সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমি দিন দিন কলপোর্টারের কাজকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখছি”

“আমি দিন দিন কলপোর্টারের কাজকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখছি”

আমাদের আর্কাইভ থেকে

“আমি দিন দিন কলপোর্টারের কাজকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখছি”

১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার অ্যালিগেনির বাইবেল হাউস থেকে মিলিনিয়াল ডউন প্রথম খণ্ডের এক-শোটা কপি ইলিনোয়া ও শিকাগোর উদ্দেশে পাঠানো হয়েছিল। চার্লস টেজ রাসেল আশা করেছিলেন যে, এই নতুন খণ্ডটি বিভিন্ন বইয়ের দোকানে বিতরণ করা হবে। ধর্মীয় বই বিতরণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটা বড়ো কোম্পানি একটা চালানের মাধ্যমে মিলিনিয়াল ডউন নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর, জাহাজে করে পাঠানো পুরো চালানটা বাইবেল হাউস-এ ফেরত এসেছিল।

কথিত আছে যে, একজন সুপরিচিত ধর্ম প্রচারক তার বইগুলোর সঙ্গে মিলিনিয়াল ডউন সাজানো দেখতে পেয়ে রেগে গিয়েছিলেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, যদি বইয়ের তাকে ওই বইগুলো থাকে, তাহলে তিনি ও তার বিখ্যাত সব ধর্ম প্রচারক বন্ধু নিজেদের বইগুলো—এবং তাদের ব্যাবসা—ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেবেন। বিতরণকারীরা তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডউন বইগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, বিরোধীরা লক্ষ রেখেছিল যেন বিজ্ঞাপনের চুক্তিগুলো বাতিল করা হয়। তাহলে, কীভাবে এই নতুন প্রকাশনা সত্য অন্বেষণকারীদের হাতে পৌঁছাবে?

কলপোর্টাররা, যে-নামে তখন তাদেরকে ডাকা হতো, এই ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করেছিল। * জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার ১৮৮১ সালে ১,০০০ জন প্রচারক চেয়ে আহ্বান করেছিল, যারা পূর্ণসময়ের জন্য বাইবেল সাহিত্যাদি বিতরণ করতে পারবে। যদিও কলপোর্টারদের সংখ্যা মাত্র কয়েক-শো ছিল, কিন্তু তারা ছাপানো আকারে প্রাপ্ত সত্যের বীজকে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দিয়েছিল। ১৮৯৭ সালের মধ্যে, প্রায় ১০ লক্ষ ডউন বই বিতরণ করা হয়েছিল আর এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই কলপোর্টাররা বিতরণ করেছিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার কোনো গ্রাহকভুক্তি করে অথবা বই অর্পণ করে যে-সামান্য হাতখরচ পেত, সেটার দ্বারাই জীবনযাপন করত।

এই নির্ভীক কলপোর্টাররা কারা ছিল? কেউ কেউ কিশোর বয়সে, আবার অন্যেরা অনেক বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সেই কাজ শুরু করেছিল। যদিও অনেকে ছিল অবিবাহিত অথবা সন্তান নেই এমন বিবাহিত দম্পতি, কিন্তু সেই কাজে যুক্ত হয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যাও কম ছিল না। নিয়মিত কলপোর্টাররা দিনের অনেকটা সময় আর সহায়ক কলপোর্টাররা প্রতিদিন এক বা দু-ঘন্টা কাজ করত। কলপোর্টার হিসেবে কাজ করার মতো স্বাস্থ্য অথবা পরিস্থিতি সবার ছিল না। কিন্তু, ১৯০৬ সালে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনে, যারা সেই কাজ করতে পারত তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, তাদের “অনেক শিক্ষিত অথবা অনেক মেধাবী কিংবা স্বর্গদূতের মতো কথা বলার ক্ষমতাসম্পন্ন” হওয়ার প্রয়োজন নেই।

প্রায় প্রতিটা মহাদেশে, সাধারণ লোকেরাই অসাধারণ কাজ সম্পাদন করেছিল। একজন ভাই হিসাব করে বলেছিলেন যে, সাত বছরে তিনি ১৫,০০০ বই অর্পণ করেছিলেন। তবে, তিনি বলেছিলেন, “আমি একজন বই বিক্রেতা হওয়ার জন্য নয়, বরং যিহোবা ও তাঁর সত্যের একজন সাক্ষি হওয়ার জন্য কলপোর্টারের কাজে যোগ দিয়েছিলাম।” কলপোর্টাররা যেখানেই গিয়েছিল, সেখানেই সত্যের বীজ শিকড় বিস্তার করেছিল এবং বাইবেল ছাত্রদের দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল।

পাদরিরা কলপোর্টারদের প্রচণ্ড ঘৃণা করত, তাদেরকে কেবল বইয়ের ফেরিওয়ালা বলে ডাকত। ১৮৯২ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকা এই মন্তব্য করেছিল: “অল্প লোকই [তাদেরকে] প্রভুর প্রকৃত প্রতিনিধি বলে জানত অথবা সেই মর্যাদাকে স্বীকার করত, যা প্রভু তাদের নম্রতা ও আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের মধ্যে দেখতে পেতেন।” আসলে, কলপোর্টারদের জীবন কোনো “আরামদায়ক ফুলের শয্যা” ছিল না, তাদের মধ্যে একজন এভাবে বলেছিলেন। যাতায়াত করার জন্য প্রধান মাধ্যম ছিল টেকসই জুতো এবং সাইকেল। যেখানে নগদ টাকাপয়সা দুর্লভ ছিল, সেখানে কলপোর্টাররা খাবারের বিনিময়ে ওই বইগুলো দিত। ক্ষেত্রে একটা দিন কাটানোর পর, ক্লান্ত অথচ আনন্দিত প্রচারকরা তাদের তাঁবুতে অথবা ভাড়া করা ঘরে ফিরে আসত। এরপর, কলপোর্টার ওয়াগন এসেছিল, যেটা ছিল হাতে নির্মিত একটা ভ্রাম্যমাণ বাড়ি আর এটা অনেক সময় ও অর্থ বাঁচিয়েছিল। *

১৮৯৩ সালে আয়োজিত শিকাগো সম্মেলনের শুরুতে, বিশেষ কলপোর্টারদের অধিবেশন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে তারা একে অন্যের কাছে প্রাণবন্তভাবে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বলেছিল এবং প্রচারের বিভিন্ন কৌশল ও ব্যবহারিক উপদেশ তুলে ধরেছিল। ভাই রাসেল একবার কঠোর পরিশ্রমী প্রচারকদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা সকালে যথেষ্ট জলখাবার, কিছুটা বেলার দিকে এক গ্লাস দুধ এবং গরমের দিনে একটা আইসক্রিম সোডা খায়।

যে-কলপোর্টাররা একজন সহকর্মী অথবা প্রচারের সঙ্গী খুঁজত, তারা সম্মেলনের সময়ে হলুদ রঙের ফিতে লাগিয়ে রাখত। অপেক্ষাকৃত নতুন কলপোর্টারদেরকে আরও অভিজ্ঞ কলপোর্টারদের সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া হতো। স্পষ্টতই এই ধরনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন ছিল, কারণ একজন নতুন কলপোর্টার ঘাবড়ে গিয়ে এই বলে বইগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, “আপনি নিশ্চয়ই এগুলো চান না, তাই না?” আনন্দের বিষয়টা হল, গৃহকর্ত্রী সেগুলো নিতে চেয়েছিলেন এবং পরে একজন বোন হয়েছিলেন।

একজন ভাই চিন্তা করেছিলেন, ‘বর্তমানে আমি যে-ভালো বেতনের চাকরিতে আছি আমার কি সেখানেই থেকে প্রতি বছর কলপোর্টারদের কাজের জন্য ১,০০০ মার্কিন ডলার দান করা উচিত, নাকি আমার একজন কলপোর্টার হওয়া উচিত?’ তাকে বলা হয়েছিল যে, যদিও প্রভু যেকোনোটাকেই উপলব্ধি করবেন কিন্তু প্রভুর জন্য সরাসরি সময় দান করা তার জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। মেরি হাইন্ডস্‌ কলপোর্টারের কাজকে “বিপুল সংখ্যক লোকের জন্য সবচেয়ে ভালো কিছু করার সর্বোত্তম উপায়” হিসেবে মনে করেছিলেন। আর ভীরু স্বভাবের অ্যালবার্টা ক্রসবি বলেছিলেন, “আমি দিন দিন কলপোর্টারের কাজকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখছি।”

বর্তমানে, সেই উদ্যোগী কলপোর্টারদের আক্ষরিক এবং আধ্যাত্মিক অনেক সন্তান এখনও তাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে ধরে রেখেছে। আপনার বংশে যদি এখনও কোনো কলপোর্টার অথবা অগ্রগামী না থেকে থাকে, তাহলে আপনার পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে আপনি নিজেই তা শুরু করছেন না কেন? তাহলে আপনিও দিন দিন পূর্ণসময়ের প্রচার কাজকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখবেন।

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৩১ সালের পর “কলপোর্টার” নাম পালটে “অগ্রগামী” নাম দেওয়া হয়েছিল।

^ ভ্রাম্যমাণ বাড়ি সম্বন্ধে বিস্তারিত বিষয় ভবিষ্যতে কোনো সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে।

[৩২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

তাদের “অনেক শিক্ষিত অথবা অনেক মেধাবী কিংবা স্বর্গদূতের মতো কথা বলার ক্ষমতাসম্পন্ন” হওয়ার প্রয়োজন নেই

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৩০ সালের দিকে ঘানায় কলপোর্টার এ. ডব্লু. অসেই

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ওপরে: ১৯১৮ সালের দিকে ইংল্যান্ডে কলপোর্টার ইডিথ কিন এবং গারট্রুড মরিস; নীচে: যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যানলি কসাবুম এবং হেনরি ননকিস তাদের অর্পণ করা বইয়ের খালি কার্টনগুলোর পাশে