সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে জানেন

যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে জানেন

যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে জানেন

“প্রভু [ঈশ্বর] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।”—২ পিতর ২:৯.

কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা:

তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় বিভিন্ন ঘটনার সময় সম্বন্ধে জানেন?

তাঁর লোকেদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য তাঁর শক্তিকে ব্যবহার করবেন?

কীভাবে চূড়ান্ত ঘটনাগুলো প্রকাশ পাবে, তা জানেন?

১. ‘মহাক্লেশের’ সময় পরিস্থিতি কেমন হবে?

 ঈশ্বরের বিচার শয়তানের জগতের ওপর হঠাৎ করেই শুরু হবে। (১ থিষল. ৫:২, ৩) “সদাপ্রভুর মহাদিন” যতই এগিয়ে আসবে, পার্থিব সমাজ ততই বিশৃঙ্খলার দিকে পতিত হবে। (সফ. ১:১৪-১৭) কষ্ট ও বঞ্চনা এক সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে। এটা এমন দুর্দশার এক সময় হয়ে উঠবে, “যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই।”—পড়ুন, মথি ২৪:২১, ২২.

২, ৩. (ক) ঈশ্বরের লোকেরা ‘মহাক্লেশের’ সময়ে কীসের মুখোমুখি হবে? (খ) সামনে যা রয়েছে, সেটার জন্য কোন বিষয়টা আমাদের শক্তিশালী করতে পারে?

“মহাক্লেশ” যতই এর চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে, ঈশ্বরের লোকেরা ততই “মাগোগ দেশীয় গোগের” প্রচণ্ড আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠবে। এই আক্রমণের সময়ে, “বিক্রমী সৈন্যসামন্ত” ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে “মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার জন্য” আসবে। (যিহি. ৩৮:২, ১৪-১৬) কোনো মানব সংগঠনই যিহোবার লোকেদের সুরক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে না। তাদের রক্ষা পাওয়ার বিষয়টা একমাত্র ঈশ্বরের ওপরই নির্ভর করবে। সেই সময়ে তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, যখন তারা নিশ্চিত ধ্বংসের মুখোমুখি হবে?

আপনি যদি যিহোবার একজন দাস হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কি এই বিশ্বাস রয়েছে যে, মহাক্লেশের সময় যিহোবা তাঁর লোকেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন এবং তিনি তা করবেনই? প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রভু [ঈশ্বর] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে, এবং অধার্ম্মিকদিগকে দণ্ডাধীনে বিচারদিনের জন্য রাখিতে জানেন।” (২ পিতর ২:৯) যিহোবা অতীতে যে-উদ্ধার কাজগুলো করেছেন সেগুলো নিয়ে ধ্যান করা, সামনে যা রয়েছে সেটার জন্য আমাদের শক্তিশালী করতে পারে। আসুন আমরা এমন তিনটে উদাহরণ বিবেচনা করি, যেগুলো তাঁর লোকেদের উদ্ধার করার জন্য যিহোবার ক্ষমতার প্রতি আমাদের আস্থা গড়ে তুলবে।

পৃথিবীব্যাপী এক জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়া

৪. কেন জলপ্লাবনের সঙ্গে সময় এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল?

প্রথমে, নোহের দিনের জলপ্লাবনের ঘটনা বিবেচনা করুন। যিহোবার ইচ্ছা পরিপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে, সময় এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। জাহাজ নির্মাণের বিশাল কাজ শেষ করতে হতো এবং পশুপাখিকে জলপ্লাবন শুরু হওয়ার আগে নিরাপদে জাহাজে ওঠাতে হতো। আদিপুস্তকের বিবরণ এমনটা জানায় না যে, যিহোবা প্রথমে জাহাজ নির্মাণ করিয়েছিলেন আর এরপর জলপ্লাবন নিয়ে আসবেন বলে ঠিক করেছিলেন, যাতে জাহাজের কাজ শেষ হতে দেরি হলে তিনি জলপ্লাবন নিয়ে আসার সময়কে পরিবর্তন করতে পারেন। এর পরিবর্তে, ঈশ্বর নোহকে জাহাজ নির্মাণ করার বিষয়ে কোনো কিছু বলার অনেক আগেই, জলপ্লাবন শুরু হওয়ার সময় নির্ধারণ করেছিলেন। কীভাবে আমরা সেটা জানি?

৫. আদিপুস্তক ৬:৩ পদে লিপিবদ্ধ উক্তিতে যিহোবা কী ঘোষণা করেছিলেন আর কখন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল?

বাইবেল আমাদের বলে যে, যিহোবা স্বর্গে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। আদিপুস্তক ৬:৩ পদ অনুসারে, তিনি এই কথা বলেছিলেন: “আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবেন না, তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র; পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে।” এটা মানুষের জীবনের গড় আয়ু সম্বন্ধে কোনো উক্তি ছিল না। এটা ছিল বিচার সংক্রান্ত এক সিদ্ধান্ত, যেটাতে যিহোবা এই ঘোষণা করেছিলেন যে, কখন তিনি ঈশ্বরভক্তিহীন পৃথিবীকে পরিষ্কার করার জন্য কাজ করবেন। * যেহেতু খ্রি.পূ. ২৩৭০ সালে জলপ্লাবন শুরু হয়েছিল, তাই আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, ঈশ্বর খ্রি.পূ. ২৪৯০ সালে এই ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময়ে নোহের বয়স ছিল ৪৮০ বছর। (আদি. ৭:৬) প্রায় ২০ বছর পর, খ্রি.পূ. ২৪৭০ সাল থেকে একে একে নোহের ছেলেদের জন্ম হয়। (আদি. ৫:৩২) যদিও জলপ্লাবন শুরু হতে প্রায় এক-শো বছর বাকি ছিল, কিন্তু যিহোবা তখনও নোহের কাছে সেই বিশেষ ভূমিকা সম্বন্ধে প্রকাশ করেননি, যে-ভূমিকা নোহ মানবপরিবারকে রক্ষা করার জন্য পালন করবেন। নোহকে তা বলার আগে ঈশ্বর কত সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন?

৬. যিহোবা কখন নোহকে জাহাজ নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন?

যিহোবা যা করতে যাচ্ছেন সেই বিষয়ে নোহের কাছে প্রকাশ করার আগে, তিনি স্পষ্টতই কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। কীসের ভিত্তিতে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি? অনুপ্রাণিত বিবরণ ইঙ্গিত করে যে, ঈশ্বর যখন নোহকে জাহাজ নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন নোহের ছেলেরা ইতিমধ্যেই বড়ো হয়ে গিয়েছিল ও বিয়ে করেছিল। যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “তোমার সহিত আমি আপনার নিয়ম স্থির করিব; তুমি আপন পুত্ত্রগণ, স্ত্রী ও পুত্ত্রবধূদিগকে সঙ্গে লইয়া সেই জাহাজে প্রবেশ করিবে।” (আদি. ৬:৯-১৮) তাই, এটা হতে পারে যে, নোহ সেই সময়ে জাহাজ নির্মাণ করার জন্য কার্যভার লাভ করেছিলেন, যখন জলপ্লাবনের আগে মাত্র ৪০ অথবা ৫০ বছর বাকি ছিল।

৭. (ক) নোহ ও তার পরিবার কীভাবে বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিল? (খ) অবশেষে ঈশ্বর কখন নোহকে জলপ্লাবন শুরু হওয়ার সঠিক সময়টা জানিয়েছিলেন?

জাহাজ নির্মাণের কাজ যতই এগিয়ে গিয়েছিল, নোহ ও তার পরিবার নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে, কীভাবে ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন এবং কখন জলপ্লাবন শুরু হবে। কিন্তু, সেই বিস্তারিত বিষয়গুলো সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব তাদেরকে জাহাজ নির্মাণ করা থেকে বিরত রাখেনি। শাস্ত্রীয় বিবরণ বলে: “তাহাতে নোহ সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।” (আদি. ৬:২২) অবশেষে যিহোবা জলপ্লাবন শুরু হওয়ার সাত দিন আগে, যখন নোহ ও তার পরিবারের কাছে জাহাজে পশুপাখি ঢোকানোর জন্য যথেষ্ট সময় ছিল, তখন নোহকে জানিয়েছিলেন যে, ঠিক কখন জলপ্লাবন শুরু হবে। তাই, “নোহের বয়সের ছয় শত বৎসরের দ্বিতীয় মাসের সপ্তদশ দিনে” যখন আকাশের বাতায়ন সকল মুক্ত হয়ে গিয়েছিল, তখন সবকিছু প্রস্তুত ছিল।—আদি. ৭:১-৫, ১১.

৮. কীভাবে জলপ্লাবনের বিবরণ এই আস্থা গড়ে তোলে যে, তাঁর লোকেদের কখন উদ্ধার করতে হবে তা যিহোবা জানেন?

জলপ্লাবনের বিবরণ যিহোবার দক্ষতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেয়, কেবল একজন সময়রক্ষক হিসেবেই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে একজন উদ্ধারকর্তা হিসেবেও। তিনি যখন বর্তমান বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার দিন গণনা করছেন, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা যা যা উদ্দেশ্য করেছেন, সেই সমস্তকিছুই তাঁর নিরূপিত সময়ে অর্থাৎ সেই ‘দিনেই ও দণ্ডেই’ পরিপূর্ণ হবে।—মথি ২৪:৩৬; পড়ুন, হবক্‌কূক ২:৩.

সূফসাগরে উদ্ধারলাভ

৯, ১০. কীভাবে যিহোবা মিশরীয় সেনাবাহিনীকে একটা ফাঁদে ফেলার জন্য তাঁর লোকেদের ব্যবহার করেছিলেন?

এই পর্যন্ত আমরা দেখেছি যে, তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় বিভিন্ন ঘটনার সময়ের ওপর যিহোবার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমরা যে-দ্বিতীয় উদাহরণ বিবেচনা করব, সেটা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করার ব্যাপারে যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভর করার আরেকটা কারণের ওপর জোর দেয়: তাঁর ইচ্ছা যেন পরিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন অসীম শক্তিকে ব্যবহার করবেন। তাঁর দাসদের উদ্ধার করার ব্যাপারে যিহোবার ক্ষমতা এতটাই নিশ্চিত যে, কখনো কখনো তিনি সেগুলোকে তাঁর শত্রুদের ফাঁদে ফেলার জন্য প্রলুব্ধ করতে ব্যবহার করেছিলেন। সেটাই ঘটেছিল, যখন তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে মিশরীয়দের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন।

১০ যে-ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে বের হয়ে এসেছিল, তাদের সংখ্যা হয়তো প্রায় ত্রিশ লক্ষ ছিল। যিহোবা মোশির মাধ্যমে তাদেরকে এমন একটা পথের দিকে যেতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যা ফরৌণকে এইরকম চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল যে, তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১৪:১-৪.) টোপটা প্রতিরোধ করতে না পেরে ফরৌণ তার সেনাবাহিনীকে প্রাক্তন দাসদের পিছু ধাওয়া করার জন্য পরিচালিত করেছিলেন, তাদেরকে সূফসাগরে ফাঁদে ফেলে দিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল যেন বের হওয়ার কোনো পথই নেই। (যাত্রা. ১৪:৫-১০) কিন্তু, ইস্রায়েলীয়রা আসলে কোনো বিপদের মধ্যে ছিল না। কেন? কারণ যিহোবা তাদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য উদ্যত ছিলেন।

১১, ১২. (ক) কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করেছিলেন? (খ) ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের ফলে কী হয়েছিল আর এই বিবরণ যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

১১ যে-“মেঘস্তম্ভ” ইস্রায়েলীয়দের পরিচালিত করছিল, সেটা তাদের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, ফরৌণের সেনাবাহিনীকে সামনে আসতে বাধা দিয়েছিল এবং সেই বাহিনীকে অন্ধকারে রেখেছিল। কিন্তু, সেই স্তম্ভ ইস্রায়েলীয়দের জন্য অলৌকিকভাবে রাতে আলো প্রদান করেছিল। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১৪:১৯, ২০.) যিহোবা এরপর প্রবল পূর্বীয় বায়ুর মাধ্যমে সমুদ্রকে দু-ভাগ করেছিলেন, ‘সমুদ্রকে সরাইয়া দিয়াছিলেন, ও তাহা শুষ্ক ভূমি করিয়াছিলেন।’ এর জন্য নিঃসন্দেহে যথেষ্ট সময় লেগেছিল, কারণ বিবরণ বলে যে, “সেই সমস্ত রাত্রি” প্রবল পূর্বীয় বায়ু প্রবাহিত হয়েছিল আর এরপর “ইস্রায়েল-সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্রমধ্যে প্রবেশ করিল।” ফরৌণের সেনাবাহিনীর যুদ্ধরথের সঙ্গে তুলনা করলে, ইস্রায়েলীয়রা ধীর গতিতে এগিয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, এইরকম কোনো সম্ভাবনা ছিল না যে, মিশরীয়রা তাদের ধরে ফেলবে কারণ যিহোবা ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করছিলেন। “[তিনি] মিস্রীয়দের সৈন্যকে উদ্বিগ্ন করিলেন। আর তিনি তাহাদের রথের চক্র সরাইলেন, তাহাতে তাহারা অতি কষ্টে রথ চালাইল।”—যাত্রা. ১৪:২১-২৫.

১২ ইস্রায়েলীয়রা যখন নিরাপদে অপর পারে পৌঁছে গিয়েছিল, তখন যিহোবা মোশিকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন: “তুমি সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর; তাহাতে জল ফিরিয়া মিস্রীয়দের উপরে ও তাহাদের রথের উপরে ও অশ্বারূঢ়দের উপরে আসিবে।” সৈন্যরা যখন প্রবল বেগে ফিরে আসা জলের মধ্যে থেকে পালাতে চেষ্টা করেছিল, তখন ‘সদাপ্রভু সমুদ্রের মধ্যে মিস্রীয়দিগকে ঠেলিয়া দিয়াছিলেন।’ পালিয়ে যাওয়ার কোনো পথই ছিল না। আর “তাহাদের এক জনও অবশিষ্ট রহিল না।” (যাত্রা. ১৪:২৬-২৮) যিহোবা এভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তাঁর লোকেদের যেকোনো পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।

যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে পলায়ন

১৩. যিশু কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন আর তাঁর অনুসারীরা কোন বিষয়টা নিয়ে ভেবেছিল?

১৩ যিহোবা একেবারে সঠিকভাবে জানেন যে, তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য কীভাবে বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পাবে। এই বিষয়টার গুরুত্ব সম্বন্ধে তৃতীয় উদাহরণে জোর দেওয়া হয়েছে, যা এখন আমরা বিবেচনা করব: প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেম অবরোধ। যিহোবা তাঁর পুত্রের মাধ্যমে সেই খ্রিস্টানদেরকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যারা ৭০ খ্রিস্টাব্দে সেই নগরকে ধ্বংস করার আগে যিরূশালেমে এবং যিহূদিয়ায় বসবাস করত। যিশু বলেছিলেন: “যখন দেখিবে, ধ্বংসের যে ঘৃণার্হ বস্তু দানিয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, তাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে . . . তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক।” (মথি ২৪:১৫, ১৬) কিন্তু, যিশুর অনুসারীরা কীভাবে বুঝতে পারবে যে, কখন এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে?

১৪. প্রকাশমান বিভিন্ন ঘটনা কীভাবে যিশুর নির্দেশনার অর্থকে স্পষ্ট করে দিয়েছিল?

১৪ বিভিন্ন ঘটনা যতই প্রকাশিত হয়েছিল, যিশুর কথার অর্থ ততই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ৬৬ খ্রিস্টাব্দে সেস্টিয়াস গ্যালাসের নেতৃত্বাধীনে রোমীয় সৈন্যরা একটা যিহুদি বিদ্রোহ দমন করার জন্য যিরূশালেমে পৌঁছেছিল। জেলট বলে পরিচিত যিহুদি বিদ্রোহীরা যখন মন্দিরের দুর্গের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন রোমীয় সৈন্যরা মন্দিরের প্রাচীর ভাঙতে শুরু করেছিল। সতর্ক খ্রিস্টানদের জন্য অর্থটা স্পষ্ট ছিল: এক পৌত্তলিক সেনাবাহিনী তাদের প্রতিমাপূজা সংক্রান্ত চিহ্নযুক্ত পতাকা (“ঘৃণার্হ বস্তু”) নিয়ে যিরূশালেম মন্দিরের প্রাচীরের যতটা সম্ভব কাছাকাছি (“পবিত্র স্থানে”) দাঁড়িয়ে ছিল। যিশুর অনুসারীদের জন্য তখন ‘পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করিবার’ সময় এসে গিয়েছিল। কিন্তু কীভাবে তারা এমন একটা নগর থেকে বের হবে, যেটা অবরুদ্ধ ছিল? ঘটনাগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হতে যাচ্ছিল।

১৫, ১৬. (ক) যিশু কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং কেন তাঁর অনুসারীদের জন্য সেটার প্রতি বাধ্য হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল? (খ) আমাদের উদ্ধারলাভ করার বিষয়টা কীসের ওপর নির্ভর করবে?

১৫ কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই সেস্টিয়াস গ্যালাস ও তার সেনাবাহিনী যিরূশালেম থেকে সরে গিয়ে পিছু হটতে শুরু করেছিল। জেলটরা তাদের পিছু ধাওয়া করেছিল। যে-দলগুলো যুদ্ধ করছিল, তারা দূরে চলে যাওয়ায়, হঠাৎ করেই যিশুর অনুসারীরা পালানোর একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। যিশু তাদের সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন যেন তারা তাদের বস্তুগত সম্পদ পরিত্যাগ করে অবিলম্বে চলে যায়। (পড়ুন, মথি ২৪:১৭, ১৮.) আসলেই কি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল? উত্তরটা শীঘ্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। জেলটরা কয়েক দিনের মধ্যেই ফিরে এসেছিল এবং যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার অধিবাসীদের বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার জন্য জোর করতে শুরু করেছিল। নগরের অবস্থা দ্রুত আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল, যখন বিভিন্ন বিদ্রোহী যিহুদি দল নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই করেছিল। পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। ৭০ খ্রিস্টাব্দে, যখন রোমীয়রা ফিরে এসেছিল, তখন পালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। (লূক ১৯:৪৩) দেরি করেছিল এমন যেকোনো ব্যক্তি ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল! যে-খ্রিস্টানরা যিশুর নির্দেশনার প্রতি মনোযোগ দিয়ে পাহাড় অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা রক্ষা পেয়েছিল। তারা সরাসরি দেখেছিল যে, তাঁর লোকেদের কীভাবে উদ্ধার করতে হয়, তা যিহোবা জানেন। এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৬ মহাক্লেশের সময়ে যখন বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পাবে, তখন খ্রিস্টানদেরকে ঈশ্বরের বাক্য এবং সংগঠনের কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ‘পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করিবার’ জন্য যিশুর দেওয়া আজ্ঞাটির এক প্রয়োগ আধুনিক সময়েও রয়েছে। ঠিক কীভাবে আমাদের পালিয়ে যেতে হবে, তা দেখার এখনও বাকি আছে। * কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা সেই সময়ে ওই নির্দেশনাগুলোর অর্থ স্পষ্ট করে দেবেন, যখন আমাদের জন্য সেগুলো অনুসরণ করার সময় হবে। যেহেতু আমাদের উদ্ধারলাভ করার বিষয়টা বাধ্যতার ওপর নির্ভর করবে, তাই আমাদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘যিহোবা এখন তাঁর লোকেদের জন্য যে-নির্দেশনাগুলো প্রদান করেন, সেগুলোর প্রতি আমি কীভাবে সাড়া দিয়ে থাকি? আমি কি দ্রুত সাড়া দিই, নাকি বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে ইতস্তত করি?’—যাকোব ৩:১৭.

সামনে যা রয়েছে, সেটার জন্য শক্তিপ্রাপ্ত

১৭. ঈশ্বরের লোকেদের ওপর আসন্ন আক্রমণ সম্বন্ধে হবক্‌কূকের ভবিষ্যদ্‌বাণী কী প্রকাশ করে?

১৭ আসুন এখন আমরা শুরুতে উল্লেখিত গোগের প্রচণ্ড আক্রমণের বিষয়টা আবার বিবেচনা করি। এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীতে হবক্‌কূক বলেছিলেন: “আমি শুনিলাম, আমার অন্তর কাঁপিয়া উঠিল, সেই রবে আমার ওষ্ঠাধর বিকম্পিত হইল, আমার অস্থিতে পচন প্রবেশ করিল, আমি স্বস্থানে কম্পিত হইলাম, কারণ আমাকে বিশ্রাম করিতে হইবে, সঙ্কটের দিনের অপেক্ষায়, যখন আক্রমণকারী আসিবে [ঈশ্বরের] লোকদের বিরুদ্ধে।” (হবক্‌. ৩:১৬) শুধুমাত্র ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে আক্রমণের খবর শুনেই ভাববাদীর অন্তর কেঁপে উঠেছিল, তার ওষ্ঠাধর কম্পান্বিত হয়েছিল এবং তার শক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। হবক্‌কূকের প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, সেই সময়ে আমাদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে, যখন গোগের বিরাট বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে ঝড়ো বেগে এগিয়ে আসবে। কিন্তু, ভাববাদী যিহোবার মহাদিনের জন্য নীরবে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক ছিলেন, এই নির্ভরতা রেখেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করবেন। আমরাও একই আস্থা রাখতে পারি।—হবক্‌. ৩:১৮, ১৯.

১৮. (ক) কেন আমাদের আসন্ন আক্রমণ সম্বন্ধে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

১৮ আমরা যে-তিনটে উদাহরণ বিবেচনা করেছি, সেগুলো নিঃসন্দেহে তুলে ধরে যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে জানেন। তাঁর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে না; বিজয় একেবারে নিশ্চিত। কিন্তু, সেই গৌরবান্বিত বিজয়ের অংশী হওয়ার জন্য আমাদের শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে হবে। কীভাবে যিহোবা এখন আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন? এই বিষয়টা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০-৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ১৯৯৯ সালের ১ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইস্রায়েলীয়রা কি ফরৌণের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আসলেই কোনো বিপদের মুখে পড়েছিল?