সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করছেন?

আপনি কি যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করছেন?

আপনি কি যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করছেন?

‘আমরা ঈশ্বরের তেজ দর্পণের ন্যায় প্রতিফলিত করিতেছি।’—২ করি. ৩:১৮.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে আমরা আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সত্ত্বেও যিহোবাকে গৌরবান্বিত করতে পারি?

কীভাবে আমাদের প্রার্থনা এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে আমাদের উপস্থিতি ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সাহায্য করে?

কোন বিষয়টা যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে চলার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

১, ২. আমরা যে যিহোবার গুণাবলি অনুকরণ করতে পারি, এইরকমটা মনে করা কেন যুক্তিযুক্ত?

 আমরা সকলেই কোন না কোন দিক দিয়ে আমাদের বাবা-মায়ের মতো। তাই, কেউ যখন একজন ছেলেকে বলে যে, ‘তুমি একদম তোমার বাবার মতো,’ তখন তা শুনে আমরা অবাক হই না। কিংবা একজন মেয়েকে হয়তো বলা হতে পারে, ‘তোমাকে দেখলে তোমার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।’ আর সন্তানরা প্রায়ই সেই বিষয়গুলো অনুকরণ করে থাকে, যা তারা তাদের বাবা-মার মধ্যে দেখতে পায়। কিন্তু, আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি? যদিও আমরা তাঁকে দেখিনি, কিন্তু আমরা তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করার, তাঁর সৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করার এবং শাস্ত্র নিয়ে, বিশেষভাবে ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের কথা ও কাজগুলো নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে যিহোবার মূল্যবান গুণাবলি সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে পারি। (যোহন ১:১৮; রোমীয় ১:২০) আমাদের পক্ষে যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করা সম্ভব।

আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার আগেই ঈশ্বরের এই আস্থা ছিল যে, মানুষের জন্য তাঁর যে-ইচ্ছা রয়েছে, সেটা মানুষ সম্পাদন করতে পারবে, তাঁর গুণাবলিকে প্রতিফলিত করতে এবং তাঁর গৌরব নিয়ে আসতে পারবে। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭.) ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুশীলন করার জন্য আমাদের সেই ব্যক্তির গুণাবলি প্রদর্শন করা উচিত, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের শিক্ষা অথবা আমাদের জাতিগত পটভূমি যা-ই হোক না কেন, আমরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করার এক চমৎকার সুযোগ পাব। কেন? কারণ “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাত,” জুবিলী বাইবেল] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ১০:৩৪, ৩৫.

৩. যিহোবাকে সেবা করার সময় খ্রিস্টানরা কোন অনুভূতি লাভ করতে পারে?

অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করে। তাই, আত্মায়জাত প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমরা সকলে অনাবৃত মুখে প্রভুর [ঈশ্বরের] তেজ দর্পণের ন্যায় প্রতিফলিত করিতে করিতে তেজ হইতে তেজ পর্য্যন্ত . . . সেই মূর্ত্তিতে স্বরূপান্তরীকৃত হইতেছি।” (২ করি. ৩:১৮) ভাববাদী মোশি যখন দশ আজ্ঞা সম্বলিত প্রস্তরফলকগুলো নিয়ে সীনয় পর্বত থেকে নেমে এসেছিলেন, তখন তার মুখের চর্ম উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিল। (যাত্রা. ৩৪:২৯, ৩০) খ্রিস্টানরা যদিও এই ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা লাভ করেনি ও তাদের মুখের চর্ম উজ্জ্বল হয় না, কিন্তু তারা যখন অন্যদের কাছে যিহোবা, তাঁর গুণাবলি এবং মানবজাতির জন্য তাঁর চমৎকার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলে, তখন তারা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়। প্রাচীনকালের চকচকে ধাতব দর্পণ বা আয়নার মতো, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পার্থিব সহযোগীরা তাদের জীবনে ও পরিচর্যায় যিহোবার তেজ বা গৌরব প্রতিফলিত করে। (২ করি. ৪:১) আপনি কি ঈশ্বরীয় আচরণ ও একজন নিয়মিত রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আপনার কাজের মাধ্যমে যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করছেন?

আমরা যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করার আকাঙ্ক্ষা করি

৪, ৫. (ক) পৌলের মতো, আমাদের কোন লড়াই করতে হয়? (খ) পাপ আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

যিহোবার দাস হিসেবে আমরা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সমস্ত কাজে আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করতে চাই। কিন্তু প্রায় সময়ই, আমরা সেটাই করি, যেটার আকাঙ্ক্ষা আমরা করি না। পৌলকে ব্যক্তিগতভাবে এই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। (পড়ুন, রোমীয় ৭:২১-২৫.) আমাদের কেন এই ধরনের এক লড়াই করতে হয়, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩) হ্যাঁ, মানবজাতি পাপী আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে ‘পাপের রাজত্বের’ কঠোর শাসনের বশীভূত হয়েছে।—রোমীয় ৫:১২; ৬:১২.

পাপ কী? এটা এমন যেকোনো কিছু, যা যিহোবার ব্যক্তিত্ব, পথ, মানদণ্ড ও ইচ্ছার বিপরীত। পাপ ঈশ্বরের সঙ্গে একজন ব্যক্তির সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। পাপ আমাদেরকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেয়, ঠিক যেমন একজন তিরন্দাজ তির ছুড়ে মারলেও তার লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা প্রমাদবশত বা ভুলবশত পাপ করতে পারি। (গণনা. ১৫:২৭-৩১) পাপ মানুষের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে রয়েছে আর এটা তাদের ও তাদের সৃষ্টিকর্তার মধ্যে এক বাধা সৃষ্টি করে। (গীত. ৫১:৫; যিশা. ৫৯:২; কল. ১:২১) তাই, মানবজাতির অধিকাংশই পুরোপুরি যিহোবার বিপরীতে চলছে আর তারা ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার অমূল্য সুযোগকে হারাচ্ছে। নিঃসন্দেহে, পাপ হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ অক্ষমতা, যা মানবজাতিকে কষ্ট দেয়।

৬. আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সত্ত্বেও, কীভাবে আমরা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে পারি?

আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সত্ত্বেও, যিহোবা “প্রত্যাশার ঈশ্বর” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। (রোমীয় ১৫:১৩) তিনি পাপকে বিলোপ করার এক উপায়—যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান—জুগিয়েছেন। সেই বলিদানে বিশ্বাস অনুশীলন করার ফলে আমরা আর “পাপের দাস” নই বরং আমরা যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করার মতো অবস্থানে রয়েছি। (রোমীয় ৫:১৯; ৬:৬; যোহন ৩:১৬) ঈশ্বরের সঙ্গে এই অনুমোদিত সম্পর্ক বজায় রাখা আমাদেরকে এখনই যিহোবার আশীর্বাদ ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে সিদ্ধতার বিভিন্ন উপকারিতা এবং অনন্তজীবন লাভের নিশ্চয়তা দেয়। যদিও আমরা এখনও পাপী মানুষ কিন্তু এটা কতই না আশীর্বাদের বিষয় যে, ঈশ্বর আমাদেরকে এমন ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে দেখেন, যারা তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করতে পারে!

ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করা

৭. ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার জন্য আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে কী স্বীকার করতে হবে?

ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার মতো সঠিক অবস্থানে থাকার জন্য, আমাদেরকে সৎভাবে নিজেদের পাপপূর্ণ স্বভাবকে শনাক্ত করতে হবে। (২ বংশা. ৬:৩৬) আমাদের নিজেদের পাপপূর্ণ প্রবৃত্তিকে স্বীকার করতে ও সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ করতে হবে, যাতে আমরা ঈশ্বরকে সত্যি সত্যিই গৌরবান্বিত করার পর্যায় পর্যন্ত উন্নতি করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি পর্নোগ্রাফি দেখার মতো লজ্জাজনক পাপে পতিত হয়ে যাই, তাহলে আমাদের এই সত্যের মুখোমুখি হতে হবে যে, আমাদের আধ্যাত্মিক সাহায্য প্রয়োজন—আর তা লাভ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) এটা হবে এমন এক জীবনযাপনের প্রচেষ্টা করার প্রথম পদক্ষেপ, যে-জীবনযাপন ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত করে। যিহোবার উপাসক হিসেবে, আমরা তাঁর ধার্মিক মানগুলো পূরণ করতে পারছি কি না, তা নির্ণয় করার জন্য আমাদেরকে ক্রমাগতভাবে আত্মপরীক্ষা করতে হবে। (হিতো. ২৮:১৮; ১ করি. ১০:১২) আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতার প্রকৃতি যা-ই হোক না কেন, আমরা তা দমন করা থেকে বিরত হব না, যাতে আমরা ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করতে পারি।

৮. আমরা যদিও অসিদ্ধ, কিন্তু আমাদের কী করা উচিত?

সর্বকালের মধ্যে যিশুই হচ্ছেন একমাত্র মানুষ, যিনি ঈশ্বরকে খুশি করতে ও তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ না হয়ে বেঁচে ছিলেন এবং সেভাবেই মারা গিয়েছিলেন। যদিও আমরা যিশুর মতো সিদ্ধ নই কিন্তু আমরা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার প্রচেষ্টা করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত। (১ পিতর ২:২১) আমরা প্রচেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে যে-উন্নতি করি, যিহোবা সেটাও মূল্যায়ন করেন এবং তাঁকে গৌরবান্বিত করার ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতি আশীর্বাদ করেন।

৯. বাইবেল সেই খ্রিস্টানদের জীবনে কোন ভূমিকা পালন করে, যারা ঈশ্বরের চাহিদাগুলো পূরণ করার আকাঙ্ক্ষা করে থাকে?

যিহোবার লিখিত বাক্য আমাদের উন্নতির পথে আলো প্রদান করতে পারে। শাস্ত্র সম্বন্ধে গভীর অধ্যয়ন এবং ধ্যানপূর্বক বাইবেল পাঠ অপরিহার্য। (গীত. ১:১-৩) প্রতিদিন শাস্ত্র পাঠ করা আমাদেরকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে। (পড়ুন, যাকোব ১:২২-২৫.) বাইবেলের জ্ঞান হল আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি এবং গুরুতর পাপ এড়ানোর ও যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করার উপায়।—গীত. ১১৯:১১, ৪৭, ৪৮.

১০. কীভাবে প্রার্থনা আমাদেরকে আরও পূর্ণরূপে যিহোবাকে সেবা করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে?

১০ এ ছাড়া, ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার জন্য আমাদের ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিতে’ হবে। (রোমীয় ১২:১২) যিহোবা যেন তাঁকে গ্রহণযোগ্য উপায়ে সেবা করার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করেন, সেই বিষয়ে আমরা প্রার্থনা করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত। তা করার জন্য, আমরা তাঁর কাছে পবিত্র আত্মা, আরও বিশ্বাস, পরীক্ষা বা প্রলোভন প্রতিরোধ করার শক্তি এবং ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিবার’ ক্ষমতার জন্য উপযুক্তভাবে যাচ্ঞা করতে পারি। (২ তীম. ২:১৫; মথি ৬:১৩; লূক ১১:১৩; ১৭:৫) একজন সন্তান যেমন তার বাবার ওপর নির্ভর করে, তেমনই আমাদেরও আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে হবে। আমরা যদি আরও পূর্ণরূপে তাঁকে সেবা করার ব্যাপারে তাঁর কাছে সাহায্য যাচ্ঞা করি, তাহলে আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, তিনি সাহায্য করবেন। আমরা যেন কখনোই এমনটা মনে না করি যে, আমরা তাঁকে বিরক্ত করি! এর পরিবর্তে, আসুন আমরা প্রার্থনায় তাঁর প্রশংসা করি, তাঁকে ধন্যবাদ দিই ও বিশেষভাবে পরীক্ষার সময়ে তাঁর নির্দেশনা খুঁজি এবং যাচ্ঞা করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে এমন উপায়ে তাঁকে সেবা করতে সাহায্য করেন, যা তাঁর পবিত্র নামকে গৌরবান্বিত করে।—গীত. ৮৬:১২; যাকোব ১:৫-৭.

১১. কীভাবে মণ্ডলীর সভাগুলো ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করে?

১১ ঈশ্বর তাঁর মূল্যবান মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ আস্থা সহকারে দায়িত্ব দিয়েছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; গীত. ১০০:৩) সহবিশ্বাসীরা যেভাবে যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করছে, সেই ব্যাপারে দাস শ্রেণী অনেক আগ্রহী। খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে খ্রিস্টান পরিচারক হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তিকে সমন্বয় করা হয়, ঠিক যেমন একজন দর্জি আমাদের পোশাকে কিছুটা কাটছাঁট করেন, যেন আমাদেরকে আরেকটু ভালো দেখা যায়। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তাই, আসুন আমরা সভাতে ঠিক সময়ে পৌঁছাই কারণ সভাতে দেরি করে পৌঁছানো যদি আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে যিহোবার দাস হিসেবে আমরা আমাদের ভাবমূর্তির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক ‘কাটছাঁটের’ অন্ততপক্ষে কিছুটা হারাব।

আসুন আমরা ঈশ্বরকে অনুকরণ করি

১২. কীভাবে আমরা ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে পারি?

১২ আমরা যদি যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করতে চাই, তাহলে আমাদের ‘ঈশ্বরের অনুকারী হইতে’ হবে। (ইফি. ৫:১) যিহোবাকে অনুকরণ করার একটা উপায় হল, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেওয়া। অন্য যেকোনো উপায়ে জীবনযাপন করার চেষ্টা করা হবে তাঁর জন্য অসম্মানজনক এবং আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যেহেতু আমাদের চারপাশের জগৎ দুষ্ট ব্যক্তি শয়তান দিয়াবলের প্রভাবাধীনে রয়েছে, তাই যিহোবা যেটাকে ঘৃণা করেন, সেটাকে ঘৃণা করার জন্য এবং তিনি যেটাকে ভালোবাসেন, সেটাকে গভীরভাবে ভালোবাসার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। (গীত. ৯৭:১০; ১ যোহন ৫:১৯) আমাদের এই আন্তরিক দৃঢ়প্রত্যয় থাকা প্রয়োজন যে, ঈশ্বরকে সেবা করার একমাত্র সঠিক উপায় হল, তাঁর গৌরবের জন্য সমস্ত কাজ করা।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৩১.

১৩. কেন আমাদের পাপকে ঘৃণা করতে হবে এবং এটা আমাদেরকে কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

১৩ যিহোবা পাপকে ঘৃণা করেন আর আমাদেরও তা করা উচিত। আসলে, আমাদের অন্যায় কাজ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত এবং পাপের দ্বারা পরাস্ত না হয়ে আমরা সেটার কতখানি কাছাকাছি যেতে পারি, তা পরীক্ষা করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ধর্মভ্রষ্টতার কাছে নতিস্বীকার করার বিরুদ্ধে সাবধান থাকতে হবে, যেটা এমন এক পাপ, যা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করার ব্যাপারে আমাদেরকে অযোগ্য করে ফেলে। (দ্বিতীয়. ১৩:৬-৯) তাই, আসুন আমরা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের অথবা এমন কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখি, যিনি নিজেকে একজন ভাই বলে দাবি করেন, কিন্তু ঈশ্বরকে অসম্মান করেন। সেই সময়ও একই বিষয় করা উচিত, এমনকী সেই ব্যক্তি যদি আমাদের পরিবারের একজন সদস্যও হয়। (১ করি. ৫:১১) সেই ব্যক্তিদের যুক্তি খণ্ডন করার চেষ্টা করে আমাদের কোনো উপকারই হবে না, যারা ধর্মভ্রষ্ট অথবা যিহোবার সংগঠনের সমালোচনা করে। বস্তুতপক্ষে, তাদের তথ্য পড়া আধ্যাত্মিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনুপযুক্ত, তা সেগুলো লিখিত আকারে অথবা ইন্টারনেটে, যেখানেই পাওয়া যাক না কেন।—পড়ুন, যিশাইয় ৫:২০; মথি ৭:৬.

১৪. ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করার সময়ে আমাদের মধ্যে কোন গুণ লক্ষণীয় হওয়া উচিত এবং কেন?

১৪ প্রেম প্রকাশ করা হল আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে অনুকরণ করার এক উল্লেখযোগ্য উপায়। হ্যাঁ, তাঁর মতো আমাদের প্রেমময় হওয়া উচিত। (১ যোহন ৪:১৬-১৯) বস্তুতপক্ষে, আমাদের পরস্পরের মধ্যে যে-প্রেম রয়েছে, সেটা আমাদেরকে যিশুর শিষ্য ও যিহোবার দাস হিসেবে শনাক্ত করে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) যদিও উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপপূর্ণ অবস্থা মাঝে মাঝে আমাদের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু সেটাকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিতে হবে এবং সবসময় প্রেম দেখাতে হতে হবে। প্রেম ও অন্যান্য ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলা আমাদেরকে নির্দয় এবং পাপপূর্ণ বিষয়গুলো করা থেকে বিরত রাখবে।—২ পিতর ১:৫-৭.

১৫. কীভাবে প্রেম অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে?

১৫ প্রেম আমাদেরকে অন্য ব্যক্তিদের প্রতি ভালো কিছু করার জন্য পরিচালিত করে। (রোমীয় ১৩:৮-১০) উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বিবাহসাথির প্রতি প্রেম বিবাহশয্যাকে বিমল রাখবে। প্রাচীনদের প্রতি প্রেম ও সেইসঙ্গে তাদের কাজের প্রতি সম্মান আমাদেরকে তাদের নির্দেশনার প্রতি বাধ্য এবং বশীভূত হতে সাহায্য করবে। যে-সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে ভালোবাসে, তারা বাবা-মার বাধ্য হয়, তাদেরকে সম্মান করে এবং তাদের সম্বন্ধে নেতিবাচক কথাবার্তা বলে না। আমরা যদি সহমানবদের ভালোবাসি, তাহলে আমরা তাদেরকে নগণ্য মনে করব না অথবা তাদের অসম্মান করে কথা বলব না। (যাকোব ৩:৯) আর যে-প্রাচীনরা ঈশ্বরের মেষদের ভালোবাসে, তারা তাদের সঙ্গে মমতা বা কোমলতা সহকারে আচরণ করে।—প্রেরিত ২০:২৮, ২৯.

১৬. প্রেম প্রকাশ করা কীভাবে আমাদের পরিচর্যায় সাহায্য করবে?

১৬ এ ছাড়া, প্রেম গুণটা আমাদের পরিচর্যায়ও লক্ষণীয় হওয়া উচিত। আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের গভীর প্রেমের কারণে, কিছু গৃহকর্তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার অথবা উদাসীন মনোভাবের দ্বারা নিজেদেরকে প্রভাবিত হতে দেব না। এর পরিবর্তে, আমরা সুসমাচার প্রচার করে চলব। প্রেম আমাদেরকে পরিচর্যার জন্য উত্তম প্রস্তুতি নিতে এবং পরিচর্যায় কার্যকারী হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা যদি ঈশ্বর ও আমাদের প্রতিবেশীকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসি, তাহলে আমরা রাজ্যের প্রচার কাজকে একঘেয়ে এক কাজ অথবা শুধুমাত্র এক কর্তব্য হিসেবে দেখব না। এর পরিবর্তে, আমরা এটাকে এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখব এবং আনন্দের সঙ্গে তা সম্পন্ন করব।—মথি ১০:৭.

যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে চলুন

১৭. আমরা যে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করায় ব্যর্থ হই তা স্বীকার করে কেন আমরা উপকৃত হই?

১৭ যদিও জগতের অধিকাংশ লোক পাপের গুরুতর অবস্থা সম্বন্ধে সচেতন নয়, কিন্তু আমরা সেই ব্যাপারে সচেতন। এটা আমাদেরকে নিজেদের পাপপূর্ণ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন করে। আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাবকে স্বীকার করা আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করার সুযোগ দেয়, যাতে এটা আমাদেরকে সেই সময়ে সঠিকভাবে আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে, যখন আমাদের মন ও হৃদয়ে পাপ করার এক আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠতে শুরু করে। (রোমীয় ৭:২২, ২৩) এটা ঠিক যে, আমরা হয়তো দুর্বল হতে পারি, কিন্তু ঈশ্বর আমাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজ করার জন্য শক্তিশালী করতে পারেন।—২ করি. ১২:১০.

১৮, ১৯. (ক) কী আমাদেরকে দুষ্ট আত্মাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করার জন্য সমর্থ করে থাকে? (খ) আমাদের দৃঢ়সংকল্প কী হওয়া উচিত?

১৮ এ ছাড়া, আমরা যদি যিহোবাকে গৌরবান্বিত করতে চাই, তাহলে আমাদের দুষ্ট আত্মাদের প্রভাবের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে। ঈশ্বরদত্ত আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা আমাদেরকে সফলভাবে তা করার জন্য সমর্থ করে। (ইফি. ৬:১১-১৩) শয়তান যিহোবার সেই গৌরব কেড়ে নেওয়ার জন্য অবিরত চেষ্টা করে চলে, যা একা যিহোবাই পাওয়ার যোগ্য। এ ছাড়া, দিয়াবল যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা করে চলে। কিন্তু, শয়তান সেই সময়ে কী এক চপেটাঘাতই না লাভ করে, যখন আমরা আর সেইসঙ্গে অন্যান্য লক্ষ লক্ষ অসিদ্ধ পুরুষ, নারী ও ছেলে-মেয়ে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখি এবং ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করি! তাই, আসুন আমরা ক্রমাগত সেই স্বর্গীয় প্রাণীদের মতো যিহোবার প্রশংসা করি, যারা উচ্চঃস্বরে বলে: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”—প্রকা. ৪:১১.

১৯ যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে চলাই যেন আমাদের দৃঢ়সংকল্প হয়। তিনি নিশ্চিতভাবেই আনন্দিত যে, অনেক অনুগত ব্যক্তি তাঁকে অনুকরণ করার ও তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। (হিতো. ২৭:১১) আমাদের অনুভূতিও যেন দায়ূদের মতো একইরকম হয়, যিনি এই গান গেয়েছিলেন: “হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি সর্ব্বান্তঃকরণে তোমার স্তব করিব, আমি চিরকাল তোমার নামের গৌরব করিব।” (গীত. ৮৬:১২) আমরা সেই দিনের জন্য কত আকাঙ্ক্ষাই না করে আছি, যখন আমরা নিখুঁতভাবে যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করতে এবং চিরকাল তাঁর প্রশংসা করতে পারব! বাধ্য মানবজাতি সেই আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতাই লাভ করবে। আপনি কি অনন্তকাল ধরে যিহোবা ঈশ্বরের গৌরবকে প্রতিফলিত করার প্রত্যাশা নিয়ে এখনই তাঁর গৌরবকে প্রতিফলিত করছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

তুমি কি এই উপায়গুলোর মাধ্যমে যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করছ?