ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করি এবং যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হই,’ তখনই আমরা “ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী” হতে পারব। (রোমীয় ১২:৯; লূক ৯:৬২) তাই, আমাদের সকলকেই এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে যে, শয়তানের জগতের কোনো কিছুই যেন আমাদেরকে সর্বান্তঃকরণে রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়া থেকে বিরত না করে, তা সেই বিষয়টা যত উপকারী অথবা সুখকর বলেই মনে হোক না কেন।—২ করি. ১১:১৪; পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:১৩, ১৪.

সতর্ক থাকুন!

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে শয়তান আমাদের হৃদয়ের অবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে? (খ) উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কোন বিষয়টা শয়তানের উপায়কে অত্যন্ত বিপদজনক করে তুলেছে।

১৪ যিহোবার প্রতি প্রেম আমাদেরকে তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। তখন থেকে, আমাদের মধ্যে অনেকেই বছরের পর বছর ধরে প্রমাণ দিয়েছি যে, আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের হৃদয়কে একাগ্র রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু, শয়তান আমাদের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেয়নি। আমাদের হৃদয় এখনও তার লক্ষ্যবস্তু। (ইফি. ৬:১২) অবশ্য, সে হয়তো বুঝতে পারে যে, আমরা হঠাৎ করে এমনি এমনিই যিহোবাকে পরিত্যাগ করব না। তাই, সে আমাদের আন্তরিক উদ্যোগকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টায় ‘সংসার’ বা এই বিধিব্যবস্থাকে ধূর্ততার সঙ্গে কাজে লাগায়। (পড়ুন, মার্ক ৪:১৮, ১৯.) শয়তানের সেই উপায়টা কেন অত্যন্ত কার্যকারী?

১৫ এই প্রশ্নের উত্তরটা জানার জন্য কল্পনা করুন যে, আপনি ১০০ ওয়াটের একটা বাল্‌বের আলোতে একটা বই পড়ছেন, কিন্তু হঠাৎ সেই বাল্‌বটা ফিউজ হয়ে যায়। যেহেতু আপনি অন্ধকারের মধ্যে রয়েছেন, তাই আপনি সঙ্গেসঙ্গে বুঝতে পারেন যে কী ঘটেছে আর তাই সেই ফিউজ হয়ে যাওয়া বাল্‌বটার জায়গায় একটা নতুন বাল্‌ব লাগান। ঘরটা আবারও আলোয় ভরে যায়। পরদিন সন্ধ্যা বেলা, আপনি আবারও সেই একই বাল্‌বের সাহায্যে পড়ছেন। কিন্তু, আপনার অজান্তে কেউ একজন সেই ১০০ ওয়াটের নতুন বাল্‌বটার জায়গায় একটা ৯৫ ওয়াটের বাল্‌ব লাগিয়ে দিয়েছে। আপনি কি পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন? সম্ভবত না। আর যদি এর পরের দিন কেউ একজন আপনার বাল্‌বটার জায়গায় একটা ৯০ ওয়াটের বাল্‌ব লাগিয়ে দেয়, তাহলে? সম্ভবত, তখনও আপনি সেটা বুঝতে পারবেন না। কেন? সেই বাল্‌বের আলো এত ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে যে, আপনি সেই সম্বন্ধে জানতেই পারেন না। একইভাবে, শয়তানের জগতের বিভিন্ন প্রভাব হয়তো আমাদের উদ্যোগকে একটু একটু করে কমিয়ে দিতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সেটা এমন হবে যেন যিহোবার সেবা করার জন্য ১০০ ওয়াটের আন্তরিক উদ্যোগকে কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শয়তান সফল হয়েছে। সতর্ক না হলে একজন খ্রিস্টান হয়তো ধীরে ধীরে যে-পরিবর্তন হচ্ছে, তা এমনকী বুঝতেও পারবেন না।—মথি ২৪:৪২; ১ পিতর ৫:৮.

প্রার্থনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ

১৬. কীভাবে আমরা নিজেদেরকে শয়তানের কলাকৌশল থেকে সুরক্ষা করতে পারি?

১৬ কীভাবে আমরা শয়তানের এইরকম কলাকৌশল থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষা করতে এবং যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখতে পারি? (২ করি. ২:১১) প্রার্থনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পৌল সহবিশ্বাসীদের ‘দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইবার’ জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। এরপর, তিনি তাদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে . . . প্রার্থনা কর।”—ইফি. ৬:১১, ১৮; ১ পিতর ৪:৭.

১৭. যিশুর প্রার্থনাগুলো আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

১৭ শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য, আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে যিশুর প্রার্থনাপূর্ণ মনোভাব অনুকরণ করি, যে-মনোভাব যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখার ব্যাপারে তাঁর গভীর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, লক্ষ করুন যে, যিশু মৃত্যুর আগের রাতে যেভাবে প্রার্থনা করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে লূক কী লিপিবদ্ধ করেছেন: “তিনি মর্ম্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন।” (লূক ২২:৪৪) যদিও যিশু এর আগেও একাগ্রভাবে বা আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন কিন্তু এই ঘটনায় অর্থাৎ তাঁর পার্থিব জীবনের সবচেয়ে চরম পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে তিনি “আরও একাগ্র ভাবে” প্রার্থনা করেছিলেন—আর তাঁর সেই প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল। যিশুর উদাহরণ দেখায় যে, প্রার্থনাগুলো কতখানি ঐকান্তিক, সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। তাই, যখন আমাদের পরীক্ষাগুলো আরও বেশি কঠিন এবং শয়তানের কলাকৌশল আরও বেশি ছলনাপূর্ণ হয়, তখন যিহোবার সুরক্ষার জন্য আমাদের “আরও একাগ্র ভাবে” প্রার্থনা করা উচিত।

১৮. (ক) প্রার্থনা সম্বন্ধে আমাদের নিজেদেরকে কী জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন? (খ) কোন বিষয়গুলো আমাদের হৃদয়কে প্রভাবিত করে থাকে আর তা কীভাবে? (১৬ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

১৮ এই ধরনের প্রার্থনাগুলো আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করবে? পৌল বলেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় . . . রক্ষা করিবে।” (ফিলি. ৪:৬, ৭) হ্যাঁ, যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় রাখার জন্য আমাদের ঐকান্তিকভাবে ও নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করতে হবে। (লূক ৬:১২) তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার প্রার্থনাগুলো কতটা আন্তরিক ও নিয়মিত?’ (মথি ৭:৭; রোমীয় ১২:১২) আপনার উত্তরটা, ঈশ্বরকে সেবা করার ব্যাপারে আপনার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার গভীরতা সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে।

১৯. যিহোবার প্রতি একাগ্র হৃদয় বজায় জন্য আপনি কী করবেন?

১৯ আমরা যেমন আলোচনা করেছি, আমরা নিজেদের জীবনে যে-বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিই, সেগুলো আমাদের হৃদয়ের অবস্থা সম্বন্ধে আমাদেরকে অনেক কিছু বলতে পারে। আমরা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমাদের পিছনে ফেলে আসা বিষয়গুলো অথবা শয়তানের ধূর্ত কলাকৌশল, কোনোটাই একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারবে না। (পড়ুন, লূক ২১:১৯, ৩৪-৩৬.) তাই, দায়ূদের মতো আমরাও যিহোবার কাছে এই বিনতি করে চলি: “আমার চিত্তকে একাগ্র কর।”—গীত. ৮৬:১১.

[পাদটীকা]

^ বাইবেলের মূল পাণ্ডুলিপি ‘হৃদয়’ শব্দটি ব্যবহার করে, যেটিকে প্রায়ই অন্তঃকরণ, মন বা চিত্ত হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। তাই, এটা মনে রাখা ভালো যে, এই অধ্যয়নের সময় আমরা যখন শাস্ত্রপদে অন্তঃকরণ, মন বা চিত্ত শব্দগুলো পড়ব, তখন মূল ভাষায় সেখানে হৃদয় শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার বাক্স]

যে-তিনটে বিষয় আমাদের হৃদয়কে প্রভাবিত করে

আমরা যেমন আমাদের আক্ষরিক হৃদয়ের অবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, ঠিক তেমনই আমরা এক সুস্থ রূপক হৃদয় বজায় রাখতে আমাদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারি। তিনটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করুন:

১ পুষ্টিকর খাদ্য: আমাদের আক্ষরিক হৃদয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবারদাবার গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, আমরা নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, ধ্যান এবং সভাতে যোগদান করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে গঠনমূলক আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করছি।—গীত. ১:১, ২; হিতো. ১৫:২৮; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

২ ব্যায়াম: সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে আমাদের আক্ষরিক হৃদয়ের গতিকে দ্রুত সঞ্চালন করতে হয়। একইভাবে, পরিচর্যায় উদ্যোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা—হতে পারে আমাদের কার্যকলাপকে বাড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া—আমাদের রূপক হৃদয়কে ভালো অবস্থায় রাখে।—লূক ১৩:২৪; ফিলি. ৩:১২.

৩ পরিবেশ: যে-ঈশ্বরভক্তিহীন পরিবেশে আমাদের কাজ করতে এবং জীবনযাপন করতে হয়, তা আমাদের আক্ষরিক ও রূপক হৃদয়ের ওপর কঠিন চাপ নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু, আমরা যত বেশি সম্ভব সেই সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করার মাধ্যমে এই ধরনের চাপকে কমাতে পারি, যারা আমাদের জন্য আন্তরিকভাবে চিন্তা করে থাকে এবং যাদের হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি একাগ্র। —গীত. ১১৯:৬৩; হিতো. ১৩:২০.